বৃষ্টির_রাতে #রূবাইবা_মেহউইশ (৬)

0
521

#বৃষ্টির_রাতে
#রূবাইবা_মেহউইশ
(৬)

“মেহউইশ ডেকে স্বাদ মিটে গেছে?”

মেহউইশের এই কথাটায় হালকা একটা টিপ্পনী ছিলো। রিশাদ বুঝতে পেরে রিয়াক্ট করলো না বরং সত্যিটা প্রকাশ করলো, “মেহ উইশ তো এখনো চট করে বলতে পারি না জানোই। একা থাকার সময় চেষ্টা করি মেহ উইশ বলতে কিন্তু লোকের সামনে কি সেভাবে বলা যায়?”

মেহউইশের হাসি উঁচু থেকে এবার আরো উঁচুতে উঠলো। সেও জানে রিশাদ তার নামটা এক দফায় উচ্চারণ করতে পারে না তবুও চেষ্টা করে। আর এই চেষ্টায় যেই ভাঙা ভাঙা উচ্চারণটা হয় তার শুনতে খুব ভালো লাগে। কেমন যেন কেটে কেটে বলা মেহ আর উইশ। একটু আগে যখন দুটো ছেলে মেয়েকে নিয়ে এলো ঘরের সামনে তখন সে মেহ উইশ রেখে বলল, “মেবিশ একটা সমস্যা হয়েছে। এই যে এনারা একটা কাপল নিয়ে এসেছে। ওনাদের সাথে মেয়ে দুজনই তাই এনার একটা এক্সট্রা রুম দরকার। আমি বলছিলাম কি ফুপি তো ঢাকায়।”

রিশাদ আরো কিছু বলার আগেই মেহউইশ বলল, “সমস্যা নেই তো। ফুপির রুমের তো এক্সট্রা লক আছে আর ইনিই তো মেয়েটা?”

সুপ্রভা মাথা নেড়ে জবাব দিতেই মেহউইশ বলল থাকতে দাও। ছেলেরা তো আর থাকছে না এখানে?

তাসিন সাথে সাথেই বলল, “না আমরা ছেলেরা দোতলায় থাকবো। কাপল থাকবে তিন তলায় আর ও একা মেয়ে তাই একটু টেনশন হচ্ছিলো।”

“না আমার কোন সমস্যা নেই তবে,,”

মেহউইশের কথা শুনে রিশাদ একটু ভাবুক দৃষ্টিতে তাকালো। সুপ্রভা চিন্তায় পড়ে গেল সাথে তাসিনও। মেহউইশ বলল, “রুমটা আমাদের পারসোনাল। যার রুম তিনি আবার জিনিসপত্রের নড়চড় পছন্দ করে না তাই একটু খেয়াল রাখবেন এ ব্যপারে।”

সুপ্রভা কিছু বলতে যাচ্ছিলো তার আগেই তাসিন বলে, তাহলে তো তুমি জেগেই থাকো। যেই চঞ্চল মেয়ে নিশ্চিত আপনাদের ঘরে ঝড় বইয়ে দেবে।”

তাসিনের কথা শুনতেই নাক ফুলিয়ে বড় বড় চোখ করে তাকালো সুপ্রভা। তার পক্ষে সম্ভব হলে সে তখনই তাসিনকে মাঝ দরিয়ায় ফেলো দেয়। রিশাদ দুজনের অবস্থা দেখে অবাক হয়ে গেল। দুজন যে এই মুহুর্তেই কুরুক্ষেত্র বাঁধাতে পারে সে বিষয়ে তার আন্দাজ করতে বাকি নেই। তাই মেহউইশকে বলল, “আচ্ছা বাদ দাও ইনি বাচ্চা মেয়ে নয়। রাতটাই থাকবে কাল রুম চেকিং হয়ে যাবে।”

এরপর আর কথা বাঁধায়নি কেউ তবুও তাসিনের মনে কেমন একটু খচখচানি রয়ে গেল। সুপ্রভাকে সে খুব ভালো করে চেনে না তবুও কেন যেন একটা দ্বায়িত্ববোধ অনুভব হলো তার প্রতি। মুরাদ আর টিয়াকে তিন তলায় রেখে সুমন, রিমন দোতলায় রুমে ঢুকেছে। টিয়া আর সুপ্রভা দুজনের সাথেই ব্যাগ ছিলো। রিসেপশনের সামনেই ব্যাগটা ফেলে গেছে সুপ্রভা সেটা নিয়ে তাসিন আবার গেল তিনতলায়। দরজায় নক করতেই সুপ্রভা কি হোলে চেক করলো। তাসিনকে দেখে তার ভয় হলো কিছুটা। সবাই যার যার রুমে এখন এই ছেলে কেন এলো? দরজা খুলবে না খুলবে না করেও আবার খুলেই ফেলল। মনে মনে প্রস্তুতি নিলো যদি তাসিন কিছু উল্টাপাল্টা করতে চায় তবে সে চেঁচিয়ে উঠবে। দরজা খুলেই সে ঝট করে ঘরের বাইরে চলে এলো। মধ্যরাত হলেও হোটেলের ভেতর কোলাহল রয়ে গেছে। সমুদ্রের গর্জন, টুরিস্ট অনেকেই বিচ থেকে ফিরছে কেউ কেউ আবার এই মধ্যরাতেই বের হয়ে যাচ্ছে। সুপ্রভাকে বেরুতে দেখে তাসিন বলল, “বেরিয়ে এলে কেন আমি তো শুধু ব্যাগটা দিতে এসেছিলাম তোমার। আর শোন কেউ নক করলে আগেই দরজা খুলবে না। ভেতর থেকে প্রশ্ন করবে কে। জেনে তবেই দরজা খুলবে।”

তাসিন ব্যাগটা সুপ্রভার হাতে দিয়ে আর এক সেকেন্ডও অপেক্ষা করেনি। সুপ্রভাও ব্যাগটা নিয়ে অন্যমনস্কভাবে ঘরে ঢুকলো আর ভাবতে থাকল সে মানুষ চিনতে ভুল করেছে।

পূব দিগন্তে আলো ফুটতেই সমুদ্রের উত্তাল হাওয়া যেন বিষন্ন হয়ে এলো। রাতে যে গর্জন আর হুঙ্কারে এক দাপুটে আওয়াজ শোনা যেত সকালের আবহাওয়ায় তেমন মনে হচ্ছে না তাসিনের। রাতে মাত্র দু ঘন্টা ঘুমিয়ে এই ভোরেই সে হোটেল থেকে বেরিয়েছে। ঘন্টাখানেক বিচেই হাঁটাচলা করলো তারপরই বড় মামার ফোনে তার টনক নড়লো কাল রাতে সে মামীকে ফোন করে জানায়নি বাড়ি না ফেরার কথা। মামী নিশ্চয়ই তার জন্য অপেক্ষা করেছেন। বড় মামী মোবাইল ব্যবহারে অভ্যস্ত নন আর মামাও নিশ্চয়ই আগেই ঘুমিয়েছিল। বাড়িতে সবাই নিজের মত চলে আর মামীটা বোকাসোকা মানুষ বেপরোয়া মানুষগুলোর চিন্তায় অস্থির হয়ে থাকে৷ খারাপ লাগল তার এ ভারী অন্যায় করেছে। বন্ধুরা সবাই এখনও ঘুমাচ্ছে তাই আপাতত মুরাদের নম্বরে একটা মেসেজ দিয়ে সে রওনা হলো বাড়ির উদ্দেশ্যে। অফিসেও আজ জরুরি কাজ আছে তাই এখনই ফিরে যাওয়াটা উত্তম৷ রাতে আবার রিশাদ সাহেবের স্ত্রী অল্প সময়ে সবার জন্য নুডলস রান্না করে পাঠিয়েছিলেন তাই এই ভোরেও সে খিদের কষ্ট পাচ্ছে না। ভাগ্যিস লোকটা আর তার স্ত্রী খুব আন্তরিক নইলে সামান্য টুরিস্টের জন্য এতোটা কেউ কেন করবে!

“দোস্ত রাত কি শেষ হয় নাই তোদের? পেটে আবার খিদের টান পড়ছে বের হ জলদি।”

ফোনে একটা মেসেজ আসতেই তার শব্দে ভাঙা ঘুমটা এবার গায়েব হলো মুরাদের। রিমনের মেসেজ পড়ে কপাল কুঁচকে টিয়ার দিকে তাকালো। টিয়া ঘুমুচ্ছে এখন রাতে রুমে ঢুকে বেশ কান্নাকাটি করেছিল। অপছন্দের ছেলেকে বিয়ে করতে চায়নি কিন্তু পালিয়ে আসার মত হঠকারিতার জন্য অপরাধবোধে আর নিজেকে সামলাতে পারেনি৷ ভোরের দিকেই ঘুমিয়েছে আর মুরাদও তাই রাত জেগে ভোরেই ঘুমিয়েছিল। কিন্তু ঘুমটা তার হয়নি পেটের খিদেয়। রাতে নুডুলস খেয়ে তার পোষায়নি তাই এখনই সে মুখ হাত ধুয়ে বের হলো। যাওয়ার সময় ইচ্ছাকৃতভাবে নিজের ফোনটা আনলক করে টিয়ার পাশে রেখে গেল। ঘুম ভাঙলেই যেন সে অস্থির না হয় তাকে না পেয়ে আর না ভয় পায় কোন কারণে। রুম বাইরে থেকে লক করে সে নিচতলায় গেল। মেয়ে দুটো নিজেদের ব্যাগে করে কাপড় আনলেও ছেলেরা কেউ সে সুযোগ পায়নি। তিন বন্ধু রিশাদের কাছে শুনেছিলো দোতলায় রেস্টুরেন্ট আছে তাদের৷ সেখানেই নাশতা করলো তারা কিন্তু সুপ্রভা জেগেছে কিনা তা নিয়ে আবার ভাবতে হলো। তাসিন যাওয়ার সময় রিমনকে বারবার করে বলে গেছে সুপ্রভার কথা যেন নাশতা করায় আর খেয়ালও রাখে। এতে অবশ্য রিমন মজা করতে ছাড়েনি৷ সেও বারবার বলছিল, “মেয়েটার জন্য তোর এত দরদ কেন বলতো! সেই রাতে কি জোর করে শুধু বাড়ি পৌঁছে দিয়েছিলি না অন্য কিছুও করেছিস?”

এ কথায় অবশ্য রিমনকে চপেটাঘাত করেছিল। তিন বন্ধুর নাশতা শেষ হতেই সুমন বলল একটু বিচে ঘুরে আসি চল। মুরাদ গেল না তাই রিমন আর সুমন বের হলো। হোটেলের গেইটে যেতেই দেখা হলো রিশাদের সাথে। হাই, হ্যালো করতেই রিমন জানতে চাইলো তার পাশের বাচ্চাটা কে? রিশাদ নির্জনের হাত ধরে তাদেরকে বলল, “আমার ছেলে নির্জন।”

রিমন মজার লোক সে শুনতেই বলল, “ওহ হোটেল নির্জনের ভবিষ্যৎ উত্তরাধিকারী। এই পিচ্চি এই বয়সেই কত বড় হোটেলের স্বত্বাধিকারী হয়ে গেলে কি কপাল তোমার!” কথাটা বলার ধরণ একদম বাচ্চা ছেলের মত ছিলো কিন্তু বাক্যটা তবুও সঠিক নয় বলেই সুমন পেছন থেকে তার পিঠে চিমটি কাটলো। রিশাদও গম্ভীর দৃষ্টি আরো গভীর করে তাকালো রিমনের দিকে। নির্জন হঠাৎ বলল মায়ের কাছে যাবে তাই রিশাদ আর দাঁড়ালো না।

সকাল দশটা নাগাদ সুপ্রভা আর টিয়া যখন নাশতার জন্য প্রস্তুত হলো তখন এসে মেহউইশ দেখা করলো তাদের সাথে। খুবই আন্তরিকতার সাথে গল্প করলো এবং জানতে পারলো টিয়া আর মুরাদের পালিয়ে আসার মূল ঘটনা। সে না চাইতেও বলে ফেলল তারা এভাবে পালিয়ে অন্যায় করেছে। সুপ্রভার মনে হলো মেয়েটি খুব ভালো। আর তাকে দেখে বোঝার উপায় নেই সে বিবাহিত কিংবা এক সন্তানের মা। স্বাস্থ্যটা একটু বেশি মনে হলেও মেয়েটির মুখে আদুরে আদুরে একটা ভাব আছে। কিন্তু সুপ্রভার আবার একটু রাগও হলো মনে মনে রিশাদ বিবাহিত বলে। কাল রাতে প্রথম যকন রিসেপশনে দেখলো লোকটাকে তার তখনই চোখ আটকে গিয়েছিলো তার মুখে। খোঁচা দাঁড়ি ভর্তি গালেও কি চমৎকার লাগছিলো সেই সৌম্যদর্শন মুখটা। নাকের সেই তীক্ষ্ণতা ঠিক পাকিস্তানিদের মত। আবার গায়ের রংটাও একদম চেহারাকে ফুটিয়ে রেখেছে যেন। মেহউইশের দিকে তাকিয়ে প্রথমেই মাথায় যে কথাটা আসে তারা মেইড ফর ইচ আদার। সে আরো ভাবে তার জীবনেও যদি এমন কেউ আসতো! নাশতার শেষে মেহউইশ বলল, “বিচে যাবে না?”

টিয়া তখনও মন খারাপ করে আছে। তা দেখে সুপ্রভা বলল, “না আপু ওর যা অবস্থা তাতে বসেই থাকি। বিপদ ঘাড়ে আমারও আছে তবুও এখন বিচের আনন্দটা মিস না করলে ভালো হত।”

কথাটা সে টিয়াকে শোনাতেই বলেছে। সে তো বিচে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত তবে সে মনে মনে তাসিনকেও খুঁজছে। ওই বদ লোকটাকে সকাল থেকে একবারও দেখা গেলো না কেন!

রিশাদ ডাকছে বলে মেহউইশ নিজের ঘরে গেল। সুপ্রভা আর টিয়াও বিচে গেল মুরাদ ডাকল বলে।

অফিস টাইম তাসিনের শুরু হয় নয়টায়। সে এসে পৌঁছেছে নয়টা পঁয়তাল্লিশে। কক্সবাজার থেকে খুব ভোরে ফিরলেও বাড়িতেই তাকে অনেকটা সময় মামার সামনে কারাগারে বন্দীর মত দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। রাতভর সে বাড়ির বাইরে থেকেছে এমনকি আগে থেকে কাউকে কিছু জানায়নি তার জন্য একদফা ধমক আর শাস্তিস্বরূপ গাড়ির চাবি জমা দিয়েছে মামার হাতে। বড় মামা মানুষ গম্ভীর আর খুব রাগী। মামী আবার একদম বিপরীত শান্ত স্বভাবের হলেও রাগ কি জিনিস তা জানে না৷ মামার ধমকাধমকির পালা শেষ হতেই মামী তাকে ডাইনিংয়ে না নিয়ে ঘরে বসিয়ে নাশতা খাইয়েছেন। নির্ঘুম থাকায় চোখে ক্লান্তি দেখে বারবার বলছিলেন অফিস কামাই দিয়ে আগে একটু ঘুম দিতে৷ তারপর নিজেই হাজার পাঁচেক টাকা হাতে গুঁজে দিয়ে বলেছিলো, “তোমার মামা যেন টের না পায়। এত ইচ্ছে কক্সবাজারে যাওয়ার আগে বলোনি কেন। বলে গেলেই পারতে৷ দুদিনের ছুটি নিয়ে ঘুরে এসো তোমার মা আর মামাকে আবার বলো না যেন মামী টাকা দিয়েছে নইলে দু ভাই বোন আমাকে ঝাড়বে।”

নাশতা করতে করতে তাসিন কোনমতে হাসি চেপে রেখেছে। এত ইমোশনাল তার বড় মামীটা এদিকে ছোট মামী আবার একদম সেয়ানা। ঝগড়া বাঁধায় দুদিন পরপরই।

তাসিন নাশতা করে টাকাগুলো পকেটে পুরে আবার গেল বড় আপুর ঘরে। বড় মামার এক মেয়ে দুই ছেলে। ছেলেরা দুজনেই বাহিরে স্যাটেল মেয়ে আবার বিয়ের পরও বাড়িতেই থাকে৷ দুলাভাই এক হাবাগোবা মানুষ বউ যা বলে তাই শুনে। বড় আপা বলে বাবা মা’র একমাত্র মেয়ে আমি দূরে থাকবো না। ব্যস আহাম্মক লোক নিজেই এসে ঘরজামাই থাকছে নিজের বাবা মাকে ফেলে। তাসিন দুলাভাইয়ের এই হ্যাবলাপনা পছন্দ না হলে তাঁর টাকা দেওয়ার ব্যাপারটা ভালো লাগে। অফিসে যাওয়ার জন্য বের হতেই শালা দুলাভাই মুখোমুখি। দুলাভাই তাকে দেখে মজা করলো, “কি শালা ভাই রাতে নাকি মেয়ে নিয়ে ঘুরতে গিয়েছিলেন?”

কথাটা মজার ছলে বলেও বোকা লোকটা ফেঁসে গেল। তাসিন বলল, “হ্যাঁ দুলাভাই গিয়েছিলাম কিন্তু টাকার অভাবে ফিরে আসতে হলো৷ আপনি একটু হেল্প করলেই আর দুটো দিন কাটিয়ে আসতাম।”

ব্যস, বোকাহাঁদা লোকটা সত্যিই তাসিনকে দাঁড় করিয়ে ঘরে গেল আবার। ফিরে এসে চার হাজার টাকা দিয়ে বলল, “স্যরি শালাবাবু তোমার বোন এর বেশি দিলো না। আর বলল তুমি যদি এই টাকা উল্টাপাল্টা কোন কাজে খরচ করো তাহলে আমাকে ডিভোর্স দিবে।”

কাল রাত থেকে সকাল পর্যন্ত যতোটা নিজেকে গালাগাল করেছে তাসিন ঠিক ততোটাই এখন বাহবা দিচ্ছে। ঝমঝমিয়ে আসা বৃষ্টির মত নয় হাজার টাকা হাতে এসে গেছে৷ আপাতত মুরাদের কাজে লাগবে ভেবে সে টাকাগুলো সাথে নিয়েই অফিসে গেল। লেট করে অফিসে ঢোকায় বসের কেবিনে ডাক পড়লো। রাত কেটেছে ঠিকঠাক না ঘুমিয়ে সকালেও ঘন্টাখানোক জার্নি করেছে চোখ-মুখে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট তা দেখে বস তাকে প্রথমেই প্রশ্ন করলো, এভরিথিং ইজ ওকে মিস্টার তাসিন?”

সকাল থেকেই তো মাথায় তার উল্টাপাল্টা বুদ্ধি ঘুরছে আজ। বড় মামীর থেকে টাকা গছিয়ে নিলো, দুলাভাইকেও বোকা বানালো এখন বসকে একটু বানালে খুব কি ক্ষতি হবে!

“না মানে বস..” তাসিনের কথা শেষ না হতেই বস বলল, “কাল আপনার মিসেস দেখলাম খুব রাগী মুডে পার্টিতে এসে আপনাকে আটক করলো। সে ঝামেলা ঠিক হয়নি তাই তো! আপনার চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। আসলে সুন্দরী বউ হলে এমনই হয়। আপনার তো তবুও ইয়াং বউ আমার তো চল্লিশ বছর বয়সী মেডামও এমনই করে।”

তাসিন এবার নিজেই বোকা বনে গেল। ভেবেছিল বসকে বোকা বানিয়ে অসুস্থতার বাহানায় ছুটি নিবে। কিন্তু বস তো আরো দুই ডিগ্রি উপরে ভেবে বসে আছে। শেষ পর্যন্ত তাকে অবাক করে দিয়ে বস জানতে চাইলো ঝগড়া কি নিয়ে। সে আর কি করে। বানিয়ে আরো দুটো মিথ্যে বলে দিলো৷ বউ কক্সবাজার যেতে চেয়েছিল সে কখনোই নিয়ে যায়নি। এই নিয়ে রাগ করে বউ বাপের বাড়ি যাচ্ছে।

পঞ্চাশে পা রাখা বস কি ভাবলো কে জানে বলল একটা এপ্লিকেশন দাও দুদিনের ছুটির। আমি সাইন করে দিচ্ছি৷ ঝামেলা মিটিয়ে ফিরে এসে ভালোভাবে কাজে জয়েন করবে। সোনায় সোহাগা যে এভাবেও লাগতে পারে তা জানতো না তাসিন৷ আজ একদম প্রমাণসহ অভিজ্ঞতা হয়ে গেল তার। আফসোস এই গাড়িটা হাতছাড়া হলো নইলে আরো বেশি সুখী হয়ে যেত সে। এপ্লিকেশন সাবমিট করার আধঘন্টার মধ্যেই তাসিন বের হলো অফিস থেকে৷ বাস ে চড়ে মামিকে কল দিয়ে বলল সে কক্সবাজার যাচ্ছে আজ আর আসবে না। দুপুর ঠিক দেড়টায় গিয়ে উপস্থিত হলো তাসিন। তাকে দেখেই বন্ধুরা প্রশ্ন করলো অফিসে যায়নি? সংক্ষেপে তা জানিয়ে দিতেই বন্ধুরা একেকজন হেসে কাহিল৷ সুপ্রভা আর টিয়া বসেছিল হোটেলের গ্রাউন্ডে সুইমিংপুলের পাশে৷ সেখান থেকেই বাগানের সামনে থাকা তাসিনকে দেখে অবাক হয় সুপ্রভা। লোকটা কোথায় ছিলো সারা সকাল আর এখনইবা এলো কোথা থেকে! টিয়ার মন ভালো আছে এখন কিছুটা কিন্তু ভয়েও আছে। বাড়ির পরিস্থিতি খুব গরম সে খোঁজ নিয়ে জেনেছে৷ দুপুরের আগেই মুটাদের টাকায় সুমন, রিমন আর মুরাদ নিজেদের জন্য প্রয়োজনীয় পোশাক কিনেছে একটা একটা করে। তাসিনকে অপেক্ষায় রেখে তিনজনই গোসলে গেল। তাসিন একা দাঁড়িয়ে না থেকে সুইমিংপুলের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।

“তোমরা কি খাবার খেয়েছো?”

“না ভাইয়া।” টিয়া জবাব দিলো তাসিনের কথার। সুপ্রভা মুখ খুলল না। বন্ধুরা গোসল সেরে আসতেই সবাই লাঞ্চ করে রেস্ট নিলো কিছু সময়। বিকেলের দিকে সমুদ্রের ওপাশে অস্তমিত হওয়া সূর্যটাকে অবলোকনের শখ পূরণ করতেই সবাই একসাথে বেরিয়ে গেল বিচের উদ্দেশ্যে। মুরাদ টিয়া পাশাপাশি হাটলেও তাদের হাতে হাত রাখতে যে এখনো সংকোচ হচ্ছে তা স্পষ্ট। অন্তত পাবলিক কোন প্লেসে তারা সহজ হতে পারছে না বলেই মনে হচ্ছে৷ সুমন আর রিমন কিছুটা আগে আগেই চলছে। সুপ্রভা খুব ধীর পায়ে চলছে একদম একা। তার জন্যই কিনা কে জানে তাসিনও খুব ধীরে ধীরে হাটছে৷ সুপ্রভা খেয়াল করেনি তাসিনকে সে দেখছে অদূরে থাকা রিশাদকে। সে কেমন ছেলেকে কোলো নিয়ে ঘোড়ায় উঠছে জোর করে। খুব সম্ভবত এটা মোহউইশ চাইছে না তাই দু একবার কথা বলার পর তাকে আলাদা হয়ে হাটতে দেখা যাচ্ছে। খুব বেশি সময় গড়ায়নি তার মধ্যেই চোখে পড়লো রিমন দ্রুত পায়ে পা বাড়িয়ে এগিয়ে যাচ্ছে মেহউইশের দিকে। তাসিনও লক্ষ্য করেছে তা আর তাতেই ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছে। ভয়ে তার মুখ থেকে বেরিয়ে এলো, “ওহ নো রিমন। ডোন্ট সামথিং রং দোস্ত।”

তাসিনের কথাটা স্পষ্ট শুনলো সুপ্রভা সে জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে? তাসিন কিছু না বলে ছুট লাগালো। তার দৌড় দেখে কিছু না বুঝে সুপ্রভাও ছুটলো। আর তাদের দুজনকে দেখে কিছু না বুঝেই টিয়া আর মুরাদও গেল শুধু চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো সুমন।

“হাই, আমি রিমন। কালই কক্সবাজারে প্রথম এসেছি।”

মেহউইশের সামনে দাঁড়িয়ে কথাটা বলল রিমন৷ মেহউইশ তাকালো একটু হাসলো।

“আপনার নামটা কি?”

“মেহউইশ রায়হান।”

“ওয়াও, নাইস নেম। সকাল থেকেই আপনাকে কয়েকবার দেখেছি হোটেল নির্জনে৷ আমিও সেখানেই উঠেছি বন্ধুদের সাথে। তা আপনি কোথা থেকে এসেছেন?”

“আমি এখানেই থাকি।”

“তা মে হ উইশ আপনি কি করেন?”

“কেন বলুন তো?” এবার মেহউইশ সরাসরি রিমনের দিকে তাকিয়ে প্রশ্নটা করলো। রিমন জবাবে কিছু বলতেই যাচ্ছিলো ঠিক তখনি তাসিন, সুপ্রভা আর তাদের পরে মুরাদ আর টিয়াও এসে উপস্থিত হলো। হাপাচ্ছে চারজনই তা দেখে রিমন বিরক্ত হলো। সে এসেছিলো মেয়েটার সাথে একটু ভাব জমাতে কিন্তু এদের জন্য তা অসম্ভব।

চলবে
(লেখায় অনেকরকম ভুলত্রুটি থাকে তা ক্ষমা করে সম্ভব হলে শুধরানোর সুযোগ করে দিবেন। আর আপনারা এত বেশি মন্তব্যহীন থাকলে সত্যিই লেখায় মনযোগ পাই না আগেও বলেছি এখনও বলছি)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here