#শহরজুড়ে_প্রেম_নামুক
#পর্বঃ১৪(প্রথমার্ধ)
#Arshi_Ayat
মেসেজে’টা দেখে স্বর্ণ ছুটে মায়ের রুমে গেলো।এই খবরটা এখন মা’কে না দিলো কিছুতেই শান্তি পাবে না।নিহারিকা খানম বিছানা তৈরি করছিলেন ঘুমানোর জন্য।মেয়েকে এমন উত্তেজিত অবস্থা দেখে ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করলেন,’কি হলো রে তোর?’
স্বর্ণ উচ্ছল কন্ঠে বলল,’মা আমি চাকরিটা পেয়ে গেছে।এই দেখে মেসেজ।’
নিহারিকা খানম মেসেজটা দেখে তৃপ্তির হাসি হাসলেন।মেয়ের কপালে চুমু দিয়ে বললেন,’এভাবেই জীবনের সবক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করে যা মা।’
‘তুমি থাকলে আমি সব পারব মা।’
‘আমি তো আছিই।এখন তোর দায়িত্ব আরও বেড়ে গেলো।আমি জানি তুই পারবি।’
স্বর্ণ গভীর মমতার খোঁজে মা’কে জড়িয়ে ধরলো।কিছুক্ষণ পর মা’র কাছ থেকে রুমে এসে আরবকে কল দিলো।কল কেটে যাবার আগে ঘুম ঘুম কন্ঠে ওপাশ থেকে বলল,’হ্যালো।’
‘আরব,ঘুমিয়ে পড়েছো?’
স্বর্ণ’র গলা শুনে ঘুম ছুটে গেলো ছেলেটার।তড়িঘড়ি গলায় বলল,’না,না তুমি বলো।এমনিই একটু চোখ লেগেছিল।’
‘সরি,আসলে একটা খুশির সংবাদ আছে।ভাবলাম তোমাকে দেই।’
‘হ্যাঁ তো এখনও বসে আছো কেন?তাড়াতাড়ি বলো।’আরব উৎসুক হয়ে বলল।
‘আমি চাকরি পেয়ে গেছে।একটু আগেই মেসেজ পেলাম।প্রথমে মা’কে বললাম তারপর তোমাকে।’
আরব সাথে সাথেই ‘আলহামদুলিল্লাহ’ পড়লো।এরপর বলল,’কংগ্রাচুলেশনস।’
‘কিন্তু একটা সমস্যা হয়ে গেলো?’
‘কী?’
‘ক্লাস করতে পারবো না এখন আর!নোটস,এসাইনমেন্ট এগুলা পেতে সমস্যা হবে খুব?’
‘আরে তুমি চিন্তা করো কেন এতো?আমি আছি না?আমি থাকতে এসবের চিন্তা মানায় না।তুমি জাস্ট ফ্রেশ থাকো একদম চিন্তা করবা না।’
‘আচ্ছা আরেকটা কাজ করতে হবে।কালকে ফ্রী আছো?’
‘অলটাইম ফ্রী তোমার জন্য।’
‘এত ফ্রী হওয়া লাগবে না।ক্লাস করে বের হবা আমি ক্যাম্পাসে আসবো এরপর একসাথে বের হবো।ওকে?’
‘ওকে।’
‘তাহলে এবার ঘুমাও।’
স্বর্ণ ফোন রেখে কালকের দিনের কাজের তালিকা মনে মনে ভেবে রাখলো।প্রথমে অফিসে গিয়ে এপোয়েন্টমেন্ট লেটার নিতে হবে তারপর ক্যাম্পাসে গিয়ে আরবকে সাথে নিয়ে একটা বাসা খুঁজতে হবে অফিসের কাছাকাছি।বাসা খুঁজে সময় থাকলে টিউশনিতে যাবে।তবে চাকরির জন্য টিউশনিগুলো ছাড়তে হবে।কিচ্ছু করার নেই।কিছু পাওয়ার জন্য কিছু তো ত্যাগ করতেই হয়।
ক্লাস শেষ করে আরব ক্যান্টিনে এসো দেখলো স্বর্ণ কফিতে চুমুক দিচ্ছে আর ফোন দেখছে বোঝাই যাচ্ছে অনেক্ক্ষণ আগে থেকে অপেক্ষা করছে।সামনাসামনি চেয়ার বসে গম্ভীর স্বরে বলল,’একটা ফোন দিলেও পারতে।খামোখা বসে ছিলো এতক্ষণ।’
‘আরে রিল্যাক্স বেশিক্ষণ হয় নি আধঘন্টা মাত্র।’
‘তাও একটা ফোন দিতে!’
স্বর্ণ আরবের কথা পাত্তা না দিয়ে বলল,’ছাড়ো তো!চলো বের হই বাসা দেখবো।অফিসের কাছে একটা দুইরুমের ফ্ল্যাট নিবো।’
‘কেন?আগের বাসায় কি হলো?ভাই-ভাবী কি কিছু বলেছে?’
‘না তেমন না আসলে।অফিসে দূর হয়ে যায় যাতায়াতে সমস্যা আর আমি চলে গেলে আম্মু একা হয়ে পড়বে।ওদের সাথে কম্ফোর্ট না আম্মু।তাই আমার কাছে রাখবো।’
‘ও আচ্ছা।ঠিকাছে চলো বের হই।’
প্রায় অনেকগুলো বাসা দেখে একটা বাসা পছন্দ হলো স্বর্ণ’র।অবশ্য নেওয়ার আগে মা’কে ভিডিও কলে দেখিয়েই তবে কনফার্ম হয়েছে।নিহারিকা খানমেরও বেশ পছন্দ হয়েছে।বাসা দেখাদেখি করতে করতে মধ্য দুপুর হয়ে গেলে।ওরা কেউই এখনো খায় নি।কনফার্ম করে বের হয়েই আরব বলল,’চলো খেয়ে আসি।ক্ষিদেয় পেট ইদুর দৌড়াচ্ছে।’
স্বর্ণ হেসে বলল,’চলো।’
খাওয়া শেষে স্বর্ন ঘড়ি দেখলো।এখন বিকেল চারটা।দু’টো টিউশনি করিয়ে আসা যাবে।ও আরবকে বলল,’তুমি বাসায় যাও।আমি টিউশনিতে যাবো।’
‘মানে কি?এত ঘুরে আবার টিউশনিতে যাবে?’
‘হ্যাঁ,সমস্যা নেই আমার।’
‘বললেই হলো?তুমি কি আয়রন লেডি?কোনো কথা না বাসায় যাবা।আজ আর কোথাও যাওয়ার দরকার নেই।গিয়ে আমাকে কল দিবা।’
আরবের কন্ঠে গাঢ় অধিকার বোধ।আনমনেই ভালো লেগে উঠলো স্বর্ণের।প্রত্যেক’টা মেয়েই চায় এমন একটা মানুষ হোক যে সবসময় তার খেয়াল রাখবে,শাসন করবে,আবদার রাখবে,আগলে রাখবে।নিঃসন্দেহে আরব একজন ভালো প্রেমিক ও স্বামী হবে তবে ওর জন্য না।এটা হওয়া উচিত না।দীর্ঘশ্বাস ফেলে স্বর্ণ মাথা নেড়ে বলল,’ঠিকাছে বাসায় যাচ্ছি।’
‘এইত লক্ষী মেয়ে।’এটা বলেই আরব গাল স্বর্ণের গাল টেনেই দৌড়ে পালালো।স্বর্ণ হেসে ফেললো।মাঝেমধ্যে ছেলেটা এমন কান্ড করে না!
চলবে….
(লেখার সময় পাই নি।যতটুকু হলো ততটুকুই দিলাম।বাকিটা কাল সন্ধ্যা সাতটায় পাবেন।)