বিষ_করেছি_পান(২৫)

0
394

#বিষ_করেছি_পান(২৫)

(কপি করা নিষেধ)
রিতী দৌড়ে এসে রুম্পার পাশে দাঁড়িয়েছে। রুম্পা রিতীকে দেখা মাত্রই বুকে আঁকড়ে নেয়। সোহাগের রক্তাক্ত মুখ দেখে রিতীর শ্বাস আটকে আসে। ভয়ে সিটিয়ে গিয়ে রুম্পাকে আরো শক্ত করে ধরে। রুম্পা বুঝতে পারে মেয়ে ভয় পাচ্ছে। তাই রিতীকে নিয়ে সরে যেতে চায়। কিন্তু রিতী থায় দাঁড়িয়ে থাকে। হু হু করে কেঁদে উঠে। বাবা,বাবা, বাবা বলে কাঁদতে থাকে। বাবাকে বলতে চায় ‘ বাবা আর মেরোনা,ছেলেটা মরে যাবে। ‘ কিন্তু মুখ থেকে বাবার পর আর একটা শব্দও বের হয়না। রিতীর গলা শুনে সোহাগ রিতীর দিকে তাকায়। অশ্রু মাখা মুখটা দেখে শরীর অবশ হয়ে আসে। তার তৃষ্ণা না মেটার আগেই চোখ দুটো নাফরমানি করে বসে।

ছুটিকে বাঁধন শক্ত করে ধরে আছে। ছুটি চোখ টেনে বড় বড় করে খুলে দেখার চেষ্টা করে। জ্বলার কারণে আবার চোখ বন্ধ করে সময় নিয়ে খুলে। বাঁধনকে দেখেই হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে লাফাতে থাকে।
— বাঁধন ভাই ছাড়েন। আমাকে যেতে হবে।
— কোথায় যাবি তুই? তোকে বাইরে যেতে হবেনা। পাগলা কুকুর ঘেউ ঘেউ করছে। তুই গেলেই কামড়ে দিবে।
— আরে আমি না গেলে কামড়া কামড়ি কে থামাবে?
— আমি থামাবো। তুই যাবিনা ব্যাস। চল রুমে চল।
বাঁধন ছুটিকে টেনে রুমে নিয়ে যায়। ছুটির হাত ছাডলেই ছুটি আবার দৌড় লাগায়। বাঁধন চট করে হাত বাড়িয়ে পেছন থেকে পেট জড়িয়ে টেনে ছুটিকে আটকায়। ছুটি ছাড়ুন, ছাড়ুন বলে হাট পা ছুটাছুটি করতে থাকে। বাঁধন আরো শক্ত করে ছুটিকে চেপে ধরে। ছুটির মনে হয় পেট থেকে নাড়িভুড়ি সব দুভাগ হয়ে উপর আর নিচের দিকে ফেটে পড়বে। ছুটি না পেরে ঘাড় ঘুরিয়ে বাঁধনের কাঁধ কামড়ে ধরে । বাঁধন আহ করে উঠে। ছুটি সেই সুযোগে আবার দৌড় দেয়। এদিকে বাঁধন রাগে ফুঁসতে থাকে।

ছুটি বেরিয়ে দেখে রিতী তার রুমে যাচ্ছে। ছুটিও রিতীর পিছু পিছু যায়। রিতী ছুটির সাথে কথা না বলে সটানে শুয়ে পড়ে।ছুটি দেখলো রিতী কথা বলবেনা। তাই সেও পেছন থেকে রিতীকে জড়িয়ে শুয়ে পড়লো। কিছুক্ষণের মধ্যেই অনুভব করলো রিতী ফুপাচ্ছে। হালকা কেঁপে কেঁপে উঠছে। ছুটি উঠে বসলো। আবার আধশোয়া হয়ে রিতীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। কিছুক্ষণের মধ্যে দু বোন ই ঘুমিয়ে পড়লো।

রিতীর সামনে সোহাগের আর পদচিহ্ন পড়লোনা। সবার মাথা থেকে ঝেড়ে গেলেও এলাকার কিছু কিছু লোকের মুখ থেকে রসিয়ে কষিয়ে নিউজ বানানো বন্ধ হলোনা। রিতী এসব কানে নিলোনা। তবে মাথা থেকেও বের হলোনা। বার বার সোহাগের কথা মনে পড়ে। বড়লোক নেতাগোষ্টী বাপের ছেলে! এতো গুলো মার খেয়ে গেলো অথচ এর কোনো রিভেঞ্জ ই নিলো না? বিষয়টা সত্যিই ভাববার বিষয়। তবুও চুপ থাকলো। সোহাগকে নিয়ে খবর পেলো শেষ পরিক্ষার দিন। পরিক্ষা শেষে হল থেকে বেরিয়ে তুলির সাথে বলাবলি করছিলো কে কোনটা কোনটা এনসার করেছে,কত পেজ করে লিখেছে।এরি মধ্যে কয়েকজন কমন ফ্রেন্ড এসে দাঁড়ালো। হাসি হাসি মুখ নিয়ে বললো,
— কিরে? কি শুনি? মাঝে মাঝে বাইকে উঠিস। দেখা করিস। এতো দিন থেকে ডুবে ডুবে জল খাচ্ছিস আর আমাদের জানানোর প্রয়োজন বোধ করলিনা?আমরা জানলে বেশী বেশী হেল্প করতাম।
ওদের কথার আগা মাথা রিতী কিছুই বুঝতে পারেনা। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,
— মানে?
— ঐ থাম। একদম ইনোসেন্ট সাজার চেষ্টা করবিনা। সোহাগ্গাইর সাথে তোমার প্রেম এটা অত্র কলেজের সবাই জানে। এখন ইনোসেন্ট ভাব ধরে লাভ নেই।
— একদম ফালতু কথা। আমার কারো সাথে কোন প্রেম নেই।
— সেজন্য ই তো পিরিতি পিরিতি করে অজ্ঞান হয়। কিন্তু দোস্ত! ছেলেটা বখাটে। তার সাথে রিলেশনে জড়ালি একাকি ঠিক হলো?
— আরে কিসের রিলেশন? কোনো রিলেশন নেই।
— বাজে না বকে ট্রিট দে। আজ লাস্ট ডে পরে আর তোর ছায়াও পাবোনা। আজি ট্রিট দে।
— পাগল নাকি? ঐ ছেলের সাথে আমার কোন রিলেশন নেই।
— বুঝি বুঝি। আগে বলতি শয়তান! এখন শয়তান থেকে ছেলে!
সবাই একজোড়ে হেসে উঠে। রিতী রাগে দুঃখে সেখান থেকে ধপ ধপ পা ফেলে এগিয়ে যায়। একজন বলে,
— আরে রেগে যাচ্ছিস কেনো? কলেজের পুরো দেয়ালে তোর আর সোহাগের নাম জ্বল জ্বল করছে। রিকশাওয়ালা মামা থেকে ফুচকাওয়ালা সবাই জানে তোর আর সোহাগ ভাইয়ের কথা।
আরেকজন বলে,
— সোহাগ ভাইয়ের স্বভাব ভালোনা। এছাড়া সবি ঠিক আছে। ফর্সা সুন্দর হ্যান্ডসাম চেহারা। গাড়ি আছে,বাইক আছে। বড়লোক বাপের একমাত্র ছেলে। কম কি! হ্যারে রিতী? কোনটা দেখে এগুলি?
রিতী থমথমে মুখ নিয়ে তুলিকে ছাড়াই বাবাকে বলা ছাড়াই কেন্দ্র কলেজ থেকে নিজের কলেজে পাড়ি জমায়। রিকশা থেকে দেখতে পায় গেইটের সামনে জ্বল জ্বল করছে রঙিন পোস্টার। সাহাগ+রিতী। ভাড়া মিটিয়ে ছুটি দৌড়ে ভেতরে যায়। সেখানে আরো ভয়ঙ্কর অবস্থা। দেয়ালে ইটের গুড়ি দিয়ে লেখা সোহাগ+রিতী। একটা অংশ ও বাদ যায়নি। এক গাছ থেকে আরেকগাছে দড়ি দিয়ে পোস্টার দেওয়া হয়েছে। জুনিয়র ছাত্র ছাত্রীরা রিতীকে দেখে আঙুলে ইশারা করে বলছে,
— এই দেখ। এই বোরখা পড়া আপুটার নাম ই না রিতী?
— হ্যা রে। সোহাগ মাতালের সাথে প্রেম করে।
রিতীর চোখ থেকে টুপ টুপ করে জল গড়িয়ে পরে। ধপ করে গাছের নিচে বসে পড়ে। তাকে এভাবে বসে থাকতে দেখে অফিস রুমে খবর পৌঁছায়। পিয়ন এসে রিতীকে সেখানে নিয়ে যায়। স্যাররা জিজ্ঞেস করে,
— পরিক্ষা কেমন হয়েছে?
— ভালো।
— আর এসব কতদিন থেকে চলছে? বাবা মা জানে? ছি ছি রিতী! আমি তোমাকে অনেক ভালো বুদ্ধিমান একটা মেয়ে মনে করেছিলাম। সেই তুমি কিশোরী বয়সের আবেগে এতো বড় একটা ভূল করে বসলে? কি হবে তোমার ভবিষ্যৎ?
রিতী উত্তর দিতে পারেনা। স্যাররা রিতীকে বুঝানোর চেষ্টা করে,
— দেখো টাকা পয়সা ক্ষমতা দিয়ে আর যাই হোক সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়া যায়না। ভবিষ্যত এর জন্য প্রয়োজন স্বশিক্ষিত একটি সঠিক মানুষ। তুমি এতো ভালো একজন স্টুডেন্ট তোমার ভবিষ্যৎ নি:সন্দেহে সুন্দর হতে যাচ্ছে। সেখানে তুমি একজন ঝড়ে পড়া মানুষের সাথে নিজেকে জড়িয়ে কেনো নিজের ক্ষতি করতে যাচ্ছো? তুমি পারফেক্ট ভাবে নিজেকে গড়ার চেষ্টা করো। একজন অশিক্ষিত মাতাল বখাটে ছেলে কখনোই তোমাকে ডিজার্ব করেনা। আবেগ থেকে সরে আসো। নয়তো এখানেই জীবন থেকে যাবে।

বাড়ি ফিরে আসতেই রুম্পা বকা দিতে শুরু করে। ছানোয়ার কে ডেকে বলে,
— ওগো তোমার মেয়ে বাড়ি ফিরেছে।
ছানোয়ার হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে আসে। রিতীকে দেখে অস্থির চিত্তে জিজ্ঞেস করে,
— কোথায় গিয়েছিলি? দেখতে দেখতেই সামনে থেকে নেই।
— কলেজে বাবা। দরকার ছিলো।
— বলে তো যাবি? পরিক্ষা কেমন হলো?
— ভালো।
— যা গিয়ে রুমে ফ্রেশ হ।
— হুম।

ঘরে গিয়ে রিতী চুপচাপ হয়ে যায়। ছুটির সাথেও কথা বলেনা। ছুটি অনেক বার চেষ্টা করেছে। কিন্তু পাত্তা পায়নি।‌স্বাভাবিক কথা বলাও বন্ধ করে দেয়। রুম্পা কথাটা ছানোয়ার কে জানাতেই ছানোয়ার টেনশনে পড়ে যায়। সন্দেহ প্রগাড় হয়। সেদিন পরিক্ষা শেষে হুট করে কলেজ চলে যাওয়া আবার ফিরে এসে এরকম চুপচাপ হয়ে যাওয়া অঙ্ক মেলাতে থাকে। স্কুল শেষে ছুটে রিতীর কলেজে। পা দিতে না দিতেই মস্ত বড় ধাক্কা খায় । মেয়ে তার কেনো চুপচাপ হয়ে গেছে তা আর বুঝতে বাকি থাকেনা। ছুটে যায় প্রিন্সিপালের রুমে। সালাম দিয়ে অভিযোগ করে,
— আপনাদের কলেজে এরকম একটা ঘটনা ঘটে গেছে পুরো কলেজ পোস্টার দিয়ে ঢেকে গেছে, আমার মেয়ের নামে এরকম নোংরা একটা রটনা রটিয়ে দিয়ে গেলো কেউ আর আপনারা সেটার কোন প্রতিবাদ করলেন না? দুদিন আগে এই পোস্টার আমার মেয়ে দেখে গেছে এখনো কিভাবে লাগানো থাকে? আপনাদের কি রেপুটেশনের ভয় নেই?
— শান্ত হন স্যার। আমাদের রেপুটেশনের ভয় আছে। সেজন্য ই আমরা পারছিনা এই কলেজ নোংরা মুক্ত করতে। আমাদের উপরে যারা থাকে তাদের উপর কথা বললে হিতে না বিপরীত হয়ে যায়। যে ছেলে এসব করেছে তার উপরে হাত আছে । আর আমাদের দায়িত্ব আমরা পালন করেছি। বকাঝকা না করে রিতীকে বুঝিয়েছি। এসব ছেলেমানুষী না করে মান সম্মান বজায় রাখতে। এই বয়সে আবেগে গলে এদিক সেদিক বাইকে ঘুরাঘুরি, প্রতিদিন দেখাদেখি,মেলামেশা না করতে। নিজের লক্ষ্যের দিক নজর দিতে।

ঠান্ডা গালে সপাটে জুতোর বাড়ি পড়লো ছানোয়ারের গালে। এতোদূর…. ? বিদায় নিয়ে বাড়ি ফিরেই রিতীকে সামনে ডাকলো। রিতী মায়ের ডাকে বাবার কাছে এলো। পিছু পিছু ছুটিও এসে দরজায় দাঁড়ালো। ছানোয়ার ইশারায় বসতে বললে রিতী খাটের একপাশে বসলো। থমথমে গলায় ছানোয়ার সোজাসুজি বললো,
— কতদিন ধরে চলছে ঐ বখাটের সাথে ঘুরাফেরা?
রিতী চমকে উঠলো। বড় বড় চোখ করে বাবার দিকে তাকালো। ছানোয়ার আবারো বললো,
— তুমি কি মানো আমি তোমার বাবা?
এবার রিতী আরো অবাক হলো। চোখ ছোট করে প্রশ্ন করলো
— এটা কেমন প্রশ্ন বাবা?
— যদি আমাকে বাবাই মানো তাহলে এতো দিন ধরে কেনো চলছে এসব লুকোচুরি? বাইকে নাকি ঘুরতে যাও? প্রতিদিন নাকি কলেজে দেখা করো? হাসি ঠাট্টা নাকি লেগেই থাকে? মোরেও নাকি তোমাকে ইঙ্গিত দেয়?
— বাবা আমি কিছু করিনি। বলেই কেঁদে ফেলে রিতী। ছানোয়ার ধমকে উঠে বলে,
— তুমি কি করেছো তুমি নিজেও বুঝতে পারোনি। কি ভেবেছো? অনেক বড় হয়ে গেছো? প্রবলেম গুলো একা একা সলভ করবে? তাহলে বাবাকে কি দরকার? বাবাকে কোন প্রয়োজন নেই তোমার।
— বাবা আমি সরি। আমি ভেবেছিলাম তুমি জানলে ঝামেলা বাড়বে বয় কমবেনা। ঐ ছেলে বিরক্ত করতে করতে একসময় নিজেই বিরক্ত হয়ে চলে যাবে। আর তারা ভালো মানুষ না বাবা। ক্ষতি করে দিবে।
— তারজন্য ই আজ বাড়ি বয়ে এসে ঝামেলা করে। আজ তোমার জন্য তোমার বাবার গালে সটাটে চড় পড়েছে জানো তুমি? তোমার স্যারদের সামনে আমার মাথা হেড হয়ে ফিরে আসতে হয়েছে। আমি গিয়েছিলাম ছেলেটার বিচার নিয়ে তারা উল্টো আমার মেয়ের বিচার শুনিয়ে দিয়েছে। এইদিন দেখার জন্য আমি এতো কষ্ট করে বড় করেছি তোমাকে। তোমার মুখ দেখতে ইচ্ছে করছেনা আমার। সর এখন সামনে থেকে। রিতী কিছু বলতে যাবে তখন আবার হুংকার ছাড়ে — যেতে বলেছিনা তোমায়? এখন কি বাবার সাথেও বেয়াদবি করবে? রিতী ঘরে এসে অঝোরে কাদে। বোনের কান্না দেখে ছুটির খুব মন খারাপ করে। আপুর পাশেই বসে থাকি।

রিতী কোচিং এ ভর্তি হয়েছে। কয়েক দিন ক্লাস করার নতুন শিফটেই পায় তার পরিচিত কয়েক সহপাঠীর মুখ। তারা কুশল বিনিময় আগে করতো কেমন আছো বলে। আর এখন করে রিলেশন কেমন যাচ্ছে? বলে। রিতীর এসব ভালো লাগেনা। এদের এড়িয়ে চলতে গেলে টেনে ধরে রসিকতা করে। একেকটা কথায় রিতীর গা শির শির করে উঠে। কোনভাবেই এড়ানো যায়না। কেউ কেউ আবার ঠেস দিয়ে কথা বলে। শপিং, খাওয়া-দাওয়া,গাড়িতে ঘুরাঘুরি কেমন হচ্ছে? যার মানে দাঁড়ায় রিতী টাকার লোভে ঐ বখাটেটার সাথে রিলেশনে জড়িয়েছে। এতোসব আর নিতে পারেনা রিতী। দিন দিন ডিপ্রেশনে চলে যাচ্ছে। যে সময়ে তার রাত দিন এক করে সপ্ন বুনার কথা সে সময়ে সে উদাস হয়ে আছে। পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারছেনা। রিতী বিভিন্ন উপায় ট্রাই করছে নিজেকে ভালো রাখতে। কোচিং থেকে বাড়ি ফিরে একদিন দেখে রুম্পা কয়েকটা ছবি হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছে। চোখ দুটো ছলছল করছে। কিছু হয়েছে ভেবে দৌড়ে আসে রিতী। — মা কাঁদছো কেনো? কি হয়েছে? বলতেই সজোরে গালে থাপ্পড় পড়ে। রিতীর সামনে ছবিগুলো মেলে ধরে হাতে একটা চিরকুট গুঁজে দিয়ে বলে ,
— এতো দিন ফোনেও কথা হতো তাইনা? একটা ছেলে যদি এসব না দিয়ে যেতো তাহলে তো জানতেই পারতাম না। তোকে বিশ্বাস করেছিলাম আমি আর তোর বাবা। এই প্রতিদান দিলি ? তোর বাবা জানতে পারলে শেষ হয়ে যাবে। পেটের থেকে আমি যে নিমুকহারাম বের করেছি।

রিতী ছবিগুলো দেখে। কখনো সোহাগের সাথে বসে আছে আবার কখনো দাঁড়িয়ে আছে। নানা ভাবে ছবি। চিরকুট খুলে দেখে তাতে বড় বড় করে লেখা,
— ফোন অফ করেছো কোন সাহসে? আজ না খুললে কাল এই ছবিগুলো তোমার বাড়ির গলি থেকে মোড় পর্যন্ত টাঙ্গানো থাকবে।
রিতী শূন্য হয়ে কিছুক্ষণ বসে থাকে। তারপর নিজেই উঠে রুমের দিকে পা বাড়ায়। যাওয়ার সময় রুম্পাকে বলে,
— বাবাকে কিছু বলোনা। আই প্রমিজ ইউ । এরপর থেকে আর কোন সমস্যা হবেনা।‌
রাগে জিদে সোহাগকে কল করে। সরাসরি প্রশ্ন করে,
— চি চান কি আপনে?
— ঐ হৈ পিরিতি! তুমি আমাকে কল দিলে? পেয়েছো বুঝি ছবিগুলো?
— হ্যা পেয়েছি। আপনার জন্য আমার জীবনটা এলোমেলো হয়ে গেছে। এবার মনে হয় আমাদের দুজনের ডিসকাশনে আসা উচিত।
রিতীর কথা শুনে সোহাগ হো হো করে হেঁসে ফেলে। রিতীর রাগ হয়। রাগ চেপে প্রশ্ন করে,
— কি ঠিক কি কারণে আমার পিছু পড়ে আছেন?
— তোমার রুপের কারণে। পিরিতি তুমি কি জানো তোমায় যেদিন দেখেছিলাম সেদিন আমি পলক ফেলতে পারিনি। বলবনা যে তোমার থেকে সুন্দর মেয়ে আমি দেখিনি। তবে তোমার মতো সুন্দর আমার চোখে আজ অব্দি ভাসেনি। তোমার মধ্যে কিছু একটা আছে যা অন্য মেয়ের মধ্যে নেই। ছুটির মতো ছোট্ট ছিলে। দেড়বছরেই কেমন ফার্মের মতো বড়ো হয়ে গেলে। দেহে গড়নে বদনে ইসসসসস… মাথাটা পুরো আমার নষ্ট করে দিলে। আমি মেয়েদের পেছনে কখনো দশদিনের বেশী ঘুড়িনি। তোমার পেছনেও ঘুরতামনা। তোমার ভাব সাব আমার মোটেই ভালো লাগেনা। মেয়ে মানুষ হবে লজ্জাবতী ফুলের মতো। ধরবো আর নুইয়ে পড়বে। আর তুমি পুরো উল্টোটা।যতই‌ ধরি ততোই তেজে উঠো। তোমার পেছনে ঘুরা বাদ দিতে চাই। অনেক বার চেষ্টা করি। কিন্তু পেরে উঠিনা। বেহায়া চোখ দুটো সারাদিন তোমার শরীরে ঘুরা ঘুরি করতে চায়। ভাই ব্রাদারস দের সাথে তোমার আলাপচারিতা করে যাই। তোমাকে না দেখলে রাতে দু চোখের পাতা এক করতে পারিনা। তোমার জন্য আমার চোখের অসুখ করেছে। সেই অসুখ একমাত্র মিটবে তোমাকে পেলে।
— এতো খারাপ আপনি!
— লিসেন রিতী। আমি সিরিয়াসলি তোমাকে কিছু বলতে চাই। তোমাকে আমার ভালোলাগে। তোমার প্রতি মোহ কাজ করে। শুধু আমার না। আমার সাঙ্গ পাঙ্গ সবাই তোমাকে পাবার সপ্ন দেখে। তবে প্রথম চান্স আমারি।‌ ভালোলাগা মোহ মানেই ফ্যান্টাসি। তুমি হচ্ছো আমার সেই ফ্যান্টাসি। আমি শুধু আমার নিজেকে ভালোবাসি। নিজের ভালো থাকা, ভালোলাগাকে গুরুত্ব দেই। তোমার জন্য আমি প্রতিনিয়ত ডিস্টার্ব হচ্ছি। তোমাকে একান্তে যেদিন থেকে চেয়েছি সেদিন থেকে আমার অন্য কোন মেয়ে ভালোলাগেনা যা আমার স্বভাবের বিপরীত। আমি দেখতে পাচ্ছি আমি ধীরে ধীরে নিজের থেকে কোথাও হারিয়ে যাচ্ছি। তোমাকে দেখলে আমার ঘোর কাজ করে। আমি আমার জীবনের এসব জটিলতা থেকে বেরিয়ে আসতে চাই। শান্তিতে নিশ্বাস ফেলতে চাই। তোমাকে পাওয়ার মাধ্যমেই একমাত্র সম্ভব। আমি ঠোঁট কাটা তাই শুনতে খারাপ লাগে। তুমি জানো আমি জোর করতে পছন্দ করিনা। যদি করতাম তাহলে এতোদিন তোমার পেছনে বেকার লেগে থাকতাম না। একটা রাত আমার হও, আমার নেশা কাটিয়ে দাও কসম লাগে তারপর আর কখনোই আমার দ্বারা ডিস্টার্ব হবেনা। তুমি আমাকে ডিস্টার্ব করো জন্য ই আমি তোমাকে ডিস্টার্ব করি নয়তো অপাত্রে মুক্তো ছিটানোর মতো ছেলে আমি না। তবে এরপর আমি আর তোমাকে রক্ষা করতে পারবোনা।
— কলঙ্কিত করে রাস্তায় ছেড়ে দিবেন আমাকে? রক্ষা করবেন না?
— আমার নেশা কাটিয়ে দাও তারপর আমি আর তোমাকে চিনিনা।
— বেশ। তবে তাই হবে।
— এতো সহজে রাজি হয়ে গেলে?
— সহজ ছিলো কি?
সোহাগ দাঁতে দাঁত চেপে হেসে উঠে।
— আমি আসবো আপনার কাছে। তবে মনে রাখবেন শুধু একরাতের জন্য। আমার কাছে এই একটা রাতই সময় আছে শুধু আপনার জন্যে।

চলবে,
লাবিবা তানহা এলিজা ~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here