#হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#নুুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৩৬(ভালোবাসায় রাঙানো)
দরজার ওপাশে নাহান দাঁড়ানো। নাহানও থ*তম*ত খে*য়ে যায়। রাহা তোঁতলাতে তোঁতলাতে নাহানকে ভিতরে আসতে বলে ছুটে নিজের রুমে চলে যায়। নাহান সোফাতে বসে আশেপাশে তাকায়। রান্নাঘর থেকে প্রিয়ার মা আঁচলে হাত মুছতে মুছতে বলতে বলতে বেরিয়ে আসেন,
“কী-রে রাহা? কে এলো রে? তোকে দেখে তরকারিটা পু* ড়ে যাবে বলে আর আসলাম না।”
বসার ঘরে এসে তিনি নাহানকে দাঁড়ানো দেখেন। নাহান সালাম দিলে তিনি সালামের জবাব দিয়ে সহাস্যে বলেন,
“ও নাহান তুমি। বসো বাবা। ওদের লাগেজ দিতে কতো কস্ট করে সকালে এলে। বসো। আমি ওদের ডাকিয়ে দিচ্ছি।”
নাহান বিনয়ের সাথে বলে,
“না আন্টি। তার প্রয়োজন নাই। আমি চলে যাব এখন।”
পিয়ালি বেগম শা*স*নের স্বরে বলেন,
“এই একদম না। চুপ করে বসো। নাস্তার আগে বেরোতেই পারবে না। আমি তো শুনবই না। আর এই রাহাটাও কোথায়! আমাকে জানবে না কে এলো!”
প্রিয়ার মায়ের কথায় নাহানের মনে পরলো, ঘুমঘুম ফোলা মুখশ্রীর এলোমেলো কেশের অধিকারী সেই মেয়েটিকে। ভাবতেই মুখে মুচকি হাসির রেখা ফুটে উঠল তার। প্রিয়ার মা*কে আরো কয়েকবার বুঝানোর চেষ্টাতে অক্ষম হয়ে চুপচাপ সোফায় বসে পরল।
রাহা আয়নায় নিজের এলোমেলো অবস্থা দেখে নিয়ে জলদি করে ফ্রেশ হয়ে নিলো। মনে মনে ভেবে নিলো, নাহান না যাওয়া ওব্দি সে রুম থেকে বের হবে না। লোকটাকে দেখলেই কেমন ধু*ক*পু*ক করে ওঠে বুকের ভেতর। মা*থা ঝাঁকিয়ে নিজের মনের অবান্তর চিন্তা ঝেড়ে ফেলে আয়নার সামনে বসল চিরুনি হাতে। উদ্দেশ্য চুলগুলোকে মা*নু*ষ বানানো।
__________
নাস্তা শেষে জারিফ, প্রিয়া, প্রিয়ম ও ফিহার সাথে নাহানও বেরিয়ে যাচ্ছে। আশেপাশে নজর বুলিয়ে রাহাকে খুঁজছে তার আঁখিজোড়া। কিন্তু রাহাতো রুম থেকে বেরোয় নি! এদিকে ফিহাকে চলে যেতে দেখে নাবিলের মন খারাপ হলো। সে প্রিয়মকে বলে উঠে,
“ভাই, আমিও তোমাদের সাথে যাই?”
প্রিয়ম ভ্রুঁ কুঁচকে বলে উঠল,
“কেনো? তুই যাবি কেনো? আমি ওদের বাসস্টপ পর্যন্ত পৌঁছে দিবো তো।”
নাবিল আমতা আমতা করে বলে,
“না মানে, ফিহাকে তো পৌঁছে দিয়ে আসতে হবে তাই না? তাই বললাম।”
নাবিলের বোকা বোকা কথায় ফিহা ঠোঁ*ট চেপে হাসছে। প্রিয়ম নাবিলের মা*থায় টো*কা দিয়ে বলে,
“এই তুই কী কা**না? নাহানকে তোর চোখে লাগে না?”
নাবিল চুপ করে কী বলবে ভাবছে। কিছুক্ষণ ভেবে চট করে বলে উঠল,
“নাহান ভাইও তো দুলাভাইকে আর প্রিয়াকে এগিয়ে দিতে যাবে। তাহলে ফিহা?”
প্রিয়া নাবিলকে বলে উঠে,
“এই ভাই! তুই যা তো! গিয়ে ঘুমা। নাহান ভাইয়া ফিহাকে নিয়ে যাবে আর ভাইয়া আমাদের এগিয়ে দিবে। বুঝেছিস?”
নাবিল সেন্টি হেসে বলে,
“হুম হুম। বুঝেছি। আসলে ঘুমের বড়োই সমস্যা হচ্ছে তো! তাই সহজ হিসাব বুঝতে পারিনি। যাই আমি ঘুমাই গিয়ে। হ্যাভ অ্যা সেফ জার্নি বোথ অফ ইউ।”
নাবিল মা*থা চু*ল*কাতে চু*ল*কাতে চলে যায়। প্রিয়ারা বিদায় নিয়ে বেরিয়ে যায়। প্রিয়ারা চলে যাচ্ছে তা রাহা দরজার ফাঁকা দিয়ে উুঁকি দিয়ে দেখছিল। ওরা যাওয়ার পর এখন সে রুম থেকে বেরিয়ে দেখে নাবিল সোফায় বসে ফোন টি*পছে। রাহা কোমড়ে হাত গুঁজে বলে,
“ভাই! তোমার না ঘুম পেয়েছে?”
নাবিল বিরস মুখে রাহার দিকে তাকিয়ে বলে,
“কই না-তো!”
“তাহলে ওদের যে বললে?”
নাবিল কপাল কুঁচকে বিরক্তি নিয়ে বলে,
“চোখের সামনে থেকে স*র বলছি। রা*গ হচ্ছে প্রচুর।”
রাহা ভ্রুঁ উুঁচিয়ে বলে,
“তুমি যে ফিহার সাথে যাবে বলে বলছিলে তা কী আমি বুঝি না? ফিহা তো কালকে গাড়িতে তোমার কান্ডকারখানা দেখে আমার কাছে বলে বলে হাসছিল। যাই আম্মুকে বলে আসি! তার ছেলে প্রেমে পরেছে!”
নাবিল অবাক হলেও শেষোক্ত কথায় হকচকিয়ে উঠে।
“না পু*চ*কি। বইন না ভালা আমার। কী লাগবে বল? সব এনে দিবো। আম্মুরে বলিস না। ঝা**টার বা*ড়ি খেতে চাই না। পারলে ফিহার সাথে একটু সেটিং করিয়ে দে না বইন!”
রাহা দাঁত বের করে হেসে বলে,
“বেশি না শুধু পাঁচশো টাকা দেও। আম্মুরেও বলব না আর ফিহার ফেসবুক আইডিও দিবো।”
নাবিল দুঃখী দুঃখী দৃষ্টিতে তাকালো। পকেট থেকে পাঁচশো টাকার নোট বের করে দিলো। রাহাও খুশিমনে ফিহার আইডি দিয়ে দিলো আর না*চতে না*চতে চলে গেলো।
____________
কক্সবাজারে সিবি*চে প্রিয়া খালি পায়ে হাঁটছে আর জারিফ প্রিয়ার পিছু পিছু। একসাথেই আসছিল ওরা তারপর লোকসমাগমের বাহিরে এসে প্রিয়া একটু সামনে সামনে হাঁটছে। অনেকটা পথ ওরা হেঁটে এসেছে। এখানে মানুষজন নাই বলতে গেলে। সা*গরে এখন ভাটা পরেছে। পড়ন্ত সূর্যের প্রতিচ্ছবি ভেজা বালুতে প্রতিফলিত হচ্ছে। প্রিয়া জারিফকে বলে,
“দেখুন, কী সুন্দর লাগছে। তাই না?”
জারিফ পেছোন থেকে প্রিয়ার ছবি তুলে নিলো। প্রিয়া দুই হাত প্রসারিত করে কথা বলছিল।
“হুম।”
“আমার না ওই দূর পর্যন্ত যেতে ইচ্ছে করছে। চলুন যাই।”
জারিফ ঘড়ির দিকে তাকালো। ভাটার সময় শেষ হতে আর বিশ মিনিট বাকি। প্রিয়ার হাত ধরে সে যেতে শুরু করল। ভেজা বালুতে খালি পায়ে হেঁটে যাচ্ছে ওরা। হাঁটু পর্যন্ত পানিতে গিয়ে নামলো। অতি দ্রুত কয়েকটা ছবি তুলে ফিরে আসলো। সন্ধ্যা নেমে গেছে। হোটেলে ফিরে ক*সরের নামাজ পড়ে ফ্রেশ হয়ে ওরা খেতে বের হলো। এখন সিবি*চে ঘোরাফেরা করে সেখানের কাছে মার্কেটগুলোর থেকে কেনাকাটা ও খাওয়া দাওয়া করবে।
সমুদ্রপাড়ে হাঁটাহাঁটি করে এক জায়গায় এসে বসলো ওরা। সমুদ্রের গ*র্জন খুব কাছ থেকে অনুভব করছে ওরা। পায়ের কাছে একটু পরপর শীতল জলের রাশি ঢেউয়ের মতো আছ*ড়ে পরছে। প্রিয়া জারিফের কাঁধে মা*থা রাখল। চুপ করে আছে সে। জারিফ নিরবতা ভেঙে বলল,
“সময়টা থমকে যাক। তুমি আমি এভাবেই থাকি।”
“টিল দ্যা লাস্ট ব্রেথ, অ্যাই ওয়ান্না লাভ ইউ! আপনার এই কথার বিপরীতে সেদিন না বললেও আজ আমি বলব, ‘সমুদ্রস্রোতের যতোটা জলকণা আছে, ততোটা সময় আমি আপনাকে ভালোবাসতে চাই।’ মানে বুঝতে পারলেন?”
জারিফ বুঝেও নিরব হেসে অস্ফুট শব্দ করে,
“উঁহু!”
প্রিয়া জারিফের বাহু আরও জড়িয়ে সমুদ্রপানে দৃষ্টি স্থির রেখে চোখ বন্ধ করে ওষ্ঠকোণে মিষ্টি হাসি ঝুলিয়ে বলে,
“অফুরন্ত। দে*হের মৃ*ত্যু*র পরও আপনার ভালোবাসাকে আমি আমার রবের কাছে পর*কা*লেও চাইব।”
জারিফ প্রিয়াকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে আচ*মকা প্রিয়ার অধর জোড়া নিজের অধরের স্পর্শে বন্ধ করে দিল। প্রিয়া আচ*মকা হতবিহ্বল হয়ে গেলেও পরমুহূর্তে লজ্জায় নয়নজোড়া মুদন করে নিলো।
ওরা অনেকগুলো ঝিনুকের জিনিসপত্র কিনে নিলো। ওরা বলতে প্রিয়া! তারপর স্থানীয় রেস্তোরাঁ থেকে রাতের খাবার খেয়ে নিলো। খাবারের মেনুতে সামুদ্রিক মাছ তো থাকবেই।
______
ব্যালকনিতে দাঁড়ানো প্রিয়া। ব্যালকনি থেকে সমুদ্রটা দেখা যায়। দেখা যায় ঢেউয়ের গতি। গ*র্জনও শোনা যাচ্ছে। প্রিয়া চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে। সন্ধ্যার ওই মুহূর্তটা মনে পরতেই গা শিরশির করে উঠে তার। ঠোঁটের কোলে ফুটে উঠে লাজুক হাসি। খোলা চুলগুলো বাতাসের ধ*ম*কায় উড়ছে। বারেবারে চোখের উপর ভীড় জমাচ্ছে। জারিফ পেছোন থেকে এসে প্রিয়াকে জড়িয়ে ধরল। আচমকা এমন হওয়ায় হকচকিয়ে শিউরে উঠল প্রিয়া। জারিফ প্রিয়ার চুলগুলো কাঁধের কাছ থেকে সরিয়ে সেখানে মুখ ডুবালো। প্রিয়া কেঁপে উঠে অর্ধখোলা ব্যালকনির গ্রিল চেপে ধরল। জারিফ মুখ ডুবানো অবস্থায় ফিসফিস করে বলে,
“তৃষ্ণার্ত হৃদয় আজ শান্ত করো প্রিয়া! আমাদের ভালোবাসা আজ আরেকটু রাঙুক। সমুদ্রের লবন ও জলের ন্যায় মিলে যাক।”
প্রিয়া চোখ মুখ খিঁচে রাখে। জারিফ ওকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে কোলে তুলে নেয়। রাতের সমুদ্রের গ*র্জনের সাথে ওদের ভালোবাসা ভোরের সূর্যের মতো রাঙুক।
চলবে ইনশাআল্লাহ্,
আমার থেকে আর রোমান্টিক পার্ট আশা কইরেন না। ভুল ত্রুটি মাফ করবেন। কপি নিষিদ্ধ।