-গভীর রাতে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে থাকবেন না!কারো নজর লেগে যেতে পারে!
মোবাইলে শুধু এটুকু মেসেজ এসেছে।একটা প্রাইভেট নাম্বার থেকে। কে পাঠিয়েছে,কেন পাঠিয়েছে তা জানিনা!
আর আমি গভীর রাতে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে থাকি এটা লোকটা জানলো কেমন করে?
বিড়বিড় করতে করতে আবারো বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ালাম।কেমন একটা নিশ্চুপ পরিবেশ।কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে পরিবেশটা উত্তাল হয়ে উঠলো।বাজারের মন্দিরের দিক থেকে একটা গরু ডাকার আওয়াজ আসছে।যেন গরুটিকে কেউ পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যা করছে।ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল।সামনের দিকে ঝুঁকে রাস্তার দিকে তাকাতেই দেখি আমাদের বিল্ডিংয়ের সামনে একটা মহিলা দাঁড়িয়ে।তার হাত ধরে আর একটা ছোট বাচ্চা।মহিলার চুলগুলো মুখের উপর দিয়ে সামনে ছড়ানো।পাশের বাড়ির গেটের দিকে তাকাতেই দেখি একই চিত্র।আমার মাথা সেই সময় কাজ করছিলো না।সারাদিন কঠোর পরিশ্রম করে না ঘুমিয়ে রাত জাগার কারনে আমার হ্যালুসিনেসন হতে পারে।এটা ভেবে আমার রুমে চলে আসলাম।।
সকালে এক কাপ কফি হাতে করে বেলকনিতে যেতেই নীচে অনেক মানুষের আনাগোনা দেখতে পেলাম।দেখি ভ্যানে করে একটা মানুষের লাশ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।ঘটনা পরিষ্কার করে বোঝার জন্য নীচে নেমে গেলাম।
একটা মহিলাকে জিজ্ঞাসা করতেই বলে উঠলো,
-আপা,আপনি বাইরের মানুষ।দুদিন হলো ঘরভাড়া নিছেন।এগুলো শুনে খামাখা ভয় পাবেন।তারচেয়ে বরং না শোনাই ভালো।
-তবুও আপা,বলেন না!
-রাতে কি আপনি গরু ডাকার আওয়াজ শুনেছেন?
-হ্যাঁ, রাত দুটোর দিকে!
-রাস্তার দিকে তাকাইছিলেন নাকি?
-হুম,রাস্তার দিকে তাকিয়ে দেখি প্রতিটা ঘরের সামনে একজন মহিলা ও একটা বাচ্চা দাঁড়িয়ে আছে।
-আপা, বলেন কি?আপনার তো দেখি খুব সাহস।আর খবরদার দাঁড়াবেন না ওখানে!
-এই লাশের সাথে এগুলোর সম্পর্ক কি সেটাতো বলবেন!
-প্রতি অমাবস্যার রাতে ওই মন্দিরটার দিক গরু ডাকার আওয়াজ আসে।আর পরেরদিন সকালে মন্দিরের বটগাছের তলাতে একটা লাশ পাওয়া যায়।একটা নগ্ন,পোড়ানো লাশ ওখানে পড়ে থাকতে দেখা যায়।কিন্তু কোনো ছাই বা কিছু দেখতে পাওয়া যায় না।আজ দুই বছর হলো মন্দিরটাতে এভাবে লাশ পাওয়া যায়।কেউ সাহস করে গরু ডাকার আসল রহস্য বের করতে পারে নাই।একদিন আমরা সবাই মিলে বের হতে যাবো তখনি গেটের সামনে একটা মহিলা ও একটা বাচ্চা ভুত দেখি সবাই।মহিলার মুখ এতোটাই বিভৎস ছিল যা বলে বোঝাতে পারবো না আপনাকে।সেই থেকে কেউ আর সাহস করে এগোই না।
মহিলার কথা শুনে আমার গলা শুকিয়ে আসলো।একে তো নতুন এলাকা।তারপরে এইরকম অভিজ্ঞতা হবে জীবনেও ভাবতে পারিনি।বাড়ির কাছে হলে মা কে আমার কাছে রাখতাম, কিন্তু এটা তো অনেক দূরে।
..
সকালের নাস্তা করে অফিসে চলে আসলাম।কাজে মন বসাতে পারছিলাম না।সেটা দেখে আমার একজন কলিগ আমাকে বললো,
-সুমনা তোমাকে বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছে।নতুন বাসার জন্য কোনো সমস্যা হচ্ছে?
-না মাহিম।আমি অন্য একটা বিষয় নিয়ে চিন্তিত।আচ্ছা, আপনার বাসা কোথায়?
-আপনার বাসা থেকে ১ কিলোমিটার দূরে।
কিন্তু কেন বলেন তো?
-না মানে,আমার বাসার পাশের মন্দিরটাতে গতকাল একটা লাশ পাওয়া গেছে জানেন আপনি?
-এটা আর নতুন কি?আমি এখানে ৬ মাস আছি।ছয় মাসে ছয়টা লাশ পাওয়া গেছে শুনেছি।পুলিশ কতবার যে অভিযান করেছে।কিচ্ছু পায় না,কোনো প্রমাণ মিলে না হত্যার।সবাই ধারণা করে মন্দিরে যেসব মানুষের লাশ পোড়ানো হয় সেই লাশগুলো পরে প্রতিশোধ নিচ্ছে।
-আচ্ছা,লাশগুলোতো ছাই হচ্ছে না।শুধু তেলে ভাজা মাংসের মতো করে পুড়িয়ে মারা হয়।আমার কেমন যেন লাগছে বিষয়টা!
-অফিসে মন্দিরের কথা আলোচনা করে নিষেধ।তবুও আপনাকে বললাম,বেশি মাথা ঘাটিয়েন না। প্রথমত নতুন জায়গায় এসেছেন, দ্বিতীয়ত মেয়ে মানুষ হয়ে এসবে নাক গলানোর দরকার নেই।ভয় পাবেন খালি খালি।
….
অফিস থেকে বাড়িতে এসে সেদিন গুগল ম্যাপে সার্চ দিয়ে এলাকাটা দেখে নিলাম ভালো করে।মন্দিরটা একেবারে এলাকার শেষের দিকে।৪০০ বছর আগেকার পুরোনো মন্দির।অনেক জনপ্রিয়।তাই সাহস করে হয়তোবা প্রশাসন কিছু করতে পারে না।মন্দিরের ওপাশটাতে শুধু মাঠ আর মাঠ।শ’দুয়েক বাড়ি এই এলাকায়।
বিষয়টা নিয়ে ভাবছি,তখনি সেই প্রাইভেট নাম্বার থেকে একটা ম্যাসেজ।
-আজ রাতে দাঁড়িয়ে থাকবেন।আপনাকে দেখার অনেক ইচ্ছা জাগছে।
অপরিচিত কোনো জিনিস যদি সারপ্রাইজ হয়ে লাইফে আসে তাহলে সেটা দেখার প্রবল ইচ্ছে সবার মধ্যেই কাজ করে।আমার মধ্যেও করতেছিল।তাই আমি সেদিনও বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম।কিন্তু একটু লুকিয়ে থাকার চেষ্টা করলাম।সেটাতে সাকসেসফুল হলাম আমি।একটু পরেই দেখি মাথায় টুপি পড়া একটা ২৭/২৮ বছরের যুবক আমার বেলকনির দিকে বারবার তাকাচ্ছে।রাস্তার আলোতে যতটুকু দেখাগেলো তাতে অপরিচিত মনে হলো।এবার আমি সোজা হয়ে দাঁড়ালাম।কিছুদূর গিয়েই লোকটা একটা বাড়িতে ঢুকে গেলো।
এভাবে প্রায় ২০ দিন মত আমিই লোকটাকে ফলো করলাম।প্রতিদিন লোকটা ওই বাড়িতে ঢোকে,ঠিক রাত ২ টাতে।
লোকটাকে জানার জন্য আমি একটা শুক্রবারে ওই বাড়িটাতে চলে গেলাম।যেখানে প্রতিদিন অপরিচিত লোকটা ঢোকে।বাসার কলিংবেল চাপতেই একটা বয়স্ক মহিলা বের হয়ে আসলো।
-আসসালামু আলাইকুম আন্টি।
-ওয়ায়ালাই কুমুস সালাম।মা তুমি কে?
-আন্টি আমি ওই পাশের বিল্ডিংয়ের ভাড়াটিয়া।আজ ২৫ দিন যাবত এসেছি।
-আমার কাছে কিছু দরকার?
-আন্টি,মানে আপনার কি ২৭/২৮ বছর বয়সী কোনো ছেলে আছে?
-কেন মা?
-না মানে একটু জানতে চাচ্ছিলাম।প্রতিদিন আমি বেলকনিতে দাঁড়িয়ে থাকি।তাকে এই বাড়িতেই ঢুকতে দেখি।তাই জানতে চাচ্ছিলাম।
-তুমি নিশ্চিত যে সে এই বাড়িতে ঢোকে?
-হ্যাঁ, আন্টি।আমি নিজের চোখে দেখেছি।
-কিন্তু মা,আমার ছেলে তো আরো ৭ মাস আগে মারা গিয়েছে।
আমি এই বাড়িতে একা থাকি!
-কিহ,তাহলে আমি কাকে এই বাড়িতে ঢুকতে দেখি।আমাকে ম্যাসেজ দেয় কে?
-তা তো জানিনা মা।তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে।
…গল্পটা ভালো লাগলে পেইজটি ফলো করে রাখুন তাহলে পরবর্তী পর্ব পোস্ট করলে আপনার কাছে নোটিফিকেশন চলে যাবে।
নতুন একটা জায়গায় এসে এভাবে একের পর এক ধাক্কা খাবো তা জীবনেও ভাবতে পারিনি।নিজেকে সামলে নিয়ে আন্টির থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসলাম।।বাসায় এসে মাহিমকে ফোন করে আমার বাসায় আসতে বললাম।
-কি হয়েছে সুমনা?
মাহিমকে সব খুলে বললাম।সে আমাকে রাগ করলো।আমি এই বিষয়টাতে মাথা ঘামাচ্ছি, তাই নাকি আমার সাথে এমনটা হচ্ছে।
আমি মাহিমকে ম্যাসেজ দেখাতে গেলাম।কিন্তু সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো মোবাইলে একটা ম্যাসেজ ও দেখতে পেলাম না।আমাকে কিছু সময় স্বান্তনা দিয়ে মাহিম চলে গেলো।
আবারো আরেকটি অমাবস্যার রাত চলে আসলো।সেদিন নীচের বাসার সবাই এসে আমাকে সতর্ক করে দিয়ে গেলো।এইরাতে যেন বারান্দায় না যাই আমি।
রাতে ফেসবুকিং করতে করতে কখন যে রাত ১ টা বেজে গেছে খেয়াল করিনি।হঠাৎ সেই ভয়ংকর শব্দ।মনে হচ্ছে পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যা করছে।পরিবেশটা কেমন ভয়ংকর হয়ে গেলো।ভয়ে গায়ের লোম দাঁড়িয়ে গেল।কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লাম।কোনোমতেই দু’চোখের পাতা এক করতে পারছিলাম না।ভয়ংকর এক রাত পার করার পরে সকালে উঠে যথারীতি একটা লাশ পাওয়ার খবর শুনলাম।এবার আর ভয় না পেয়ে লাশের কাছে চলে গেলাম।একদম বীভৎস অবস্থা।
মাথার ভিতরে শুধু এই ঘটনা ধুরতে থাকলো।আবারো সেই আগের মতো কোনো কাজে মন বসাতে পারছিলাম না।এবার অফিস থেকে তিনদিনের ছুটি নিলাম।ছুটি নিয়ে সোজা চলে গেলাম থানায়।
থানার ওসিকে মন্দিরের লাশের কথা জিজ্ঞাসা করতেই আমার কথা পাশ কাটিয়ে যেতে লাগলো।কোনোভাবেই সে আমার সাথে এই কথা বলতে প্রস্তুত নয়।আমি থানা থেকে বিষন্ন মনে বের হয়ে আসছিলাম।তখন এক মহিলা কনস্টেবল আমাকে ডাক দিলো।তার কাছে যেতেই বললো,
-আপনি মন্দিরের লাশের ব্যাপারে শুনতে চাচ্ছেন কেন?
-এই ভয়ংকর মৃত্যু আমার ঘুম কেড়ে নিয়েছে।আমি এর পোস্টমর্টেম রিপোর্ট দেখতে চাচ্ছিলাম।
-আমি আপনাকে দেখাতে পারি,যদি আপনি কাউকে না বলেন?
এরকম ভালো মানুষ পাওয়া মুশকিল।তাই তাকে বললাম,
-কি যে বলেন,আপনি আমার উপকার করবেন।আর আমি সবাইকে বলে দিবো,তা হয়?
তিনি আমাকে সন্ধ্যার পরে একটা জায়গায় আসতে বললেন।
যথাসময়ে তিনি চলে আসলেন,আমাকে সবগুলো লাশের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট দেখালেন।আশ্চর্য্য হলেও এটা সত্য যে লাশের গায়ে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই।না আছে কোনো হাতের ছাপ।শুধু আগুনের তাপের সাহায্যে তাদের হত্যা করা হয়েছে।এ পর্যন্ত ৮ টা লাশ পাওয়া গেছে।সবগুলো একই।
-আপনার লাশগুলোর পরিচয় বের করতে পেরেছেন?
-হ্যাঁ, সবগুলো লাশের পরিচয়ই আমরা বের করেছি।সবাই ২০/২২ বছরের যুবক।সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো যে ৮ জন মারা গিয়েছে তারা সবাই একই কলেজে পড়ালেখা করতো।
-কি বলেন এসব?
-আর তারা একে অপরের বন্ধু ছিল।তাদের এই বন্ধুমহলে আর ২ জন আছে।১০ জনের বন্ধুত্ব ছিল,এখন সেখান থেকে ২ জন আছে।
মাথাটাতে অসহ্য যন্ত্রণা করছিলো। মাহিমকে ফোন দিলাম,যাতে এসে আমাকে নিয়ে যায়।মাহিমকে এবারো সব বললাম।মাহিম আমাকে একটা কথা বললো,যেটা শুনে আমি বেশি আতংকিত হয়ে পরলাম।
অমাবস্যার রাতে যে মহিলাকে বাচ্চাসহ দেখা যায় সেই মহিলা আরো একবছর আগে মারা গিয়েছে।
#পোড়া_লাশ -১ম পর্ব
গল্পের ক্যানভাস কল্পনার জগতে
চলবে………..
গল্পটা কেমন হয়েছে জানাতে ভুলবেন না