#বিষ_করেছি_পান(১৯)
(কপি করা নিষেধ)
ভাঙাচোরা দেহ আর ভাঙাচোরা মন দু দিকে গ্ৰাস করছে দুজন মানুষকে। দেহের সাথে প্রতিনিয়ত লড়াই করে যাচ্ছে বাঁধন। চোখে মুখে সপ্ন তার স্বাভাবিক জীবন লাভ করার। আগের মতো সুস্থ হয়ে উঠার। সুমি অচেতন। তার চেতনা কবে ফিরবে তা জানা নেই। এই খবরটা বাঁধন কে ঝিমা দিয়েছে। ব্যাথিত হয়েছে বাঁধন। উৎফুল্ল একটা মেয়ে কত সপ্ন চোখে নিয়ে তার হাত ধরে নতুন জীবনের সূচনা করতে চেয়েছিলো আজ যে মরার মতো পড়ে আছে। তার জীবনজ্ঞান বলতে কিছুই নেই। অপারেশনের আগে ছুটিকে দেখেছিলো বাঁধন। নিভু নিভু চোখে কান্নারত মূখটা আবছা মিলেছিলো। এরপর আর হসপিটালে পা মাড়ায়নি।রিতী, তমাল,রতন,মলি, শিপ্রুর দেখা মিললেও দলের নেত্রী ছুটির দেখা মিলেনি। কথায় কথায় জিজ্ঞেস করলে রতন মুখ ভেঙায়।টেনে টেনে বলে, — বিদ্যাসাগরিনীর পড়াশোনা আছে। সে আসতে পারবেনা। তার অনেক পড়া।
বাঁধনের চোখ উপড়ে।
— বলিস কী? সিরিয়াস কথা নাকি? আমাদের ছুটির সুমতি ফিরেছে!
— কিসের সুমতি? বলো ভীমরতি ধরেছে। আমাদের সাথে আগের মতো খেলেনা। কথা বলেনা দুষ্টুমি করেনা। নানী নানী ভাব ধরে বসে থাকে।
— আসলেই….?
বাঁধনের কন্ঠে অবিশ্বাস ভাব। ডাক্তার চেক আপ করে গিয়েছে। বাঁধন এখন প্রায় সুস্থের দিকে এগোচ্ছে। হাত পা নাড়াতে পারে। যদিও এক দু মিনিটের বেশী সময় নয়। অবশ হয়ে আসে। এক ই হসপিটালে থেকে তাই সুমিকে দেখতে যেতে পারেনা। ডক্তর বলেছে আরেকটু উন্নতি হলে হুইল চেয়ারে বসতে পারবে। তখন সুমিকে দেখতে যেতে পারবে। ঝিমার কাছে জানতে পারে এই দুই মাসেও মেয়েটা রেসপন্স করেনি। কষ্টে বাঁধনের চোখ বুজে আসে। বিয়ে করেছে সে দু মাস হতে চললো। হয়নি সংসার হয়নি একান্তে বসে দুটো কথা হয়নি দুজন দুজনকে বোঝাপড়া। দু’জনেই দুজনের জীবনযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে একই বিল্ডিং এ শুয়ে শুয়ে। ঝিমার পরিক্ষা চলছে। তাই মেয়েটা আসতে পারেনা। ঝিমা ছাড়া সুমির খবর কেউ বাঁধনের নিকট পৌঁছায় না। মা বাবাকে জিজ্ঞেস করা মাত্রই চোখ রাঙায়। দিন দিন সুমির প্রতি বিরক্তিভাবটা যেনো বেড়েই চলেছে। বাঁধন আর ব্যপারটা সহ্য করতে পারেনা। প্রতিবাদী কন্ঠে অভিযোগ করেই বসে,
— মা তোমরা কেনো শুধু শুধু মেয়েটার প্রতি নিগেটিভ মনোভাব পোষণ করছো? আজকের যে অবস্থা তা তো আমাদের হাতে নেই। সব কিছু আল্লাহর হাতে। ভাগ্য ছিলো বলেই হয়েছে। মা সুমি আমার স্ত্রী তোমার পুত্রবধু। আমাদের বাড়ির বউ। একদিন না একদিন ঠিকই রেসপন্স করবে ও দেখো। তখন তোমাদের এই মনোভাব ঠিক ই পরিবর্তন করে ফেলবে।
বীণা বাঁধনের মাথায় হাত রাখে। কপালে আদর দিয়ে বলে,
— তুমি যেমন ভাবছো তেমনটা কিছুই নয় বাবা। কারো উপর আমাদের কোন রাগ নেই। সুমির উপর
তো নয়ই।ভাগ্য কথা বলে। কিন্তু বাবা ভাগ্য যে চায়না তোমরা দুজন একসাথে থাকো। তাইতো তোমার থেকে সুমিকে আলাদা করে দিয়েছে। তুমি আর সুমির কথা ভেবোনা বাবা। কটা দিনের ই তো পরিচয়। ভূলে যাবার চেষ্টা করো।
— মা এটা কি বলছো তুমি? সুমি আমার ওয়াইফ।
— বেশিদিন থাকবেনা। বাবা জেদ করেনা। সুমি বাঁচবে কিনা আমরা কেউ জানিনা। একটা অনিশ্চয়তায় থেকে আমার ছেলে কষ্ট পাক সেটা আমি চাইনা। তুমি যতো ওকে ভূলে থাকার চেষ্টা করবে ততোই তোমার জন্য ভালো হবে।
— এতোটা স্বার্থপর কিভাবে তুমি হতে পারো মা?একটা মেয়ে যে আমার ওয়াইফ সে মৃত্যুর মুখে। কোথায় তার জন্য দোয়া করবে সবাই যেনো তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরে আসে তা না তুমি তাকে ভূলে যেতে বলছো। এটা কিভাবে বলতে পারো তুমি মা?
— শান্ত হও বাঁধন। এতোটা হাইপার হয়ো না। তুমি সুস্থ নও।
— আমার কথা ভাবছো অথচ সুমির কথা ভাবছো না। আমি যেমন তোমার জন্য ইমপর্টেন্ট। ঐ মেয়েটাও ওর ফেমেলির জন্য ইমপর্টেন্ট।
— হ্যা সেটাই। ঐ মেয়েটার জন্য ওর ফেমেলি আছে। আমাদের ইমপর্টেন্সের কোন প্রয়োজন নেই।
— ও এখন আমাদের ফেমেলি মেম্বার মা।
— হবার কথা ছিলো। হয়নি তো।
— মা…
— আর একটা কথা শুনতে চাইনা। আমি বাড়ি যাচ্ছি। একটু পর তোমার বাবা আসবে। ঘুমানোর চেষ্টা করো।
— সেটা ছাড়া আমার কি কাজ?
বীনা উত্তর দেয়না। গট গট করে পার্স হাতে বেরিয়ে যায়। বাঁধন দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। কবে সুস্থ হবে? কবে সুমির কাছে যাবে? হসপিটালের বেডে শুয়ে এসব আর ভালো লাগছেনা।
ছুটি স্কুল থেকে ফিরেছে। রিতীকে না দেখে মাকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারে রিতী ফেরেনি এখনো। তাই সে গিয়ে রুমে ঘুমিয়ে পড়ে। আজকাল যখন ইচ্ছা তখনি ঘুমিয়ে পড়ে । রিতীই এখন ছুটির অবসরের সঙ্গী। খেলার সাথীদের সাথে মিশতে মন চায়না। রিতী যতক্ষন বাসায় থাকে রিতীর পাশে পাশেই ছুটি থাকে। রিতী পড়তে বসলে গা ঘেঁষে চুপচাপ বসে থাকে। ইচ্ছে হলে নিজে পড়ে। ছুটির মনের অবস্থা রিতী বুঝে। তাই সেও চেষ্টা করে পড়া না থাকলে ছুটির সাথে নানান বিষয় তুলে ছুটিকে ভুলিয়ে রাখতে। ছুটির মনের গভীরতা রুম্পা ঠিক ই বুঝতে পারে। মা মেয়ের মুখ দেখলেই বলে দিতে পারে মেয়ের
কি অবস্থা। সেখানে ছুটির হটাৎ মিইয়ে যাওয়া রুম্পা মেনে নিতে পারেনা। কি হয়েছে জানার জন্য বহুবার চেষ্টা করে। ছুটি কোন উত্তর দিতে পারেনা। বরং মায়ের রাগ গুলো হটাৎ হটাৎ পিঠে ধুম ধাম পড়ে।রিতী বাঁচিয়ে নেয় ছুটিকে। ছুটি কে নিজের সাথেই রাখে। স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে।ছুটিও আগের থেকে অনেক বেটার । তা দেখে রুম্পা শ্বাস ফেলে।
তমালকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেওয়া হয়েছে। একদিন ছুটি নিয়ে যায় তো একদিন রিতী স্কুলে নিয়ে যায়। আজ রিতীই স্কুলে নিয়ে যাচ্ছে। ঘড়িতে ৬.৪৫। সাতটা সময় স্কুলে পৌঁছিয়ে দিতে হবে। শীত সকালে চারিদিকে ঘন কুয়াশার চাদর। তমালের মর্নিং স্কুল হওয়ায় সকালের ঘুম হারাম সবার। ভেজা পিচঢালা রাস্তায় হাঁটছে রিতী আর তমাল। সোডিয়াম লাইট গুলো এখনো জ্বলছে। রাস্তায় দুটো কুকুর এদিক ওদিক খাবারের জন্য মাটিতে শুকে শুকে ঘুরাঘুরি করছে।
তমাল একটু পর পর লাফ দিচ্ছে। আবার রিতীর হাত ধরে ঝুলে পড়ছে। রিতী রাগ দেখায় চোখ রাঙিয়ে। তমাল আবার একই কাজ করে। রিতীর বকা খেয়েও কাজ হয়না। ভাই যে কথা শোনার নয় সেটা রিতী ভালো করেই জানে।ছোট বেলায় সেও নাকি বাবার সাথে একই কাজ করতো। হাত ধরে স্কুল ব্যাগ সমেত ঝুলে পড়তো। বাবা শক্ত সামর্থ্য মানুষ তাই নিতে পেরেছে। রিতীর কি এতো শক্তি আছে? বাবার কাছে বিচার দিতে গেলে উল্টো রিতীর কর্মকাণ্ড গুলোর কথা তুলে।সেসব শুনেই তমাল ডোন্ট মুডে চলে। রিতী রাগ ধরে রাখতে পারেনা। মুচকি হেসে বলে,
— বাঁদর।
তমাল রিতীর দিকে তাকিয়ে দাঁত বের করে হাসে।
তমালকে স্কুলের গেইটে দিয়ে রিতী ফেরার পথ ধরে। রাস্তায় দু একটা মানুষ হটাৎ দেখা পাওয়া গেলেও এদিকটায় নিরব। পথিমধ্যে রিতী মেইনরোড থেকে এদিকেই তিন চার কে এই রাস্তার দিকে আসতে দেখে।তারা উচ্চ স্বরে কথা বলছে। কাকে যেনো ডাকছে। গোঙানি আওয়াজের মতো। কুয়াশার ভেতর থেকেই তাদের মাথার উপর বোতলের আকার দেখে বুঝতে আর বাকি রয়না যে এরা মাতাল। সাত সকালে মাতলামি করে আসছে। নিচ দিকে তাকিয়ে জোরে হাটা দেয় রিতী। গায়ের চাদরটা ভালোভাবে টেনে নেয়। ঠান্ডা টা যেনো বেশী লাগছে হাঁটার কারনে চাদর বার বার সরে যাওয়ায়। কিছুক্ষন হাঁটার পরেই কানে আসে পরিচিত এক গলা।
— এই পিরিতী!
রিতী চমকে পেছনে তাকায়। সোহাগকে দেখে গা রি রি করে উঠে। সোহাগ বাইক চালানোর মতো করে বুম বুম করতে করতে রিতীর সামনে এসে দাঁড়ায়। সারা শরীরে মদের গন্ধ। শার্টের সামনের বোতাম গুলো খুলা। বুকের চির থেকে নাভী পুরোটাই দৃশ্যমান। চোখ দুটো লাল টকটকে মাথার চুল এলোমেলো। সোহাগকে মাতালদের থেকে কম লাগছেনা। রিতী দুহাতে নাক চেপে ধরে। সোহাগ এগিয়ে এসে বলে,
— হাত সরাও পিরিতী। দেখতে দাও। আহ কি সুন্দর রূপ! কতোদিন দেখিনা! ওমন করো কেনো সোনা? আসোনা সোনা। অন্য মাইয়া খাইয়াও তোমার তৃষ্ণা মেটেনা।
বলতে বলতে রিতীর হাত ধরতে গেলে রিতী লাফ দিয়ে পিছিয়ে যায়। চাদর খামচে ধরে বলে,
— রাতভর নেশা করে সকাল বেলা মাতলামি করে বাড়ি হচ্ছে না? কোন মেয়ের ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন ? দেখেতো ওরকমি লাগছে। ছিহ কি গন্ধ। দূরে সরেন। দূরে। একদম কাছে আসবেন না।
— এতো দূর দূর করো কেনো সোনা? কাছে আসোনা ।
সোহাগ আবার রিতীর হাত টেনে ধরে। মদের বোতলটা আরেকজনের হাতে দিয়ে দুইহাতে টেনে ধরে। রিতী হাত মোচরাতে মোচরাতে বলে,
— ছাড়েন। আমি মোটেও ওরকম মেয়ে না। আপনি যেমন তেমন মেয়ের কাছে যান। অপবিত্র হাতে আমাকে ছোবেন না।
— অপবিত্র হাত? কি বলো পিরিতি? পবিত্র করে দাওনা। দাও মুছে দাওতো সোনা।
বলেই রিতীর চাদর টেনে ধরে। চাদর মুচরিয়ে মুচরিয়ে হাত মুছতে থাকে। রিতীর গা থেকে চাদর অর্ধেকটার বেশী খুলেই নেয়। রিতী চাদর ধরে লাফাচ্ছে।
— সোহাগ ভাই চাদর ছাড়ুন। ছাড়ুন বলতেছি। চাদর ছাড়ুন। আল্লার দোহাই লাগে ছাড়ুন। খালি রাস্তা পেয়ে অসভ্যতামি করবেন না। সারারাত মধু পান করেও আশ মিটেনি না।
— তোমার মধু তো পান করতে দাওনা।
— সপ্নেও পাবেন না। আপনার মতো বখাটে মাতালের মুখ ও আমি দেখতে চাইনা।
— বকস কেন সবসময়?
— চাদর ছাড়েন।
— আগে বল কলেজ যাসনা কেন তুই? তোর চিকনি ঝাঁঝ না দেখলে আমার তৃষ্ণা মেটেনা।
— আমি কলেজ ঠিকই যাই। আপনার চোখ অন্ধ। আপনি আমাকে দেখতে পাননা।
— কিহ? এতোবড় কথা? আমি অন্ধ?
রিতী চাদর ছাড়িয়ে দৌড়ে বাড়ি চলে যায়।
মাঝ রাস্তায় ছানোয়ারের মুখোমুখি হয়। ছানোয়ার রিতীর খোঁজেই আসছিলেন। বিশ মিনিট লাগে স্কুলের রাস্তায়। যেখানে ৭.২০ এ বাড়ি ফেরার কথা সেখানে আটটা বাজতে চলল তাও রিতী বাড়ি ফেরেনা। রুম্পা ছানোয়ারকে ঘুম থেকে তুলে দিয়ে রিতীর খোঁজে পাঠায়। সামান্য একটু দেড়ি হয়েছে বলে ছানোয়ার পাত্তা দেয়না। রাগ দেখিয়ে বলে,
— আরে কিছু হবেনা। একটু দেড়ি হতেই পারে। এতো অস্থির হবার কি আছে?
— একটু নয়। পুরো চল্লিশ মিনিট দেড়ি হয়েছে।ওগো একটু যাওনা। কুয়াশা এখনো কমেনি। রাস্তাঘাটে মানুষ কম। যাওনা।
কয়েক সেকেন্ড ভেবে বিছানা ছাড়ে ছানোয়ার। শীতের কাপড় গায়ে চাপিয়ে বেরিয়ে পড়ে।মাঝরাস্তায় রিতীকে এভাবে দৌড়াতে দেখে কপালে ভাঁজ পড়ে। রিতীর ভয়ার্ত মুখ খানা দেখে গলা শুকিয়ে আসে। পা চালিয়ে গিয়ে রিতীকে ধরে। রিতী বাবাকে দেখে স্বস্তি পেয়ে চোখ বুজে। এগিয়ে এসে বুকে মাথা রেখে জোরে জোরে শ্বাস ছাড়ে। ছানোয়ার অস্থির চিত্তে জিজ্ঞেস করতে থাকে,– রিতী? কি হয়েছে মা? ভয় পেয়েছিস কেনো? কি হয়েছে?
রিতী উত্তর দেয়না। এদিকে ছানোয়ার চিন্তায় পড়ে গেছে কোন মতে বলে,
— কুকুর পেছনে লেগেছে বাবা ।
অভিজ্ঞ ছানোয়ার মেয়ের হাল চাল জানা। তার অভিজ্ঞতা বলছে এ কথা বিশ্বাস করোনা। রিতীর আমতা আমতা কথা বলছে এ কথা মিথ্যা। ছানোয়ার রিতীকে ধরেই সামনের দিকে এগিয়ে যায়। রিতী হাত টেনে ধরে বলে,
— কোথায় যাচ্ছো বাবা? বাড়ির রাস্তা এদিকে বাবা।
— কুকুর কতোদূর এলো দেখে আসি মা।
— চলে গেছে বাবা। বাড়ি যাবো বাবা।
রিতীর চোখে মুখে আরো ভয় ঝেকে বসেছে। অদ্ভুত আচরণে সন্দেহ প্রগাড় হয়। একহাতে রিতীর কাঁধ জড়িয়ে রিতীর কথা না শুনেই এগিয়ে যায়। রাস্তায় কয়েকজন মানুষ দেখা যাচ্ছে। সবাই ছুটেছে স্কুল কলেজ বা অফিসের দিকে। ছানোয়ার আরো এগিয়ে যায়। রিতী বলে– আর কতো যাবে? বাড়ি চলো বাবা।
— কত বড় কুকুর দেখতে হবে তো মা।
ছানোয়ারের কথায় গলা শুকিয়ে আসে রিতীর। মনে মনে দোয়া করে যেনো সোহাগদের কাউকে সামনে না পায়। আল্লাহ দোয়া কবুল করে। কিন্তু মাতাল হয়ে উচ্চ স্বরে মাতলামো ছানোয়ারের কানে ঠিকই আসে। যত এগোচ্ছে ততো গাঢ় হচ্ছে। রিতীর কানেও এসেছে। এবার বাবার হাত টেনে ধরে,
— আর যেওনা বাবা।
কোথা থেকে খাবার খোঁজা কুকুর দুটো ঘেউ ঘেউ করে একটা আরেকটার পেছনে দৌড় লাগায়। রিতী ওদের দেখিয়ে বলে,
— দেখো বাবা এই কুকুর দুটা। পিছে লেগেছিলো আমার।
ছানোয়ার কি একটা ভেবে মাথা ঝুমায়। সন্দেহ তার আরো প্রগাড়। আপাতত সে রিতীকে কিছু বলেনা। সন্দেহের বশে কিছু বলা ঠিক না। তবে সেই সন্দেহকে আরো গাঢ় করে পরদিন সকালে। যখন রিতী জানায় সে আর সকাল সকাল তমালকে স্কুলে দিতে যাবেনা। বিষয়টা নিয়ে ছানোয়ার রুম্পার সাথে আলোচনা করে। রুম্পাও সায় জানায়। এইযে হট করেই মেয়েটা বোরখা পড়া শুরু করেছে এ ব্যপারটা তাকে ঠিকই ভাবিয়েছে। ধর্মের প্রতি অনুরাগী হলেতো হতো। কিন্তু এই মেয়ে শুক্রবারের নামাজটা পড়া ছাড়া সপ্তাহে এক ওয়াক্ত ও নামাজ পড়ে না। ছুটির বিষয়টাতো রুম্পা ছানোয়ারের কানে তুলেনি। একা একা দু দুটো মেয়ের কি হয়েছে ভেবেই পাগল প্রায়। ছানোয়ার বলে,
— মেয়ে বড় হচ্ছে।এবার আমাদের উচিত সাবধান থাকা। রিতীর ফোনটার দিক নজর দিও তো।
— সেটাতো বেশীর ভাগ ছুটির হাতেই থাকে।
— তাহলে ছুটির মাধ্যমেই তথ্য নিও।
— হুম। ঠিক বলেছো।
সোহাগ রিতীকে আজো খুঁজছে কলেজে। আজকাল যদিও রিতী কলেজে কম আসে। তবুও যখন আসে বোরখা পড়ে নেকাপ করে আসে। যাতে তাকে কেউ চিনতে না পারে। পারেও না কেউ চিনতে। এতে যে রিতী কতোটা রিলাক্স পেয়েছে তা শুধু রিতীই ফিল করতে পারে। ভাগ্যক্রমে আজ রিতী কলেজে পা দিয়েছে। এদিকে সোহাগ ক্ষেপা ঘোড়া হয়ে আছে। পুরো কলেজ তন্ন তন্ন করে দুদিন থেকে খুঁজছে। রিতীকে পাচ্ছেনা। সোহাগের হালকা খেয়াল হয় দুইদিন আগে সে রিতীকে দেখেছে। রিতীকে ছুঁয়েছে। সেই ছোয়া এখনো অনুভব করতে পারছে। কিন্তু কোথায় কিভাবে সেটা মনে পরছেনা। সোহাগের চ্যালা পাড়ি সোহাগের কপাল ম্যাসাজ করতে করতে বলে,
— ভাই এই মাইয়া আপনারে দেয় কেন এতো প্যারা? সুন্দর হয়েছে জন্য মাইয়ার দেখি ভাবে আটেনা। আপনারে দেয়না পাত্তা। হুদ্দাই ভাব আলী মাইয়ার পেছনে পরে আছেন। এর থেকে কতো সুন্দর মাইয়া আপনের পেছনে লাগে সেইটা কেন দেখেননা চোখ মেইলা চাইয়া?
সোহাগ হেসে বলে,
— আমার লাগবো কচি মাইয়া। উপপস দেখছোস পিরিতীর কি ডুমকা? একবার বাগে পাইলে মনডায় কয় আর ছাড়মুনা।
— আমাগো দিক ও তাকাইয়েন ভাই।
— আগে তো বাগে পাই। এতো সুন্দর খোমা লইয়া পাত্তা পাইনা আর বান্দরের চেহারা নিয়া সামনে আসস।
— আমাগো জন্য আপনেই তো আছেন ভাই।
সোহাগ হাসে।
— তো পিরিতির জন্যে কি করতে পারি?
— তুইলা আনি ভাই?
— জোর করে খাওয়ার ধাচ আমাগো বংশে নাই।
— বোরখা আলীগো চেক করলে হয়না ভাই?
— ভালো কথা মনে করাইছোস। কাজটা তোরেই দিলাম তাই।
চলবে,
লাবিবা_তানহা_এলিজা~