কহিনুর_দ্বিতীয়_খণ্ড,পর্ব:১৮

0
854

#কহিনুর_দ্বিতীয়_খণ্ড,পর্ব:১৮
কলমে: ইয়াসমিন

নারীর অবয়বে হোক সে সুন্দরী বা অসুন্দরী কি যায় আসে তাঁতে? নারীর সৌন্দর্য সেতো আমার চোখে বাঁধা তুচ্ছ আর নগণ্য এক মোহ। আধার রাতে তুমি এসেছিলে কাছে হৃদয়ের সবটুকু ভালোবাসা উজাড় করে দিয়ে শূন্য হস্তে ফিরে গেছো নীড়ে। আমি উপভোগ করেছি তোমাকে।তোমার শরীরের গন্ধ আমার হৃদয়ের রন্ধ্রে রন্ধ্রে পৌঁছে ঢেউ তুলেছিলো ক্ষণিকের অমৃত হয়ে।তাহলে কি দরকার জেনে তুমি সুন্দরী নাকি বান্দরী? আধারে তো সকলেই এক।
আবাসিক হোটেলের নির্জন কক্ষে বিড়বিড় করে উপরক্ত শব্দগুলো উচ্চারণ করছিল নির্জন খান আধার। আধার নামটার মতো ও নিজেকে আধারে রাখতে পছন্দ করে। প্রতিটা রাত প্রতিটা মূহুর্ত ওর কেটে যায় নব নতুন নারীর মুগ্ধতায়। আজ অবধি কত নারীর প্রেমে ও নিজেকে বিলীন করেছে তার হিসেব হয়তো ও নিজেও জানেনা। আধার নামটা ওর জন্য স্বার্থক। জীবন মানেই মদ আর নারীর নেশা। ওর কাউকে দরকার হয়না বিধায় নেই কোনো কাছের বন্ধ বা বান্ধবী। পরিবার পরিজন বলতে আছে বিশাল একটা গোষ্ঠী। বাবা মা চাচা চাচি ভাইবোন পিতামহ পযর্ন্ত জীবিত।তবুও ওকে একাকিত্বেই থাকতে হয়। হয়তো কিছুটা অদ্ভুত কিন্তু এটাই সত্যি। ওকে নিয়ে কারো মাথাব্যথা নেই। কারণ ওর ক্ষতি করার সাধ্য কারো নেই। দেখতে সুদর্শন তাতে সন্দেহ নেই। এই সুন্দর চেহারার পেছনে থাকা মানুষটাকে কেউ না দেখলে চরমতম ভুল করে বসবে তা নিশ্চিত। ওর কাজ রাতের অধারের সঙ্গে মিশে নাইট ক্লাবে বা কোনো নামিদামি পার্টিতে গিয়ে মেয়ে পটানো। যদিও ওর এই স্বভাব সম্পর্কে কেউ জানেনা। জার্মানিতে পরিবারের সঙ্গে বেড়ে উঠা ওর। কিন্তু বছর খানেক আগে সপরিবারে বাংলাদেশ এসেছে। সেই নিয়ে ওর কোনো চিন্তা নেই। আছে নিজের মতো স্বাধীনভাবে। বিছানায় গড়াগড়ি খেতে খেতে হাত ঘড়িটা দেখে নিলো অধার। এই মূহুর্তে ও কক্সবাজারে আছে। গতকাল রাতে এক মেয়েকে নিয়ে হোটেলে উঠেছিল সকাল সকাল মেয়েটাকে না পেয়ে দীর্ঘনিশ্বাস ফেলল। মেয়েটা এখন ঠিক কথায় ওর জানা আছে। কোনো সঙ্গীই ওর স্থায়ী হয়না। আবার নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতেও পারেনা। অনেক ভেবেছিল কাউকে আর নিজের সঙ্গে জড়াবে না কিন্তু হয়না। মন মর্জি নিজের নিয়ন্ত্রণে আসে না। অনিচ্ছা শর্তেও হয়ে যায়। তবে যার সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে ফেলে পরদিন সকালে সে নিখোঁজ হয়ে যায়। পৃথিবীর কোনো এক প্রান্তে তার লাশটা ভেসে উঠে নদীতে। এ যে এক ভয়াবহ খেলা নাকি অভিশাপ? কিভাবে এই অভিশপ্ত জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে ও নিজেও জানেনা। কারণ এটা ওর না বরং ওর পরিবারের উপরে আসা অভিশাপ। এই অভিশপ্ত জীবনের শেষ কোথায় আছে এটা বলতে পারবে না কেউ। হয়তো পারে ওর দাদু নয়তো বাবা। আধার চেয়েছিল জানতে কিন্তু পারেনি। হাল ছেড়ে দিয়েছে সেই সঙ্গে মেতে উঠেছে এই সর্বনাশা খেলার সঙ্গে মানিয়ে নিতে। হয়তো অদূরেই এর শেষ হবে। বাবা তো এটাই বলেছিল ওকে। ওর জন্য একজন বিশেষ কেউ আছে। সেই পারবে ওকে উদ্ধার করতে। আধার না চাইতেও সেই অনাকাঙ্খিত ব্যক্তির জন্য অপেক্ষা করছে। এই অপেক্ষার জানি কবে শেষ হয় এটাই প্রত্যাশা। সকাল আটটা বেজে চল্লিশ মিনিট। শরীর ওর নিজের বসে নেই। চোখে রাজ্যের ঘুম হানা দিয়েছে। সারা রাতের জাগরণ এখানেই সমাপ্ত হবে। নিভে যাবে ক্ষণিকের জন্য চোখের আলো আর সচল মস্তিষ্ক। এমনিই হয়ে আসছে। ও যে আধার, আধারে ওর বিচরণ। চোখ বন্ধ হতেই ওর ফোনটা তীব্র শব্দ করে বেঁজে উঠলো। দুবার বাজার পরে অধার চোখ বন্ধ করে রিসিভ করে কানে ধরতেই ওপাশ থেকে কিছু একটা বলা হলো তাঁতেই অধারের ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠলো। আবারও নতুন কেউ নিখোঁজের তালিকায় যোগ হতে চলেছে।
*******
সাদাদিনের কর্মব্যস্তার শেষে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই ঘুমিয়ে পড়েছিল পাথর। কক্সবাজার এসে ভেবেছিল একটু ঘোরাঘুরি করবে তার কিছুই হলো না। একটা দিন সুযোগ পেয়েছিল তারপর থেকে একের পর এক কাজ আসতেই চলেছে। বুঝতে বাকী নেই এই কাজটা ওর ড্যাডের। লোকটা ওকে দিয়ে খাটিয়ে খাটিয়ে মারতে চাইছে। বেলাল মৌসুমীর কথা জানিয়ে দিয়েছে হয়তো তাই উনি ছেলেকে হাতে রাখতে মেয়েটার সঙ্গে মেলামেশা বন্ধের জন্য এমন করছেন। পাথর ঠিক করেছে কাজ যত দ্রুত শেষ হবে ও তত তাড়াতাড়ি দেশে ফিরে যাবে। মৌসুমীর সঙ্গে ওর তেমন যোগাযোগ হচ্ছে না। মেয়েটা বেশ কয়েকবার ওকে নক করেছে কিন্তু ও পারেনি কথা বলতে। যেটা করতে আসা সেটা না করে কিভাবে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরবে? তবে কথা দিয়েছে সুযোগ পেলে নিশ্চয়ই ওকে সময় দিবে। এখন সময়টাই পাওয়া বাকী। বেলাল বেশ মস্তিতে আছে। ওর বউ এসেছে সেই খুশীতে বেচারা ধেই ধেই করে হাপ প্যান্ট পরে বালুচরে গড়াগড়ি খাচ্ছে। পাথর বেশ বিরক্ত ওর উপরে। কিন্তু কিছু কারার নেই। সবার আবেগ অনুভূতি এক হয়না।। পাথর বিছানা থেকে নেমে বাইরে বেরিয়ে আসলো। গতকাল রাতে পাশের কক্ষের এক ছেলে ওকে বেশ বিরক্ত করেছে। বারবার এলোথেলো ওর দরজায় আঘাত করেছে। তাই ম্যানেজারকে বলে সমস্যার সমাধান করতে চাইছে। ছেলেটা সম্পূর্ণ একা ছিল কিন্তু ওর আচরণ দেখে ওর মনে হলো ও একা নেই সঙ্গে কেউ আছে। সে যাইহোক তাতে ওর সমস্যা নেই। তাইবলে প্রতিবেশীর উপরে এমন নির্যাতন ও মানতে পারছে না। এক হোটেলে থাকতে বলেই কি এমন করতে হবে। ভদ্রতা বলে একটা বিষয় আছে। পাথর কথাটা জানিয়ে বেরিয়ে আসলো হোটেল থেকে। কয়েকদিন জগিং করতে নিয়মিত যাওয়ার দরুন বেশ কিছু বন্ধু জুটিয়ে ফেলেছে। যদিও তাদের বয়স ওর থেকে দ্বিগুণ তাঁতে কি? বন্ধুত্ব মন দেখে হয় বয়স দেখে না। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে ও কারো সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে ফেলল। সামনে তাঁকিয়ে দেখলো আমিনুল সাহেব দাঁড়িয়ে আছেন। বয়স পঞ্চাশ উদ্ধে তবুও কথাবার্তা যথেষ্ট স্মার্ট। ভদ্রলোক ওকে দেখে একগাল হেসে বলে উঠলেন,
> কি ব্যাপার পাথর সাহেবের পাথর হৃদয়টা কি কারো প্রেমে ঘায়েল? এত আনমনা কেনো?
পাথর লাজুক হেসে বলল,
> আঙ্কেল, পাথরের হৃদয় পাথর দিয়ে তৈরী। সেই পাথরকে ঘায়েল করা কি এতো সহজ? চলুন দৌড় শুরু করি।
> হুম চলো।
পাথর হাসি মুখে এগিয়ে গেলো সামনে। আমিনুল সাহেবের কপালে চিন্তার রেখা। এই ছেলেটাকে উনার বেশ পছন্দ। যেমন কথাবার্তা তেমনি কর্মনিষ্ঠা। মেয়ে থাকলে জামাই করতে উনি দুবার ভাবতেন না কিন্তু আফসোস মেয়ে নেই। ভাবতে ভাবতে উনি পাথরের সঙ্গে যোগ দিলেন। দুই রাউন্ড ঘুরে উনি বসে পড়লেন নরম ঘাসের উপরে। পাথর কিছুটা দৌড়ে গিয়ে আবার পিছিয়ে এসে লোকটার পাশে হুড়মুড় করে বসতে বসতে বলল,
> এইটুকুতে কিছুই হবে না আঙ্কেল। আরও পরিশ্রম করতে হবে।
আমিনুল সাহেব উদাস হয়ে পড়লেন। তারপর হাত বাড়িয়ে আলগোছে পাথরের হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে চোখের সামনে মেলে ধরলেন। তারপর উন্মুক্ত হাতের তালুতে দৃষ্টি রেখে বাম হাত দিয়ে ওর হাতে কিছু একটা আঁকাবাঁকা অদৃশ্য রেখা টেনে বললেন,
> ভাগ্যে বিশ্বাস করো তুমি? জ্যোতির্বিদ্যা সম্পর্কে আইডিয়া আছে নাকি অবিশ্বাস করো?
পাথর হাত ছাড়িয়ে নিতে চাইলো কিন্তু পারলো না। সামনে বসা লোকটাকে আজ কেনো জানি ওর কাছে অচেনা লাগছে। লোকটা জোরে ওর হাতটা ধরে রেখেই আবারও উচ্চারণ করলো,
> মানো আর নাই মানো খুব তাড়াতাড়ি তোমার ভাগ্যের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ নীরব হতে চলেছে। সামনে বিপদ আবার মহামূল্যবান রত্ন প্রাপ্তির সুখ। দুটোই তোমার জন্য অনাকাঙ্খিত তবুও বলবো তোমার জীবনের যে পরিবর্তন হতে যাচ্ছে তাকে তুমি বরণ করতে অস্বীকার করো না। যা হচ্ছে বা হবে মানিয়ে চলবে। জীবন সুন্দর হয় যদি তাকে উপভোগ করা যায়। তোমার সঙ্গীর জন্য আমার পক্ষ থেকে শুভকামনা রইলো।
ভদ্রলোক একদমে কথাগুলো বলে থামলেন। উনার বলা কথাগুলো ওর মাথার উপর দিয়ে গেলো। মস্তিষ্ক শূন্য শূন্য লাগলো। কিছু না বুঝে ঠোঁট উল্টে বলল,
> আঙ্কেল বিস্তারিত বলুন আর আপনি এসব মানেন? আমি তো মানিনা। আমি নিজের কর্ম দিতে ভাগ্য পরিবর্তন করে ফেলব আপনি চিন্তা করবেন না। চলুন উঠি।
পাথর হাত ছাড়িয়ে নিয়ে উঠতে চাইলো কিন্তু ভদ্রলোকের ভাবান্তর হলো না। আনমনে বললেন,
> এটা আমি একজন বিশেষ লোকের থেকে শিখেছিলাম। ভদ্রলোকের সঙ্গে আমার বেশ কয়েকমাসের আলাপ ছিল। উনি হাতে ধরে শিখিয়েছিলেন যদিও এসব আমি কাউকে বলিনা কিন্তু তোমার হাতটা দেখতে আমার ভীষণ ইচ্ছে হলো। বলতে পারো লোভ হলো। ভেবেছিলাম তোমাকে যে পাবে সেতো ভাগ্যবতী কিন্তু তেমনটা না। তুমি যাকে পাবে সে নিজেরই এক মহামূল্যবান রত্ন। ওর ভাগ্য দ্বারা তোমার ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করা হবে। কি অদ্ভুত তাইনা?
> শুনন আঙ্কেল ব্যক্তি তার কর্মদ্বারা ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করে। তাহলে নিজের কর্ম ছাড়া কিভাবে সে অন্য একজনের ভাগ্য দিয়ে নিজে ভাগ্যবান হবে বলুন? ছেড়ে দিন এসব আজেবাজে টপিকে কথা বলা। আসুন আমার অফিসে কাজ আছে লেট হবে।

ভদ্রলোক আর কথা বাড়ালো না। কাউকে জোর করে এসব বোঝানো যায়না। তবে এই ছেলের হাতটা দেখে উনি কিছুটা চমকে গেছেন। মানুষের হাত এমন হয় নাকি কে জানে।
**************
আয়োজন ছাড়া ছোটখাট অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ঐশ্বর্য আর আদির বিয়ে হয়ে গেলো। আদির হাতটা বেশ চলছে তবে কণ্ঠ এখনো ঠিক হয়নি। সকলে চেয়েছিলেন কিছুদিন পরে বিয়ে হবে কিন্তু জুবায়েরের দাদু সবাইকে বুঝিয়ে বলেছেন। এখনকার মতো কাবিন হয়ে থাকবে আগামীতে অনুষ্ঠান করে বিয়ে হবে। এটাই মেনে নিয়ে হাসপাতালের ফিনাইল আর ওয়াসিং পাউডারের মিক্স করা গন্ধের মধ্যে উকিল কাবিন নামাতে ওর সাইন নিয়েছেন। ঐশ্বর্য পাশের বেডে লাজুক ভঙ্গিতে আদির দিকে তাঁকিয়ে আছে। জুবায়ের আসেনি মেয়ের বিয়ের সময়। প্রচণ্ড রাগে অফিসে বসে আছে। অধরা এসেছে। না এসে উপাই ছিল না। কাজ শেষে অধরা ঐশ্বর্যকে মিষ্টির কাছে রেখে বেরিয়ে আসলো। উদ্দেশ্যে জুবায়েরের অফিসে যাওয়া। লোকটার মেজাজ সম্পর্কে ওর ভালো ধারণা আছে। রাগ করে কিছু একটা ঘটিয়ে ফেললে বিপদ। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে হাসপাতালের বারান্দায় আসতেই জামসেদের সঙ্গে ওর দেখা হয়ে গেলো। ভদ্রলোক ওকে দেখে ভ্রু কুটি করে বললেন,
> কেউ না চাইতে কতকি পেয়ে যায় অথচ যারা চাই তারা কেনো পাইনা বলোতো?
অধরা বিরক্ত হলো বেশ। এই জঘন্য লোকটাকে ও এড়িয়ে চলতে চাই তবুও বারবার সামনে চলে আসে।
> মানে ঠিক বুঝতে পারিনি।
> না বোঝার মতো কি বলেছি বলো? তোমার জন্য আমি আজও সঙ্গীহীন সম্পূর্ণ একা। কতকরে চেয়েছিলাম বলো? অথচ জুবায়ের তোমাকে পছন্দ করা তো দূর ক্ষণেক্ষণে আঘাত করতে ছাড়েনি তবুও তুমি তাঁর। ভীষণ অদ্ভুত তাইনা?
শুনেছি মন থেকে কিছু চাইলে নাকি পাওয়া যায়! পাওয়ার সুযোগ আছে বলো?
অধরার কর্ণ গহ্বর গরম হয়ে উঠলো। সেই সঙ্গে শরীর প্রচণ্ড ঘৃণাই তরতর করে কেঁপে উঠলো। কন্ঠের উপরে থাকা তকের শিরা ফুলে ফেপে উঠলো। অধরা হাতের মুঠো শক্ত করে উত্তর দিলো,
> যার লজ্জা নেই তার আবার কিসের মান অপমানবোধ? আপনার সঙ্গে অহেতুক তর্কে জড়িয়ে আমি আমার মূল্যবান সময় নষ্ট করতে চাইছিনা। তবে একটা কথা, আমার শরীরে প্রাণ থাকতে তো আপনি কখনও বিন্দু পরিমাণ সুযোগও পাবেন না। চিনেন তো আমাকে? ভীষণ জেদি আর একরোখা। জুবায়েরের সঙ্গে আপনার তুলনা একদম করবেন না। কোথায় মাথার মুকুট আর কোথায় পায়ের জুতো। দুটো কি এক? আসছি এখন।
অধরা থেমে থেমে কথাগুলো বলে নিজের রাগটা নিয়ন্ত্রণ করলো। মেজাজ চরম খারাপ হচ্ছে। এই লোকটা আজও ওর পেছনে হাত ধুয়ে পড়ে আছে। অধরা টানপায়ে সামনে এগিয়ে গেলো। জামসেদ ফারুকী এখনো ওর দুর্গের মতো চক্ষুদ্বয় জ্বালিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। একবার সুযোগ পেলে এই অহংকার দম্ভ ও পায়ের ধুলোতে লুটিয়ে দিতে দুবার ভাববে না। বারবার পালানোর পথ পাবেনা এই নারী। জামসেদের শরীর জ্বলেপুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছে অপমানে।
অধরা হন্তদন্ত হয়ে জুবায়েরের অফিসে এসে ঢুকে পড়লো। যদিও ওকে এখানকার কেউ চিনে না তাই দারোয়ান দৌড়ে ওর পিছু নিয়েছে। লোকটা চিৎকার করে ওকে থামানোর জন্য হুমকি দিচ্ছে। ওকে এভাবে ভেতরে আসতে দেখে একটা মেয়ে এগিয়ে অসলো। মেয়েটা গম্ভীর কন্ঠে বলল,
> ম্যাম এখানে কি আপনার? ঝামেলা করবেন না এখানে কোনো পোস্ট খালি নেই। আপনি আসুন স্যারের মেজাজ ভালো নেই।ঝামেলা করবেন না।

অধরা মেয়েটার কথার উত্তর দিলো না তবে পা হতে মাথা পযর্ন্ত দেখে নিলো। দেখতে আহামরি সুন্দরী না হলেও পোশাক পরিচ্ছেদ বেশ সৌখিন। বয়স অধরার থেকে কম ছাড়া বেশি হবে না।দেখা শেষে ও ভ্রু কুচকে বলল,
> আপনার স্যাকে গিয়ে বলুন আমি দেখা করতে এসেছি। অধরা বললেই উনি চিনবেন। অফিসে দেখি দারুণ সব লোকজন রেখেছে আমি সত্যি অবাক।
মেয়েটা মনে হলো অধরার কথা শুনে বিরক্ত হলো। উন্মুক্ত চুলের গোছা কানের ভাজে গুজে নিয়ে বললেন,
> শুনুন একদম আজেবাজে কথাবার্তা বলবেন না। এখন আসুন। স্যার এখন কারো সঙ্গে দেখা করবেন না। পূর্ব পরিচিত হোন আর যাইহোক না কেনো।
অধরা সরল হাসলো। তারপর ফোনটা বের করে ছোট্ট একটা টেক্সট করে বলল,
> এভাবেই সবাইকে আটকে দেন তাইনা? কে আপনাকে এখানে চাকরি দিয়েছে? কথাবার্তা বুঝেন না নেই কোনো ভদ্রতা। শুধু কাজ পারলেই তো হবে না। সোসাল না হলে তো মুশকিল হয়ে যাবে। আচরণ দেখে যেহেতু আমরা মানুষকে চিনি সেহেতু ওটা আগে ঠিক করা উচিত আমার মনে হয়। আশাকরি আপনি বুদ্ধিমান। বুঝবেন কি বলেছি।

অধরার বলার কথা শুনে ভদ্রমহিলা বেশ অপমানিত হলো। প্রথমে জামসেদ পরে এই মেয়েটার সঙ্গে কথা বলে অধরার মনে হলো গায়ে আগুন জ্বলছে। কিছুতেই নিজেকে শান্ত করতে পারছে না। মেয়েটা কিছু বলতে চাইলো তার আগেই জুবায়ের এসে হাজির। অধরা ওর দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে বলল,
> আজব চিড়িয়াখানা আপনার অফিস। এসব প্রাণীর জোগাড় কিভাবে করেছেন আল্লাহ জানে। একটু ভদ্রতার শিক্ষা তো দিতেই পারতেন তাইনা?

জুবায়ের থতমত খেয়ে গেলো অধরার কথা শুনে। মেয়েটা রাগ করেছে বুঝতে পারলো কিন্তু কি জন্য জানা নেই। অধরা চলে যেতে চাইলো তবে হলো না। জুবায়ের দ্রুতগতিতে ওর হাতটা মুঠোয় পুরে নিয়ে ফিসফিস করে বলল,
> বাড়িতে গিয়ে যা ইচ্ছে রাগ দেখিও তবুও এখানে না প্লিজ। লোকজন আছে সম্মান থাকবে না।

অধরা থমকে গেলো। ছেলেমানুষি ওর সাজে না। তাই চুপচাপ জুবায়ের সঙ্গে এগিয়ে গিয়ে গেলো। জুবায়ের সামনে গিয়ে আবার পিছিয়ে এসে মেয়েটাকে বলল,

> রেহেনা হক, ম্যডামের জন্য ঠাণ্ডা কিছুর ব্যবস্থা করুন প্লিজ। আমার মিসেস এর মেজাজ একটু কড়া টাইপ। যা ভুলভাল বকেছেন ঠান্ডা হলে যাওয়ার সময় ক্ষমা চেয়ে নিয়েন নয়তো মার্ক করে রাখবে। ঠিক সময়ে শোধ নিতে ভুল করবে না তখন আফসোস করতে হবে কিন্তু। দ্রুত কাজ করুন।

জুবায়ের কথা শেষ করে এগিয়ে গেলো অধরার কাছে। কক্ষে এসে অধরা সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে বলল,
> আপনার ভাইয়ের চরিত্র ঠিক কার মতো বুঝতে পারছি না। এমন কেনো উনি?
জুবায়ের ভ্রু কুচকে বলল,
> কিছু বলেছে তাইনা? আমি আজকেই দাদুকে বলবো ওই বাড়িতে আমরা থাকবো না।
> কিছু বলেনি তবে খুব দ্রুত বলবে হয়তো কিছু। দাদুর সঙ্গে গোপন পরামর্শ চলছে। কিছু একটা হতে চলেছে সামনে। কি হবে অনুমান করতে পারছি না।কি হতে পারে বলুন তো? কহিনুরের জন্য চিন্তা হচ্ছে।

চলবে

ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here