😏 #মেঘের_আড়ালে_রোদের_লুকোচুরি ❤️
🌈💙🎨😏❤️🥳🐦💐🍫🏩💒
Part-17
উজানকে মনে মনে একশো একটা বকুনি দিয়ে হিয়া রান্নাঘরে গিয়ে রান্না ঘর টা পরিষ্কার করে দিয়ে এসে শ্রাবণকে পড়তে বসিয়ে নিজে পড়তে বসে,,ঘন্টা দুই এক দুই ভাই বোনের পড়াশোনা শেষ হবার পর হিয়া দু প্লেটে ভাত বেড়ে শ্রাবণকে খাইয়ে দিয়ে নিজে খেয়ে উঠে,,তারপর ১২টা বাজার সাথে সাথে শ্রাবণকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে আরো কিছুক্ষন নিজের পড়াশুনা শেষ করে হিয়া ওর সব বই খাতা গুছিয়ে নেয়,,
রাত তখন দেড় টা পার হয়ে দুই টার কাটা ছুঁই ছুঁই,,হিয়ার আজ কেনো জানি চোখে কোনো ঘুম নেই,,বিছানার ধার ঘেষে লেগে থাকা জানালা টা খুলে দেয় হিয়া,,নিমিষে ঘরময় পুরো জ্যোৎস্না দিয়ে মাখো মাখো হয়ে যায়,,হিয়া আকাশপানে তাকিয়ে আছে,,শরীরে আজকে নেই তার ঘুম নামক কোনো বস্তু,,আকাশপানে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখন যে হিয়ার চোখ জোড়া ভারী হয়ে আসে হিয়া বুঝতে পারে না
হিয়াঃ মা কেনো ছেড়ে গেলে আমাকে তোমরা,,তুমি তো বাবা কে নিয়ে ঔ তারাদের দেশে খুব ভালো আছো,,আর আমি,,,,কেউ তো নেই মা আমার কিছু তো নাই আমার___বাবা___বাবা আমি কি শ্রাবণকে তোমার মতো মানুষ করতে পারছি কি বাবা,,বাবা কথা বলো না বাবা___মা জানো পিকনিকে কি হয়েছিলো ওরা সবাই আমাকে আর আমাদের শ্রাবণকে___যদি ভাইয়া না থাকতো তাহলে তো আমি কখনো___বাবা আমি কেনো সেই মুহুর্তে এতো দূর্বল হয়ে গিয়েছিলাম আমি তো তোমার সাহসী মেয়ে বলো__বাবা আমি না আর পারছি না বাবা__বাবা আমার না খুব ক্ষুধা লাগে জানো কিন্তু আমার ঘরে খাবার নেই বাবা___চাল আছে আর দু মুঠ কি দিয়ে কিনবো আমি খাবার বলো না বাবা__ও মা মা কেনো আমাকেও নিয়ে গেলে না গো তোমাদের সাথে,,কেনো রেখে গেলে বলো না___আমি কি তোমাদের খুব খারাপ মেয়ে ছিলাম আমাকে নিয়ে যেতে তাই তোমাদের মন চায় নি না,,বাবা মা
হিয়া মুখ চিপে ডুকরে কেঁদে উঠে,,কি করবে সামনে ও,,সামনে তো আরো খরচ,,কি করে সে সেগুলো মিটিয়ে শ্রাবণকে মানুষ করবে
হিয়া চোখ মুছে যেই শ্রাবণের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে যাবে ওমনি হিয়ার ফোনে উজানের ফোন আসে,,হিয়া ফোন টা রিসিভ করতে চায় নি কিন্তু কিসের টানে করলো সে জানে না
হিয়াঃ হ্যালো!!
এপাশ থেকে হিয়ার কন্ঠ শুনে উজান হিয়াকে কিছু বলতে না দিয়ে এপাশ থেকে হিয়ার জন্য একটা কবিতা আবৃত্তি করতে শুরু করে
উজানঃ
❤️প্রহরশেষের আলোয় রাঙা সেদিন চৈত্রমাস
তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ
এ সংসারের নিত্য খেলায় প্রতিদিনের প্রাণের মেলায়
বাটে ঘাটে হাজার লোকের হাস্য-পরিহাস–
মাঝখানে তার তোমার চোখে আমার সর্বনাশ❤️
পরের লাইন টা বলতে গিয়ে উজান আমতা আমতা করতে শুরু করলে,,হিয়া মুচকি হাসি দিয়ে এবার নিজে আবৃত্তি করতে শুরু করে
হিয়াঃ
❤️আমের বনে দোলা লাগে, মুকুল প’ড়ে ঝ’রে–
চিরকালের চেনা গন্ধ হাওয়ায় ওঠে ভ’রে ।
মঞ্জরিত শাখায় শাখায়, মউমাছিদের পাখায় পাখায়❤️
ক্ষণে ক্ষণে বসন্তদিন ফেলেছে নিশ্বাস–
মাঝখানে তার তোমার চোখে আমার সর্বনাশ
প্রহরশেষের আলোয় রাঙা সেদিন চৈত্রমাস
তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ❤️
দু’জনে এবার আবৃত্তি টা শেষ করে নীরব ভাবে হেঁসে উঠে
উজানঃ ঘুমোওনি কেনো এখনো
হিয়াঃ আপনি ঘুমোননি কেনো এখনো
উজানঃ আমার প্রশ্নের উত্তর এক কথা তে দেওয়া যায় না তাই না
হিয়াঃ আপনাকে নিষেধ করেছি না আমাকে এই যখন তখন আপনি ফোন করবেন না
উজানঃ না করলে কি আর জানতে পারতাম কেউ একজন এতো সুন্দর কবিতা আবৃত্তি করতে পারে
হিয়াঃ তাই,,আর আপনি,,শুরু টা তো আপনি করেছিলেন,,আচ্ছা আপনি আর কি কি পারেন,,মানে এতটুকু একটা মাথায় এতো কিছু আসে কিভাবে আপনার
উজানঃ তোমার জন্য কি কি পারতে হবে সেটা বলো শুধু
হিয়াঃ বালাইষাট আপনি আমার জন্য কেনো কিছু পারতে যাবেন শুনি
উজানঃ হুমমম,,,,আচ্ছা কাল পরীক্ষা কখন
হিয়াঃ এই ১১টা শুরু
উজানঃ ল্যাব আছে??
হিয়াঃ না শুধু পরীক্ষাই আছে
উজানঃ আচ্ছা পরীক্ষা দিয়ে এসে একটা কল করো,,আমি হয়তো পরশু ফিরবো
হিয়াঃ ঠিক আছে,,আপনার মা ভালো আছে
উজানঃ মা খুব ভালো আছে
হিয়াঃ আর আপনার বাবা!!
উজানঃ আছে___যাও ঘুমিয়ে পড়ো,,অনেক রাত হচ্ছে
হিয়াঃ আপনি
উজানঃ আমি মুভি দেখবো,,চারটা মুভি পেন্ডিং আছে ওগুলো আজকে শেষ করবো
হিয়াঃ ঠিক আছে,,রাখছি
উজানঃ হুম গুড নাইট
হিয়াঃ গুড নাইট
________________
পরেরদিন হিয়া পরীক্ষা দিয়ে এসে ঝিনুককের সাথে ক্যান্টিনে বসে কি রকম পরীক্ষা দিলো তারই ডিসকাস করছিলো,,
হিয়াঃ এই সপ্তাহেই পরীক্ষার ফি টা দিতে হতে হলো,,আর কিছু দিন আগে জানালে কি হতো এদের
ঝিনুকঃ তোর টাকা লাগলে বল আমি না হয়
হিয়াঃ ধুর না,,আছে আমার কাছে টাকা সমস্যা নেই,,ওটা নিয়ে ভাবছি না এখন
ঝিনুকঃ হুমম,,আচ্ছা যদি লাগে তো আমাকে বলিস কিন্তু
হিয়াঃ হুম,,তারপর পরীক্ষা কেমন হলো বললি না তো
ঝিনুকঃ ধুর কি পড়লাম আর কি আসলো,,হুদায় পরীক্ষা দিতে আসলাম
হিয়াঃ রিলাক্স,,এটা তো জাস্ট ক্লাস টেস্ট এতো টেনশন কেনো নিচ্ছিস তুই
ঝিনুকঃ ক্লাস টেস্টে এই হাল হলে ফাইনালে গিয়ে কি করবো আন্ডা
হিয়াঃ হুমম আন্ডা__যা গিয়ে কি খাবি তাড়াতাড়ি ওডার করে আয়,,আমার আবার টিউশনে যেতে হবে,,যাআআআ জলদি
ঝিনুকঃ হুম হুম তুই বস,,আমি নিয়ে আসছি
ঝিনুক খাবার আনতে চলে গেলে এমন সময় হিয়াদের পেছনের টেবিলে বসে থাকা কিছু মেয়ে হিয়াকে লক্ষ করে কটু কথা বলতে শুরু করে,,পিকনিকে হিয়ার প্রতি উজানের কেয়ারিং দেখে কারোরি আর বুঝতে বাকি নেই উজান হিয়াকে নিজের,,
তামান্নাঃ মেয়েটার ড্রেস আপ দেখ একবার,,কি রকম ক্ষ্যাএত টাইপ
সুতোপাঃ শুধু ক্ষ্যাএত মেয়েটাকে কি কখনো এই দুটা জামা ছাড়া ভার্সিটিতে আর কোনো জামা পড়ে আসতে দেখেছিস তুই
তামান্নাঃ মানুষ অনাথ হয় ঠিক আছে তাই বলে কি চাচা মামা কিছুই নেই মেয়েটার,,একটু তো মানুষের কিছু হলেও থাকে
সুতোপাঃ সে মানুষের এরকম অবস্থা হয়,,কতো শুনেছি কিন্তু তাই বলে তুই উজানের কথা ভাব,,উজান কি করে এই রকম একটা মেয়েকে
তামান্নাঃ তা নয় তো কি,,উজান আমাদের বল বা অন্য কোন মেয়ে কে পাওা দেয় না ঠিক আছে তাই বলে নীলিকেও সে ইগনোর করলো,,,,নীলির যে স্ট্যাটাস ভার্সিটির ভিপি অবধি তার ছেলের জন্য নীলিকে বিয়ের প্রস্তাব দিছে,,আর উজান কি না সেখানে
সুতোপাঃ আমার কি মনে হয় জানিস,,উজান এই মেয়ে টাকে ইউস করছে,,নয়তো ভার্সিটির হার্টথ্রব সে লাইক করবে এরকম একটা মেয়েকে যার কিচ্ছু নেই
তামান্নাঃ কি বলিস কিছু নেই,,শরীর টা আছে কি করতে!!!!!!
তামান্নার শেষ কথা শুনে সবাই হো হো করে হেঁসে উঠে,,শুধু যে এসব বলে তারা ক্ষ্রান্ত হয়ে যায় তা না ইচ্ছে করে হিয়াকে শুনিয়ে যা নয় তাই বলে তারা,,
হিয়ার চোখ দিয়ে টলটল করে পানি বের হতে থাকে,,মন তো চাইছিলো মেয়ে গুলোকে ওখানেই সে চড় দিয়ে আসুক,,কিন্তু ভার্সিটির সিনিয়র বলে হিয়া দমে যায়,,একে তো উজানের সাথে বেয়াদবি করাতে আজ তার এই অবস্থা,,ওপাশে তো নীলিরা মুখিয়েই আছে হিয়ার ক্ষতি করতে,,আর এখন এই মেয়ে গুলোকে কিছু বললে তারাও যদি হিয়ার সাথে,,তার উপর তখন তো ও ঝিনুককে বললো তার কাছে পরীক্ষার ফি আছে কিন্তু পরীক্ষার ফি তো দূরে থাক তার ঘরে যে চাল নেই সেটা কেনার টাকা টাই বা কোথায় হিয়ার আজ!!
হিয়া চোখের জল গুলো মুছে ঝিনুককে না বলেই ওখান থেকে উঠে এসে মেইন রাস্তা দিয়ে হাঁটতে শুরু করে,,মেয়ে গুলোর প্রত্যেকটা কথা হিয়ার কানে বাজছে,,মানুষের মন এতে নীচ কি করে হতে পারে এটাই শুধু ভাবতে থাকে হিয়া,,এরা শিক্ষিত না এরা শিক্ষিত হয়েও মূর্খ
_______________
পরীক্ষার ফি তে যাবে ৩০০০এর একটু বেশি,,হিয়া গুনগুনের মার থেকে অগ্রীম টাকা আজ নিজে চেয়ে নেয়,,গুনগুনের মা হিয়ার হাতে এক হাজার টাকার একটা নোট ধরিয়ে দিলে হিয়া ঔ টাকায় আসার সময় চাল,,দু হালা ডিম আর আলু কিনে নিয়ে আসে,,আগে ফির টাকা টা ম্যানেজ হোক বাকি খরচ না হয় পরে দেখা যাবে।
________________
হিয়া যদিও বা তখন কার ঘটনা টা ভুলে গিয়েছিলো কিন্তু বাড়িতে এসে আবার সেই মিতু আপুদের ব্যঙ্গ হিয়া আর কিছুতেই সহ্য করতে পারে নি,,হিয়া তখন রান্না ঘরে দাঁড়িয়ে ঝুঁড়িতে থাকা শেষ আপেল টা কাটছিলো শ্রাবণকে সন্ধ্যাতে খেতে দেবে বলে
মিতুঃ এসব নাস্তা ফল কে কিনে দিচ্ছে হিয়া তোমাকে
হিয়াঃ কেনো আপু
মিতুঃ না তোমাকে তো আগে কখনো এসব কেনা দেখি নি,,তা শ্রাবণের ভালো ভাইয়া বুঝি ইদানীং তোমার একটু বেশি কেয়ার নিচ্ছে
হিয়াঃ না আসলে আমি অসুস্থ ছিলাম তো তাই আমার ফ্রেন্ড আছে না ঝিনুক ওর সাথে মিলে আরকি ভাইয়া আমার জন্য
নিপাঃ আর বুঝাতে এসো না হিয়া আমাদের,,তোমার আর ঔ ছেলে টার মাঝে যে কিছু চলছে সব বুঝতে পারছি বুঝছো___আগে তো ফুটপাতের ঔ দেড়শ টাকার জুতা ছাড়া পড়তা না এখন পায়ে এ্যাপেক্সের জুতা পড়ে ঘুরো কি ব্যাপার হ্যা
নিপা আর মিতু আপুর হেসে হেসে দিয়ে ওসব ব্যাঙ্গাত্বকপূর্ণ কথা শুনে হিয়ার কলিজাটা পুরো শুকিয়ে যায়,,আপু গুলো হিয়াকে কি মনে করেছে কি,,হিয়াকি খারাপ কিছু করে এসব নিয়ে এসেছে নাকি আজব তো,,মিতু দের কথার ধরণ একদম হিয়ার ভালো লাগে না,,একটা মেয়ে কে কেউ কিছু দেওয়া মানেই কি,,ছিঃ এতো নোংরা চিন্তা ভাবনা কি করে মানুষের হয়।
মিতুঃ সেদিন একটা নিউজ দেখলাম নিপা জানিস,,ধানমন্ডি লেকের ওখানে একটা পাগলি থাকতো বুঝলি,,তার তো যাবার আবার জায়গা নেই না,,ঔ রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে,,তো কে জানি পাগলি টাকে ধর্ষন করে করে প্রেগন্যান্ট বানিয়ে দিয়ে চলে গেছে,,আর কোনো খোঁজ নেই!!!!
নিপাঃ এ মা তার পর
মিতুঃ তারপর আর কি ঔ যা হয়
হিয়াঃ মিতু আপু আপনি কি কোনোভাবে কথা টা আমাকে উদ্দেশ্যে করে বললেন????
মিতুঃ না শুনলাম তাই বলছি,,,তবে ঘটনা টা কিন্তু তোমার সাথে অনেকটা মিলে যায় হিয়া,,তোমার বড় আপু হই তাই তোমাকে সাবধান করছি,,কিছু না বুঝে না দেখে একটা ছেলে কে এভাবে বিশ্বাস করো না,,হতেও তো পারে ছেলে টাও তোমার শরীর টাকে পাবার জন্য
হিয়াঃ আপু প্লিজ,,
নিপাঃ শুনতে খারাপ লাগলেও এটাই সত্যি হিয়া,,তুমি তো ওসব খবর নিউজ দেখো না,,এরকম ঘটনা এখন কতো হচ্ছে জানো___তার উপর তুমি অনাথ,,একটা মাথা গোজার ঠাই অবধি তোমার নেই,,ছেলে টা যদি এখন তোমাকে এসব গিফট দিয়ে মন ভুলিয়ে তোমার শরীর টাকে ব্যবহার করে ছেড়ে দেয় তোমার কিছু করার থাকবে!!
মিতুঃ তুমি যে ছেলে টার নামে থানায় গিয়ে মামলা করবা সেটারো তো ক্ষমতা নেই তোমার
হিয়াঃ প্লিজ মিতু আপু,,একটা মানুষের সম্পর্কে না জেনে না বুঝে আপনারা তার সম্পর্কে এতোটা বাজে মন্তব্য করতে পারেন না,,আপনারা যেই ছেলে টাকে এতো বাজে বলছেন সেই ছেলে টা কতোটা কি বাজে না ভালো সেটা আমি খুব ভালো করেই জানি,,,,তাই নেক্সট টাইম ওনার সম্পর্কে কিছু বলার আগে ভেবে কথা বলবেন_____আর আমি কার সাথে মিশছি না মিশছি কে আমাকে কি দিচ্ছে না দিচ্ছে এতে আপনাদের এতো ইন্টারেস্ট কিসের,,,,আমি না খেয়ে থাকলে তো এক বেলা দেখতে অবধি আসেন না___এখন এসব বলে কি দেখাতে চাইছেন আপনারা আমার ব্যাপারে খুব চিন্তিত
মিতুঃ গলা নামিয়ে কথা বলো হিয়া
হিয়াঃ গলা উঁচু করতে আপনারাই বাধ্য করেছেন,,এরপর থেকে আমার ব্যাপারে এসব ইন্টারেস্ট না দেখালেই বরং ভালো করবেন
_________________
ঝিনুকঃ এই মেয়ে ফোন তুলতে এতোক্ষণ লাগে হ্যা তোর,,কই ছিলি সারাদিন,,তখন ওভাবে না বলে দুম করে চলে আসলি টেনশন হয় না আমার
হিয়াঃ ঝিনুক একটা কথা জিজ্ঞেস করবো সত্যি সত্যি উওর দিবি?
ঝিনুকঃ কথা,,কি কথা??
হিয়াঃ সেদিন পিকনিকে কুইজ টা ভাইয়া এ্যারেন্জ করেছিলো তাই না
ঝিনুকঃ হেই না না,,ভাইয়া ভাইয়া কেনো এ্যারেন্জ করতে যাবে
হিয়াঃ কি ভাবিস তোরা,যে হিয়া একটা ফোন কেনার ক্ষমতা রাখে না তাই তো
ঝিনুকঃ না হিয়া,,ভাইয়া কিন্তু সে কথা ভেবে ফোন টা তোকে
কথাটা বলেই ঝিনুক জিহ্বে কামড় বসিয়ে দেয়
হিয়াঃ তার মানে আমি যা শুনলাম কথা টা ঠিক,,ভাইয়াই ঔ ফোন টা আমাকে
ঝিনুকঃ তুই ভাইয়া কে ভুল বুঝিস না হিয়া,,ভাইয়া তোর ভালোর জন্য
হিয়াঃ আমাকে মিথ্যা বলে ঠকালো তাই তো
ঝিনুকঃ হিয়া!!
হিয়াঃ বার বার আমার অক্ষমতাটাকে তোরা মনে করিয়ে দিয়ে কি আনন্দ পাস ঝিনুক
ঝিনুকঃ হিয়া আমার কথা টা একটু বুঝ
হিয়াঃ তুই কলেজ লাইফ থেকে আমার অনেক ভালো একটা বন্ধু ঝিনুক,,আমি তোকে হারাতে চাই না___কিন্তু এমন কিছু করিস না যার জন্য আমাকে তোর সাথে সব সম্পর্ক এখানেই শেষ করে দিতে হয়__আমি রাস্তার মেয়ে ঝিনুক তোর ভাইয়াকে বলবি আমাকে যেনো সেভাবেই সে ট্রিট করে,,আর সব চাইতে বেশি যেটা ভালো হয় সে যেনো কখনো আর আমার সাথে কোনো রকম যোগাযোগ না রাখে,,এতে উনিও ভালো থাকবে আর আমিও
ঝিনুকঃ হিয়া শোন,,হিয়া,,হিয়া শোন আমার কথা টা হিয়া
হিয়া ফোন টা কেটে দিয়ে রুমে আসে,,আর রুমে এসেই দেখতে পারে শ্রাবণ ফোন নিয়ে পড়া বাদ দিয়ে গেম খেলছিলো,,এমনিতে হিয়ার মাথা গরম ছিলো তার উপর এসে শ্রাবণকে বই থুইয়ে ফোন হাতে দেখে হিয়ার রাগ তো যেনো এবার আগুনে পরিণত হয়ে যায় মুহুর্তে।
হিয়া এসে শ্রাবণের হাত থেকে ফোন টা কেড়ে নিয়ে ফোন টা আছড়ে পুরো গুঁড়ো গুঁড়ো করে ফেলে ফোনটার এখন এরকম অবস্থা।
শ্রাবণঃ বুবু তুই ভাইয়ার ফোন টা এভাবে ভেঙে দিলি
হিয়াঃ (সপাটে শ্রাবণের গালে দু তিনটা চড় বসিয়ে)____ভাইয়ার চামচা গিরি শুরু করছিস,,এতোদিন তো আমার মুখের উপর একটা কথা বলতি না আর এখন,, এখন বুবুকে উল্টে প্রশ্ন করিস
হিয়ার ধমকানি আর রাগান্বিত চাহনি দেখে শ্রাবণ ওখানেই ভয়ে কেঁপে ওঠে কান্না শুরু করে দেয়
হিয়াঃ খবরদার বলছি কাঁদবি না,,ঢং করিস আমার সামনে___কে হয় ভালো ভাইয়া তোর,,কতোদিন চিনিস ওনাকে তুই___কাঁদতিসিস কেনো হ্যা কান্না করছিস কেনো(শ্রাবণকে পাশে থাকা স্কেল টা দিয়ে আরো দুটো মেরে)____এতোদিন ফোন ছাড়া চলে নি তোর,,ফোন ফোন ফোন___সারাক্ষণ ফোন____এতো এতো গুলো টাকা খরচ করে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিলাম পড়াশোনা না করে এগুলো করার জন্য___মাঠ থেকে খেলে এসে কয় ঘন্টা বই নিয়ে বসছিস বল আমাকে কয় ঘন্টা____আর আর ভালো ভাইয়ার নাম উচ্চারণ করবি আমার সামনে,,বল করবি___উনি আমাদের কেউ হয় না শ্রাবণ___ওনারা অনেক বড়লোক বিশাল বাড়ি গাড়ি ওদের আমি,আমি,তোর এই বুবু কোনোদিন ওদের মতো হতে পারবো না একটু বুঝ___কিন্তু তোকে তোকে ওদের চাইতেও বড় হতে হবে,,পড়াশুনা করতে হবে,,আমাদের জীবনটা এতো সহজ না শ্রাবণ
শ্রাবণঃ আমার আর ভুল হবে না বুবু
শ্রাবণ কাঁদতে কাঁদতে কথা টা বলে,,শ্রাবণের সাথে হিয়াও এবার কেঁদে উঠে
হিয়াঃ আমি না মেঝেতে একটা ভাত পড়লেও সেটা কুড়িয়ে খাই আর তোর ভালো ভাইয়া,,তোর ভালো ভাইয়া কি করে জানিস উনি রোজ জুম্মার দিন করে ঔ বস্তির মানুষ গুলোকে খাবার বিতরণ করে,,তোর ভালো ভাইয়ার অনেক টাকা শ্রাবণ আমি তোর ভালো ভাইয়ার সাথে মানানসই নই একটু বুঝ তোরা সবাই___তোর ভালো ভাইয়া মানুষ টা অনেক ভালো অনেক অনেক কিন্তু আমি কোনো ভাবে তার সাথে
হিয়ার কান্না দেখে শ্রাবণ গপ করে হিয়াকে জড়িয়ে ধরে নিজেও আবার কাঁদতে শুরু করে
শ্রাবণঃ কাঁদিস না বুবু কাঁদলে তোকে পেঁচার মতো লাগে বিশ্বাস কর
হিয়াঃ আমি ক্লান্ত শ্রাবণ,,তোর বুবু এই জীবন টার প্রতি ক্লান্ত,,এখানে কারো সাথে তর্ক করে যুদ্ধে জেতার মতো পরিস্থিতি নেই আর আমার,,আমার না সব শক্তি ফুরিয়ে গেছে ভাই,,তুই আর আমার অবাধ্য হবি না বল,,মন দিয়ে পড়াশোনা করবি কথা দে
শ্রাবণ কিছু বলার আগে হিয়াদের উপরের ফ্লাটের তিন্নি নামের এক আন্টি আসে হিয়ার খোঁজে,,ওনাদের কারখানা তে কর্মী শর্ট পড়াতে উনি হিয়াকে একটা কাজের ওফার করে,,হিয়া যদি ওনাকে তিনদিনের মধ্যে ৫০০টা ব্লাউজের হুক লাগিয়ে দিতে পারে তাহলে উনি হিয়াকে ৪০০০টাকা দেবে,,,শুনেই হিয়ার মন টা খুশিতে ভরে উঠে,,সে টাকার জন্য ওর পরীক্ষার ফি টা কিভাবে দেবে তাই ভাবছিলো আর সৃষ্টিকর্তা তাকে এতো বড় একটা সুযোগ দিয়ে দিলো,,হিয়া রাজি হয়ে যায় এক কথা তেই,,সে ঠিক করে এই তিনদিন সে ভার্সিটি যাবে না,,শুধু বিকেল টাইম টা প্রাইভেট পড়িয়ে এসে আবার কাজে বসে পড়বে,,আন্টি টা বলে কাজ হবে সামনের বিল্ডিংয়ের ২য় ফ্লাটে ওখানে আরো মেয়ে রা আছে অন্য কাজ করার জন্য,,হিয়া ওতেই রাজি হয়ে নেয়
_________________
পরের দিন সকালই উজান ল্যান্ড করে ঢাকাতে,,ইচ্ছে ছিলো এসেই সে শ্রাবণের সাথে দেখা করবে কিন্তু কাল সন্ধ্যার পর থেকে হিয়া আর ওদের নতুন ফোনের নাম্বার বন্ধ পাওয়াতে উজান ঝিনুককে ফোন করে হিয়া ঠিক আছে কি না,,ঝিনুক তখন হিয়ার সেই কথা গুলো বলে যে হিয়া জানতে পারছে ফোন টা ও কুইজ জিতে না বরং উজান ওকে,,ঝিনুক বলে হিয়াকে আজ ভার্সিটি আসতে দিন তারপর না হয় সামনাসামনি বুঝিয়ে কথা বললে হিয়া হয়তো বুঝবে।
দুপুর ২টা পর্যন্ত উজান হিয়ার অপেক্ষা তে ভার্সিটিতে বসে থাকে,,কিন্তু হিয়া আসে না,,শেষে উজান বাধ্য হয়ে হিয়ার বাড়ির সামনে আসলে দেখতে পারে হিয়াদের রুমের জানালা টা বন্ধ,,উজান রিমা কে ফোন করলে রিমা বলে ওর কাল ফেরার কথা ছিলো কিন্তু পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করায় সে আরো এক সপ্তাহ এখন তার গ্রামের বাসাতেই আছে,,তাই হিয়ার খবর ও জানে না।
এদিকে উজান বাড়ির সামনে হিয়ার জানালা খোলার অপেক্ষা তে থাকে কিন্তু কেউ দরজা খুলে না,,উজান বিকালে মাঠে গিয়ে শ্রাবণকে খুঁজে কিন্তু শ্রাবণো নেই আজ মাঠে,,সময় যতো ঘনাতে থাকে উজানের চিন্তা তোতোই বাড়তে থাকে,,নীলিরা আবার হিয়ার কোনো ক্ষতি করে দিলো না তো!!ওদিকে সিফাত আবার___হাজার হাজার চিন্তা ঘুরপাক খেতে থাকে উজানের মস্তিষ্কে।
উজান রাতের দিকে শেষে বাধ্য হয়ে সন্ধিকে ডেকে এনে হিয়ার ফ্লাটে হিয়াকে খুঁজতে পাঠালে ভেতর থেকে অন্য রুমে থাকা মিতু আপু বলে উঠে হিয়া সকাল থেকে বাড়ি ফেরে নি এখনো,,আর কোথায় গিয়েছে বলে যায় নি,,তবে শ্রাবণ হিয়ার সাথেই ছিলো।
এদিকে হিয়া কাজ করতে করতে ওখানকার মেয়ে দের সাথে ভাব করে নিয়ে ঔ রাত টা শ্রাবণ সহ ওখানেই কাটিয়ে দেয়,,আর এদিকে পুরো শহর জুড়ে উজান হিয়াকে খুঁজতে থাকে,,হিয়া যে রাগ করে কাল ফোন ওফ করে রাখলো এখনো তার সেই ফোন বন্ধ তা বন্ধই।
সে দিন টা কোনোরকম পাড় হয়ে পরেরদিন টাও পার হয় কিন্তু হিয়ার খোঁজ কোনোভাবেই উজান আর নিতে পারে না,,হিয়ার স্টুডেন্ট গুলোর মধ্যে গুনগুনের মায়ের নাম্বার টাই উজানের কাছে ছিলো,,উজান তাকেও ফোন করে হিয়ার খোঁজ চাইলে উনি বলে গুনগুনের পরীক্ষা শেষ দেখে উনি দুদিন হিয়াকে ওফ দিছে তাই হিয়ার খোঁজ উনি ঠিক বলতে পারছে না।
হিয়াঃ ভাইয়ের কি আমার সাথে এভাবে বসে থাকতে কষ্ট হচ্ছে
শ্রাবণঃ না বুবু,,তুই আর কতোদিন এখানে এভাবে থাকবি
হিয়াঃ এই বাকি ব্লাউজ গুলো হয়ে গেলে কাল আমরা চলে যাবো
শ্রাবণঃ এখনো তো অনেক গুলো বাকি
হিয়াঃ হুম আরো দুইশো টার মতো বাকি আছে,,কালকের মধ্যে হয়ে যাবে তারপর ঔ আন্টি টার থেকে টাকা নিয়ে আমরা বাড়ি ফিরবো ঠিক আছে
শ্রাবণঃ বুবু তোর হাতে ব্যাথা হচ্ছে না,,কতোবার সুই ফুটিয়ে ফেললি হাতে তোর কষ্ট হচ্ছে খুব তাই না বল!!
হিয়াঃ না ভাই হচ্ছে না,,আচ্ছা কাল আন্টি টাকা দিলে আমি তোর জন্য একটা বিরিয়ানির প্যাকেট কিনে নিয়ে আসবো হুম তারপর তোর জন্য আরো একটা সুন্দর জামা কিনবো ঠিক আছে
শ্রাবণঃ নতুন জামা,,
হিয়াঃ হুম,,,আচ্ছা এখন তুই ঘুমে যা একটু আমি এই বাকি কাজ গুলো সেলাই করি ফেলি
শ্রাবণঃ আচ্ছা আচ্ছা
শ্রাবণ ঘুমিয়ে গেলে হিয়া আরো ৩০টার মতো ব্লাউজের কাজ সেরে একটু রেস্ট করবে বলে চোখ টা বন্ধ করে নেয়,,পাশে আরো সব মহিলা মেয়ে গুলো কাজ করতে করতে গল্প করছে তাদের গল্পে ঠিকভাবে হিয়ার ঘুম টাও হয়ে আসছে না
হিয়াঃ ফোন টাও তো বাড়িতে রেখে আসছি,,নাহলে ঝিনুককে ফোন দিয়ে ভার্সিটিতে কি হচ্ছে একটু খোঁজ নিতাম____না আমি ঝিনুক কে ফোন করবো না ঝিনুকো ভাইয়ার সাথে থেকে থেকে এখন আর আমাকে_____আচ্ছা ভাইয়া কি ওনার বাসা থেকে ফিরে এসেছে এখানে,,উনি কি করছে___মানুষ টা এতো ভালো কেনো না—কি সবার কথা মতো উনিও আমাকে,,হতেও পারে আমার মতো মেয়েকে কেনোই বা ভাইয়া,,আর উনি তো সবসময়ই আমাকে বলে ওনার চয়েস হবো নাকি আমি(তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে)__উনি নাকি যাকে ভালোবাসবে সে নাকি ওনার মতোই হবে,,আমি তাহলে ওনার মতো হলাম কোথায় আর____তবে উনি এই কদিনে আমার জন্য যা করেছে আমি হয়তো কখনোই সে ঋণ টুকু ওনার শোধ করতে পারবো না__উনি একটা সুন্দর স্মৃতি হয়েই না হয় থাকবে আমার জীবনে
___________
সন্ধিঃ তুই একটু শান্ত হ,,,দুদিন থেকে কিচ্ছু পেটে দিস নি,,আজ অন্তত একটু
উজানঃ হিয়াকে না পাওয়া অবধি আমার গলা দিয়ে খাবার নামবে না সন্ধি___একটা মানুষ কি করে একদিনে এভাবে হারিয়ে যেতে পারে,,,আমার খুব ভয় হচ্ছে সন্ধি
সন্ধিঃ আমারো কি ভয় হচ্ছে না বল,,,,কতো জায়গা তো খুঁজলাম কেউ কিছুই বলতে পারলো না,,আর হিয়ার ফোন টাও তো
উজানঃ প্রথমে ভেবেছিলাম হিয়া হয়তো আমার উপর রাগ করে ফোন ওফ করে দিয়ে,,কিন্তু এখন তো মনে হচ্ছে
সন্ধিঃ আমরা তো থানায় মিসিং ডায়েরি করলাম,,দেখি পুলিশ কি করতে পারে
উজানঃ কি করবে বলতে পারিস আমাকে,,কে আছে হিয়ার এই শহরে,,কোথায় যেতে পারে আর ও
সন্ধিঃ হিয়া ফিরবে আমি তোকে বলছি,,এখন একটু বস শান্ত হয়ে______তুই বস আমি আরেক বার একটু ঝিনুককে ফোন দিয়ে দেখি ও হিয়াকে ফোনে পেলো কি না
উজানঃ হুম
সন্ধিঃ বস তুই
উজানঃ কোথায় তুমি হিয়া,,আর কোথায় খুঁজলে আমি তোমাকে পাবো,,তুমি তো ছোট বাচ্চা না হিয়া যে এতটুকু বুঝতে পারো না আমি তোমাকে___শাস্তি দিচ্ছ তোমাকে মিথ্যা বলেছি বলে শাস্তি দিচ্ছ,,,ঠিক আছে যা শাস্তি দেবে সেটা না হয় সামন থেকে দেও তোমার দেওয়া সব শাস্তি আমি মুখ বুজে মেনে নেবো কিন্তু এভাবে দূরে থেকে না প্লিজ
________________
টানা তিনদিন উজান হিয়াকে পাগলের মতো খুঁজে বের হয়,,হিয়া যে কাজের ফাঁকে বাড়িতে আসে নি এমন টা না,এসেছিলো বাড়িতে ফ্রেশ হয়ে শ্রাবণকে নিয়ে আবার চলেও যায় কাজে, উজান আবার ওসময় ভার্সিটিতে হিয়ার অপেক্ষা তে থাকায় হিয়াকে খুঁজতে ব্যর্থ হয়,, মোট কথা দুজন একই শহরে পাশাপাশি থাকলেও উজান ভাবে হিয়া নিরুদ্দেশ।
কাজের টাকা হাতে নিয়ে বাড়িতে আসে হিয়া,,পরের দিন সেই টাকা থেকে ফির টাকা নিয়ে ভার্সিটিতে এসে একা একা ফি জমা দিয়ে ক্লাসরুমে ক্লাস করতে আসলে দেখে ঝিনুক জানালার দিকে মুখ করে এক মনে তাকিয়ে আছে তো আছেই,,হিয়া গিয়ে ঝিনুকের পাশে বসলেও ঝিনুক তখনো বাহিরের পানে চেয়ে আছে,,ঝিনুকের মনটা গত দুদিন ধরে হিয়ার জন্য যেমন খারাপ ছিলো তেমনি ছিলো চিন্তিত,,কলেজ থেকে হিয়ার সাথে সবসময় ছিলো আর সেই হিয়ার তিনদিন থেকে কোনো খোঁজ নেই কিছুতেই কোনো কিছুতে মন বসছে না ঝিনুকের,,ঝিনুকের মন অন্য কোথাও দেখে হিয়া রাগে এক টানে ঝিনুককে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই ঝিনুক হিয়াকে দেখে হিয়াকে তার বুকে আগলে ধরে একদম ডুকরে কেঁদে উঠে।
হিয়াঃ আরে কি হলো কি এরকম করে কাঁদছিস কেনো তুই,,এই ঝিনুক__আরে
ঝিনুকঃ কুত্তা কোথায় কোথায় ছিলি তুই,,কোথায় কোন গর্তে ঢুকে ছিলি,,জানিস আমরা তোকে কোথায় কোথায় খুঁজেছি,,কি কি পেলি আমাদের এতো কষ্ট দিয়ে তুই কি পেলি,,এতো এতো রাগ তোর___দিয়েছে না হয় ভাইয়া ফোন টা কিনে তাই জন্য তুই রাগ করে ভার্সিটি আসবি না,,আমার ফোন ধরবি না____তুই তুই তুই খুব খারাপ হিয়া খুব খারাপ,,
হিয়াঃ আরে থাম না,,সবাই দেখছে ঝিনুক___চুপ চুপ
ঝিনুকঃ কেনো করলি তুই হিয়া এটা,,কোথায় গিয়েছিলি বল আমাকে,,তোর তোর কোনো বিপদ হয় নি তো,,তুই ঠিক আছিস তো__নীলি নীলি আবার তোর কোনো ক্ষতি করে নি তো__শ্রাবণ ঠিক আছে,,শ্রাবণ কোথায়
হিয়াঃ আরে তুই থামলে না আমি বলবো কি হয়েছে
ঝিনুকঃ বল না বল আমি শুনছি তো,,জানিস ভাইয়া গত তিনদিন ধরে তোকে কি রকম পাগলের মতো খুঁজে বের হচ্ছে,,ভাইয়া ভাইয়া জানে তুই ফিরে এসেছিস,,ভাইয়া দেখেছে তোকে__
হিয়াঃ প্লিজ ঝিনুক এখানে আবার ভাইয়াকে কেনো আনছিস
ঝিনুকঃ আনবো না বলছিস,,জানিস ছেলে টার কি অবস্থা করে দিয়েছিস তুই এ কদিনে,,তুই কি মানুষ হিয়া,,এতো রাগ তোর,,ফোন টা ফোন টা অনন্ত তো ওন রাখতে পারতি কিন্তু তুই তা না করে
হিয়াঃ আমি একটা সেলাইয়ের কাজ পেয়েছিলাম ঝিনুক,,ঔ কাজের জন্য আমি একটা মোটা অংকের টাকা পাই জানিস,,তাই আমি এ কদিন একটু ওখানেই
ঝিনুকঃ তাই বলে কাউকে কিছু না জানিয়ে তুই এভাবে উধাও হয়ে যাবি,,ফোন টা তো এটলিস্ট
হিয়াঃ আসলে আমার তোদের উপর খুব রাগ হয়েছিলো তাই আমি ফোন টা ওফ করে,,আর এ কদিনে আমার ফোনের প্রয়োজনো হয় নি বিশ্বাস কর তাই তো আমি
হিয়া আর কিছু বলতে যাবে ওমনি উজান ঝড়ের গতিতে ক্লাস রুমে হনহন করে ঢুকে হিয়ার সামনে গিয়ে হিয়ার হাতের বাহু খামচে ধরে হিয়াকে দাঁড় করিয়ে দেয়,,হিয়া কিছু বলতে যাবে তার আগেই উজান হিয়ার গালে একটা দাবাং মার্কা চড় বসিয়ে দিতে ধরেও হাত টা নামিয়ে নেয়,,সাথে সাথে ক্লাসে উপস্থিত থাকা প্রত্যেকটা স্টুডেন্ট থ হয়ে দাঁড়িয়ে যায়!!
সন্ধিঃ উজান একটু শান্ত হ
উজান সন্ধি তুষার কারোরি কোনো কথা পাওা না দিয়ে হিয়ার বাহু ইচ্ছে মতো খামচে বাঘের মতো হুঙ্কার তুলে হিয়াকে ঝারি দিতে শুরু করে,,গলার আওয়াজ এতোটাই প্রখর যে দেওয়ালে সেটা বাধা পেয়ে প্রতিধ্বনি হতে থাকে সেই গম্ভীর কন্ঠ!!
উজানঃ কোথায় গিয়েছিলে তুমি,,,আমার প্রশ্নের উত্তর দেও হিয়া কোথায় ছিলে তুমি
হিয়াঃ আ আ আমি
উজানঃ জাস্ট এন্সার মি ড্যাম ইট
হিয়াঃ আমি আমি তো বাড়িতেই ছিলাম
উজানঃ বাড়িতে ছিলে তুমি,,আমাকে মিথ্যা বলছো,,কিসের জন্য হ্যা কিসের জন্য
হিয়াঃ লাগছে আমার হাতে
উজানঃ কোথায় কোথায় তোমাকে খুঁজিনি আমি,,ভার্সিটি,রাস্তা,তোমার বাড়ি,তোমার টিউশন কিচ্ছু কিচ্ছু বাদ দেই নি,,যা যা চিনতাম সব জায়গা খুঁজে আমি
সন্ধিঃ উজান একটু শান্ত হ,,মেয়েটার হাতে লাগছে একটু বুঝ
উজানঃ কোথায় ছিলে___হিয়া আমার প্রশ্নের উত্তর দেও,,কোথায় ছিলে এই তিনদিন তুমি
হিয়াঃ বললাম তো বাড়িতেই ছিলাম আমি
উজানঃ আবার আবার আমাকে মিথ্যে বলা,,কার জন্য হ্যা কিসের জন্য___তোমার কোনো ধারণা আছে হিয়া এই তিনটা দিন আমি,,আমি কিভাবে
সন্ধিঃ তুই একটু চুপ কর না বলতে তো দে আগে ওকে ওর কথা টা,,,,,,হিয়া কোথায় ছিলে তুমি,,তুমি যে বলছো বাড়িতে ছিলে আমরা তো তোমার বাড়িতে গিয়েছিলাম কিন্তু তোমাকে তো পাই নি
হিয়াঃ আপু আমি আসলে
হিয়া কাঁদতে কাঁদতে সন্ধিকে বলে সে একটু দূরে একটা বিল্ডিংয়ে সেলাই এর কাজে গিয়েছিলো,,ওখানেই দুই রাত থেকে কাল রাতে আসে,,ফোনের প্রয়োজন হয়নি তাই সে ফোন টা বাড়িতে থুইয়ে দিয়েই।
সন্ধিঃ এটা কোনো কথা হিয়া,,এটলিস্ট ফোন টা তো অনন্ত___তুমি জানো আমরা থানা তে অবধি তোমার জন্য মিসিং ডায়েরি অবধি করিয়েছি
হিয়াঃ এসব কি বলছেন আপু আপনি
ঝিনুকঃ আপু যা বলছে সব ঠিক বলছে,,তুই আমাদের কারো কথা না ভাবিস একবার অনন্ত ভাইয়ার কথা টা তো ভাবতে পারতি হিয়া,,তুই কি করে ভাইয়াকে,
হিয়া উজানের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই উজান হিয়ার হাত এক ঝাটকাতে ছেড়ে দিয়ে ক্লাস রুম থেকে বেড়িয়ে যায়,,হিয়া পেছন থেকে উজান কে ডাকতে গিয়েও আর ডাকে না।
সন্ধিঃ তুমি তো ছোট না হিয়া,,উজান যে তোমাকে পাগলের মতো ভালোবাসে এটুকু কি তুমি বুঝো না,,না বুঝতে চাও না কোনটা??
ঝিনুকঃ ভাইয়া তোর জন্য গত তিনদিন ধরে না খেয়ে আছে হিয়া,,আর তুই এই মানুষ টাকে কি করে
সন্ধিঃ উজানকে কষ্ট দিও না হিয়া,,এমনিতে উজানের মনে যতোটা কষ্ট সেটা শুধু এই আমিই জানি,,উজানকে দেখে যতোটা স্ট্রং মনে হয় উজান ভেতরে ভেতরে কিছু একটা নিয়ে ততোটাই শেষ হয়ে যাচ্ছে হিয়া,,উজানকে আর শেষ হতে দিও না প্লিজ