মেঘলা আকাশে রুদ্রই ভরসা
উম্মে হাবিবা তনু
পার্ট:৩০
দুর্গন্ধে যেনো মেঘলার ভিতরটা একদম গুলিয়ে যাচ্ছে।এ জিনিস মানুষ কি করে মুখে তুলে??ভেবে পায়না মেঘলা।
এইবার সে আপাদমস্তকে সীমান্তকে দেখছে।দেখে তো ঠিকই মনে হচ্ছে।এইরকম তো সবসময়ই থাকে।তবে তফাৎ হলো আজ ঘরে বসে গিলছে।এছাড়া আর কোন কিছুই অস্বাভাবিক লাগছে না।পাশে বসে মেয়েটা কিসব বিড়বিড় করে বলছে আর সীমান্ত খেয়েই চলেছে।খুব অসস্তি লাগছে মেঘলার।তবু সীমান্তর সামনে গিয়ে দাঁড়াল।কিন্তু সীমান্তর কোনো হেলদুলই নেই।সামনে কেউ আছে কি না তাও যেনো সে জানে না।যেনো সে এইখানেই নেই।অন্য কোনো জগতে আছে না হয় গভীর ঘোরে।মেঘলাই আগবাড়িয়ে কথা বললো।এমন পরিবেশে কতক্ষণই দাড়িয়ে থাকা যায়???
আমাকে ডেকেছ কেনো???
হ্যাঁ হ্যাঁ ডেকেছে।
ওর কি মুখ নেই??
ওর মুখ আছে কিন্তু ও ঠিকভাবে বলতে পারেনা।
ও পারে কি পারে না ওই বলুক।
বেশি কথা না বলে আমি যা যা বলছি করো….
ও বলতে পারলে বলবে না হয় বলার দরকার নেই।আমি কোনো রাস্তার মেয়ের কথা শুনতে পারবো না।
কি বললে??আমি রাস্তার মেয়ে??আমি??
মেঘলা মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে রইল।
রিনা সীমান্তর দিকে ঘুরে একপ্রকার নেকামি জুড়ে বসলো।যেনো ও খুব আঘাত পেয়েছে কথায়।
বেবী শুনলে তুমি ও কি বলছে আমাকে!!শুনেছ???
সীমান্ত এতক্ষণ কি হচ্ছে সেদিকে মন না থাকলেও রিনার নেকামি ওকে যেনো খুব করে টানছে।নেশায় বুদ হয়ে যাচ্ছে যেনো।মেঘলার সামনেই অশালীনভাবে বারবার টাচ করছে রিনা নামক মেয়েটাকে।
মেঘলা মুখ ঘুরিয়ে নিজের ঘরের দিকে চলে যাচ্ছে।এইসব চোখে দেখা যায় না।
আমাকে অপমান করেছে তো ও আমি আর এক মুহূর্তও এইখানে থাকবো না,বেবী…
ওলে বাবু রাগ করে না…
না না আমি এই অপমান সহ্য করবো না।
যেয়ো না ডার্লিং,কি করতে হবে একবার শুধু বলো।আমি করে দিবো।
না আমি চলেই যাবো।তুমি ওকে কিছু বলতে পারবে না।
না সোনা তুমি শুধু একবার বলো…..
তুমি ওকে ডেকে আমার কাছে ক্ষমা চাইতে বলবে।
তুমি যা বলবে তাই হবে…
সীমান্ত তো আর হুশে নেই সেও টলতে টলতে উঠে চলে গেল মেঘলার ঘরের দিকে।
এলোপাথাড়ি ভাবে দরজায় ধাক্কা দিতে থাকে।একের পর এক ধাক্কা দিচ্ছে আর স্লাং ওয়ার্ড বলে মেঘলাকে ডাকছে।
মেঘলা শুনেও না শুনার মত করে আছে।ওর ঐ নোংরা দৃশ্য মোটেই দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে না।
এত জোড়ে জোড়ে ধাক্কায় সাবিবারও ঘুম ভেংগে গেল।সে কিছুই বুঝতে পারছে না।মেঘলা দরজা সামনে তবু খুলছে না।আর দরজা ধাক্কাই বা দিচ্ছে কেনো??দরজার ওপাশ থেকে সীমান্তর কণ্ঠ শুনা যাচ্ছে।তাতে স্পষ্ট মাতলামির আভাস পাওয়া যাচ্ছে।মাতলামি করতে আজ এইখানে আসছে??কোনো পতিতা জুটেনি বোধ হয় আজ।সাবিবা প্রচন্ড রাগ নিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে গেলো।
সাবিবা উঠে মেঘলার পাশে দাঁড়ালো।কি হয়েছে জানার চেষ্টা করতেই মেঘলা বোনকে জড়িয়ে কেঁদে উঠলো।
সাবিবার বুঝতে বাকি নেই কিছু হয়েছে।মাতলামি করে কি না কি করছে…..আরও কিছু করার আগেই সাবিবা ওকে আজ দেখে নিবে।দরজা খুলে দিয়ে সীমান্তর মুখোমুখি দাড়ালো।মেঘলা বারণ করেছে কিন্তু সাবিবা মাঝরাতে এই নাটক শেষ করার জন্যই দরজা খুলে দিল।কিন্তু এইটাই যে কাল হবে জানলে হয়তো কখনোই দরজা খুলতো না।
ক্রিং…ক্রিং…ক্রিং…..
এত রাতে ফোন বাজছে!!কে ফোন করলো??যা ভেবেছিল হলো।তড়িঘড়ি ফোনটা রিসিভ করল মুবিন হাসান।
আস্সালামু আলাইকুম।
ওয়ালাইকুমুসসালাম।
কেমন আছেন আঙ্কেল।
আলহামদুলিল্লাহ।তুমি??
আলহামদুলিল্লাহ।আণ্টি কেমন আছেন??
যেমন থাকার কথা।তোমার মায়ের কি অবস্থা??
জি আংকেল আলহামদুলিল্লাহ ভালোই আছেন।
আমি জানতাম আজ তুমি ফোন করবে!
আপনিও তো ঘুমাননি।
ঘুম কি আর আসে বলো।চেষ্টা তো করি।
ওই রুমে বসে আছেন নিশ্চয়ই এখনো??
হ্যাঁ,অভ্যাস হয়ে গেছে।
তারপর দুজনই চুপ।আজ মেঘলার জন্মদিন।এই দিনটা যে মুবিন হাসান ও রুদ্রর কাছে খুব স্পেশাল একটা দিন।
রুদ্র!
জি আংকেল!
দেশে ফিরছ কবে??
এখনো এইসব নিয়ে ভাবিনি।
আচ্ছা।তোমার মাকে কি কানাডা তেই নিয়ে যাবে?
সেরকমই ইচ্ছা।কিন্তু মা রাজী হচ্ছে না।
মেঘলাটা থাকলে ঠিক রাজি করিয়ে ফেলত।
রুদ্র একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।আবারও সেই নামটা বলতে হলো।সব ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাচ্ছে ওর।হাজার চেয়েও এর থেকে দূরে থাকা যায় না।কোনো না কোনোভাবে নামটা সামনে চলে আসে।
বুঝতে পারছি তুমি আজও ভুলতে পারনি সেদিনটা।
আঙ্কেল আমি সবই ভুলে গেছি আর সব ভুলে থাকতে চাই সাথে ওই নামটা।শুনতেও চাইনা নামটা যেকোনো পরিস্থিতিতে।
মুবিন হাসান ম্লান হাসলেন।উনার খুব কষ্ট হচ্ছে।এই দিনটাও আসবে হয়তো আশা করেননি।তবু বললেন ঠিক আছে বাবা বলবো না।
আঙ্কেল প্লিজ কষ্ট পাবেন না।
আজকাল আর কষ্ট পাই না।সবকিছু সয়ে গেছে।
……….
আজ রাখছি।
জি আংকেল।
ভালো থেকো।
আপনিও ভালো থাকবেন আর আন্টির দিকে খেয়াল রাখবেন।
হুমম।
টু….টু….টু…টু……
মুবিন হাসান একইভাবে বসে আছেন।মেঘলার ঘরটা ও যেরকম রেখে গেছে ঠিক সেরকমই আছে।দিনের কিংবা রাতের অনেকটা সময় মুবিন হাসান এই ঘরটায় বসে কাটায়।মাঝে মাঝে মমতা হাসানও আসেন।তবে খুব কম।কারণ তিনি জানেন মেঘলা আর নেই।আর ওই ঘরটায় যতক্ষণ থাকেন ততক্ষণ উনার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসার মত কষ্ট হয়।মানতে খুব কষ্ট হয় তার মেয়েটা নেই।কি এমন হলো যে উনার মেয়েটাকে সেদিন বাড়ি ছেড়ে যেতে হলো।সামান্য ফেলই তো পরের বছর দিলেও হতো।কিন্তু না তখন কেন এইভাবে না ভেবে শাসন করতে গেলাম??কেনো যে মেয়েটাকে চড় দিলাম?সেই যে আমার উপর অভিমান করে সুস্থ ভালো মেয়েটা বাড়ি ছাড়লো আর ফিরে এলো না।তিনি সে যন্ত্রণায় কুড়ে কুড়ে মরছেন।
রুদ্র ঝিম মেরে বসে আছে।তার জীবনে এখন অনেককিছুই আছে বলতে গেলে।গ্রামের বন্ধকী বাড়িটা ছাড়িয়ে নিয়েছে।মেঘলার বাবার দেওয়া টাকাটা ফেরত দিয়েছে।ওর জীবন অনেক মেয়েই এসেছে।কিন্তু কাউকেই ওর মনে জায়গা দেয়া তো দূর চোখ দিয়েও কখনো দেখে না।কিন্তু তবুও এক বিশাল শূন্যতা ওকে ঘিরে থাকে।মেঘলা নামক শূন্যতা।রুদ্র জীবনে অনেক এগিয়ে যাচ্ছে ঠিকই শুধু ওই একটা জায়গা থেকে বের হয়ে ও সামনে এগুতে পারেনি।হয়তো পারবেও না।আজ যে মেঘলার জন্মদিন এই দিনটাই ভুলতে পারলো না আর মেঘলাকে ভুলবে কি করে??যতই উপরে উপরে বুঝায় সবাইকে যে মেঘলার নামও সে শুনতে চায় না,কিন্তু সেও তো মানুষ তার ভিতরের অনুভূতিদের তো মেরে ফেলতে পারেনি।দিন শেষে ঠিকই অনুভূতিরা জানান দেয়।জানান দেয় তার অস্তিত্ব জুড়ে আছে মেঘলা,ওর বেস্টফ্রেন্ড।যতদিন যাচ্ছে ততই যেনো রুদ্রর কাছে ভালোবাসার আরেক নাম হয়ে উঠছে মেঘলা।
চলবে……….