# আরশিযুগল প্রেম❤
# লেখিকাঃ নৌশিন আহমেদ রোদেলা ❤
# পর্ব- ৩০
________________
ভার্সিটির ক্যাফিটেরিয়াতে বসে আছে শুভ্রতা। হাতে গরম চায়ের কাপ। তার ঠিক সামনেই মুখ কাঁচুমাচু করে বসে আছে তনয়া। শুভ্রতার দৃষ্টি তীক্ষ্ণ। ভ্রু’জোড়া খানিক কুঁচকে আছে। তনয়া চোখ তুলে শুভ্রতার দিকে তাকাল। পরক্ষণেই চোখ ফিরিয়ে নিয়ে পাশে বসা পুষ্পির উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করলো। পুষ্পির চোখে-মুখেও নিদারুণ কাঠিন্য। বান্ধবীদের এমন মুখ ভঙ্গিমায় খানিকটা হকচকিয়ে গেল তনয়া। গরম সমুচায় কামড় বসিয়ে মুখ কুঁচকালো অর্পন। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে টেবিলের উপর ঝুঁকে এলো সে। উত্তেজিত গলায় বলল,
—-” শুভ্রব ভাইয়া! উনাকে নিয়ে তো কখনও ভাবায় হয় নি। সেদিন শুভি ফোন দিয়ে বলার পর থেকে ভীষণ আফসোস হচ্ছে। উনার সাথে প্রেম করলে ব্যাপারটা খারাপ হতো না। শিট! শিট! শিট! তনু বেবি? তুই বরং শুভ্রব ভাইয়ার সাথে ব্রেকআপ করে নে…….সেই সুযোগে আমি একটু চান্স টান্স মারি!”
কথাটা বলে চোখ টিপলো অর্পন। তনয়া থমথমে মুখে একবার অর্পনের দিকে তাকাল মাত্র। পাশ থেকে আফসোসের সুর তুলে বলে উঠলো প্রেমা,
—-” শুভির কথাটা শোনার পর আমার প্রথম যে নামটা মনে এসেছিলো সে হলো ‘অর্পন’। অর্পনের প্রেমে পড়ার স্বভাব আছে। তাছাড়া, ও তো সারাদিনই বলে… শুভি বেবি? তুই ছেলে হলে আমি তোর সাথেই প্রেম করতাম, ট্রাস্ট মি জানু হেন তেন। এদিকে,শুভ্রব ভাই হলো শুভ্রতার মেইল ভার্সন। অর্পন তার সাথে প্রেম টেম করলে আমি বিশেষ অবাক হতাম না। কিন্তু তনু!!!তুই আমার এতো গভীর চিন্তা ভাবনাটাকে মিথ্যা করে দিতে পারলি?এসাইনমেন্ট ফেলে রেখে কতো কষ্ট করে এতোটা চিন্তা করেছি তোর কোনো ধারণা আছে?”
তনয়া মুখ কাঁচুমাচু করে তাকালো। মুখটা ভরা আষাঢ়ের মতো অন্ধকার হয়ে আছে তার। চোখে-মুখে নিদারুণ অসহায়ত্ব ফুটিয়ে তুলে একের পর এক বান্ধবীর দিকে তাকাচ্ছে সে। শুভ্রতা হাতের কাপটা টেবিলে রেখে এলো চুলগুলোকে মুঠোবন্দি করে খোঁপায় মোড়ালো। গম্ভীর গলায় বলল,
—-” কাজটা তুই ঠিক করিস নি তনু। আমাকে লুকিয়ে প্রেমাখ্যান রচনার চেষ্টটা ভারি অন্যায় হয়েছে। এর শাস্তি হিসেবে আজকের সব বিল তুই দিবি।”
এটুকু বলে থামলো শুভ্রতা। সাথে সাথেই করুণ গলায় বলে উঠলো অর্পন,
—-” আমিও খুব কষ্ট পেয়েছি তনু। তুই আমাদের লুকিয়ে এতো কাহিনি করতে পারলি? আমি যে নির্মল মনে ক্রাশ খাই তা কি তোদের থেকে লুকাই? ইভেন, আমার কাজিনের সাথে আমার কি হয়েছিলো সেইসকল গোপনীয় কথাও তোদেরকে বলেছিলাম, বলি নি?প্রেমা তার কালাচাঁদের কথা যেখানে লুকায়নি। পুষ্পি যেখানে…ওহ্ পুষ্পিকে বাদ দে ও তো মেয়ে না। ও হলো আস্ত একটা ফাউল মহিলা। ওকে বড়জোর খালাম্মাদের তালিকায় ফেলা যায়। ওকে নি…”
অর্পনের কথার মাঝেই গর্জে উঠলো পুষ্পি। টেবিলের ওপর রাখা সসের বোতলটা তুলে নিয়ে রাগী গলায় বলল,
—-” ওই? কি বললি তুই? আমি খালাম্মা? তুই কি? এক বাড়িতে মাথা ফাটিয়ে ফেলবো… ”
পুষ্পির গর্জনে অর্পনের মাঝে তেমন কোনও ভাবান্তর দেখা গেলো না। খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতে হাত বাড়িয়ে সসের বোতলটা নিলো সে। দাঁত কেলিয়ে বললো,
—-” থেংকিউ খালাম্মা। আই লাভ চিলি সস। আচ্ছা তনু, যা বলছিলাম, শুভ্রতাকে দেখ… শুভ্রতাও কিন্তু সাদাফ ভাইয়ার কথাটা লুকায়নি। বয়ফ্রেন্ডের দুঃখে পাঁচদিনে চোখের নিচে কালি ফেলে দিয়েছে সেটাও আজ ওপেন সিক্রেট। আর তুই কিনা সব লুকিয়ে গেলি? সব?”
এটুকু বলে থামলো অর্পন। সামনে রাখা পানির গ্লাসটা তুলে নিয়ে অল্প পানি খেলো। আশেপাশে তাকিয়ে ক্যাফিটেরিয়ার মামাকে ডেকে একগাদা খাবার অর্ডার করলো। তারপর স্মিত হেসে বলল,
—-” এগুলোর বিলও তুইই দিয়ে দিস তনু বেবি। হাজার হলেও আমার ক্রাশের হবু বউ তুই। আমার খন্ডিত মনের জন্য এটুকু তো করতেই পারিস।”
প্রেমা অবাক হয়ে বললো,
—-” ক্রাশ মানে? শুভ্রব ভাই তোর ক্রাশ হলো কবে থেকে?”
অর্পন ‘ডোন্ট কেয়ার’ ভাব নিয়ে প্রেমার দিকে তাকাল। কৃত্রিম লাজুকতা নিয়ে বলল,
—-” এখন থেকে। যখন থেকে শুনলাম তনুর সাথে উনার কিছু চলছে তখন থেকেই উনার প্রতি ভীষণ প্রেম প্রেম পাচ্ছে!”
অর্পনের কথায় বাকি চারজনই গোল গোল চোখে তাকিয়ে রইলো। তবে তাদের বিস্ময়টা বেশিক্ষণ টিকলো না। অর্পনের এমন খাপছাড়া কথা-বার্তায় অভ্যস্ত তারা। বন্ধুমহলে অর্পনের এমন কথা বলাটাই কাম্য। অর্পনের সাথে গম্ভীরতা বিষয়টি যায় না। মূলত সে গম্ভীর হতেই জানে না। তাদের খনিকের নীরবতা কাটিয়ে হঠাৎই ফোন বেজে উঠলো তনয়ার। সাথে সাথেই চারটি অগোছালো দৃষ্টি এসে পড়লো তার উপর। তনয়া অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে বান্ধবীদের দিকে তাকালো। পুষ্পি হাত বাড়িয়ে ফোনটা ছিনিয়ে নিয়ে স্ক্রিনের দিকে তাকাল। ফোনটা উঁচু করে স্ক্রিনে ভাসা শুভ্রবের নামটা সবাইকে দেখালো। শুভ্রতা চোখ কপালে তুলে বললো,
—-” ভাইয়া!”
অর্পনও একই সুরে বললো,
—-” নিউ ক্রাশ!”
প্রেমা কিছু বলবে তার আগেই বিরক্ত কন্ঠে বলে উঠলো পুষ্পি,
—-” এই চুপ! এক এক করে ইন্ট্রো দেওয়া বন্ধ কর। এই তনু? ফোনে লাউডস্পিকার দিয়ে তারপর রিসিভ কর। খবরদার মিউট করেছিস তো… আমরাও জানতে চাই তোমাদের প্রেম ঠিক কোন পর্যন্ত এগিয়েছে। কেটে যাবে, তাড়াতাড়ি ধর।”
তনয়া অসহায় মুখে বান্ধবীর দিকে তাকাল। চার বান্ধবীকে আজ ইতিহাসের কালো গহ্বর থেকে উঠে আসা ঘষিটি বেগমের মতো ভয়ঙ্কর ছলনাময়ী, ষড়যন্ত্রকারী মনে হচ্ছে তার। মনে মনে তাদের একগাদা গালি দিয়ে ফোনটা হাতে নিতেই চারজনেই হামলে পড়লো তার উপর। তাদের দেখে মনে হচ্ছে, কানটা কেটে ফোনের মাঝে ঢুকিয়ে দেওয়ার কোনো পদ্ধতি থাকলে তবেই একদফা স্বস্তি পেতো তারা। তনয়া ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে ফোনটা রিসিভ করলো। ওপাশ থেকে শান্ত, স্পষ্ট কন্ঠ ভেসে এলো,
—-” হ্যালো তনুশ্রী।”
অর্পন ফট করেই বলে ফেলল,
—-” ওরে বাবা! তনু…”
এটুকু বলতেই তার মুখ চেপে ধরলো প্রেমা। শুভ্রতা চোখ রাঙিয়ে চাপা গলায় বললো,
—-” হুশ…চুপ।”
অর্পন মুখ ভার করে শান্ত হয়ে বসলো। তনয়া নরম গলায় বললো,
—-” হ্যালো।”
—-” কোথায় আছো?”
—-” ক্যাফিটেরিয়াতে।”
—-” ক্লাস ক’টায় শেষ?”
—-” দুটোর দিকে।”
—-” ফ্রেন্ডরা পাশে নাকি?”
তনয়া মৃদু গলায় বলল,
—-” হু।”
—-” আচ্ছা। তাহলে রাখছি। দু’টোর পর ফোন দিবো।”
—-” আচ্ছা। ”
শুভ্রব কিছুক্ষণ চুপ থেকে উসখুস গলায় বলল,
—-” শুভি কোথায়? তোমার সাথে?”
তনয়া আড়চোখে একবার শুভ্রতার দিকে তাকাল। তারপর মৃদু গলায় বললো,
—-” হু।”
—-” ওহ্। শুভি সকালে খেয়ে বের হয় নি। রাতেও খায় নি কিছু। কোনো কারণে হয়তো আপসেট খুব। তোমাদের সাথে তো আর আপসেট হয়ে বসে থাকতে পারবে না। জোর করে হলেও কিছু একটা খাইয়ে দিও ওকে, প্লিজ।”
তনয়ার ঠোঁটে মৃদু হাসি ফুটলো। বেশ আত্মবিশ্বাসী গলায় বললো,
—-” আচ্ছা।”
—-” তুমিও কিছু খেয়ে নিও, রাখছি। আল্লাহ হাফেজ।”
—-” আল্লাহ হাফেজ।”
তনয়া ফোন কেটে চোখ তুলে তাকাতেই ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলো পুষ্পি,
—-” ওই? আমরা যে পাশে আছি বললি কেন? বলতে পারলি না যে, একা বসে উনার কল্পনায় হাবুডুবু খাচ্ছিস।”
তনয়া অবাক চোখে তাকাল। বিস্ময় নিয়ে বললো,
—-” হাবুডুবু খাচ্ছিলাম না তো বলবো কেন? অযথা মিথ্যা বলার কি আছে?”
শুভ্রতা এবার ভ্রু কুঁচকালো,
—-” তোর এই সত্যবাদী মনোভাবের জন্যই নিশ্চয় ভাইয়াকে আমার আর ওর কথাটা বলে দিয়েছিস? আমি যে পহেলা বৈশাখে তোদের সাথে ছিলাম না সেটা এতো সত্যবাদী হয়ে ভাইয়াকে জানানোর কি প্রয়োজন ছিলো শুনি? তোর এই মহান সত্য কথার জন্যই ভাইয়া এখন আমাকে চোখে চোখে রাখে। তোকে তো…”
তনয়া আরেক দফা অবাক হয়ে বললো,
—-” আরে, আমি কিছু বলি নি। আমি তো নিজেও পুষ্পিদের সাথে ছিলাম না। আমি তো সারাদিন ওর সাথে…”
তনয়ার কথার মাঝে টেবিলের উপর তুমুল শব্দ তুলে আর্তনাদ করে উঠলো অর্পন,
—-” অবজেকশন! কি শুনছি এসব? তুই নববর্ষে শুভ্রব ভাইয়ের সাথে ঘুরছিলি? আর আমি যখন তোকে বললাম, তনু বেবি? এবার সবাই যেহেতু নেই তাহলে তুই,আমি আর পুষি মিলে একটা প্ল্যান করি। তখন কি বলেছিলি? তখন বলেছিলি তোর নাকি ভয়ানক পেট ব্যাথা। তোদের বাসায় গিয়ে তো দেখেছিলাম চিৎপটাং হয়ে শুয়ে আছিস। দেখে মনে হচ্ছিল এই মুহূর্তে ডেলিভারি হয়ে যাবে। বেদ্দপ!”
এটুকু বলে থামলো অর্পন। প্রেমাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
—-” এই প্রেমা? চেয়ার সরা। আমি এখন ফ্লোরে গড়াগড়ি দিয়ে দুঃখ প্রকাশ করবো। এমন সব ছলনাময়ী বান্ধবী পেয়ে আমি অত্যন্ত দুঃখিত। এতো ছলনার শিকার হওয়ার পর আমার আর বাঁচার অধিকার নেই। একফোঁটাও না। আজ প্রেম করছে, বলছে না। প্রেমিকের সাথে ডেলিভারি পেইন নিয়ে ঘুরতে চলে যাচ্ছে, জানাচ্ছে না। একদিন দেখা যাবে সত্যি সত্যি ডেলিভারি হয়ে যাবে তবুও জানাবে না। এই জীবনটা নিয়ে তাহলে কি করব আমি? কি করব?”
সবাই কিছুক্ষণ গম্ভীর মুখে অর্পনের দিকে তাকিয়ে থেকে দমফাটা হাসিতে মেতে উঠলো। তাদের পঞ্চ হাসির ঝংকার যেন খেলে বেড়াতে লাগলো পুরো ক্যাফেটেরিয়াময়।
___________________
দুপুর ১ টা। মাথার উপর বৈশাখ মাসের উত্তপ্ত সূর্য।ভ্যপ্সা গরমে অতিষ্ঠ প্রতিটি প্রাণ। বৃহদাকার এই আকাশটিতে কোথাও মেঘের ছোঁয়া নেই। দু’চোখ ভরা ধূ ধূ নীল রঙের বাহার। এই উত্তপ্ত গরম দুপুরে, শুভ্রতার ডিপার্টমেন্টের সামনে দাঁড়িয়ে আছে সাদাফ। উদ্দেশ্য শুভ্রতাকে চমকে দেওয়া। হঠাৎ করে, অপ্রত্যাশিত সাদাফকে দেখতে পেয়ে শুভ্রতার রিয়েকশন কি হতে পারে তাই দেখার ইচ্ছে তার। সাদাফের ভাবনার মাঝেই কেউ একজন ছুটে এসে ঝাপটে ধরলো তাকে। আকস্মিক এই আক্রমনে টাল সামলাতে না পেরে কয়েক পা পিছিয়ে গেলো সাদাফ। চমকে উঠে বুকের উপর মিশে থাকা মুখটির দিকে তাকাল সে। কিছুক্ষন হতভম্বের মতো দাঁড়িয়ে থেকেই ডানহাতে আলতো জড়িয়ে ধরে বলল,
—-” কি করছ, শুভ্রা? সবাই দেখছে। ছাড়ো।”
সাদাফের আদুরে গলা শুভ্রতার কান পর্যন্ত পৌঁছালো বলে মনে হলো না। সাদাফ এবার টেনে শুভ্রতা নিজের থেকে আলাদা করার চেষ্টা করে বললো,
—-” এটা ভার্সিটি শুভ্রা। কেউ দেখে নিলে তোমার সমস্যা হতে পারে। প্লিজ ছাড়ো।”
শুভ্রতার এবার টনক নড়লো। শুভ্রব কোনোভাবে দেখে ফেলবে ভেবে ছিঁটকে সরে গেলো সে। সাদাফ মৃদু হেসে শুভ্রতার দিকে তাকালো। নরম গলায় বললো,
—-” তুমি ফ্রী এখন?”
শুভ্রতা ঘোর ধরা চোখে তাকিয়ে আছে। সাদাফ তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে বিষয়টা যেন কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না তার। সাদাফ আবার একই প্রশ্ন করতেই হেসে জবাব দিল শুভ্রতা,
—-” তোমার জন্য আমি সবসময়ই ফ্রী।”
—-” তাহলে চলো কোনো রেস্টুরেন্টে বসি। প্রচুর ক্ষুধা পেয়েছে। আজ আমার হাতে প্রচুর সময়। আর এই সব সময়টুকুই শুভ্রার। তোমার যত কথা, যত গল্প আছে সব শুনবো আজ।”
শুভ্রতা আনন্দে আত্মহারা হয়ে বলল,
—-” তোমার তো আরো একদিন পর আসার কথা ছিলো। তাহলে আজ?”
—-” কাজটা তাড়াতাড়ি শেষ হয়েছে বলেই তাড়াতাড়ি ফেরা। এবার তো চলো। এই রোদে দাঁড়িয়ে আর থাকা যাচ্ছে না।”
শুভ্রতা খুশি মনে এগুতে নিয়েও থমকে দাঁড়ালো। দ্বিধামাখা গলায় বলল,
—-” যদি ভাইয়া দেখে নেয়?”
—-” কোথায় তোমার ভাইয়া? আর দেখলেই বা কি?”
—-” দেখলে কি হবে জানি না। তবে না দেখাটাই মঙ্গল। ও এই সময়ে আশেপাশের কোনো রেস্টুরেন্টেই আছে নির্ঘাত। আচ্ছা? আমরা বনানী চলে গেলে কেমন হয়? তোমার বাসায়?”
সাদাফ খানিক ভাবল। তারপর বলল,
—-” আমার কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু অতদূর যাবে? বাসায় কোনো প্রবলেম হবে না তো?”
শুভ্রতা শুভ্র হাসি দিয়ে বলল,
—-” সামলে নিবো।”
সাদাফ কিছুক্ষণ একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো শুভ্রতার সাদামাটা মিষ্টি মুখটাতে। এই মেয়েটা কি ভীষণ ভালোবাসে তাকে। যে ভালোবাসা বুকের ভেতর হঠাৎ হারিয়ে যায় না। থেকে থেকে চিনচিনে ব্যথায় ক্লান্ত করে তুলে তাকে।
সোফায় গা এলিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছে সাদাফ। সদ্য গোসল সারায় চোখ-মুখ ভীষণ স্নিগ্ধ লাগছে । ভেজা চুলগুলো পরিপাটি হয়ে পড়ে আছে কপালে। শুভ্রতা সোফায় পা তুলে বসে টিভি দেখছে। কোলের উপর খাবারের প্লেট আর বামহাতে রিমোট নিয়ে অধিকাংশ সময় সাদাফের দিকেই তাকিয়ে আছে সে। সাদাফের ঘন পাপড়িতে ডাকা চোখগুলোও কি ভীষণ গোছালো লাগছে শুভ্রতার। শুভ্রতার ভাবনার মাঝেই চোখদুটো বন্ধ রেখেই বলে উঠলো সাদাফ,
—-” দেখতে হলে সরাসরিই দেখো। সামনেই তো বসে আছি। এতো ঘুরেঘুরে দেখার কি আছে?”
সাদাফের এমন কথায় লজ্জায় মিঁইয়ে গেলো শুভ্রতা। নিজের লজ্জাকে প্রশ্রয় না দিয়ে বললো,
—-” তোমাকে দেখতে যাবো কোন দুঃখে? আমি তো টিভি দেখছিলাম। আজাইরা কথা বলবে না একদম।”
সাদাফ এবার চোখ মেলে তাকাল। শুভ্রতার লজ্জায় রাঙা হওয়া টুকটুকে গাল দুটো দেখেই হেসে ফেললো সে। দীর্ঘক্ষণ শুভ্রতার চোখে-মুখে তাকিয়ে থেকে বললো,
—-” সামনের মাসে বাবার রিটায়ার্ডমেন্ট শুভ্রা। কাগজ পত্র নিয়ে কিছু ঝামেলা চলছে অফিসে। এদিকে বড় ভাবির ডেলিভারি ডেইটও চলে এসেছে। এতসব ঝামেলার মাঝে বিয়ের মতো সেনসেটিভ বিষয়ে এগুতে চাচ্ছে না মা। দু’টো মাসে কি খুব সমস্যায় পড়ে যাবে শুভ্রা? দু’টো মাস কি অপেক্ষা করা যায় না?”
শুভ্রতা স্নিগ্ধ চোখে তাকালো। দীর্ঘশ্বাস ফেলে, হাসার চেষ্টা করে বললো,
—-” সমস্যা নেই। সামনের জুলাইয়ে দাদু হজ্জে যাবেন। ফিরবেন সেপ্টেম্বরের দিকে। পারিবারিক সমস্যাগুলো তো আর বলে কয়ে আসে না। আংকেল- আন্টিকে নাহয় সেপ্টেম্বরে দাদু ফেরার পর পরই আসতে বলো? দাদু ফেরার আগ পর্যন্ত বিয়ের কথাটথা উঠবে বলে মনে হয় না।”
সাদাফ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। শুভ্রতার কোলের ওপর থেকে খাবারের প্লেটটা সরিয়ে হুট করেই কোলে মাথা রাখলো সাদাফ। শুভ্রতার সারা শরীর অদ্ভুত এক অনুভূতিতে কেঁপে উঠলো। সাদাফ তার গম্ভীর চোখ জোড়া মেলে শুভ্রতার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো অনেকক্ষণ। এই কয় দিনেই শুভ্রতার চোখের নিচে কালি পড়েছে। মুখটাও কেমন শীর্ণ আর মলিন হয়ে উঠেছে। সাদাফ সেদিকে দৃষ্টি রেখেই ফোরন কেটে বললো,
—-” এই ক’দিনেই চোখ-মুখের কি দশা করেছো শুভ্রাণী। ভাগ্যের ফেরে যদি মরে টরে যাই তাহলে তো তোমাকে খুঁজেও পাওয়া যাবে না।”
সাদাফের কথাটা কান পর্যন্ত পৌঁছাতেই কেঁপে উঠলো শুভ্রতা। অদ্ভুত এক ভয়ে বুকটা হাহাকার করে উঠলো। সবকিছু কেমন বিষাদময়, বিষণ্ন হয়ে উঠলো মুহূর্তেই!
#চলবে…..
আগের পর্ব —
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=198066231690161&id=111497937013658
[ প্রেমকথন লেখা হয় নি। দুঃখিত]