#জিদ_অনুভূতির_অন্য_এক_স্তর
পর্ব_১৬+১৭
#লেখিকা : #Kaynat_Ash
কিছু না বলে বেশ ঠান্ডা ভঙ্গিতেই আমান, হৃদয়ের কাছে এগিয়ে যায় , এরপর তার সামনে দাঁড়িয়ে সর্বশক্তি দিয়ে তার গালে চড় মারে পরপর কয়েকবার।
বেচারা হৃদয় হতবিহ্বল হয়ে যায় এই ঘটনার ভয়াবহতা এবং আকস্মিকতায়।
এমনভাবে চড় খেয়ে তাল সামলাতে না পেরে সে নিচে পড়ে যায়, তার গালে দাগ পড়ে যায়, ঠোঁট কেটে রক্ত বের হওয়া শুরু হয়।
তখন আমান হাঁটু গেড়ে বসে নিজের ফোন হৃদয়ের সামনে তুলে ধরে বলল “বেড়াতে যাওয়া পর্যন্ত ঠিক ছিল, কিন্তু তার হাত কি করে ধরেছিলি তুই!”
হৃদয় কাঁপা গলায় আমতা আমতা করে বলল “দীঘিতে সবাই নৌকায় উঠছিল, সে কিছুটা ভয় পাচ্ছিল, তাই আমি কেবল তার সাহায্য করার জন্যই…।”
আমান হুঙ্কার দিয়ে বলল “সে বলেছিল তোকে! তার সাহায্য করতে? বলে নি, তবে তোর সাহস কি করে হলো, তার অনুমতি ছাড়াই তার হাত ধরার?!
খুব শখ তোর তার সাহায্য করার, নয়?”
ভীষণভাবে আতঙ্কিত হয়ে হৃদয় বলল “না, না, আমি আসলে…।”
আমান হৃদয়কে থামিয়ে দিয়ে বলল “চুপ, একদম চুপ। এবার আমার কথা শুন, তোকে যদি আরেকবার তার আশেপাশেও দেখি; তবে হৃদয়, তোর এতগুলো টুকরো করব, যে সেই হৃদয় আর জোড়া লাগবে না।
তোকে তোর পরিবার হাসপাতালের বেডে না, বরং হাসপাতালের মর্গে খুঁজে পাবে নেক্সট টাইম।
আর হ্যাঁ, আরো একটি কথা, এসব কথা যদি এই রুম থেকে বাইরে যায়, এরপর তোর সাথে যা কিছু হবে এরজন্য আমি না, তুই দায়ী থাকবি।”
এই বলে আমান সেখান থেকে বেরিয়ে যায়। তার সাথে তার বন্ধুরাও।
যদিও আনিস আমানের বেস্ট ফ্রেন্ড, কিন্তু সে তাকে এই বিষয়ে কিছুই জানায় নি। সে মিডেল ক্লাস পরিবারের সাধারণ ছেলে। এসব ঝামেলা থেকে সবসময় দূরে থাকা টাইপস। সুতরাং তাকে এই বিষয়ে জানানোর কোন কারণও নেই আমানের কাছে।
.
.
.
বিকেলের দিকে আইজা আর আমান একটি ক্যাফেতে বসে রয়েছে। কোন কারণে আইজা বেশ রেগেও আছে।
অল্পক্ষণ চুপ থেকে আইজা আমানের উদ্দেশ্যে বলল “তুমি হৃদয়কে কীভাবে মেরেছ, দেখেছ তুমি? ভয়ে বেচারা অসুস্থ হয়ে গিয়েছে, ভীষণ জ্বর তার শরীরে। তুমি জানো যে, তাকে হাসপাতালেও ভর্তি করা হয়েছে? এতটা খারাপ তার অবস্থা!”
আমান বলল “কয়েকটা থাপ্পর খেয়েই এই অবস্থা, ভীরু কাপুরুষ কোথাকার। এই সাহস বুকে নিয়ে ঘুরে, আবার কতটা দুঃসাহস তার আমার গার্লফ্রেন্ডের হাতও ধরে। তার তো সৌভাগ্য যে মাথা ঠান্ডা রাখতে পেরেছি। নাহলে ইচ্ছা তো হয়েছিল যে তাকে একেবারে খুন করে ফেলি। আমার যদি সত্যিই মেজাজ আরেকটু খারাপ হতো সবাই তার লাশই উদ্ধার করত।”
চাপা রাগত স্বরে আইজা বলল “খুন করার মত কিছু করে নি সে। আমি জানি, আমার নিষেধ সত্ত্বেও আমার হাত ধরেছিল, তবে তা শুধু আমার সাহায্য করার জন্য।
এছাড়া এতটা পজেসিভ কি করে হতে পারো তুমি! দিস ইজ ক্রেজি, জাস্ট ইনসেইন।”
আমান প্রায় সঙ্গে সঙ্গে জবাব দিল, বলল “নো, দিস ইজ প্যাশেন এন্ড অবসেশেন অফ মাই লাভ। ইউ অলসো মাইন্ড ইট।”
অল্পক্ষণ চুপ থাকার পর কি একটা ভেবে আইজা বলল “তাছাড়া তুমি কি করে জানলে যে সে আমার হাত ধরেছিল! এর মানে কি এটাই যে তুমি আমাকে স্টকও করো?!”
এরপর অবিশ্বাস্য ভাব নিয়ে সে বলল “সিরিয়াসলি আমান!”
আমান বলল “হ্যাঁ, করছিলাম তোমাকে স্টক। তোমার কোন সমস্যা আছে এতে?”
মাথা দুলিয়ে আইজা বলল “না, একদম নেই। তোমার যা ইচ্ছা তুমি করতে পারো, তোমাকে ভালোবাসি যেহেতু আমিও হাসিমুখে মেনে নেবো সব। এছাড়া আমি জানি; চিনি তোমাকে। সুতরাং খুব আশ্চর্যও নই। আর আমার আপত্তিও নেই।
তবে আমান! দয়া করে, কিছু না জেনে এভাবে কাউকে মেরো না। প্লিজ।
হৃদয় আমার সাথে ফ্লার্ট করছিল না। সে তো রিতাকে পছন্দ করে, আর তার বান্ধবী হিসেবে আমাকে খুশি করার জন্যই যেচে এসে সাহায্য করার চেষ্টা করে সবসময়। আমাকে সাহায্য করে সেটা ঠিকই খবর রাখো, কিন্তু রিতার সামনে পেছনে যে সবসময় ঘুরঘুর করে, সেটা দেখো না?!”
আমান কিছুটা রেগে বলল “কথা শুনো, কে কার পেছনে ঘুরে না ঘুরে সেটা আমার দেখার বিষয় না, আর আমার এত ফালতু সময়ও নেই। তবে তুমি কি করো না করো, তার সবকিছু আমার জানা চাই।”
আইজা কিছুই বলল না। কেবল আমানের দিকে তাকিয়ে বসে রইল। যদিও এমন একটি পরিস্থিতিতে এমনটা মোটেও ঠিক না, কিন্তু আইজার কেন যেন হাসি পাচ্ছে, কেউ কাউকে নিয়ে এতটা পজেসিভ হতে পারে কীভাবে!
এরপর বেশ কিছুক্ষণ নীরবতার পর আমান বলল “সেই ইডিয়েট তো কাউকে কিছু বলে নি, তবে তুমি কি করে জানলে যে আমি-ই তাকে মেরেছি?”
আইজা বলল “তোমাকে আমি খুব ভালো করেই জানি আমান।
গতকাল আমার সাথে তার ঘুরতে যাওয়া, আজ সকাল থেকে তোমার অযথা রেগে থাকা, এরপর হৃদয়ের এই অবস্থা!
আমার বুঝতে একটুও সমস্যা হয়নি যে এটা তোমার ছাড়া অন্য কারো কাজ নয়।”
এরপর একটু থেমে বলল “কিন্তু একটি বিষয় আমার বুঝে আসছে না।”
আমান বলল “আমাকে বলো, আমি বুঝিয়ে দিই। এমনিতেও আমি যা কিছু করি আমার ইচ্ছায় করি। ভয় পাই না কাউকে।”
আইজা বলল “সেটাই জানতে চাচ্ছিলাম। এর আগেও তো এরচে বড় বড় ঝামেলা করেছ।
তবে তুমি যা করো সবসময় সরাসরি করো।
তবে এবার ব্যতিক্রম ঘটল কীভাবে। এই বিষয়টি পুরোপুরি গোপন রেখেছ যে হৃদয়কে তুমি মেরেছ। এই বিষয়ে জানাজানি হলেও তোমার এমনিতেও কোন অসুবিধা হত না। কেননা সবসময়ের মত আংকেল এবারও তোমাকে উদ্ধার করে ফেলতেন। তবে আজ ব্যতিক্রম ঘটল কীভাবে?!”
আমান বলল “এই বিষয়ে গোপনীয়তা এজন্যই অবলম্বন করেছি, কারণ এই বিষয়ে তোমার নামও জড়িত। আর তোমার নাম এসব জিনিসের মধ্যে আমি কখনো আসতে দিব না।
এছাড়া তুমিও চাও না, আমাদের সম্পর্কের কথা কেউ জানুক।”
আইজা বলল “সরি, আমান। কিন্তু তোমারও আমাকে বুঝতে হবে। আমার জন্য এত সহজ না মানুষের সামনে এটা প্রকাশ করা যে আমি কোন রিলেশনশিপে আছি। এছাড়া এই কথা যদি বাবা মায়ের কানে পৌঁছে তারাই বা কি ভাববে আমার সম্পর্কে!
ভার্সিটিতে তো এমনিতে মানুষ পড়তেই আসে তবে প্রেম করাটাকে সাবসিডিয়ারি একটা সাবজেক্ট বানিয়ে ফেলে, যা না করলেই নয়। দিস ইজ ক্রেজি।”
আমান বেশ শান্ত দৃষ্টিতে আইজার দিকে তাকিয়ে বলল “আর তুমি যেটা করছো সেটা কি তাহলে?”
আইজা বিচলিত হয়ে পড়ল। সে বলল “সেটা তো আমি সত্যিকার অর্থে তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম তাই। এছাড়া এটা তো ভার্সিটিতে আসার আগের ঘটনাই।”
আমান বলল “এতে তো এটাই প্রমাণ হয় যে তুমি আরো এ্যাডভান্স।”
এই কথাটি বেশ গায়ে লাগল আইজার। সে বলল “দেখুন মি.আমান। আমি কিন্তু আপনার সাথে প্রেম করে ঘুরে বেড়াচ্ছি না। একে অপরকে ভালোবাসি, সম্মান করি। ভাগ্যে লেখা থাকলে একদিন বিয়েও হবে। তখন তো প্রেম করে ঘুরে বেড়ানোর জন্য বাকি জীবন পড়েই আছে। মাঝখান দিয়ে স্টুডেন্ট লাইফের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়টা এসব করে ওয়েস্ট করে দেয়ার তো কোন মানেই হয় না, যা আমি জানি কখনো ফিরে আসার নয়। সুতরাং এখানে স্টাডিতে বেশি ফোকাস করাই নিশ্চয়ই উত্তম।
এছাড়া আল্লাহ না করুক যদি আমাদের বিয়ে কোন কারণে না হলো, তখন তো দুজনেরই এই মুহূর্তগুলোর জন্য আফসোস হবে। আই মিন, পরের স্বামী স্ত্রীর সাথে এতদিন ঘুরে বেড়িয়েছি ভেবে।”
আইজা মজা করেই শেষের কথাটি বলেছিল, সে এটাও জানত আমানের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে। এবং আমানের প্রতিক্রিয়া এরচে কম কিছুও হয়নি। সে আইজার সাথে বেশ রাগারাগী করে শেষে তাকে সেখানে ফেলেই উঠে চলে যাচ্ছিল।
আইজা তার হাত ধরে তাকে আবার তার জায়গায় বসিয়ে বলল “আমি মজা করছিলাম, আমান! এতটা সিরিয়াস হওয়ার মতো তো কিছুই হয়নি। এছাড়া তুমি জানো, তোমাকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করার ব্যাপারে আমি ভাবতেও পারি না। আমার ভাগ্যে আছো কিনা জানিনা। কিন্তু আমার হৃদয়ে সবসময়ই থাকবে।
আচ্ছা যাই হোক, বাদ দাও এখন সেসব। এবার একটা সিরিয়াস কথা বলি। আমাদের সম্পর্কের ব্যাপারে এখনই যাতে কেউ না জানে, আমান। সময় হলে আমি নিজেই জানাবো আমার বাবা মা সহ সবাইকে।
আমান বেশ ঠান্ডা স্বরে বলল “আমি কখনো জোর করেছি তোমাকে, যে আমাদের সম্পর্কের কথা এখনই সবাইকে জানাতে হবে?!
আগে বলেছি, এখনও বলছি, যতদিন স্বেচ্ছায় এই ব্যাপারটা তুমি প্রকাশ করতে না চাও, ততদিন এই সম্পর্ক গোপনই থাকবে।”
এরপর অল্পক্ষণ চুপ থেকে বলল “আইজা! তবে আমার একটা কথা মনোযোগ দিয়ে শুনে নাও। এবং খুব ভালোভাবে বুঝেও নাও।
তোমাকে বিশ্বাস করি। আর এই বিশ্বাসের মান রেখো সবসময়। যদি কখনো আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করার চিন্তাও মনে এনেছো, তখন তোমার সাথে আমি কি করি, তুমি কল্পনাও করতে পারবে না।
তোমার ভালোবাসায় যেমন নিজের জীবন এই মুহূর্তেও দিতে পারি। তোমার ঘৃণায় তেমনই জীবন নিতেও পারি।
আমার ভালোবাসা জীবন দেয়া নেয়ার মত ভালোবাসা, আইজা।”
আইজা চেহারা মলিন করে বসে আমানের কথা শুনছিল এতক্ষন।
পর্ব_১৭
আমানের কথা শেষ হলে কিছুটা অধৈর্য গলায় আইজা বলল “সবসময় এসব মারা আর মরার কথা কেন বলতে হয় তোমার!
এছাড়া আমান, তুমি একা ভালোবাসো না আমাকে, আমিও তো তোমাকে ভালোবাসি। তাহলে মাঝখান দিয়ে এসব বিশ্বাসঘাতকতার কথা কোথা থেকে আসছে। ভালোবাসতে যখন পেরছো, সেহেতু বিশ্বাস করতেও শিখো।
বিশ্বাস ছাড়া ভালোবাসা অর্থহীন।”
আমান বলল “বিশ্বাস করি, চোখ বন্ধ করে। এজন্যই বললাম, এই অন্ধ বিশ্বাসের সুযোগ নিতে যেও না কখনো।”
আইজা বলল “হ্যাঁ, ঠিক আছে। নেব না তোমার অন্ধ ভালোবাসা আর বিশ্বাসের সুযোগ। স্পষ্ট অক্ষরে জানিয়ে দিলাম। খুশি এখন?! শান্তি হয়েছে মনে?”
অল্পক্ষণ চুপ থেকে আমান বলল “অনেকক্ষণ হয়েছে এখানে এসেছি। চলো তোমাকে হোস্টেলে ড্রপ করে দিই, আমাকেও বের হতে হবে একটি কাজে।”
.
.
.
এভাবেই চলতে লাগলো আমান আর আইজার জীবন। যদিও পড়াশোনায় আইজা বেশি সিনসিয়ার ছিল, কিন্তু আমান ছিল জিনিয়াস, সে ততটা না পড়েও সবসময় সবার চেয়ে মার্কস বেশি পেত। এই একটি কারণে মাঝে মধ্যে বেশ হিংসে হত আইজার আমানকে, আর আমানও বিষয়টি বেশ উপভোগ করত।
যাই হোক, ভার্সিটিতেও তিথির সবসময়ই এই চেষ্টাই ছিল, যেন আমানের কাছাকাছি থাকতে পারে সর্বক্ষণ।
এদিকে আমানের সব বন্ধুবান্ধবদের সাথেও আইজার ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কারণ আমানের বন্ধু হিসেবে সে তার সাথে চলাফেরা করে, অথচ তার বন্ধুবান্ধবদের এড়িয়ে গেলে সবার নিশ্চয়ই সন্দেহ হবে যে আমান আর আইজার মধ্যে বন্ধুত্বের বাইরেও কিছু একটা চলছে।
যদিও বাধ্য হয়ে তাদের সাথে চলতে হয়, তবে আমানের কোনো বন্ধুবান্ধবই আইজার পছন্দ নয়। বিশেষ করে, এই আনিস। অথচ আমানের সাথে সবচেয়ে বেশি ঘনিষ্ঠতা তারই।
মাঝে মধ্যে আইজা ভাবে, তার ভাগ্যটা প্রকৃতপক্ষেই খারাপ।
মাঝে মধ্যে আইজা ভাবে, আচ্ছা, আনিসকে এতটা অপছন্দের কারণ কি! এর কোন সদুত্তর তার কাছেও নেই। হয়তো কিছু মানুষকে মাঝে মধ্যে আমরা কোন কারণ ছাড়াই ঘৃণা করি। তাদের অপছন্দ করার জন্য বিশেষ কোন কারণেরও প্রয়োজন হয়না। আনিসও তার জন্য তেমন একটা মানুষই। এছাড়া প্রথম ইমপ্রেশন-ই আনিসের ক্ষেত্রে তার মোটেও ভালো নয়।
যাই হোক, এত হার্ড ফিলিংস থাকার পরও আমানের বন্ধুবান্ধবের সাথে হাসিমুখে কথা বলতে হয় আইজার, যা তার কাছে টর্চারের মত মনে হয়।
.
.
.
এদিকে আনিস এই বিষয়ে সম্পূর্ণ অজ্ঞ যে আইজা আমানের গার্লফ্রেন্ড।
সে এই চার বছরে তার প্রেমে পড়ে যায়।
সে সবসময় ভাবে, সাধারণ চেহারার একটি মানুষকেও তার ব্যক্তিত্ব কতটা অসাধারণ করে তুলতে পারে। এই বিষয়টি যেন সে আইজাকে দেখেই উপলব্ধি করতে পেরেছে।
আইজার সাথে সময় কাটাতে তার খুব ভালো লাগত। কিন্তু আইজা খুব একটা কথা পর্যন্ত বলত না তার সাথে।
সে খুব ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পারত যে আইজার খুব বেশি অপছন্দের একজন মানুষ সে। এই কারণে কখনোই তাকে বলা হয় নি নিজের মনের কথা। তবে অন্য কারো সাথেও সে অন্য কোনো সম্পর্কে জড়াতে পারে নি। মাঝে মধ্যে মনে হতো এতটা বোকামি করার অর্থ কি?
একহলে তাকে মনের কথা সরাসরি জানিয়ে দেয়া উচিত, অথবা তাকে মন থেকে বের করে দেয়া উচিত। কিন্তু এই দু’টির মধ্য থেকে কোনটাই করতে পারছিল না সে।
আইজাকে মনের কথা না জানানোরও বেশ যৌক্তিকতা ছিল তার কাছে। কারণ সে ভালোভাবেই বুঝতে পারত, আইজা এক সেকেন্ডও নিবে না তাকে রিজেক্ট করতে। এমন একজনকে প্রোপোজ করার কোন মানে হয় না। এরপরও হাল ছেড়ে দিতেও তার ইচ্ছে হত না।
কখনো কখনো সে আবার ভাবত, তার উচিত আইজার সাথে কিছু সময় অতিবাহিত করা, তার প্রতি আইজার যে নেতিবাচক মনোভাব, তা দূর করার জন্য; নিজের প্রতি অনুভূতি সৃষ্টি করার ব্যাপারে তার চেষ্টা তো অন্তত করা উচিত।
কিন্তু আইজার সাথে কথা বলার চেষ্টা করলে সে আরো দ্বিগুন উপেক্ষা করত তাকে।
একবার তো তার সামনে আমানকে পর্যন্ত তার সম্পর্কে এই কথা বলে যে “আমার সাথে অযথা কথা বলার চেষ্টা করাটা আমার অপছন্দের বিষয়গুলোর মধ্যে থেকে একটি। তোমার বন্ধুও এই বিষয়টি ভালোভাবে বুঝে নিলে ভালো হয়।”
আমান তার বন্ধুকে বেশ পছন্দ করে, বিশ্বাসও করে। তাই আইজাকে বলে সে যেন অযথা সব বিষয়ে প্রতিক্রিয়া না দেখায়।
বন্ধুত্ব এত গভীর হওয়ার পরও, যদিও আমান আনিসকে স্পষ্টভাবে কিছুই বলে নি তার আর আইজার রিলেশেনের বিষয়ে। এরপরও আনিসের কেন যেন মনে হতো তাদের মধ্যে হয়ত কিছু একটা আছে। আমানের কথাবার্তা থেকেও এই বিষয়ে অনুমান করা যায়।
তবে এই ভেবে সে সবসময় এই যুক্তি নাকচ করে দেয় যে এমন কিছু থাকলে আমান তো তাকে বলতই, তার এত কাছের বন্ধু, তার থেকে এমন কিছু লুকাবেই বা কেন।
তবে নিজের মনকে মানাতে না পেরে অবশেষে আমান আর আইজাকে বেশ কিছুদিন ধরে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে সে এতটা বুঝতে পারল যে তার এইবার অন্তত আমানের সাথে এই বিষয়ে সরাসরি কথা বলা উচিত। যে ভাবা সেই কাজ।
চলবে…
{আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি আজ থেকে প্রতিদিনই আমার পেইজে গল্প দিবো। আসলে রমযানে আমার আম্মু সব বিষয়ে আমার উপর একটু বেশি কড়াকড়ি করে। কিন্তু আমি উনার সাথে এই বিষয়ে কথা ক্লিয়ার করে নিয়েছি যে আমার কিছু স্পেস দরকার, অন্তত এই গল্পটা আমি পাঠকদের প্রতিদিন দিতে চাই যাতে রমযানের মধ্যেই এই গল্প শেষ হয়ে যায়। আমার পক্ষ থেকে আমার পাঠকদের ঈদ গিফট, ধরে নিতে পারেন।
এছাড়া যারা অতীত পার হয়ে গল্পে ভবিষ্যত আসার অপেক্ষা করছেন তাদের একটু জানিয়ে দেই, সব ঘটনা অতীতের-ই। ভবিষ্যতে গল্প যখন আসবে গল্পে বেশি কিছু আর থাকবে না, কারণ ক্লাইমেক্স কাছাকাছি থাকবে।। ধন্যবাদ।। }