#ঘূর্ণ্যমান_তিক্ততা
৩য় পর্ব
মোহর ওহীর রুমে যায়। ওহী তখন উঠে বসার চেষ্টা করছিলো। মোহর গিয়ে ওহীকে সাহায্য করার জন্য তার হাত ধরতেই ওহী আতকে উঠলো। মোহর দেখলো সে যে স্থানে ধরেছে ওই স্থানে কেমনে কালচে হয়ে আছে। ওহী চোখ বন্ধ করতেই দু’ফোঁটা জ্বল গড়িয়ে পড়লো। মোহর ওহীকে সাবধানে ধরে বসিয়ে দিলো। নিজেও তার পাশে বসলো। তারপর সার্ভেন্ট কে ডাকলো,
>>দিনা।
>>জি আপা।
>>উনার জন্য স্যুপ করে নিয়ে এসো।
>>আচ্ছা।
মোহর ওহীকে খুব যত্নের সাথে ফ্রেশ করিয়ে আনলো এরপর আবার শুইয়ে দিলো। ওহী কিছুক্ষণ চোখ বুজে থাকলো। শরীর নিয়ে এত সামান্য নড়াচড়া ও তার সহ্য হচ্ছেনা।একটু পরে ওহী চোখ খুলে মোহরের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো। মোহর বিষয়টা বুঝতে পেরে বললো,
>>আমি মোহর। মোহর উসমান। তুমি হয়তো আমাকে চিনবেনা।
>>হ..হ্যাঁ। আপনারা স…সবাই অচেনা আ..মার।
পুরো শরীরের ব্যথাতুর হয়ে যেন ওহীর গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছেনা। মোহর তা খেয়াল করলো। পাশের ড্রয়ার থেকে কিছু ঔষধ নিয়ে ওহীকে খাইয়ে দিলো। ওহী বাধ্য মেয়ের মত খেয়ে নিলো। একটু বাদেই সার্ভেন্ট স্যুপ নিয়ে এলো। মোহর অতী যত্নের সাথে তাকে স্যুপটা খাইয়ে দিলো। তারপর আবারো কিছু ঔষধ খাইয়ে দিলো।
>>এখন কি কিছুটা ভালো লাগছে?
>>জিই। আচ্ছা ওই মানুষ টা কে ছিলো যিনি আমাকে এভাবে মেরেছেন?
ওহীর কথাটি শুনে মোহরের কেমন যেন কলিজায় মোচড় দিয়ে উঠলো।
>>বলুন না আপু। কে উনি? আর আমার সাথে এমন করলেন কেনো?
>>সে সব কথা নাহয় পরে বলবো এখন তুমি একটু রেস্ট নাও।
>>আচ্ছা।
মোহর ওহীকে ঠিকঠাক মত শুইয়ে দিয়ে চলে এলো। তূর্যের রুমে গেলো। তূর্য তখন শুয়ে শুয়ে সিগারেট খেতে ব্যস্ত। মোহর গিয়ে দরজায় দাঁড়িয়ে গেলো। তূর্য তা খেয়াল করলো। হাতের সিগারেট টা এশ-ট্রেতে ফেলে দিয়ে। রুম জুড়ে রুম-স্প্রে মেরে দিলো। তারপরেই মোহর রুমে ঢুকলো।
>>ওর জ্ঞান ফিরেছিলো। আমি খাইয়ে ঔষধ খাইয়ে দিয়েছি।
>>আমি বুঝিনা তোমার এত আদিক্ষেতা কিসের ওর প্রতি?
>>সরি তূর্য তোমার মত অমানুষ হতে পারছিনা আমি।
>>তবে এই অমানুষের সাথে পড়ে আছো কেন? চলে যাও।
মোহরের এই কথাটি সহ্য হলোনা। সে যেতে যেতে বললো,
>>আমি পারলে ঠিকই চলে যেতাম। কিন্তু কি করবো ভালোবাসার জালে আবদ্ধ। তার উপর নেই কোন ঠিকানা। অসহায় হয়ে পড়ে আছি। নাহয় ভালোবাসা টাও ঘৃণায় পরিবর্তিত হচ্ছে।
মোহরের কথা গুলো যেন তূর্যের গায়েই লাগছেনা। তার সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপই নেই।
মোহর আবারো ওহীর রুমে গেলো। দেখলো ওহি ঘুমিয়ে গিয়েছে। সে সার্ভেন্ট কে বললো,
>>দিনা শোনো?
>>জি আপা।
>>উনার খেয়াল রেখো। জেগে উঠলে আমাকে ডেকো। আমি লাইব্রেরি তে আছি।
>>আচ্ছা আপা। আপনি যান আমি এই আপামণির খেয়াল রাখবো।
>>আর শোনো তোমার যদি ঘুমে ধরে তাহলে অন্য কাউকে উনার পাশে থাকতে বলে দিও।
>>আচ্ছা।
এরপর মোহর নিজেকে লাইব্রেরি রুমে আবদ্ধ করে নিলো। চোখ বন্ধ করে টেবিলে মাথা রেখে চেয়ারে বসে পড়লো। তার চোখের সামনে সেইদিন এর দৃশ্য গুলো ভাসছে। অজান্তেই তার চোখে পানি এসে গেলো। একটা দুঃসংবাদ তারপর সিড়ি থেকে গড়িয়ে পড়া, মিসক্যারেজ। না মোহর আর ভাবতে চাই না।
ফজরের আজান কানে আসতেই ওহীর ঘুম ভেঙ্গে গেলো। নিজের একপাশে ফিরে তাকালো বিছানা খালি। অগ্নির কথা খুব মনে পড়ছে ওহীর। সে কেমন আছে? নিশ্চয় হন্য হয়ে ওহীকে খুঁজছে। এই সময় টাই দু’জনে মিলে নামাজ পড়ার জন্য উঠতো। বিয়ের পর থেকে একদিন ও তারা আলাদা হয়নি গত এক বছরে। অথচ হঠাৎ করে তাদের আলাদা হতে হলো। এসব ভাবতে ভাবতে ওহী চোখ বুজে ফেললো। দু’চোখ হতে জল গড়িয়ে পড়ছে তার।
অগ্নি জায়নামাজে বসে মোনাজাত তুলে কাঁদছে। আজ রাত একটুর জন্য ও ঘুমাইনি সে। অথচ ওহী থাকলে বাকী রাত গুলোর মত এই রাত টাও কত সুন্দর হতো।
“ইয়া আল্লাহ আমার ওহী যেখানেই থাকে যেন ভালো থাকে। তাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দাও আল্লাহ।আমিন”
মোনাজাত শেষ করে যেন আরেক দফা কেঁদে ফেললো অগ্নি। এরপর জায়নামাজ গুছিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। শুধুমাত্র ওহীর চিন্তায় আসছে মাথায়। কখন যে সে ঘুমিয়ে পড়লো টেরই পাইনি।
মোহর এর ফজরের নামাজ পড়ার অভ্যাস থাকলেও তূর্যের মোটেও নেই। এমনকি কোন ওয়াক্তের নামাজই সে পড়েনা। আগের তূর্য আর আজকেই তূর্য সম্পূর্ণই আলাদা সত্তা।
মোনাজাতে মোহর একটা জিনিষই চাই আল্লাহর কাছে ” ইয়া আল্লাহ তূর্যকে তুমি হেদায়াত দান করো। তাকে তার আগের সত্ত্বায় ফিরিয়ে দাও। তার বুকের এই জ্বলন্ত আগুন তুমি নিভিয়ে দাও আল্লাহ। আমিন”
চলবে….
#Razia_Binte_SuLtan