মেঘলা আকাশে রুদ্রই ভরসা
উম্মে হাবিবা তনু
পার্ট:১৮
বাড়ির সামনে এসে চারপাশটা ভালো করে দেখছেন।কেনো জানি ভিতরে যেতে ইচ্ছে করছে না মুবিন হাসান এর।হয়তো অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো কিছুর আশঙ্কা করছেন তিনি।
তবু ডুকলেন।
গেটের পাশেই দারোয়ান ছিল।অপরিচিত মানুষ দেখে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করল,
কই যান??কার কাছে আইছেন??
মুবিন হাসান জবাব দেওয়ার আগেই রুদ্র বলে উঠলো,সীমান্ত ভাইয়ার সাথে দেখা করতে আসছি।
ওহহ তিন তলার সীমান্ত স্যার এর কাছে আইছেন??
হ্যাঁ।
কি হয় আপনাগো??
আত্মীয় হয়।কাজিন হই আর উনি সীমান্ত ভাইয়ার চাচা।
সালাম স্যার।
মুবিন হাসান কিছু বললেন না।
পাশ থেকে রুদ্র আবার বললো,উনি কি বেরিয়ে গেছেন নাকি এখনো বের হয় নি??
আরে আজকে কী স্যাররে দেখা পাওয়ন যাইবো!!আবার বের হইবো…
কেনো পাওয়া যাবে না??
আপনারা দেহি কিছুই জানেন না।
কি জানার কথা বলছেন??একটু খুলে বলবেন…
আপনারাতো হের নিজের লোক আপনেগরে তো কওয়াই যায়।কি কন??
তাতো অবশ্যই।ব্যাপারটা কি বলেন তো??ভাইয়া কি কিছু করছে??
আর কইয়েন না স্যার তো কয়েকদিন পর পর ই নয়া নয়া মেয়েছেলে নিয়া ফ্ল্যাটে আসে।কাইল রাইতেও দেখলাম নয়া মেয়েছেলে নিয়া আসছে…..তয় কি জানেন তো কষ্ট লাগে উনার বউডার লাইগা।বড়ই ভালা মানুষ কেমনে যে এমন একজনের পাল্লায় পড়লো….দারোয়ান লোকটা আফোসস করার ভঙ্গি করে দাড়িয়ে আছে।
মুবিন হাসান এর ভিতরটা ফেটে যাচ্ছে।এইসব কি শুনছে??উনার মাথা ঘুরছে।ঠিকভাবে দাড়াতে পারছে না।
রুদ্র মুবিন হাসানকে ধরলো।সাবধানে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগলো আর মনে মনে একটাই প্রার্থনা করছে মেঘলা যেখানেই থাকুক ও যেনো ঠিক থাকে আর এই রকম কারো ক্ষপরে যেনো না পরে।
সকাল থেকেই ঘরে বসে আছে মেঘলা।খুব বেশি বোর হচ্ছে।সীমান্ত সারাঘরময় পায়চারি করছে আর ফোনে কারো সাথে কথা বলেই চলেছে।কথার ধরন দেখেই বুঝা যাচ্ছে খুব ইম্পর্ট্যান্ট কিছু।কথা কিছু কিছু মেঘলা শুনতে পাচ্ছে।সীমান্ত বাসা খুঁজছে।কিন্তু এইভাবে কেনো??বন্ধুবান্ধবদের ফোন করে করে খুজার চেষ্টা করছে।আগামীকালই বাসা লাগবে খুব তাড়া দিচ্ছে সবাইকে।প্রচন্ড বোর হচ্ছে।কি করবে বুঝতে পারছে না।উঠে যে অন্য কোথাও যাবে তারও উপায় নেই।সীমান্তর কড়া বারণ আছে তাতে।যতক্ষণ ও বাসায় থাকবে ততক্ষণ অন্যকোথাও যাওয়া যাবে না।ওর চোখের সামনে থাকতে হবে।
আমার জানটার কি হলো??মুখটা ভার করে করে আছে কেনো??
মুখ ভার হবে না কেনো?কখন থেকে ফোনে কথা বলেই চলেছ আমার দিকে তো তাকানোর সময়ই নেই তোমার।
ওলে জানটা রাগ করে করে না।
হুঁ..
কি হু??আমাদের নতুন বাসায় উঠতে হবে না?
হুমম হবে তো।
তাইতো নতুন বাসার খোঁজ করছি।আমরা কালই চলে যাবো এইখান থেকে।সব ব্যবস্থা করা হয়ে গেছে।
এত তাড়াতাড়ি?
এত তাড়াতাড়ি কই??আপাদত আমার একটা ফ্রেন্ডের বাসায় উঠবো।
ফ্রেন্ডের বাসায় কেনো?
এত তাড়াতাড়ি বাসা পাওয়া যায় বলো??ফ্রেন্ডদের নতুন বিল্ডিং করছে কাজ সবে শেষ তবে কিছু কিছু কাজ বাকি আছে।তাই ভাবলাম যতদিন নতুন বাসা না পাওয়া যায় ততদিন ওর বিল্ডিং এ থাকবো।
আমরা এইখান থেকেও তো নতুন বাসা খুঁজতে পারি??
পারি জান কিন্তু তোমার যে একটা বেস্ট ফ্রেন্ড আছে না ওর কোনো বিশ্বাস নেই।দেখবে ঠিক খুঁজতে খুঁজতে এইখানে এসে উপস্থিত হবে তোমার আব্বুকে নিয়ে।
তাতে কি?আব্বুকে তো জানাবোই।
জান আমি তুমি জানানো আর তোমার ফ্রেন্ডের জানানোর মধ্যে তফাৎ আছে।দেখবা ও আমার নামে উল্টা পাল্টা বুঝাবে তোমার আব্বুকে পরে বুঝতে পারছো কি হবে??
মেঘলা মাথা নিচু করে নিল।এখনো ভাবতে পড়ছে না রুদ্র এমন কিছু করতে পারে।আবার না ভেবেও উড়িয়ে দিতে পারছে না।
জান মন খারাপ করো না।আমি আছি তো।
মেঘলা সীমান্তর চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।ভরসা খোঁজার চেষ্টা করছে।
কলিং বেলের শব্দে দুজনের ঘোর কাটে।চোখ সরিয়ে নিলো একে অপরের থেকে।কিন্তু পরক্ষণেই আবার দুজন দুজনের দিকে তাকালো।এইসময় কে এলো??সীমান্তর মধ্যে আকাশ কুসুম ভাবনা চলতে লাগলো।শোনো তুমি রুমের বাইরে যাবে না আমি না বলা পর্যন্ত।এরমধ্যেই আবার বেলটা বেজে উঠলো।মেঘলাকে কিছু বলতে না দিয়ে সাত পাঁচ ভেবে সীমান্ত এগিয়ে গেলো।সাবিবা ঠায় রান্নাঘরে দাড়িয়ে আছে।ওর বারণ আছে পারমিশন ছাড়া গেট খুলার।সীমান্ত গেটের সামনে দাড়িয়ে অনেকরকম শঙ্কা আশঙ্কা নিয়ে আস্তে আস্তে লকটা খুললো।গেট খুলে যেতেই বুঝলো ওর ধারণাই ঠিক।কিন্তু এত তাড়াতাড়ি হবে আশা করেনি।
আঙ্কেল আপনি এইখানে…..
কেনো আশা করেননি!!পাশ থেকে রুদ্র কড়া জবাব দিলো।
না তা না…. মানে বলতে চাইছি…..হটাৎ…..
হটাৎ না..আপু কয়েকদিন নাকি পড়তে যাচ্ছে না তাই আরকি খোঁজ নিতে আসলো আঙ্কেল।
ওহ আচ্ছা এই ব্যাপারে!সীমান্ত আটকে যাওয়া নিশ্বাসটা ফেলে বললো।
কেনো আপনি কি অন্য কোনো ব্যাপারে ভাবছিলেন??রুদ্র তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
না মানে…..
এত মানে মানে না করে ভিতরে তো যেতে দিবেন?নাকি এইখান থেকে তাড়িয়ে দিবেন!
ভিতরে আসুন আঙ্কেল।
রুদ্র ও মুবিন হাসান ভিতরে ঢুকলো।
ড্রয়িংরুমে ঢুকেই রুদ্র আবার বললো,আঙ্কেল আসলে দেখতে আসছে আপুর বর কতটা নিচ আর কতটা খারাপ।
মানে কি বলতে চাইছো??
আরে ভাইয়া ঘাবড়ে যাচ্ছেন কেনো??আমি বলতে চাইছি আপনি বলেছিলেন আপুর বর অনেক কষ্ট দেয় পড়াতে চায় না আরও অনেক কিছু।তো সেটাই দেখতে আসা।
সীমান্ত রুদ্রর কথা কিছুই বুঝতে পারছে না।গতকাল যার মেয়ে পালিয়ে গেছে সে কি ছাত্রীর বাড়ি খুঁজে তার বরের ইনকয়েরি করতে আসছে!!
কি এত ভাবছেন ভাইয়া??
না কিছু না।
আপুকে দেখছি না তো?
আছে ভিতরেই আছে।
আর আপুর বর…
বর..
উনার বরও তো বাড়িতেই আছে তাই না??সীমান্তর দিকে এমনভাবে তাকল যেনো ওই বর।
এইভাবে তাকিয়ে আছো কেন তুমি??
আপনি এত ঘাবড়ে যাচ্ছেন কেনো বলবেন?
আ.. আ… ম… ম.. ইইই…
আপনার তোতলানো আছে??আহা!!আপুকে আর ওর বরকে ডাকুন।
হুঁ…বলেই রান্নাঘরের দিকে গেলো।
রুদ্র চারপাশটা ভালো করে দেখছে।বারবার মনে হচ্ছে এইখানেই আছে মেঘলা।কিন্তু দেখতে পাচ্ছে না।মুবিন হাসান এর কোনো প্রতিক্রিয়া নেই।কেমন যেন একটা হয়ে গেছে।সবটা কেমন ধোঁয়াশা।
উনার সামনে গিয়ে স্বাভাবিক থাকবা।একদম ঘাবড়ে যাবা না।
আমি যাবো না স্যার এর সামনে।
কি বললি??
যা বলছি শুনতেই পাচ্ছো।আমি যাবো না।কোন মুখে যাবো স্যারের সামনে!!
খুব দরদ না ওই বুইড়া স্যারের প্রতি??একদম গুছিয়ে দিবো সব।
যত খারাপ কথাই বল আমি যাবো না।
তুই যাবি না তোর বাপ যাবে।
আমার বাপ তুলে কথা বলবা না।
তোর বাপ তুলে কথা বলার ইচ্ছা আমারও নাই।ভালোয় ভালোয় যা বলি শুন না হলে আমার চেয়ে খারাপ আর কেউ হবে না।
সাবিবা মাথা নিচু করে আছে।আবারও ওকে নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে স্যারের সামনে গিয়ে কতগুলো মিথ্যা বলতে হবে।
মেঘলা ঘরের মধ্যে চুপটি করে বসে আছে।কে এলো বুঝার চেষ্টা করছে।কিন্তু বুঝা যাচ্ছে না।তাই এগিয়ে এসে দরজার সামনে দাঁড়ালো।কান খাড়া করে শুনতে চাইছে কে এসেছে।হটাৎই খুব পরিচিত একটা কণ্ঠ শুনতে পেলো।একদম ভিতর থেকে কেপে উঠলো মেঘলা।অস্পষ্ট স্বরে বলে উঠলো,রুদ্র!!এইখানে কি করে এলো??আব্বুও কি এসেছে?তবে আমাকে কেনো সীমান্ত ডাকছে না??একরাশ কৌতূহল নিয়ে মেঘলা দরজাটা খানিক ফাঁক করে রাখলো।কে কি বলছে শুনার চেষ্টা করছে।
আস্সালামুআলাইকুম স্যার।
মুবিন হাসান একবার সেদিকে তাকালেন।পরক্ষণেই চোখ সরিয়ে নিলেন।এই মেয়েটার জন্য তার বড্ড মায়া হচ্ছে।হয়তো দারোয়ানের মুখে সেসব শুনে।হয়তো কোনো কারণ ছাড়াই মায়া অনুভব হচ্ছে।মায়া বড় আজব বস্তু।কোনো কারণ ছাড়াই কখন যে কার জন্য মায়া জন্মায় কেউ বুঝতেও পারে না।
সাবিবা কি করবে বা কি বলবে বুঝতে পারছে না।
কেমন আছেন আপু??
সামনে থাকা ছেলেটাকে সে চিনে না।ইতস্তত করে শুধু মাথা নাড়ল।
রুদ্র হয়তো বুঝলো।তাই নিজের পরিচয়টা দিলো।আপু আমি মেঘলার বন্ধু।
মেঘলা নামটা শুনেই কেপে উঠলো সাবিবা।মেঘলাকে নিয়ে কিছু বললে কী জবাব দিবে ভেবেই আতকে উঠছে।
মেঘলাকে চিনতে পারলেন না?স্যার এর মেয়ে।
আবারো ইতস্তত করে মাথা নাড়ল।
আপনার বরকে ডাকুন।
সাবিবা ওড়নায় মুখ গুজে কাদঁছে।আর বারবার সীমান্তর দিকে তাকাচ্ছে।কারণ এই মুহূর্তে দেয়ার মত কোনো জবাব ওর কাছে নেই।
প্লিজ আপু ডাকুন…..
ওর বর এইখানে নেই।দ্রুত সীমান্ত জবাব দিলো।
ওড়নায় মুখ গুজা অবস্থায়ই ফুপিয়ে উঠলো সাবিবা।এমন কথা সহ্য করা যায় নাকি??
আচ্ছা তাই বুঝি ভাইয়া??রুদ্র তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
তা নয় তো কি??
কিন্তু আমি যদি বলি আপুর বর এইখানেই আছে আর আমার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে।
কি বলতে চাইছো তুমি??
বলতে চাইছি আর কত নাটক করবেন??সত্যিটা আমরা জেনে গেছি।আপু আপনার ওয়াইফ।
ক..ই ই ই গাঁজা খেয়েছ নাকি?
ভালো বললেন,আপনার লজ্জা করে না নিজের বউ কে বোন বলে পরিচয় দিতে??
একদম বাজে কথা বলবে না।
ঠিক আছে বললাম না।আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার সে ছেড়ে দিলাম।
তুমি ছোট মানুষ ছোট মানুষের মতো থাকো।কিছুর বলার হলে আঙ্কেল বলবে।
উনার কিছু বলার অবস্থা কি রেখেছেন??
কী বলতে চাইছো??কি করেছি আমি উনার??
বলতে চাইছি মেঘলা কোথায়??
মেঘলা কোথায় মানে??
হ্যাঁ,মেঘলা কোথায়??
সীমান্ত জালে আটকা পড়া মাছের মত খাবি খাচ্ছে।কি বলবে বুঝতে পারছে না।বুঝতে পারছে এরা সব জেনেই এইখানে এসেছে।কি করবে কিভাবে সামাল দিবে সবটা!!
চলবে……….
(প্রিয় পাঠক পাঠিকা বৃন্দ, আস্সালামুআলাইকুম।একটি গল্প লিখা হয় আপনাদের ভালো লাগার জন্য।সে গল্প পরে যখন আপনাদের সাড়া পাওয়া যায় না তখন লিখার উৎসাহটাই নষ্ট হয়ে যায়।আপনারা যত উৎসাহ দিবেন গল্প লিখায় তত আগ্রহ বাড়বে এবং গল্প তত সুন্দর হবে।তাই গল্প যদি আপনাদের ভাল লাগে এবং পরবর্তী পর্ব পেতে চান তবে অবশ্যই গঠনমূলক মন্তব্য করে পাশে থাকার অনুরোধ রইলো।ধন্যবাদ।)