বিষ_করেছি_পান(৫)

0
494

#বিষ_করেছি_পান(৫)

(কপি করা নিষেধ)
সকাল আটটা। ছুটি এখনো ঘুমে। মেয়েটাতো এতোক্ষন ঘুমায় না। আজ এতো ঘুমুচ্ছে কেনো? রুম্পা রিতীকে ডেকে ছুটির রুমে পাঠিয়ে দিলো। রিতী এসেই ছুটিকে তাড়া দিলো।
— এই ছুটি উঠ উঠ স্কুলে যাবিনা? নয়টা বাজতে চললো।
— চলুক।
— তোর ক্লাস কয়টায়? সাড়ে দশটা থেকে না ক্লাস? ভুলে গেলি?
— গেলাম।
রিতী ছুটির দিকে এসে মাথা নিচু করে। ছুটি বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। ঘুমের মধ্যেই তাহলে কথা বলছে। কাধ ধরে রিতী ঝাঁকায়। রিতীকে ধাক্কা দিয়ে ছুটি পাশ ফিরে শোয়। নাহ!একে এভাবে তুলা যাবেনা। পানি মেরে তুলতে হবে। রিতী বাথরুমের দিকে যায়। পায়ে কি যেনো একটা বাজে। শাড়ি! লাল পাড়ের সাদা শাড়ি। কার শাড়ি? এমন শাড়ি তো মায়ের নেই। শাড়িটা হাতে তুলে নেয়। নাকে একটা বিচ্ছিরি গন্ধ লাগে।সাথে সাথে রিতী শাড়িটা ফেলে দেয়। ছুটির দিকে চেঁচিয়ে বলে,
— শাড়ি কার?ইস কি গন্ধ! গোবরের গন্ধ আসছে শাড়ি থেকে আর তুই এটা ঘরে তুলে রেখেছিস? কোন ডাস্টবিন থেকে তুলে এনেছিস?
ছুটি আড়মোড়া ভেঙে বসে। বিরক্তি নিয়ে বলে,
— ইস আপু ঘুমাতে তো দিবে। সাত সকালে ষাঁড়ের মতো চিল্লাচ্ছো কেনো? এমনিতেই রাতে ঘুমাতে পারিনি,এখন না ঘুমালে সারাটা দিন আমার গচ্চা যাবে।
— সারারাত ঘুমাস নি মানে? তুই তো শুয়ে পড়লেই ঘুমাস। কি করেছিস সারা রাত?
রিতী সন্দেহভাজন দৃষ্টিতে তাকায়। আঙুল দিয়ে শাসিয়ে বলে,
— ছুটি! কি করেছিস বল। গোবর কোই থেকে মাখিয়ে নিয়ে এসেছিস। এই এদিকে আয় তো। উঠ।
রিতী ছুটির হাত ধরে টেনে উঠায়। ছুটির কাছে আসতেই গোবরের সেই গন্ধ টা পায়। চিৎকার দিয়ে বলে,
— ছুটি!তোর শরীর থেকেও গোবরের গন্ধ আসছে। তুই গোবর নিয়ে সারারাত বিছানায় কাটিয়েছিস ছিহ!
ছুটি আহত দৃষ্টি তে শাড়িটির দিকে তাকায়। তারপর নিজের দিকে। জামার কোনায় ছোট ছোট গোবরের ফোটা দেখা যাচ্ছে। কাল রাতে যা করেছে! দৌড়াতে গিয়ে গোবরের কাঁদিতে একটু পড়ে গিয়েছিলো। ক্লান্ত দেহ নিয়ে আর ফ্রেস হওয়া হয়নি। শাড়িটা কোনমতে খুলে বিছানায় ঝাপ দিয়েছিলো। একঘুমে এইযে উঠলো। রিতীর দিকে তাকিয়ে ঢুক গিললো। রিতী যা বোঝার বুঝে গেলো। কোন মতে জিজ্ঞাসা করলো,
— রাতে বাইরে ছিলি?
ছুটি অপরাধীর মতো তাকালো। কি বুঝে যে সব বুঝে যায় আপুটা ছুটির মাথায় আসেনা। এখন কোথায় ছিলি কি করছিলি না জিজ্ঞেস করলেই বাঁচা যায়। করুন গলায় বললো,
— আপু সরি।
রিতীর গলার রগ ফুলে উঠলো। চোখ বন্ধ করে উপর দিক তাকিয়ে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করলো। কতটুকু পারলো জানা গেলো না। তবে বের হবার আগে ঝাল মিটিয়েই গেলো। গোবরের শাড়িটা ছুটির মুখের উপর ছুড়ে — এখনি বিছানার চাদর সহ পরিষ্কার করবি। আমি কিচ্ছু সাফ করবোনা তোর। বলেই ঘট ঘট করে চলে গেলো। ছুটি নাকের উপর থাকা শাড়িটায় একটু নাক টানলো। ওক ওক করতে করতে বাথরুমে ছুটলো। পেটের নাড়িভুঁড়ি যেনো সব বের হয়ে আসার জোগাড়। ওমা কি গন্ধ!

ছাদে কাপড় মেলছে ছুটি। আজ বাধ্য হয়ে বেডশিট সহ তার ধুইতে হয়েছে। যে ধুইতে বলেছে তাকেও ছুটি মনে মনে ধুয়ে দিচ্ছে। একেই বলে যার জন্য করে চুরি তাকেই বলে চোর। ওরে আপুরে! তোর জন্য ই তো এতো বড় একটা অপারেশন করলাম। বুঝলিনারে বুঝলিনা! এই ছুটির ভালোবাসা বুঝলিনা। বক বক করতে করতেই চোখ পড়ে দুই বিল্ডিং পর সুন্দর বারান্দাটির দিকে। তাকিয়ে থাকতে থাকতেই চেঁচামেচি শুনতে পায়। ছাদে কেউ আছে। ছুটি ওড়নাটা কোমড়ে বেঁধে নেয়।একছাদ থেকে অন্য ছাদে লাফ দেওয়া তার জন্য ওয়ান টু ব্যপার। রতনদের বিল্ডিং এর ছাদে চলে আসে। এই ছাদ থেকে বাধনদের ছাদ একতলা নিচু তাই পুরোটাই দেখা যায়। ছাদের কিনারায় পর পর তিনটা জবা গাছ। তার মাঝখান দিয়ে উকি দিতেই ছুটির চোখ আটকে যায়। দেহ থমকে যায়। বুকের ভেতর ঢিপ ঢিপ করতে থাকে। দৃষ্টি কোন ভাবেই সংযত হতে চায়না। মাথাটা আরো ভেতর দিকে ঠেলে দিতেই ভেজা চুল গুলো গাছের ডালে আঁটকে টান পড়ে। চৌঠা ঠোঁটে আহহ শব্দ বেরিয়ে আসে। চুল ছাড়ানোর কোন ভাবগতিই দেখা যায়না। সে একধ্যানে শক্ত পোষ্ট পুরুষালি শরীরটাকে দেখতে ব্যস্ত। ছাদে বসে এভাবেও গোছল করা যায় ছুটির ধ্যানে ছিলোনা। দিক বেদিক ভুলে বসেছে সে। লোমকূপের ধার ঘেঁষে বেয়ে চলা জলের গতি দেখে ছুটির গলা শুকিয়ে যায়।শুকনো ঢুক গিলে বারবার। তবুও বেহায়া নজর সরাতে পারেনা।

বাঁধনের বার বার মনে হচ্ছে তাকে কেউ দেখছে।‌কিন্তু কে দেখবে? আশেপাশে দুটো কাক ছাড়া কাউকেই চোখে পড়ে না। ঝিমার দিকে দেখে সে সানন্দে ফুল গাছে পানি দিচ্ছে। একবার ও বাঁধনের দিকে তাকাচ্ছে না। বাঁধন ঝিমাকে ডেকে বলে,
— দেখতো ঝিমা কেউ আছে নাকি আশেপাশে?
ঝিমা আশেপাশে চোখ বুলিয়ে জবাব দেয়,
— নাতো ভাইয়া। কেউ নেই। কেনো?
— কিছুনা। তোর পানি দেওয়া শেষ হলে তাড়াতাড়ি রেডি হ। তোকে নামিয়ে তারপর অফিসে যাবো।

ঝিমাকে নামিয়ে যায় বাঁধন। ঝিমা ক্লাসে গিয়ে দেখে ছুটি অলরেডি বসে আছে। তাও আবার চোখ বন্ধ করে। পিঠে একটা চাপড় দিতেই ছুটি চোখ খুলে। ঝিমার দিকে কটমট করে তাকায়।
–কিরে ভুতুনি?দিন দুপুরে ঘুমাস কেনো?
— ঘুমাইনা। সপ্ন দেখি।
— কি সপ্ন?আমাকে নিয়েও দেখ।
— হুম। সপ্নে তুইও আছিস।
— ওয়াও ইন্টারেস্টিং। বল বল।
ছুটি ঝিমার দিকে ঘুরে বসে। বড় বড় করে তাকিয়ে বলে,
— দেখতো চোখের কোন পরিবর্তন হয়েছে নাকি?
–ঠিকিতো আছে।
— উহু। ঠিক নেই। আমার চোখ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দিন দিন ছানি পড়ছে। এই ছানিটা একটা মানুষের আকৃতির। পুরুষ মানুষের। জানিস সেই পুরুষের বুক ভরা লোম!
— পাগল টাগল হলি নাকি?
— যদি কখনো হয়ে যাই তাহলে একমাত্র তুই চিকিৎসা করবি বুঝলি? তুই হচ্ছিস আমার জানের জিগার বান্ধুবী। আমি পাগল হলে একমাত্র সেই পুরুষ ব্যতীত তোকেই এলাও করবো। তোর বাড়িতে আস্তানাও গাঢ়বো। রেডি হ যদি পাগল টাগল হয়েই যাই।
— বুঝছি আজকে তোর ঘুম কম হয়ছে। চুপচাপ ঘুমা। স্যার আসলে বলবো তোর শরীর খারাপ।
— বিশ্বাস করবে?
— ঝিমা বললে সব বিশ্বাস করবে।
ছুটি তাই করে। বালিশে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পরে ।কেউ তাকে ডিস্টাব করেনা। ঘুম ভাঙে বিকাল চারটায়।তাও আবার ছুটির বেলে। মচমচা শরীরটাকে টেনে ঝিমার পিছু পিছু বাইরে আসে। ছুটি দেখে বাঁধন এসেছে ঝিমাকে নিতে। কাছে কুলে অফিস থাকলে এই এক সুবিধা। বাথরুমের কথা বলেও বাইক দিয়ে বোনকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া যায়। ঝিমা হাত নাড়িয়ে বিদায় নিয়ে ফুস করে চলে যায়। ছুটি ধীর পায়ে রিকশার দিকে যায়। ভেতরে ভেতরে অজানা এক কষ্ট ভর করে।কি কষ্ট ছুটি জানেনা।
___________________
— আপু তুমি বিয়ে করবে কবে?
রাতের খাবার শেষে পানি খাচ্ছিলো রিতী। হুট করে ছুটির এমন প্রশ্নে মুখের পানি মাথায় উঠে যায়। খক খক করে কাশতে থাকে। রান্না ঘর থেকে রুম্পা দৌড়ে আসে। কি হলো!কি হলো! আস্তে খাবিনা? বলে দৌড়ে আসে। রিতীর পিঠে হাত বুলিয়ে দেয়। ছুটি উদাস চোখে তাকিয়ে থাকে। কোন হেলদোল নেই। রিতী চোখ রাঙায়। যার অর্থ এসব কি ধরনের কথা?অথচ মুখে কিছুই বলতে পারেনা। রুম্পা বেগম স্বয়ং উপস্থিত থেকে ধীরে ধীরে রিতীকে পানি খাওয়ায়। পরে না আবার পানি খেতে গিয়ৈ তালুতে উঠিয়ে ফেলে। রিতীকে রুমে পাঠিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পরে পা টিপে টিপে তমাল রিতীর রুমে গিয়ে ঢুকে। রিতী তখন মাথা ঝুমিয়ে দুর্দান্ত এক পড়া শুরু করেছে। তমাল গিয়ে রিতীর গলা জড়িয়ে ধরে। রিতীর পড়ার গতি কমে আসে। তমাল কানে মুখ লাগিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,
— বড়াপু তুমি সত্যি বিয়ে করবে?
রিতী তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে। রাগটা ঝাড়তে গিয়েও থেমে যায়। পরেনা তমাল ভয় পায়। আর কাছেই আসবে না। মায়ের মতো বলবে বড়াপু রাক্ষসী,কাছে যাবো না। রিতী নরম হয়ে বলে,
— আমার কি বিয়ের বয়স হয়েছে?
তমাল ঠোঁট বাঁকিয়ে কিছুক্ষণ চিন্তা করে বলে,
— জানিনা।
— আমাদের মধ্যে বড় কে?
— বাঁধন ভাই।
— হুম। আগে বাঁধন ভাইয়ের বিয়ে হবে তারপর আমার বিয়ে হবে। যা ঘুমা।
–তোমার কাছে থাকবো।
— সুয়ে পর।
রিতী আবার পড়ায় মনোযোগ দেয়। কাল তার প্রাইভেটে এক্সাম আছে। পড়তেই হবে। ছুটিকে নাহয় পরে দেখা যাবে।

রিতীর এক্সাম শেষ হতেই সূর্য পশ্চিম দিকে পথ ধরেছে। পড়ন্ত বিকেলটা বড্ড বেশি ভালো লাগছে। হাতে যথেষ্ট সময় আছে। রিতীর হাটতে ইচ্ছে করছে প্রচুর। ক্যাম্পাসের রাস্তা টুকু আজ হাঁটবে বলে ঠিক করে। রাস্তার উপর কদম পড়ে আছে। যেগুলো আজ পড়েছে কি সুন্দর দেখাচ্ছে।অথচ কাল যেগুলো পড়েছিলো পচে কাঁদা কাদা হয়ে আছে। পরিস্কারের মামাটা ঠিক মতো পরিষ্কার করেনা। স্যারের কাছে ব্যপারটা তুলে ধরতে হবে। মাঝামাঝি যখন এসেছে তখন অনেক গুলো পায়ের শব্দ পায়। পেছন থেকে যেনো আসছে। কাউকে তাড়া করলে যেমন ঠিক তেমন। সামনে দিয়ে একটা বাইক চলে যায়। আর তার পিছনেই রিতীকে ওভারটেক করে ছুটে কিছু ছেলেপেলের দল। রিতী পিচের উপর থুবড়ে পড়ে। হাত দিয়ে কোনমতে থুতনিটা আটকে নেয়। আহহ করে উঠে জোরে। আওয়াজটা কারো কানে পৌঁছায় না। উঠতেও পারেনা। হাতে বেশ ব্যথা পেয়েছে। থুবড়ে বসেই দেখে বাইকের পেছনের ছেলেটাকে টেনে ধরে রাস্তার উপর ফেলা হয়। ড্রাইভারটা পালিয়ে যায়। ছেলেটাকে কয়েকটা পা একসাথে পিষে নেয়। ছেলেটার আত্মচিৎকারে রিতীর কানে তালা লেগে আসে। আর তাদের হেড যে ছেলেটাকে দেখা যায় তার ঠোঁটের কোনায় সেই বিখ্যাত বেনসন, চোখে কড়কড়ে নিল রোদচশমা, চাপ দাঁড়িতে মোড়ানো রক্তিম একজোড়া গাল।
চলবে,

তোমরা এতো কিপ্টুস কেনো? নো রিয়েক্ট নো কমেন্ট! উপসস!

লাবিবা_তানহা_এলিজা~

ছবিয়াল: তরু

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here