মেঘলা আকাশে রুদ্রই ভরসা উম্মে হাবিবা তনু পার্ট:১৯

0
270

মেঘলা আকাশে রুদ্রই ভরসা
উম্মে হাবিবা তনু
পার্ট:১৯

মাগো আমি তোমার পায়ে পরি তুমি বলো না আমার মেয়েটা কোথায় আছে..তুমি তো আমার মেয়ের মতই তোমার কাছে আমি চিরঋণী হয়ে থাকবো যা চাইবে দিবো।শুধু বলো আমার মেয়েটা কোথায় আছে…আচমকাই সাবিবার সামনে মেঝেতে বসেই অঝোরে কাদতে লাগলেন মুবিন হাসান।কোনোভাবেই নিজেকে সামলাতে পারছেন না তিনি আজ আর।হাউমাউ করে কাদছেন।
মুবিন হাসান এর এহেন আচরণে সকলেই থমকে গেল।সাবিবা কয়েক কদম পিছিয়ে ওড়না দিয়ে মুখ ঢেকে চাপা স্বরে কাদঁছে।

দরজার ওপাশ থেকে মেঘলাও ডুকরে কেঁদে উঠলো।খুব ইচ্ছে করছে ছুটে গিয়ে বাবাকে আকড়ে ধরতে।কিন্তু পারছে না।ওদের সমস্ত কথাই শুনছে।রুদ্রর উপর প্রচন্ড রাগ হচ্ছে।সাথে ঘৃণাও হচ্ছে।কি করে পারছে এইসব বলতে!বোনকে একদম বউ বানিয়ে দিচ্ছে!!এতটুকু বিবেকে বাঁধছে না ওর??

এগিয়ে এসে রুদ্র মুবিন হাসানকে টেনে তুলল।
আঙ্কেল প্লিজ আপনি শান্ত হয়ে বসেন।এতটা ভেঙ্গে পড়বেন না।মেঘলাকে আমরা ঠিক খুঁজে পাবো।
মুবিন হাসান তখনো হাউমাউ করে কাদছেন।
আপু আপনি তো কিছু বলুন।এইভাবে চুপ করে থাকবেন না।একবার আঙ্কেল আন্টির কথা ভাবুন।প্লিজ বলুন।
………
উত্তরের অপেক্ষায় চেয়ে আছে রুদ্র।একবার সীমান্তর দিকে একবার সাবিবার দিকে তাকাচ্ছে।কিন্তু সবাই নিশ্চুপ।
এদিকে কান্নার কারণে মুবিন হাসান এর নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।
রুদ্র এ মুহূর্তে কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না।
স্বাভাবিকের চেয়ে একটু জোরে জোরে শুধু বলছে,আঙ্কেল আপনার কষ্ট হচ্ছে??কোথায় কষ্ট হচ্ছে??বেশি খারাপ লাগছে আঙ্কেল??কথা বলুন….
সাবিবা এ অবস্থা দেখে ছুটে রান্নাঘরে চলে গেল।
সীমান্ত বারবার রুদ্রকে আস্তে কথা বলতে বলছে।কিন্তু না রুদ্র আগের মতোই জোরে জোরে বলছে।

আব্বুর কষ্ট হচ্ছে।নিশ্চয়ই অনেক কষ্ট হচ্ছে।আমার জন্য আব্বু এত কষ্ট পাচ্ছে আমার জন্য??মেঘলা আর রুমে থাকতে পারলো না।একপ্রকার ছুটে বেরিয়ে এলো।ড্রয়িংরুমের ফ্লোরে হাঁটু মুড়ে মুবিন হাসান এর সামনে বসে পড়লো।
মেঘলাকে এইভাবে বেরিয়ে আসতে দেখে সীমান্তর যেনো বেহাল অবস্থা।এই মেয়ে না কোনো অঘটন ঘটিয়ে বসে।
রুদ্রর ঠোঁটে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠল।ও এইটাই চাচ্ছিল।মেঘলা নিজেই বেরিয়ে আসুক।
মুবিন হাসান এখনো হাউমাউ করে কাদছেন।কান্নার কারণে উনি বারবার কেপে কেপে উঠছেন।
সাবিবা এগিয়ে এসে ওর হাতে থাকা পানির গ্লাসটা মেঘলাকে দিল।ইশারায় বলল,পানিটা ওর বাবাকে খাওয়াতে।
মেঘলা বাবার মুখের কাছে পানির গ্লাসটা ধরে আলতো করে পানিটা খাওয়ালো।
মুবিন হাসান গলাটা ভিজবে না এমন একটা চুমুক দিলেন গ্লাসে।তারপর হাত দিয়ে ঠেলে গ্লাস সরিয়ে দিলেন।
মেঘলা গ্লাসটা নামিয়ে রেখে বাবার একটা হাত ধরলো।
আব্বু তোমার কোথায় কষ্ট হচ্ছে??আমাকে বলো।এই দেখো আমি তোমার সামনেই আছি।
মুবিন হাসান চোখ তুলে তাকালেন।অনুনয়ের সুরে শুধু বললেন,মারে বাড়ি ফিরে চল।
আব্বু আমি যাবো তো বাড়ি।তুমি আগে কান্না থামাও।
তুই চল সব ঠিক হয়ে যাবে।আর কাদবো না।চল মা।
মেঘলা ওর বাবার হাত ধরেই সীমান্তর দিকে তাকালো।সীমান্ত কি করবে??ও কেনো কিছু বলছে না।
তুই যাবি না আমার সাথে??
যাবো আব্বু।তুমি পানিটা আগে খেয়ে নেও।তোমাকে অনেক কিছু বলার আছে।
আমি কিছু খাবো না।কিছু শুনবোও না।তুই শুধু আমার সাথে ফিরে যাবি।আর এক মুহুর্ত এই জাহান্নামে তোকে আমি থাকতে দিবো না।
আব্বু এইটা জাহান্নাম কেনো হবে??আব্বু আমি সীমান্তকে বিয়ে করেছি।এইটা আমার শশুরবাড়ি।
মুবিন হাসান স্তব্ধ হয়ে গেলেন।নিজের কানকেও বিশ্বাস করাতে পারছেন না।
রুদ্র প্রচন্ড ক্ষেপে গেলো।মেঘলার হাত ধরে এক ঝটকায় দাড় করিয়ে বললো,কি আজেবাজে কথা বলছিস।এই লোকটাকে তুই বিয়ে করেছিস??এই লোকটা কতটা খারাপ তুই জানিস??
রুদ্র মুখ সামলে কথা বল।আমার স্বামীকে নিয়ে আর একটা বাজে কথাও বলবি না।অনেকক্ষণ ধরেই তোর বাজে কথা সহ্য করছি আর না।
আমি বাজে কথা বলছি??আমি??তুই জানিস কতটুকু এই লোকটার ব্যাপারে??কিচ্ছু জানিস না।
আমি তোর থেকে কিছু জানতেও চাইনা।বলেই মুবিন হাসানের দিকে ফিরে বললো,
আব্বু আমি সীমান্তকে ভালোবেসে বিয়ে করেছি।তুমি রুদ্রর একটা কথাও বিশ্বাস করো না।সীমান্ত খুব ভালো।আব্বু তুমি তো বিশ্বাস কর।
আমি কিছু বিশ্বাস করতে চাই না।এমনকি তুমি বিয়ে করেছ এইটাও বিশ্বাস করতে চাই না।
আব্বু!
আর কোনো কথা না।আমি মানিনা তোমার বিয়ে হয়েছে আর এই ছেলের সাথে বিয়ে তো আমি কখনোই মানি না।
আব্বু তুমি শুনো…রুদ্র তোমাকে ভুল বুঝিয়েছে।
আমাকে কেউ কিছু বুঝায়নি।আমার বিবেক এখনো সচল আছে।আমার সাথে তুমি এখনই ফিরে যাবে।
না আব্বু আমি সীমান্তকে ছেড়ে যাবো না।
তুমি যদি আমার সাথে এখনই ফিরে না যাও তবে আমি জানবো আমার কোনো মেয়ে নেই।আমি নিঃসন্তান।বলেই দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন।
আব্বু!!!!
আঙ্কেল প্লিজ শান্ত হোন।মেঘলা ফিরে যাবে আমি দেখছি।
মেঘলা শুন তুই এইখানে ভালো থাকবি না।এই লোকটা ভালো না।
………
যে লোক নিজের বউকে বোন বলে পরিচয় দেয় সে কতটা ভালো হবে…তু..
ঠাসসস…..রুদ্রর কথা শেষ হওয়ার আগেই মেঘলা ওকে এক চড় বসিয়ে দিল।আর চিৎকার করে বলতে লাগলো,আমি তোর মুখ থেকে আমার স্বামীর ব্যাপারে আর একটাও খারাপ কথা শুনতে চাই না।তুই এই মুহূর্তে এইখান থেকে বের হয়ে যাবি।তোর মুখ আমি আর দেখতে চাই না।
রুদ্র গালে হাত দিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।
ঘটনার আকস্মিকতায় সবাই থমকে গেল।শুধু সীমান্ত ছাড়া।
মুবিন হাসান রুদ্রর হাত ধরে বললো,চলো রুদ্র।এইখানে আর এক মুহুর্ত না।আজ থেকে জানবো আমার কোনো মেয়ে নেই।
মেঘলা কাদঁছে।তবুও মুবিন হাসান এর মন এতটুকু নরম হলো না।
রুদ্র শেষবারের মতো মেঘলার দিকে তাকাল।তারপর মুবিন হাসান এর সাথে বেরিয়ে গেলো।
রুদ্রর চোখ যেনো আজ আর কোনো বাঁধ মানছে না।অঝোরে অশ্রু ঝরছে চোখ থেকে।কিন্তু মুবিন হাসান একদম কাঠ হয়ে গেছেন।যেনো কোনো অনুভূতি নেই।

মেঘলা সীমান্তর একটা হাত জড়িয়ে ধরে আছে।মেঘলাও কাদঁছে।খুব কাদছে।খুব কষ্ট হচ্ছে।ইচ্ছে করছে বাবার সাথে ছুটতে বেরিয়ে যেতে।কিন্তু বাবার সাথে বেরিয়ে গেলে সীমান্তকে কখনোই পাবে না।মেঘলার দৃঢ় বিশ্বাস একদিন বাবা ঠিক ওকে মেনে নিবে।ঠিক নিবে।
সাবিবার চোখেও পানি।একদিন ওর সাথেও এইরকম একটা ঘটনা ঘটেছিল।সেদিন যদি চলে যেত তবে আজ এত কিছু দেখতে হতো না।এত কষ্টও পেতে হতো না।

মমতা হাসান ক্ষণে ক্ষণে মেঘলাকে ডাকছেন।বারবার ওকে দেখতে চাইছেন।বহুকষ্টে রেহানা মাহমুদ বুঝিয়ে বুঝিয়ে রাখছেন।রুদ্ররা মেঘলাকে আনতে গেছে বলে বুঝিয়ে রাখছেন।কিন্তু যখন ওরা ফিরে এলো তখন তিনি আবার মেঘলাকে খুঁজতে লাগলেন।ওদের সাথে মেঘলাকে না দেখে তিনি প্রায় মরিয়া হয়ে উঠেছেন।
মুবিন হাসান স্ত্রীর পাশে বসলেন।অত্যন্ত ঠান্ডা গলায় বললেন,আমাদের মেঘলা আর নেই মমতা।তুমি কেঁদো না।
মমতা হাসান এর কানে এখন এই একটা কথাই বাজছে,”মেঘলা আর নেই।”তারপরই তিনি জ্ঞান হারালেন।

চলবে………

(প্রিয় পাঠক পাঠিকা বৃন্দ, আস্সালামুআলাইকুম।একটি গল্প লিখা হয় আপনাদের ভালো লাগার জন্য।সে গল্প পরে যখন আপনাদের সাড়া পাওয়া যায় না তখন লিখার উৎসাহটাই নষ্ট হয়ে যায়।আপনারা যত উৎসাহ দিবেন গল্প লিখায় তত আগ্রহ বাড়বে এবং গল্প তত সুন্দর হবে।তাই গল্প যদি আপনাদের ভাল লাগে এবং পরবর্তী পর্ব পেতে চান তবে অবশ্যই গঠনমূলক মন্তব্য করে পাশে থাকার অনুরোধ রইলো।ধন্যবাদ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here