স্বর্নাভ_সুখানুভূতি ~আফিয়া খোন্দকার আপ্পিতা পর্ব-২০

0
363

#স্বর্নাভ_সুখানুভূতি

~আফিয়া খোন্দকার আপ্পিতা

পর্ব-২০

তখন মধ্যবেলা। উদ্ভ্রান্তের মতো পুরো রুম উলোটপালোট করছে জাওয়াদ। ক্লথ কেবিনেটে থাকা ভাজ করা কাপড় গড়াগড়ি খাচ্ছে ফ্লোরে। জুম’আর নামাজে যেতে হবে। কিন্তু একটা পাঞ্জাবি ও খুঁজে পাচ্ছে না। ওদিকে বাবা অপেক্ষা করছে বসার ঘরে। কপালে চিন্তার ভাজ পড়ল, যোগ হলো বিরক্তির রেখা। আকস্মিক মনে পড়ল, তার পাঞ্জাবি না পাওয়ার পিছনে মুশরাফার হাত থাকতে পারে। বিরক্তির সাথে চাপা রাগ ও এসে হানা দিল। চেঁচিয়ে ডাকল,
‘মুশরাফা, এদিকে এসো।’

মুশরাফা ব্যস্ত হাতে রান্না করছে। শুক্রবার বলে সকালে টিফিন তৈরির তাড়া ছিল না। ফলে রান্না করা ও হয়নি। বেলা বাড়তেই রান্নাঘরমুখো হয়েছে। জাওয়াদের ডাক শুনে রুমে এলো। রুমের অবস্থা দেখে ওর চক্ষুচড়ক। কী হাল করেছে রুমের! যেন কোন ময়লার স্তুপ। মুশরাফা অবাক হয়ে বলল,
‘এ অবস্থা কেন রুমের?’

জাওয়াদ বলল, ‘আমার একটা পাঞ্জাবি ও খুঁজে পাচ্ছি না। তুমি ধরেছো?’

মুশরাফা ফ্লোরে ফেলে রাখা কাপড় তুলে ভাজ করতে করতে বলল,
‘আমি ধুয়ে দিয়েছি। ‘

জাওয়াদের রাগ বাড়ল। রাগে গরগর করে বলল,
‘ আমাকে একটাবার জিজ্ঞেস করেছো? এখন আমি নামাজে যাব কিভাবে?’

মুশরাফা শীতল স্বরেই বলল, ‘ পাঞ্জাবি পরেই যাবেন।’

‘ পাঞ্জাবি কোথায় পাব এখন? বানাব আমি?’
ধমকে উঠল জাওয়াদ। মুশরাফা কেবিনেটের দিকে এগুলো। নিজের কাপড় রাখা তাক থেকে একটা প্যাকেট বের করে দিয়ে বলল,
‘ এটা পরে যান।’

জাওয়াদ প্যাকেট নিয়ে দেখল। ভেতরে একটা পাঞ্জাবি। ভ্রু কুঁচকে বলল,
‘ এটা কার?’
‘আপনার জন্য অর্ডার করেছিলাম।’
‘কেন?’
বিস্ময়ের সাথে প্রশ্ন করল জাওয়াদ। মুশরাফা ধীর স্বরেই বলল,
‘স্বামী স্ত্রী একে অপরকে উপহার দেয়া ও সাওয়াবের কাজ। আমি এই সাওয়াবটা লুফে নিতে চেয়েছিলাম, তাই।’

বিয়ের পর থেকে জাওয়াদ ওকে কোন উপহার দেয়নি। সাধারণত, স্বামীরা স্ত্রীদের উপহার দেয়, শাড়ি, গহনা কত কী? জাওয়াদ সেসব কিছুই করেনি। না ঘুরতে নিয়ে গেছে, আর না কিছু কিনে দিয়েছে। বিয়ের শপিং ও মা বোন কিনেছে। মোহরানার টাকা ছাড়া মুশরাফাকে ওর কিছুই দেয়া হয়নি। মুশরাফা আগ বাড়িয়ে ওকে পাঞ্জাবি দিয়ে দিল। ব্যাপারটা লজ্জায় ফেলে দিল জাওয়াদকে। মেয়েটা কি ওকে ওর দায়িত্ববোধ মনে করিয়ে দিচ্ছে! জাওয়াদ স্বরে বিরক্ত মিশিয়ে পাঞ্জাবিটা মুশরাফার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,
‘লাগবে না। আমি শার্ট পরেই যাচ্ছি।’

মুশরাফা ওকে জোর করল না। দায়িত্ব নিয়ে জোর করা যায়, উপহার নিয়ে নয়। উপহার, মন থেকে দেওয়া নেওয়া করতে হয়। মুশরাফা ফ্লোরে ফেলে রাখা শার্ট দেখিয়ে বলল,
‘এই ময়লায় গড়াগড়ি খাওয়া কোন শার্টটা পরে যাবেন? বলুন, আমি ঝাড়ু দিয়ে ঝেড়ে দিই।’

বলে মুখটিপে হাসল। জাওয়াদ ফ্লোরে তাকিয়ে মুখ কুঁচকাল। ফ্লোর থেকে তুলে শার্ট পরবে? অসম্ভব। একটা শার্ট ও ভালো নেই। নিজের উপরই রাগ হলো, রাগের বশত এত হুলস্থুল না করলে কী এমন হতো। অন্তত একটা শার্ট পাওয়া যেত। এখন কী হবে? সব হয়েছে এই মেয়েটার জন্য। মেয়েটা ধুরন্ধর। এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছে, যাতে জাওয়াদের ওর দেয়া পাঞ্জাবি না পরার উপায় থাকে না। আবার দেখো মজা নিচ্ছে! বেয়াদব! জাওয়াদ রেগে তাকাল। মুশরাফা ওর দিকে তাকাল না। তাকালেই জোরে হেসে ফেলবে। হাসি চেপে নতুন পাঞ্জাবি ভাজ করে কেবিনেটের দিকে এগুলো। সেই সাথে বলল,
‘ মানুষ ভালোর মূল্য বুঝে না। যাই, পাঞ্জাবিটা রেখে দিই। ‘

জাওয়াদ দ্রুত পায়ে এগিয়ে এলো। ওর হাত থেকে পাঞ্জাবিটা চো মেরে টেনে নিল। অগ্নিচোখে তাকিয়ে বলল,
‘আল্লাহ, তোমার বিচার করবে, দেখো।’

মুশরাফা হেসে ফেলল এবার। হেসেই বলল,
‘ স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসাবাসির জন্য আল্লাহ বিচারের আওতায় না নিয়ে শুধু সাওয়াব দেন। হালাল সম্পর্কে প্রতি পদে পদে সাওয়াব। ‘

থেমে চোখ মেরে বলল, ‘ এসব তো ভালোবাসা বাসির মধ্যে পড়ে, তাই না? ‘

জাওয়াদ অবাক। কী সাংঘাতিক মেয়ে! ওকে চোখ মারছে! জাওয়াদ রেগে বলল,
‘তুমি মেয়েটা ভীষণ অসভ্য।’

মুশরাফা দমল না। আবার চোখ মেরে বলল,
‘ এই অসভ্যতা জায়েজ। চাইলে আপনি ও অসভ্য হতে পারেন। আমি কিছু মনে করব না। বিশ্বাস করুন!’

জাওয়াদ পাঞ্জাবি পরে নিল। সাইজটা ঠিক দেখে অবাক হলো। এই মেয়ে ওর সাইজ জানল কিভাবে? উত্তরটা মুশরাফাই দিল,
‘ কেবিনেটে আপনার পাঞ্জাবি দেখে নিয়েছিলাম। ‘

মেয়েটার বুদ্ধির তারিফ করতে হয়। জাওয়াদ কিছু বলল না। বোতাম লাগাতে লাগল । মুশরাফা চুপচাপ দেখল। হঠাৎ বলে উঠল,
‘ মাশা আল্লাহ! পাঞ্জাবিটায় সুন্দর লাগছে আপনাকে।’

জাওয়াদ চুল সেট করে গর্বের সাথে বলল,
‘আমাকে সবসময় সুন্দর লাগে। পাঞ্জাবিতে আমার সৌন্দর্য আটকে নেই।’

মুশরাফা বুঝে গেছে, জাওয়াদ কোনভাবে ওকে ক্রেডিট দিবে না। নিজেও স্বীকার করবে না। তাই আর কথা বাড়াল না। জাওয়াদ পারফিউম লাগাতে নিল। মুশরাফা বাধা দিল। একটা আঁতর এগিয়ে দিল,
‘ জুম’আর দিন আঁতর বা সুগন্ধি মেখে মসজিদে যাওয়া সুন্নত। সুন্নত সঠিকভাবে পালন হোক।’

জাওয়াদ নিল না। বলল,
‘এগুলো কেন নিয়েছো? আমি বলেছি?’

মুশরাফা নিজেই আঁতর লাগিয়ে দিয়ে বলল,
‘ রাসূল (সাঃ) তার স্ত্রীকে ফুল উপহার দিতেন। আপনি চাইলে তাকে অনুসরণ করে আমাকে ফুল উপহার দিতে পারেন। আমি কিছু মনে করব না। আপনার মতো এত প্রশ্ন ও করব না। চুপচাপ নিয়ে নিব।’

প্রতি পদে পদে মেয়েটাকে নতুন ভাবে আবিস্কার করে জাওয়াদ। সেই সাথে কত অজানা তথ্য জানা হয় ওর। ইসলাম যে স্বামী স্ত্রীকে এত রোমান্টিক হতে বলেছে, এত শখ আহ্লাদ করতে বলেছে ইতঃপূর্বে জানতোই না সে। স্মেলটা সুন্দর। জাওয়াদের খুব একটা খারাপ লাগে নি। তাও জাওয়াদ মুখ কুঁচকে বলল,
‘ এটার স্মেল ভালো না। আমার গুলোই ভালো।’

মুশরাফা হেসে বলল,
‘আমি আপনার মন পড়তে শিখে গেছি। ‘

জাওয়াদ বিরক্তমাখা চোখে তাকাল। তারপর কিছু না বলে চলে গেল সে।

জয়নাল আবেদীন তার তিন ছেলেকে নিয়ে নামাজে গেছেন। মসজিদ থেকে ফিরেই স্ত্রীকে টেবিলে খাবার দিতে বললেন।
রান্না শেষে খাবার টেবিলে রেখে রুকে ঢুকে গেছে মুশরাফা। আর বের হয়নি। কাকন ও গোসলে ঢুকেছে। অগত্যা খাবার সার্ভ করার ভার মায়মুনার কাধে গিয়ে পড়ল। প্লেট বাটি নিয়ে কিচেন আর ডাইনিং রুমে দৌড়াদৌড়ি করতে গিয়ে রাগ জন্মাল মুশরাফার উপর। মেয়েটা রান্না করে দেই দেই করে চলে গেল। বেড়ে দিলে কী হতো! বেয়াদব মেয়ে!
খাবার সাজিয়ে সবাইকে ডাকলেন। ছেলেরা এসে বসল। কাকন ও বেরিয়ে টেবিলে উপস্থিত হয়েছে। খেতে বসার পর মুশরাফাকে না দেখে জয়নাল আবেদীন জিজ্ঞেস করলেন,
‘ মুশরাফার খাওয়া শেষ? ‘

মায়মুনার রাগে যেন ঘি ঢালল কথাটা। নিজের খোলস ছেড়ে বেরিয়ে ফুঁসে উঠলেন,
‘ ওই মেয়ের নাটকের শেষ নেই। সে খাবে না একসাথে। রুমে গিয়ে একা একা খাবে। বেয়াদব মেয়ে! ‘

জয়নাল আবেদীনের এতক্ষণে মনে পড়ল মুশরাফা পর্দার কথা। তিনি স্ত্রীকে থামিয়ে গম্ভীরমুখে বললেন,
‘ থামো তো! এখানে আসলে ওর পর্দার খেলাপ হবে, তাই আসেনি। সমস্যা তো নেই, ও না হয় পরে খাবে। মেয়েটা যেভাবে ইচ্ছে সেভাবে থাকুক। তুমি কোন ঝামেলা কোরো না।’

মায়মুনা আবার ফুঁসে উঠলেন। ছেলেদের বিচার দিয়ে বললেন,
‘ দেখলি, তোর বাবা কি বলছে? আমি না কি ঝামেলা করি! ঝামেলা করে ওই মেয়ে। আসতে না আসতেই অশান্তি শুরু করেছে। এর সাথে দেখা করবে না, ওর সাথে দেখা করবে না। এত সমস্যা হলে বিয়ে করেছিস কেন? অসভ্য, বেয়াদব মেয়ে!’

জয়নাল আবেদীন ধমকে উঠলেন,
‘ ওর সম্পর্কে তোমাকে আগেই জানানো হয়েছে। তখন তো তোমার আপত্তি ছিল না। সব জেনেশুনে ছেলেকে বিয়ে করিয়ে এনেছো। তবে এখন তোমার আপত্তি কেন?’

মায়মুনা চুপ মেরে গেলেন। শুধুমাত্র ওই মেয়ের জন্য স্বামী তাকে ছেলেদের সামনে ধমকালেন। ব্যাপারটা মানতে পারলেন না তিনি। মনে মনে মুশরাফার প্রতি ক্ষুদ্ধ হলেন। জয়নাল আবেদীন গম্ভীরমুখে বললেন,
‘ চুপচাপ খাও। ‘

সবার খাওয়া থেমে গেছে। জাওয়াদ ভাত নাড়াচাড়া করছে, খাচ্ছেনা। সে বসেছে মায়ের পাশে। মায়ের দিকে তাকাল এক পলক। মা খাওয়া থামিয়ে থম ধরে বসে আছেন। জাওয়াদ বাটি থেকে এক পিস মাছ মায়ের পাতে তুলে দিয়ে বলল,
‘ ও থাক ওর মতো। আমরা আমাদের মতো থাকি। তুমি ওর কথা না ভেবে খাও তো মা। ‘

মায়মুনা ছেলের দিকে অগ্নিচোখে তাকালেন। জাওয়াদ ভয়ে চোখে সরাল। খাওয়ায় নজর দিল। মাকে বুঝ দিতে বলা কথাটা পছন্দ হলো না জয়নাল আবেদীনের।
তিনি এবার ছেলেকে ধমকালেন,
‘ আমাদের মতো থাকি মানে কী? আমাদের মাঝে তোকে টানলি কেন? মুশরাফা তোর বউ। ওর সব দায়িত্ব তোর। মেয়েটা এ বাসায় তোর উছিলায় এসেছে। ওর ভালোমন্দ সব দেখার দায়িত্ব তোর। কোন হেলাফেলা করবি না। খাওয়া শেষ করে গিয়ে ওর খবর নিবি। পারলে কাল থেকে আমাদের সাথে না বসে ওর সাথে বসবি। ঠিক আছে?’

বউ আর মায়ের দ্বন্দ্ব সবচেয়ে অসহায় ব্যক্তি হলো স্বামী। সে দুই দিক থেকে চেপে থাকে। একদিকে কথা বলতে গেলে অন্যদিক চেপে যায়। মায়ের সাপোর্ট নিলে বউ ক্ষেপে, বউয়ের সাপোর্ট নিলে মা ক্ষেপে। ওর বউ কপাল ভালো। বউ ক্ষেপে না। বউয়ের হয়ে বাবা ক্ষেপে।
মায়মুনা ক্ষিপ্ত চোখে তাকিয়ে আছেন ছেলের দিকে, তার চোখ বলে দিচ্ছে বউয়ের সাপোর্ট নিবি তো, তোর রক্ষে নেই। বাবা ও রেগে তাকিয়ে আছেন। তার চোখ বলছে, বউয়ের বিপক্ষে গেলে তোকে আস্ত রাখব না। মহা বিপদে পড়ল জাওয়াদ। এখন জবাব দেয়া মানে বিপদ। নিজে ভীষণ অসহায় মনে হলো ওর। বাবা মায়ের রোষানল থেকে বাঁচতে হলে কেটে পড়তে হবে। জাওয়াদ চট করে খাওয়া ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। কারো দিকে তাকাল না, আর না কোন উত্তর দিল। দিক বেদিক না ভেবে বাসা থেকে বেরিয়ে গেল।

সোজা চলে গেল অনিকের বাসায়। এই ভরদুপুরে বন্ধুকে দেখে চমকাল অনিক। বলল,
‘কীরে, এই অবেলায় কোথা থেকে উদয় হলি?’

জাওয়াদ সে কথার উত্তর দিল না। বিরক্তচোখে তাকিয়ে বলল,
‘তোরে একটা ফ্রিতে এডভাইজ দিই, জীবনে ও বিয়া শাদী নাম নিস না। বউ আর মায়ের দ্বন্দ্বে পড়লে বিয়ের শখ মিটে যাবে। ‘

অনিক ঘটনা আঁচ করতে পেরেছে কিছুটা। তাও জিজ্ঞেস করল, ‘কাহিনি কী?’
জাওয়াদ ঘটনা খুলে বলল। ওর পালানোর কথা শুনে হেসে কাহিল। হাসতে হাসতে বলল,
‘তুই শালা, লক্ষণ সেনের মতো পিছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে আসলি?’

জাওয়াদ ভ্রু কুঁচকাল,
‘ তো আমি বখতিয়ার খিলজির মতো সামনে গিয়ে কড়া জবাব দিব? পাগল না কি! তখন জবাব দেয়া মানেই বিপদ সঙ্কেত। বাদ দে, চল লাঞ্চে যাব। শান্তিমতো খাওয়াটাও খেতে পারলাম না। শালা, এমন জানলে বিয়ের নাম ও নিতাম না।’

অনিক ক্যাটক্যাট করে হাসল। তারপর বন্ধুকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। ঘুরেফিরে রেস্টুরেন্টে ঢুকল। তখন বিকেল চারটা বাজে। খাবার এলে জাওয়াদ খাওয়ায় মন দিল। অনিক জিজ্ঞেস করল,
‘ভাবির খোঁজ নিয়েছিস?’

‘নেয়া লাগবে না। ‘ আবার খাওয়ায় মন দিল জাওয়াদ।

গ্রীষ্মের আবহাওয়া ক্ষণিকে বদলে যায়। এই কাঠফাটা রোদ ছিল, এখন আকাশ কালো করে মেঘে ধরেছে। বাতাস শুরু হয়েছে, যে কোন সময় বৃষ্টি নামবে। খাওয়ার মাঝে জাওয়াদের ফোন বেজে উঠল। ‘রাফা’ নামটা দেখে ভ্রু কুঁচকাল। বাসায় আবার ঝামেলা হয়নি তো! বিপদের আশঙ্কায় ফোন তুলল। মুশরাফা ধীর স্বরে সালাম দিল। পরপরই বলল,
‘ আপনি কোথায়?’

জাওয়াদ নামাজ থেকে ফিরে রুমে যায়নি। তাই মুশরাফার সাথে দেখা হয়নি। মুশরাফা ভেবেছে জাওয়াদ এখনো ফিরেনি। ওয়াশরুমে থাকায় ঝগড়া শুনেনি সে। জাওয়াদ উত্তর দিল,
‘বাইরে আছি।’
‘ কখন ফিরবেন?’
‘দেরি হবে। কেন?’

‘বাতাস শুরু হয়েছে, ছাদ থেকে কাপড় আনা হয়নি। ‘
‘তো নিয়ে আসো।’

‘আমার বোরকা ধুয়ে দিয়েছি, শুকায়নি এখনো। আশপাশের ছাদে অনেক মানুষ, বোরকা ছাড়া কিভাবে যাব?’ মলিন স্বরে বলল মুশরাফা।
‘জিহান বা জিশান নেই?’

‘জিহান খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। জিশান ভাইয়ার কথা তো জানি না। উনার রুমের দরজা খোলা, নেই সম্ভবত। ‘

‘তাহলে আর আনা লাগবে না। থাকুক।’

‘কত কষ্ট করে ধুয়েছি আপনার কাপড়। বাতাসে সব নিচে ফেললে, ময়লা লেগে যাবে। আপনি তাড়াতাড়ি আসুন না! ‘ অনুরোধ ঝরে পড়ল মুশরাফার স্বর থেকে।

জাওয়াদ আকস্মিক ধমকে উঠল,
‘আমি বলেছি ধুতে? ধুয়েছো কেন? এখন ভিজুক। আমি অনেক দূরে আছি। আসতে পারব না। বিরক্ত করবে না, ফোন রাখো।’

মুশরাফা আরও কিছু বলতে চাইল। জাওয়াদ নিজেই ফোন কেটে দিল। অনিক খাওয়া থামিয়ে বিরক্ত চোখে তাকিয়ে বলল,
‘ এবার অন্তত মানুষ হ!’

জাওয়াদ চোখ রাঙাল, ‘ আজাইরা না বকে চুপচাপ খা। ‘

আবার খাওয়ায় মন দিল। অনিক খেতে খেতে বলল,
‘ ভাবি খেয়েছে? জিজ্ঞেস তো করলি না।’

‘খেয়েছে।’ গম্ভীরমুখে বলল জাওয়াদ।

ফোন রেখে চাপা শ্বাস ফেলল মুশরাফা। জাওয়াদ অনেক দূরে আছে, এত দূর থেকে আসতে আসতে বৃষ্টি এসেছে যাবে। তাছাড়া, ওর কথা শুনে স্পষ্ট বুঝতে পেরেছে আসবে না সে। মুশরাফা বারান্দা থেকে আধভেজা বোরকা পরেই তৈরি হয়ে নিল বেরুনোর জন্য। তবে ওর মন বলছে, জাওয়াদ কোন ব্যবস্থা করবে। কোন বাহানা দিবে, ঠিক সকালের মতো। সকালে বাহানা দিয়ে কাপড় মেলে এসেছে। কাজটা মুশরাফার অকল্পনীয় ছিল। কথা শেষ করে কাপড় মেলতে গিয়ে অবাকের চূড়ায় পৌঁছেছে। নিচে এসে ফোন ফেরত দিতে গিয়ে মুখ চেপে হেসে বলল,

‘ ধরুন, আপনার ফোনের ব্যালেন্স শেষ। ‘

জাওয়াদ ঘুমের ভান ধরে রইল। কিছু বলল না। মুশরাফা আবার বলল,
‘ বউয়ের কাজে সাহায্য করা সুন্নত। সুন্নত পালন করার জন্য এত বাহানার প্রয়োজন হয়না। বিশ্বাস করুন, আমি কিছু মনে করিনি।’

জাওয়াদ নড়েনি তবু। এমন ভান করেছে, যেন শুনেইনি। মুশরাফার মনে হচ্ছে সকালের মতো কোন বাহানা দিয়ে জাওয়াদ তাকে সাহায্য করবে। কিছু কিভাবে? অতদূর থেকে উড়ে আসা ছাড়া খানিকের আগে আসা সম্ভব নয়

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here