মেঘলা আকাশে রুদ্রই ভরসা উম্মে হাবিবা তনু পার্ট:৪৩

0
448

মেঘলা আকাশে রুদ্রই ভরসা
উম্মে হাবিবা তনু

পার্ট:৪৩

এয়ারপোর্ট থেকে বাড়ি ফিরে একটা কথাও বলেনি মেয়েটা।
১৪বছর পর দেশে এলো।
ফিরলো নিজের বাড়িতে।আর সে কিনা এসেই কান্নাকাটি জুড়ে দিল!!!
অদ্ভুদ ব্যাপার তো।
এত বড় মেয়ে এমন করে কাদতে পারে সবার সামনে!!
সাবিবা বারংবার কারণ জানতে চেয়েও ব্যর্থ হয়েছে।
মুবিন হাসান ও মমতা হাসান তো প্রথমেই হাল ছেড়ে দিয়েছে।বুঝে গেছে এত সহজে এ কান্না থামার নয়।
তবে কথা হচ্ছে এই কান্নার কারণটা ঠিক কি??
এইখানে উপস্থিত কারোই সেটা বোধগম্য হচ্ছে না।

সাবিবা সন্দেহপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রুদ্রর দিকে।
এই ছেলেটাও ভারী আজব।মুখ গম্ভীর করে বসে আছে।সে তো এট লিস্ট বলতে পারে কি হয়েছে?
বাপ মেয়ে যেনো পণ করেছে কেউই কোনো কথা বলবে না।
সাবিবা এইবার ধৈর্য্য হারিয়ে ফেলছে।অনেক হয়েছে।এক ঘন্টা ধরে বাপ বেটির অনেক নাটক দেখেছে কিন্তু আর নেওয়া যাচ্ছে না।

তুই যদি ভেবে থাকিস তুই এইভাবে ফেচফেচ করে কাদবি তাহলে কিন্তু ভুল করছিস।
…..
এইসব কিন্তু একদম ভালো লাগছে না!
…….
তুই কি বলবি এই দীর্ঘ কান্নার কি কারণ??না হয় টেনে এক থাপ্পড় দিবো।
নাহহ তবুও কান্না থামছে না।

এতদিন পর আমাদের দেখে খুশি হসনি বলে কাদছিস??
মাথা নাড়িয়ে বুঝাল না।
আমাদের দেশ পছন্দ হচ্ছে না???
আবার না সূচক মাথা নাড়ল।
তবে কি তোর মায়ের কথা মনে পড়ছে??
হটাৎ করেই সাবিবার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ল।তৎক্ষণাৎ কান্নার বেগ বেড়ে রিমঝিম বর্ষার রূপ নিলো।
সাবিবাও দুহাতে আকড়ে ধরলো।বোকা মেয়ে।আমি তোর মা নই??দেশের মাটিতে পা দিতে না দিতেই মায়ের জন্য কেঁদে বুক ভাসিয়ে দিচ্ছে।এইভাবে কাদলে তো দেশে বন্যা বয়ে যাবে রে।
সবাই হো হো করে হেসে উঠলো।হাসলো না শুধু রুদ্র এবং মাহা।
সাবিবা কপট রাগ দেখিয়ে সবাইকে থামতে বললো।সবাই এইখান থেকে যাও আমরা মা মেয়ে একটু কথা বলবো।
সবাই বিনা বাক্য ব্যয়ে রুম ত্যাগ করলো।

সাবিবা সোজা রুমের দরজা আটকে দিয়ে মাহার পাশে বসলো।
মাহা এখনো কেঁদেই চলেছে।
একদম মায়ের মত হয়েছে।চেহারাটা যেনো মায়েরই মুখ কেটে বসানো।কিন্তু চোখ দুটো কি কোনো কারণে ওর বাবার মতো মনে হচ্ছে??চোখের দিকে বেশিক্ষণ তাকানো যায় না।কেমন একটা অস্বস্তি হয়।শুধু মাত্র কি মাহার চোখ ওর বাবার মতো মনে হচ্ছে বলে??
মন ভরে মেয়েকে দেখে নিয়ে বুকে আগলে নিয়ে বললো,
তুই এইভাবে কাদার জন্য দেশে এসেছিস??আমাদের কি কষ্টের অভাব হয়েছে যে তোর কান্না দেখে কষ্টের মাত্রা আরও বাড়াবো??
না মামনি!আমি তোমাদের একদম কষ্ট দিতে চাই না।
আনন্দও তো দিতে চাস না!
মাহা চোখ পিটপিট করে তাকালো।
মামনি তুমি জানো কি হয়েছে??
না বললে জানবো কি করে?
আমি আর পাপা যখন গাড়ি থেকে নামলাম তখন একটা বয়স্ক মহিলা নানুদের মত হবে…..
এত ব্যাখ্যা না দিয়ে ঘটনাটা বল।
আসলে নানুটা মনে হয় পাপাকে চিনতো।
চিনতেই পারে।তোর পাপা তো ছোটবেলায় এইখানেই থাকতো।
হ্যাঁ,নানুটার কথায় বুঝেছি।পাপার,দাদুমনির খোঁজ নিল।
এতে কান্নার কি হলো??
নানুটা এরপর খুব বাজে কিছু কথা বলেছে…,বলেই আবার কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো।
সাবিবা দুহাতে মাহাকে আকড়ে ধরলো কাদে না মা।একটু শান্ত হও।সাবিবা এক হাতে হাতড়ে বেড সাইড থেকে পানির গ্লাসটা নিয়ে অল্প একটু পানি খাওয়ালো মাহাকে।
কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে মাহা আবার বললো,
উনি আমার মাম্মাকে…
সাবিবার চোখ হটাৎই ধক করে জ্বলে উঠল।কি বলেছে তোর মাম্মাকে…
বলছে আমার মাম্মা নষ্ট মেয়ে মানুষ।পাপাকে বোকা সোকা পেয়ে প্রফেসর সাহেব আমাকে পাপার ঘাড়ে গছিয়ে দিয়েছে।
সাবিবার সারাশরীর রাগে রিরি করছে।তোর পাপা কিছু বলেনি?
বলেছে।অনেকগুলো কড়া কথা শুনিয়ে দিয়েছে।তারপর মহিলা মুখ ভেচকি দিয়ে বলে গেছে যার ভালোর লাইগা বলছি সেই বলে চোর।পাপা খুব রেগে বলেছে আমার ভালো আপনাদের ভাবতে হবে না।নিজের ভালো ভাবেন।আমরা খুব বেশি ভালো আছি।তারপর তো পাপা আমাকে নিয়ে ঐখান থেকে সরে গেল।

সাবিবা যতটা সম্ভব নিজেকে সংযত করল।তারপর মাহার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,শোন মা জীবনে চলার পথে অনেক বাধা আসে।অনেকেই পেছন থেকে অনেক কথা বলে।অনেক কটু কথা বলবে।তোমার আত্মবিশ্বাস ভেঙ্গে দিতে চাবে,সম্পর্কে ভাঙন ধরাতে চাবে,ভুল বুঝাতে চাইবে।সেখান থেকে সঠিক সত্যিটা তোমাকে বুঝতে হবে।সে সব কিছু তোমার জীবনের ইন্সপিরেশন ভেবে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।বুঝতে হবে তুমি তাদের চেয়ে অনেক ভালো আছো এবং তারা তোমাকে হিংসা করে।আর তাই তোমাকে পিছন থেকে আঘাত করে তোমাকে ভাঙতে চাইছে।জীবনে যত বাঁধা আসবে তত বেশি তুমি আত্মপ্রত্যয়ী হতে পারবে।লোকের কথা লোকে বলুক তাদের কথাগুলো গুরুত্ব দিও না আর না হয় তাদের কথাগুলোকে মোটিভেশন ভেবে সামনে এগিয়ে যাও।মনে রেখো তোমাকে ভেঙ্গে পড়তে দেখলে বা তুমি ভয় পেয়েছ বুঝতে পারবে তখন তোমাকে আরো আঘাত করবে।যেকোনো অবস্থায় নিজেকে শক্ত রাখতে হবে।তোমাকে কেউ ভুল কিছু বললো বা অপবাদ দিলে তোমাকে প্রতিবাদ করতে হবে।না হয় তোমাকে দুর্বল ভেবে বারবার আঘাত করবে।আমাদের মনুষ্য জাতির ধর্মই অন্যের দুর্বলতা খুঁজে বের করা।

মাহা অপলক তাকিয়ে রইলো।এই মানুষটাকে খুব বেশি ভালোবাসে ও।নিজের মাকে চোখেও দেখেনি।নিজের মায়ের জায়গায় এই মানুষটাকে পেয়েছে ছোট থেকে।মাঝে মাঝে মনে হয় ওর নিজের মাও বোধ হয় ওকে এত বুঝতো না।আর না এত ভালোবাসতো।মা নেই তা নিয়ে এখন পর্যন্ত ওর একটুও খারাপ লাগে নি।কিন্তু নিজের মাকে নিয়ে কটু কথাগুলো একদম ভালো লাগেনি।ইচ্ছে করছিল বুড়িটার সব কটা চুল ছিঁড়ে চুলায় দিয়ে পুড়িয়ে দেই।

এই জন্যই ওকে আমি দেশে আনতে চাই না আঙ্কেল।
দেশে না আসাটা কোনো সমাধান নয়।আমার মেয়ে একটা ভুল করেছে কিন্তু আমার নাতনির কি অপরাধ??
সেসব তো আর লোকে বুঝে না।চার বছরের একটা মাছুম বাচ্চার দিকে এলাকার মানুষের বাজে ইঙ্গিত দিতে বাঁধেনি সেখানে এখন তো মাহা যথেষ্ট বড়।আমারই ভুল হয়েছে মাহার কথা রাখতে ওকে দেশে নিয়ে আসাটা।
রুদ্রর ভেতরটা রাগে ফেটে যাচ্ছে।মেয়ের চোখের পানি একদম সহ্য হয় না ওর।সেখানে মেয়েটা কেঁদেই চলেছে।আর কান্নার কারণটাও মেনে নিতে পারছেনা।ওরই প্রিয় মানুষটাকে নিয়ে বাজে কথা বলার সাহস পায় কি করে ওরা??

মুবিন হাসান মাথা নিচু করে বসে আছেন।এতগুলো বছর পর একমাত্র নাতনিকে পেয়ে কোথায় আদর আহ্লাদ করবেন তা না করে এখন ভাবতে হচ্ছে তার দেশে আসা কি আধেও ঠিক হলো?

আর মমতা হাসান রুদ্রর থেকে পুরো ঘটনা শুনে মুখে আঁচল চাপা দিয়ে কাদঁছেন।কাদা ছাড়া আর কিই বা উনি করতে পারেন!সব হারিয়ে যখন মেয়েকে ফিরে পেলেন কত ভালোই না যাচ্ছিল তার দিনগুলি।কিন্তু সে সুখ বেশিদিন টিকলো না।সবাইকে কাদিয়ে মেঘলা হারিয়ে গেলো না ফেরার দেশে।আর রেখে গেলো তারই অংশ ফুটফুটে ছোট্ট মাহাকে।আস্তে আস্তে যখন সব আবার স্বাভাবিক হতে লাগলো।কিন্তু সেদিনগুলোও দীর্ঘস্থায়ী হলো না।এলাকার মানুষের কটু কথায় বাজে ইঙ্গিতে জীবন প্রায় বেসামাল।মানুষের এতটুকু বাঁধেনি মা হারা ওইটুকু দুধের শিশুর দিকে বাজে ইঙ্গিত দিতে।যখন দুনিয়া দাড়ি বেসামাল অবস্থা তখন হটাৎ একদিন রুদ্রর আবির্ভাব হলো।রুদ্র এমন অবস্থা দেখে যখন মাহাকে ওর সাথে নিতে চাইলো তখন খুব কষ্ট হলেও এইটা ভেবে শান্তি পেয়েছিল এইবার বুঝি অতীত পিছু ছাড়লো।কিন্তু এতগুলো বছর পর যখন আমরাই সব ভুলে গেছি তখনও লোকে কিছু ভুলেনি।দেশের মাটিতে পা দিতে না দিতে অতীত পিছু টেনে ধরলো!!!

চলবে……

গঠনমূলক মন্তব্য করে পাশে থাকবেন ধন্যবাদ 😇

সকল পর্বের লিংক
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=169467331959466&id=140699218169611

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here