বিষ_করেছি_পান(৬)

0
660

#বিষ_করেছি_পান(৬)

(কপি করা নিষেধ)
রাস্তার পাশে আমিন ফার্মেসি। রিতী বসে আছে বেঞ্চির উপর। হাত দুটো ধরে আছে সোহাগ। সেই হাত ব্যন্ডেজ করছে হাতুড়ি ডাক্তার। ওষুধের যে তেজ! যতবার জলে উঠছিলো। ততোবার ই রিতী চোখ কুঁচকে নিচ্ছিলো। রিতীকে দেখে সোহাগের ভীষণ ভালো লাগছে। রিতী কষ্ট পাচ্ছে দেখে আরো ভালো লাগছে।
— আংকেল আগেই ব্যন্ডেজ করবেন না। আরেকটু ব্যাথা পাবার বাকি আছে।
সোহাগ হাতের ঘড়িটা দিয়ে রিতীর হাতে জোরে বারি দেয়। রিতী ব্যথায় ওমাগো বলে চিৎকার করে উঠে। ডাক্তার হকচকিয়ে বলে উঠে
— আরে আরে কি করছেন?
— আপনি চুপ থাকেন। নেন আবার ওষুধ লাগান।
রিতী ভেজা চোখে সোহাগের দিকে তাকায়। সোহাগের মুখটা শক্ত হয়ে আছে। ঠোঁটের কোনে লেগে আছে বাকা হাসি। ফর্সা মুখটা রিতীর কাছে ভয়ঙ্কর লাগছে। বড্ড ভয়ঙ্কর! ডাক্তার চুপসে গেছে। এতোক্ষণের ধারনা পাল্টে গেছে। রিতীর উপর কেয়ারিং ভাব দেখে ভেবেছিলো মেয়েটা লাকি। কেয়ারিং বয়ফ্রেন্ড পেয়েছে। এবার মনে হচ্ছে মেয়েটা আনলাকি। এক পাষন্ড খারাপ ছেলের কবলে পরেছে। যদিও মুখ দেখে বুঝার উপায় নেই। আজকাল ভালোমানুষী চেহারা কোনটা আর খারাপ মানুষী চেহেরা কোনটা বোঝা দায়! হাতে ঔষধ পড়তেই রিতী আরেকবার চোখ মুখ কুঁচকে নিলো। তা দেখে সোহাগের ঠোঁট জোড়া প্রশস্ত হাসলো। রিতী আড়চোখে দেখলো। সোহাগ একটু অন্যমনস্ক হতেই সামনে বসা ডাক্তারকে আস্তে আস্তে বললো,
— আংকেল আমাকে একটু বাড়ি পৌঁছানোর ব্যবস্থা করে দিবেন? আমি বাড়ি যেতে চাই।
— তোমার বয়ফ্রেন্ড?
রিতী মাথা নাড়ালো। যার অর্থ আমার বয়ফ্রেন্ড না। ডাক্তার যা বোঝার বুঝে গেলো। সোহাগ সিগারেট ধরিয়েছে। রিতীর সামনে ধোঁয়া ছাড়তেই রিতী খক খক করে কেশে উঠলো। নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে তার। ডাক্তার বললো,
— ভাই একটু বাইরে গিয়ে স্মোক করে আসেন।
সোহাগ কথা বাড়ালো না। রিতীর দিকে তাকিয়ে মেকি হাসলো। ধপ ধপ পা ফেলে ফার্মেসির সামনে এক কোনায় দাঁড়িয়ে স্মোক করতে লাগলো।

রিতীকে ধরে কোন মতে রিকশায় বসিয়ে দিয়েছে আমিন ডাক্তার। রিকশা টান দিতে বলেই পিছু ফিরতে দেখে সোহাগের মুখটা ঠিক তার মুখের উপরে। হাইটে ছোট হওয়ায় একটু লম্বা মানুষ কাছে আসলে ঘাড় বাঁকিয়ে চোগে চোখ রাখতে হয়। সোহাগ ভ্রু নাচায়।
— কি? হু? খুব সাহস না?
— মেয়েটা বাড়ি যাবে তাই রিকশায় উঠিয়ে দিলাম।
— আপনের গার্লফ্রেন্ড লাগে? হু? আমার নিয়ে আসছি দেখেন নাই? দরদ উথলে ওঠে তাইনা? কথা কসনাকে? ঐ ?
কলার টেনে ধরে সোহাগ। দোকানের কর্মচারী বেরিয়ে আসে। আশেপাশের মানুষ বেরিয়ে আসে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। যারা সোহাগকে চিনতো তারা ফোন দেয় রমিজ উদ্দিনের কাছে। রমিজ উদ্দিন নিজে আসেনা। পাঠিয়ে দেয় সোহাগের সাঙ্গপাঙ্গকে। পাঁচ মিনিটে ই তারা হাজির হয়। সোহাগ কে ছাড়িয়ে নিতেই সোহাগ শার্ট ঝাড়া দিয়ে সামনে যা পায় তাই লাথি মেরে বাইকের চাবি নিয়ে বেরিয়ে আসে। রিতী গলির মোড়ে পৌছোনোর আগেই পৌঁছে যায় সোহাগ। রিকশাওয়ালা কে ধমক দিতেই রিকশাওয়ালা রিকশা থামিয়ে এক সাইডে গিয়ে দাঁড়ায়। রিতীর দিকে আঙুল তুলে বলে,
— খুব সাহস না? ঐ নাম। রিকশা থেকে নাম। নাম বলতাছি।
রিতী শক্ত হয়ে বসে আছে। সে নামবে না। পেয়েছেটাকি? এইভাবে রাস্তায় একটা মেয়েকে হেনস্তা করবে কেউ কিছুই বলবেনা? সত্যিই বলবেনা। এলাকার সবাই এই বখাটেকে হারে হারে চিনে। কেউ কিছু বলতে এলে সোজা গিয়ে কলার চেপে ধরে। বড় ছোট কেউ পরোয়া করেনা। আস্ত বেয়াদব ছেলে একটা। রিতী নিজের পজিশন দেখে। এদিকটায় তার কলোনির কেউ বসেনা। আরেকটু এগিয়ে যাওয়ার পর রিকশা থামালেই হতো। সেখানে কলোনির মানুষ গুলোর আনাগোনা বেশ চলে। সেখানে কিছু বলতে পারতোনা। সোহাগ আবার গর্জে উঠে। রিতী ভয় পায়না। আজ তার ভয় নেই। এতো এতো শকড পাবার পর ভয় কাজ করার কথা না। অনুভুতি রা সব উড়ে গেছে। প্রথমে একটা ছেলেকে এভাবে মারলো। তারপর রিতীকে টানতে টানতে ফার্মেসিতে নিয়ে গেলো। ব্যথা হাতে আরো ব্যথা দিলো। ডাক্তারের সাথে ঝামেলা বাধালো। এখন রাস্তায় এসে বখাটে গিরি করছে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে টিজ করা সিগারেট খাওয়া এসব কমন ব্যপার ছিলো। আজ একসাথে এতো রুপ রিতীকে অনুভুতি শূন্য করে দিয়েছে। এর জন্য ই বুঝি লোকে বখাটে সোহাগ বলে। এতো দিন শুনে আসছে সোহাগ বখাটের দল এটা করেছে ওটা করেছে কিন্তু আজ নিজের চোখে দেখছে কি লেভেলের খারাপ ছেলেটা।
রিতীর নামার কোনো ইচ্ছে নেই দেখে সোহাগ লাফ দিয়ে রিকশায় উঠে বসে। ব্যান্ডেজ করা হাত ধরে বলে,
— গইরামি করস? গইরামী ছুটাইয়া ফালামু। আমার উপর মাথা ঘোরাস। এতো সাহস তোর হইলো কোই থেকে? কথা কসনাকে? ঐ ?
রিতীর হাত ধরে ঝাকি দেয়। রিতীর আত্মায় পানি চলে আসে। হাত সরিয়ে নেবার চেষ্টা করে,
— আপনি কি চান কথাটা আমার বাবার কানে যাক?
— মুখ সেলাই করে দিমু একেবারে। কলেজে কি হয়ছে তুই দেখস নাই।
— আমি এখনের কথা বলছি। দেখেন আশেপাশের মানুষ দেখে দেখে যাচ্ছে।
— তো কি হয়ছে?
— আপনি আমাকে ডিস্টাব কেনো করেন সোহাগ ভাই? আমি আপনার কি ক্ষতি করছি?
সোহাগ রিতিকে ছেড়ে দেয়। রিতীর চোখে চোখ রেখে বাজে ইশারা করে। মুহুর্তেই রিতীর শরীরের সমস্ত লোম দাঁড়িয়ে যায়। মনে হয় কোন নর্দমায় ঢুবে আছে। দিক বেদিক চিন্তা না করে একলাফে রিকশা থেকে নেমে পড়ে। তর্জনী আঙ্গুল তুলে শাশিয়ে বলে,
— আপনি আর জীবনেও আমার সামনে আসবেন না।আরেকবার যদি আমাকে ডিস্টার্ব করেন আমি নিজে আপনার কথা বাবাকে বলে দিবো। তখন দেখবেন কি হয়।
— শ্বশুর বাবা আমার কচুটিও কাটতে পারবেনা।‌ আমিও দেখে নিবো।
রিতী একমুহুর্ত দাঁড়ায় না। দৌড়েই বাড়ি চলে আসে। বাবাকে আজ বিচার দিয়েই ছাড়বে। তারপর যা হবার হোক। বাবা মার রুমে গিয়ে কাউকে পায়না। মা মা বলে ডাকতে ডাকতে থাকে। ছুটির রুম থেকে রুম্পা সাড়া দেয়। রিতী সেখানে গিয়ে দেখে এলাহি কাণ্ড। শাড়ি, গহনা, জামা কাপড় সব প্যাকিং করা হচ্ছে। ছুটি ও মায়ের সাথে সাথে গুছিয়ে দিচ্ছে। তমাল ফোনে মনযোগ দিয়ে গেমস খেলছে। ছানোয়ার রিতীকে দেখেই চেয়ার থেকে উঠে আসে। রুম্পা তাড়াতাড়ি এসে রিতীর হাত দুটো ধরে। আতঙ্ক স্বরে বলে,
— ওমা! এ সর্বনাশ ঘটালি কখন! রিতীর বাবা দেখো এর জন্য ই আমার মনটা এতোক্ষণ কু গাইছিলো। আমার কান্না তো তুমি বিশ্বাস করলেনা।
— তুমি কেদেছো? দেখেতো বোঝা যাচ্ছে না। কাজল একটুও ছত্রেনি।
— চুপ কর। কিভাবে একাজ ঘটিয়ে এলি। তোর বাবা তো সারা শহর তোকে খুঁজে হয়রান হয়ে ফিরলো।
— এতো কম সময়ে!
ছানোয়ার রুম্মাকে ধমকে বললো,
— চুপ করতো। যত্তসব ভিত্তিহীন কথা সব এই মহিলার মুখ থেকেই বের হয়।
রিতীকে আদরের সুরে বললো,– আসো তো মা।
রিতীকে নিয়ে বিছানায় বসলো। হাত দুটো দেখে জিজ্ঞেস করলো,
— ব্যথা পেলে কিভাবে?
— পরে গিয়ে।
— সাবধানে চলবে। জানোতো কত চিন্তায় ছিলাম? তোমার কলেজ রোড়ে একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে। ছেলেটাকে এভাবে মেরেছে যে হসপিটালে আইসিউ তে ভর্তি করানো হয়েছে। বাঁচবে কিনা মরবে আল্লাহ জানেন। তোমার কলেজে গিয়ে দেখি তুমি নেই। আশেপাশে খুঁজেও পায়নি।
— ছেলেটার কি অপরাধ বাবা?
— ড্রাংগসের সাথে নাকি জড়িত। সেখানেই কি একটা ঝামেলা হয়েছে। ওসব কথা বাদ দাও। তাড়াতাড়ি রেডি হও। ঘন্টা খানেক পর বাস ছাড়বে।
— কোথায় যাচ্ছি আমরা?
রুম্পা খুশিতে গদগদ করতে করতে বলেন,
— বিয়েতে যাচ্ছি। তোর লেবু মামার কথা মনে আছে? বাধনের মামা যে । পাঁচ বছর এখানেই ছিলো।
— হ্যা।
— তোর লেবু মামার বিয়ে। হুট করেই ঠিক হয়ে গিয়েছে। কাল গিয়ে কালই বউ তুলে আনবে। রাতের মধ্যে পৌঁছতে হবে। তোকে খুঁজে পেলে তো দুপুরের বাসেই রওনা দিতাম। তোদের ছাড়া নাকি তোদের মামা বিয়েতেই বসবে না।
রিতী ছুটির দিকে তাকায়। ছুটি চোখ টিপে দেয়। কুর্তির কলার উঁচিয়ে বলে,
— তোদের না হয়ে ছুটির হবে বুঝলে? ছুটি ছাড়া লেবু মামা বিয়ে করবে নাকি?
— সেটাই তো বলি। যা গলায় গলায় ভাব তোদের। কিন্তু আমি যাবোটা কিভাবে? হাত দুটো অকেজো করে ফেলেছি।
— তুমি কি হাত দিয়ে হাঁটবে নাকি পা দিয়ে হাঁটবে?
— কাজ কিভাবে করবো?
— কাজ কেনো করবো? আমরা তো মজা করতে যাবো, নাচবো গাইবো আর খাবো।
— সেজন্য আমার হাত দুটো লাগবো।জামা পড়তেও লাগবো। নাচতেও লাগবো। খাইতেও লাগবো।
— তার জন্য নিশ্চয় পার্মানেন্ট হেল্পার ও লাগবো? বলবো নাকি? তাহাকে?
ছুটি ফের চোখ টিপে দেয়। রিতী ছুটির উপর চেঁচিয়ে উঠে।
— খবরদার আর একটা কথা বলবিনা। তুই জানিস ঐ বেটা গুন্ডাটার জন্য আজকে আমার হাতের এই অবস্থা?
— কিহ ? আবার?
রিতী ছুটিকে খুলে বলেই ফুফাতে থাকে। ছুটি রিতীর চোখের জল মুছে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে দৌড় দেয়। শিপ্রুদের বাসায় এসে শিপ্রুর রুমে হুড়মুড় করে ঢুকে। শিপ্রু মৃদু হেসে বলে,
— আস্তে ঘুর্ণিঝড় আস্তে।
— শিপ্রুদা একটা কান্ড ঘটে গেছে। ঐ সোহাগটা আবার আমার আপুর পিছু লেগেছে। আজ তো আপুর হাতদুটোও থেঁতলে দিয়েছে।
— কি বলিস! বেটাকে এতো বড় একটা ডোজ দিলাম তাও বেটা আপুর পিছু ছাড়লো না?
— না। আমিতো ভুত ই সেজেছিলাম। স্বীকারোক্তি তো তোমরা নিয়েছো। স্বীকারোক্তি দেয়নি?
শিপ্রুর মুখটা চুপসে যায়। বিরবিরিয়ে বলে,
— সত্যিইতো স্বীকারোক্তি তো নেয়নি। আমরা তো বেটার অবস্থা দেখেই ফুল ফর্মে উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছি।
ছুটির কন্ঠে কান্না জুড়ে এলো,
— তাহলে এই প্ল্যানের মানে টা কি?

চলবে,

লাবিবা_তানহা_এলিজা~

ছবিয়াল: তরু

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here