কহিনুর_দ্বিয়ীয়_খণ্ড কলমে:ইয়াসমিন পর্ব:৩০

0
704

#কহিনুর_দ্বিয়ীয়_খণ্ড
কলমে:ইয়াসমিন
পর্ব:৩০

ক্ষমতা আর অর্থসম্পদের মোহে মানুষ যখন মরিয়া হয়ে উঠে তখন সে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। সুলতান পরিবারে বউ হয়ে আসার জন্য যেমন চন্দ্র কালো যাদুর সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে তারপর থেকে একের পর এক অভিশাপ এই পরিবারকে ঘিরে ধরে ঠিক তেমনি অধরার দাদুও অর্থের জন্য কালো শক্তির আরাধনা শুরু করে। এই দুই পরিবার ছাড়া্ও খান বংশ এই কালো শক্তির সঙ্গে জড়িয়ে আছে। এরা সবাই কহিনুরের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের অভিশাপ খণ্ডন করে সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চেয়েছে। কালো শক্তি এমন একটা শক্তি যেটার কাজ হচ্ছে বিনিময় করা। মানুষের দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে তার থেকে সব কিছু কেড়ে নিয়ে নিজে শক্তিশালী হওয়া । তবুও মানুষের লোভ কমেনি। ক্রমগত কালো শক্তি সঙ্গে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে গেছে। বহুকাল পূর্বে এই কালো শক্তি নিজের বিস্তার ঘটানোর জন্য কহিনুর পাথরটাকে নিজের মুষ্টিমেয় করে নতুন খেলাই মেতে উঠে। শালিন ও তেমনি একজন মেয়ে। ও বয়স একশত দশ বছর। মেয়েটার পরিবার বলতে একমাত্র দাদিমা ছিল। ছোট থাকতে বাবা ওর মাকে হ/ত্যা করে সেই অপরাধে ওর বাবার ফাঁ/সি হয়। তখন থেকে মেয়েটা একা হয়ে যায় । চারপাশের লোকজন ওকে এড়িয়ে চলতো। বন্ধু বান্ধবী কেউ ওর সঙ্গে মেলামেশা করতো না কারণ ওর পরিবারের সম্পর্কে অনেক আজেবাজে কথা সমাজে ছড়িয়ে পড়ে। একা শালিনের একমাত্র বন্ধু ছিল বই। দাদুর সঙ্গে তেমন কথাবার্তা বলতো না। এভাবে ওর বেড়ে উঠা। এক সময় কালো যাদুর একটা বই ওর হাতে আসে। বইটা পড়ে নিজে নিজে কালো যাদুর চর্চা শুরু করে। মায়ের এহেন মৃ/ত্যু আর চারপাশের পরিপার্শ্বিকতা দেখে পুরুষের প্রতি ওর ঘৃণা তৈরী হয়। কালো যাদুর কাছে ও নিজের আয়ুষ্কাল আর অর্থসাহায্য চেয়ে নিজের দাদুকে বিসর্জন দেয়। তবুও শয়তান ওকে প্রতি বিশ বছর অন্তর বিয়ের রাতে নিজের জীবন সঙ্গীর প্রাণ বলি দেওয়ার অঙ্গীকার করতে বাধ্য করে। সেই থেকে বিশ বছর পরপর ও এমন কাণ্ড করে থাকে। তাছাড়া ওর কাছে খবর ছিল নতুন শক্তিপ্রাপ্ত পাথরকে বিয়ে করলে ওর আর কখনও এমন করতে হবে না। তাই ও কৌশলে পাথরকে নিজের এলাকার ডেকে নিয়ে বিপদে ফেলতে দুবার ভাবেনি। হাসপাতালে ভর্তি পাথর। ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে ওর জ্ঞান ফিরে আসলো। বেলাল চুপচাপ ওর পাশে বসে আছে। ভয়ঙ্কর একটা রাতের সাক্ষী হয়ে আছে ও। জীবনে বহুবার এসব অশরীরী বা খারাপ কিছু সম্পর্কে গল্প শুনে এসেছে কিন্তু জীবনে প্রথমবার এমন অভিজ্ঞতা হলো। পাথরের উপরে ওর রাগ সঙ্গে মায়া দুটোই হচ্ছে। গতকাল রাতে যখন ও চোরাবালিতে পড়েছিল তখন একটা অচেনা ছেলে ওকে সাহায্য করেছিল। ছেলেটার সঙ্গে কিছুদূরে এগিয়ে এসে পাথরকে বালুচরে পড়ে থাকতে দেখে হাসপাতালে ভর্তি করেছে।ছেলেটা ঘুমের ওষুধের জন্য সারারাত ঘুমিয়েছে। দশটা নাগাদ এই ভূতুড়ে এলাকা থেকে ওরা বেরিয়ে যাবে কখনও আর এদিক মুখো হবে না। শালিনের বিষয়ে খোজখবর নিয়ে সবটা জেনেছে। এখানকার লোকেরা জানতো শালিনের বিষয় তবে ওর অস্তিত্ব কোথায় এটা জানতো না। সবাই ভাবতো এটা হয়তো কোনো গল্প। শালিন নামের কেউ নেই। ভাঙাচোরা একটা বিল্ডিং আছে অনুমান করতো এটাই ওই মেয়েটার বাড়ি। বেলাল ভয়ে কাচুমাচু হয়ে আছে। হঠাৎ শব্দ শুনে ওর ধ্যান ভাঙলো। পাথরের জ্ঞান ফিরেছে। ছেলেটা মাথায় হাত দিয়ে পিটপিট করে চোখ খুঁলে বলল,
> বেলাল তুমি ঠিক আছো?
বেলালের ইচ্ছে হলো স্যারকে একটা ধমক দিতে কিন্তু পারবে না তাই মাথা নিচু করে বলল,
> ঠিক আছি। আপনি ঠিক আছেন? সুস্থবোধ করছেন তো? আমাদের ফিরতে হবে।

বেলাল পরপর কয়েকটা প্রশ্ন করে থামলো।পাথর মাথায় হাত দিয়ে উঠে বসে কিছু একটা ভেবে বলল,
> আমাকে এখানে কে এনেছে তুমি জানো? মেয়েটা কোথায়?
পাথরের মুখে মেয়েটার কথা বলতে শুনে ওর মেজাজ খারাপ হলো। বেলাল ভেবেছে পাথর হয়তো শালিনের কথা বলছে তাই ও কপট রাগ দেখিয়ে বলল,
> স্যার আপনাকে আমি নিজে সমুদ্রের তীর থেকে উদ্ধার করে নিয়ে এসেছি সঙ্গে একটা ছেলে ছিল। কতবার বললাম ওই মহিলা ঠিক নেই আপনি শুনলেন না। বললেন শালিন মেয়েটা ইউনিক। বুঝেছেন কেমন ইইউনিক? ওর বয়স কত জানেন? ডাইনি ছিল ডাইনি। আপনার আর আমাকে দিয়ে কাবাব বানিয়ে খেতো। হঠাৎ কেনো জানি ওরা পালিয়ে গেলো। যাইহোক এখানে আর এক মূহুর্ত না।
পাথর ভ্রু কুচকে ফেলল বেলালের কথা শুনে। ছেলেটা রেগে আছে বুঝলো কিন্তু ওর বেশ ভালো করে মনে আছে একটা মেয়ে এসেছিল ওকে বাঁচানোর জন্য কিন্তু মেয়েটা কোথায় গেলো? এক নিজের মধ্যে থাকা হঠাৎ পরিবর্তন আর সেই সঙ্গে এই ঘটনাটার মধ্যে যোগ আছে বলে ওর মনে হলো। আপাতত এমন একজনকে ওর চাই যে সবটা বুঝবে। কিন্তু এমন লোক কোথায় পাওয়া যাবে? কথাগুলো ভেবে ও বেলালকে বলল,
> আমি ঠিক আছি। চলো বের হতে হবে।
কথাটা বলে ও দ্রুত বেড থেকে নেমে হাটা ধরলো। বেলাল জানতো এমনিই হবে তাই হোটেল থেকে লাগেজ আর দরকারি জিনিসপত্র সব এনে রেখেছিল। পাথরের পেছনে পেছনে ও লাগেজ হাতে ছুটে গেলো।
*********************
মিররে দৃষ্টি রেখে বসে আছে কহিনুর। সাদা গাউনের উপরে কালো হুড়িটা চাপিয়ে চোখে সাদা রঙের পার্টি মুখোশ পরতে পরতে পাশে সাঈদের দিকে নজর দিলো। ছেলেটা দাঁত দিয়ে নক খুটতে ব্যস্ত। কহিনুর ওর এহেন কাজে ভীষণ বিরক্ত। মায়ের থেকে ডাবল খাবার এনে ওকে দিয়েছে সেটা নিয়ে বাবা মায়ের যে সন্দেহ হয়েছে সেটা ওর অজানা নেই। এই বিপদকে সঙ্গে রেখেছে সেতো এমনি এমনিই না। কাজে লাগাতে পেরে শান্তি লাগছে। সাঈদ মুখ ভার করে বলল,
> কাজগুলো ঠিক হচ্ছে না। বিনা নিমন্ত্রণে মেয়েদের ব্যাচেলার পার্টিতে যাওয়া কি ঠিক হবে? তাছাড়া ওরা যদি কিছু জিঞ্জাসা করে তখন? ভয় করছে আমার। তাছাড়া এখান থেকে কতটা দূরে যেতে হবে ভাবো?
কহিনুর ওর কথা পাত্তা দিচ্ছে না। নিজের মতো মেকাপ ঠিকঠাক করে লাল রঙে লিপস্টিক দিয়ে ওষ্ঠদ্বয় রাঙিয়ে নিলো। সাদা পোশাকের সঙ্গে লাল রঙটা বেশ চমৎকার লাগছে। সাঈদ ওর সৌন্দর্য না সর্বনাশ দেখছে। চুপচাপ থাকতে না পেরে বলল,
> না গেলে হয়না? যদি কিছু হয়ে যায়? পিউকে সঙ্গে নিলে কেমন হবে? মেয়েটা কিন্তু বুদ্ধিমান।

কহিনুর ড্রেসিং টেবিলের সামনে থেকে সরে এসে মুখে হাত দিয়ে চুপ থাকতে বলল। কারণ ও একা যাচ্ছে না। ছেলেটা বেশি বকবক করে। ও তো বাবা মায়ের সঙ্গে যাচ্ছে তাই দুম করে দরজা খুলে বেরিয়ে আসলো। হুড়িটা ঠান্ডা থেকে বাঁচার জন্য পরেছে। সাঈদ ভড়কে গেলো সবটা বুঝতে পেরে। জুবায়ের সাদা রঙের পাঞ্জাবি পরেছে। অধরা লাল পাড় দেওয়া সাদা শাড়ি। জুবায়েরের কফি হাউজের পাশের হোটেল মালিকের মেয়ের বিয়ে। ব্যাচেলার পার্টি সঙ্গে কি সব আয়োজন করেছে সেখানেই ওদের নিমন্ত্রণ রয়েছে। কহিনুর চুপচাপ মায়ের কাছে গিয়ে দাড়ালো। জুবায়ের দুহাতে স্ত্রী কন্যাকে আগলে গিয়ে বেরিয়ে আসলো। দুদিন আগে একটা গাড়ি নিয়েছে যদিও খুব একটা দামি না তবে মোটামুটি ওদের চলাচল করতে কাজে লাগবে। কহিনুর পেছনের ছিটে সাঈদের সঙ্গে বসেছে। ছেলেটা বকবক করছে। সামনে জুবায়ের চুপচাপ গাড়ি ড্রাইভ করছে। অধরাকে চুপচাপ দেখে ও ফিসফিস করে বলল,
> চারটা দিন বিনা কারণে শাস্তি দিচ্ছ। অবলার প্রতি তোমার এমন ব্যবহার দেখে আকাশ বাতাস সুর তুলে কাঁদছে। এবার তো একটু কথা বলো প্লীজ।
অধরা পেছনে একবার তাঁকিয়ে কহিনুরকে দেখে নিলো তারপর জুবায়েরের মতো করেই উত্তর দিলো,
> আপনি অবলা সত্যি? মেয়েটাকে দেখে তো আপনার চোখের এন্টিনা ঘুরে গিয়েছিল তখন আকাশ বাতাস কাঁদেনি? এতো ইনোসেন্ট হলে আগেই নিষেধ করতে পারতেন কিন্তু না যখন আমি গোয়েন্দাগিরী করতে গেলাম তখন আপনার নজরে পড়লো। কি চমৎকার তাইনা? মেয়েটা ঝাড়ি মারছিলো আর আপনি ওকে দেখে মজা লুটছিলেন ,পুরুষ মানুষ কিনা এটাই ফ্যাক্ট।

জুবায়ের মুখটা মলিন করে বলল,
> সত্যিই এমন কিছু ভাবিনি। এরকম বউ রেখে কোন গাধা বাইরে লাইন টানে? তাছাড়া আমি একটাই তো সামলাতে পারিনা। দুটো সামলানোর মতো সাহস নেই। যাইহোক বউ রাগটাগ আর করোনা। যেখানে যাচ্ছি ওরা কিন্তু খুব চালাকচতুর টাইপের। এরকম ঝগড়া দেখে ভাববে আমাদের ডিভোর্স ফাইল করা হয়েছে। যেখানেই থাকবে আমাকে জড়িয়ে থাকার মতো চিপকে থাকবা বুঝলে?
জুবায়ের চারদিন চুপচাপ ছিল হঠাৎ কথা বলতে পেরে আকাশের চাঁদ পাওয়ার মতো খুশি হয়েছে তাই মনে যা আসছে তাই বলে দিচ্ছে। গাড়ি ছুটছে শহরের দক্ষিণে। মাঝেমাঝে ছোটছোট জঙ্গল পড়ছে। গন্তব্যে পৌচ্ছাতে ওদের ঘন্টা খানিক লেগে গেলো। জুবায়ের গাড়ি থামিয়ে ওদেরকে নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো। থ্রিম পার্টির জন্য আগে থেকে সবাইকে ড্রেস কোড জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। লোকজন খুব একটা নেই তবে বেশ সুন্দর পরিবেশ। কোনো চিৎকার চেচামেচি নেই। মূলত এটা একটা রিসোর্ট। বিয়ের জন্য ভাড়া নেওয়া হয়েছে। অল্প বয়সী মেয়েরা একদিকে আড্ডা জমিয়েছে আরেকদিকে বড়রা। ওরা ভেতরে প্রবেশ করতেই একটা মেয়ে এসে কহিনুরকে নিজের সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার জন্য আবেদন করে বসলো। জুবায়ের রাজি হলো না কিন্তু অধরা মাথা নাড়িয়ে বলল,
> নিয়ে যাও তবে সাবধানে থেকো আমি এখুনি নিয়ে আসবো।
কহিনুরকে নিয়ে যাওয়ায় জুবায়েরের চিন্তিত হলো কিন্তু অধরা বেশ স্বাভাবিক। কক্ষের ভেতরে আছে তাই চিন্তা করলো না।
**************
বহু প্রচেষ্টার পরে নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করেছে আধার। এর জন্য দাদুর সঙ্গে পরামর্শ করেছে। মোটামুটি আগের ফর্মে ফিরতে পেরে আনন্দ হচ্ছে ওর। তাই আবারও পূর্বের ন্যায় কোনো রমনীর সৌন্দর্য হরণের জন্য আত্মা অতৃপ্ত হয়ে আছে। সেই তৃপ্তি নিতে রিসোর্টে এসেছে। কিন্তু বিয়ের ইভেন্ট দেখে থমকে গেলো। হাজারো সুন্দরীর আনাগোনার মধ্যে একটা মেয়েকে ওর মনে ধরলো কিন্তু ভাগ্য খারাপ। এই মেয়েটার বিয়ে আগামীকাল। আধার সেসব পরোয়া করে না। একটা দিন দূর থেকে মেয়েটাকে ঝাড়ি মেরে মোটামুটি নিজের বশে এনেছে তাই ঝামেলা হলো না। সিগনাল পেয়ে সকলের চোখের আড়ালে পার্টির মধ্যে থেকে মেয়েটার হাত ধরে ও বেরিয়ে আসলো।মেয়েটাকে পাশের একটা ফার্ম হাউজে নিয়ে আসলো। কক্ষে পৌঁছে মেয়েটার হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলল,
> তুমি শুধুমাত্র আমার ঠিক আছে? কিসের বিয়ে? সেসব সামাজিক বেড়াজাল ছাড়া কিছুই না। আমাদের মধ্যে যে ভালোবাসা তৈরী হয়েছে সেটা বিয়ের থেকেও শতাধিক মজবুত। তুমি একান্ত আমার।হৃদয় আমাদের শরীর মন সবটা নিয়ন্ত্রণ করে আমাদের উচিৎ শুধুমাত্র হৃদয়ের কথা শোনা তাই না?
মেয়েটা মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় আধারের কথায় মাথা নাড়ালো। মেয়েটা ঘোরের মধ্যে আছে। মস্তিষ্ক কাজ করছে না। আধার বাঁকা হেসে মেয়েটার দিকে এগিয়ে ওর মুখটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নিলো। দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে কপালে চুমু দিয়ে গিয়ে চোখ বড় বড় করে ফেলল। কারণ মেয়েটার পেছনে সাদা পোশাকে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।। পাথর উপরের দিকে তাঁকিয়ে ভ্রু কুচকে বলল,
> কে তুমি? আমাদের মধ্যে কেনো এসেছো? ভালোবাসি আমরা দুজন দুজনাকে।
আধারের কথা শুনে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটা মিষ্টি করে হেসে বলল,
> কিন্তু আমার হৃদয় যে তোমার নাম নিয়ে আহাজারি করে মরছে। কি হবে আমার? ওকে ছেড়ে আমাকে গ্রহণ করো। সবটা পাবে।
আধার মেয়েটার মুখের দিকে তাকালো। পার্টি মুখোশ আর হুড়ির জন্য মেয়েটার ঠোঁট আর চোখ ছাড়া কিছুই দেখতে পারলো না। নিরাশ হয়ে বলল,
> আড়ালে রাখা সৌন্দর্য দিয়ে আমি তো মুগ্ধ হতে পারবো না। হয় তুমি আমাকে মুগ্ধ করো নয়তো ফিরে যাও। আমাকে আমার মতো ছেড়ে।
মেয়েটা হেসে বলল,
> একে কক্ষের বাইরে যাওয়ার সুযোগ দাও গ্যারান্টি তুমি শুধু মুগ্ধ না পাগল হয়ে যাবে। আমার রূপে সত্যি যাদু আছে। যেকোনো যুবকের হৃদয়ের ক্ষতচিহ্ন তৈরী করতে আমি সক্ষম।

আধার মজা পেলো ভীষণ। শিকারি নিজে ধরা দিতে এসেছে বিষয়টা ভেবেই ভালো লাগল তাই মেয়েটাকে বাইরে পাঠিয়ে দিয়ে ঘুরে তাঁকিয়ে বলল,
> তো এবার দেখাও তোমার রূপের যাদু।
মেয়েটা মিষ্টি হেসে নিজের মুখোশটা খুলে ফেলল। আধার হতভম্ব হয়ে উচ্চারণ করলো,
>কহিনুর তুমি?
কহিনুর বাঁকা হাসলো। আধার চোখ বন্ধ করে আবারও খুলে ফেলল। যার জন্য এতো ছটফট করেছে সেই আজ ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে। কি করা উচিৎ মাথায় আসছে না। দ্রুত কহিনুরের হাত স্পর্শ করতে গেলো কিন্তু পারলো না। ঝটকা খেয়ে পিছিয়ে আসলো। কি হচ্ছে বুঝতে পারলো না। ওকে এভাবে পিছিয়ে আসতে দেখে কহিনুর মজা পেলো। গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
> পাপের হস্তদ্বয় দিয়ে কহিনুরকে ধরা যাবেনা।আমাকে পাওয়ার জন্য প্রতি মূহুর্তে তুমি ছটফট করতে করতে দ/গ্ধ হয়ে ম/রবে এটাই তোমার নিয়তি। যখনই তুমি স্বাভাবিক হবে ঠিক তখনই আমি তোমাকে দেখা দিবো। যতগুলা প্রা/ণ নিয়েছো ততবার আমাদের দেখা হবে। প্রতিবার ন/রক য/ন্ত্রণা দিয়ে যাবো তোমাকে। প্রসেস শুরু হয়েছে অনেক আগে থেকেই বুঝতে পেরেছো?

কহিনুরের কথা শুনে আধার হেসে ফেলল। মেয়েটা কতটা বোকা হলে বাঘের খাচায় ঢুকে হুঙ্কার দিতে পারে। তাছাড়া আধার কোনো সাধারণ মানুষ না যে ভ/য়ে পালিয়ে যাবে তাই উত্তর দিলো,
> বেশ জমবে বলো? এমন য /ন্ত্রণা আমি হাসি মুখে মেনে নিবো তবুও তোমাকে আমার হতে হবে।
কহিনুর হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল;
> নিশ্চয়ই জমবে। হাতটা ধরে দেখাও।
আধার হাত ধরতে গিয়ে পূনরায় ছিটকে পড়লো। দেওয়ালের সঙ্গে গিয়ে আছড়ে পড়ে কপাল কেটে র/ক্ত গড়িয়ে পড়লো। কহিনুর দরজার দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলল,
> আজ আসছি আবারও দেখা হবে। আশাকরি আমাকে খোঁজতে কোনোরকমের বোকামি করবে না সময় হলে নিজেই দেখা দিয়ে তোমাকে ধন্য করবো।

কহিনুর কথাটা বলে দরজা বন্ধ করে বেরিয়ে গেলো। আধারের হাত পা থরথর করে কাঁপছে। সব শক্তি মনে হচ্ছে নির্জীব হয়ে পড়েছে। কহিনুরের জীবন বিত্তান্ত জানার জন্য ও অস্থির হয়ে উঠলো। মেয়েটার মধ্যে কিছু একটা আছে। সেটাই ওকে জানতে হবে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here