সি অফ মারমেইড লেখনীতে:- যাবেদ খাঁন আবু বকর ত্রয়োদশ পর্ব

0
112

গল্প:- সি অফ মারমেইড
লেখনীতে:- যাবেদ খাঁন আবু বকর
ত্রয়োদশ পর্ব

তেতাল্লিশ.
বিশাল একটি কক্ষের মাঝে সিংহাসনের মতো একটি আসন রাখা। তাতে আট বাহু ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আছেন রাজা অক্টাইস। তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে এক রক্ষী অক্টোপাস। খানিকটা ক্রোধ ভরা কণ্ঠে বলে উঠলেন তিনি,
‘ সেনাপতি লিওজ এখনো এলো না কেন? তুমি কি ওকে যেয়ে বলোনি মহারাজ ডেকেছেন?’ কণ্ঠে লেগে আছে এক রাশ রাগ। যে রাগে একটি শহর ভস্ম করে দিতে সক্ষম।
প্রত্যুত্তর স্বরূপ রক্ষী অক্টোপাসটি বলতে লাগল,
‘ জি মহারাজ। আমি তো তাকে গিয়েই বলেছি, আপনি দ্রুত তাকে তলব করেছে। উত্তরে তিনি আমাকে জানিয়েছেন, আসছি। এরপর আর আমি সেখানে আর অপেক্ষা না করে চলে এসেছি। ‘ মাথা নিচু সাথে কণ্ঠস্বর ক্ষীণ করে করে জবাব দিল রক্ষীটি।
‘ তো এখনো আসছে না কেন? কী যেয়ে বলেছ যে এখনো আসছে না। যাও আবার যাও। এবার সাথে করে নিয়ে আসবে। নয়তো তোমার শাস্তি আছে। ‘ ক্রোধ ভরা স্বর নিয়ে বক্তব্য শেষ করলেন রাজা অক্টাইস। উদ্বিগ্ন হয়ে বসে আছেন তিনি। যেন সেনাপতি লিওজের উপস্থিতি দেরি হওয়াটা মেনে নিতে পারছেন না।
প্রত্যুত্তর স্বরূপ ঝটপট বলল রক্ষী অক্টোপাসটি,
‘ জি মহারাজ। আমি এক্ষুণি যাচ্ছি। ‘ এই বলে দ্রুত গতিতে দৌড়ে অক্টোপাস রাজা অক্টাইসের সামনে থেকে প্রবেশদ্বারের সামনে উপস্থিত হয়। অক্টোপাস রক্ষীটি তার এক বাহু দিয়ে প্রবেশদ্বারে কড়া নাড়তে যাবে এমতাবস্থায় প্রবেশদ্বারের পাল্লা খুলে যায়। দ্বারের ওপাশেই দাঁড়িয়ে আছেন সেনাপতি লিওজ। তাকে দেখামাত্রই যেন দেহে প্রাণ এলো রক্ষী অক্টোপাসটির। রাজা অক্টাইসের শাস্তির মানে হচ্ছে মৃত্যুদণ্ড!

অক্টোপাস রাজা অক্টাইসের রাজ্যের সকল কিছু ভিন্ন রকম। মারমেইড শহরের বিপরীত বলা যায়। রাজা অক্টাইস তার শাসনকৃত রাজ্যের নাম তার নামের সাথে মিল করে রেখেছন অক্টাস! রাজ্যে বিশাল কয়েকট তলা নিয়ে অবস্থিত একটি বিস্তর রাজপ্রাসাদ। সমগ্র প্রাসাদই পানির তলদেশে অবস্থিত। এবং সকল স্থানে পানিতে টইটম্বুর হলেও তাদের বিন্দু পরিমাণ সমস্যা হয় না।রাজপ্রাসাদের দ্বিতীয় তলাটা সম্পূর্ণ মিলিয়ে একটা কক্ষ। যেখানে অবস্থান রাজা অক্টাইসের। সেনাপতি লিওজ প্রবেশদ্বার দিয়ে ধীর পায়ে হেঁটে রাজ কক্ষের ভেতরে প্রবেশ করেন। তাকে ভেতরে আসতে দেখে দ্রুত বেগে এক কর্ণারে চেপে গেল কক্ষ উপস্থিত রক্ষীটি। কক্ষের ভেতরে সেনাপতি লিওজ অবস্থান করতে খানিকটা দৌড়ে কক্ষ থেকে প্রস্থান করে সে। রক্ষী অক্টোপাসটির এভাবে প্রস্থান দেখে পেছন ফিরে তাকায় সেনাপতি লিওজ। একটি হাসি দিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে সামনের দিকে চলতে লাগলেন তিনি। দ্বারের কাছে উপস্থিত অক্টোপাস দুটো তাদের দুই বাহু দিয়ে দ্রুত প্রবেশদ্বারের পাল্লা দুটো টেনে কক্ষ বদ্ধ করে দেয়। প্রবেশদ্বার বন্ধ করতেই সেদিকে নজর দেন রাজা অক্টাইস। কক্ষের ভেতরে সেনাপতি লিওজকে দেখতেই হাসিমাখা চেহারা নিয়ে তারদিকে তাকালেন। যেন মুহূর্তেই তার চেহারার পরিবর্তন করার ক্ষমতা রাখেন। তবে সেনাপতি লিওজের এত দ্রুত উপস্থিতি তাকে খানিকটা চমকে দিয়েছে। তবে চমকের চেয়ে অধিক খুশি হয়েছেন! এমনিতেও তিনি যেটা চান, সেটা সেই মুহূর্তে না পেলে রেগে যান। একটু আগে রক্ষী অক্টোপাসটিকে পাঠিয়েছিলেন, সেনাপতিকে দ্রুত তার সামনে উপস্থিত হবার জন্য। কিন্তু তার সঙ্গে না নিয়ে আসার কারণে খানিকটা ভয় এবং ধমক খেতে হলো রক্ষীটির।

ভাবনার বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে গেছিলেন রাজা অক্টাইস। তবে সেই ভাবনার জালের বেড়া ছিদ্র করে দেন সেনাপতি লিওজ। কুর্নিশ করে বলতে লাগলেন ‘ অভিবাদন মহারাজ। এত জরুরি তলবের কারণ? তাছাড়া আপনাকে কোনো কিছু নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত মনে হচ্ছে! কী হয়েছে আমাকে খুলে বলুন!’ অভয় সূচক স্বর ধরে বললেন সেনাপতি করডাল। যেন তাকে বিশ্বাস করে সব বলা যাবে।
‘ তুমি আমাকে দেখামাত্রই আমার সমস্যা বুঝে যাও। এটা তোমার একটা জাদু বলা যায়! ‘ একটি মুচকি হাসি উপহার দিয়ে জবাব দিলেন রাজা অক্টাইস। সেনাপতি লিওজের এরকম আচরণে বেশ খুশি হয়েছেন তিনি।
‘ হয়তো! তবে আপনাকে অন্য কেউ না বুঝলেও আমি বুঝতে পারি, আপনি কী ভাবছেন অথবা আপনার গম্ভীর ভাব দেখেলেই বুঝতে পারি আপনার কিছু একটা হয়েছে। ‘ মাথাটা নিচ দিক রেখে সম্মাননা জানিয়ে প্রত্যুত্তর করলেন সেনাপতি করডাল। নিজের প্রশংসা খানিকটা নিজেই করে নিলেন। তবে রাজা অক্টাইসের মুখে নিজের প্রশংসা শুনে তার বুকে বল বেশ খানিকটা বেড়ে গেছে!
‘ হ্যাঁ, তাই তো দেখছি। ‘ সম্মতি দিলেন রাজা অক্টাইস। সাথে একটি হাসি উপহার হিসেবে দিলেন।
‘ জি বলুন মহারাজ। আমাকে হঠাৎ কী কারণে এত জরুরি তলব করা? আর কী নিয়ে চিন্তায় আছেন!’ প্রসঙ্গ পালটে প্রশ্ন তুলে দিলেন সেনাপতি করডাল। প্রশংসার চেয়ে অধিক জরুরি তাদের রাজার সমস্যা দূর করা। তবেই রাজা অক্টাইসের মন রক্ষা করা সম্ভব।

খানিকটা সময় থেমে নিজেকে পুরোপুরিভাবে ঠান্ডা রেখে প্রত্যুত্তর করলেন রাজা অক্টাইস। তবু কক্ষের ভাব আগের থেকে পরিবর্তন হয়েছে।
‘ তুমি তো জানোই, গত কয়েকদিন আগে তিমি রাজ মারমেইড শহরের দিকে গিয়েছিল। আবার সেদিনই ফিরে এসেছে সেখান থেকে! এই বিষয়টি নিয়ে আমি কিছুটা চিন্তিত। কী এমন কাজে তিমি রাজ এবং তার সেনাপতি ও সৈন্য নিয়ে সেখানে উপস্থিত হন? আবার সেদিনেই কেন ফিরে এলো? আর যাবারই-বা কারণ কী ছিল! আর তুমি তো জানোই, আমাদের সেনাপতি করডাল তিন বছরের অধিক সময় যাবত ওদের কারাগারে বন্ধি। আমাদের অন্যতম একটি শক্তি বলা যায় তাকে। তাছাড়া রাজ্যের নতুন খবর কী তা নিয়েও চিন্তিত!’ এক দমে আধো ভাঙা গলার কথার সমাপ্তি ঘটালেন তিনি। তবে তার কথার ভারে অধিক চিন্তিত মনে হচ্ছে।
‘ আপনাকে এ নিয়ে তেমন কোনো চিন্তা করতে হবে না। মারমেইড শহরে তিমি রাজ যে কারণেই যাক! আমার মনে হয় না তিমি রাজ আমাদের মাঝে ঘটিত যুদ্ধে এসে যোগ দেবে। কেননা এতে করে সমুদ্রের মাঝে প্রলয় দেখা দিতে পারে। যা তিমি রাজ কখনোই চাইবে না।’ গভীর ভাবনা চিত্ত কণ্ঠে মন্তব্য উপস্থাপন করতে সক্ষম হন সেনাপতি করডাল। সাথে যুক্তিসঙ্গত জবাবও দিয়েছেন তিনি।
‘ তা ঠিক বলেছ! আমি অবশ্য এই দিকটা ভেবে দেখিনি। ‘ আহত কণ্ঠে জ্ঞাপন করলেন রাজা অক্টাইস। তার কণ্ঠে এখন আর চিন্তিত জড়ের ছোঁয়া নেই।
‘ তাছাড়া মহারাজ আমাদের সেনাপতি খুব শীঘ্রই মুক্তি পাবে বলে আশা করা যাচ্ছে। বর্তমানে তাদের আর আমাদের যুদ্ধ শক্তি সমানসমান বলা যায়। তবে সেনাপতি মুক্তি পেতেই তাদের চেয়ে আমাদের শক্তি তাদের দ্বিগুণ হয়ে যাবে। আমাদের শক্তির তুলনায় তাদের শক্তির অনেক ঘাটতি হবে। তখন তাদের সাথে যুদ্ধ করলে খুব সহজেই যুদ্ধে জয়ী হওয়া সম্ভব। ‘ একটি রহস্যময় হাসি দিয়ে বক্তব্যটি উপস্থাপন করেন সেনাপতি করডাল। তাছাড়া সুন্দর একটি যুক্তি উপস্থাপন করেছেন।
‘ তা যা বলেছো। আচ্ছা তুমি তাহলে আসো। এবার আমি একটু স্বস্তির নিশ্বাস নিই। ‘ দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে কথাটি সমাপ্ত করলেন রাজা অক্টাইস। এতক্ষণ পর তার মনে হচ্ছে, ‘তিনি এখন চিন্তামুক্ত! ‘
প্রত্যুত্তরে মাথাটা কুর্নিশ করে তার সামনে থেকে প্রস্থান করলেন সেনাপতি লিওজ। কক্ষের প্রবেশদ্বারে এসে দ্বারে ডানা দিয়ে টোকা দিতে ওপাশ থেকে দ্বারের পাল্লা খুলে দেয় প্রহরী অক্টোপাসগুলো। দ্রুত পানি সাঁতার কেটে কক্ষ ত্যাগ করলেন তিনি।

চুয়াল্লিশ.
পানির মাঝে এত সময় থাকার পরেও একটু সময়ের জন্য শ্বাস নিতে কষ্ট হয়নি যুবরাজ রন ইওহার্দের। কিছুক্ষণ পূর্বেও নিজেকে মৎস্য মানব কি না এ নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব বোধ করছিল! আর এখন তার আচরণ দেখলে কেউ বুঝবে না একটু আগে তার দ্বিধাদ্বন্দ্বগুলো। এত সময় যাবত পানির ভেতরেও শ্বাসকার্য চালানো দেখে এবং পূর্বে তার সাথে ঘটমান ঘটনাগুলোর অনুধাবন করে বিশ্বাস করে নিয়েছে আসলেও সে একজন মৎস্য মানব। তাকে দেখতে মৎস্য মানবদের মতো না হলেও তার দেহের শিরা-উপশিরায় মৎস্য মানবের রক্তই প্রবাহিত হচ্ছে। মৎস্য মানব ব্যতীত সাধারণ মানুষদের মাঝে কেউ পানির নিচে এত সময় যাবত শ্বাস না নিয়ে বেঁচে থাকবে অথবা থাকতে পারা অসম্ভব। কভু কারো পক্ষে সম্ভব হবার নয়। যেহেতু রন ইওহার্ড কোনো সমস্যা ব্যতীত নিজে নিজেই স্বাভাবিকভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারছে। তাছাড়া তার স্বপ্নে এবং পূর্বে ঘটিত ঘটনাগুলোর জন্য নিঃসন্দেহে নিজেকে একজন মৎস্য মানবদের জনগোষ্ঠীর একজন দাবি করতে সক্ষম।

“ যেহেতু আমি কোনো বাধা-বিপত্তি ছাড়া খুব সহজে স্বাভাবিকভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস কার্য চালাতে সক্ষম, সেহেতু নিঃসন্দেহে আমার পিতা একজন মৎস মানব ছিলেন বলা যায়। যার দরুন আমি এই সামান্য শক্তিটুকু পেয়েছি। তাছাড়া সাধারণ কোনো মানবের পক্ষে এটি করা সম্ভব নয়।” নিজ মনের সাথে নিজেই আলাপনে ব্যস্ত ছিল রন ইওহার্ড। এমতাবস্থায় তার ভাবনায় হুল ফুটিয়ে ছিদ্র করেন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উপদেষ্টা নিওরিয়ান।
‘ তোমার প্রথম কাজ হচ্ছে, পানিকে নিজের শক্তিতে রূপান্তরিত করা। যেন তুমি নিজ দেহের যে কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দিয়ে পানিকে নিয়ন্ত্রিত করতে সক্ষম হও। একজন মৎস্য মানবের মূল শক্তি হচ্ছে পানি নিয়ন্ত্রণ। তাছাড়াও যুদ্ধের প্রথম কৌশল হচ্ছে পানি। তুমি শত্রুপক্ষের সাথে যুদ্ধ মোকাবেলা এবং খুব সহজেই আঘাত হানতে পারবে পানি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে। ‘ এক নাগাড়ে সবগুলো কথা উপস্থাপন করলেন তিনি। সকল বিষয়ের মৌলিক জ্ঞানগুলো অনুধাবন করা সকলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সে সূত্র অনুসারে তাকে প্রশিক্ষণের মৌলিক বিষয়াদি অবগত করছেন। যুবরাজ রন ইওহার্ড গভীর মনোভাব রবি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিয়ে উপদেষ্টা নিওরিয়ানের কথাগুলো শ্রবণ এবং অনুধাবন করছিল।
উপদেষ্টা নিওরিয়ান তার উপস্থাপন শেষ করতেই কক্ষে নীরবতা নেমে এসেছে। ইতোমধ্যেই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে প্রস্থান করেছেন দেহরক্ষী প্রধান লুইস এবং তার সহচারীর সাথে রাজা অরগাডের মোতায়েন করা সৈন্যগুলো। কিছু সময় বাদে কণ্ঠস্বর স্বাভাবিক করে যুবরাজ রন ইওহার্ডের উদ্দেশ্যে বললেন উপদেষ্টা নিওরিয়ান, ‘দেখো..!’

যুবরাজ রন ইওহার্ডকে তার হাতের দিকে চোখের ইশারায় লক্ষ্য করতে বললেন। উপদেষ্টা নিওরিয়ান তার একটি হাত সামনের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে হাতটা সামন্য একটু ঘূর্ণন দিতেই তার হাতের চারপাশে বেশ খানিকটা জায়গা জুড়ে পানির ঘূর্ণন সৃষ্টি হয়। যেন হাতের সামনে থাকা পানিগুলো জমাট বেঁধে ঘূর্ণনের জন্য প্রস্তুত। যুবরাজ রন ইওহার্ডের দিকে লক্ষ্য করে বললেন, ‘ যুবরাজ, তোমাকে প্রথম যা করতে হবে তা হলো, পানিকে তোমার বশে আনতে হবে। তোমার ডাক শুনেই যেন পানি সর্বদা প্রস্তুত থাকে এরকম একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে হবে। তাছাড়া প্রধান কাজ হচ্ছে, তোমার লক্ষ্যবস্তু স্থীর করতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত লক্ষ্যবস্তুতে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারবে, ততক্ষণ পানি তোমার আসবে না। সকল কাজের জন্য প্রয়োজন তার কেন্দ্রবিন্দুতে নিজের অস্তিত্ব রাখা। যেমনটা পানির ক্ষেত্রে। যে কোনো মূল্যেই হোক পানিকে তোমার বশে আনতে হবে। এটাই হবে তোমার লক্ষ্য।’ যুবরাজ রন ইওহার্ডকে মনোবল বৃদ্ধি করতে সকল প্রকার দৃঢ় বিশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন। সাথে কঠোর গলায় উপস্থাপন করছেন কর্মগুলো। কথাগুলো বলে পুনরায় থেমে গেলেন। হয়রান না হলেও সামান্য ক্লান্ত। তবে যুবরাজ রন ইওহার্ডের ধ্যানে বিন্দু পরিমাণ আঘাত করতে পারেনি। যতটা মনোযোগী হয়ে প্রথমে কথাগুলো শুনছিল, এখন আরও বেশি মনোযোগ দিয়ে কথাগুলো বুঝার চেষ্টা করছে।

কিছু সময় থেমে পুনরায় বলতে লাগেন উপদেষ্টা নিওরিয়ান, ‘ যুবরাজ, আমি একবার দেখিয়ে দেবো। তুমি সেটাকেই অনুসরণ করবে। ‘ কণ্ঠস্বরে গম্ভীর ভাব করে কথাটি বললেন তিনি। তবে লেগে আছে এক রাশ তৃপ্ততা।
উপদেষ্টা এবং যুবরাজ রন ইওহার্ড দুজন প্রথমে পানির তলদেশে শক্ত করে দাঁড়ালেন। উপদেষ্টা নিওরিয়ান তার দুহাত সামনে নিয়ে আসেন। তার দেখাদেখি যুবরাজ রন ইওহার্ডও তার হাত দুটো সামনে তুলে নেয়। উপদেষ্টা নিওরিয়ান তার হাত সামনে করতেই সামনে থাকা পানিগুলো তার হাতের কাছে জমাটবদ্ধ করার প্রচেষ্টা চালান। উপদেষ্টা নিওরিয়ান হাত সামনে নিয়ে পানিকে জমাটবদ্ধ করার চেষ্টা করতেই জমাটবদ্ধ হয়ে যায়। জমাটবদ্ধ পানিগুলো বরফের চেয়েও শক্ত হয়ে গেছে। কিন্তু তার দেখাদেখি যুবরাজ রন ইওহার্ডের প্রচেষ্টায় কোনো ফলপ্রসূ হয় না। তার হাতের কাছে থাকা পানিগুলো যেমন অবস্থাতে ছিল ঠিক তেমন অবস্থাতেই রয়ে গেছে।
‘ যুবরাজ, হার মানা চলবে না। প্রথমে এমন হবে এটাই স্বাভাবিক। অদম্য মনোবল নিয়ে লেগে থাকতে হবে। লক্ষ্য তোমার একটাই হবে, যেকোনো মূল্যেই পানিকে তোমার বশে আনতে সক্ষম হতে হবে। চেষ্টা করতে থাকো। একসময় সফল কাম হবেই। একটা কাজে যত বেশি চেষ্টা করবে তত বেশি সফল হবার সম্ভাবনা থাকে। তাছাড়া প্রতিবার চেষ্টার মাধ্যমে কাজটির চর্চা হয়ে যাচ্ছে। সহজেই যদি সফল হয়ে যাও, তবে তোমার সফলতায় ভঙ্গুর হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর সহজে সফল হতে চাওয়াটা এক লাফ দিয়ে পাহাড়ের চূড়ায় উঠে যাওয়ার মতো। চূড়ায় যদি এভাবে একবারেই উঠে যাও, তবে নিজের টাল সামলে রাখতে সক্ষম হবে না। সেহেতু চূড়া থেকে সোজা মাটিতে পতিত হবে। এত উচ্চতা থেকে পড়ে গেলে বাঁচার সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ হবে। আর যদিও বেঁচে যাও তবে চলেফিরে খাবার মতো অবস্থা থাকবে না। তাই এত তাড়াতাড়ি হার মানা চলবে না। চেষ্টা করতে হবে, প্রচুর চেষ্টা করতে হবে! ‘ একসাথে সমস্ত বক্তব্য উপস্থাপন করলেন উপদেষ্টা নিওরিয়ান। প্রেরণাদায়কদের মতো প্রতিটি কথা যুক্তির সাথে তুলে ধরলেন। যা যুবরাজ রন ইওহার্ডের বুঝতে খুব সহজ হবে। অবশ্য এই কথাগুলো তাকে বলার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। উপদেষ্টা নিওরিয়ানের হাত ঘোরাতে পানি নিয়ন্ত্রণ করতে দেখে সেও করতে লাগে। কিন্তু পানি তার বশে আনতে সক্ষম হয় না। যার হেতু তখন তার মুখের ভঙ্গিমা কিছুটা ব্যর্থ মানুষদের মতো ছিল। তার এরকম চেহারা দেখেই এই কথাগুলো বলেছেন উপদেষ্টা নিওরিয়ান। বিজ্ঞদের মতো কথাগুলো প্রেরণা হিসেবে ব্যবহার করতে চাইল যুবরাজ।

সকাল থেকে শুরু করে একের পর এক প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে লাগল যুবরাজ রন ইওহার্ড। কিন্তু ভাগ্য তার সাথে সহায় দিচ্ছিল না। সকাল গড়িয়ে দুপুর। চেষ্টার ব্যতীত আর কোনোদিকেই ধ্যান রাখেনি সে। কেবল পানিকে তার বশে আনতে হবে এটাই মূল লক্ষ্য হিসেবে ধ্যান দিয়েছে। খাবারের কথাও ইতোমধ্যেই ভুলে গেছে। ভুলে গেছে বলা ভুল হবে। ইচ্ছে করেই ভুলিয়ে রেখেছে। উপদেষ্টা নিওরিয়ান যুবরাজ রন ইওহার্ডের প্রচেষ্টা এবং অদম্য মনোবল দেখে হতভম্ব হয়ে গেছেন। তিনি যা আশা করেছিলেন তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি মনোবল দেখতে পেয়েছেন। যা এ পর্যন্ত তার কাছে থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়া শিক্ষার্থীদের কারও মাঝে এতটা মনোবল দেখেনি। যতটা তিনি যুবরাজ রন ইওহার্ডের মাঝে দেখতে পেয়েছেন। তাকে নিয়ে খানিক গর্ববোধ কর‍তে হচ্ছে তার।

দুপুর গড়িয়ে বিকাল। এখন পর্যন্ত মুখে কিছু নেয়নি যুবরাজ রন ইওহার্ড। উপদেষ্টা নিওরিয়ান তাকে খাবারের জন্য ডাকলে সাফ জানিয়ে দেয়, ‘ যতক্ষণ অবধি আমি পানিকে নিজের শক্তিতে রূপান্তরিত করতে না পারছি, ততক্ষণ অবধি কোনো কিছু আহার করব না। ‘ তার মনোবল দেখে আর কিছু বলেননি তিনি। যুবরাজকে তার মতো চেষ্টায় মত্ত থাকতে দিয়েছেন।
কিছুক্ষণ পূর্বেই প্রশিক্ষণ প্রান্তরে উপস্থিত হয়েছেন সেনাপতি রিবিয়ান। যুবরাজ রন ইওহার্ডের অদম্য অনুশীলন দেখে হাসতে হাসতে তার সামনে এসে উপস্থিত হন তিনি। তার সাথে সেখানে উপস্থিত হয়েছে কিছু সৈন্য। যারা তার রক্ষী হিসেবে নিয়োজিত। তারাও সেনাপতি রিবিয়ানের সাথে তাল মিলিয়ে উপহাস করতে শুরু করে দেয়। যুবরাজ রন সেদিকে ধ্যান না দিয়ে তার মতো সে অনুশীলন করতে থাকে। কিছুক্ষণ পূর্বেই রাজা অরগাডের সাথে বিশেষ আলোচনার জন্য বেরিয়েছেন উপদেষ্টা নিওরিয়ান। যার হেতু প্রশিক্ষণ প্রান্তের একা হয়ে পড়েছে যুবরাজ রন ইওহার্ড। তবু চারদিকে কোনো ধ্যান না দিয়ে নিজের মতো নিজে অনুশীলন করছে। কিন্তু তার অনুশীলন যেন কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না সেনাপতি।

আচমকাই সেনাপতি রিবিয়ান যুবরাজ রন ইওহার্ডের উপর অতর্কিত আক্রমণ করে বসেন। পানিতে নিজের শক্তি ব্যয় করে দ্রুত বেগে এসে তার মুখ বরাবর আঘাত করেন। আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে তার অনুশীলন স্থান থেকে ছিটকে গিয়ে দূরে পড়ে যান রন ইওহার্ড। আর তা দেখে উপস্থিত সৈন্য এবং সেনাপতি রিবিয়ান হাসতে থাকে। আসন্ন আচমকা এরকম আক্রমণের জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না রন ইওহার্ড। আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে অপ্রস্তুত হয়ে যান। কোনোমতে প্রশিক্ষণ প্রান্তরের তল থেকে উঠে দাঁড়ায়। কিন্ত সে উঠে দাঁড়াতেই পুনরায় তার উপর মাছের মতো বিশালাকৃতির লেজ দিয়ে আঘাত হানে সেনাপতি রিবিয়ান। পুনরায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে যুবরাজ। এভাবেই চলে কিছুক্ষণ। পরপর কয়েকবার আঘাতে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে পানির তলদেশে মাটিতে শুয়ে যান। চেষ্টা করেও আর উঠে দাঁড়াতে পারছে না। তা দেখে সেনাপতি রিবিয়ান এবং তার সঙ্গে আসা সৈন্যগুলো ঠাট্টা বিদ্রুপ করতে লাগে। ব্যথিত সমস্ত শরীর নিয়ে বহু কষ্টে কোনোমতে উঠে দাঁড়ায় যুবরাজ রন ইওহার্ড।
এতক্ষণ সেনাপতির সাথে লড়াই করার কোনো ইচ্ছেই ছিল না। তাই পালটা কোনো আক্রমণ করেনি। তাই বারবার আঘাতপ্রাপ্ত হচ্ছিল। তাছাড়া এখনো যে আক্রমণ করার ইচ্ছে আছে এমনটাও নয়। ব্যথিত শরীর নিয়ে বহু কষ্টে পানির তলদেশে শোয়া থেকে উঠে দাঁড়াতেই পুনরায় পানির বুক চিঁড়ে এসে তার বুকে বিশালাকারের লেজ দিয়ে পুনরায় আঘাত হানে সেনাপতি রিবিয়ান। ছিটকে কয়েক মিটার দূরে উড়ে গিয়ে পড়ে। গুরুতর আহত অবস্থায় মাটিতে শুয়ে থাকে কিছু সময়। গুরুতর আহত হওয়ার দরুন তলদেশে শোয়া অবস্থা থেকে উঠে দাঁড়াতে পারছিল না।
‘ আসছে রাজা হতে। নেই গায়ে জোর। আর না আছে বাবা-মায়ের ঠিক। সে হবে নাকি মারমেইড শহরের রাজা।’ ঠাট্টাসূচক অবজ্ঞার সহিত একরাশ রাগ চাপা রেখে কথাটি বললেন সেনাপতি রিবিয়ান।
বাবা-মায়ের ঠিক নেই কথাটি শোনামাত্রই যুবরাজ রন ইওহার্ডের কান দুটো সজাগ হয়ে যায়। চোখমুখ লাল বর্ণ ধারণ করেছে ইতোমধ্যেই। চোয়ালে থাকা শিরাগুলো জেগে উঠেছে। কান দুটোতে ধারণ করেভহে টকটকে লাল বর্ণ। চোখগুলোতে উত্তাল লাভার ফুলকির আভাস দেখা দিচ্ছে।

[– চলবে –]

• সেনাপতি লিওজ কি পারবে সকল কিছু সমাধান দিতে?
• রাজা অরগাডের সাথে কীসের গোপনীয় আলাপে দেখা করতে গেছেন উপদেষ্টা নিওরিয়ান?
• যুবরাজ রন ইওহার্ড কি তবে এখন পালটা আক্রমণ করবে? সে কি সেনাপতির সাথে আক্রমণে পেরে উঠবে? নাকি আক্রমণ করবে না! সেনাপতি রিবিয়ানকে কি ছেড়ে দেবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here