মেঘের_আড়ালে_রোদের_লুকোচুরি ❤️ 🌈💙🎨😏❤️🥳🐦💐🍫🏩💒 Part-22

0
744

😏 #মেঘের_আড়ালে_রোদের_লুকোচুরি ❤️
🌈💙🎨😏❤️🥳🐦💐🍫🏩💒

Part-22

হিয়াঃ আমি এখন এই মাচা টা থেকে আপনাকে ধাম করে একটা ধাক্কা দিলে কেমন হবে ব্যাপার টা

উজানঃ আরে সরি না,,বুঝো না গ্রামের এদিকে দু’জন ছেলে মেয়েকে এভাবে দেখলে লোকে ব্যাপারটা ঠিক সহজ ভাবে নিতে পারে না তাই জন্য

হিয়াঃ আচ্ছা,,ঠিক আছে,,নামুন এখন সন্ধ্যা নামছে

উজানঃ আর একটু থাকি

হিয়াঃ থাকতে তো সমস্যা নেই কিন্তু পরে আপনি ফেরার জন্য কোনো অটো রিক্সা কিছু পাবেন?

উজানঃ তাও কথা,,আচ্ছা চলো হাঁটি দেখি ফেরার জন্য কি পাওয়া যায়

উজান হিয়াকে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বাড়ির দিকে রওনা দেয়,,এ-র মধ্যে শ্রাবণের ঘুম টাও ভেঙে আসে,,তিনজনে আবার দুষ্ট মিষ্টি খুনসুটি করতে করতে বাড়িতে এসে পৌঁছে
___________________

রাত তখন দুটোর কাছাকাছি,কাল বাড়ি ফাঁকা থাকলেও আজ বাড়ি ভর্তি মানুষ থাকার জন্য সবার ঘুমের জায়গায় অভাব দেখা দিয়েছে,,তাই সবাই যে যেভাবে পেরেছে ঘুমে গেছে,,কেউ ফ্লোরে পাটি বিছিয়ে কেউ সোফায় কেউ বা এক বিছানায় গাদাগাদি করে পাঁচ ছয় জন মিলে,,

হিয়া ঝিনুক সন্ধি আর ওখানকার এক আন্টি আর তার এক বছরের একটা মেয়ে সহ ঝিনুকের বড় খাটে জায়গা হলেও এদিকে ডাইনিং বিছানো পাটিতে জায়গা মিলে শ্রাবণ,ফয়সাল সহ বাকি ছেলে গুলোর,,আর উজানের হাইট লম্বা হওয়াতে পাটি টা থেকে তার পা বেড়িয়ে আসছিলো তাই সে পাশে থাকা সোফা টায় গিয়ে নিজের গা মেলে দেয়,,পাটি টায় তাও যা শোয়া যেতো কিন্তু তুষার যে হারে নাক ডাকছে মনে তো হচ্ছে তুলে থেকবায় রাখি

মাঝ রাতে হিয়ার ঘুম ভেঙে আসতেই হিয়া উঠে পড়ে,,শ্রাবণ ঠিক মতো ঘুমোচ্ছে না ওর কোনো অসুবিধে হচ্ছে সেটা দেখতেই হিয়া ডাইনিং এ আসে আর দেখে শ্রাবণ আর ফয়সাল কেমন চিৎপটাং টাইপ এ্যাঙ্গেল নিয়ে ঘুমিয়ে আছে,,হিয়া শ্রাবণকে দেখে আবার শুতে যাবে ওমনি ওর চোখ আঁটকে যায় উজানের উপর,,বালিশ ছাড়া সোফাতে ঘুমোতে উজানের বেশ কষ্ট হচ্ছিলো,,সোফার শক্ত মাথা টা বারবার উজানকে ঠুকে দিচ্ছিলো,,

হিয়াঃ কি অবস্থা সবার ঘুমের,,তুষার ভাইয়া তো নাক ডাকছে আর এনাকে দেখো নিজের বালিশ টা শ্রাবণকে দিয়ে কেমন করে ঘুমোচ্ছে

হিয়া দৌড়ে ওর রুম থেকে আলতো করে ঝিনুক আর ওর মাথার কুশন টা টেনে নিয়ে ঝিনুককে সন্ধির বালিশে হেলান দিয়ে দেয়,,তারপর বালিশ টা এনে পা টিপে উজানের কাছে গিয়ে খুব সতর্কভাবে সেটা উজানের মাথার নিচে আলতো করে দিয়ে দেয়

হিয়াঃ নিন এবার একটু শান্তি করে ঘুমোন❤️

ব’লেই হিয়া উঠতে যাবে ওমনি হিয়ার মাথার খোপা টা খুলে গিয়ে সব চুল উজানের মুখে এসে পড়ে,,এখন কি হবে!!!!!হিয়া আলতো হাতে একটু একটু করে ওর চুল গুলো উজানের মুখ থেকে সারিয়ে উঠতে যাবে ওমনি উজান ঘপ করে হিয়ার একটা হাত ধরে নিয়ে এক টানে হিয়াকে নিজের বুকের উপর এনে ফেলে

উজানঃ তুমি জানো না তোমাকে কাছে পেয়ে স্পর্শ না,তোমাকে অনুভব করাটাই এখন আমার জন্য যথেষ্ট❤️

হিয়াঃ আমি আ আসলে কুশন টা কুশন টা দিতে

উজান এবার চোখ খুলে হিয়ার দিকে একটা দুষ্ট হাসি দিয়ে উঠে

উজানঃ নিজে থেকে আমার এতো কাছে আসো,আমাকে উস্কে দেও আর উল্টে কি বলো আমি অসভ্য

হিয়াঃ হ্যা মানে__আমি রু রুমে যাবো

উজানঃ আর আমার কি হবে,,জাগিয়ে তুললা তুমি এখন যদি আর ঘুম না আসে আমার

হিয়াঃ ঘুম ঘুম কেনো আসবে নাা

উজানঃ আসবে নাই তো

হিয়াঃ তাই,,তা ঘুম না আসলে চোখ খুলে বসে বাড়িটা পাহাড়া দিন,আমার ঘুম পাচ্ছে আমি রুমে যাবো

উজানঃ আচ্ছা ঠিক আছে যাও

হিয়াঃ হাত টা ছাড়ুন তবেই তো যাবো

উজান একটা হাসি দিয়ে হিয়ার হাত টা ছেড়ে দিতে ধরেও দেয় না

হিয়াঃ আবার কি

উজানঃ ছাড়তে ইচ্ছে হচ্ছে না

হিয়াঃ একটু আগে তো বললেন আমাকে অনুভব করাটাই নাকি আপনার জন্য যথেষ্ট,,তাহলে এখন বসে বসে যেভাবে পারেন অনুভব করুন

উজানঃ হ্যা,,আচ্ছা বেশ তাহলে তোমার ওরনা টা খুলে আমাকে দিয়ে যাও আমি সেটাকে জড়িয়ে তোমাকে অনুভব করি❤️

হিয়াঃ পাগল আপনি,,একটা মেয়ের কাছে কি রকম অসভ্যের মতো ওরনা চাইছেন

উজানঃ আমার ঘুম টা ভেঙে দিছো এখন এটা আপনার শাস্তি ম্যাডাম,,আপনি দিবেন না আমি নিজে খুলে নেবো

উজান হাত বাড়াতে গেলে হিয়া পিছিয়ে যায় খানিকটা

হিয়াঃ একদম না,,সত্যি আপনি সত্যি একটা অসভ্য,,ছাড়ুন এখন আমার হাত,,দেখুন ওদিকে মনে হয় কারো পায়ের আওয়াজ পেলাম উঠে এসে এভাবে দেখলে কিন্তু,,,,ছাড়ুননন না

উজান হতাশ হয়ে একটা দীর্ঘ শ্বাস টেনে হিয়ার হাত ছেড়ে দিলে হিয়া ফিঁক করে হেঁসে দিয়ে উজানের চুল গুলো এলোমেলো করে দিয়ে দৌড়ে রুমে পালিয়ে গিয়ে কিছুক্ষণ পর আবার রিটার্ন আসে,,উজান তখন কপালে চোখে হাত দিয়ে ঘুম দেবার চেষ্টা করছিলো,,হিয়া এসে হিয়ার গায়ের নীল ওরনা টা উজানের মুখে মেলে দিয়ে আবার দৌড়ে রুমে পালিয়ে যায়

উজানঃ পাগলি একটা,,আর এই ওরনা আমি তোমাকে দেবো ভাবছো,,এটাকে জড়িয়ে এখন আমি প্রতিরাতে ঘুমোবো❤️❤️❤️❤️❤️
____________________

পরের দিন বিয়ে বাড়িতে সকাল থেকেই রমরমা অবস্থা,,দুপুরে ২টার নাগাদ বিয়ে,,সবাই যে যেভাবে পারছে নিজেকে সুন্দর করে সাজিয়ে তুলছে,,কিন্তু হিয়ার এদিকে মন টা হালকা খারাপ,,কারণ কাল হলুদে যাও ঝিনুকের বোনের দেওয়া শাড়ি টা পড়েছিলো সে কিন্তু আজ সে কি পড়বে,,হিয়ার কাছে যেই একটা ভালো জামা ছিলো সেটারো ওরনা টা একপাশে ছিড়ে গিয়ে সেলাই দেওয়া,,তবু হিয়া চেষ্টা করছে নিজেকে ওভাবেই সবার সাথে মানিয়ে নিতে

বিছানার উপর বসে হিয়া, ঝিনুক সন্ধি সহ আরেকটা মেয়ের সাজগোজ দেখছিলো,এমন সময় উজান এসে এক হাত বাকিয়ে হিয়ার গলা ধরে

উজানঃ হে হিয়া পাখি আমরা কিন্তু আজকেও এখানে থাকবো

হিয়াঃ ছাড়ুন লাগছে আমার

উজানঃ বলো আগে আমরা আজকেও এখানে থাকবো

হিয়াঃ থাকবোওও,,ছাড়ুন না

উজান হিয়াকে ছেড়ে দিয়ে হিয়ার পাশে বসে হিয়ার কাঁধে মাথা রাখে হিয়াকে আগলে ধরে

হিয়াঃ ওফ হো আবার কি চাই,,সবাই দেখছে ছাড়ুন

উজানঃ সন্ধি মুখে আটা ডলতে ব্যস্ত তোমার মনে হয় ওর আমাদের দিকে তাকানোর সময় আছে

সন্ধিঃ আয়না দিয়ে সব দেখা যাচ্ছে ব্রো

সন্ধির কথায় উজান বিছানা থেকে একটা কুশন তুলে সন্ধির গায়ে ফিক মারে

উজানঃ নিজের কাজে মন দে,,না হলে লিপস্টিক ঠোঁট ছেড়ে মহাশুন্যে ভেসে যাবে

হিয়াঃ আ হা কি হচ্ছে টা কি,এবার তো ছাড়ুন

উজানঃ না,চলো বাহিরে যাই

হিয়াঃ কেনো??

উজানঃ বাহিরে ঝুরঝুর বৃষ্টি হচ্ছে দেখে আসি চলো

উজানের কথায় ঝিনুক আঁতকে উঠে,,বৃষ্টি হওয়া মানে তো মজা টাই চৌচির হয়ে যাবে এখন ধুর

ঝিনুকঃ বৃষ্টি হচ্ছে মানে কিসের বৃষ্টি!!

উজানঃ আপনারা যদি রুম লক করে মেক-আপ নিয়ে নিজেদের উল্টায় ফেলেন তাহলে বুঝবেন কি করে বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে না তুফান

ঝিনুকঃ সত্যি বৃষ্টি হচ্ছে!! হায় রে এটা কোনো কথা

উজানঃ সমস্যা নেই রোদো আছে হালকা সাথে, সেই বৃষ্টিও হবে না ঔ ছিপছিপে বৃষ্টি যা হয় আর কি

সন্ধিঃ আমিও কাল নিউজে দেখলাম পরশু থেকে নাকি ভারী বৃষ্টি শুরু হবে ওজন্যেই হয়তো___আর তুই কি হ্যা,,এই আমাদের মেয়েদের মাঝে কি করছিস ভাগ এখান থেকে

উজানঃ তোদের কাছে এসেছি যেনো___হিয়াপাখি ও হিয়াপাখি চলো না একটু বাহিরে যাই

হিয়াঃ আপনি যান আমার ভালো লাগছে না

উজানঃ সেকি তোমার শরীর খারাপ নাকি,দেখি

হিয়াঃ কি করছেন ঔ আপু টা দেখছে,,ছাড়ুন

উজানঃ কি হ’য়েছে মন টা হঠাৎ এতো মনমরা করে রাখছো

হিয়াঃ কোথায় কিছু হয় নি

উজানঃ কিছু তো একটা হয়েছে,,কি লুকচ্ছ বলো আমাকে

হিয়াঃ না কি লুকবো,,আপনি তৈরি হবেন না

উজানঃ আমি এভাবেই থাকবো,,কি আছে আর রেডি হওয়ার খাবো বিয়ে দেখবো আর

হিয়াঃ আর??

উজানঃ তোমাকে জ্বালাবো

হিয়া একটা শ্বাস টেনে উঠে রুম থেকে বেড়িয়ে হাঁটতে শুরু করে,উজান হিয়ার পিছে পিছে এসে হিয়ার চুল টান দেয়

হিয়াঃ লাগে না

উজানঃ সরি সরি___কি মন খারাপ,,বলো আমাকে

হিয়াঃ আমার মন খারাপ হলেও বা আপনার কি

উজানঃ ও হিয়া পাখি কেনো এরকম করছো তুমি,তোমার মন খারাপ হলে যে আমার এই হিয়া টা বড্ড পুড়ে যায়(বুকে হাত দিয়ে), See, কি রকম খরা হয়ে শুকনো হয়ে গেছে বুক টা আমার

হিয়াঃ (একটা হাসি দিয়ে) তাই বুঝি__একটু আগে বললেন না বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে,যান গিয়ে বৃষ্টিতে ভিজে আসুন খরা টা কেটে যাবে,,

উজানঃ ওসব বৃষ্টিতে আমার খরা কাটবে না হিয়া পাখি,,আমার তো অন্য বৃষ্টি চাই

হিয়াঃ অন্য বৃষ্টি টা আবার কি জিনিস

উজানঃ রাতে বলবো

হিয়াঃ না আমি এখুনি শুনবো

উজানঃ এখুনি শুনতে হবে

হিয়াঃ হুম এক্ষুনি

উজানঃ বেশ তার আগে তুমি আমাকে বলো তোমার মন কেনো খারাপ

হিয়াঃ থাক বলতে হবে না

উজানঃ আরে হিয়া রাগ করছো কেনো,,আরে কোথায় যাচ্ছ,,এই মেয়ে বলছি তো,,হিয়া,,শুনে যাও,,আরে
________________
দুপুর তখন তিনটের কাছাকাছি বিয়ে সেরে এখন খাবার পালা,,যদিও সেই সকাল থেকে গ্রাম বাসীর খাবার আয়োজন করা হয়েছে কিন্তু বাড়ির সব লোকেরা এখন বসেছে খেতে,,

উজানঃ আরে চাচা যে,,এই অবেলায় এলে খেতে,,কিছু লাগলে বলো নিজেরই লোক তো আমরা

চাচাঃ হ বাজান___তা তোমার গিন্নি কটে__আর তোমার পোলা টা?(বুম বুম বুম)

চাচার প্রশ্নে সবাই ড্যাপড্যাপ করে তাকিয়ে উঠে উজানের দিকে,, ওখানে তখন উপস্থিত ছিলো তুষার সন্ধি ঝিনুক থেকে শুরু করে ঝিনুকের মা খালা আরো অনেকে,,এখন উজান কি উওর দিবে,,এমন সময় শ্রাবণ দৌড়ে উজানের কাছে এসে কোলে উঠবে বলে বায়না ধরে আর শ্রাবণের পিছে পিছে আসে হিয়া,,উজান শ্রাবণকে কোলে নিয়ে আমতা আমতা করতে শুরু করে

উজানঃ হ্যা মানে চাচা

শ্রাবণঃ ভাইয়া বুবু না আমাকে মারবে বলে আসছে

হিয়াঃ এই বদমাশ আয় এদিকে,,ভালো ভাইয়ার কোলে লুকানো হচ্ছে,,আজ যদি মেরে আমি তোকে ভর্তা না বানিয়েছি,,,,,শ্রাবণ

চাচাঃ ঔ তো আম্মাজান,,তা বাপ জান পোলা ক্যানে বা তোমারে ভাইয়া বলে ডাকবার লাগছে

উজানঃ ইয়ে মানে চাচা আসলে,,ঔ মজা মজা করে ডাকে এটা নাকি ওদের একটা খেলা ঔ ঔ জন্য

চাচাঃ খেলা!! এগলান আবার কেমন খেলা

পাশ থেকে চাচার বউ হিয়াকে লক্ষ্য করে এবার বলে উঠে

চাচিঃ তা বউ কেন বা তোমার এমন শুকনা মুখে আছে,,হাতে চুড়ি নাই নাকত ফুল নাই

হিয়াঃ দেখলেন তো মিথ্যে বলার ফল,,এখন বলেন কেনো আমার হাতে চুড়ি নাকে ফুল নেই,,ছিঃ ঝিনুকের মা খালা সবাই দেখছে,শুনছে কি ভাবছে ওরা বলুন তো,,সব আপনার জন্য

উজানঃ এই তুমি একটু চুপ করো তো,ওলয়েজ বকবক______ঔ কি বলো তো চাচি আমার গিন্নির আবার চুলকানি রোগ আছে ঔ সোনা রুপা পড়লেই গা চুলকায় ঔ জন্য আমিই পড়তে দেই না

হিয়াঃ কি খারাপ আমাকে চুলকানির রুগী বানিয়ে দিলো

চাচিঃ হ কতো রোগ এহন আইছে যে দুনিয়াটাত,,তা সোনা না পড়ুক একখান তো সুন্দর শাড়ি কিইন্যা দেবার পাইতা,বিয়ে খাবার আইছো বউ মানুষরে এমন সাজ ভাল লাগে

উজানঃ হ চাচি এটা ঠিক কইছো,,ঔ শহরের মাইয়া বুঝোই তো শাড়ি টারি পড়বার পারে না খুব একটা,,দিমু নে এবার কিনে__কি বউ পড়বা তো শাড়ি

হিয়াঃ আপনাকে তো আমি!!

চাচা আর চাচি আর কিছু না বলে বিদায় নিয়ে চলে যায়,,এদিকে ঝিনুকের মা আর খালা একটু সন্দেহের চোখে তাকিয়ে সামনে হাঁটতে ধরে,,সবাই চলে যেতেই ঝিনুক দুম করে বাচ্চা দের মতো কেঁদে উঠে

ঝিনুকঃ এ্যা হ্যা এ্যা তুই কতো খারাপ হিয়া আমাকে রেখে রেখে একা একা ভাইয়াকে বিয়ে করে নিলি,,এ্যা হ্যা,,,আমি আর কখনো তোর সাথে কথা বলবো না কখনো না

হিয়াঃ কি সব বলছিস পাগলের মতো,,আমি কেনো ভাইয়াকে বিয়ে করবো আজব

সন্ধিঃ এখন তোমরা দুইজন তো বলবেই বিয়ে করো নি,,আর চাচা চাচা বুঝি এমনি বললো,,আর তোরা দু’জনেও তো হ্যা তে হ্যা মিলালি তার বেলা

হিয়াঃ আরে আপু ঔ টা তো জাস্ট একটা

তুষারঃ না হিয়া আর না,,এই কুত্তা শোন,, তুই হিয়া লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করেছিস আমরা কিচ্ছু বলি নি কিন্তু তুই কি করে আমাকে আর সন্ধিকে রেখে আগে আগে বিয়ে করে নিলি হাউ

উজানঃ শখ হয়েছে তাই কাল বিয়ে করে নিছি সমস্যা

ঝিনুক আবার গলা ছেড়ে দিয়ে কেঁদে উঠে

ঝিনুকঃ এই তো এই তো ভাইয়া সব স্বীকার করে নিলো,,এখনো এখনো তুই মিথ্যে বলে যাবি,,এ্যা হ্যা___কি করে পারলি আমাকে রেখে রেখে, যেখানে আমি তোদের লাভ গুরু ছিলাম আর আমাকে রেখেই কেমন করে তোরা

হিয়াঃ কি হচ্ছে টা কি ভাইয়া আপনি এসব কি বলছেন,সোজাসুজি বলে দিলেই তো পারেন এটা শুধু একটা মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং

উজানঃ বলছি

হিয়াঃ হুম বলুন,,

উজানঃ _____তো গাইচ মোরাল ওফ দা স্টোরি ইজ হিয়া এখন আমার চাচার সূএে চাচাতো বউ!!!!__তাই আজ থেকে তোরা সব কটা হিয়াকে তোদের ভাবি আর এই যে শালি সাহেবা আজ থেকে আপনি আমাকে আপনার দুলাভাই বলে ডাকবেন মনে থাকবে

ঝিনুকঃ আচ্ছা ভাইয়া আ হা আচ্ছা দুলাভাই ঢাকা গিয়ে আমাদের বড় করে ট্রিট দিবেন তাহলে আমরা প্রতিবাক্যে আপনাকে জিজু আর হিয়াকে ভাবি বলে ডাকবো ঠিক আছে দুলাভাইইইইই

উজানঃ এই না হলো আমার শালির মতো কথা

তুষারঃ না ওসব বাহিরের ট্রিট চলবে না আমরা তো হিয়া ভাআআআবির হাতের রান্না খাবো,,ভাবি খাওয়াবেন তো আপনি

হিয়াঃ হ্যা ভাইয়া খাওয়াবো সাথে আপনার এই জিরাফের মতো ফ্রেন্ডটাকেও মিক্সিংএ মিক্সড করে কাবাব বানিয়ে খাওয়াবো,,খুশি,,

তুষারঃ আরে ভাবি যাচ্ছেন কোথায় আরে হিয়া ভাবি

ঝিনুকঃ এই হিয়া থাম না

উজানঃ বউ ও চাচাতো বউ কোথায় যাচ্ছ,,হিয়া বউ

শ্রাবণঃ আমার বুবু তোমার বউ,,বুবুবউ হে হে

____________________

রাত তখন দশটার কাটা ছুঁই ছুঁই গ্রামের এদিকে দশটা মানেই যেনো রাত একটা,,আর যেহেতু বিদায়ের কোনো ঝামেলা ছিলো না আজ তাই কান্নাকাটির পর্ব টা কালকে বউভাতের জন্য একবারে তুলে রাখা হলো

আবহাওয়া ছিলো সকাল থেকেই ঝড়ো প্রকৃতির,এই আকাশ কালো করছে এই কখনো চিলিক দিয়ে রোদের দেখা মিলছে,,বিয়ের পর পাক্কা এক ঘন্টা অবিরাম বৃষ্টির দেখা মিললেও বিকেলের পর থেকে ঝিরিঝিরি বৃষ্টির দেখা পাওয়া যায়,,রাতের দিকে ঝড় আবহাওয়ার সাথে বাতাস বইতে থাকে তুমুল বেগে,,কাল বউভাত কি করে এই ঝড়ের মধ্যে সব আয়োজন করবে তারই চিন্তা নিয়ে ব্যস্ত বাড়ির বড়রা

হিয়াঃ কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আপনি আমাকে,,আরে লাগছে আমার হাতে

উজানঃ আসো না এরকম করো কেনো হিয়া পাখি

হিয়াঃ আশ্চর্য তো উপরে কোথায় যাচ্ছি আমরা,,বৃষ্টি হচ্ছে তো খুব

উজানঃ আরে তখন অন্য রকম বৃষ্টি দেখতে চেয়েছিলে না আসো দেখাই

হিয়াঃ না আমার দেখার এখন কোনো মুড নেই,,আমি শুবো এখন খুব ঘুম পাচ্ছে আমার

উজানঃ এই দশটার সময় তুমি কখনো ঘুমোও হিয়া,,শুধু শুধু এতো ঢং যে কেনো করো

হিয়াঃ আমার হাতে লাগছে তো,,ছাড়ুন নাআআ

উজান হিয়াকে টানতে টানতে ছাঁদের উপর চিলে কোঠার ঘরটায় নিয়ে যায়,,ঘরটার দেওয়াল গুলো ইটের তৈরি হলেও উপরে টিনের চাল দেওয়া,,আর টিনের মধ্যে বৃষ্টির টপটপ করে পড়া শব্দ যেনো এক অন্য রকম পরিবেশ তৈরি করে মুহুর্তে,,উজান চিলে কোঠার জানালা টা খুলে দিয়ে পর্দা সরিয়ে হিয়াকে দাঁড় করিয়ে দেয়,,হিয়া বাহিরে তাকিয়ে গ্রীল ধরে দাঁড়িয়ে যায়,উজান হিয়াকে চোখ বন্ধ করতে বলে,হিয়া চোখ বন্ধ করে,টিনের চালে পড়া বৃষ্টির ঝাপঝাপ শব্দ শুনে নিজেকে সেই শব্দের মধ্যে হারিয়ে যেতে শুরু করে,,উজান পেছন থেকে জানালার দুই গ্রীলে দুটো হাত দিয়ে হিয়াকে একটা বেষ্টনের মধ্যে আঁটকে দেয়,,হিয়ার আরো কাছে এসে হিয়ার কান বরাবর ছোঁয়া ছোঁয়া না ছুঁইয়ে দেওয়ার মতো করে হিয়ার কাঁধে মুখটা রাখে❤️

উজানঃ জানো হিয়া,,টিনের চালের এই বৃষ্টি পড়ার শব্দ টা আমার কেনো জানি খুব ভালো লাগে,,মনে হয় বৃষ্টি গুলো যেনো আমার গায়ে ঝপঝপ করে পড়ছে,,ব্যাপারটা দারুণ না

হিয়াঃ (নিজ মনে)টিনের চালে পড়া বৃষ্টির এই রুনুঝুনু শব্দ তো আমারো খুব প্রিয়,,ইনি কি করে জানলো

উজানঃ ফিল করতে পারছো কিছু,,মনে হচ্ছে না গা টা পুরো ভিজে যাচ্ছে

হিয়াঃ মানুষ টা ঠিক আমার মনের মতো,,আমার ইচ্ছের সাথে ওনার এতো মিল কেনো

উজানঃ কি হলো চাচাতো বউ চুপ হয়ে আছে কেনো,,ভালো লাগে নি এই অন্য রকম বৃষ্টি টা

হিয়াঃ হুম হুম খুব সুন্দর

হিয়া চোখ খুলে জানালার সাথে লেপ্টে দাঁড়ায়,,একটা হাত গ্রীল ভেদ করে সামনে বাড়িয়ে বৃষ্টিকে হাতের মুঠোতে জব্দ করে,,বাতাসের বেগ টা আচমকাই জানালার দিকে আসায় পুরো বৃষ্টির ছাট এসে হিয়ার হাত তো ভিজিয়ে দেয় দেয় সাথে ভিজিয়ে দেয় হিয়ার পুরো মুখ,,উজানো গ্রীলের ফাঁক দিয়ে একটা হাত বাড়িয়ে দিয়ে হিয়ার হাতের উপর নিজের হাত রাখে❤️

উজানঃ এটা কি হলো,,বৃষ্টি এখন আমার হাতে এসে পড়ছে না কেনো,,হোয়াই

হিয়াঃ আপনাকে বৃষ্টির পছন্দ হয়নি তাই

উজানঃ তাই না,, পাকনি একটা

উজান হিয়ার ভিজে যাওয়া হাতটা একটু উঁচু করে ধরলে হিয়ার হাত থেকে পানি গড়িয়ে হিয়ার বাহুর কাছে এসে পড়ে,,উজান সেই হাতের উপর হাত রেখে পানি গুলো শুষে নিতেই হিয়া ওর হাত টা ভেতরে নিয়ে আসে,,এমনি সময় উজান হিয়াকে নিজের দিকে ঘুরাতে যাবে ওমনি একটা কঠিন বাজ পড়ার শব্দে হিয়া কেঁপে উঠে কিন্তু উজানকে জড়িয়ে না ধরে কুঁচকে যায়,,হিয়ার ভয় পেয়ে কেঁপে উঠা দেখে উজান শক্ত করে হিয়াকে চেপে ধরে,,হিমেল বাতাস দমকা এসে গায়ে লাগে দু’জনের,,হিয়া কেঁপে ওঠে,,উজান মুচকি হেঁসে হিয়াকে আলতো করে তার দিকে ঘুরিয়ে নেয়

হিয়াঃ আম আমি আমি নিচে যাবো

উজানঃ এখনো কিন্তু বললে না মন টা খারাপ কেনো

হিয়াঃ মন কোথায় খারাপ,,আপনি দয়া করে আমাকে ছাড়ুন আমার ভয় করছে

উজানঃ কিসের ভয় আমার না এই ঝড়ের

হিয়াঃ দু’জনেরই!!

উজান কিছু বলতে যাবে ওমনি আবার একটা বাজ পড়ার শব্দে হিয়া কেঁপে একদম চুপসে উজানের দিকে ঝুঁকে যায়,,উজান এক হাতে হিয়ার ভেজা মুখ মুছে দিয়ে হিয়ার মাথার সাথে মাথা ঠুকে দিয়ে একটা কবিতা আবৃত্তি করতে শুরু করে

খুব কাছে এসো না কোনোদিন
যতটা কাছে এলে,কাছে আসা বলে লোকে!!

এ চোখ থেকে ঐ চোখের কাছে থাকা
এক পা বাড়ানো থেকে অন্য পায়ের সাথে চলা

কিংবা ধরো রেল লাইনের পাশাপাশি শুয়ে
অবিরাম বয়ে চলা
যে কাছাকাছির মাঝে বিন্দু খানেক দূরত্বও আছে

মেঘের মেয়ে অতো কাছে এসোনা কোন দিন

দিব্যি দিলাম মেঘের বাড়ীর, আকাশ কিংবা আলোর সারির

তার চেয়ে বরং দূরেই থেকো
যেমন দূরে থাকে

ছোঁয়া থেকে স্পর্শ!!
রোদ্দুরের বু্‌ক থেকে উত্তাপ!!
শীতলতা থেকে উষ্ণতা!!

উজান এবারো পরের লাইন বলতে গিয়ে আমতাআমতা করতে থাকে,,হিয়া একটা মুচকি হেঁসে নিজে আবৃত্তি করতে শুরু করে!!!!

প্রেমের খুব গভীর ম্যাপে যেমন লুকিয়ে থাকে ভালোবাসা
তেমন দূরেত্বেই থেকে যেও-
এক ইঞ্চিতেও কভু বলতে পারবে না কেউ
কতটা কাছা কাছি এসেছিলে বলে দূরত্বের পরিমাপ দিতে পারেনি পৃথিবী!!!!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here