বিষ_করেছি_পান অন্তিম পর্ব

0
1191

#বিষ_করেছি_পান
অন্তিম পর্ব

(কপি করা নিষেধ)
স্কলারশিপটা রিতী পেয়েই গিয়েছিলো। আজ বছর দুয়েক সে ইংল্যান্ডে। বাড়ির কথা বিশেষ মনে পড়ে। বাবা মা ছুটি তমাল কে ভীষন মিস করে। ছুটির সাথে যোগাযোগ হলেও যোগাযোগ নেই ছানোয়ার রুম্পার সাথে। মেয়ের প্রতি এক আকাশ অভিমান অভিযোগ নিয়ে দিনাতিপাত করছেন তারা। দোষ একটাই রিতী উনাদের ঠকিয়েছে। রিতী যেনো হাঁপিয়ে উঠেছিলো পরিবারের অগোচরে সম্পর্কটাকে বইয়ে নিতে। দেশ ছাড়ার আগ মুহূর্তে তাঁদের সব জানিয়েই অজানা পথে পা বাড়িয়েছে। শেষ মুহূর্তে না নাজালে নিজেকে আজ এই পজিশনে দেখতে হতোনা। ছানোয়ার মেয়েকে বিদেশ ভুইয়ে একা ছাড়তে নারাজ। ছেলে দেখা হলো রিতীর জন্য। ভাগ্য ভালো উপযুক্ত পাত্রও পেয়ে গেলো। পাত্র ও রিতীর সাথে ইংল্যান্ড এ পা রাখবে হাইয়ার স্টাডিজের জন্য। এরমধ্যে ই একটা বিপত্তি ঘটে গেলো। সোহাগ হুট করেই নিরুদ্দেশ হয়ে গেলো। তাকে আর কোথাও খুজে পেলোনা রিতী আর তার শ্বশুর শ্বাশুড়ি। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে রিতীর শ্বশুড়ি ভেঙে পড়লেন। রিতীর বিয়ের তোড়জোড় শুরু হলো। বিবাহিত নারী কি করে আরেকটা বিয়ে করতে পারে স্বামী থাকা সত্ত্বেও রিতী মানতে পারলোনা। এদিকে যখন চার মাস সোহাগ নিরুদ্দেশ সোহাগী বুঝে গেলো তার ছেলের সংসার দেখার কপাল তার হয়নি। রিতীকে অন্যত্র বিয়ে করে সুখী হতে পারমিশন দিয়ে দিলো। রিতী ভেবেছিলো উনারা এসে আবার মা বাবার সাথে কথা বলবে। রিতীকে তাঁদের ছেলের বউ দাবী করবে। তা না করে রিতীকে মুক্ত করে দিলো। রিতী এতোটা ধকল সইতে পারলোনা। অসুস্থ হয়ে গেলো। সময় সংলাপ সম্পর্কে ছানোয়ারকে অবগত না করেই নির্দিষ্ট সময়ে এক বড় ভাইয়ের মাধ্যমে টিকিট কেটে মধ্যরাতে বাড়ি ছাড়লো। ছাড়ার আগে চিঠি তে লিখে গেলো তার এবং সোহাগের ঘটা এই অব্দি সকল ঘটনা। নিখোঁজ সোহাগের কথাটাও লিখতে ভুললোনা। তবে ছুটি আর তমালের সঙ্গ পাবার কথাটা চেপে গেলো। ক্ষমা চাইলেও যে ক্ষমাটা পাবেনা তা জেনেও ক্ষমা চাইলো। সবাই থেকে ও একা হয়ে গেলো যেনো রিতী । আশাহত, প্রিয়জন হারানোর বেদনায় রিতী যখন ওয়েটিং রুমে বসে মুখ চেপে কাদছিলো তখনই শুনতে পায় এক তৃপ্তির ডাক। যে ডাক গত চারমাসে একবার শোনার জন্য অসংখ্য বার তৃষ্ণায় কাতর হয়েছে । অদূরেই দেখা মেলে খুবই গোছানো এক পুরুষের। অচেনা ভঙিতে দাঁড়ানো মানুষ টিই যে রিতী সব থেকে বেশি চেনা! যার পায়ের নখ থেকে চুল পর্যন্ত অসংখ্য বার ছুঁয়েছে রিতীর প্রেমছোয়া।
— পিরিতি?
ফের সেই ডাক। জায়গা করে নেয় রিতীর পাশের জায়গাটি। রিতী পাশে ঘুরে তাকালো। কেউ কোন কথা বললো না । তৃষ্ণা মিটিয়ে একে অপরকে দেখতে লাগলো। হাতটা রিতীই প্রথম উঠালো। ছুঁয়ে দিলো সোহাগের হাত। কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করলো,
— কোথায় ছিলে? এতো দিন?
— রিহ্যাব।
ছোট্ট এই উত্তর টুকুই যথেষ্ট রিতীর মান অভিমান সব গলে মাটিতে ছড়িয়ে দিতে। বাকিটুকু অভিমান সেটাও চাপা দিলো।
— আমার জন্য?
— হু।
— আমি চলে যাচ্ছি জানলে কিভাবে?
— পারভেজ ভাই বলেছে।
রিতী ঠোঁট চেপে কান্না থামালো। অভিযোগ করলো,
— সেখানেও তুমি পৌঁছে গেছো!
— জেনেশুনে বিষ করেছি পান। বিষের নেশায় এগুবো আমি যতদূর যায় আমার প্রাণ!

রিতী ফোনের নোটবুকে ঠিকানা লিখে দিলো। ফোন নাম্বার দিতে পারলো না। শেষবার জড়িয়ে ধরলো। আজ বছর দুয়েক হলো তাকে জড়িয়ে ধরা হয়না। তবে সে সেই ঠিকানায় ঠিকি চিঠি পাঠায়। কন্ট্রাক্ট নাম্বার চায়। রিতী উত্তর পাঠায় না। রিতী জানে সোহাগ পাগলামী করবে।রিতীর সাথে কথা বললেই পাগলামী করবে। রিতীর আর এখানে থাকা হবেনা। পি এইচডি না করে রিতী দেশেও ফিরবে না। যেদিন রিতী চিঠি পায়..চিঠিটা পড়ার পর রিতী জানে তার সময় গুলো কিভাবে যায়। সোহাগের আবেগী কথাগুলো একদম বুকে তীরের মতো লাগে। সেই ক্ষততে পাগলামী চেপে যায় রিতীর রন্ধে রন্ধে। শ্বশুরের কড়া কথায় থামে সেই পাগলামী। অবসর কাটে সোহাগের চিন্তায় চিন্তায়। কেমন আছে কি করছে কত শত প্রশ্ন হাবিজাবি! রমিজউদ্দিন এর কাছ থেকে জানতে পারে সোহাগের বাহিরটা। আর চিঠিতে জানতে পারে তার ভেতরটা। কথা বলিয়ে দিতে চেয়েছিলেন রমিজউদ্দিন কয়েকবার। ছেলেকে সামলাতে না পেরেই হয়তো চেয়েছিলেন। রিতী কথা বলেনি। একবার কথা বললে রিতী বিদেশের মাটিতে একদিনের জন্য ও যে টিকতে পারবে না সেটা রিতী জানে। সোহাগ ভালো আছে। ছটফটানি এই দুবছরে আগে থেকেই কমেছে। দেশে থাকতেই তো রিতী সক্ষম হয়েছে খারাপ সঙ্গ থেকে সোহাগকে মুক্ত করতে। নেশাটাও তখন ই ছেড়েছে। এখন কি করছে জানতে চাইলে রমিজউদ্দিন হেসে বলে,
— বাপের বেটা বাপের মতো হবার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমার সব কথা পাই টু পাই শুনে।
রিতী হাসে।

গভীর রাতে যখন রিতী ঘুমুচ্ছে তখনই ফোন বেজে উঠে। নিশ্চয় দেশ থেকে কল। টাইমের হিউজ ডিসটেন্স রয়েছে। রিতী তাড়াহুড়ো করে কম্বল সরিয়ে উঠে বসে।
ছুটি কল দিয়েছে। রিসিভ করে কানে তুলতেই ভেসে আসে একটা বাক্য।
— আপু তোমার সাথে বাবা কথা বলবে।
রিতী স্তব্দ হয়ে যায় শোনা মাত্রই। ভাংগা ভাংগা গলায় কি বললো ছুটি? বাবা কথা বলবে? এতো দিন পর? বাবাকি তাহলে আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছে? রিতীর খুশিতে জোরে জোরে শ্বাস পড়ছে।উত্তেজনায় চিৎকার করে বলে,
— এই ছুটি কাদছিস নাকি? বাবাকি আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছে?
অপরপাশ থেকে ছুটির হাউমাউ করে কান্না করে উঠে। রিতী এবার দুটানায় ভোগতে থাকে। কিছুক্ষণ পরেই শুনতে পায় রক্ত হীম করা সেই কন্ঠ।
— রিতী…
— বাবাহ।
— কেমন আছো?
— বাবাহ.. বাবা..বাবা.. ও বাবা.. বাবা…

রিতী যেনো পাগল হয়ে গেছে। কতগুলো দিন ও বাবা ডাকে না। বাদ পড়া সব গুলো ডাক যেনো বেরিয়ে আসতে চাইছে। বাধ মানছেনা। রুম্পার চোখ ভিজে উঠে। ছানোয়ার আঙুলে চোঁখের জল মুছে।
— বাড়ি আসো মা।
— বাবা।
— ভাগ্যে যা ছিলো তাই ঘটেছে। হয়তো আমার হাতে কিছু ছিলোনা।
— আমায় ক্ষমা করেছো বাবা?
— আমার ভাগ্যটাই খারাপ মা। কোন সুপুত্রকে আমার জামাতা করার সৌভাগ্য হলোনা। তবে আমার ছোট মেয়ের বেলায় আমি এই ভুলটা করবোনা। আমি ছুটির বিয়ে ঠিক করেছি। তুমি দিন দশেকের মধ্যে পারলে বাসায় আশার চেষ্টা করো। বড় মেয়ে ব্যতীত তো বুঝোই সমাজের মুখ বন্ধ করতে পারবোনা। সোহাগকে নিয়ে বোনের বিয়েতে এটেন্ড করে যেও।
— ছুটি রাজী বাবা?
— রাজী হবেনা কেনো? অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ছে। উপযুক্ত সময়। ছেলে ভালো। পূবালী ব্যাংকে অফিসার।
— তাহলে ছুটি কাঁদছে কেনো বাবা?
— তোমার বোনকে বুঝাও। শিক্ষিত ছেলে দেখে বিয়ে দিচ্ছি। ওকে অশিক্ষিত রাখবেনা। পড়াশোনা বিয়ের পরেও করতে পারবে। এরজন্য আমি আমার কথা ফিরিয়ে নিতে পারবো না।
— জোর হয়ে গেলো না বাবা?
— আমি কি আমার মেয়ের খারাপ চাই? তুমি তোমার কপাল খারাপ করেছো জন্য কি আমি ছুটির সাথেও এটা হতে দিবো? এক মেয়ে আমার মান রাখতে পারেনি। এবার আরেক মেয়ের দেখি বাবার প্রতি কতটুকু ভালোবাসা।

ছুটি রিতীর সাথে কান্নার কারণে কথাই বলতে পারলো না। শুধু বললো,
— আপু আমি মন থেকে কাউকে কখনো মানতে পারবো না।
ছুটির উপর জোর খাটানো হচ্ছে। ছুটি সবটা মেনে নিচ্ছে। কষ্ট হাহাকারের মধ্যে রিতী দেশে এলোনা। বোন হিসেবে সে ব্যর্থ। কাছে থেকেও যখন বোনের জন্য কিছু করতে পারবেনা তখন দূরে থাকাই শ্রেয়। বোন অন্তত এটা জানুক তার সব থেকে খারাপ সময়ে তার বোন তার কাছে ছিলোনা। কাছে থেকে ক্ষতি হতে দেবার চেয়ে দূরে থাকাই ভালো। রিতী তবুও বোঝালো বাবাকে। ছুটির পড়াশোনা শেষ করতে দেওয়া হোক। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর সুযোগ দেওয়া হোক। জীবিকার তাগিদে যখন দুনিয়া চিনবে তখন পুরোনো আবেগ ঠিকই এককোনায় ফেলে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করবে। উপযুক্ত সময়ের অপেক্ষায়। সময় অনেক দূর এগিয়ে গেছে।

ছুটির গায়ে হলুদের দিন কোথা থেকে দৌড়ে এসে জাপটে ধরে ঝিমা। ঝিমাকে দেখে ছুটি অবাক। ঝিমা আসবে কেউ জানায়নি তাকে। সে বাড়ি যে দাওয়াত করা হয়েছে কার্ড ই তো দেখেনি সে। সারপ্রাইজ বলে চিৎকার করে ঝিমা হর হর করে কেঁদে উঠে। প্রিয় বান্ধুবীর মুখটা দেখে ছুটি ও আনন্দে কেঁদে দেয়।
— কেমন আছিস তুই? কাকী এসেছে?
— আমরা সবাই এসেছি ছুটি তোর বিয়েতে।
রতন শিপ্রু,মলি, ঝিমাকে দেখে ছুটির আনন্দে যেনো লাফাতে ইচ্ছা করছে। এতোক্ষনের গুমোট পরিবেশ এখনি হৈ হুল্লোড়ে পরিণত হয়। শিপ্রু ছুটির গাল টেনে দিয়ে বলে,
— ছুটি তুই তো বড় হয়ে গেছিস রে। কি সুন্দরী হয়েছিস। হলুদ শাড়িতে তো তোকে আসমানের পরী লাগছে।
পাশের বাড়ির ভাবী‌ বলে,
— আমাদের মেয়ে তো পরীই। জামাইয়ের চোখ ছানাবড়া হয় কিনা সেটাই দেখার অপেক্ষা।
সবাই হেসে উঠে। ছুটি ঝিমার হাত ধরে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ায়। উঠোনে এসে সবার সাথেই কথা বলে। কতদিন পর এই মানুষগুলোকে ছুটি দেখতে পাচ্ছে। রতনের মাতো ছুটিকে বুকে টেনে নেয়। রান্নাঘরে উকি দিতেই দেখে কাকিরা আসতে না আসতেই কাজৈ হাত বাড়িয়েছে। হলুদ শাড়ী পড়েই ঝিমার হাত ধরে ছুটি গুটি গুটি পায়ে এদিক সেদিক ঘুরে বেড়ায়। ছুটির এভাবে হাঁটাচলা ঝিমার ভালো লাগছে না। উৎসুক চোখ জোড়া দেখতেই যা বোঝার বুঝে যায়। গলা নামিয়ে জিজ্ঞেস করে,
— ছুটি বাঁধন ভাইকে ভুলতে পেরেছিস তো?
— না পারার কি আছে? কিশোরী বয়সের আবেগ ধরে রাখবো? আমি কি এখনো কিশোরী আছি নাকি?
— তাহলে কাকে খুঁজছিস?
— দেখছিলাম। কাল এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো। মায়া লাগছে খুব। যাই হোক রুমে চল। আমার আবার বাড়ির মায়া থেকে মানুষের মায়া কাটানোর ভালো অভিজ্ঞতা আছে।
উত্তরের ছোট রুমে ছুটি ঝিমাকে নিয়ে গিয়ে বসে থাকে। কোলাহল ভালো লাগছে না। ঝিমা বলে,
— তুই অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছিস ছুটি। আগের ছুটিকে পাচ্ছিনা। এতো দিন পর আমার সাথে দেখা একটু নরম হয়ে কথা বলনা।
— আগে ছুটি ছিলো বাঁধনের আর এখন রমিজের। পরিবর্তন তো হবেই এটা তেমন কিছু না। বাইরে যা আনন্দ কর। বান্ধবীর বিয়ে বলে কথা!
ঝিমা শুকনো হাসে। ছুটির কপালে চুমু দেয়।
— তোকে দেখে ভালো লাগছে। সত্যি অনেক বোঝদার তুই। কি সুন্দর নিজের জীবন গুছিয়ে নিয়েছিস।বোঝাতে পারলাম না শুধু ভাইয়াকেই। কেনো যে জীবনের প্রতি এতো উদাসীনতা!
— ওহ! তাই নাকি? মন খারাপ করিস না। আমি জানতাম তোর ভাই জীবনেও সুখী হবেনা। হা নিঃশ্বাস চিনিস? তোর ভাইয়ের জীবনে হা নিঃশ্বাস লেগেছে। আমাকে আবার দোষ দিস না। আমি তো সরেই এসেছি তার জীবন থেকে। এখন তার বউ বাচ্চা নিয়ে সংসারে সুখী না হতে পারলে জোর করে আমাকে আবার টানিস না।
ছুটির কটকট কথায় আবার শুকনো হাসে। বাইরে থেকে কে একজন বলে,
— ছুটি এই রুমে। হ্যা দেখা করে আসো।
ঝিমা ছুটিকে রেখে বেরিয়ে যায়। দরজায় দেখা হয় বাঁধনের সাথে। হ্যা বাঁধন ই দেখা করতে এসেছে ছুটির সাথে। হাতে মস্ত বড় একটা প্যাকেট। ঝিমা আর বাইরে যায়না। দরজায় পিঠে ঠেস দিয়ে দাঁড়ায়। বাঁধন ছুটির দিকে এগিয়ে যায়।
— কিরে ছুটি? কেমন আছিস? নে ধর এটা তোর।
ছুটি অদ্ভুত ভাবে হাসে। প্যাকেটটা নিয়ে একটানে খুলে ফেলে।
— তোর চতুরামি গেলো না। আস্তে খুল। এখনি কি দেখতে হবে? পরে দেখলে চলবেনা?
— বাসী জিনিস গন্ধ লাগে বাঁধন ভাই। পানতা আমি খাইনা।
বাঁধন হাসে। ঝিমা বাঁধন আর ছুটির স্বাভাবিকতা দেখে মুগ্ধ চোখে। কি সুন্দর কথা বলছে! যেনো কারো মনে কখনো দাগ ছিলোনা। ঠিক আগের মতো। ঝিমার অবাকতা বাড়ে একটু একটু করে। যে ছুটিকে কিছুক্ষন আগেও বলেছে মন শক্ত হয়ে গেছে পরিবর্তন হয়েছে সেই ছুটির পরিবর্তন হয়নি। বাঁধনের কাছে সে আগের ছুটিই আছে। কোমল অথচ চতুর, বুদ্ধিদীপ্তা!
সাত রংএর সাতটি হাফ সিল্কের শাড়ী। ছুটি গায়ে মেলে আয়নায় দেখছে।
— আমাকে কোনটায় বেশী মানায় বাঁধন ভাই? এটাই না এটাই?
— তোকে সব রঙে ভালো লাগবে। এদিকে আয় এতো দেখতে হবে না। সুমি পছন্দ করে দিয়েছে।
— সুমি আপুকে কেনো আনলেনা? আমি দাওয়াত করলাম তাও আসলোনা। এখন তো বিয়ের কনে হয়েছি গিয়ে নিয়ে আসতে পারবো না।
— আগে জানলে নিয়ে আসতে পারতাম। মন খারাপ করিস না।
ঝিমা এগিয়ে এসে বলে,
— গত জম্মদিনে ভাইয়া আমাকে এই সাতটি শাড়ীই দিয়েছিলে না?
— হ্যা তখনি নিয়েছি। তোকে তো দিয়েছি। ছুটিকে দেওয়া হয়নি। তোর জন্য কিছু নিলেতো এই উড়নচন্ডী কে ছাড়া দেওয়া যায়না।
ঝিমা হাসে। গত কয়েক বছরে রাগে অনুরাগে গিয়েছে তাদের সম্পর্ক। মাস দুয়েক আগে জম্মদিনে কয়েকবছর পর বাঁধন ঝিমার জন্য গিফট হিসেবে শাড়ি কিনেছে। অভ্যাসটা পাল্টায়নি। কিছু কিনলে যে একটা নয় দুটো কিনতে হয় সেটা ভুলে যায়নি।
— এই ঝিমা শাড়ী পড়বি?
— আমি? এখন?
— তুই কলাপাতা রংয়ের টা পড়। আর আমি হলুদ।
— তুই তো হলুদ শাড়ী পড়েই আছিস।
— এটার থেকে ঐটা বেশী সুন্দর লাগছে। বাঁধন ভাই তুমি কিন্তু এখান থেকে যাবেনা। বস। আমরা পাঁচ মিনিটেই আসছি। কাকে বেশী সুন্দর লাগছে বলবে।
বাঁধন মাথা নাড়ায়। ‘ আচ্ছা।’ বাঁধনের খুব ভালো লাগছে ছুটিকে দেখে। বড় হয়ে গেছে মেয়েটি। বেশ সুন্দরী হয়েছে। সব থেকে বড় কথা বাঁধনকে ভুলেছে। আচরণেই প্রকাশ পাচ্ছে। নতুন জীবন সাজাচ্ছে। শুধু সাজাতে পারলোনা বাঁধন। কাউকে ভালোলাগলে যখনি পা বাড়ায় ছুটির মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠে। ভিতরে ভিতরে খারাপ লাগা কাজ করে। মনকে ভাবায় তার জন্য ছুটি কি চেহারা বানিয়েছিলো। মেয়েটা তার প্রতি এডিক্টেড হয়েছিলো। কষ্ট পেয়েছিলো। এখন অবশ্য দিব্যি আছে। কষ্টটুকু বাঁধন কে দিয়ে দিয়েছে। অবচেতন মনকে বাঁধন কখনো পাত্তা দেয়নি। আবার ছাড়তেও পারেনি। আজো পারবেনা। তবে এখন একটা স্বস্তি থাকবে। ছুটি ভালো আছে। তার বাঁধন ভাইকে ভুলে গেছে।

— বাঁধন ভাই।
ঘুরে তাকায় বাঁধন। তার কেনা হলুদ শাড়িতে ছুটি নিজেকে জড়িয়েছে। দীঘল‌ কোমড় অব্দি চুল গুলো ছেড়ে দিয়েছে। মুখে আগে থেকে করা হালকা মেকাব। শরীর জুড়ে মুগ্ধতা ছড়িয়েছে। বাঁধন যেনো একটু ধাক্কা খায়। মুহুর্তেই নিজেকে সামলে নেয়। মুচকি হেসে বলে,
— অনেক সুন্দর লাগছে। সুন্দর করে পড়ে আয়। অগোছালো হয়ে আছে।
— অগোছালো হলে কি হবে বাঁধন ভাই?
— এখনো কি ছোট আছিস? আজ তোর গায়ে হলুদ। কতো মানুষ বাড়িতে!
— আজ গায়ে হলুদ কাল বিয়ে। তারপর তো একজনের সম্পত্তি হয়ে যাবো। উনি না চাইলে আর কেউ আমাকে দেখতে পাবেনা। কিন্তু আমার যে খুব নিজেকে দেখাতে ইচ্ছে করে বাঁধন ভাই! আমি এখন বড় হয়ে গেছি। পূর্ণ যুবতী। তোমাদের তো দ্বিতীয় তৃতীয় চতুর্থ জনকে দেখা জায়েজ আছে। আমাকে একটু দেখোনা বাঁধন ভাই। তোমার বউয়ের আমি কতটুকু কম সুন্দরী……

বাঁধনের কলিজা কেঁপে উঠে। সে যা ধারণা করেছিলো তা ভুল। সে পুরোটাই ভূল! তার ভুলটুকুকে বাকিটুকু প্রমাণ করে দেয় ছুটি মুহুর্তেই। দরজা থেকে সরে এসে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঁধনের বুকে। জাপ্টে ধরে হাউমাউ করে কান্না জুড়ে দেয়। খামচে ধরে বাঁধনের শার্ট । যেনো ছেড়ে দিলেই ফসকে যাবে। বাঁধনের দৃষ্টি দরজার দিকে। খোলা দরজায় দাঁড়িয়ে আছে ঝিমা। বোনের সামনে মনের বিরুদ্ধে গিয়েও বাঁধনের সাহস হচ্ছেনা ছুটিকে বুক থেকে সরানোর। পিঠে খামচি কেঁটে ছুটি কান্নাজড়িত গলাতেই বলে,
” বাঁধন ভাই… আপনি কেনো কয়েকবছর পরে জম্ম নিলেন না? তাহলে আপনাকে আমি পরপুরুষের খাতায় ভুল করেও নাম উঠাতে দিতাম না।”

ঝিমা দৌড়ে এসে ছুটিকে টেনে সড়ায়।ছুটি ঝিমাকে ঝাড়ি দিয়ে বাঁধনের শার্টের কলার খামচে ধরে আর্তনাদ করে উঠে,
” বাঁধন ভাই.. আপনি কেনো আমার হলেন না?”

সেই প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে কাঁপতে কাঁপতে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যায় বাঁধন। সরাসরি ঢেকে পাঠায় মা বাবাকে।
আড়ালে গিয়ে জানায়,
— ” আমি ছুটিকে বিয়ে করতে চাই মা বাবা।”
— ” মাথা খারাপ হলো নাকি তোর? ছুটি তোর রুম্পা খালার মেয়ে। তোর ছোট বোনের মতো। ভুলে যাস না।”
— ” বোন তো না। ছুটিকে এনে দিলে দাও। নয়তো আর কোনদিন আমাকে বিয়ের পিঁড়িতে বসাতে পারবেনা। ”
— কালকে ছুটির বিয়ে আব্বা।
— আমি কিছু জানি না।
— পাগলামি করিসনা। ছুটি আর তোর কোনদিন ই যায়না। কাল মেয়েটার বিয়ে আজ আমি ছানোয়ারকে এসব কথা বলতে পারবোনা। তোর বয়স হয়েছে আব্বা। তুই ডিভোর্সী এটা ভুলে যাস না। সংসার করিস বা না করিস এসব কেউ দেখতে যাবেনা। ছানোয়ারের জায়গায় নিজেকে দাড় করিয়ে দেখছি। তুই যতোই ভালো হস আমি ছুটির বাবা বলে তোর হাতে কোনদিন বিয়ে দিতাম না।
— আমার ছুটি কে চাই বাবা।
— বীণা বোঝাও। তোমার ছেলে এসব কি শুরু করে দিয়েছে? মেয়েটা নতুন জীবন শুরু করতে যাচ্ছে। তোমার ছেলে যেনো এসব কথা না বলে।
বীণা ছেলেকে বোঝাতে চেষ্টা করে। বাঁধন বীণার পা ধরে বসে পড়ে। তার একটা কথাই,
— মা আমার ছুটিকে লাগবে।

নানান কথা বলে বাঁধন কে চুপ রেখেছে বীণা। বাঁধন শোনার মানুষ না। এতো মানুষের মাঝে চুপিসারে ছেলেকে সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে বাঁধনের বাবা মা। বাঁধন উঠে দাঁড়ায়। ছুটির কাছে যাবে। গিয়ে বলবে,
— ছুটি আমি আর বিয়ে করিনি। তুই কি আমাকে বিয়ে করবি? তাহলে হাতটা ধর আমার।
বীণা বুঝতে পেরে তৎক্ষনাৎ বাঁধন কে আটকায়। কোনভাবেই ছাড়েনা। কসম টসম দিয়ে একসার করতে থাকে।
হুট করেই আলমারিতে ছুটির ছবি আইডি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। জম্ম নিবন্ধনের কাগজটাও উধাও। রুম্পা খুঁজতে খুঁজতে অস্থির হয়ে উঠে।
— আমি এখানেই সেদিন গুছিয়ে রেখেছিলাম। কেনো পাচ্ছিনা?
— সর দেখি দেখতে দাও আমায়।
ছুটিকে জিজ্ঞেস করলে ছুটি বলে জানেনা। সারাবাড়ি খুজে পাওয়া যায়না। ছবির কপিও পায়না। দুপুর বেলায় কাজি এসে বসেছে।‌ রেজিস্টি আগে হবে। তারপর বিয়ে। কাগজের জন্য রেজিস্টি হলোনা। তাতে কি? পাত্রপক্ষ চলে এসেছে। যুহরের নামাজ পড়ে মসজিদেই বিয়ে পড়াবে। নামাজে যাবার আগেই মেয়ের কবুল নিয়ে যাবে। এবার মেয়েও উধাও। ছুটিকেও কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়না। মুহুর্তেই শোরগোল পড়ে যায়। ছানোয়ার মাথায় হাত দিয়ে বসে। ঘন্টা দুয়েক অপেক্ষা করে পাত্রপক্ষ যা নয় তা বলে চলে যায়। বীণার পূর্ণ দৃষ্টি বাঁধনের দিকে।
— তুই কিছু করিস নিতো?
— করতে তো চেয়েছিলাম। তুমি দিলে তো?

রুম্পা কান্নাকাটি শুরু করে দেয়। আসরের পর ছুটির চাচার ঘর থেকে বেরিয়ে আসে ছুটি। চোখ মুখ ফোলা ফোলা। দেখেই বোঝা যাচ্ছে ঘুম থেকে উঠেছে। রুম্পার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে,
— এতো কাঁদছো কেনো মা? বিদায়ের সময় কেঁদো। এতো আগেই কেঁদো না।
ছুটির এমন কথা শুনে ছুটিকে আর কেউ বকে না।
— কোথায় ছিলিস তুই?
— চাচার ঘরে। চোখটা লেগে এসেছিলো তো তাই। কি হয়েছে। সবাই এমন চুপসে আছো কেনো?
— তোর বিয়েটা ভেঙে গেছে রে মা। ঐ রিতীর বাবা। ওরা মনে হয় বেশি দুর যেতে পারেনি। ফোন লাগাও না। বলো আবার আসতে।
এই মুহূর্তে বাঁধনের বাবা আটকিয়ে দেয়।
— অপমান হবার জন্য ফোন দিয়ে লাভ নেই। একবার যে অবিশ্বাস করে চলে গেছে ফোন পাওয়া মাত্রই আবার ফিরবে নাকি? বলবে মেয়েকে খুঁজে ধরে এনে আবার গছিয়ে দিতে চাইছি।
— হায় আল্লাহ আমি এবার কি করবো? আমার মেয়েকে কে বিয়ে করবে?
— কি যা তা বলছো? আগের যুগের মতো চিল্লাচিল্লি করবানা।
— এটা শহর না ভাইজান। এটা গ্ৰাম। লোকে আমার মেয়েটাকে ভালো থাকতে দিবে না। ছি ছি করবে।
আশেপাশে গ্ৰামের মানুষ জড়ো হয়ে সিনেমা দেখছে। বৈঠক ভেঙে গেলেই এদের কথার ডালি শুরু হবে এটা ভালোভাবেই বোঝা যাচ্ছে।
— তাহলে গ্ৰামে থাকার ই দরকার নাই। আমি আজি ছুটিকে নিয়ে শহরে চলে যাবো।
— আমাকে আর ঋনী করবেন না ভাইজান। এক মেয়ের জন্য শহর ছেড়েছি। এবার আরেক মেয়ের জন্য গ্ৰাম ছাড়তে পারবোনা। শহর ছাড়লেও এই গ্ৰামে আমাকে থাকতেই হবে। আমার পৈত্রিক জম্মস্থান বলে কথা।
— তাহলে এবার আমাকেই নাহয় ঋনী করো। তোমার মেয়েটাকে আমি চাইছি ছানোয়ার। সব কথার বেড়াজাল থেকে মুক্তির একটাই উপায়। আমার বাঁধনের জন্য তোমার মেয়েটাকে দাও।
— এইটা কি বলতেছেন ভাইজান?
— আমি তোমাকে কিছুই বলবোনা ছানোয়ার।‌ সব ই তোমার জানা। বাঁধন ও আমরাও তোমার খুব কাছ থেকে চেনা। সিদ্ধান্ত তোমার। আমাকে শুধু জানিয়ে দিও ভেবে চিন্তে।

— ছুটি? এতো বুদ্ধি কেনো তোর?
— এখানে বুদ্ধির কি হলো? সরেন। জানেন না আমার বিয়ে ভেঙে গেছে? আমি অপয়া। আমার সাথে কথা বলবেন না।
— মাইর খেতে চাস? সকাল থেকে এসব তুই ঘটিয়েছিস তাইনা?
— বাঁধন ভাই। নিজের চক্রায় তেল দেন। বিয়ে খেতে এসেছেন। বিয়ে হলোনা। এখন বউ নিয়ে ভাগেন। এই ছুটি কোনদিন বিয়ে করবেনা।
— বাঁধন হো হো করে হাসে। হাসতে হাসতেই বলে,
— ছুটি তুই এতো ঘুমালি কি করে বলতো? সাড়ে চার ঘন্টা বাড়িতে কি না কি হয়ে গেলো তুই কিছুই টের পেলিনা !
বাঁধনের পেছনে পেছনে ঝিমা,মলি,রতন,শিপ্রুকে হাসতে হাসতে ছুটির কাছে আসতে দেখে ছুটির চোখ ছানাবড়া। মাথাটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। কি থেকে কি হয়ে গেলো? সব চক্রান্ত এই পাঁচ মাথার কান্ডকারখানা!

এক প্রকার বাধ্য হয়েই বাঁধনের সাথে বিয়ে দিতে হয় ছুটিকে। ছানোয়ারের আপত্তি থাকলেও শান্তি আছে। বাঁধনকে তিনি জানেন। তার মেয়ের কপাল যে এই ছেলের সাথে লাগানোর ছিলো সেটা কোনদিন ভাবতেই পারেনি।

কোনরকম আয়োজন ছাড়াই বিয়ে হয় ছুটি বাঁধনের। মায়ের সেই লাল বেনারসীতে সেজিয়েছে ছুটিকে। মাথায় গাছ থেকে তুলা বেলী ফুলের মালা পরানো। গায়ে মায়ের সেই গহনা। মুগ্ধ চোখে রুপসুধা পান করছে বাঁধন। একতলা বিল্ডিং এর ছাদে দাঁড়িয়ে রিতীকে বার বার ফোনে কানেক্ট করতে ব্যর্থ হচ্ছে ছুটি। তার এই এভারেস্ট জয় করার খবর কখন দিবে রিতীকে? উত্তেজনায় ছটফট করছে ছুটি। বাঁধন আর দূরে দাঁড়িয়ে থাকতে পারেনা। পা বাড়িয়ে দুহাতে বুকের মাঝে জাপটে ধরে ছুটিকে। একেবারে মিশিয়ে নেয় ছুটিকে। খোঁপায় গোঁজা বেলীফুলে নাক ডুবিয়ে শ্বাস টানে। সুগন্ধে মোহরিত হয় মন প্রাণ। ছুটি নিশ্চুপ হয়ে মিশে রয়। ঘাড়ের উপর প্রিয় মানুষ টার উত্তপ্ত নিঃশ্বাস উপভোগ করছে।
— ছুটি?
— হু?
— এই বুকে জায়গাটা তোমার জন্যই ছিলো, আছে, থাকবে। কাউকে দিই নি আমি।‌
— হু।
— বুড়ো বরটাকে নিয়ে কখনো পস্তাবেনাতো? আমি একটুও সুযোগ দিবো না।
— হু।
— কথা বলবেনা? এই বউ ! আমি এখনো তোমার জন্য আনকোরা।
— হু।
বাঁধন ছুটির মুখটা দুহাতে আজলা ভরে সামনে ধরে। ছুটির চোখ থেকে বয়ে যাচ্ছে আনন্দের জলধারা। বাঁধন বাঁধা দেয়না। ঠোঁটে শুষে নিতে থাকে।
— এই রাতটুকুই তুমি কাঁদতে পারো বউ। এরপর আমি মৃত্যু অব্দি তোমাকে কখনো কাঁদতে দিবোনা।
ফোনে নেটওয়ার্ক কানেকশন পেয়েছে। রিতীই কল দিয়েছে। ছুটি কথা বলতে পারেনা। সব কান্না যেনো বোনকেই শুনাতে হবে। রিতীও কাঁদে। চোখ মুছে জিজ্ঞেস করে,
— কোথায় তুই? শ্বশুরবাড়িতে চলে গেছিস?
ছুটি বাঁধনের দিকে তাকিয়ে বলে,
— বাঁধন ভাই বলেছে কাল নিয়ে যাবে। আজ যাবেনা।
— বাঁধন ? ছুটি? বাঁধন ভাই? বাঁধন ভাইয়ের সাথে তোর বিয়ে হয়েছে?
— হ্যা।
— কিভাবে?
— বাঁধন ভাই জানে আমি জানিনা।
— ছুটি সত্যি বলছিস? বাঁধন ভাইয়ের সাথে তোর বিয়ে হয়েছে?
— হ্যা।
— এই ছুটি বেনারসী পড়েছিস তুই? হাতে মেহেদি দিয়েছিস? পায়ে আলতা? খুব সেজেছিস কি? কেমন লাগছে তোকে? বাঁধন ভাই তোকে কি বলে বিয়ে করেছে? ভালোবাসি বলেছে ?
উত্তেজনার বশে রিতী এতো গুলো প্রশ্ন করে বসেছে।
— শুধু বলেছে আমাকে কাল থেকে আর কাঁদতে দিবে না।
রিতী হা হা করে হাসে। চোখ ভেসে যাচ্ছে জলে। এ হাসি খুশির হাসি। এভাবেই সারাজীবন হাসতে চায় সে।

ছুটি বাঁধন আর তার একসঙ্গে একটা সেলফি রিতীকে সেন্ড করে। রিতী মুগ্ধ হয়ে দেখতে থাকে। দু বোনের কি মিল! বিয়েটাও হলো একি শাড়ি একি সাজে! কি সুন্দর লাগছে বাঁধন ছুটিকে!

লেটার বক্সে নতুন লেটার আসছে। রিতী গিয়ে নিয়ে আসে। বরাবরের মতোই সোহাগের চিঠি। যার একটা উত্তর ও সোহাগকে পাঠানো হয়নি। আজ রিতীর মন ভালো। একটু বেশিই ভালো। বাঁধন ছুটির বিয়ে হয়ে গেছে। বাবা সোহাগকে মেনে নিয়েছে। নিজের মাস্টার্স শেষ হয়েছে। দেড়ি হলেও পিএইচডি শেষ করে সেও সোহাগের কাছে ফিরে যাবে। সব ভালো সংবাদের মাঝে হাতের চিঠিটাই সব থেকে প্রিয় সংবাদ। কারণ এতে রিতীর স্বামীর আকুল করা প্রেমবাক্য আছে। বিছানায় গা এলিয়ে চিঠি খুলে পড়তে থাকে। চিঠি দেখে রিতীর চোখ কপালে। পুরো পেইজ ফোন নাম্বারে পূর্ণ। ঠিক কতগুলো ফোন নাম্বার দেওয়া আছে রিতী গুনলো। আটচল্লিশ টা বিডির নাম্বার। লাস্টে লেখা,
‘এর যে কোন একটাতে নক দিলেই চলবে । ‘
এতো দিন যাবৎ ফোন নাম্বার না দেবার রিভেঞ্জ বুঝি এটা? রিতী ছটফট করলো। আবার নিজেকে শান্ত করলো। সারা রাত জুড়ে ভেবে সত্যি সত্যি ই একটা নাম্বার তুলে ডায়াল করলো। এতে যা হবার হোক। ধৈর্য্যের বাধ ভেঙ্গে গেছে। রিতী নিজেকে আর আটকাবে না। রিং হলো কিন্তু রিসিভ হলোনা। রিতী আবার ডায়াল করলো এবারো রিসিভ হলোনা।‌ ফোনটা সামনে নিয়ে রিতী বসে থাকলো। কাটায় কাটায় পাঁচ মিনিট পর টুং করে সেই নাম্বার থেকে একটা মেসেজ আসলো। রিতী কাঁপা হাতে মেসেজটা অপেন করে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল ।
” এইচএসসি জিপি এ ফাইভ। নেক্সট উইকে লন্ডন আসছি। আমার জন্য হলেও আগামী চার বছর তোমাকে বিদেশের মাটি আঁকড়ে ধরে থাকতে হবে। আর আমি আঁকড়ে থাকবো তোমাকে।”

সমাপ্ত~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here