গল্প:- সি অফ মারমেইড
লেখনীতে:- যাবেদ খাঁন আবু বকর।
একাদশ পর্ব
আটত্রিশ.
রাজকুমারী ডায়ানা এবং যুবরাজ রন ইওহার্ড নিজেদের মাঝে কথা বলতে বলতে অধিক সময় অতিবাহিত করে ফেলেছে। চারিদিকে নিস্তব্ধতা বিরাজমান। রাত নেমে গেছে বহু আগে। সাধারণত সমুদ্র তলদেশে কখন দিন হিয় আর কখন রাত হয় তা বুঝা যায় না। তবে মারমেইড শহরে এই নীতিতে কিছুটা ভিন্নতা আছে। সূর্যের আলো সরাসরি মারমেইড শহরে প্রবেশ করতে না পারলেও কৃত্রিম উপায় সূর্যের আলো শোষণ করে আলোকিত করা হয়। কৃত্রিম উপায় বলার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। সুরক্ষা কবচ ব্যবহার করে সমুদ্র তলদেশ থেকে সূর্যের তীব্র আলো শোষণ করে।এবং শোষণ করে জমা করা উক্ত আলোক রশ্মিগুলোর মাধ্যমে সমগ্র মারমেইড শহরকে আলোকিত করা হয়। যেন দ্বিতীয় আরেকটি উপগ্রহ।
আলোকরশ্মির বিস্তর একান্তই সুরক্ষা কবচের ভেতরে ঘটে। সূর্যের মতো তীব্র আলো না হলেও অন্ধকার দূর করা যাবে তার চেয়ে অধিক আলো হয়। তাছাড়া রাত নেমে এলে মারমেইড শহরে কৃত্রিম আলোকরশ্মি তীব্রতা কমে যায়। একেবারে অন্ধকারে আচ্ছাদিত হয়ে যায় এমনটা নয়। আলোকরশ্মির তীব্রতা কমে গিয়ে পরিমাণ মতো আলো দিয়ে আচ্ছন্ন থাকে। যা আঁধার তাড়াতে সক্ষম। যদি রাতের আকাশে চাঁদের আলো ফুটে ওঠে,তবে মারমেইড শহরের আলোর পরিমাণ স্বাভাবিক অবস্থা থেকে খানিকটা বেড়ে যায়। সুরক্ষা কবচকে সোলারের সাথে স্বল্প তুলনা করা যায়।
আজকের আকাশে চাঁদ উঠেছে। তবে আজকের আকাশে ওঠা চাঁদটির আলো স্বাভাবিকের তুলনায় বেশ কম। আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে মেঘের ভেলা। যা কিছুক্ষণ পরপর চাঁদকে নিজের মাঝে লুফে নিচ্ছে। চাঁদ নিজেও যেন মেঘের আড়ালে লুকিয়ে নিতে ভারি খুশি। কিছু সময় বাদে পুনরায় মেঘের আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে। যেন চাঁদ এবং মেঘ দুজনেই লুকোচুরি খেলছে। রাজকুমারী ডায়ানা যুবরাজ রন ইওহার্ডকে সাথে নিয়ে সেই কখন থেকে অলিন্দে এসে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দুজন চাঁদের কৃত্রিম আলো দেখে আলাপনে মত্ত। সেদিকে যেন হুস নেই। আলাপনের এক পর্যায়ে রাজকুমারী ডায়ানার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন তুলে দেয় যুবরাজ রন ইওহার্ড।
‘ রাত তো অনেক হলো! ঘুমোবে না?’ কিছুটা ভাবনা চিত্তের ভাব চেহারায় ফুটিয়ে প্রশ্নটি করল।
রন ইওহার্ডের প্রশ্নের প্রত্যুত্তরে বলল রাজকুমারী ডায়ানা,
‘ হ্যাঁ ঘুমাব। আচ্ছা আপনি বরং এখন ঘুমোন। কাল থেকে আপনাকে আবার প্রশিক্ষণ কার্য শুরু হবে। তার জন্য ভোরে ঘুম থেকে উঠতে হবে। এমনিতে বেশ রাত হয়েছে। আমি তবে এখন যাই। ঘুমিয়ে পড়ুন। ‘ বিজ্ঞদের মতো কথার ভাব তুলে প্রথম কথাটি উপস্থাপন করল সে। শেষ কথাটি বলার সময় হাই তুলে বলল।
রন ইওহার্ড তার কথায় সম্মতি জানাতে হ্যাঁ সূচক উপরনিচ মাথা নাড়াল। যুবরাজ রন ইওহার্ডের থেকে সম্মতি পেয়ে রাজকুমারী ডায়ানা অলিন্দ ত্যাগ কক্ষে প্রবেশ করে। তার পিছুপিছু কক্ষে প্রবেশ করে যুবরাজ রন ইওহার্ড। রাজকুমার কক্ষ থেকে হেঁটে প্রবেশদ্বারের কাছে এসে উপস্থিত হয়ে দ্বারে টোকা দিতেই ওপাশে থাকা প্রহরী দরজা খুলে দেয়। রাজকুমারী ডায়ানা একবার পেছন ঘুরে রন ইওহার্ডের দিকে তাকাতেই একটি হাসি দিয়ে বিদায় জানাল সে। অবিলম্ব করে দ্রুত পায়ে হেঁটে সামনের দিকে হাঁটতে থাকে। কিছু সময় হাঁটতেই নিজ কক্ষের সামনে উপস্থিত হয়। তাকে দেখতেই প্রবেশদ্বারে দাঁড়িয়ে থাকা প্রহরীদের মাঝে একজন দ্বার খুলে দেয়। দ্রুত হেঁটে কক্ষে প্রবেশ করে রাজকুমারী ডায়ানা। তার প্রবেশ করা মাত্রই পুনরায় প্রবেশদ্বার বন্ধ করে দেয়।
কক্ষের মাঝে বেশ কিছু সময় যাবত পায়চারি করতে লাগল রন ইওহার্ড। যেন কোনো একটা বিষয় তাকে ভারি পিড়া দিচ্ছে। তাছাড়া বেশ চিন্তিতও বটে। পায়চারি করতে করতে একপর্যায়ে বিছানায় বসে যায় ভবঘুরে হয়ে।
‘ যা হবার দেখা যাবে সামনে। এত চিন্তা করে লাভ হবে না রন। এখন তোর ঘুমানোর প্রয়োজন। ভাবনা ছেড়ে এখন ঘুমানো যাক। কাল সকালে আবার তাড়াতাড়ি উঠতে।’ নিজ মনের নিজেই আলোচনা করতে লাগল রন ইওহার্ড।
ঘুমের প্রয়োজন এখন তার। বেশি চিন্তিত না হয়ে পালকের তৈরি বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। আবেশে চোখ জোড়া বুজে আসে তার। বিছানায় গা রাখতেই দেহের বাহুগুলো তাদের কার্যক্রমগুলো থেকে বিরতি নিতে লাগল। দেহে অবশিষ্ট শক্তির পরিমাণ খুব সীমিত। কিছু সময় বাদে চোখ দুটি আপনাআপনিভাবে বন্ধ হয়ে আসে। একপর্যায়ে হারিয়ে যায় ঘুমের রাজ্যে।
উনচল্লিশ.
রাত পেরিয়ে প্রভাতের কিরণ দেখা দিতেই কক্ষের প্রবেশদ্বারে কড়া নাড়তে লাগে প্রধান দেহরক্ষী লুইস। একের পর এক কড়া নাড়ার পরেও যখন জবাব না আসে। খানিকটা চিন্তিত হয়ে যান লুইস এবং তার সহচারী। চিন্তিত মনে প্রবেশদ্বারে থাকা প্রহরীদের উদ্দেশ্যে আদেশ রাখেন প্রধান দেহরক্ষী লুইস।
‘ দ্বার খুলো। ‘ এতটুকু বলে থেমে যান তিনি। অপেক্ষা করতে লাগলেন দ্বার খোলার। প্রহরী আদেশ পেয়ে বাধ্য হয়ে দ্বার খুলতে লাগে। প্রবেশদ্বার খুলে দিয়ে কক্ষে প্রবেশ করেন প্রধান দেহরক্ষী লুইস এবং তার সহচারী। কক্ষে প্রবেশ করে বা দিকে মোড় নিয়ে রন ইওহার্ডের শয়ন কক্ষে প্রবেশ করেন তারা। নজরে আসে বিছানায় ক্লান্ত হয়ে শয়নে ব্যস্ত যুবরাজ রন ইওহার্ড। হেঁটে তার কাছে উপস্থিত হয় প্রধান দেহরক্ষী লুইস এবং তার সহচারী। মৃদুস্বর তুলে ডাকতে আরম্ভ করেন।
গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন রন ইওহার্ড। তার কানে প্রবেশ করছে না তাদের হাঁক। এমতাবস্থায় প্রবেশদ্বার খুলে যায়। দ্রুত সেদিকে দৃষ্টিপাত করেন তারা দুজন। প্রবেশদ্বার দিয়ে কক্ষের ভেতরে প্রবেশ করে দ্রুত পায়ে হেঁটে বা দিকে মোড় নিয়ে রন ইওহার্ডের শয়ন কক্ষে প্রবেশ করেন রাজকুমারী ডায়ানা। শয়ন কক্ষে প্রবেশ করতেই তার দৃষ্টির অন্তর্গত হয় যুবরাজ রন ইওহার্ডের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন প্রধান দেহরক্ষী লুইস এবং তার সহচারী। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকায় সে। চোখ দুটো তৎক্ষণাৎ লাল উত্তাপে পরিনত হয়ে যায়। যেন একটু পরে চোখের কোটর বেয়ে লাভার উত্তাল ঢেউ প্রবাহ হবে। মুহূর্তের মাঝে কক্ষের পরিবেশ বদল হয়ে যায়। যেন কক্ষের ভেতরে কোনো আগুনের গোলা প্রবেশ করেছে। পরিস্থিতি বুঝতে পেরে দ্রুত বলতে লাগেন প্রধান দেহরক্ষী লুইস।
‘ ভুল বুঝবেন রাজকুমারী। দয়া করে শান্ত হন। আমরা যুবরাজকে প্রশিক্ষণের জন্য উপদেষ্টা নিওরিয়ান কথামতো নিয়ে যেতে আসছিলাম। এসে দেখে তিনি এখনো ঘুমোচ্ছেন। তাই মৃদুস্বরে ডাকতেছিলাম। ‘ ভয়ে কাতর হয়ে কথাগুলো বললেন তিনি। গলা থেকে যেন স্বর বাহিরে বেরিয়ে আসছিল না।
রাজকুমারী ডায়ানার চেহারা দেখে বুঝা যাচ্ছে, কথাগুলো মোটেও বিশ্বাস করেনি সে।
‘ আচ্ছা ঠিকাছে। আপনারা কক্ষের বাহিরে যেয়ে অপেক্ষা করুন। দ্রুত!’ প্রথম কথাগুলো রাগ চেপে বললেও শেষ কথাটি খানিকটা ধমকের সূরে বলল।
দেহরক্ষী প্রধান লুইস এবং তার সহচারী অবিলম্বে দ্রুত পায়ে হেঁটে কক্ষের দ্বারের কাছে এসে উপস্থিত হন। যেন শয়ন কক্ষ থেকে প্রবেশদ্বার অবধি দৌড়ে এসে উপস্থিত হয়েছেন। দ্বারে টোকা দিতে ওপাশ থেকে প্রহরী দ্বার খুলে দেয়। তৎক্ষণাৎ কক্ষ ত্যাগ করে বাহিরে অবস্থান নেন তারা। দেরি না করে তখনই প্রবেশদ্বার পুনরায় বন্ধ করে দেয় প্রহরী। ধীরে ধীরে শান্ত হয় রাজকুমারী ডায়ানা। তার শান্ত হওয়ার পাশাপাশি কক্ষের পরিবেশও স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ফিরে আসে।
ধীর পায়ে হেঁটে রাজকুমারী ডায়ানা যুবরাজ রন ইওহার্ডের পাশে বিছানায় বসে যায়। যুবরাজের চেহারার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে পরখ করতে লাগল সে। মনে হচ্ছে তার, ঘুমিয়ে আছে একটি নাদুসনুদুস বাচ্চা যুবক! তার এই বাচ্চা যুবক উপাধি দেওয়ারও যথেষ্ট কারণ আছে। দেহে যুবক ভাব প্রস্ফুটিত। তবে চেহারার দিকটাতে এখন যুবক ভাবের ছিটেফোঁটাও নেই বললেই চলে। দেহের গড়ন যুবকের মতো হলেও ঘুমন্ত চেহারা পুরো বাচ্চাদের মতো। যুবরাজ রন ইওহার্ডের চেহারা পরখ করতে করতে রাজকুমারী ডায়ানা যেন একটি ঘোরে আবদ্ধ হয়ে গেছে। নিষ্পলক চোখে মায়াভরা দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে সে। কী কাজে এসেছে তা ভুলে যুবরাজ রন ইওহার্ডকে মুগ্ধ হয়ে দেখায় মগ্ন। একপর্যায় যুবরাজ রন ইওহার্ড সামান্য আড়মোড়া দিতে ঘোর ভেঙে ভাবনায় ছেঁদ পড়ল রাজকুমারী ডায়ানার।
‘ লোককে আমি আমার ইন্দ্রজালে ফাঁসাই। আর এই যুবরাজ দেখছি তার মোহতেই আমাকে পাগল করে দিচ্ছে!’ কথাগুলো মনে মনে নিজের মনকে নিজেই বলল রাজকুমারী ডায়ানা। পুনরায় মনে মনে নিজেকে নিজে বলতে লাগল,
‘ নিজেকে সংযত কর ডায়ানা। এগুলো কী করতেছ তুমি?’ নিজে নিজে আওড়াতে লাগল। পুনরায় ভাবনাতে ছেঁদ পড়ে যুবরাজ রন ইওহার্ডের প্রশ্নসূচক উক্তিতে।’ কী হয়েছে? বিড়বিড় করে কী বলছ? আর এভাবে তাকিয়েই-বা কী দেখছ? ‘
একটু আগেই চোখ মেলে তাকিয়েছে যুবরাজ রন ইওহার্ড। ঘুম ভাঙে রাজকুমারী ডায়ানাকে তার পাশে বিছানায় বসে থাকতে দেখে হতভম্ব হয়ে যায়। কিন্তু সবচেয়ে হতবাক হয় রাজকুমারীকে বিড়বিড় করে প্রলাপ আওড়াতে দেহে! রাজকুমারী ডায়ানা যুবরাজ রন ইওহার্ডের প্রশ্ন শুনে তাৎক্ষণিক সময়ের জন্য কুষ্ঠাবোধ করতে লাগল। লজ্জায় রাজকুমারী ডায়ানার দুই গাল গোলাপি হয়ে আসছে। মনে মনে নিজেকে নিজে বলছে, ‘কী যে কর ডায়ানা! এখন এই লজ্জাকর পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পাবে কী করে?’ চোখ দুটো বুজে মনে মনে আওড়াতে লাগল। রাজকুমারী ডায়ানার গোলাপি হয়ে যাওয়া গালগুলো দেখে পরিস্থিতি বুঝতে সক্ষম হয় যুবরাজ রন ইওহার্ড। পরিস্থিতি সামাল দিতে উক্তি অতিক্রম করে নতুন প্রশ্নে জানতে চাইল, ‘ কখন এসেছ?’ হাসিমাখা চেহারা নিয়ে প্রশ্নটি করল।
প্রত্যুত্তরে ঝটপট বলল রাজকুমারী ডায়ানা, ‘ কিছুক্ষণ আগেই। ‘
ভ্রু জোড়া কুঁচকে পুনরায় জিজ্ঞাসাসূচক বাক্য ছুঁড়ে দেয় রাজকুমারী ডায়ানার দিকে। ‘ তা হঠাৎ করে এত সকাল সকাল আমার কক্ষে আসার বিশেষ কারণ?’ তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিয়ে প্রশ্ন করে সে।
‘ আপনার কাছে এই সময়টাও সকাল সকাল মনে হচ্ছে?
সকাল গড়িয়ে দুপুর হবার রাস্তায়। আর আপনি বলছেন এখনো সকাল! ‘ ঠাট্টাসূচক হাসি দিয়ে প্রশ্নের জবাব দিল রাজকুমারী ডায়ানা। পুনরায় বলতে লাগল ‘ মহারাজ আপনার খোঁজ নিতে পাঠিয়েছেন। আপনি এখনো মাঠে গেছেন কি না! অবশ্য এমনিতে আমারও আপনাকে দেখতে আসার ইচ্ছে ছিল। তাইতো দৌড়ে এসেছি। ’ প্রথম কথাগুলো যতটাই শব্দ নিয়ে জবাব দিয়েছিল রাজকুমারী ডায়ানা। ঠিক তদ্রূপ শেষের বাক্য দুটোতে আওয়াজ ক্ষীণ করেই সম্পন্ন করেছে।
‘ আসলে রাতে…! ‘ কিছু একটা বলতে গিয়েও থেমে যায় যুবরাজ রন ইওহার্ড।
‘ আসলে রাতে কী?’ তাৎক্ষণিক সময়ে জিজ্ঞাসাসূচক বাক্য বিনিময় করে রাজকুমারী ডায়ানা।
‘ না তেমন কিছু না। কয়টা বাজে? সময় হয়ে যাচ্ছে তো।’ জবাব দিয়ে কথা ঘুরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে যুবরাজ রন ইওহার্ড।
‘ নিজের বলা উক্তি ঘুরাবার চেষ্টা করবেন না। রাতে কী হয়েছে তা আগে বলুন! আর আপনাকে এরকম ক্লান্ত দেখাচ্ছে কেন? ‘ প্রথম কথাটি রাগযুক্ত কণ্ঠে বললেও পরের বাক্য দুটি পরপর জিজ্ঞাসা সূচক বাক্য প্রদান করে রাজকুমারী ডায়ানা।
‘ আসলে আমি এরকম পাতা খেয়ে অভ্যস্ত নই। যার ফলে রাতের বেলা পেটে একটু বদহজম হয়েছিল। ‘ বলতে না চাইলেও মুখ ফসকে দুটো শব্দ বেরিয়ে যাবার ফলে সম্পূর্ণটা বলতে হলো তার। লজ্জায় ইতোমধ্যেই কান দুটো কেমন লাল হয়ে আসছে। তাকে মেয়েদের মতো লজ্জা পেতে দেখে হেসে দেয় রাজকুমারী ডায়ানা।
হাসতে হাসতে রাজকুমারী ডায়ানা বলল,
‘ আচ্ছা আপনি তবে শুয়ে শুয়ে আরাম করুন। আমি দেহরক্ষী প্রধান লুইসকে মানা করে দিচ্ছি, আপনি অসুস্থ তাই আজ প্রশিক্ষণ নিতে মাঠে যাচ্ছেন না। ‘ বিছানায় বসা অবস্থা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে যায় রাজকুমারী ডায়ানা। ধীর পায়ে হেঁটে যুবরাজ রন ইওহার্ডের সামনে থেকে প্রস্থান করে প্রবেশদ্বারের দিকে যেতে নেয়।
শয়ন থেকে দ্রুত বসে বলতে লাগল যুবরাজ রন ইওহার্ড,
‘ ডায়ানা, প্রয়োজন নেই। আমি এখন সম্পূর্ণ সুস্থ। আমি প্রশিক্ষণে যেতে পারব। কোনো সমস্যা হবে না। ‘ একদমে পুরো কথাটি শেষ করল রন ইওহার্ড।
যুবরাজ রন ইওহার্ডের মুখ থেকে নিজের নাম শোনা মাত্রই উক্ত স্থানে থমকে দাঁড়ায় রাজকুমারী ডায়ানা। কিছুটা দৌড়ে এসে উপস্থিত হয় তার কাছে। তাক লাগা নজরে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সে। কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না তার। যুবরাজ রন ইওহার্ড তার নাম ধরে তাকে সম্বোধন করেছে! হ্যাঁসূচক সম্মতি দিয়ে মাথা নাড়ায়। এমতাবস্থায় কক্ষের প্রবেশদ্বার খুলে ভেতরে প্রবেশ করে একজন দাসী। হাতে রয়েছে একটি বড় থালা। ধীর পায়ে হেঁটে তাদের সামনে উপস্থিত হয়। যুবরাজ রন ইওহার্ডের সামনে এসে কুর্নিশ করে বলতে লাগল,
‘ অভিবাদন যুবরাজ। আপনার জন্য খাবার নিয়ে এসেছি।’ মাথা নিচ দিক করেই কথাগুলো বলল সে।
‘ মেজের উপর খাবারগুলো রেখে তুমি যাও। ‘ গম্ভীর কণ্ঠস্বর তুলে কথাটি বলল রাজকুমারী ডায়ানা। দাসীটি দ্বিতীয় আর কোনোরকম কথা না বলে যুবরাজ রন ইওহার্ডকে কুর্নিশ করে দ্রুত পায়ে হেঁটে কক্ষের প্রবেশদ্বারের কাছে উপস্থিত হয়। প্রবেশদ্বারে টোকা দিতেই ওপাশ থেকে প্রহরী দ্বার খুলে দেয়। দ্রুত পায়ে হেঁটে কক্ষ ত্যাগ করে দাসী।
মেজের উপর রাখা পাত্রে থাকা খাবারগুলো রন ইওহার্ডের সামনে উন্মুক্ত করল ডায়ানা। খাবার দেখে লাফ দিয়ে উঠে বসে যায় যুবরাজ রন ইওহার্ড। তা দেখে একটি হাসি দিয়ে বলতে লাগে রাজকুমারী ডায়ানা,
‘ আপনার এগুলো খেতে হবে না। পাশের পাত্রে আপেল রাখা আছে। আপেল খেতে তো আর কোনো সমস্যা নেউ। এবার নিন মুখ প্রক্ষালন করে আসুন। আমি আপনার পোশাক এনে দিচ্ছি। একটু অপেক্ষা করুন। ‘ এই বলে কক্ষের পাঁচিলের কাছে গিয়ে দাঁড়ায় রাজকুমারী ডায়ানা। পাঁচিল লাগোয়া কয়েকটি পোশাক ঝুলিয়ে রাখা আছে। তন্মধ্যে একটি পোশাক হাতে তুলে নেয় সে। যুবরাজ রন ইওহার্ড বিছানা ত্যাগ করে সাজঘরে অবস্থান নিয়েছে। রাজকুমারী ডায়ানা হাতে করে পোশাকটি এনে বিছানায় বিছিয়ে রেখে দেয়।
চল্লিশ.
বাটন ফোনের ডায়েল প্যাডে একটি নাম্বার তুলে কল বাটনে চাপ প্রয়োগ করেন অজ্ঞাত লোক। দুবার রিং হতেই ওপাশ থেকে গম্ভীর কণ্ঠস্বর শোনা গেল। ‘ হ্যাঁ বল।’ কণ্ঠে লেগে গম্ভীরতার তীব্র ছাপ।
‘ স্যার, আপনি আজ সকাল দশটায় কল দিতে বলেছিলেন টাকা পাঠাবেন বলে।’ উৎসুক হয়ে এপাশে থাকা অজ্ঞাত লোকটি ওপাশে থাকা লোকটির উদ্দেশ্য বললেন।
‘ কিছুক্ষণ অপেক্ষা কর। আমি ফোনকল করব। ‘ পুনরায় গম্ভীর কণ্ঠস্বরে শোনা গেল ওপাশে থাকা লোকটির উক্তি।
‘ জি স্যার। ‘ সম্মতি প্রদান করেন অজ্ঞাত লোকটি।
খানিক সময় বাদেই অজ্ঞাত লোকটির ফোনকল এলো। দ্রুত কল রিসিভ বাটনে চাপ প্রয়োগ করেন তিনি।
‘ স্যার, বলুন।’ অজ্ঞাতি লোকটি ওপাশে থাকা লোকটির উদ্দেশ্য করে বলল।
‘ তোর একাউন্ট থেকে টাকা উঠিয়ে নিস। আর যা থেকে যা হয়ে যাক, কিন্তু আমার নাম নিবি না। নয়তো তোর পরিবার খাল্লাস। ‘ হো হো করে হাসতে হাসতে লোকটি বলে উঠল।
এপাশে থাকা অজ্ঞাত লোকটিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই কল কেটে দিলেন ওপাশের লোকটি। এপাশ থেকে অজ্ঞাত লোকটির পুনরায় ফোন করার সাহস নেই। এতে ওপাশের লোকটি রেগে যেতে পারে। আর ওপাশের লোক যদি রেগে যায়, তবে পরিনাম ভয়াবহ হতে পারে। আর আর দ্বিতীয় কল দেওয়ার মতো সাহস দেখায়নি সে।
[– চলবে –]
• সুরক্ষা কবচের এরকমভাবে সৃষ্টি করার কোনো কারণ আছে কি?
• রাজকুমারী ডায়ানার সন্দেহ কি আসলেও সত্য? নাকি ফিকে ছিল?
• রাজকুমারী ডায়ানার সন্দেহ যদি সত্য তবে কার নির্দেশে এসেছেন তারা?
• অজ্ঞাত লোকটি কে? যে প্রথম দুটো লোককে মেরে দিয়ে অপরজনের পরিবার খতম করে দেওয়ার হুমকি দেয়?
• তাছাড়া লোকটি কেন বলল যা হয়ে যাক তার নাম না নিতে? কী হয়ে যাবে তবে?