দ্যা ব্লাক বুক ( পর্ব- ০৬ ও শেষ)

0
666

গল্প- দ্যা ব্লাক বুক ( পর্ব- ০৬ ও শেষ)

লেখক- Riaz Raj
——————-
রাত ৮ টা বাজে এখন। কলেজ থেকে আসার পর ১৫ টা গুলি খেয়েছি। পিস্তলের বুলেট আমার পিঠ ছিদ্র করে ফেলেছে। এক মহা যুদ্ধ করেছি আমি। তবে এখন মাথাটা ঝিম করে উঠছে, আমাকে এখন বের হতে হবে। আবার কাওকে স্বীকার করবো, ৩৪ নাম্বার স্বীকার।

কিন্তু আমি ১৫ টা বুলেট খেলাম কিভাবে। তা আগে জেনে আসি। কলেজ থেকে বের হবার পর দেখি, আমার পা কাপতেছে। কেমন একটা হতাশ ভাব চলে এলো। শরীরের প্রতিটি কোষ দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। কোনোভাবে রাস্তায় এসে দেখি, ফুটপাতে অবস্থিত দোকানে, বিক্রি করার জন্য যে আয়না ডিসপ্লে দিছে,সে আয়নায় আমার মুখ বুড়োর মত লাগছে। তারমানে আবার রক্ত খেতে হবে। পাবলিক প্লেস হলে হয়েছে। আমার এখন রক্ত চাই। চট করেই,এক পথচারীর উপর ঝাপিয়ে পড়েছি। রাস্তায় সবাই আমাকে এভাবে দেখে মারতে আসলেও, যখন আমি মহিলার ঘাড়ে কামড় বসিয়েছি,ওমনি সবাই দৌড় দিতে লাগলো। মহিলার রক্ত পান করে ২ মিনিট যেতে না যেতে আবার দুর্বল হয়ে গেছি। এত ঘনঘন রক্তের পিপাসা পাচ্ছিলো যে, নিজেকে কন্ট্রোল রাখা যাচ্ছেনা। কিন্তু মানুষ কোথায় পাবো। সবাই আমার ভয়ে লুকিয়ে গেছে। হাপাতে হাপাতে একটা ৪ তলা বিল্ডিং এর ভিতর চলে গেলাম। কেঁচি গেট আটকিয়ে প্রতিটা রুমে নক করে করে পাগলের মত ঝাপিয়ে পড়ছি আমি। রাক্ষসোচিত বহন করে আমার ভিতর। এমন সময় পুলিশের গাড়ির শব্দ পেলাম। দৌড়ে পালাতে যাবো,তখনি একজন পুলিশ আমার বুকে গুলি করে দেয়। অলৌকিক ভাবে বুলেট আমার দেহের ভিতর গিয়ে, রক্তের সঙে মিশে গেলো। অর্থাৎ পুলিশের বুলেট আমার কিছুই করতে পারবেনা। পর পর আরো ১৪ টা বুলেট ছুড়ে তারা। কিন্তু বুলেট আমার ক্ষতি তো দূরে থাকুক, ব্যথাতুর ও করতে পারছেনা। ভয়ংকর এক হাসি দিয়ে এবার ঝাপিয়ে পড়ি পুলিশের উপর। ধীরে ধীরে সবার রক্ত হজম করি। মোট ৩৩ জন স্বীকার করলাম। বাসায় এসে দেখি কেও নেই বাসায়। নিশ্চয় মিডিয়ার লোক ভাইরাল করে দিছে। একা একা ভালোই লাগছেনা। অন্যদিকে শরীর দুর্বল হতে লাগলো।
রাত ৮ টা বাজে এখন। কলেজ থেকে আসার পর ১৫ টা গুলি খেয়েছি। পিস্তলের বুলেট আমার পিঠ ছিদ্র করে ফেলেছে। এক মহা যুদ্ধ করেছি আমি। তবে এখন মাথাটা ঝিম করে উঠছে, আমাকে এখন বের হতে হবে। আবার কাওকে স্বীকার করবো, ৩৪ নাম্বার স্বীকার।

বাসা থেকে বের হয়ে দেখি রাস্তা ফাকা। এদিকে আমিও আর নিতে পারছিনা। অনেক কষ্টে তিন রাস্তার মোড়ে এসে দাঁড়াই। বাস স্টান্ডেও কেও নেই। হতাশ হয়ে রাস্তার মধ্যে বসে পড়লাম। কান যেনো আগুন বের হচ্ছে। আমার এখন রক্ত চাই। রক্ত ছাড়া শান্তি মিলবেনা আমার। কোথায় পাবো রক্ত। কখন পান করবো তাজা লাল রঙের গরম রক্ত। আশান্তি লাগছে খুব। কেও দরজাও খুলবে না। সবাই আমার কথা জেনে গেছে। আপনিও তো জানেন। নয়তো আপনার রক্তও পান করতাম। যদি আমার নাগালে থাকতেন।

কিছুক্ষণ পর কেও আমার মাথায় হাত রাখে। ঝিম ঝিম করা মাথাটা হটাৎ হালকা হয়ে গেলো। মাথা তুলে তাকিয়ে দেখি এক অচেনা ব্যক্তি আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। গায়ে একটা কালো চাদর দেওয়া। মুখ ভর্তি দাড়ি, আর হাতে অনেক রক্ত। রক্ত দেখেই আমার মাথা নষ্ট। খপখপ করে উনার হাতের সব রক্ত চুষা শুরু করলাম। উনিও হাতটা বাড়িয়ে দিলো। হাতের রক্ত চুষতে চুষতে এক সময় আমি উনার আঙুলে কামড় বসিয়ে দিছি। উনি ততক্ষনাৎ আমাকে ঝাড়ি মেরে বলল,
– ওই কি করতাছো। হাত খেয়ে ফেলবে নাকি।
– ভাই, কয়েক ফোটা রক্ত দে। আগে আমাকে শান্ত কর।
– ওকে নে, একটা আঙুল খা।

উনার কথামত একটা আঙুল কামড়ে ছিড়ে ফেলেছি আমি। মুরগির হাড্ডির মত, চিবুতে লাগলাম আঙুল। ধীরে ধীরে আমার শরীর হালকা হচ্ছে। চিবুতে চিবুতে অবশেষে শান্তি ফেলাম আমি। এরপর লোকটিকে বললাম।
– ধন্যবাদ ভাই। আমি বাচলাম।
– তোমাকে আর কি বলবো। আমিও তোমার মত।
– মানে?
– তোমার কাছে যে বই আছে। এইটা একটা অলৌকিক কালো যাদুর বই। দ্যা ব্লাক বুক। এই বই অভিশপ্ত বই। তোমার মত আমাকেও এই বই সর্বহারা করেছে।
– আপনি মানুষের রক্ত খান?
– না, মানুষের রক্ত খেলে, এতদিনে মানুষ আমাকে কিছু একটা করে ফেলতো। অর্থাৎ তোমাকে মারার প্লেন করছে এখন সমস্ত বাহিনীরা। কাল হয়তো কামান্ডরা এসে তোমাকে হত্যা করতে চাইবে।
– তো আপনি রক্ত খান কিসের।
– গরু ছাগল, কিংবা জঙলের পশুপাখিদের।
– এর থেকে মুক্তি পাবার কোনো পথ নেই? ( কান্না করে দিলাম আমি।)
– আছে।
– তবে বলুন?
– আজ একটা চায়ের দোকানে তোমাকে টিভিতে দেখলাম। তাই তোমার খোজে চলে আসলাম আমি। খুব ভালো করে জানতাম তুমি রক্তের সন্ধানে বের হবা। আর এইটাও জানি, এই বইয়ের বিনাশ তুমিই করতে পারবে।
– কিভাবে?
– এখানে অনেক্ষন দাঁড়িয়ে থাকলে কেও দেখে ফেলবে। আক্রমণকারীরা যেকোনো সময় চলে আসবে। চলো কোথাও বসে কথা বলি।
– চলুন।

এরপর উনি আর আমি জঙলের ভিতর প্রবেশ করলাম। এই জঙলের শেষ সীমানা নিরিবিলি হাউজের পাশে। অনেক বড় জঙল হলেও, এর চেয়ে বড় জঙল এর ভিতরেই আছে। মাত্র ২ কিলোর জঙল একটি দেশের সমান। কি,বুঝতে পারলেন না? আমিও বুঝিনি। তবে লোকটির কথা শুনে বুঝলাম। আপনারা শুনুন,কি বলেছে উনি।
– আচ্ছা? আপনি এই বই পেয়েছেন কোথায়?
– তুমি পেয়েছো কোথায়।
– আমার চাচাতো বোনকে…( এরপর সব কথা খুলে বললাম। আমার বলার পর উনি বলল)
– সেদিন তুমি জঙলে লুকানোর পর, তার ফাদে পড়ে গিয়েছিলে। এই জঙল ২ কিলোর পথ হলেও, জঙলের ভিতর এমন এক রহস্য আছে,যা দেখলে তুমি মনে করবে অন্য একটি দেশে চলে এসেছো।
– অর্থাৎ জঙলের ভিতরে জঙল?
– হুম। মনে আছে? তোমাকে হটাৎ অন্য জঙলে নিয়ে গেছে?
– হুম। অচেনা ছিলো।
– সেটাই, তুমি তখন তাদের দেশে ছিলে।
– কিন্তু এসব কে করছে।
– ড: মাহফুজুর রহমান আশিক।
– উনি আবার কে?
– পিপিলিকা পত্রিকার সাধারণ কর্মী ছিলো। এক সময় উনি প্রতিজ্ঞাত্ব হন,যে উনার ছবি পত্রিকায় আসবে। তাই উনি সে কাজ ছেড়ে, অন্য কিছু করতে চেয়েছেন। যেটা করলে উনার ছবি পত্রিকায় ছাপানো হবে। এইটা সেইটা নিয়ে অনেক কাজ করেছেন।কিন্তু কিছুই করতে পারেন নি। অবশেষে উনি ম্যাজিক শেখার প্লেন করেন। তাও ব্লাক ম্যাজিক। যার দ্বারা, উনি রাতারাতি ভাইরাল হতে পারবে। তখন এই জঙলেই তিনি আস্তানা বানায়।
– নিরিবিলি হাউজটা কি তার?
– না, ওটা আমার।
– আপনার…?
– হ্যা, ওটা আমার। যাইহোক, তুমি পরের ঘটনা শুনো। ধীরে ধীরে বুঝবা।
– হুম তা ঠিক,কিন্তু আমার রক্তের পিপাসা পেয়েছে। আর হাটতে পারছিনা।
– এই নাও,আমার আরেকটা আঙুল খাও।
– ওকে ( আরেকটা আঙুল খেলাম। উনিও উনার আঙুল থেকে,খানিকটা রক্ত খায়)
– পিপাসা মিঠেছে?
– হুম। আচ্ছা বলুন,তারপর কি হলো।
– এরপর ড:মাহফুজ তার ব্লাল ম্যাজিক এর গবেষণা শুরু করে। প্রতিদিন নতুন নতুন সূত্র বের করতে থাকে । কিন্তু সে তার এক সময় লোভ লেগে যায়। উনি এই পৃথিবীর সব চেয়ে শক্তিশালী যাদুকর হতে চেয়েছেন। তবে বিপলে যাচ্ছিলোনা কিছুই। উনি টার্গেট মত পৌঁছে যাচ্ছিলেন। তবে কাজ করতে,প্রতিদিন একটা মানুষ দরকার হতো। যার জন্য আমাকে বাচাই করেছে ড: মাহফুজ। আমাকে মোটা অংকের টাকা দিতো। আমিও প্রতিদিন মানুষ কিডন্যাপ করে এনে দিতাম।
– আপনি কেনো এসব করতে গেছিলেন।
– তখন আমি এমনিতেই কিশন্যাপার ছিলাম।
– ও,তারপর বলুন?
– এরপর দেশজুড়ে হৈচৈ পড়ে যায়। সবাই কিডন্যাপ এর ব্যাপারে সতর্ক হয়ে যায়। সবাই সন্দেহ করে পদ্মা সেতুর জন্য কল্লা চোর বের হয়েছে। কিন্তু আসলে,তখন আমরা ছিলাম এই কাজে।
– হ্যা,আমিও শুনেছিলাম। এরপর কি হলো?
– এরপর মানুষ এনে দেওয়া খুব কস্টের হয়ে যায়। ড:মাহফুজ আমার উপর চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। আমিও পাগলের মত মানুষ খোজা শুরু করি। কিন্তু সু্যোগ পাচ্ছিলাম না। একদিন হতাশ হয়ে, ডা:মাহফুজের আস্তানায় যাই। দরজা খোলার আগেই ভিতর থেকে একটা শব্দ আসে। আমি জানালার পাশে গিয়ে দেখার চেষ্টা করি,কি হচ্ছে। তখন বুঝে ফেলেছি আসল কাহিনী। ডা:মাহফুজ এই ব্লাক বুক বইটি বানায়। যে বইয়ের সাহায্যে সে অতীত এবং ভবিষ্যৎ, দুটোই হাতের নাগালে আনতে পারবে। সে যেদিন মরবে, তার পরেরদিন আবার তার চামচারা সেই বইয়ের মাধ্যমে তাকে জীবিত করবে। অর্থাৎ সে অমর হয়ে যাবে। কিন্তু এরজন্য সেদিন রাতেই ৮ জন মানুষের রক্ত দরকার ছিলো। যদি ৮ জন মানুষের রক্ত হয়,তবে উনি বইটি সম্পুর্ন বানাতে পারবেন। এদিকে আমি একটাও মানুষ জোগাড় করিনি।
– ওহ মাই গড। এরপর কি হলো।
– এরপর উনি আমায় জানার পাশে দেখে ফেলে। আমি পালাবো,ঠিক তার আগে উনি তার চামচা দিয়ে আমায় ধরে ফেলে। কিন্তু তখনি চলে আসে উনার শেষ সময়। একটা যাদুর পাখি ছিনো উনার। পাখিটি উনার মৃত্যুর ১০ মিনিট আগে খবর পেয়ে যেতো। যখন পাখিটি চিৎকার দেয়,তখনি ড:মাহফুজ
চমকে উঠে। ৮ জন মানুষ তো হয়নি। সব উনার বিপলে যেতে বসেছে। তাই বুদ্ধি খাটিয়ে উনি সেই বইয়ের ভিতর ঢুকে পড়ে। উনি যাওয়ার সাথে সাথে সব চামচা হাওয়া হয়ে যায়। বইটিও অটোমেটিক গায়েব হয়ে যায়। আমি বুঝিনি কি হয়েছে। তাই পালিয়ে বাসায় চলে আসি। দরজা খুলতে যাবো,তখনি দেখি আমার পায়ের সামনে সে বই। আমি অন্ধকারে খেয়াল না করলেও, বুঝতে পেরেছি,এইটা ব্লক বুক হবে। তাই লাথি মারার প্রস্তুতি নিয়েছি। এমনি একটা ভয়ংকর হাত এসে আমাকে বইয়ের ভিতর নিয়ে যায়। চলে যাই আমি অতীতে। গিয়ে আমার উপকারও হয়েছে, আমার স্ত্রী মারা গেছিলো ৩ মাস আগে। তাও রোড এক্সিডেন্ট এ। তাই অতীতে গিয়ে আমি আমার স্ত্রী প্রিয়াকে বাচাই। এরপর থেকেই আমি অভিশপ্ত হয়ে যাই। কিন্তু আমি জানতাম, আমি যদি মানুষের রক্ত খাই,তবে সে রক্ত সোজা বইয়ের ভিতর যাবে। ৮ জন মানুষের রক্ত পরিপূর্ণ হলেই সে বেচে যাবে। আবার জেগে উঠবে ব্লাক বুক। তাই মানুষের রক্ত না খেয়ে,পশুপাখির রক্ত খেতাম।
– ওও, তাইলে আমিই হোগা মারা দিছি। আমি তো ৩৩ জন খাইছি।
– সমস্যা নেই। হাতে এখনো ২ ঘন্টা আছে। রাত ১২ টার আগে যদি আমরা গিয়ে মিশন কমপ্লিট করি। তবে সব ঠিক হয়ে যাবে।
– কিসের মিশন?
– তুমি আমাকে জবাই করবে।
– কিহহ, না,আমি পারবো না।
– দেখো রিয়াজ, তুমি এখন পিপাসা মুক্ত। একটু পর তোমার রক্তের পিপাসা পাবে, তখনি তুমি আমার রক্ত খেতে চাইবে। কিন্তু তুমি খাবেনা। তুমি ধৈর্য রেখে আস্তানা অব্দি যাবে। কথা দাও?
– আমি পারবো তো?
– হ্যা, তুমি Riaz Raj। হরর আর ভৌতিক ঘটনা নিয়ে সারাজীবন গবেষণা করেছো। তুমি পারবে, তোমাকে পারতেই হবে।
– ওকে, কিন্তু কি কি করবো?
– আস্তানায় গেলেই আমরা সেই বই দেখতে পাবো। আর বইয়ের পাশেই একটা তলোয়ার রাখা আছে। তলোয়ারটা ড:মাহফুজ এর। তুমি সে তলোয়ার দিয়ে আমাকে জবাই করে দিবে। এরপর আমার দেহ থেকে বের হওয়া রক্ত, সে বইয়ের মধ্যে ফেলবা। যখন বইটি লাল বর্ণ ধারণ করবে। তখন আগুনে ফেলে দিবা। ব্যস, বইয়ের খেলা শেষ।
– ওকে।কিন্তু একটা প্রশ্ন। তোমার রক্ত দিলে তো সে শক্তিশালী হবে।
– না, কারণ সে বইয়ের স্বীকার আমরা দুজন। যেকোনো একজনের রক্ত লাগবে। তুমি বললে,আমি তোমাকে জবাই করে দিতে পারি। তবে আমি বেচে যাবো।
– হুম তাই করুন। আপনার স্ত্রী পরিবার সবাই বেচে আছে। তাদের পাশে দাঁড়ানো দরকার।
– না,তা আর হবেনা। আমার আঙুল তুমি খেয়েছো। কোনো মেডিসিন ও নেই। হাতের রগ ছিড়ে গেছে আমার। জোরে গেলে আর ৪ ঘন্টা বাচবো।এরপর এমনিতেই আমি মারা যাবো। তুমি আমাকেই জবাই কইরো।
– ওকে।

এরপর লোকটি একটি গাছের সামনে দাঁড়িয়ে মন্ত্র পড়তে লাগলো।
{ উইং ট্রিং ব্রিং ক্রিং
গোয়াইস গোয়াইস।
আলাতুকামিনখাজ আখ
আখা খা হাসিলখ্রা ইয়উহাখ্রুচ}

সঙে সঙে গাছটি দুই ভাগ হয়ে যায়। গাছে অপর প্রান্তে দেখা যায় একটি দরজা। লোকটি সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করে। আমি লোকটিকে অনুসরণ করতে লাগলাম। অবশেষে আমরা গিয়ে পৌচালাম অন্য একটি দেশে। সেখানেও সব অন্ধকার। কিছুদূর হাটার পর আমরা একটি বাড়ির ভিতর ঢুকে যাই। লোকটির কথামত টেবিলে সে বইও দেখতে পেলাম। ঘড়িতে সময় রাত ১১:৪১ মিনিট। মাত্র ১৯ মিনিটের ভিতর কাজ শেষ করতে হবে। টেবিলের পাশে তলোয়ার ও রাখা আছে। আবার আশ্চর্যজনক একটা সিন ও দেখতে পেলাম। ডা:মাহফুজুর রহমান আশিকের একটি মূর্তি দাড় করানো। পাথর দিয়ে। উনার আস্তানায় নিজের মূর্তি বানিয়েছিলো। যাক,আমিও উনাকে দেখতে ফেলাম। আর যাইহোক, আমার জীবন নরক বানানো লোকটি কেমন, তা তো দেখেছি। আমার পাশের লোকটি বলল,
– মিশন শুরু করো। আমি টেবিলের উপর শুয়ে পড়ি। তুমি জবাই করো আমাকে।
– ওকে, যান।

লোকটি টেবিলে গিয়ে শুয়ে পড়ে। আমিও তলোয়ারটা হাতে নিলাম। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি আর ১৫ মিনিট আছে। সময় অপচয় করা যাবেনা। এদিকে আমার রক্তের পিপাসা পেয়েছে খুব। মাথা ঝিম মেরে উঠলো। হিংস্র হয়ে গেলাম। কুচ করে এক কোপ দিলাম লোকটির গলায়। সঙে সঙে চিত চিত করে রক্ত বের হতে লাগলো। আমি আগে কিছু রক্ত খেয়ে নিজেকে শান্ত করলাম। লোকটি ধড়পড় করতে করতে মারা যায়। সময় আর ১৩ মিনিট আছে। আমি রক্ত হাতে নিয়ে, বইয়ের উপরে মাখতে থাকি। অবেক্ষন মাখার পর বইটি লাল আকার ধারণ করে। সময় আর ১০ মিনিট। তাড়াতাড়ি বইটা হাতে নিয়ে দাঁড়াই। কিন্তু আগুন…….?

ও মাই গড। এখন আগুন পাবো কোথায়। উনি তো আমাকে আগুনের কথা বলেনি। বইটা আবার টেবিলে রেখে উনার পকেট হাতাহাতি করতে লাগলাম। উনার পকেটে কোনো ম্যাচ নেই। আল্লাহ, এখন কি হবে। প্রায় ৪-৫ বার উনার পকেট চেক করলাম। কোনো ম্যাচ নেই। এদিকে সময় আর ৭ মিনিট আছে। ৭ মিনিটের ভিতর বই না পুড়লে তো ড: মাহফুজ বের হয়ে আসবে। হাত পা থরথর করে কাপতেছে আমার। নিজের পকেটও চেক করলাম, আগুন নেই। আর ৬ মিনিট আছে। মাথা ঝিম ঝিম করতে লাগলো,আজকে মনে নিজেও শেষ হবো,আর মাহফুজ ও মুক্তি পাবে। কপাল বেয়ে ঘাম পড়ছে আমার।

তখনি চোখ গেলো মূর্তির উপর। ইয়েস, পাথরের মূর্তি। তলোয়ার নিয়ে, মূর্তির পেটে জোরে জোরে আঘাত করতে লাগলাম আমি। কয়েক কোপ দেওয়ার পর, ৩-৪ টুকরা পাথর পড়ে যায়। আমি আগে দৌড়ে গিয়ে নিজের গায়ের গেঞ্জিটা খুলে ফেলি। এরপর গেঞ্জি মাটিতে রেখে, পাথরের টুকরো ঘষাঘষি শুরু করলাম। সময় আর ২ মিনিট আছে। কি হবে কে জানে। অনেক্ষন ঘষার পর পাথার গরম হয়ে, আগুনের শুলকা মারতে লাগলো। সময় আর ১ মিনিট। আমি ঠাস ঠাস করে কয়েকবার মারার পর,গেঞ্জিতে আগুন লেগে যায়। সঙে সঙে গেঞ্জি তুলে ফু দেওয়া শুরু করি ধীরে ধীরে। সময় আর ৩০ সেকেন্ড।
আগুন ধীরে ধীরে বাড়তে লাগলো। সময় ২০ সেকেন্ট। হটাৎ আগুন পুরো গেঞ্জিতে ধরে যায়। এরপর আমি দৌড়ে গিয়ে বইটা হাতে নিলাম। সময় ১২ সেকেন্ড। টেবিলের কাছ থেকে এসে,আগুনে ফেলে দিলাম বই। ৪ সেকেন্ট আগে বই ফেলেছি। নয়তো আজ গেছিলাম।

বইটা আগুন পাবার সাথে সাথে হুট করে জ্বলে উঠে। নীল রঙের ধোয়া বের হচ্ছে। হয়তো সকল ব্লাক ম্যাজিক পুড়ার ধোয়া। চোখ দুটি বন্ধ হয়ে আসছে ধীরে ধীরে। এরপর হয়ে গেলাম বেহুঁশ।

চোখ মেলে দেখি,আমি জঙলের পাশে রাস্তায় শুয়ে আছি। আমার চারপাশে পুলিশ। পিস্তল ধরে রেখেছে। চোখ মেলে তাদের কিছু বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কেও শুনেনি। পিস্তলের গোড়া দিয়ে, আমার মাথা আর পেট পিঠে ধোলাই করে। খুব কান্না পাচ্ছিলো। নিজের জীবন বাজি রেখে দেশের মানুষ রক্ষা করেছি,আজ দেশ আমার বিরুদ্ধতা করতেছে। আমাকে পিটিয়ে আবার অজ্ঞান করে ফেলে। এরপর জেলে নিয়ে যায়। আদালতে আমি সব সত্য বলেছি, তাও আমাকে ১০ বছর জেল দেয়া হয়েছে। কারণ আমি খুনি। ফাসি দেয়নি,তাও বেশি।
আজ ১০ বছর পূর্ন হয়েছে। তাই জেল থেকে মুক্তিও দিলো। আর ফেসবুক আইডিতে লিখেও ফেললাম, জীবনের অভিশাপ্ত দ্যা ব্লাক বুক এর গল্পটা।

********* সমাপ্ত*******

গল্প- দ্যা ব্লাক বুক ( পর্ব- ০৬ ও শেষ)

লেখক- Riaz Raj

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here