গল্প:- সি অফ মারমেইড লেখনীতেঃ- যাবেদ খাঁন আবু বকর দ্বাদশ পর্ব

0
120

গল্প:- সি অফ মারমেইড
লেখনীতেঃ- যাবেদ খাঁন আবু বকর
দ্বাদশ পর্ব

একচল্লিশ.
সাজঘর থেকে হাত মুখ ধৌত করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে বের হলো যুবরাজ রন ইওহার্ড। বিছানার উপরে রাখা পোশাকটি হাতে তুলে নেয় রাজকুমারী ডায়ানা। বাড়িয়ে দেয় যুবরাজের দিকে। এগিয়ে এসে তার হাত থেকে পোশাকটি নিজের হাতে নিয়ে নেয় যুবরাজ। পরিহিত পোশাকের উপর দিয়েই হাতে থাকা পোশাকটি পরিধান করে নেয়। পোশাকটা খানিক জ্যাকেটের মতো। গায়ে চাপাতেই পোশাকের পরিবর্তন ঘটতে লাগল। জ্যাকেটটির ভেতরে গরম অথবা ঠান্ডার কোনো অনুভূতি অনুভব হচ্ছে না। তাছাড়া পোশাকটির দুই কাঁধের দিক থেকে একটা বড় কাপড়ের অংশ পা পর্যন্ত গিয়ে ঠেকেছে। কাপড়টি রঙ কালো। তবুও যুবরাজ রন ইওহার্ডের দেহের সাথে খাপ খেয়েছে বলা যায়। পোশাকটি পরিধানের সময় পেছন দিকের কাঁধ থেকে বেরিয়ে যাওয়া লেজের মতো আলখাল্লার অংশটুকু ছিল না! আকস্মিকভাবে কোথা থেকে পেছন দিকে লেজের মতো কাপড়ের অংশটুকু বেরিয়ে এলো তা নিয়ে খানিক সময় সংকোচে কাটিয়ে দিল সে। কিন্তু তার সংকোচিত ভাবনা ছিদ্র করে দিয়ে বলতে লাগল রাজকুমারী ডায়ানা,
‘ বাহ্! আপনাকে দেখতে তো দারুণ লাগছে! পুরো রাজা ভাব এসেছে। এখন কেবল শুধু মাথার মুকুট পরিধান করা বাকি। তবেই আপনাকে সম্পূর্ণ পরিপূর্ণ লাগবে!’ রাজকুমারী ডায়ানার মুখে নিজের রূপের প্রশংসা পেয়ে লজ্জায় মাথা নিচু করে রইল যুবরাজ রন ইওহার্ড। তাকে দেখতে কোনো অংশেই একজন রাজার চেয়ে কম মনে হচ্ছে না। নিচে পরনে আছে প্যান্ট। প্যান্টের উপর দিকটায় রয়েছে এই ভিন্ন জাতীয় জ্যাকেট। যেন রাজ পোশাকের অনুরূপ। দুই কাঁধ থেকে পা পর্যন্ত আলখাল্লার ধরণের একটুকরো কাপড়ের অংশ নেমে গেছে। যা রাজাদের পোশাকের সাথে দেখা যায়।

যুবরাজ রন ইওহার্ডকে লজ্জা পেতে দেখে খানিকটা উচ্চস্বরে হেসে দিল রাজকুমারী ডায়ানা। রাজকুমারী ডায়ানার হাসি দেখে মুগ্ধ হয়ে তার মুখপানে তাকিয়ে রইল যুবরাজ রন ইওহার্ড। যুবরাজ একদৃষ্টি নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে তা খেয়াল করতেই নিশ্চুপ হয়ে যায় রাজকুমারী ডায়ানা। কিছু সময়ের জন্য নীরাবতার আচ্ছাদনে আচ্ছাদিত হয়ে গেল সম্পূর্ণ কক্ষ। নীরাবতাকে বিদায় জানিয়ে যুবরাজ রন ইওহার্ডের উদ্দেশ্য বাক্য রাখল রাজকুমারী,
‘ যুবরাজ, আপনার দ্রুত তৈরি হয়ে তাদের সাথে যাওয়া উচিত! অনেকটা সময় যাবত প্রবেশদ্বারের বাহিরে অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন দেহরক্ষী লুইস এবং তার সঙ্গি। এবার কিছু খেয়ে রওনা দিন।’ ব্যগ্র দিয়ে কথাটি বলল সে। কথার মাঝে লেগে আছে দায়িত্ববোধ অথবা কর্তব্য। যেমনটা একজন স্বামীর প্রতি একজন স্ত্রীর দেখা যায়।
‘ আর শোনেন, যে যা করতে বলবে তাই করবেন না। এছাড়া একটু সাবধানে থাকবেন। চারদিকে দৃষ্টি রাখবেন। বিশেষ করে কারো উপর বিশ্বাস স্থাপন করবেন না।’ চিন্তিত ভাবনা চিত্তে আদেশ জ্ঞাপক অনুশাসন বাক্য ব্যবহার করে যুবরাজের উদ্দেশ্যে কথাগুলো বলল রাজকুমারী ডায়ানা।
তার এরকমভাবে অনুশাসন দেখে হতভম্ব হয়ে যায় যুবরাজ।
‘ কেন? কোনো সমস্যা হয়েছে কি?’ উদ্বিগ্ন হয়ে প্রশ্ন করল যুবরাজ। রাজকুমারীর এরকম কঠিন ভাষা বুঝার মতো সক্ষমতা এখনো সৃষ্টি হয়নি তার।
‘ কিছু হয়নি। তবে ঘটে যেতে বেশি সময়ের প্রয়োজন হবে না। যেটা বলেছি সেটা করবেন। দ্বিতীয় কোনো প্রশ্ন করবেন না একদম!’ প্রথমে খানিক উদাসীন হয়ে বলতে আরম্ভ করলেও শেষে এসে সর্বোচ্চ কঠিন স্বর ব্যবহার করে বলল রাজকুমারী ডায়ানা। যেন যুবরাজের দ্বিতীয় প্রশ্ন করায় তার রাগ উপচে পড়ছে।
যুবরাজ নিজেও ভয় পেয়ে যায় রাজকুমারীর এরকম ব্যবহারে। তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে বলতে লাগে,
‘ আচ্ছা চারদিকে খেয়াল রাখব। ‘ কথার সাথে মাথা নেড়েও সম্মতি প্রদান করে।
রাজকুমারী আর কোনো কথা না বলে মেজের দিয়ে যায়। থালার মাঝে অবস্থিত পাত্রগুলোর মধ্য থেকে আপেল রাখা পাত্রটি হাতে তুলে নেয়। পা বাড়ায় যুবরাজেরপানে।যুবরাজের সামনে দাঁড়িয়ে বাম হাতে ধরে রাখা পাত্রের দিকে ইশারায় আপেল নেওয়ার আদেশ করে। কিন্তু আদেশ বাচ্য না বুঝতে পারায় হতভম্বের ন্যায় চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। খানিক রাগ নিয়ে ধমকের সূরে বলতে লাগে রাজকুমারী ডায়ানা,
‘ কী হলো? এখনো নিচ্ছেন না কেন? ‘ রাগী ভাব চেহারায় আবহমান রেখে প্রশ্ন রাখল। যুবরাজ রন ইওহার্ড তার কার্যকলাপে লজ্জা পেয়ে দ্রুত পাত্র থেকে একটি আপেল হাতে তুলে নেয়। অবিলম্বেই হাতে থাকা আপেলে কামড় বসিয়ে খেতে থাকে। রাজকুমারী ডায়ানা হাতে রাখা আপেলের পাত্রটি বিছানায় রেখে একটি ছোঁ মেরে যুবরাজের হাত থেকে কামড় দেওয়া আপেলটুকু নিজ হাতে তুলে নেয়। ঘটনার আকস্মিকতায় চমকে যায় যুবরাজ রন ইওহার্ড। এখনো বুঝে উঠতে পারেনি কী ঘটেছে! রাজকুমারী সেদিকে ধ্যান না দিয়ে নিজের মতো খাওয়া আপেলে কামড় বসিয়ে খেতে লাগে। যুবরাজ রন ইওহার্ড তার এরকম আচরণে সম্পূর্ণ হতভম্ব হয়ে গেছে। তাকে হা হয়ে তাকিয়ে থাকতে খানিকটা রাগী ভাব নিয়ে আবার বলতে লাগে রাজকুমারী ডায়ানা,
‘ এভাবে তাকিয়ে থাকার কী হলো? আপনার খাওয়া আপেলটুকুই তো নিয়েছি তাই না! এমনভাবে তাকিয়ে আছেন,যেন আমি আপনাকেই খেয়ে ফেলতেছি! পাত্রে আরও আপেল আছে। সেগুলো নিয়ে খান। আর আমার খাবারে একদম নজর দেবেন না বলে দিচ্ছি।’ প্রথমে রাগী ভাবে কথা বলতে থাকলেও শেষ বাক্যটি উপস্থাপনের সময় বাচ্চাদের মতো চেহারা এবং কণ্ঠ বানিয়ে বলল। আর কিছু বলেনি যুবরাজ রন ইওহার্ড। শেষ কথা শুনে সে নিজেও হেসে দিয়েছে। তবু হাসি চেপে রেখে পাত্র থেকে একটি আপেল হাতে তুলে নিয়ে খেতে লাগে। দ্রুত খেয়ে আরেকটি আপেল হাতে নিয়ে প্রবেশদ্বারের দিকে এগিয়ে যেতে লাগে যুবরাজ রন ইওহার্ড। প্রবেশদ্বারের সামনে উপস্থিত হয়ে দ্বারে দুবার টোকা দিতেই ওপাশ থেকে প্রহরীদের মাঝে একজন প্রবেশদ্বারের পাল্লা খুলে দেয়। সামনে পা বাড়াতে নিয়েও পেছন ফিরে তাকায়। অবলোকন করে দেখতে পায়, রাজকুমারী ডায়ানা যুবরাজ রন ইওহার্ডের খাওয়া আপেলের অবশিষ্ট অংশটুকু উপভোগ করে খাচ্ছে। এ যেন আপেল নয়, যেন অমৃত পান করছে। একটি হাসি দিয়ে দ্রুত পায়ে কক্ষের বাহিরে অবস্থান নেহ যায় যুবরাজ রন ইওহার্ড। তার অবস্থান কক্ষ থেকে বাহিরে হতেই দ্বার টেনে প্রবেশদ্বার বন্ধ করে দেয় প্রহরী।

যুবরাজ রন ইওহার্ডকে কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসতে দেখামাত্রই প্রবেশদ্বারের কাছে উপস্থিত প্রধান দেহরক্ষী লুইস এবং তার সহচারী দ্রুত তার কাছে এসে উপস্থিত হন। কুর্নিশ করে যুবরাজ রন ইওহার্ডের উদ্দেশ্য করে জ্ঞাপন করেন,
‘ অভিবাদন যুবরাজ। আমি লুইস। দেহরক্ষীদের প্রধান। আপনার দেহের রক্ষার্থে আমাকে মোতায়েন করা হয়েছে। ‘ মাথা নিচু করেই কথাগুলো বললেন।
দেহরক্ষীর প্রধান লুইসের কথা শুনে প্রত্যুত্তরে বলল যুবরাজ রন ইওহার্ড,
‘ আচ্ছা, আমাকে আজ নাকি প্রশিক্ষণে নিয়ে যাওয়া হবে। তবে দেরি না করে অবিলম্বেই আমাকে সেখানে নিয়ে চলুন। ‘ তাড়া দেখিয়ে বলল সে। যেন তার কাছে এগুলো ফিকে মনে হচ্ছে। বিরক্তি ভাব থেকে ব্যগ্রতা দিয়ে বলে।
‘ জি যুবরাজ। আমাদের সাথে আসুন। আপনাকে সেখানে নিয়ে যাবার অপেক্ষাতেই এতক্ষণ এখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম। ‘ একটি হাসিযুক্ত মুখ নিয়ে কথাটি সম্পূর্ণ করল দেহরক্ষীর প্রধান লুইস।

দেহরক্ষী প্রধান লুইস পরবর্তী আর কোনো কথা না বাড়িয়ে তার সহচারীকে নিয়ে হাঁটতে লাগলেন সামনের দিকে। তাদের দুজনের পেছন পেছন হেঁটে আসছে যুবরাজ রন ইওহার্ড। তবে যুবরাজ রন ইওহার্ডের পেছন পেছন আসছে চারজন সৈন্য। তার সুরক্ষার জন্য রাজা অরগাড নিজে চারজন সৈন্য মোতায়েন করেছেন। বিপদের কথা বলা যায় না! দেহরক্ষী প্রধান লুইস এবং তার সহচারীকে অনুসরণ করে চলছে যুবরাজ রন ইওহার্ড। কিছু সময় প্রাসাদের বারান্দা দিয়ে হাঁটতেই রাজপ্রাসাদ থেকে বাহিরে বেরিয়ে আসে তারা। হাঁটার গতি সমানতালে রেখে চলতে থাকে সবাই। বেশ সময় হাঁটতে সামনে আসে কারাগার। যেখানে বন্ধি করে রাখা আছে রাজা অক্টাইসের প্রধান সেনাপতি করডাল। কারাগার অতিক্রম করতে দৃষ্টির গোচর হয় দূরে গোলাকার পাঁচিলে আবদ্ধ কিছু দেখা যাচ্ছে। সম্পূর্ণ বুঝা না গেলেও অস্পষ্টতার মাঝেও সামান্য বুঝা যায় এটি একটি আবদ্ধকরণ করা মাঠ। পাঁচিলে আবদ্ধ করা মাঠের দিকেই দেহরক্ষী প্রধান লুইস এবং তার সহচারী হেঁটে যাচ্ছেন। পূর্বের মতো এখনো তাদের অনুসরণ করে পিছুপিছু চলছে যুবরাজ রন ইওহার্ড। কোনো কিছুই ভাবছে না সে। কী থেকে কী হচ্ছে? আর আগামীতে কী হবে? তা নিয়ে বিন্দু পরিমাণ ভাবনায় মগ্ন নয়। এখন তার কেবল ইচ্ছে জেগেছে যুদ্ধ প্রশিক্ষণ নেয়ার। আর কোনো কিছুতে নজর দেয়া বা ভাবা তার কাছে অসম্ভব বিষয়। একবার তার যে ইচ্ছা জাগে তা পূর্ণ না হওয়া অবধি চেষ্টা চালিয়ে যেতেই থাকে। এটাই তার প্রথম গুণ। এককথায় তাকে অদম্য মনোবলের ব্যক্তি বলা সম্ভব।
পাঁচিলের কাছে এসে উপস্থিত হয় সবাই। চারদিকে পাঁচিল দিয়ে গোল করে স্তম্ভ করে রাখা হয়েছে। তাদের উপস্থিত হওয়া স্থান থেকে সামনেই একটি প্রবেশদ্বার দেখা যাচ্ছে। যা পাঁচিলের মাঝে অবস্থিত। পাঁচিলের মাঝে তৈরি প্রবেশদ্বার বুঝতে সক্ষম হবার কয়েকটি কারণ রয়েছে। সমগ্র পাঁচিলের রঙ সাদা এবং হলুদ রঙ মিশ্রিত একটি কালারের হলেও প্রবেশদ্বারের রঙটা গাড়ো খয়েরী। প্রবেশদ্বারের পাল্লাগুলোতে রয়েছে অদ্ভুত রকমের কারু খচিত চিত্রকর্ম। দ্বারটা কাঠের না লোহার তা সন্দেহে যুক্ত! তবে কারু খচিত চিত্রকর্মের মাঝে হীরামুক্তা ব্যবহার করা হয়েছে। যার দরুন বাহ্যিক সৌন্দর্যতা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। কারু খচিত চিত্রকর্মগুলো সবগুলো যুদ্ধ প্রসঙ্গে আঁকা। যুদ্ধের বিভিন্ন প্রেক্ষাপট তুলে ধরবে এমনভাবে খোদাই করা হয়েছে। তাছাড়া আরও একটি জটিল বিষয় হলো, চিত্রগুলোর অধিকাংশ মৎস্য মানবদের নিয়। তন্মধ্যে কিছু ভিন্ন জাতীয় প্রাণীর উপস্থিতি রয়েছে। যাদের সাথে যুদ্ধ করতে দেখা গেছে মৎস্য মানবদের। উক্ত বিষয়টা ফুটিয়ে তুলতেই চিত্রকর্ম খোদাই করা।

দ্বারের কাছেই দাঁড়িয়ে আছে কয়েকজন প্রহরী। সেদিকে এগিয়ে যায় উপস্থিত সবাই। প্রবেশদ্বারে দাঁড়িয়ে থাকা প্রহরীগুলো যুবরাজ রন ইওহার্ডকে দেখে তীক্ষ্ম দৃষ্টি নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকে। যেন বিষয়টা তাদের নজরে স্বাভাবিক দৃষ্টিতে নেয়নি। কিন্তু তাদের এরকম আচরণে নজর কাড়ে যুবরাজ রন ইওহার্ডের। তারদিকে এরকম দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকার কোনো কারণ খুঁজে পায় না সে। প্রহরীদের উদ্দেশ্য করে গম্ভীর কণ্ঠে বলতে লাগলেন দেহরক্ষীর প্রধান লুইস,
‘ প্রবেশদ্বার খুলো। ‘ কণ্ঠে চাপা রাগ লেগে আছে।
‘ জি! ইনিই সেই মানব সন্তান যে মারমেইড শহরের আগামী প্রশাসক! ‘ খানিক তাচ্ছিল্যের ছোঁয়া কথার মাঝে রেখে বলল একজন প্রহরী। এখন আর রন ইওহার্ডের বুঝতে বাকি নেই, কেন তার দিকে তখন এমন দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়েছিল! তবু তাদের কথাবার্তায় ধ্যান না দিল না যুবরাজ। সম্মতি জানিয়ে বললেন দেহরক্ষী প্রধান লুইস।
‘ হ্যাঁ! ‘ তার কথায় তাচ্ছিল্যের ছোঁয়া না থাকলেও রাগের ছোঁয়া অতিমাত্রায়। কিন্তু তার রাগের কারণটা অজ্ঞাত সবাই! প্রহরীগুলো আর কোনো কথা না বলে দ্বার খুলে দেয়। তাদের সামনে আর সময় অপচয় করে না দেহরক্ষীদের প্রধান লুইস এবং তার সহচারী। তাদের পিছুপিছু আগের মতো এবারও প্রবেশদ্বার দিয়ে কক্ষের ভেতরে প্রবেশ করে। তার পিছু প্রবেশ করে তার সুরক্ষার কাজে নিয়োজিত সৈন্যরা। প্রবেশদ্বার দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে বাকি সবাই হতভম্ব না হলেও এর থেকে রেহাই পায়নি যুবরাজ রন ইওহার্ড। ভেতরটা পাঁচিল দিয়ে তৈরি করা গোল চত্ত্বরে আবদ্ধ একটি কক্ষ। চারদিকে আলোর সুব্যবস্থা আছে। যে আলোতে আলোকিত সম্পূর্ণ পাঁচিলে আবদ্ধ গোল কক্ষ। তাছাড়া সমগ্র মারমেইড শহরে সুরক্ষা কবচের প্রভাবে পানির উপস্থিতি না দেখা গেলেও এই সম্পূর্ণ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি পানিতে টইটম্বুর। যেন কক্ষটা পানি নিয়েই সৃষ্ট। আচমকাই যুবরাজ রন ইওহার্ডের মাথায় একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে থাকে,
‘ যদি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভেতরটা পুরোপুরি পানি দিয়ে টইটম্বুর থাকে, তবে প্রবেশদ্বার খোলার সাথে সাথে বাহিরে পানিগুলো আছড়ে পড়ার কথা। কিন্তু তা হয়নি। পানিগুলো যেন জেলির মতো। কিন্তু জেলির মতো আঠালো নয়!’ নিজ মনে মনে আওড়াতে লাগল যুবরাজ রন ডের। তার প্রশ্নটি বেশ যুক্তিসঙ্গত! পানিগুলো জমাট বেঁধে আছে দেখা গেলেও এমনটা নয়। পানিগুলো স্বাভাবিকভাবে দিব্যি ঢেউ খেলে চলেছে।

পানির ছোঁয়া লাগতেই সবার দেহের পরিবর্তন ঘটতে লাগল। একেকজন দেহের স্বাভাবিক অবস্থা থেকে মৎস্য মানবে পরিনত হয়েছে। কিন্তু রন ইওহার্ডের দেহের এখনো তেমন কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। এমনকি সকলের মতো পানির মাঝেও তার শ্বাসকার্য চালাতে বিন্দু পরিমাণ কষ্ট হচ্ছে না। ভাবনার বশে কখন যে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উপদেষ্টা নিওরিয়ানের সামনে এসে উপস্থিত হয়েছে সেদিকে হুশ নেই যুবরাজ রন ইওহার্ডের। যুবরাজকে দেখে অন্য সবার থেকে ভিন্নভাবে মাথা না ঝুঁকিয়ে কথার মাধ্যমে অভিবাদন জানান তিনি।
‘ অভিবাদন যুবরাজ, তোমার অপেক্ষাতেই ছিলাম এতক্ষণ। তোমার ব্যাপারে গতকালই আমাকে জানিয়েছেন মহারাজ অরগাড। কিন্তু এতটা দেরি হবে বলে ভাবিনি। আর প্রথম দিনেই এতটা বিলম্ব!’ যুবরাজ রন ইওহার্ডের উদ্দেশ্য করে বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
‘ বস্তুত, রাতের দিকে একটু শরীর খারাপ করে। যার হেতু সকালে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে যাওয়া। ‘ ভারী অবসন্ন স্বরে বাক্যটি শেষ করল যুবরাজ রন ইওহার্ড।
‘ আচ্ছা, আপাতত রাখো সেসব বার্তা। এবার চলো প্রশিক্ষণে মন দেয়া যাক। ‘ তাগিদ বাড়িয়ে দিয়ে বললেন যুদ্ধ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উপদেষ্টা নিওরিয়ান।

বেয়াল্লিশ.
একটি মৃদু অন্ধকারচ্ছন্ন কক্ষের চেয়ারে বসে আছেন ব্রুস উইলিস। কক্ষে থাকা আলোক একেবারে নিভে যাওয়া নয়, আবার একেবারে তীব্র আলো নয়। কক্ষের মধ্যবর্তী স্থানে একটি বাল্ব লাগানো আছে। তার থেকে মিটমিটে আলো ছড়াচ্ছে। যা সম্পূর্ণ কক্ষকে মৃদু আলোতে আলোকিত করে তুলছে। তিনি কক্ষের এক কর্ণারে একটি চেয়ারে বসে চোখ দুটি বন্ধ করে দোল খাচ্ছেন। চোখ দুটি বন্ধ করে মনে মনে কোনো বিষয় নিয়ে অত্যাধিক ভাবনায় নিমগ্ন। যার হেতু পরিবেশ এবং পরিস্থিতির কোনটাই তার অনুভব হচ্ছে না। তার ঘোর লাগা ভাবনার অবসাদ ঘটানো বড় কঠিন কাজ। ভাবনার কারণ, ইতোমধ্যে তার কয়েকশো কোটি টাকা বিনষ্ট হয়ে গেছে। তাছাড়া এক্সপেরিমেন্টের একদম শেষ ধাপে ছিল। কিন্তু তীরে এসে তরী ডোবানোর মতো হয়েছে ঘটনাটা। কয়েক বছরের সাধনা মুহূর্তেই ধ্বংস হয়ে গেল।তিনি যে এক্সপেরিমেন্ট করতে নেমেছেন, আসলেই কি তিনি সফলভাবে এক্সপেরিমেন্টটি সম্পূর্ণ সমাপ্তি ঘটাতে সক্ষম হবেন? নাকি মধ্য পথেই সবকিছু গুটিয়ে বন্ধ করে দিতে হবে!
এ নিয়ে বড় ভাবনার অন্তরালের শহরে আটকে আছেন তিনি। এমতাবস্থায় প্রবেশদ্বারে কড়া নাড়ার শব্দ শোনা যায়। ভাবনার ঘোর থেকে তাকে বহিষ্কার করে দেয় মন। হুশ ফিরে পেয়ে চেয়ারে বসে থেকেই চোখ দুটি খুলে ফেললেন ব্রুস উইলিস। লাল বর্ণ ধারণ করেছে চোখ দুটো। বাকযন্ত্রে চাপ প্রয়োগ করে কণ্ঠস্বর খানিকটা বাড়িয়ে দিয়ে জোর গলায় বললেন, ‘ হ্যাঁ, ভেতরে এসো।’ তবে কথার আড়ালে কঠিন গম্ভীর ভাব।
অনুমতি পেয়ে দরজার পাল্লা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করেন ক্যাপ্টেন বার্গ। মৃদু আলোতে সম্পূর্ণ রুম আলোকিত হয়ে থাকার ফলে তার হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে না। সুনিপুণভাবে মৃদু মৃদু কদম ফেলে ব্রুস উইলিয়াসের নিকট এগিয়ে আসেন। ব্রুস উইলিয়াসের সামনে থাকা চেয়ারটিতে বসে যান তিনি। তার দিকে একবার নজর বুলিয়ে ব্রুস উইলিয়াস পুনরায় চোখ বন্ধ করে চেয়ারে দুলতে থাকেন। পুরো কক্ষ জুরে নীরাবতার রাজত্ব। কোথায়ও কোনো শব্দ শোনা যাচ্ছে না। পিনপতন নীরবতা বলা যায়। খানিকটা বিরক্ত বোধ করছেন ক্যাপ্টেন বার্গ। তবু কিছু বলে উঠতে সক্ষম হচ্ছেন না। বেশ কিছু সময় এভাবে পার হতে বিরক্তি তার সর্বোচ্চ চূড়ায় অবস্থান করেছে। এবার আর চুপ করে থাকতে পারলেন না তিনি। নীরাবতার রাজত্বে হামলা ঠুকে মুখ ফুটে কেবল বেরিয়ে এলো ‘ স্যা…!’ বাকিটা বলার পূর্বেই তাকে উক্ত স্থানে ব্রেক কষে থামিয়ে দেন ব্রুস উইলিয়াস। অতঃপর বলতে আরম্ভ করলেন,
‘ বিরক্ত হচ্ছো বুঝি?’ কণ্ঠে চরম গম্ভীর ভাব ফুটিয়ে প্রশ্নটা করেন তিনি।
‘ না মানে আসলে তেমন না! অনেকক্ষণ যাবত কিছু বলছেন না তাই একটু চিন্তিত হচ্ছিলাম। ‘ প্রত্যুত্তর খুব সুন্দর করে উপস্থাপন করলেন ক্যাপ্টেন বার্গ।
কিন্তু তার এ উপস্থাপনায় ভাটা দিয়ে বললেন ব্রুস উইলিয়াস,
‘ আপনার কী মনে হয়? ‘ প্রশ্নের সমাপ্তি না ঘটিত অবস্থায় প্রশ্নটি করলেন তিনি। যার উত্তর কী হবে? অথবা সম্পূর্ণ প্রশ্নটাই-বাকী হবে? তা সম্পূর্ণ ধোঁয়াসা!
অকস্মাৎ হয়ে চিন্তিত কণ্ঠে বললেন ক্যাপ্টেন বার্গ, ‘ আমার কী মনে হয় বলতে? আপনার কথাটি বুঝে উঠতে পারলাম না স্যার! ‘ আহত কণ্ঠে জবাব দিলেন।
‘ বুঝতে সক্ষম না হলে সেটা তোমার ব্যর্থতা! আমার নয়। তাছাড়া তুমি আমাকে বাকিটুকু বলার পূর্বেই বিঘ্নিত করে দিয়েছ। ‘ খানিকটা কঠিন গলায় বক্তব্যটি শেষ করলেন তিনি। যেন তার কৃত কার্যের জন্য বেশ বিরক্ত!
‘ দুঃখিত স্যার!’ কণ্ঠস্বর নিচু করে ক্ষমা চাইলেন ক্যাপ্টেন বার্গ।
‘ তোমার কী মনে হয়? জাহাজ দুটো হারিয়ে যাবার কারণ কী ছিল?’ পুনরায় কৌতূহলী হয়ে জানতে চাইলেন ব্রুস উইলিয়াস।
‘ হারিয়ে যাবার কোনো কারণের ব্যাখ্যা এখনো খুঁজে পেতে সক্ষম হইনি! গত কয়েকদিন যাবত রিসার্চ করে যা বুঝলাম, জাহাজ দুটো হঠাৎ করেই উধাও হয়ে গেছিল। রেডিয়েশনে শেষ অবস্থানে বহুবার খোঁজ চালিয়েছি। এবং তার আশেপাশেও বিস্তৃত স্থান নিয়ে খুঁজে দেখেছি। কিন্তু ফল এসে দাঁড়িয়েছে শূন্য। একটা ক্লু পর্যন্ত পেতে সক্ষম হইনি। তাছাড়া সমুদ্রের পানি যথেষ্ট স্তব্ধ। এমতাবস্থায় যদি পানির তলদেশে তলিয়েও যায়, তবুও তলানির নিকটবর্তী অবস্থানে থাকার কথা। অথচ আমরা ইতোমধ্যেই রেডিয়েশনে দেখা শেষ স্থানের চারপাশে প্রায় ১৫ কিলোমিটার বিস্তৃত স্থান নিয়ে খুঁজেছি! কিন্তু বরাবরই ফলাফল শূন্য এসে দাঁড়িয়েছে। ‘ একদমে সম্পূর্ণ কথাগুলো বলে সমাপ্ত করলেন ক্যাপ্টেন বার্গ। তবে কথার মাঝে কোথাও ধীরতা আবার কোথাও হতাশা লেগেছিল!
‘ তবে আর কী করা! ‘ হতাশায় নিমজ্জিত কণ্ঠে উক্তিটি উপস্থাপন করলেন ব্রুস উইলিয়াস। ক্যাপ্টেন বার্গকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে পুনরায় বলতে আরম্ভ করেন, ‘ আমি আগামীকাল প্রাইভেট জেটে করে ফিরে যাব। তবে তোমরা তোমাদের কাজ চালু রাখবে। ১৫ দিন পর আবার আসব। আর এই কথাগুলো বলার জন্যই তোমাকে ডেকেছিলাম।’ দুই দমে কথা বলার সমাপ্তি ঘটান তিনি। উদ্বীগ্ন হয়ে ক্যাপ্টেন বার্গ কিছু চাইলেন। কিন্তু কিছু প্রকাশ পাবার আগেই তাকে থামিয়ে দিয়ে বলেন তিনি, ‘ এখন আসতে পারো। আর আমাকে একটু একা থাকতে দাও। ‘
প্রত্যুত্তরে আর কিছুই বলেননি ক্যাপ্টেন বার্গ। তার মতকেই সম্মতি জানিয়ে ঝটপট কক্ষ থেকে বেরিয়ে গেলেন। রুম থেকে তিনি অবস্থান নিতেই আপনাআপনিভাবে রুমের দরজা বন্ধ হয়ে যায়।

[– চলবে –]

• প্রহরীর এমন তাচ্ছিল্য রূপি আচরণের কারণ কী?
• দেহরক্ষীদের প্রধান লুইস কেন প্রহরীকে তখন ধমক দিলেন না? তবে কি তিনি আসলেই যুবরাজ রন ইওহার্ডকে রাজা হিসেবে মেনে নিতে পারেননি?
• ক্যাপ্টেন বার্গ কি পারবে জাহাজ দুটোর খোঁজ পেতে?
• ব্রুস উইলিয়াস কি তার এক্সপেরিমেন্টে পুনরায় সফল হতে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here