বিষ_করেছি_পান(২৪)

0
539

#বিষ_করেছি_পান(২৪)

(কপি করা নিষেধ)
— সারাদিন কোথায় ছিলি?
— নদীর পাড়ে বেরাতে গিয়েছিলাম।
— কার সাথে?
— বাঁধন ভাই নিয়ে গিয়েছিল আমি আর ঝিমাকে।
— তুই কি জানিস বাঁধন ভাই আর সুমি ভাবীর ডিভোর্স হয়ে যাবে?
ছুটি উঁচু নিচু মাথা দোলায়। সে জানে।
— এরজন্যেই তুই বাঁধন ভাইয়ের সাথে মিশছিস না?শোন ছুটি একদম সেই পথে পা বাড়াবিনা। ঐ বাড়িতে আর যাবিনা। বাঁধন ভাইয়ের থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করবি। যদি যাস তাহলে আমি কথাটা মার কানে দিবো
— ভয় পাচ্ছো কেনো আপু?
— ভয় পাবো না? তুই একটা বড়সড় কষ্ট পাবি। বাঁধন ভাইয়ের উপর দূর্বল হয়ে পড়বি। বাঁধন ভাই বিবাহিত একটু বোঝার চেষ্টা কর।
রিতী আকুতি মিনতি দেখে ছুটির বড্ড হাসি পায়। চেপে না ধরে ফিক করে হেসেও ফেলে। পেটে হাত দিয়ে ঠোঁট চেপে বলে,
‘ আমি দুর্বল হলেও বাঁধন ভাই তো আর হবেনা। নতুন করে আর কিইবা দুর্বল হবো? আমার যা যাওয়ার তা গেছে। ফেরানোর উপায় নেই। ‘
‘ পাকামো কথা বলবিনা।বয়স কতো তোর? এরকম ছোট খাটো একটু আধটু ক্রাস টাস থেকেই থাকে। তার জন্য যে সব চলে গেছে এরকম ভাবার কোন মানে নেই।’

রিতীর কথা ছুটির কর্ণগোচরে পৌঁছায় না । সে তার মতো লাফাতে লাফাতে রুমে চলে যায়। চেঞ্জ করে দৌড়ে রিতীর বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায়। ঐতো কোনাকুনি ভাবে বাঁধনের বারান্দাটা দেখা যাচ্ছে। বারান্দাটি কি আরো সুন্দর হয়ে উঠেছে? নাকি ছুটির চোখেই সুন্দর লাগছে? কোই নাতো কোন কিছুই পরিবর্তন হয়নি। আগের মতোই আছে। তাকিয়ে থাকতে থাকতে চোঁখে পড়ে বারান্দায় কারো অবয়ব। অবয়বটি বাধনের। ছুটি তাকিয়ে থাকতে থাকতেই অন্যমনষ্ক হয়ে গেলো। আনমনে বলে উঠলো ‘বাঁধন! বাঁধন! বাঁধন! ‘
নামটি বাতাসের সাথে ফিরে ছুটির শরীর ছুয়ে দিলো। ছুটি কি একটু কেঁপে উঠলো? মূহুর্তেই ছুটির ভীষণ ভালো লাগতে শুরু করলো। হৃদয়ে প্রচন্ড সুখ অনুভব হতে লাগলো।পা দুটো গুটিয়ে আসলো।ছুটি মোড়ায় আধবসা হলো। অবয়ব টিকে কেনো স্পস্ট দেখতে পাচ্ছে না? কেনো এতো দুরত্ত্ব ? আজ ছুটি কেনো এতো তৃষ্ণার্ত? গলাটা নিমেষেই শুকিয়ে এলো। তৃষ্ণা মেটাতে ছুটি এলোমেলো পায়ে রুমের ভেতরে এলো। একদিনেই এতোটা পাগল পাগল ছুটি কখনোই হয়নি। আজ কেনো হলো? ছুটি নিশ্বব্দে দরজার কাছে এলো। পা বাড়াবে নাকি না বাড়াবে দ্বিধায় চুপসে গেলো। অসহায় চোখে ঘাড় ফিরিয়ে রিতীর দিকে তাকালো। রিতী পড়ছিলো। ছুটির চলনবলনে চোখ পড়তেই মনোযোগ ছুটে গিয়েছিলো।‌ঘাড় বাঁকিয়ে এখন সে ছুটিকে দেখতেই ব্যস্ত। ছুটি মনে মনে আওড়ালো। মুখে বুলি ফুটবে নাকি ফুটবেনা দ্বিধাতে পড়ে গেলো। চেপে না রাখতে পেরে টলমলে চোখ দুটো বন্ধ করে বুক ভরে শ্বাস নিলো।

— ভালোবাসায় এতো সুখ কেনো আপু? আমি এখন ভীষন সুখ অনুভব করছি। এতো সুখ আমাকে ছুবে আমি কখনো কল্পনাও করিনি। আমি আমার সুখটুকু নিয়েই পড়ে থাকতে চাই। দুঃখ আশেপাশে এলে আমি নিজেই সাইড কেটে যাবো।তবুও এ হৃদয়ে দুঃখের পর্দা টানবোনা।সুখটুকু নিয়েই অনন্তকাল ধরে স্মৃতির মালা গাথবো।
রিতী অবাক হয়ে শুনে গেলো। ছুটি পা বিড়াতেই অবাকতা ভাব ঘুচে গেলো।জোর গলায় বললো,
— কোথায় যাচ্ছিস তুই?
— তৃষ্ণা মেটাতে।
— ছুটি এক পা বাড়াবিনা।‌
— ঠিক আছে। তবে দুই পা ই বাড়ালাম।

বাঁধনের সামনের চেয়ারে বসে টুকে টুকে ভাত খাচ্ছে ছুটি। খেতে সে একদমি পারছেনা। আড়চোখে দৃষ্টি অন্যদিকে থাকলে না দেখে ভাত খাওয়া যায়না। বীনা বললো,
— তোকে আরেকটু ঝোল দেই ঝিমা?
— ছুটিকে দাও মা।
ছুটির পাতে অনেক ঝোল। ঝোলে ভাত দেখা যাচ্ছেনা। বীণা ছুটিকে ঝোল দিলো না । নিজে খেতে বসে এক লোকমা ছুটির মুখে ধরলো।
— নে হা কর। কিছুইতো খেতে পারছিস না । আমি খাইয়ে দিচ্ছি।
ছুটি নিজের প্লেটটা সামনে ঠেলে দেয়। মুখ বাড়িয়ে বীনার হাতে খেয়ে নেয়। বাঁধন আড়চোখে একবার তাকিয়ে নিজের খাবারে মনোযোগ দেয়। ছুটি ঠিক করেছে আজ এখানেই থাকবে। তার কিছুতেই যেতে ইচ্ছে করছেনা। যেই ভাবা সেই কাজ। ঝিমার আগেই গিয়ে ঝিমার খাটে শুয়ে পড়েছে। মাথায় তার নিত্য নতুন অনেক কিছুই ঘোড়াঘোড়ি করছে। সব কিছুই বাঁধন কে নিয়ে। ঝিমাও এসে ছুটির পাশে শুয়ে পড়ে। ছুটিকে জিজ্ঞেস করে,
— তুই এখানে থাকবি বলে এসেছিস?
— সময় কোথায়?
— এতো ব্যস্ত হয়ে গেছিস?
— হ্যা। এখানে যখন আসতে মন চাইলো তখনি চলে আসতে হলো। মাকে বলার সময় ই পেলাম না।
— চিন্তা করবেতো।
— আমি এখানে আছি সে বুঝে যাবে।
— হুম ঘুমা এখন।
ঝিমা ছুটি যখন কাঁচা ঘুমে তখনি ছুটিকে ডাকতে আসে রুম্পা। এসেই শুনে ছুটি ঘুমিয়ে গেছে। রুম্পা আপত্তি জানিয়ে বলে,
— রিতীর বাবা এখনো না ঘুমিয়ে অপেক্ষা করছে। ছুটিকে নিয়ে যেতে হবে।
— থাকনা ভাবী। ভাইজানকে বলে দিলেই তো হবে।
— আজ নিয়ে যাই ভাবী। মানুষ টার কোন কারণে মন ভালো নেই। কেনো নেই জিজ্ঞেস করলাম বললোও না। এখন আমাকে পাঠিয়ে দিলো ছুটিকে নিয়ে যেতে।আমিই বললাম ঝিমার সাথে ঘুমিয়েছে থাক। না করে বসলো। এক্ষুনি মেয়েকে নিয়ে যেতে বলেছে।
— ওহ।তাহলে তো যেতেই দিতে হয়।
রুম্পা,বীনা ঝিমার রুমে আসে। সিঁড়িতে রুম্পা জিজ্ঞাসা করে,
— বাঁধনের কি খবর?
— ছেলেটা আমার একগুঁয়ে হয়ে যাচ্ছে। পুরুষ মানুষ বাজারে টাজারে আড্ডা দিবে তানা শুধু ঘরে বসে থাকে। আজতো বেরিয়েছিলো ঝিমাকে নিয়ে। বাইরে টাইরে এভাবে গেলে তো মন ভালো থাকবে।
— ছেলে মেয়েরা কি করে? ছুটিদের দলটা বাঁধনকে সময় দিলেই তো বাঁধনের মন ভালো থাকবে। বাঁধন এদের অনেক স্নেহ করে।
— কাল সবাইকে ডেকে এনে বলতে হবে বাঁধন যতদিন কাজে যাচ্ছে না ততোদিন বাঁধনকে কোম্পানি দিতে।
— চাকরীতে ঢুকবে বলেছে?
— আর কিছু দিন যাক। আরেকটু সুস্থ হোক। তারপর ইন্টাউভিউ দিতে বলবো। আগের চাকরি টাতো তখনি চলে গেছে। এখন আর পোস্ট খালি নেই।
— সেটাই ভালো হবে।

ছুটি ঝিমা একজন আরেকজনের উপর পা দিয়ে শুয়ে আছে। পুরো বিছানা তাদের দখলে। কাথাটা ফ্লোরে ঝুলে আছে। রুম্পা গিয়ে ছুটিকে ডাকে। ছুটি তখন গভীর ঘুমে। ঘুম পাগল মেয়েটাকে অনেক চেষ্টা করেও তুলতে পারেনা। বীনা বলে কয়ে রুম্পাকে পাঠিয়ে দেয় ‌। ছুটির বাবা কিছু বললে বুঝিয়ে বলতে বলে। এতোবড়ো মেয়েকে কোলে নিয়ে যাবার সামর্থ্য রুম্পার নেই। তাই ছুটিকে না নিয়েই বাড়িতে ফিরে আসে। ছানোয়ার সাহেবকে বলে,
— ঘুমিয়ে পড়েছে।এতো ডাকলাম শুনলোনা। জানোই তো কেমন ঘুম পাগল মেয়ে। ওকে তোলা আমার কর্ম না।
— আবার যাও যেভাবেই হোক ডেকে এনো।
— আরে তুমি এতো রেগে যাচ্ছো কেনো? এর আগেও তো ঐ বাড়িতে কত থেকেছে। আজ এভাবে রিয়েক্ট করছো কেনো?
— আমার মেয়েরা আমার বাড়ি ছাড়া কোথাও থাকবেনা। সব সময় আমার সামনে থাকবে। রিতীকে দেখে আসো যাও কি করছে?পড়ছে নাকি কি করছে?
— পড়ছে।
— দেখে আসো।
রুম্পা বিরক্ত হয়ে রিতীর রুমে যায়। রিতী পড়ছে। রুম্পা দরজা থেকেই ডেকে বলে,
— তোর বাবার কি হয়েছে রে?
— জানিনাতো মা। কেনো?
— হুট করেই মেয়ে মেয়ে করা শুরু করেছে।কিছু বলছেও না। ভালোভাবে পড়।
রুম্পা চলে গেলে রিতী মাথা না ঘামিয়ে আবার পড়তে থাকে।

প্রতি রাতেই ছানোয়ার মেয়েদের কয়েক বার করে দেখে যায়।ছুটি রিতী পড়া ব্যতীত অন্য কিছু করলেই এসে ধমকাতে থাকে।বাবার ধমকে এখন ছুটিও বই নিয়ে বসে থাকে। তবে বই সামনে থাকলেও মন পড়ে থাকে বাঁধনের কাছে। বাঁধনের বাড়িতে আর রাত করে থাকতে দেয়না তাকে।সন্ধ্যার আগে বাড়ি ফিরতে হয়। আগে রাত পেরিয়ে গেলেও কোন কথা ছিলো না। বাবার হুটহাট এতো কড়া হয়ে যাওয়াটা রিতী ছুটি কেউই মেনে নিতে পারছেনা। ছুটি রিতীকে কারণ জিজ্ঞাসা করলে রিতীও যে অবগত নয় তা শুনে হতাশ হয়। আগে দুবোনে পড়ার ফাঁকে ফাঁকে নিশ্চিন্তে ফোন চালাতে পারতো। এখন ফোনটা হাতে নিয়েও কাঁপতে হয়। কখন না জানি বাবা দেখে ফেলে। এদিকে সোহাগ মোটেই রিতীকে শান্তি দিচ্ছেনা। ফোন দিয়ে বিরক্ত করেই যাচ্ছে। না ধরলে না কথা বললে শুরু করে হুমকি দেওয়া। পরিক্ষার মাঝে রিতী কোন চাপ নিতে রাজি নয়। আল্লাহ আল্লাহ করছে পরিক্ষাটা কোন মতে শেষ হলেই ভার্সিটি এডমিশন কোচিং এ ভর্তি হয়ে বডিং এ থাকা শুরু করবে। রিতীর কলেজের এক আপু গতবছর ডাবিতে চান্স পেয়েছে। তার সাথে কথা হয়েছে। সে যে কোচিং এ ছিলো সেই কোচিং এ ভর্তি ও হোস্টেলে থাকার ব্যবস্থা করে দিবে। তখন আর রিতীর জীবনে থাকবেনা এই সোহাগ নামের কোনো বখাটে। দেখতে দেখতে রিতীর পরিক্ষা প্রায় শেষের দিকে। আর দুটো আছে। বাবার সাথে পরিক্ষা দিতে যায় আর বাবার সাথে আসে। রিতী অবশ্য নিজেকে আড়াল করেই যাতায়াত করে। ছানোয়ার ও রিতীর সাথে যাতায়াত করেনা। এটা ছানোয়ারের প্লান। এতে কোনো বখাটে ছেলের নজরে রিতী পড়বেনা। কিন্তু ছানোয়ার এটা জানেনা প্রতি রাতে রিতীর ফোনে কল আসে। এবং শেষ চার্জ অব্দি সেই কলেই থেকে যায় সোহাগ। রিতী রিসিভ করে নিজের মতো পড়তে থাকে। সোহাগকে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে । রিতী অবশ্য মাঝে মাঝে সুযোগ বুঝে ফোন কানে ধরে সোহাগকে গালাগালি করে। এতে সোহাগ ও চটে যায়। নানারকম থ্রেট দেয়। নতুন সিম রিতী নিতে পারেনা। তার আইডি কার্ড নেই। বাবা অথবা মারটা চাইতে গেলেই নানারকম প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে। প্রথম প্রথম রিতীর প্রচুর বিরক্ত লাগলেও এখন সয়ে গেছে। এটা প্রত্যেহ দিনের ব্যপার। রিতী এখন টুকটাক কথাও বলে। বাঁধন কে জিজ্ঞেস করে,
— আপনি কি ক্লান্ত হন না? কি চান আপনি? এভাবে ডিস্টার্ব করতে থাকলেও আপনার কোন লাভ হবেনা।
— একবার আমার তৃষ্ণা মিটিয়ে দাও। আমি আর কোনদিন তোমায় ডিস্টার্ব করবোনা।
এতো জঘন্য প্রস্তাবে রিতীর কোন কথা থাকতে পারে না। বার বার পাওয়া এই জঘন্য প্রস্তাবটাও এখন আর কোনো ঘৃণা বা অনুভূতি সৃষ্টি করতে পারেনা। সোহাগ বলে ,
— পিরিতি আমি কেনো পরিক্ষার হলের সামনে তোমাকে খুঁজে পাইনা? তোমাকে দেখার তৃষ্ণা আমি কিছুতেই মেটাতে পারছিনা। পিরিতি তুমি কি আরো সুন্দর হয়ে গেছো? ঘরে বসে বসে গুলুমুলু হয়ে গেছো? আমি আর নিজেকে আটকাতে পারছিনা।

রিতী কিছুই বলেনা। বরং নিরবে হাসে। সোহাগের কথাবার্তা প্রেমিকের মতো। তবে সে প্রেমিক নয়। দেহলোভী এক পুরুষ। এটা জেনে বুঝেও রিতীর কোন অনুভুতি আসেনা। রিতী অভ্যস্ত দেহলোভী সোহাগের দেহের জন্য হাহাকার শুনতে। সবকিছু সে স্বাভাবিক ভাবেই নিচ্ছে। নিজেকে ভালো রাখার জন্য নিতে হচ্ছে। তবুও মাঝে মাঝে ভয় হয়। বাবার কড়া গার্ডে সোহাগের সাথে যোগাযোগ করতে ভয় হয়। আর সেই ভয়ের কারণ ছুটি। মেয়েটা প্রচুর দুরন্ত। সন্ধ্যার পর বাড়ি থাকে জন্য সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাড়ি থাকেনা। কোথায় কোথায় যায় জানেনা। ভয় হয় প্রচন্ড ভয় হয়। তার কারণে না হয় কখনো ছুটির কিছু হয়।

সোহাগের দিন রাত সব এক হয়ে গেছে। রিতীর জন্য তার জীবনটা এলোমেলো হয়ে গেছে। একটা মেয়ে কিভাবে তার জীবনে অধিপত্য ছড়াচ্ছে সেটা সে ভালোভাবেই বুঝতে পারছে। তবে মানতে পারছেনা।সে কারো জন্য মানসিকভাবে এতোটা দুর্বল হবে ভেতরে ভেতরে অস্থিরতা অনুভব করবে সেটা কিছুতেই মানতে পারছেনা। একটার পর একটা মেয়ের পিছনে ঘোরা তার স্বভাবে আছে। কিন্তু কারো জন্য এতোটা অস্থিরতা কখনো ফিল হয়নি। নিজেকে সামলাতে না পেরে একের এর মদের গ্লাস খালি করে প্রতিদিন। তবে কখনো আগ বাড়ানোর কথা ভাবেনি। আজ কড়া মাল খেয়ে মাঝরাতে বাড়ি ছেড়েছে। চ্যালা দু’জনকে নিয়ে সাহস করে এসেছে রিতীর বাড়ির সামনে। শুনশান পাকা রাস্তায় বসে রিতীকে ফোন দেয়। রিতী তখন বইয়ে মুখ গুঁজে আছে। ফোন সাইলেন্ট করা। বেশ কয়েকবার কল দেয়। সোহাগের রাগ হয়। প্রচন্ড রাগ হয়। রিতীর রুমের আলো জ্বলছে। মেয়েটা ইচ্ছে করে ফোন তুলছে না। কিছুক্ষন অপেক্ষা করে সোহাগ আবার কয়েকবার কল করে। রিতী এবারো ফোন তুলেনা। সোহাগের মাথায় জেদ চেপে বসে। আজকে রিতীকে না দেখে এক পাও এখান থেকে নড়বেনা। ছোট্ট একটা টেক্সট পাঠিয়ে দেয় রিতীকে।
‘ নিচে আসো। আমি অপেক্ষা করছি। ‘
আধঘন্টা হয়ে গেলো এখনো রিতীর কোন রেসপন্স নেই। দেখতে দেখতেই রিতীর রুমের লাইট অফ হয়ে গেলো। সোহাগের চরম মেজাজ খারাপ হলো। ধলার হাত থেকে বাংলা মদের বোতল টা নিয়ে অর্ধেকের বেশি গলায় ঢেলে দিলো। এতোক্ষণ ঠিক থাকলেও এবার তার নেশা হওয়া শুরু হয়েছে। আরো চারবার রিতীর ফোনে কল দিয়ে যখন না পেলো তখন সোহাগ বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। মাথা চক্কর কাটলে ধলার কাঁধ চেপে নিজেকে সামলিয়ে নিলো। উচ্চস্বরে ডেকে উঠলো,
— ঐ পিরিতি!ঐ ! পিরিতি?! পিরিতি?ঐ শালী নিচে আয়।
রিতীর কানে যেতেই রিতী ধচমচিয়ে উঠে বসলো। মাত্র ই বালিশে মাথা রেখেছে। তারমধ্যেই বাইরে থেকে চিৎকার আসছে। একটু ধাতস্থ হতেই কানে বাজে ডাকটি ‘ পিরিতী!’ পিরিতি? সোহাগ? বিছানা ছেড়ে দৌড়ে বারান্দায় গিয়ে উঁকি দেয়।পাশের বাড়ির বাইরের লাইটের আলোতে আবছা সোহাগকে চিনতে পেরে রিতী কলিজা ধক করে উঠে। বারান্দায় রিতীকে দেখে সোহাগ আরো জোরে গালি দিয়ে বসে,
— ঐ শালী ঐখানে দাড়ায়ে কি করছ? নিচে আসতে বলিনি? পাগল বানিয়ে দিবি নাকি?
রিতী আর দাঁড়ায় না। এক দৌড়ে এসে বারান্দার দরজা অফ করে দেয়। বিলম্ব না করে ছুটির রুমে গিয়ে ছুটিকে ডেকে তুলে। ইতিমধ্যে যা ঘটার তা ঘটে গেছে। গভীর ঘুমের ছুটি উঠতে উঠতেই বাহিরে লোকজন জমা হয়ে গেছে। ছানোয়ার রুম্পা নিচে চলে গেছে। সোহাগ এসে ছানোয়ারের সাথে অসভ্যতামি শুরু করেছে। মুখ দিয়ে যা নয় তাই বলছে। বার বার শাষাচ্ছে।
— ঐ মেয়েকে লুকিয়ে রাখিস?তাইনা?তোর মেয়ে আমার ঘুম কেড়ে নিছে?ওকে আমি নিয়ে যেতে এসেছি।এখুনি বের করে দে। নইলে তোর ঘর বাড়ি পুরিয়ে ফেলবো আমি।
ছানোয়ার রেগে মেগে মাতাল সোহাগের গালে পর পর দুইবার চড় লাগিয়ে দেয়। বাঁধন এসে আটকায় ছানোয়ারকে।
— কাকা কি করছেন? ছেলেটা মাতাল হয়ে আছে।
— মাতাল তো মাতাল হবেই। ওর সাহস কত্ত বড় বাড়ি বয়ে এসে মাতলামি করছে। তুই তুকারি করছে। কে আছো ধরো একে। আমার মেয়ের পিছু লেগেছে। মেরে তক্তা বানিয়ে রাস্তার ধারে ফেলে আসো একে। সোহাগকে ধরে কলোনীর ছেলে গুলো বেধরম পেটাতে থাকে।

ছুটি উঠে বসে ঘুমে চোখ খুলতে পারছেনা। রিতী ছুটির কাধ ধরে ঝাঁকিয়ে অস্থির হয়ে বলে,
— ছুটি তাড়াতাড়ি চোখ খোল। সর্বনাশ হয়ে গেছে। সোহাগ নিচে এসে চিৎকার চেঁচামেচি করছে। বাবা মা জাগার আগে তুই তাড়াতাড়ি গিয়ে ওকে চলে যেতে বল। জানাজানি হলে মান সম্মান আর থাকবেনা। বাড়ি বয়ে এসে বখাটেরা চেঁচামেচি করে এটা নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়ে যাবে।উঠ উঠ।
ছুটি রিতীকে এড়িয়ে চোখ ডলতে ডলতেই দৌড় দেয়। পেছনে পেছনে রিতীও দৌড় দেয়। মেইন দরজা দিয়ে বাঁধনের চোখ পড়ে ছুটির দিকে। সিঁড়ি বেয়ে দৌড়ে দৌড়ে আসছে। পেছনে রিতী চিৎকার করে ছুটছে,
— ছুটি চোখ খুলে যা। পড়ে যাবি নাহলে।
সোহাগের সাথে ছুটিকে বাঁধন আরো দেখেছে। তখন তেমন কিছু সিরিয়াসলি না নিলেও আজ সবটা খোলসা হয়ে গেছে। এইটুকুনি মেয়ে রাস্তার বখাটের সাথে মেলামেশা শুরু করেছে। বাড়ির মান সম্মান মেশাতে বসেছে। চোয়াল শক্ত হয়ে উঠে বাঁধনের। বড় বড় পা ফেলে রিতীকে যেতে দিয়ে ছুটির হাত শক্ত করে ধরে আঁটকে ফেলে।
চলবে,

আমি একটু অসুস্থ। তাই গল্প দিতে পারি নাই। মাথায় বড্ড চাপ পড়ে। সেজন্য নট সরি। পেইজের রিচ কমে গেছে। বেশী বেশী শেয়ার করুন প্লিজ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here