লোডশেডিং’ পর্ব ২৮.

0
280

‘লোডশেডিং’
পর্ব ২৮.

তাবিনা মাহনূর

__________

বাংলাদেশে ফিরে প্রাণ ভরে শ্বাস নিতে গিয়ে অজস্র ধুলা গিলে খেলো চৈতি। টানা চারটা হাঁচি দেয়ার পর চোখের কোণে পানি জমে গেলে সেটা মুছে সে সামনে তাকালো। শুধুই গাড়ি, আর গাড়ি। জ্যামের শহর ঢাকায় পৌঁছে তার পুরোনো আবেগ ফিরে এলো। সে হেসে বললো, ‘বাবা, এখান থেকে বাসায় যেতে দুই ঘন্টা লাগবে, তাই না? ভালোই হলো। রাস্তায় থাকা মানুষের কাজকর্ম দেখবো আর ধুলা খাবো।’

মেয়ের প্রাণোচ্ছল কন্ঠ শুনে সারাফ হেসে উঠলেন। সাথে আছে চৈতির ছোট মামা আব্দুল্লাহ কবির। চৈতি মাহরাম ছাড়া একা একা তুরস্ক থেকে বাংলাদেশ আসতে নারাজ ছিল। বাধ্য হয়ে তিনি নিয়ে এলেন। যাওয়ার সময়েও তিনিই নিয়ে গিয়েছিলেন সকলের অগোচরে। একমাত্র বোন কুহুর চেহারা মনে পড়ে চৈতিকে দেখলে। বোনের কাছে কত আবদার করতেন এক সময়! সেসব ভেবেই বোনের মেয়েটার আহ্লাদ আবদার কোনোটা মানতে দ্বিধা করেন না তিনি। অবশ্য তিনি পরশু ফ্লাইটে তুরস্ক ফিরে যাবেন। এখানে থাকার মতো কেউ নেই তার।

আব্দুল্লাহ কালই চলে যেতেন, কিন্তু পরপর দুদিন বড় জার্নি করার মতো শক্তি নেই তার। এখন যাচ্ছেন চৈতির বাড়ি। কিন্তু থাকবেন হোটেলে। এ কথা সারাফকে আগেই বলে দিয়েছেন তিনি। সারাফ বহু আপত্তি করলেও তিনি বলেছেন, ‘দুলাভাই, আপনি সম্মানিত মানুষ। আপনার কথা ফেলতে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু ওই বাড়িতে থাকা সম্ভব নয়। কুহু আপার স্মৃতি আর চৈতির সাথে করা দুর্ব্যবহার আমাকে ওই বাড়িতে ভালো রাখবে না।’

শেষের কথাটির অর্থ সারাফ বুঝেছেন। জেবিনকে দেখলে আব্দুল্লাহ রেগে যেতে পারেন। তার বোনের মেয়েটাকে কোনো জুলুম না করলেও, মানসিক আঘাত করেছেন জেবিন। সারাফ বলতে চেয়েছিলেন জেবিন আগের মতো নেই। তিনিই সবচেয়ে বেশি অপেক্ষায় থাকতেন চৈতি কবে দেশে আসবে। তিনি বলতে গিয়েও বললেন না। আব্দুল্লাহ তবু থাকতে চাইবেন না। তাই এসব বলে আর কথা বাড়ানোর দরকার নেই।

বাসায় ফিরে চৈতির উজ্জ্বল মুখ শুষ্ক হয়ে উঠলো। চোখ বন্ধ করলে তার মায়ের মুখটা ভেসে আসছে বারবার। আশ্চর্যের বিষয়, চৈতির একবারও বাজে স্মৃতি কিংবা কিশোর বয়সের কোনো স্মৃতি মনে পড়ছে না। ছোটবেলায় মায়ের সাথে স্কুল থেকে ফেরার সময় বাড়ি দেখে তার ক্লান্ত শরীরের উল্লাস, ঈদের সময় গলিতে বাচ্চাদের সাথে ছোটাছুটি, মায়ের হাত ধরে এই বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে রিকশার অপেক্ষা করা- এসব পুরোনো স্মৃতি মনে পড়ছে তার। যেখানে নেই জেবিন, সৌরভ কিংবা স্বাধীন!

তবে বাসায় ঢোকার পর তাকে ঘিরে ধরলো বাংলাদেশে তার কাটানো শেষ সময়গুলোর সাক্ষী। দোতলায় নীরা কাকীকে দেখে জড়িয়ে ধরলো সে। মনে পড়লো তার, জয়নাব এখানে থাকেন না। তিনি থাকেন চার তলায়। আনাস আর আসাদের সাথে দেখা করলো না সে। নীরা জোর করলেন না। তিনি এই চৈতিকে চিনে ফেলেছেন চৈতির কালো আবরণে নিজেকে আবৃত করা দেখে।

অশ্রু বিলাসে মেতে উঠলো সারাফের বাড়ি। জয়নাব চৈতির কপালে চুমু খেয়ে অনেকক্ষণ কাঁদলেন। জেবিন চৈতিকে জড়িয়ে ধরে বসে আছেন। পেছন থেকে সাদিয়া জড়িয়ে আছে চৈতিকে। চৈতির অবস্থা ডাঙ্গায় আছড়ে পড়া মাছের মতো। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে তার। তবু সে হাসিমুখে বললো, ‘ধুলোবালি মেখে এসেছি। তোমাদের শরীর নোংরা হয়ে যাবে।’

এ কথা বলে সে আরো বিপদে পড়ে গেল। দুজনেই আরো বেশি জাপটে ধরলো তাকে। জেবিন বললেন, ‘নোংরা হবো কেন? মেয়েকে জড়িয়ে ধরলে মা কখনো নোংরা হয়?’

চৈতি মুচকি হেসে হতাশ ভঙ্গিতে বাবার দিকে তাকালো। সারাফ হেসে বললেন, ‘আরে এবার তোমরা ছাড়ো ওকে। চৈতালি মাকে বিশ্রাম নিতে দাও।’

সাদিক দূরে দাঁড়িয়ে ছলছল চোখে বোনকে দেখছে। সাদিকের দিকে তাকিয়ে চৈতি বললো, ‘আমাদের সাদিক কি গুরুগম্ভীর হয়ে গিয়েছে নাকি?’

হেসে উঠলো সাদিক। কিশোর বয়সে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে তার গাম্ভীর্য বাড়ছে, বুদ্ধির তিক্ষ্ণতা বাড়ছে। চৈতি সেটা দূর থেকে দেখেই বুঝেছে। সাদিক সাদিয়ার থেকেও লাজুক। তাই বোনকে জড়িয়ে ধরার সাহস পাচ্ছে না সে। চৈতি অবশ্য জড়িয়ে ধরলো না। সাদিকের হাত দুটো ধরে বিভিন্ন গল্পে মেতে উঠলো সে।

শিমুল আজ আসতে পারবে না। কাল আসবে বলে জানিয়েছে। তবে চৈতির সাথে ফোনে কথা হয়েছে তার। তার কণ্ঠের উচ্ছাস সে লুকোতে পারছে না। চৈতি একবারও সৌরভের কথা জিজ্ঞেস করেনি। গোসল শেষে একটু খাওয়া দাওয়া করে বিশ্রাম নেয়ার সময় সাদিয়া এসে কথাবার্তা বলতে গেলে এক পর্যায়ে চৈতি জানতে পারলো সৌরভের কথা।

সৌরভের পুরো পরিবার এখন উত্তরার বাড়িটায় থাকে। চৈতি চলে যাওয়ার পর সৌরভ উদ্ভ্রান্তের মতো আচরণ করতো। নেশা ধরেছিল সে। দুই মাস রিহ‍্যাবে ছিল সৌরভ। তারপর তাকে নিয়ে কামিনীর পরামর্শে উত্তরা চলে যান সজীব আর দিলারা। এখন সৌরভ নেশাদ্রব্য ছেড়ে দিয়েছে, কিন্তু বিয়ে করেনি। কাজ বলতে বাবার ব্যবসাটা দেখাশোনা করে, আর বেশিরভাগ সময় চট্টগ্রামে কাটিয়ে দেয়। চট্টগ্রামে সজীবদের ব্যবসার একাংশ আছে যেটা এখন সৌরভ দেখাশোনা করে।

চৈতি এগুলো তুরস্কে বসে কিছু কিছু জেনেছে, সবটা জানতো না সে। সাদিয়া হঠাৎ স্বাধীনের প্রসঙ্গ আনলে চৈতি ভ্রু কুঁচকে বললো, ‘আমি কি তোকে একবারও স্বাধীন কিংবা সৌরভের কথা বলতে বলেছি?’

সাদিয়া ঘাবড়ে গেল, ‘না আপু। কিন্তু আমি সবার খোঁজই দিচ্ছি। যেমন, আনাস ভাই বউ ভাগিয়ে বিয়ে করেছেন। বউটা যে কি সুন্দর আপু! আনাস ভাই রূপ দেখেই প্রেমে পড়েছেন। সমস্যা হলো, বউয়ের বাবা বাসের হেলপার। তাই ছোট কাকী মানতে চাইছেন না। আনাস ভাই এখন ভাবীকে নিয়ে আলাদা বাসায় থাকেন।’

চৈতি বিরক্ত হলো, ‘প্রেম এজন্যই হারাম। সংসারে শান্তি থাকে না। তবু, বিয়ে যেহেতু হয়েই গিয়েছে তাহলে মেনে নেয়া ছাড়া উপায় নেই। অযথা অশান্তির কি দরকার। আর আনাস ভাইকে তওবা করতে হবে। সাথে ভাবীকেও।’

– কি যে বলো আপু! উনারা কি ধর্ম মানে নাকি তেমন?
– তুই কি করছিস হুম? আমি কিন্তু সব জানি সাদিয়া।

চুপ করে বসে থাকলো সাদিয়া। তার এখন রাগ হচ্ছে। বোন আজ এসেছে, এসেই খবরদারি শুরু করেছে! সে তো বাবাকেই মেনে চলে না, আর বোন কে? চৈতি অবশ্য এর বেশি কিছু বললো না।

– এখন আমি বিশ্রাম নিব রে। যাওয়ার সময় ফ্যান বন্ধ করে দিস তো। শীত লাগছে।

সেপ্টেম্বরের হালকা বৃষ্টির কারণে শীতের আভা ছড়িয়ে আছে চারিপাশে। চৈতির চোখ দুটো ঘুমে জড়িয়ে গেল। অনুভব করলো, সারাফ এসে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে চলে গেলেন।

__________

এক সপ্তাহ ধরে চৈতির উপস্থিতিতে বাসার পরিবেশ বদলে গেল। সাদিয়া এখন হিজাব আর বড় হাতার জামা পরে বাইরে বের হয়। তা নাহলে সারাফ আর চৈতি দুজনেই রাগী চোখে তাকিয়ে থাকে। সাদিক আগে থেকেই ভদ্র স্বভাবের। জেবিন চৈতির মতো পর্দা করার চেষ্টা করছেন, কিন্তু মানুষের কটু কথার কারণে ভেঙে পড়ছেন। চৈতি আশ্বাস দিয়েছে, এবার কেউ কিছু বললে সে সেটা সামলে নিবে।

শিমুল এসে আবার শ্বশুরবাড়ি ফিরে গিয়েছে। চৈতির সময় কাটে ছাদে। এই সপ্তাহ সে কোনো আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে যায়নি। নিজেকে সময় দিয়েছে, ক্লান্ত শরীরকে ঝরঝরে করে তুলেছে। আজ শিমুলের বাড়িতে দাওয়াত। শুধু তার নয়, পুরো বাড়ির মানুষকে দাওয়াত করেছে মাহতাব।

সকাল সকাল গোসল সেরে চৈতি ছাদে কাপড় নেড়ে চুলগুলো পিঠে মেলে দিলো। দু হাত দিয়ে ঝেড়ে বামে তাকাতেই তার চোখ দুটো আটকে গেল ঝাঁকরা চুলের অধিকারী মানুষটার দিকে। ইনি কেন এখানে!

স্বাধীন অবশ্য চৈতিকে খেয়াল করেনি। সে তার কোলে থাকা বাবুর মাথা মুছে দিচ্ছে আর আদুরে কণ্ঠে কিছু বলছে। চৈতি দ্রুত মাথা ঢেকে বড় বড় কদম ফেলে ছাদ থেকে নেমে গেল। স্বাধীন হয়তো আলিয়াকে নিয়ে দেশে ফিরেছে। আর ছেলেটা নিশ্চয়ই তাদের সন্তান।

নীচে নামার পর সে না চাইতেও সাদিককে জিজ্ঞেস করলো, ‘স্বাধীন ভাই কবে এসেছে?’

সাদিক তাকে ভ্রু কুঁচকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ঘাবড়ে গেল।

– তা জানি না আপু। তবে উনি দেশে এসেছেন শুনেছি।
– আমাকে বলিসনি কেন? আশ্চর্য! আমি ভেবেছি ওই ছাদে কেউ নেই। মাথায় ওড়না ছিল না আমার।

সাদিক বললো, ‘আপু, বেয়াদবি ভেবো না। তবে স্বাধীন ভাই না থাকলেও অন্য পুরুষ ছাদে যেতে পারতো না? তোমার কি উচিত হয়েছে চুল খোলা?’

সাদিক ভুল বলেনি। চৈতি মিইয়ে যাওয়া কণ্ঠে বললো, ‘বুঝেছি, আমার ভুল আছে। আমার চুলগুলো রোদে মেলে দিয়েছিলাম। কিন্তু স্বাধীন ভাইকে এখানে দেখবো কল্পনা করিনি। আচ্ছা বাদ দে, স্বাধীন ভাইয়ের বাবু হয়েছে নাকি রে?’

হঠাৎ চৈতিকে এতটা আগ্রহী দেখে সাদিক অবাক হয়ে গেল। এতদিন সে স্বাধীনের কথা শুনতেই চায়নি। আজ কি হলো! মনের প্রশ্নটা মুখে বলে ফেললো সাদিক, ‘কি হয়েছে আপু? হঠাৎ স্বাধীন ভাইয়ের ব্যাপারে…’

তাকে পুরো কথা বলতে না দিয়ে চৈতি বললো, ‘অন্যকিছু ভাবিস না। বাচ্চাটাকে দেখে খুব মায়া লাগলো। এখানে এসেও বাচ্চা নিয়ে কেউ চিলেকোঠায় থাকে?’

– তুমি মনে হয় জানো না স্বাধীন ভাই ডিভোর্সড।
– কি!
– জি। আলিয়া ভাবীকে ডিভোর্স দিয়ে ফিরে এসেছেন ভাইয়া। বাবুর দেখাশোনা উনি একাই করেন। তাই বাবু নিয়ে চিলেকোঠায় থাকতে হয় না, এটা উনার জানা নেই।

শেষের বাক্যটা সাদিক কৌতুকের স্বরে বলেছে। চৈতি তার মাথায় চাটি মেরে বললো, ‘মিটমিটে বদ হয়েছিস তুই। গোসল করে নে। জুম্মার সালাত পড়েই রওনা হবে সবাই।’

চৈতি ফেরার পথে সাদিক বলে উঠলো, ‘আপু, তুমি কি স্বাধীন ভাইকে…’

চৈতি না শুনেই চলে গেল। তার জন্য এখন আরেকটা ধাক্কা আসতে চলেছে। সবাই তাকে স্বাধীনের ব্যাপারে খুঁচিয়ে কথা বলবে এটা সে জানে। অথচ তার মনে এখন কেউ নেই। না স্বাধীন, না অন্য কেউ! তবু একদল মানুষ বলবে, স্বাধীনের সাথে তাকে বিয়ে দিলে সে নিশ্চয়ই খুশি হবে। কিন্তু চৈতি জানে, তার জন্য আল্লাহ যা কল্যাণ মনে করেছেন, তাতেই সে খুশি হবে। সেটা স্বাধীন হোক বা অন্য কেউ।

শিমুলের বাড়িটা খুব বড়। একান্নবর্তী পরিবার হওয়ায় দ্বিতল বাড়িতে সবাই মিলেমিশে থাকে। এখানে রয়েছে অন্দরমহল। শহুরে বাড়িতে অন্দরমহলের ব্যবস্থা চৈতিকে অভিভূত করলো। এখানে মেয়েদের পর্দার কোনো ত্রুটি হয় না। ছেলেরা খুবই সহানুভূতিশীল। তাদের স্ত্রীদের পর্দা রক্ষার্থে আত্মীয়তা ও মেহমানদারিতা ছেলেরাই আন্তরিকতার সাথে করছে। আজ মনে হয় বিশেষ অনুষ্ঠান আছে। কেননা, মাহতাবের ফুপুর বাড়ি, খালার বাড়ির আত্মীয়রা এসেছে। চৈতি জানতে পারলো, আজ মাহতাবের বোন মারইয়ামের আকদ সম্পন্ন হয়েছে ফজরের সালাতের পর। জুম্মার সালাত পড়ে তাই সবাইকে দাওয়াত করা হয়েছে। ছেলেদের খাবারের ব্যবস্থা বাড়ির পেছনে বিরাট উঠোনে, আর মেয়েরা অন্দরমহলে।

এরই মাঝে শিমুল হঠাৎ চৈতির হাত ধরে বারান্দায় চলে গেল। মহিলারা খাওয়া দাওয়া শেষে নিজেদের মতো গল্পে ব্যস্ত থাকায় চৈতি আর শিমুল একান্ত কথোপকথন সেরে নিলো।

– আলহামদুলিল্লাহ! তোকে একা পেলাম। এতক্ষণ এতো ব্যস্ত ছিলাম…
– মা শা আল্লাহ আপু, তুমি বাড়ির আদর্শ বউয়ের মতো দায়িত্ব পালন করছো। আন্টি খুবই সন্তুষ্ট।

শিমুল মুচকি হেসে বললো, ‘আরে এরা সবাই খুব ভালো। আমার শাশুড়ির মতো অমায়িক মানুষ হয় নারে। আর আমার ননদ আমার বান্ধবীর মতো। এরা সবাই আমাকে আপন করে নিয়েছে, এজন্য আমাকে ভালোবাসে।’

দুজনের গল্পের মাঝে একজন মধ্য বয়স্ক নারী এসে বললেন, ‘শিমুল মা, মাহতাব কোথায়?’

শিমুল তাকে দেখে বললো, ‘ফুপি, মাহতাব তো মনে হয় নীচে গিয়েছে একটু।’

– ওহ, নিবরাসকে দেখছি না কোথাও। ভাবলাম ও মাহতাবের সাথে আছে।
– নিবরাস ভাই মনে হয় ছাদে আছেন। মাহতাব একবার বললো উনার কিছু বন্ধু এসেছে।
– কার? নিবরাসের বন্ধু এখানে এসেছে?
– এমনটাই শুনেছি ফুপি।

চৈতি চুপ করে দুজনকে দেখছে। শিমুলের ফুপি শাশুড়ির কথার ভঙ্গিমায় আভিজাত্য ফুটে উঠছে, অথচ তা কত আন্তরিক, নিরহংকার। হঠাৎ উনি চৈতির দিকে তাকালে চৈতি বিব্রত হয়ে মুচকি হেসে বললো, ‘আসসালামু আলাইকুম আন্টি।’

উনি হেসে বললেন, ‘ওয়া আলাইকুমুস সালাম মা। শিমুল, পরিচয় করিয়ে দিবে না?’

– জি ফুপি। এটা আমার ছোট কাকার বড় মেয়ে, সাফওয়ানা চৈতি। আর চৈতি, ইনি হচ্ছেন আমার ফুপি শাশুড়ি। ছোট ফুপি।

ভদ্রমহিলা হেসে বললেন, ‘আমার নামটাও বলে দিই। আমি জিনাত। তুমি আমাকে ফুপি বলেই ডাকতে পারো। তুমি খুব মিষ্টি মেয়ে, কোথায় পড়ছো এখন?’

চৈতি নিজের পরিচয় সুন্দর করে বললো। জিনাত আগ্রহ নিয়ে শুনলেন। বেশ কিছুক্ষণ চৈতি ও জিনাতের আলাপ চললো। জিনাতের মুখশ্রী দেখে শিমুলের চোখ ছলছল করে উঠলো। নিশ্চয়ই কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে।

চৈতি জানে না, তাকে যেভাবে প্রশ্নের পর প্রশ্ন করা হচ্ছে, ঠিক সেভাবেই তার বাবা একদিন জিনাতের পুত্র নিবরাসকে অবিরাম প্রশ্নে ব্যস্ত করে রেখেছিলেন…

__________

চলবে ইন শা আল্লাহ…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here