মেঘের_আড়ালে_রোদের_লুকোচুরি ❤️ 🌈💙🎨😏❤️🥳🐦💐🍫🏩💒 Part-21

0
1037

😏 #মেঘের_আড়ালে_রোদের_লুকোচুরি ❤️
🌈💙🎨😏❤️🥳🐦💐🍫🏩💒

Part-21

উজান আর শ্রাবণকে বিভিন্ন পোজের পিক তুলে দিতে দিতে হিয়া ক্লান্ত,,এতো পিক তুলে দেওয়া যায় নাকি আজব

হিয়াঃ নিন ফোন টা ধরে এখন সেলফি না কুলফি ওসব তুলুন,,আমার হাতে ব্যাথা উঠে গেছে,,এতো ছবি তুলে দেওয়া যায় নাকি

উজানঃ আচ্ছা দেও আর তুলে দিতে হবে না,,আসো তোমার কয়েকটা ছবি তুলে দেই

ব’লেই উজান হিয়ার খোপা করা চুল গুলো এক টানে খুলে দেয়,হিয়ার খোঁপার ভাজ টা নিমিষে খুলে গিয়ে কোমড় অবধি পড়ে আর কিছু চুল চলে আসে মুখের উপর,উজান আলতো হাতে সেই চুল গুলো ঠিক করে দিয়ে হিয়ার কানের পাশে ওগুলো গুঁজে দেয়

হিয়াঃ এটা কি করলেন,,এই কাজ টা করা কি খুব জরুরি ছিলো

উজানঃ হ্যা ঔ ছবি তুলবো না তাই একটু একটু জরুরি ছিলো

হিয়াঃ দেখি আমার কিলিপ টা দিন,,গরম লাগছে ভীষণ আমার

উজানঃ থাক না চুল গুলো খোলা, এরকম করো কেনো তুমি

হিয়াঃ আজব তো আমার গরম লাগলে আমি অহেতুক কেনো চুল খুলে রাখবো

উজানঃ আমি বলেছি তাই রাখবে,,দেখি ঔ ফুল গুলোর ওখানে গিয়ে সুন্দর করে দাঁড়াও আমি তোমার কয়েকটা ছবি তুলে দেই

হিয়াঃ দরকার নেই আপনার ফোন আপনি ছবি তুলুন____শ্রাবণ

শ্রাবণঃ হ্যা বুবু

হিয়াঃ কি করছো তুমি ওখানে,,মাটি দিয়ে খেলার সময় এখন এটা,,সেদিন এই জামা টা নতুন কিনে দিলাম আর আজকেই কাঁদা মাটি লাগিয়ে সেটাকে নষ্ট করছো তুমি,,জামা টা কিনতে টাকা লাগে নি আমার

শ্রাবণ হাত দিয়ে গায়ের গেঞ্জি টা ঝারতে গিয়ে হাতে থাকা ময়লা গুলো আরো মাখিয়ে ফেলে গেঞ্জি টাতে,,হিয়া রেগে গিয়ে শ্রাবণকে সোজা করে দাঁড়িয়ে দিয়ে নিজে শ্রাবণের গেঞ্জি টা ঝারতে শুরু করে

শ্রাবণঃ বুবু ঘুম পাচ্ছে খুব

হিয়াঃ ভাইয়ার সাথে ভোরে উঠে বেরু করতে গেছেন দুপুরে ঘুম আসবে সেটাই তো স্বাভাবিক

শ্রাবণঃ তুই কি করে বুঝলি আমি আর ভাইয়া ভোরে উঠে

হিয়াঃ আমি তোর বুবু শ্রাবণ,কি ভাবিস তুই আমার থেকে তুই সব লুকিয়ে গেলে আমি কিছু টের পাবো না

শ্রাবণঃ হে হে,,তুই কি চালাক বুবু

হিয়াঃ দেখি,,আর যেনো মাটি নাড়া না দেখি___এই যে শুনছেন

উজানঃ বলো বউ শুনছি

হিয়াঃ কি বললেন!!

উজানঃ বলো পেত্নী শুনছি

হিয়াঃ ওহ,,শ্রাবণের ঘুম পাচ্ছে আমরা কি করবো এখন,,বাড়ি ফিরবো না

উজানঃ তো শ্রাবণ ঘুমোক সেটার জন্য আবার বাড়ি ফিরতে হবে না-কি

হিয়াঃ আপনি কোলে নিয়ে থাকবেন বুঝি ওকে

উজানঃ হুম দরকার হলে থাকবো

হিয়া উজানকে ভেংচি কেটে উঠে দাঁড়ায়,,দু হাতে চুল গুলো আবার খোঁপা করে কিন্তু আবার তার সেই খোপা খুলে যায়,কিলিপ ছাড়া কিছুতেই যেনো সেই খোপা মাথায় থাকছে না,,শ্রাবণ আবার দৌড়ে উজানের কাছে ছুটে গেলে হিয়া সামনে কি যেনো দেখে হাঁটতে শুরু করে,,

সামনে একটু দূরে সরিষা ক্ষেত এর পাড় ঘেঁষে জন্মেছে কিছু আলু আর লাল শাকের গাছ আর একটা মহিলা বসে বসে সেখান থেকে খুঁটে খুঁটে আলু তুলছে,,হিয়া দৌড়ে ওখানে ছুটে যেতেই উজান অবাক দৃষ্টিতে হিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে!!

হিয়াঃ চাচি তুমি এগুলো কি তুলো,,আলু??

চাচিঃ হো মা তুলবা নাকি

হিয়াঃ আমি তুললে যদি কেউ রাগ করে

চাচিঃ কায় রাগ করবে,,এগলান তো এ্যাটে কোনা এমনি গজায় উঠছে,,কেউ মুখত দেয় না,আমার বেটার আজ আলু আনবার কথা স্মরণ নাই,,আমার দেওয়ানির ফির আলু ছাড়া তরকারি ঢুকে না তার লগে আমি আলু তুলবার লাগছি

হিয়াঃ তার মানে এগুলো সরকারি আলু,আমি এখন থেকে যতো খুশি আলু তুলতে পারবো ,,বাহ ভাইয়া আমাকে এদিক নিয়ে এসে ভালোই করেছে,,দেখি কতো গুলো আলু তুলতে পারি

হিয়া হাসি মুখে চাচির থেকে একটা বড় পলিব্যাগ নিয়ে আলু তুলতে শুরু করে,অল্পক্ষণের মধ্যে চাচির সাথে হিয়ার ভাব হয়ে যায়,এই অল্প সময়েই দুজন নিজেদের কতো আপন করে সুখ দুঃখের গল্প করে ফেলে

মানুষের প্রকৃতি সত্যি বড় অদ্ভুত বড় লোক কারো সামনে আমরা একটা কথা বলতে কখনো কখনো দশমিনিট সময় নেই অথচ এই দশ টা মিনিটেই আমরা আমাদের সুখ দুঃখের কতো গল্প একটা গরীব মানুষের সাথে ভাগ করতে পারি!!

হিয়াঃ আচ্ছা চাচি আর জায়গা নেই ব্যাগে,,আসি আমি আজ কেমন

চাচিঃ আসো মা,,ভালো থাইকো

হিয়াঃ দোয়া করিও চাচি,,ঔ দেখো ঔ যে ঔ দূরে যে বাচ্চা টা দেখছো ওটা আমার ছোট ভাই,,ওর জন্য অনেক দোয়া করে দিও কেমন

চাচিঃ আচ্ছা দেবো,,তা ঔ বাচ্চা টার সাথে ঔ টা কে তোমার দেওয়ানি নাকি

হিয়াঃ না চাচি,, ঔ মানুষটা আমার বিয়ে করা স্বামী না তবে বলতে পারো উনি আমার অলিখিত দেওয়ানি!!

বলেই হিয়া হাসতে হাসতে আপন মনে বক বক করতে করতে উজানের দিকে আসে

হিয়াঃ যাক আলুর যা কেজি হ’য়েছে এখানে প্রায় ২কেজির মতো আলু আছে আমার গোটা সপ্তাহ টাতে আর আলু কেনা লাগবে না,,হে হে

উজানঃ এসব কি

হিয়াঃ আলুউউউ

উজানঃ আলু দিয়ে কি হবে আলু ভর্তা

হিয়াঃ আপনার আমার আলুর ভর্তার প্রতি খুব নজর তাই না

উজানঃ ঠেকা,,তোমার শুকনো শুকনো আলু ভর্তা তুমি খাও আমি ওসব খাই না

হিয়াঃ হ্যা আপনি আলু কেনো খাবেন আপনি তো খাবেন কুমড়ো

উজানঃ তোমার কি তাতে,,কুমড়ো ইটস মাই ফেবারিট

হিয়াঃ হুম ঔ জন্য তো দেখলাম কাল রাতে কেমন ঝিনুকদের বাড়িতে,বাটির পুরো কুমড়ো একা খেয়ে ফেললেন

উজানঃ তুমি না ওলয়েজ বেশি বক বক করো,,ইডিয়ট

উজান হিয়াকে একটা ভেংচি কেটে শ্রাবণকে কোলে তুলে হাঁটতে হাঁটতে অনেক দূরে একটা সরিষা ক্ষেএের মাঝখানে নিয়ে যায়,,জায়গাটার মাঝখানে আছে একটা উচু করে তৈরি করা মাচা,,মাচাটার উপর আবার ছাউনি দেওয়া,নিচে গরুর গাড়ির মতো পোয়াল বিছানো,আর মাচা টায় উঠতে হয় একটা লম্বা কাঠের সিঁড়ি দিয়ে,,

উজান শ্রাবণকে নিয়ে মাচা টার উপর উঠে বসে,মাচা টার উপর থেকে সামনে তাকালে যতোদূর চোখ যায় তোতোদূর শুধু ক্ষেএ আর ক্ষেএের দেখা মিলে,,কোথাও সরিষা কোথাও ধান কোথাও বা ফাঁকা মাঠ,মাঠ পেড়িয়ে আবার বিভিন্ন সবজির ক্ষেএ,,একটু পর হিয়াও এসে মাচা টার উপর উঠে বসে,,শ্রাবণের চোখ ঘুমে ঢুলুঢুলু করছে,,চোখ বন্ধ করলেই সে এখন ঘুমে যাবে সিউর

উজানঃ শ্রাবণ দেখি আমার কোলে মাথা দিয়ে ঘুমে যা তো,,আমি যাওয়ার সময় তোকে এখন কোলে করে নিয়ে ফিরবো

শ্রাবণঃ বুবু?

হিয়াঃ ঘুমাও যেভাবে খুশি,আমার পারমিশন নিচ্ছো কেনো এখন

উজানঃ এরকম করো কেনো,,বাচ্চা টা আমার কোলে ঘুমোলে কি সমস্যা তোমার

হিয়াঃ বললামই তো ওর যেভাবে খুশি ঘুমোক আমি কি মানা করেছি একবারো ওকে

উজানঃ হ্যা ও তো বলো নি,,দেখি শ্রাবণ তুই ঘুমা বুবুর কথা শুনতে হবে না

শ্রাবণ ওর বুবুর কথা শুনবে কি তার আগেই সে উজানের বুকে ঢুলে পড়ে ঘুমিয়ে যায়,,দুপুর পেড়িয়ে সময় তখন বিকেলের মাঝামাঝি,,সূর্য টা মাঠ পেড়িয়ে পশ্চিমা আকাশের দিকে হেলে পড়ছে,,সূর্যের কমলা আভা সাথে চারপাশের হলুদের সমাহার জায়গা টাকে একটা অন্য রকম শান্তিতে ভরিয়ে তুলছে উজান হিয়া দুজনের চোখে,,দুজনে নিশ্চুপ হয়ে আছে,,হিয়া সমানে ওর দুচোখ যেদিকে যায় সেদিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে,,উজান শ্রাবণকে ঠিক মতো কোলে শুইয়ে নিয়ে হিয়ার দিকে তাকিয়ে

উজানঃ হিয়া(অস্ফুটে)

হিয়াঃ বলুন

উজানঃ আমি যদি বিয়ের পর শ্রাবণকে এ্যাডপ্ট করে নেই তোমার কোনো আপওি থাকবে তাতে

হিয়াঃ অবশ্যই থাকবে

উজান ভূ কুঁচকে হিয়ার দিকে তাকালে,,হিয়া উজানের দিকে হালকা ঘুরে বসে শ্রাবণের মাথায় হাত বুলে দিয়ে

হিয়াঃ আপনি শ্রাবণকে আদর করেন ভালোবাসেন ভালো কথা কিন্তু আপনার যে ওয়াইফ হবে সে কেনো শ্রাবণকে এ্যাডপ্ট করতে চাইবে আমাকে তার যুক্তি দিন

উজানঃ গর্ধব,ছাগল,মাথামোটা

হিয়াঃ কিছু বলছেন

উজানঃ না

হিয়াঃ আপনি কি রেগে গেলেন

উজানঃ তোমার কি তাতে পেত্নী একটা

হিয়াঃ আচ্ছা আপনি আমাকে একটা কথা বলুন তো আমি কি কখনো শ্রাবণ ছাড়া থাকতে পারবো,,আপনি কেনো আমাকে যদি কেউ এসে বলে সে শ্রাবণের পুরো ফিউচারের দায়িত্ব নিতে চায় আমি হিয়া কখনো সেটা হতে দেবো না,আমার ভাইয়ের জন্য আমিই যথেষ্ট

উজানঃ আর আমার জন্য তুমি!!(নিজ মনে)

উজান শ্রাবণকে নিজের কোলে শুইয়ে দেয়,শ্রাবণের মাথা উজানের কোলে আর পা গুলো হিয়ার কোলে রাখা,,আর উজান ইচ্ছে করে একটু একটু করে হিয়ার দিকে আগাতে শুরু করে একদম হিয়ার গা ঘেঁষে বসে যায়,,

উজানঃ ঘুম পাচ্ছে তোমার

হিয়াঃ না,শরীর টা একটু ক্লান্ত লাগছে

উজানঃ বাড়ি ফিরি তাহলে

হিয়াঃ না__থাকি না বসে আর কিছু ক্ষন ভালো লাগছে পরিবেশ টা,,মনে হচ্ছে কতোদিন পর একটু শুদ্ধ বাতাস গায়ে মাখছি

উজানঃ কিন্তু বললে যে শরীর ক্লান্ত লাগছে

হিয়াঃ ক্লান্ত না,আসলে কি বলুন তো বাড়িতে তো একটা দৌড়ের উপর থাকতে হয় ভার্সিটি টিউশন নিজের পড়া শ্রাবণ আর এখানে এসে থেকেই তো বসে বসে আছি,,তাই শরীর টা একটু আলসেমি লাগছে

উজানঃ হুম,,,তুমি চাইলে আমার কাঁধে মাথা রাখতে পারো কিন্তু হাঁসপাখি

হিয়াঃ বলছেন?

উজানঃ বলছি

হিয়া একটা ক্লান্তির হাসি টেনে উজানের ডান কাঁধে মাথা রাখে,এই সুযোগে উজান তার প্রেয়সীর কাছে গিয়ে নিজেকে আরো মেলে ধরে,,বা হাতে শ্রাবণকে আগলে ডান হাত প্রসারিত করে বাঁকা করে টেনে হিয়ার মাথায় হাত রেখে হিয়ার চুলে বিলি কাটতে শুরু করে❤️

হিয়াঃ বাবা মা যখন মারা যায় তখন শ্রাবণ একদম কোলের বাচ্চা,,আমি ক্লাস সেভেনে পড়তাম,,একদিন স্কুলের ছুটিতে মা বাবা আমি আর শ্রাবণ মিলে আমাদের গ্রাম থেকে একটু দূরে ঘুরতে গিয়েছিলাম,ঘুরতে যাবার বাহানা টা অবশ্য আমি তুলেছিলাম,,আমার বায়না রাখতে গিয়ে____ফেরার পথে মাঝপথে আমাদের অটো টা নষ্ট হয়ে যায়,বাধ্য হয়ে নেমে পড়ি আমরা সবাই,,বাবা আমাকে আর মা’কে পাশের একটা দোকানে বসিয়ে দিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে নতুন একটা অটো খুঁজতে শুরু করে,,কিছুক্ষন বাদে কি জেনো মনে করে মা আমার কোলে শ্রাবণকে দিয়ে বাবার সাথে কথা বলতে বাবার কাছে যায়,,আমি এদিকে আপণ মনে শ্রাবণকে সামলাতে থাকলাম কিন্তু একটু পরেই একটা চিৎকার কানে আসতেই পেছন ফিরে তাকালাম

হিয়া আর কিছু বলার আগে হিয়ার গলা ধরে আসে,চোখ টলটল করতে থাকে জলে,

হিয়াঃ একটা মুহুর্তে সব কিছু হারিয়ে ফেললাম আমি,,একদিকে শ্রাবণ একদিকে বাবা মা’র রক্তাক্ত শরীর,,কোথায় যাবো কি করবো কিছু বুঝতে পারছিলাম না______দাদু বাড়ির সাথেও সম্পর্ক খুব একটা ভালো ছিলো না আমাদের,,দাদুর অমতে বাবা মার বিয়ে টা হয়েছিল তাই প্রথম থেকে সব তুচ্ছতাচ্ছিল্য এসে জুটতো আমাদের কপালে,,তবু নিরুপায় হয়ে দাদু বাড়িতে কিছুদিন থাকলাম,,একটা তো মাথা গোজার ঠাই লাগতো আমার তখন,,দু বছর চাচ্চু আমার আর শ্রাবণের দায়িত্ব নিলো কিন্তু রিফা চাচির ব্যাপারটা কিছুতেই সহ্য হচ্ছিল না,,আমাকে আর শ্রাবণকে দেখতে গিয়ে নাকি চাচ্চু তার সংসারে প্রয়োজনীয় জিনিস আনতে পারছে না___দু বছরে অনেক কিছু সহ্য করে নিজেকে শক্ত করেছি,,চাচির বাড়িতে চাচির এমন কোনো কাজ ছিলো না যেটা আমি করে দেই নি,,একটা কাজের বুয়ার মতো সারাদিন খাটতাম___কিন্তু একদিন আর অপমান গুলো সহ্য করতে পারলাম না,,ওরা আমাকে অপমান করছে ঠিক আছে কিন্তু যখনি ওরা শ্রাবণকে তুলে কথা বলতো তখনি আমার কলিজাটা পুরো ছিড়ে আসতো___আচ্ছা ওটা তো আমারো দাদু বাড়ি ছিলো ওদের যেমন অধিকার আমারো তো ঠিক সেরকমই অধিকার ছিলো তাই না বলুন,,একদিন এই কথা টা বলতে গিয়েই চাচি আমার গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো,,চাচ্চু কে ডেকে বললো হয় উনি আমাকে আর শ্রাবণকে বাড়ি থেকে তাড়াবেন নয়তো উনি বাড়ি ছেড়ে তাদের দুই বাচ্চা কে নিয়ে চলে যাবেন___একটা অশান্তি তৈরি হতে থাকলো আমার জন্য চাচ্চুর সংসারে,,আমি ঠিক করলাম আমি আর চাচ্চুর বাড়িতে থাকবো না কিন্তু কোথায় যাবো সেটাও বুঝতে পারছিলাম না__পরে সালেহা খালা বলে এক আন্টি থাকতো চাচ্চুর বাড়িতে উনার পরামর্শে ঢাকায় আসলাম,,উনি আমাকে আমি এখন যেখানে থাকি ওখানে একটা সীট ম্যানেজ করে দিলেন,,শুরু হলো নতুন একটা জীবন___সালেহা খালা প্রতিমাসে আমাকে দু হাজার টাকা করে পাঠিয়ে দিতো যদিও এখন আর দেয় না কিন্তু একটা বছর উনি আমাকে কেনো টাকা টা দিতো আমি আজো জানি না অথচ ওনার সাথে কিন্তু আমার সম্পর্কও নেই কোনো,,আগে সাবলেট ভাড়া পনেরো শো ছিলো চাচ্চু চাচি কে না জানিয়ে ঔ টাকা টা আমাকে দিতো কিন্তু কলেজে ওঠার পর সেটাও বন্ধ হয়ে আসে____পড়াশোনার প্রতি ছোট থেকে একটা অন্য রকম ঝোঁক ছিলো খুব যে ভালো পারতাম তা না তবে চেষ্টা করতাম,,মা-র আর বাবা-র কিছু জমানো টাকা ছিলো ব্যাংকে কাউকে না জানিয়ে একদিন ওগুলো তুলে আনলাম ঔ টাকা দিয়ে ভর্তি হলাম ক্লাস নাইনে আর কিছু টাকা রেখে দিলাম বাকি খরচ গুলো চালাবো বলে,,বাবা একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে জব করতো ওরা আমাকে কিছু টাকা দিলো,,সব টাকা জমিয়ে রেখে একটু একটু খরচ করে মাধ্যমিক টা শেষ করলাম,,উচ্চ মাধ্যমিকে এসে সবাই টাকা দেওয়া বন্ধ করলো শুরু করলাম টিউশন পড়ানো ঔ থেকে সব পেড়িয়ে এখন ভার্সিটিতে,শ্রাবণো এখন বড় হয়ে স্কুলে যাচ্ছে ____সময় গুলো কতো দূত জীবন থেকে চলে যায় আমাদের তাই না বলুন

উজানঃ হুম

উজান একটা দীর্ঘ শ্বাস টেনে হিয়ার চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়া এক ফোঁটা জল মুছে দিলো

উজানঃ সৃষ্টিকর্তার কি অদ্ভুত নিয়ম তাই না হিয়া,,তোমার কপালে একটাও মা নেই আর আমার কপালে উনি লিখে দিছেন দুই দুটো মা,,একটা যদিও সৎ

উজান একটা তাচ্ছিল্যের হাসি টানে,হিয়া উজানের বুক থেকে হালকা মুখ তুলে উজানের দিকে তাকিয়ে থাকে,,

হিয়াঃ বুঝলাম না আপনার কথা??

উজানঃ আমি যখন ভার্সিটিতে ফাস্ট ইয়ারে পড়ি তখন বাবা মা’কে রেখে অন্য একটা বিয়ে করে নেয়,,ব্যাপারটা আমার কাছে unexpected ছিলো,,কারণ ছোট থেকে বাবা মা’র একটা সুন্দর সম্পর্ক দেখে আসছি সেখানে হুট করে বাবার এরকম কাজ কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলাম না,,রাগে ঘেন্নায় সব কিছু অনুভূতি এসে জোড়ো হলো আমার মাঝে,,বাবা কি করে মা’র মতো একটা মানুষকে ঠকিয়ে এতো বড় একটা কাজ করতে পারলো,,এই ডিসিশন টা নেবার আগে কি সে একবারো আমার,,নীলি বা বিহানের কথা ভাবলো না,,আমাদের কথা বাদ দিলাম তার ছোট মেয়ে জিনিয়ার কথাও তো সে একবার ভাবতে পারতো,,কিন্তু উনি কোনো দিক বিদিক বিবেচনা না করে কি করে____মা’কে বললাম মা তুমি আর ঔ লোকের সাথে কোনো যোগাযোগ রাখবা না,কিন্তু মা যেন আমাদের সবার কথা শুনতে নারাজ,,মা’র একটা কথা তোর বাবা কি করেছে না করেছে আমি শুনতে চাই না উনি আমাকে এখনো ভালো বাসে এটাই আমার জন্য যথেষ্ট,,তুমি বলো হিয়া এটা কোনো কথা___হ্যা বাবা নতুন বিয়ে করার পর আমাদের দায়িত্বে কোনো অবহেলা করেন নি কিন্তু তাই বলে তার গোনাহ টাকে তো এতো সহজে আমি মাফ করে দিতে পারি না___মা হয়তো পেরেছে স্বামী হয়,এতোদিনের সংসার,ছোট জিনিয়া সব মিলে উনি হয়তো বাবাকে মাফ করে দিয়েছে কিন্তু আমি আজো ঔ লোককে ক্ষমা করতে পারি নি হিয়া,,হয়তো কখনো পারবোও না,,গত ৬বছর ধরে আমি আমার বাবার সাথে কথা বলি না হিয়া জানো,,যদি বাড়িতে গিয়ে কখনো ও
উনি আসে আর আমি ওনার মুখোমুখি হয়ে যাই তবুও আমি তাকে চোখ তুলেও দেখি না,,তিনি এখন দেখতে কি রকম হয়েছে আমি হয়তো সেটাও বলতে পারবো না___বিহানো বাবা-র সাথে কথা বলা ছেড়ে দিয়েছে,,দরকার ছাড়া সেও যে বাবার সাথে কথা বলে না আমি ঠিক জানি,,জিনিয়া আর নীলি

হিয়াঃ নীলি কে??

উজানঃ আমার বড় বোন নীলিমা,,পিটাপিটি আমরা,,নীলি আর জিনিই বাবা-র সাথে কথা বলে এই যা

হিয়াঃ আপনি কখনো জানতে চাননি আপনার বাবা কেনো অন্য একটা বিয়ে করে,,উনি যদি আপনার মা’কে ভালোই বাসে তাহলে কেনো

উজানঃ জানি না হিয়া আমি কিচ্ছু জানি না,,আমার না ওসব জিজ্ঞেস করতেও রুচিতে বাঁধে,,তুমি জানো হিয়া বাবা যেই মহিলাটাকে বিয়ে করেছে সেই মহিলটা একটা কতো চিপ মাইন্ডের মহিলা,,একদিন তো উনি এসে মা’কে যা অপমান করেছিলো মনে হচ্ছিল ওনার চুল ধরে টানতে টানতে আমি ওনাকে রাস্তায় নিয়ে এসে দাঁড় করিয়ে দিয়ে ইচ্ছে মতো থাপ্পড় লাগাই,,বেয়াদব অশিক্ষিত জাতের মহিলা সাহস হয় কি করে বাড়ি বয়ে এসে আমার মা’কে অপমান করার,,সেদিন মা আর বিহান যদি আমাকে না আটকাতো আমি ওখানেই ঔ মহিলাকে খুন করে জেলের ভাত খেতাম এতোটাই ঘেন্না আর রাগ লাগছিলো আমার_____আমার মা’র সাজানো গোছানো সংসার টা বাবা-র একটা ভুলের জন্য নিমিষে বিক্ষিপ্ত হয়ে গেলো,,ইনফেক্ট তুমি জানো হিয়া আমি,আমি মার সাথেও প্রায় অনেকদিন কথা বলি নি কেনো উনি এতোকিছুর পরো বাবা কে ডিভোর্স না দিয়ে বাবার সাথে যোগাযোগ রাখছে,,বললে বলে বাবাকে নাকি উনি ভালোবাসেন,,দীর্ঘ পাঁচ বছর সম্পর্ক করে ওনারা এক হয়েছেন তাই নাকি উনি বাবাকে ছাড়তে পারবেন না কিন্তু বাবা কি রাখতে পারলো তাদের ভালোবাসার সম্পর্কের মর্যাদা,,সেই থেকে বাড়িতে যাওয়া কমিয়ে দিলাম আমি এই ছয় টা বছরে আমি ছয় বারো বাড়িতে গিয়ে থেকেছি কি না আমার সন্দেহ,,মা আসে এসে জিনি নীলি সহ আমাকে দেখে যায় কিন্তু ঔ বাড়িতে যাবার বিন্দুমাত্র রুচি এখন আমার হয়ে ওঠে না

হিয়াঃ এখানে আপনার বোন বা মায়ের কি দোষ বলুন,,ভূল টা তো তাদের না আপনি কেনো আপনার বাবার ভূলের জন্য নিজের মায়ের থেকে নিজের বোনের থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখবেন

উজানঃ রাখতে তো চাই না হিয়া,,খুব কষ্ট হয়,,আগে আমার জ্বর হলে মা পুরো বাড়ি মাথায় তুলতো আর এখন জ্বর আসলেও মা’কে জানাতে ইচ্ছে করে না,,খুব ভয়ে ভয়ে থাকে উনি আমাকে নিয়ে

হিয়াঃ থাকবেই তো এরকম রাজপু্ত্তুরের মতো একটা ছেলে থাকলে সব মায়েরই একটু ভয় হবে

উজানঃ কেনো

হিয়াঃ যদি কোনো রানী এসে তার এই রাজপুত্তুর টাকে গপ করে নিয়ে চলে যায়

হিয়ার কথায় উজান হেঁসে দেয়,,হিয়া উজানকে হাঁসানোর জন্যেই কথাটা বলছিলো

উজানঃ মা অবশ্য চাইছে কেউ একটা এসে তার রাজপুত্তুর টাকে নিয়ে চলে যাক,,মা’র দোয়া টা এতো দূত পূরণ হবে সেটা অবশ্য ভাবি নি আমি(হিয়ার মাথার সাথে মাথা ঠুকে)

হিয়াঃ মানে

উজানঃ কিছু না

উজান হিয়া দুজনে নিশ্চুপ হয়ে যায় আবার,,উজান হিয়ার মাথা টা নিজের বুকে আরো আগলে ধরে,,এদিকে কখন যে হিয়া উজানের কাঁধ ছেড়ে বুকে চলে আসছে এটা তার বুঝে আসে নি,,উজান ভাবতে থাকে হিয়ার কথা আর হিয়া উজানের,,ভার্সিটির হাসিখুশি থাকা ছেলেটার জীবনেও তাহলে দুঃখ আছে!!

উজান মুখ তুলে হিয়াকে কিছু বলতে যাবে ওমনি ঔ মাচার যে মালিক সে উপরে উঠে আসে,,ওনাকে দেখে উজান হিয়া কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে যায়,,হিয়া ছিঁটকে উজান থেকে দূরে সরে বসে,,উজান শ্রাবণকে কোলে তুলে নিতেই শ্রাবণ হালকা চোখ কচলে উঠে,,চাচা প্রথমে একটু ভূ কুঁচকে দেখে কারণ গ্রামে ছেলে মেয়ের এরকম খোলামেলা মেলামেশা ভালো চোখে দেখা হয় না,,কিন্তু উজান ঠিক বুদ্ধি করে ম্যানেজ করে নেয়

উজানঃ এই মাচা টা চাচার নাকি,,মাফ করো চাচা তোমাকে না বলে উঠেছি____আসলো গিন্নি আমার কখনো গ্রাম দেখে নি তো তাই ভাবলাম বাচ্চা টা সহ ওকে একবার গ্রাম টা ঘুরে নিয়ে আসি

উজানের কথায় হিয়ার মাথায় হাত,,কি সব বলছে এই লোকটা ধুর

চাচাঃ শহর থাইকা আইছো বুঝি??

উজানঃ হ চাচা,,ওসমান সাহেবের বড় মেয়ের বিয়ে জানো নিশ্চয়,আরে তোমাদের এলাকায় চেয়ারম্যান এর ভাগ্নি

চাচাঃ হ হ চিনুম না কেন,,বড় বাড়িত আইছো তাইলে,,আমাগো পুরো গ্রাম বাসিকেও তো ওমরা দাওয়াত দিছে

উজানঃ হ চাচা,,বিয়ে তো কাল তাই ভাবলাম বউকে একটু তোমাদের গ্রাম ঘুরে দেখাই,,বুঝোই তো শহরের মানুষ গ্রাম দেখে নি কখনো

চাচাঃ আচ্ছা,,তা এই পোলা টা কার তোমাগো নাকি

উজানঃ হ চাচা,,অল্প বয়সে বিয়া কইরা লইছিলাম তাই বাচ্চা টাও এতো বড় হয়া গেছে

চাচাঃ ভালো ভালো,অল্পতে বিয়া করবা না তা আমার মতো বুইড়া হয়ে গেলে করবা____আচ্ছা তা তোমরা বইসো কতোকক্ষ বইবা বসো

বলেই চাচা নিচে নেমে গেলো,আর এদিকে চাচা কে হাসি মুখে বিদায় দিয়ে হিয়ার দিকে মুখ ফিরতে উজানের অন্তরাত্মা পুরো কাঁপতে শুরু করছে,,হিয়া তো বুঝি চোখের সব দিয়ে উজানকে খুন করে দিচ্ছি,,হিয়া কি না তার গিন্নি শ্রাবণ কি না তাদের বাচ্চা,,তবে রে!!

_____________________

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here