কহিনুর_দ্বিতীয়_খণ্ড,পর্ব:১৭

0
744

#কহিনুর_দ্বিতীয়_খণ্ড,পর্ব:১৭
কলমে: ইয়াসমিন

সোনালী সূর্যের আগমনে নতুন ভোরের সূচনা শুরু হয়ে গেছে। সেই সঙ্গে নিকশ কালো আধার কেটে মনে নতুন করে সাহসের সুর বেজে উঠেছে। খারাপ একটা স্বপ্ন দেখে আজ বেশ ভোরবেলায় অধরার ঘুম ভেঙে গেলো।। জুবায়ের মিটিংয়ের জন্য রেডি হচ্ছে অধরা সেটা চুপচাপ পর্যবেক্ষণ করছে। লোকটার বয়সের তুলনায় একটু বেশিই স্মার্ট। কেমন গোলমেলে বয়স। সঠিকটা না জানলে অনুমান করা খুব কঠিন। ভাবতে ভাবতে হঠাৎ ওর গতকাল রাতের কথা মনে হলো। সেই মেয়েটার বলা কথাগুলো কানে এখনো প্রতিধ্বনি হচ্ছে। মেয়েটা কে হতে পারে! এই বাড়ির কেউ? ভাবলো না না এরা তো সবাই বোবা বধির অভিশপ্ত। অধরা কিছু একটা ভেবে আনমনে বলল,
>মারিয়া কোথায় জুবায়ের? ওকে কোথায় লুকিয়ে রেখেছেন আপনারা? নাকি ওকে এই অভিশপ্ত জীবন থেকে মুক্ত করে দিয়েছেন! শরীরে আত্ম নামক অদৃশ্য বস্তুটা কি আছে ওর? চুপ থাকবেন না ভীষন চিন্তা হচ্ছে ওর জন্য।
জুবায়ের মনোযোগ দিয়ে চুল চিরুনি করছিল হঠাৎ ওর প্রশ্ন শুনে থমকে গেলো। হাতের চিরুনিটা নামিয়ে রেখে অধরার কাছে ধীরগতিতে এসে দাঁড়ালো।। বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে থাকার দরুন অধরা ওর মুখটা বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছে। জুবায়ের সোজাসুজি এসে ওকে জড়িয়ে ধরে ওর মাথায় থুতনি রেখে বলল,

> এভাবে কলিজা চমকে যাওয়ার মতো প্রশ্ন করো কেনো শুনি? সেই আমাকে মুগ্ধ হয়ে দেখছিলে আরও দেখো না। সকাল সকাল শুধুমাত্র বরকে নিয়ে ভাববে আর কিছু নিয়ে ভাবতে হবে না। মারিয়া বেঁচে আছে চিন্তা করো না।

অধরা বিরক্ত হলো জুবায়েরের কথা শুনে। এই লোকটা কথা ঘুরাতে উস্তাদ। লাগবে না বলা। অধরা নিজে নিজেই সবটা জেনে যাবে। জুবায়েরের মমের সঙ্গে দরকার হলে ভাব জমিয়ে ফেলবে। জানতে তো হবেই। ওর ধ্যান ভাঙলো জুবায়েরের কথা শুনে।

> মাথার মধ্যে যখন এসেছে তখন জানি তুমি চেষ্টার ত্রুটি করবে না কিন্তু বিশ্বাস করো মারিয়া বেঁচে আছে তবে ভালো নেই। কিছুই আমার হাতে ছিল না। ওরা নিখোঁজ করে দিলো আমার বোনকে। ভেবো না একদিন ওকে পেয়ে যাবো। আমার লেট হচ্ছে নিচে আমার ম্যানেজার অপেক্ষা করছে। খুব দরকারি একটা মিটিং আছে।

অধরা কথা বাড়ালো না। জুবায়েরের অর্ধেক বলা কথাগুলোর মধ্যে গভীর কোনো রহস্য আছে এটা ওর জানা। শুধুমাত্র ঘটনাটা জানা নেই। অধরা মলিন হেসে বিছানা থেকে নেমে জুবায়েরের পেছনে পেছনে ড্রয়িং রুমে গিয়ে দাঁড়ালো। ঐশ্বর্যকে নিয়ে অধরা আদির সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে সেটাই এখন বলতে হবে। কিন্তু তার আগেই জুবায়েরের দাদু হাসি মুখে বললেন,
> দাদুভাই ঐশ্বর্যকে নিয়ে চলো আদি ছেলেটাকে দেখে আসি। ওই বাড়ি থেকে ঐশ্বর্য আদ আদির বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছে। আমি তো আগেই রাজি ছিলাম পরে চৌধুরী সাহেব বেঁকে বসলেন। যাইহোক আবারও যে নিজেদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছে এটাই অনেক। ছেলেটা হাসপাতালে আছে ভাবছি গিয়ে দেখে আসবো।

অধরা বুঝতে পারছে না এই ভদ্রলোকের ধান্দাটা ঠিক কি? হঠাৎ ঐশ্বর্য আর আদ আদির বিয়ে নিয়ে এর এতো মাথাব্যথা কেনো? লোকটা যে প্রচণ্ড স্বার্থপর টাইপের মানুষ। স্বার্থ ছাড়া একটা কাজও করেন না। অধরা কৌতূহল দমিয়ে রাখতে না পেরে বলে উঠলো,
> আপনি যাবেন কিন্তু কেনো?

নিজের প্রশ্ন শুনে নিজেই বিরক্ত অধরা। তাই সাবধানের সহিত কথা ঘুরিয়ে নিয়ে বলল,
> দাদু আপনি তো এসব জায়গায় জাননা,তবে আজ হঠাৎ?
প্রশ্ন শুনে জুবায়েরের দাদুর ওষ্ঠে অমায়িক হাসি ফুটে উঠলো। এই হাসির পেছনে যে কত রকমের ছল চতুরতার খেলা ঢেউ খেঁলছে সে ঈশ্বর ছাড়া কেউ জানেনা। মূহুর্তে সব নীরবতা নির্বাসিত হলো। নির্জনতা কাটিয়ে গমগমে কণ্ঠে উচ্চারিত হলো,

> আত্মীয় হতে চলেছি খোঁজ নেওয়া উচিৎ। আদির খোঁজ নেওয়া আমাদের নৈতিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। জুবায়েরের অফিসে যাচ্ছে। ও পরে কখনও যাবে। তাহলে যাওয়া যাক তবে?

গতকাল রাতে চৌধুরী সাহেবের ছেলে আর বউমা এসেছিলেন বিয়ের বিষয়ে কথা বলতে। যদিও জুবায়ের রাজি হয়নি কিন্তু বাড়ির সকলে অনুমতি দিয়েছে। তাছাড়া যার বিয়ের কথা হচ্ছে সে নিজেই রাজি হয়েছে সেখানে অন্যদের কিছু বলার অপেক্ষা রাখেনা। ঐশ্বর্য এবার জুবায়েরের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছে। ওর ধারণা কেউ নিজের মেয়ের ভালো রেখে পরের মেয়েকে নিয়ে ভাববে না। আদি ভালো পরিবারের ছেলে ওর ভবিষ্যৎ আলোকিত। এমন ছেলেকে যেকোনো মেয়ে জীবন সঙ্গী করতে এক পায়ে রাজি হবে। সেখানে ঐশ্বর্যের নিজের বলতে এখন কেউ নেই। আদি ওর জন্য সুইসাইড করতে বসেছিল তাই এ এই সুযোগ আর হেলাই হারাতে চাইছে না। জুবায়েরের মনখুন্ন হয়েছে। এতোদিন ধরে মেয়েটাকে নিজের সবটা দিয়ে মানুষ করার পরেও সে কেনো ওকে বুঝলো না এটা ওর মাথায় আসছে না। একেই কি বলে রক্তের সম্পর্ক? যেখানে কহিনুর এতগুলি থা*প্প*ড় খেয়েও টু শব্দটা পযর্ন্ত করলো না। উল্টো জুবায়েরকে বোঝালো কিছু হয়নি চিন্তা না করতে। কহিনুরের জন্য ওর মনে অধিক হারে স্নেহ বৃদ্ধি হলো। বাবার ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত মেয়েটা এতদিন কিভাবে ছিল ভেবেই কষ্টে নিশ্বাস আটকে আসে ওর। এই ঘটনায় অধরা নির্বাক আছে। ঐশ্বর্যের বিরুদ্ধে গিয়ে ও আর নিজেকে খারাপ প্রমাণ করতে চাইছে না। এখনকার ছেলেমেয়েরা বড্ড খামখেয়ালী। ওদেরকে আটকানোর সাধ্য কার আছে। জুবায়েরের অফিসে যাওয়ার পরপরই ওরা বেরিয়ে পড়লো হাসপাতালে উদ্দেশ্যে।
*************
হাসপাতালে বিছানায় ছটফট করছে আদি চৌধুরী। পরিবারের লোকজন মাঝে মাঝে এসে দেখে যায় তবে ওর মা মিসেস নাইমা এক চুল ও ছেলেকে কাছছাড়া করছেন না। পিতমাতা বুঝি এমনিই হয়। সন্তান যতই খারাপ কিছু করুক না কেনো বাবা মা কখনও তাকে ছেড়ে যায়না। সেখানে আদির মতো একজন ছেলে ভালোবাসার জন্য সুইসাইড করতে বসেছিল এটা ওর মা কিছুতেই মানতে পারছেন না। ছেলের ভালোর জন্য উনি সবটা করতে পারেন।। উনি ছেলের মাথার কাছে বসে ছিলেন সেই মূহুর্তে অধরা ভেতরে প্রবেশ করলো সঙ্গে অন্যরা। কুশলাদি জিঞ্জাসা করে সবাই যখন বেরিয়ে আসলো ঠিক তখনই জুবায়ের দাদু থেকে গেলের আদির পাশে। উনি আশেপাশের দৃষ্টি ঘুরিয়ে আদির কানে কানে বলে উঠলেন,
> তোমার ভাবনা যেখন থেকে শেষ হয় আমার ভাবনা সেখান থেকে শুরু হয়। কথায় বলে লোভে পাপ আর পাপে মৃত্যু। কি ভেবেছিলে আমার এতদিনের পরিশ্রম ব্যার্থ করে তুমি সব ভোগ করবে? অসম্ভব,কখনও তা সম্ভব হবে না। আমার বুদ্ধির কাছে তুমি নেহায়েত শিশু। ঐশ্বর্যকে বিয়ে করে সুখে সংসার করো। তোমার সঙ্গে ঠিক কি হয়েছে,কে এসবের পেছনে দোষী সেসব ঘাটতে গিয়ে মাথা নষ্ট করোনা। প্রাণে বেঁচে আছো এটাইতো অনেক? ভালো থেকো বাচ্চা।

আদি ছোট বড়বড় করে ঢোক গিলল ভদ্রলোকের কথা শুনে। এইসবের পেছনে এই লোকটা দায়ী কিন্তু কিভাবে? ওই মেয়েটাকে এই লোকটা পাঠিয়েছিল এটা তো নিশ্চিত কিন্তু ওই মেয়েটার ওই অস্বাভাবিক ক্ষমতার পেছনে কি কারণ আছে? জিম করে !নাকি মেয়ের আড়ালে কোনো শক্তপক্ত কোনো পুরুষ ছিল? খুব করে ওর প্রশ্ন করতে মন চাইলো কিন্তু কণ্ঠ দিয়ে কোনো আওয়াজ আসছে না। মেয়েটার শক্ত হাতের বেষ্টনীতে ওর গলা সাময়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। কেমন অসহায় অসহায় লাগছে। কোন অতল রহস্যে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছে ভেবে আদির চোখ থেকে দুফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো। জুবায়ের দাদু সেদিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বলল,
> অস্থির কেনো হচ্ছো? যা হচ্ছে হতে দাও তোমার ভালো ছাড়া খারাপ হবে না। জীবনের চাইতে অর্থের মূল্য তোমার কাছে নিশ্চয়ই বেশি না? সুযোগ বারবার আসেনা। এই যে প্রথমবার বেঁচে গেছো পরের বার যে বাঁচবে এর গেরান্টি কিন্তু দিতে পারবো না। যাইহোক ভালো থেকো এখন আসছি।
ভদ্রলোকের সীতল চক্ষুদ্বয়ে নিষ্ঠুর রেখা ফুটে উঠলো। যেটা দেখে আদির অন্তর আত্মা কেঁপে উঠলো। কি ছিল ওই চোখে? শান্তভাবে ওকে হুমকি দিয়ে দিলো। লোকটা আর অপেক্ষা করলো না। ধুসর রঙের শালের চাদরটা কাধে ফেলে দম্ভপূর্ণভাবে হেটে চলে গেলো। আদি সেদিকে তাকিয়ে দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলল।
****************
সকাল এগারোটার সময় কক্সবাজার পৌঁছে মিটিং করতে গিয়ে একটা বেজে গেলো পাথরের। বেলাল চুপচাপ বসের পাশে বসে ফাইল চেক করছে। পাথর মাঝেমাঝে ওর মুখের ভাব ভঙ্গি লক্ষ্য করছে। বেলার বেশ মজার মানুষ কথা পেটে রাখতে পারেনা। হঠাৎ ওর এভাবে চুপচাপ দেখে পাথরের ঠিক ভালো লাগলো না। তাই কোনো রকমে মিটিং শেষ করে ওর দিকে ফিরে বসলো। মুখটা গম্ভীর করে বলল,
> সমস্যা কি বেলাল? বাসা থেকে কি খুব ঝামেলা করছে?
বেলাল মুখটা খানিক করুণ করে উত্তর দিলো,
> না স্যার। আসলে আমার ওয়াইফের ধারণা আমি কক্সবাজারে লুকিয়ে গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে ঘুরতে এসেছি। ঝগড়া হয়েছে প্রচুর। ফোন ধরছে না এখন ।
পাথর হেসে ফেলল বেলালের কথা শুনে। দারুন বুদ্ধি ওর বউয়ের। বেলালকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য মেয়েটা প্লান করে ফেলেছে। পাথর হাসি বন্ধ করে নিজের গম্ভীরতা বজায় রেখে উত্তর দিলো,
> ওকে নিয়ে আসো বেলাল। তোমাদের ঘোরাঘুরিও হবে আবার আমাদের কাজটাও হয়ে যাবে। আমাকে রেখে তো তুমি যেতে পারবে না কিন্তু উনি তো আসতে পারবেন? যাও কাজের বাইরে আমি তোমাকে একদম বিরক্ত করবো না। এখানে আমার পরিচিত একটা মেয়ে আছে। সোসাল সাইটে পরিচয়। ও আমাকে ঘুরতে সাহায্য করবে। তাছাড়া ড্রাইভার আঙ্কেল তো আছেন।

বেলালের চুপসে যাওয়া মুখটা এবার পরিবর্তন হয়ে ঝিলমিল করে উঠলো খুশীতে। ছেলেটা দ্রুত ল্যাপটপ বন্ধ করে ফোন হাতে করে বেরিয়ে গেলো। মনে হলো আকাশের চাঁদ পেয়েছে হাতে। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই ফিরে এসে বলল,
> স্যার একটা কথা ছিল।
পাথর ফাইল থেকে মুখ তুলে বলল,
> আবার কি?
বেলাল মাথা চুলকে মিনমিন কন্ঠে বলল,
> মৌসুমী নামের একজন মেয়ে অফিসের নিচে দাঁড়িয়ে আছে আপনার জন্য অপেক্ষা করছেন। ওকে কি বলবো?
মূহুর্তে পাথরের মুখে হাসি ফুটে উঠলো। ও দ্রুত ফাইল বন্ধ করে বেরিয়ে আসলো কক্ষ থেকে। বেলাল ভ্রু কুচকে ফেলল স্যারের এমন অদ্ভুত আচরণ দেখে। আগে কখনও মেয়ে ঘটিত কোনো ব্যাপারে পাথরকে এমন উৎসুক হতে ও দেখেনি তাই কৌতূহল দমিয়ে রাখতে না পেরে পিছু নিলো। কিন্তু ওর যেতে যেতেই পাথর মেয়েদেরকে নিয়ে গাড়িতে উঠে গেলো।
দীর্ঘদিনের পরিচয় থাকলেও পাথরকে সামনে থেকে দেখে মৌসুমীর বুকের মধ্যে ঢিপঢিপ করে উঠলো। কণ্ঠ থেকে আওয়াজ বুঝি চিরতরে বিদায় নিলো। কি দেখতে ছেলেটা। ভেবেই ওর গর্ভ হতে লাগলো। ওর সঙ্গে মিষ্টি আর মিঠিও এসেছে। পাথর রাস্তা চিনেনা বিধায় ওদেরকে পাথর অফিসে এসে দেখা করতে বলেছিল। প্রথম দেখাতে পাথরেরও কেমন অস্বস্তি হতে লাগলো তবুও হাই হ্যালো করতে হলো। মিষ্টি সত্যিই চমকে গেছে পাথরকে দেখে। মৌসুমী লজ্জায় লাল নীল হলুদ হচ্ছে। মিঠির চোখে কোনো কৌতূহল নেই। বেচারি নির্বাক থাকে। পাথর সামনের সিটে বসে মাঝেমাঝে পিছনে ফিরে টুকটাক কথাবার্তা বলল। সবাই মিলে সেদিন রেস্টুরেন্টে বসেছিল। পাথর বারবার গম্ভীর টাইপের। কি বলবে ভেবে পাচ্ছিলো না। মিষ্টির বকবক শুনেই ওদের সময় কাটলো। পাথর আড় চোখে মৌসুমে দেখলো। মেয়েটা মন্দ না মোটামুটি বেশ ভালো। মেয়েদের এভাবে লজ্জা পেতে ও আগে কখনও দেখেনি। সব সময় আধুনিক আর স্মার্ট মেয়েদের সঙ্গে ওর উঠাবসা সেই তুলনায় এই মেয়েটা কিছুই না তবুও ওর কেনো জানি ভালো লাগলো।পাথর কিছুক্ষণের মধ্যেই ওদের সঙ্গে মোটামুটি স্বাভাবিক হতে শুরু করলো। খাওয়া ঘুরাঘুরি দিনটা খারাপ কাটলো না।
**
জার্মান থেকে ফিরে চুপচাপ দাদুর সামনে বসে আছে জামসেদ। মহা মূল্যবান পাথরটা হারিয়ে মন মেজাজ খারাপ সেই সঙ্গে জুটেছে কোম্পানির ঝামেলা। ইমরোজ খান পাথর নামের ছেলেটার বাড়াবাড়ি রকমের বুদ্ধির কাছে বারবার ওকে হারতে হচ্ছে। কিছু একটা অন্যরকম করতে হবে ভেবেই দাদুর সঙ্গে পরামর্শ করতে আসা। জুবায়েরের দাদুর মুখে রহস্যময় হাসি বন্ধ হলো না। উনি হাসি থামিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,
> শামির তালুকদার লোকটা কিন্তু ঘর জামাই। বাংলাদেশের ছেলে, নিজ বুদ্ধিতে আজ এতদূর এসেছে। সে যাইহোক অসম্ভব রকমের লোভ ওর চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। ওর পেছনে লোক লাগিয়ে দিয়ে খবর পৌঁছে দাও,সুলতান পরিবারের কোটি কোটি টাকার একমাত্র উত্তরাধিকারী কহিনুর ফারুকী সুলতান জুবায়ের ফারুকীর কন্যা। ওকে বিয়ে করলে সেই হবে এই সম্পদের একমাত্র মালিক।
জামসেদ দাদুর চোখের দিকে তাঁকিয়ে অবাক হলো। কি বলতে চাইছে কিছুই ওর মাথায় ঢুকছে না। কহিনুর সম্পত্তির মালিক বললে কি এমন হবে? ও কৌতূহল দমিয়ে রাখতে পারলো না। ভ্রু কুচকে বলল,
> কি হবে এসব বলে? কহিনুর অভিশপ্ত দাদু। ওকে বিয়ে দিলে সেতো বাসর রাতে এমনিতেই মরবে। তাছাড়া তুমি জানো না ওর জন্য একজন তৈরী হচ্ছে? আমাদের বংশের তো এমনিই হয়ে আসছে। ওকে বিয়ে দেওয়ার কোন অধিকার আমাদের নেই। ও জানলে সব তছনছ করে ফেলবে।

> কিচ্ছু হবে না। কহিনুর কোনো সাধারণ মেয়ে না। ওর মধ্যে থাকা শক্তিই ওকে রক্ষা করবে সঙ্গে আমাদেরকে। তাছাড়া আমাদের উদ্দেশ্য সফল করতে হলে শামির তালুকদারকে আমাদের দরকার। ওর পতন যে অতি নিকটবর্তী যা আমি দেখতে পাচ্ছি। যা বলছি দ্রুত করো। সময় নষ্ট করো না।
জামসেদ ফারুকী দাদুর কথার উত্তর দিতে পারলো না। তবে ভদ্রলোকের মতলবটা কি ঠিক বুঝেছে। কথাটা বুঝেই ও তাচ্ছিল্যপূর্ণ হেসে উচ্চারণ করলো, “ধরি মাছ না ছুঁই পানি কথাটা একদম ঠিকঠাক। ইমরোজ খান পাথর নামটার আগে মরহুম শব্দটা খুব দ্রুত যোগ হতে চলেছে। খেলা তো শুরু মাত্র।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here