মেঘলা আকাশে রুদ্রই ভরসা উম্মে হাবিবা তনু পার্ট:২০

0
502

মেঘলা আকাশে রুদ্রই ভরসা
উম্মে হাবিবা তনু
পার্ট:২০

দেখতে দেখতে একটা মাস কেটে গেল।এই একমাসে মেঘলা অনেকগুলো বিষয় লক্ষ্য করছে।এই বাসায় এসেছে ওরা আজ প্রায় এক মাস।অথচ এর মধ্যে কখনো আপুর হাজব্যান্ড আসেনি।এমনকি আপুর হাজব্যান্ডকে নিয়ে আপু কিংবা সীমান্ত কেউ কিছু বলে না।আপুকে কখনো দেখেও নি বরের সাথে কথা বলতে।সারাক্ষণ মুখ থমথমে থাকে,চোখ ফুলে থাকে,মনে হয় সারারাত কান্না করে।এত কি কষ্ট আপুর মনে??বরের জন্য!হতে পারে।
তাছাড়া আপু ছাড়া সীমান্তর আর কেউ আছে কিনা তাও আজও জানতে পারলো না মেঘলা।আপুতো ওর সাথে কোনো কথাই বলে না।রান্নাঘরেও যেতে দিবেনা।কোনো কাজই করতে দিবে না।শুধু সময় মত খাবার খেতে ডাকবে।এছাড়া আর কিছু বলবেনা।তবে আমার প্রতিটা জিনিসের উপর আপুর নজর থাকে।কখন কি প্রয়োজন ঠিক বুঝে যায়।এত বুঝে নিশ্চয়ই মনে মনে ভালোওবাসে।তাহলে এত রাগের কোনো মানে হয়??আরও একটা জিনিস প্রায়ই চোখে পড়ে।সীমান্ত প্রায় রাতেই আমি ঘুমানোর পর আপুর ঘরে যায় আর একদম ভোরে এইঘরে আসে।এখন কথা হচ্ছে ভাই বোনের মধ্যে কি এমন কথা বা কাজ থাকে যার জন্য গভীর রাতে আমার অগোচরে ওই ঘরে যেতে হয়??এমনকি সেসব দিনে আপু ভোরে গোসল করে।মেঘলা প্রায়ই ভাবে দেখবে ওতো রাতে ওরা কি করে।পরক্ষণেই ওর বিবেকে বাধে।ভাই বোন আর কি কথা বলবে শুধু শুধু খারাপ কিছু ভাবছি।মাঝে মাঝে এরজন্য রুদ্রকে মনে মনে বকে।ঐতো এইসব ফালতু কথা বলেছিল যেগুলো ওর মাথায় ডুকে গেছে।না হয় এইসব ভাবনা আমার মাথায় আসত কখনো??

রুদ্র এইখান থেকে ঢাকায় চলে গেছে।মফস্বল শহরের থেকে ঢাকায় সবকিছু ব্যয়বহুল।তাই ও আপাদত একাই এসেছে।কলেজের কাছেই একটা মেসে উঠেছে।মেসে থেকে কলেজে পড়ছে।রোজগারের কিছু একটা ব্যবস্থা হলে ওর মাকেও নিয়ে আসবে এইখানে।ওইখানে ফিরে যাওয়ার আর কোনো ইচ্ছাই ওর নেই।রেহানা মাহমুদের ঘোর আপত্তি ছিল।তবুও অনেক বুঝিয়ে তারপর এসেছে।মেঘলার কোনো স্মৃতিই আর ধরে রাখতে চায় না।ভুলে থাকতে চায় সবকিছু।মাঝেমাঝে শুধু ফোনে আঙ্কেল আন্টির খোঁজ খবর নেয়া হয় এইটুকুই।

মমতা হাসান এখন আগের চেয়ে অনেক ভালো আছেন।তিনি আজও জানেন না মেঘলা বিয়ে করছে।ওর বর একটা দুশ্চরিত্র।আগের বউ আছে।এমনকি পরকীয়াও করে।তিনি শুধু জানেন মেঘলা আর নেই।বহুকষ্টে তিনি মেনে নিয়েছেন মেঘলা নেই।মুবিন হাসান আগের থেকে অনেক বেশি নিরব হয়ে গেছেন।বুকের উপর পাথর চাপা দিয়ে দিন কাটানো যাকে বলে।হটাৎ করেই কেমন যেনো বুড়ো হয়ে গেছেন।খুব ক্লান্ত লাগে।সারাদিন কলেজে পড়ান আর সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে অনেকটা সময় ধরে মেঘলার ঘরে থম দিয়ে বসে থাকেন।এইটাই তার রোজকার রুটিন।এক একটা দিন যাচ্ছে তো আর একটা দিন কতদ্রুত শেষ হবে তার অপেক্ষা করেন তিনি।

সীমান্ত অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছে।কিন্তু না এই মেয়ের আর ঘুম আসে না।কত রকম পেঁচাল যে এই মেয়ে পারতে পারে।অধৈর্য্য হয়ে মেঘলার কথা শুনেই যাচ্ছে।একপর্যায়ে বাধ্য হয়েই চোখ বন্ধ করে নিল সীমান্ত।
একের পর বলেই যাচ্ছে অথচ কোনো সাড়াশব্দ নেই ওপর পাশে।তাকিয়ে দেখে সীমান্ত ঘুমিয়ে গেছে।সেদিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হাসলো মেঘলা।তারপর আলতো করে সীমান্তর চুলে হাত বুলিয়ে কপালে একটা চুমু দিয়ে নিজেও শুয়ে পড়ল।আস্তে আস্তে ওরও চোখ বুজে এলো।
হাতটা খুব সাবধানে চোখের সামনে এদিক সেদিক করলো।মেঘলার কোনো সাড়া নেই।সীমান্ত যেনো এইবার নিশ্চিত হলো।অবশেষে ঘুমিয়েছে।আস্তে আস্তে বিছানা থেকে নামলো।তারপর পা টিপে টিপে চুপিচুপি দরজা খুলে বের হয়ে গেল।তারপর আবার দরজা ভিজিয়ে দিয়ে গেলো।

মেঘলা যেনো আজ এর অপেক্ষাতেই ছিল।কখন সীমান্ত বের হবে।অনেকদিন থেকেই দেখছে।কিন্তু যতই নিজেকে দিক্কার দেক না তবুও মনের ভিতর খচখচ থেকেই যাচ্ছে।ভাইবোন সারাদিন কেনো কথা বলে না।এত গোপন কি কথা বলে??ওকে লুকিয়ে রাতের আঁধারে বলতে হবে??মেঘলা আরও কিছুক্ষণ চুপ করে বসে রইল।কিছু সময় পর ও যাবে দেখবে ও ঘরে কি হয়!!

একদম ছোঁবে না আমাকে।
কেনো ছোঁব না??আমার পুরো অধিকার আছে।
অধিকার!!সাবিবা বিদ্রুপের হাসি হাসলো।
খুব হাসি পাচ্ছে!!আমাকে বিদ্রুপ করতে ভয় লাগে না?
তোমাকে আর ভয়!!না ভয় হয় না ঘৃনা হয় তোমাকে।প্রচন্ড ঘৃনা হয়।
ঠাসসস………
তুমি আমাকে যতই মারো লাভ নেই।আমি একই কথা বলবো।
একদম চুপ করে থাকবি।আমি আমার ইচ্ছে মত সব করবো বাধা দেওয়ার চেষ্টাও করবি না।
আর কত দিন??মেঘলা যেদিন সব জানবে তখন….
তখন কি হবে??কিছুই হবে না।তোর মত অবস্থা হবে।
ওর অবস্থা আমার মত কখনোই হবে না।আমি ওকে ঠিক বের করে নিবো এইসব থেকে।
আচ্ছা খুব দরদ!!তোর এই বেশি দরদই তোর কাল হবে।
আমার কাল বহু আগেই হয়ে গেছে।আমার আর নতুন করে কিছু হওয়ার নাই।তুমি যেদিন থেকে আমার জীবনে এসেছো সেদিন থেকেই আমার জীবন টা তছনছ করে দিছ।
তোর ইদানিং মুখে অনেক বড় বড় বুলি ফুটছে দেখি???
বুলি??আমার মুখের সব বুলি কেড়ে নিয়ে বলছো বুলি ফুটছে??
তোর জিভটা যে ছিঁড়ে নেই নি এই অনেক বেশি।কিন্তু যদি আগ বাড়িয়ে কিছু করার কথা ভাবিসও….তোকে জিন্দা পুতে ফেলবো।
আমি আমাকে নিয়ে আর ভয় পাই না।কিন্তু মেঘলার কোনো ক্ষতি আমি হতে দিবো না।
খুব দরদ খুব….এখন আমার জন্য একটু দরদ দেখাও না।তুমিতো আমার বউ তোমার সাথে জোরাজুরি করতে ভালো লাগে বলো….
তুমি আমার দিকে আর এক পাও আগাবে না।
আগালে কি করবি??
কিছু করার নাই আমার।শুধু মনে মনে ধিক্কার দেওয়া ছাড়া।এক বউ ঘুমালে আরেক বউয়ের কাছে আসতে লজ্জা লাগে না??
সীমান্ত তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো।আমার লজ্জাটা একটু…না একটু বেশিই কম…..আরে আমি তো আমার বউয়ের কাছেই আসি নাকি?
বউ??তুমি বুঝো বউ কি??বুঝলে এইভাবে এক বউকে লুকিয়ে আরেক বউয়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার শরীরটা ছিঁড়ে খেতে না।এইভাবে বৈধ ধর্ষণও করতে না।
যা করি বেশ করি।বলেই সাবিবার বুক থেকে আঁচলটা ফেলে দিল।পশুর মত ঝাপিয়ে পড়ল ওর উপর।
সাবিবার কষ্টে ভিতরটা ফেটে যাচ্ছে।চাপা আর্তনাদ করছে।কিন্তু অমানুষের কানে তো মানুষের কান্না পৌঁছায় না।

এইদিনটা দেখার আগে আমি কেনো মরে গেলাম না??কেনো আমাকে এইসব কথা শুনতে হলো!!এতবড় পাপ হচ্ছে আর আমি মেনে নিচ্ছি??যার জন্য সবাইকে ভুল বুঝলাম,যার জন্য নিজের মা বাবাকে ছেড়ে এলাম,যার জন্য নিজের সব কিছু ছাড়লাম,যার জন্য আমার বেস্ট ফ্রেন্ডকে ভুল বুঝে কত খারাপ ব্যবহার করলাম,গায়েও হাত তুললাম….সেই মানুষটাই এত বড় ঠক…প্রতারক??নিজের বউকে বোন বলতে পারে সে আরো অনেককিছুই করতে পারে।দুই হাটুর মাঝে মুখ গুজে কেঁদে উঠলো মেঘলা।আজ সে সব হারিয়ে নিঃসস্ব।ওর যে কিছু করার নেই।কি করবে এখন??কাকে বলবে??কেউ নেই কেউ নেই কেউ না।পুরোপুরি একলা হয়ে গেছে।এইখানে বসে সারাদিন কাদলেও কেউ দেখবে না।কেউ চোখের পানি মুছে দিবে না।যা করার নিজেরই করতে হবে।মেঘলা খুব সাবধানে উঠে দাঁড়ালো।দরজায় আরও একবার আরি পাতলো।আদিম উত্তেজনা আর চাপা কান্নার আওয়াজ ছাড়া আর কিছুই শুনা যাচ্ছে না।মেঘলা খুব ধীর স্থিরভাবে নিজের রুমে গেলো।তারপর ওয়াশরুমে গিয়ে ভালোভাবে ফ্রেশ হলো।অজু করে জায়নামজ বিছিয়ে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে দুহাত তুলে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করল।তারপর ঘুমের ভান ধরে শুয়ে পড়লো।এখনই কিছু বুঝতে দেওয়া যাবে না।আর ছেলেমানুষী করে হটকারীতা করা যাবে না।কেউ নেই আমার পাশে।এখন থেকে একাই সব করতে হবে।আজ রুদ্র পাশে থাকলে এত কিছু ভাবতেই হতো না।মিস ইউ…মিস ইউ দোস্ত…মিস ইউ…..

চলবে…………

(প্রিয় পাঠক পাঠিকা বৃন্দ, আস্সালামুআলাইকুম।একটি গল্প লিখা হয় আপনাদের ভালো লাগার জন্য।সে গল্প পরে যখন আপনাদের সাড়া পাওয়া যায় না তখন লিখার উৎসাহটাই নষ্ট হয়ে যায়।আপনারা যত উৎসাহ দিবেন গল্প লিখায় তত আগ্রহ বাড়বে এবং গল্প তত সুন্দর হবে।তাই গল্প যদি আপনাদের ভাল লাগে এবং পরবর্তী পর্ব পেতে চান তবে অবশ্যই গঠনমূলক মন্তব্য করে পাশে থাকার অনুরোধ রইলো।ধন্যবাদ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here