গল্প:- সি অফ মারমেইড লেখনীতে:- যাবেদ খাঁন আবু বকর চতুর্দশ পর্ব

0
130

গল্প:- সি অফ মারমেইড
লেখনীতে:- যাবেদ খাঁন আবু বকর
চতুর্দশ পর্ব

পঁয়তাল্লিশ.
মাটি থেকে উঠে দাঁড়িয়ে যুবরাজ রন ইওহার্ড চোখ দুটি বন্ধ করে নেয়। সবেই মৎস্য রাজা অরগাডের সাথে আলাপন কার্য শেষ করে প্রশিক্ষণ প্রান্তরে ফিরলেন উপদেষ্টা নিওরিয়ান। কিন্তু ফিরতেই নজরে আসে অবাক কাণ্ড। সেনাপতি রিবিয়ানের সঙ্গে যুবরাজ রন ইওহার্ডের সম্মুখ যুদ্ধ। তিনি দেখতে লাগলেন আগামীর জন্য। এক পক্ষ এতক্ষণ মার খেয়েছে। এবার পালটা আক্রমণ করে নাকি পরাজয় মেনে নেয়! কী ঘটে তা দেখার অপেক্ষা। তাই কোনো শব্দ না করে সবার নজর এড়িয়ে প্রান্তের এক কর্ণারের উপরে চলে গেলন। সবাই যুবরাজ রন ইওহার্ড এবং সেনাপতি রিবিয়ানের কার্যকলাপে ব্যস্ত থালার দরুন তার দিকে কেউ নজর দেয়নি। উপরে গিয়ে চুপচাপ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করতে লাগলেন তিনি।

যুবরাজ রন ইওহার্ড চোখ দুটো খুলতেই তার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায় উপদেষ্টা নিওরিয়ান। লক্ষ্য করেন চোখ দুটো অস্বাভাবিক লাল হয়ে আছে। দুই চোখের কোটরে যেন আগুনের ফুলকির উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। লাভার উত্তাল উত্তাপ উপচে পড়ছে প্রায়। সবাইকে অবাক করে দিয়ে রন ইওহার্ড ব্যথিত শরীর নিয়ে ডান হাত উপরে তুলে সেনাপতি রিবিয়ানের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে আঙুলের ইশারায় তার দিকে আসতে বলে। ইশারার অর্থ হিসেবে দাঁড়ায় পুনরায় আক্রমণ করতে আসার নির্দেশ।
তার এরকম কর্মে হকচকিয়ে যান উপস্থিত সেনাপতি সৈন্যরা। সেনাপতি নিজেও হতভম্ব হয়ে গেছেন। প্রান্তের উপর থেকে বিষয়টি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দেখতে লাগলেন উপদেষ্টা নিওরিয়ান। কী হতে যাচ্ছে তা সমন্ধে অবগত না থাকলেও এতটুকু অবগত আছেন, ছোটোখাটো একটি প্রলয় হতে যাচ্ছে। তবে চিন্তাকে পাত্তা না দিয়ে আক্রমণের উদ্দেশ্যে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলেন সেনাপতি রিবিয়ান। এমন সুযোগের অপেক্ষায় কাটিয়েছেন কয়েকটি রাতদিন। পানিকে তার প্রধান অস্ত্র হিসেবে তৈরি করে পানির বুক চিঁড়ে যুবরাজ রন ইওহার্ডের বুক বরাবর আঘাত করার লক্ষ্যে সামনের দিকে এগিয়ে গেলেন। কিন্তু সবাইকে হতবাক করে দিয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে রইল যুবরাজ রন ইওহার্ড। আরও হয়রান করে দেওয়ার মতো কর্ম করে বসল সে। সেনাপতি রিবিয়ানকে তার দিকে এগিয়ে আসা দেখে চোখ দুটি পুনরায় বন্ধ করে নেয়। উপস্থিত সেনাপতির ব্যক্তিগত সৈন্য প্রথমে দেখে বিদ্রূপ স্বরূপ হাসি-ঠাট্টা করলেও এখন যুবরাজের কাজকর্ম সুবিধার ঠেকছে না তাদের কাছে। তার দিকে আক্রমণ করতে যাচ্ছে আর সে চুপচাপ চোখ বুজে সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে। বিষয়টি হজম হচ্ছে না। সেনাপতি রিবিয়ান বিচলিত হলেও আক্রমণ করা থেকে পিছু হটে যাননি। উপদেষ্টা নিওরিয়ান কেবল তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে যুবরাজ রন ইওহার্ডের দিকে। কঠিন দৃষ্টিতে কেবল কর্মকাণ্ড নীরবে দেখে চলেছেন। সে কী করতে চাইছে তা তার বোধগম্য নয়। তবে রন ইওহার্ডের আচরণে এতটুকু বুঝতে পেরেছেন, এখন যাই ঘটবে তা ইতিহাস রচিত হবার মতো ঘটনা হবে!

সেনাপতি রিবিয়ান তার মাছের লেজ আকৃতির পা সামনের দিকে দিয়ে পানিকে পায়ের দ্বারা কয়েকটি তীক্ষ্ণ এবং ধারালো তরোয়ালের মতো সূঁচালো অস্ত্র সৃষ্টি করে যুবরাজ রন ইওহার্ডের বুক লক্ষ্য করে আক্রমণ করেন। সেনাপতির এরকম আক্রমণ দেখে হতভম্ব হয়ে যান উপদেষ্টা নিওরিয়ান। লড়াই থামানোর উদ্দেশ্যে এগিয়ে যেতে নিয়েও থেমে যান। এখনো চোখ বুজে আছে যুবরাজ রন ইওহার্ড। এ দেখে এবার বেশ উচ্চস্বরে হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছে সৈন্যগুলো। সূঁচালো অস্ত্রগুলো যুবরাজ রন ইওহার্ডের বুক থেকে সামান্য দূরত্বে থাকা অবস্থায় চোখ বুজে রাখা অবস্থাতে ডান দিকে সামান্য ঘুরে যায়। ফল নিমিত্তে সেনাপতি রিবিয়ানের অস্ত্রাঘাত আক্রমণ ব্যর্থ হয়ে যায়। যা সেনাপতি রিবিয়ান এবং তার সৈন্যদের হতবাক করে দিয়েছে। বুঝে উঠতে পারছে না কীভাবে বেঁচে গেল। উপর থেকে এই দৃশ্য দেখে উপদেষ্টা নিওরিয়ান হা করে চেয়ে থাকেন। তিনি এখনো বিশ্বাস করতেই পারছেন যুবরাজ রন ইওহার্ডের প্রথম কাজ সম্পন্ন হয়ে গেছে! এবার আর তার চেহারায় আতঙ্কের ছোঁয়া নেই। লেগে আছে তৃপ্তি! সামনে কী হতে যাচ্ছে তার অধিকাংশ নিয়ে অবগত আছেন তিনি।

সবাইকে চমকের উপরে দ্বিতীয় আরেকবার চমকে দিয়ে সেই মুহূর্তে চোখ দুটো খুলে নেয় যুবরাজ রন ইওহার্ড। হাত দুটো মুষ্টিবদ্ধ করে কয়েক ন্যানোসেকেন্ডের মাঝে তার সম্পূর্ণ দেহটি ৩৪০ ডিগ্রি এঙ্গেলে নিয়ে আসে। মুষ্টিবদ্ধ হাতের সামানে পানির জলরাশি এসে জমাট বেঁধেছে। মুষ্টিবদ্ধ ডান হাত দুটি জলরাশিতে জমাট হওয়া অবস্থায় সেনাপতি রিবিয়ানের বুকের মধ্যখানে আঘাত করে। সেনাপতি রিবিয়ান তার বুকে আঘাতপ্রাপ্ত হতেই ছিটকে কয়েক মিটার দূরে উড়ে গিয়ে পড়েন। উপস্থিত সবাই চমকিত হয়ে যায়! সৈন্যগুলো এখনো বুঝে উঠতে পারছে না কী হলো! তবে উপদেষ্টা নিওরিয়ানের দুই ঠোঁটের কোণে একটি রহস্যময় হাসি ফুটে উঠেছে। তিনি জানতেন, এরকম একটা ঘটনার সম্মুখীন হতে যাচ্ছেন। যা চমকিত করে দিতে সক্ষম। সৈন্যগুলো তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে যুবরাজের দিকে তাকিয়ে আছে। বুঝার চেষ্টা করছে কী হয়েছিল! মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মাঝে কী ঘটে গেল তা তাদের সকলের বোধগম্য নয়! সেনাপতির ব্যক্তিগত সৈন্যগুলো বাক হারিয়ে যুবরাজ রন ইওহার্ডকে দেখছে। আর ভাবছে, ‘ এই সেই সাধারণ মানুষ, যাকে ক্ষণিক সময় পূর্বে সেনাপতি নিজ হাতে মেরেছে। কিন্তু তাদেরকে চমকে দিয়ে সেনাপতিকেই আঘাত করে দেয়। ‘ এ যেন অকল্পনীয় এক ভাবনা ছিল। উপদেষ্টা নিওরিয়ান এখনো রহস্যময় হাসি হেসেই যাচ্ছেন। তবে যুবরাজ রন ইওহার্ডের চমকপ্রদ আক্রমণ দেখে আপ্লুত হয়ে গেছেন। একটু আগেও রাজা অরগাডের কাছে বলে এসেছেন, ‘ যুবরাজ রন ইওহার্ড এখনো অনেক দুর্বল। তার এখনো অনেক শেখার বাকি। আয়ত্ত করা বাকি। স্বল্প সময়ে এগুলো শিখতে সক্ষম হবে না মনে হচ্ছে! ‘ এছাড়া আরও কিছু মন্তব্য করে এসেছিলেন তিনি। কিন্তু তার সকল মন্তব্যগুলোকে মিথ্যা প্রমাণ করে দিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করে নিয়ে প্রমাণ করে দিল যুবরাজ রন ইওহার্ড।

যুবরাজ রন ইওহার্ডের দুই হাতের সামনের দিকটায় এখনো জলরাশি জমাট বেঁধে আছে। তার দেহের চারপাশের জলগুলো ধারণ করেছে ভিন্ন রূপ। যেন এগুলো তার প্রতিরক্ষার কাজে ব্যবহার করা ঢাল। এতক্ষণ মাটিতে অনুশীলন করলেও এখন মাটির নিচ থেকে পানির মধ্যস্থতায় অবস্থান করেছে। কোনো জটিলতা ছাড়াই পানির উপর তার দেহ ভেসে থাকতে সক্ষম। এবং যেদিক ইচ্ছে সেদিকে নিতে পারছে। এগুলো দেখে ঘাবড়ে যায় উপস্থিত সেনাপতি রিবিয়ানের একান্ত নিয়োজিত সৈন্যগুলো। উপদেষ্টা নিওরিয়ানও হতভম্ব হতে গেছেন বটে। তিনি ভেবে নিয়েছিলেন স্বাভাবিক শক্তি আয়ত্ত করতে সক্ষম হয়েছে রন ইওহার্ড। কিন্তু তার চিন্তাধারার স্তর ভেঙে দিয়ে নতুনত্ব সৃষ্টি করেছে সে। সে বিশ্বাসই করতে পারছেন না, একদিনের অনুশীলনে একজনের শক্তি এতটা আয়ত্ত কী করে হতে পারে!
যুবরাজ রন ইওহার্ড সেনাপতি রিবিয়ানের সৈন্যদের দিকে বিন্দু পরিমাণ দৃষ্টি না দিয়ে সেনাপতির দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিয়ে তাকায়। আক্রমণে আঘাতপ্রাপ্ত সেনাপতি রিবিয়ান কোনোমতে মাটিতে থেকে শোয়া অবস্থা থেকে দাঁড়ায়। তা দেখে তড়িৎ গতিতে পানির বুক চিঁড়ে ছুটে গিয়ে হাতের ডগায় সৃষ্ট জলরাশিসহ তার বুকের উপর আঘাত হানে যুবরাজ রন ইওহার্ড। কিছু বুঝে ওঠার আগেই আক্রমণে ভড়কে যান সেনাপতি রিবিয়ান। আক্রমণে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে পুনরায় ছিটকে কয়েক মিটার দূরে গিয়ে পড়েন। তবে এবার আর শুয়ে থাকননি তিনি। মাটিতে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে পড়তেই আক্রমণের লক্ষ্যে দ্রুত উঠে দাঁড়ান। তেড়ে যান যুবরাজ রন ইওহার্ডকে আঘাত করা উদ্দেশ্যে। সৈন্যগুলো কী থেকে কী হচ্ছে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। উপদেষ্টা নিওরিয়ান নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে মজা নিচ্ছেন। সেনাপতি রিবিয়ানের আক্রমণের লক্ষ্যে তেড়ে আসা দেখে বিন্দু পরিমাণ প্রতিক্রিয়া দেখাল না যুবরাজ রন ইওহার্ড। কেবল ডান হাতটি সেনাপতি রিজওনালের দিকে লক্ষ্য করে একটু ঝাঁকুনি দেয়। জলরাশি লম্বাটে আকার ধারণ করে তেড়ে আসা সেনাপতি রিজওনালের উপর আঘাত হানে। পানির গুচ্ছের ধাক্কায় পুনরায় ছিটকে পানির নিচে মাটিতে পড়ে যান। উপস্থিত সৈন্যগুলোর চোখগুলো যেন তাদের কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম। উপদেষ্টা নিওরিয়ান নিজেও পানির গুচ্ছ দিয়ে আক্রমণ দেখে নিজেও হতভম্ব হয়ে গেছেন। অন্তত এটা তার কাছে প্রত্যাশা ছিল না। একজনের পক্ষে একদিনে এতকিছু আয়ত্ত করা সম্ভব না।
সৈন্যগুলো এই ভেবে ভেবে হয়রান, ‘ যেই সেনাপতি রিবিয়া এত চৌকস! যাকে রণক্ষেত্রে শত্রুপক্ষের আঘাত করা দূরের বিষয়, ছোঁয়াও যায় না। আর তাকে সামান্য একটা মানব কি না এভাবে আঘাত করছে। আর তার সাথে পেরে ওঠছে না!’

সবাইকে অবাক করে দিয়ে যুবরাজ রন ইওহার্ড তার দুই হাত বুক পর্যন্ত নিয়ে একত্র করে নেয়। সাথে তার আশেপাশে থাকা পানিগুলো তার চারদিকে জমাট বদ্ধ হতে থাকে। একপর্যায়ে পানিগুলো জমাটবদ্ধ সৃষ্টি বিশাল জলরাশির। তবে তার দেহের চারপাশে প্রতিরক্ষার কাজে নিয়োজিত ঢালের ওপাশে দেহে একটু পানির ছোঁয়া লাগছে না। তার কাজে এবার চিন্তিত হয়ে যান উপদেষ্টা নিওরিয়ান। সে কী করতে যাচ্ছে তা জানেন না। তবে তিনি এতটুকু অনুধাবন করতে পেরছেন এখন যা ঘটবে তা মোটেও ভালো কিছু ঘটবে না।
জলরাশিগুলো একত্র হতেই হাত দুটো বুকের কাছে নেওয়া অবস্থা থেকে দেহটা একটি ঝাড়া দেয় হাত দুটো স্বাভাবিকভাবে টান করে ফেলে। কিন্তু তার হাত স্বাভাবিক অবস্থায় আনতেই জমাট বাঁধা জলরাশিগুলো আছড়ে পড়ে বাকি পানিগুলোর মাঝে। জমাটবদ্ধ জলরাশির সাথে স্বাভাবিক পানিগুলোর সংঘর্ষ হতেই সৃষ্টি হয় প্রলয়ঙ্কারী এক ভূমিকম্প। মুহূর্তের মাঝে কেঁপে ওঠে সমস্ত কিছু। যেমনটা ঘটে সমুদ্রের মাঝে বোমা বিস্ফোরণ হলে। পানগুলো চারদিকে ছিটকে গেছে। বেশ বড়সড় একটি বিস্ফোরণ ঘটেছে। উপস্থিত যুবরাজ রন ইওহার্ড ব্যতীত বাকি সবাই পানির আঘাতে চারদিকে আছড়ে পড়ল। জমাটবদ্ধ পানিগুলো পারমাণবিক বোমার মতো বিস্ফোরণ ঘটলেও তার সাথে ছিটকেছে তীক্ষ্ণ এবং সূঁচালো ছোটোছোটো কণা। যা দেহের যেখানেই আঘাত করুক সেখানেই বাজেভাবে ক্ষতের সৃষ্টি হবে। এ ঘাতক আঘাত থেকে যুবরাজ রন ইওহার্ডের পাশাপাশি উপদেষ্টা নিওরিয়ান নিজের শক্তির বলে বেঁচে যান। যুবরাজের কর্মকাণ্ড সন্দেহজনক মনে হতেই মস্তিষ্ক সজাগ করে নেন তিনি। জমাটবদ্ধ পানিগুলো ছিটকে যেতেই তাৎক্ষণিক সময়ে বুদ্ধি খাটিয়ে নিজেকে এই প্রলয়ঙ্কারী জলোচ্ছ্বাস থেকে মুক্ত করে নেন। কিন্তু বাকিরা এ জলোচ্ছ্বাস থেকে মুক্তি পেতে পারেনি। আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে চারদিকে ছড়িয়েছিটিয়ে পড়ে। জমাটবদ্ধ পানিগুলো আছড়ে পড়ার ফলে সৃষ্টি হয়জলোচ্ছ্বাসের। আর জলোচ্ছ্বাসের থেকে সৃষ্টি হয়েছে ভূমিকম্প। যা সমগ্র সমুদ্রে ছড়িয়ে পড়েছে। কেঁপে ওঠেছে সমগ্র ভূমি। বিগত কয়েকশত বছরে এতটা প্রলয়ঙ্কারী ভূমিকম্প আর দেখা গেছে কি না তা নিয়ে সন্দেহ!

আচমকাই চৈতন্যহীন হয়ে মাটির দিকে ঢলে পড়তে থাকে যুবরাজ রন ইওহার্ডের দেহ। এতটা উৎপীড়ন তথা ধকল সহ্য করতে না পেরে দেহ সাময়িক সময়ের জন্য বোধহীন হয়ে গেছে। এবার আর বসে থাকেননি উপদেষ্টা নিওরিয়ান। প্রান্তেরর উপর দিক থেকে দ্রুত ছুটে আসেন তিনি। সেনাপতি রিবিয়ান এবং তার সৈন্যগুলো আহত হয়ে ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় একেকজন একেক দিকে ছড়িয়েছিটিয়ে পড়ে আছে। মাটিতে সামান্য ক্ষতবিক্ষত অবস্থা নিয়ে চৈতন্যহীনতা অবস্থায় শুয়ে আছে যুবরাজ রন ইওহার্ড। উপদেষ্টা নিওরিয়ান দ্রুত তার কাছে উপস্থিত হয়ে মাটিতে শুয়ে থাকা অবস্থা থেকে পাজাকোলে তুলে নিয়ে বুকের সাথে মিশিয়ে দ্রুত প্রশিক্ষণ প্রান্তরের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসেন। জড় হওয়া পানিগুলো আছড়ে পড়ার ফলে প্রান্তের অনেক কিছুই ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। তন্মধ্যে অন্যতম হচ্ছে প্রান্তের প্রবেশদ্বার। পানি আছড়ে পড়া বেগ সামাল দিতে না পেরে প্রবেশদ্বার তার স্থান থেকে ভেঙে গিয়ে কয়েক মিটিরা দূরে পড়ে আছে। যার হেতু উপদেষ্টা নিওরিয়ানের বাহিরে বেরিয়ে আসতে তেমন ভোগান্তি পোহাতে হয়নি। কী হয়েছে তা দেখার জন্য ইতোমধ্যেই প্রান্তরের দিকে ছুটে এসেছে প্রায় ২০ জন মৎস্য সৈনিক। যুবরাজ রন ইওহার্ডকে উপদেষ্টা নিওরিয়ানের পাজকোলে দেখে উপস্থিত সকলে কিঞ্চিৎ ঘাবড়ে যায়। কিন্তু তাদের দিকে বিন্দু পরিমাণ ধ্যান না দিয়ে তিনি রাজপ্রাসাদের দিকে দ্রুত ছুটে যান। কয়েকজন সৈন্য তার পিছুপিছু আসতে থাকে। বাকিরা প্রান্তরের ভাঙা প্রবেশদ্বার দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে।

উপদেষ্টা নিওরিয়ান যুবরাজ রন ইওহার্ডকে পাজাকোলে নিয়ে রাজপ্রাসাদের কাছে উপস্থিত হতেই প্রথমেই দৃষ্টি কাড়ে রাজা অরগাডের। ভূমিকম্পের সময় তিনি এবং রাজসভার সভাসদগণ বিকেলে জরুরি আলাপে মত্ত ছিলেন। কিন্তু এমন তীব্র ভূমি কম্পনের ফলে রাজসভার জরুরি কার্য স্থগিত করে দিয়েছেন। কেবল রাজসভার জরুরি তলবে কর্ম স্থগিত দিয়ে বাহিরে বেরিয়েছিলেন হাঁটবেন ভেবে। তাছাড়া সমস্ত ভূমি কম্পিত হবার কারণ জানতে লোক পাঠান। কিন্তু এরকম অবস্থাতে যুবরাজ রন ইওহার্ডকে আশা করেনি। অধিকাংশ সভাসদ তাদের নিজ নিজ গৃহে চলে গেছেন। তবু বেশ কয়েকজন এখনো রাজপ্রাসাদে উপস্থিত। তাকে রাজসভা থেকে বেরিয়ে এভাবে থামকে যেতে দেখে উৎফুল্ল হয়ে উপস্থিত সবাই তার পেছনে এসে দাঁড়ান।
সবাইকে অবাক করে দিয়ে হন্তদন্ত হয়ে দৌড়ে উপদেষ্টা নিওরিয়ানের সামনে উপস্থিত হয় রাজকুমারী ডায়ানা। যুবরাজ রন ইওহার্ডের ব্যথায় যেন সে নিজেও অধিকতর ব্যথিত। তার পিছুপিছু ছুটে পেছনে এসে দাঁড়িয়েছেন রাজা অরগাড। উপস্থিত সৈন্যদের আদেশ দিলেন তিনি, যুবরাজকে তার কক্ষে নিয়ে যাওয়ার। ‘ উপস্থিত সৈন্যগুলো হন্ন হয়ে যুবরাজ রন ইওহার্ডকে কাঁধে তুলে ধরাধরি করে তার কক্ষে নিয়ে যায়। রাজা অরগাডের আদেশে কয়েকজন সৈন্য ইতোমধ্যেই বেরিয়ে গেছে রাজ বৈদ্যকে নিয়ে আসার জন্য। সাময়িক অসুস্থতার জন্য আজ রাজসভায় উপস্থিত হতে পারেননি তিনি। ধরাধরি করে দ্রুত বিছানায় শুইয়ে দেয়া হয় যুবরাজ রন ইওহার্ডকে। তার বিছানার ডান পাশে বসে আছে রাজকুমারী ডায়ানা। এবং বাম পাশে বসে আছেন রানি নিয়ানো। তাছাড়া কক্ষে উপস্থিত আছেন রাজা অরগাড। এবং উপদেষ্টা নিওরিয়ানসহ আরও কয়েকজন।

যুবরাজ রন ইওহার্ডের মুখমণ্ডলে ফুটে আছে মারের কয়েকটি আঘাতের চিহ্ন। ফরসা মুখমণ্ডল হওয়ার নিমিত্ত মারের ক্ষত চিহ্নগুলোর চারদিকে রক্তিম বর্ণ ধারণ করে আছে। এবং কয়েকটি স্থানে কেটে গেছে। যা দিয়ে ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরিয়ে আসছে কিছুক্ষণ পরপর। তাছাড়া দুই হাতের কয়েকটি স্থানে মারের আঘাত লেগে আছে। উপদেষ্টা নিওরিয়ান এগিয়ে গিয়ে যুবরাজ রন ইওহার্ডের পরিধানকৃত পোশাকটি খুলে ফেলতে লাগলেন। তাতে সাহায্য করলেন রানি নিয়ানো। উন্মুক্ত বুকটি ফুটে উঠতেই চোখ জোড়া বন্ধ করে ফেললেন উপদেষ্টা নিওরিয়ান। আঘাতপ্রাপ্ত ধবধবে ফরসা বুকটি লাল হয়ে আছে। যেন সারা দেহের রক্তগুলো এখানেই জমাট বেঁধে আছে। বুকের মাঝে বেশ কয়েকটি ক্ষতের চিহ্ন হয়ে আছে। যেগুলো ফিনকি দিয়ে বেরিয়ে রক্তগুলো ধীরে ধীরে গড়িয়ে পড়ছে। রাজা অরগাড যুবরাজ রন ইওহার্ডের চেহারা এবং বুক গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত স্থানগুলোর দিকে ক্ষণিক সময় তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন। এক পর্যায়ে সহ্য করতে না পেরে চেহারায় রাগী ভাব ফুটিয়ে উপদেষ্টা নিওরিয়ানের দিকে ফিরলেন তিনি। রাজা অরগাডের চোখ দুটো যেন ক্রোধে ভরে উঠেছে। রক্তিম লাল হয়ে গেছে ইতোমধ্যে। কিন্তু এর কারণ বা হেতু উপস্থিত সকলের অজানা। রাজা অরগাডের চোখে চোখ মেলাতে সক্ষম নন উপদেষ্টা নিওরিয়ান। মাথাটা নিচ দিকে দিয়ে মনে মনে ভাবতে লাগেন,
‘ রাজা অরগাড কি তবে আমাকেই যুবরাজ রন ইওহার্ডের আঘাতের কারণ হিসেবে দায়ী ভাবছেন?’ নিজ মনে প্রশ্নগুলো ঘুরপাক খেলেও রাজা অরগাডকে প্রশ্নটি করার মতো সাহস করে উঠতে পারেননি। তার ভাবনার জালে ছিদ্রপথ সৃষ্টি করে দিয়ে কয়েকজন সৈন্যের সাথে রাজ বৈদ্য যুবরাজ রন ইওহার্ডের কক্ষে এসে হাজির হলেন। রাজ বৈদ্যকে মধ্যবয়সী একজন মৎস্য মানব। তবে বর্তমানে তার দেহের গড়ন একজন মানব সন্তানের। দুই হাত এবং কোমরে মেয়েদের বিছা জাতীয় একটি ঝুলি রয়েছে। আর তাতে রাখা আছে বেশ কিছু ঔষধ। কিন্তু এগুলো কীসের ঔষধ তা সবার বোধগম্য নয়। কক্ষের সবাই যুবরাজ রন ইওহার্ডকে নিয়ে চিন্তিত। রাজ বৈদ্য কক্ষে প্রবেশ করে ধীর পায়ে এগিয়ে যান। যুবরাজ রন ইওহার্ডের আঘাতপ্রাপ্ত বুকের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন এক ধ্যানে। যেন তিনি কিছু একটা অনুধাবন করছেন তিনি। যুবরাজ রন ইওহার্ডের কাছে এসে ডান হাত নিজের হাতে তুলে নেন। প্রাথমিক চিকিৎসা অনুযায়ী হাতের নার্ভ পরিক্ষা করলেন। নার্ভ পরিক্ষা করাকালীন সময়ে নিস্তব্ধ হয়ে ছিলেন কিছুক্ষণের জন্য। তা দেখে হন্তদন্ত হয়ে প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন রাজা অরগাড।
‘ কোন জটিলতা! তাছাড়া যুবরাজ রন ইওহার্ডের কী হয়েছে রাজ বৈদ্য? ‘ উৎকণ্ঠিত গলায় প্রশ্ন করলেন তিনি। যুবরাজ রন ইওহার্ডের এমন অবস্থা দেখে কোনোভাবেই নিজেকে ঠিক রাখতে পারছেন না তিনি।
‘ তেমন বৃহৎ কোনো সমস্যা নয় মহারাজ। কারো সাথে যুদ্ধ করতে গিয়ে সামান্য আঘাতপ্রাপ্ত হয় যুবরাজ। তাছাড়া আজকে হঠাৎ করে তার দেহে নতুন শক্তির আবির্ভাব ঘটান। যার নিমিত্ত দেহের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যায় তার। এবং দেহের হুশ খুইয়ে বসেন। দেহের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যাবার হেতু কিছুটা উৎপীড়ন হয়ে যান। আর এতটা শক্তি নিজের মাঝে অনুভব করে দেহ নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে যাওয়ার কারণে সাময়িক সময়ের জন্য যুবরাজ অচৈতন্য হয়ে গেছেন। এটা বড় সমস্যা হিসেবে গন্য নয়। কিছু সময় পরেই দেহে চৈতন্যতা ফিরে আসবে। ‘ এক দমে কথাগুলো বলে তার কথার সমাপ্তি ঘটালেন রাজ বৈদ্য।
‘ সাধুবাদ রাজ বৈদ্য। ‘ একটি মুচকি হাসি দিয়ে জ্ঞাপন করলেন রাজা অরগাড। এতক্ষণ যেন তার মনের মাঝে বিশাল এক পাথর চেপে বসে ছিল। এই তো সেই ছেলে যে আগামীর ভবিষ্যৎ রাজা। যদি তার কিছু হয়ে যেত, তবে কী জবাব উপস্থাপন করতেন তিনি? তার কাছে যে জবাবদিহি করার মতো কোনো বাক্য অথবা শব্দ নেই।
কিন্তু তাদেরকে চিন্তাজগতে অনুপ্রবেশ করিয়ে বলতে লাগলেন রাজ বৈদ্য,
‘ কিন্তু আমি একটা বিষয় নিয়ে খুব চিন্তিত! যুবরাজ রন ইওহার্ডের এরকম ভয়ানক হামলা হলো কী করে? আর কেই-বা করল? বুকের মাঝে আঘাতগুলো কোনো স্বাভাবিক আঘাত নয়! ভয়ানক এবং বিষাক্ত বিষ দিয়ে তৈরি পানির ঝাপটার পাশাপাশি শক্ত কিছু দিয়ে আঘাতের! যার একটা আঘাতে একজন মৎস্য মানব মুহূর্তেই প্রাণ ত্যাগ করতে বাধ্য। ‘ এতটুকু বলে থামলেন তিনি। যেন ভেতর থেকে শব্দ বের করে আনতে পারছেন না। কক্ষের মাঝে নীরবতার রাজত্ব চলছে। কারো মুখে কোনো শব্দ নেই! সবাই মনোযোগ সহকারে রাজ বৈদ্যের কথা শুনতে ব্যস্ত। কিন্তু নীরবতার রাজ্যে কোলাহলপূর্ণ হরতাল সৃষ্টি করে পুনরায় বলতে লাগেন রাজ বৈদ্য,
‘ কিন্তু আমি সবচেয়ে হয়রান হয়েছি এটি দেখে, যুবরাজ রন ইওহার্ডকে ভয়ানক আঘাত একটি নয়! পরপর কয়েকটি সেই বিষাক্ত বিষ এবং ভয়ানক দণ্ড দিয়ে আঘাত করা হয়। তবু হয়রান করা খবর হচ্ছে, তার দেহে উক্ত বিষ প্রভাব বস্তার করতে সক্ষম হয়নি। এখন ভাবনার বিষয় হচ্ছে, যুবরাজ রন ইওহার্ডের এতবড় শত্রুটা কে? যে তাকে জানে মেরে ফেলতে চায়!’ এতটুকু বলে তার কথার সমাপ্তি ঘোষণা করলেন। শুরুর দিকে চমকিত গলায় কথাগুলোউপস্থাপন করলেও শেষ দুই বাক্যে ভাবনাযুক্ত করে প্রশ্ন রাখলেন! রাজা অরগাড রাজ বৈদ্যর কথাগুলো শুনে উপদেষ্টা নিওরিয়ানের দিকে পুনরায় তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকান। সাথে উপস্থিত বাকি সবাই তার দিকে অন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন।

উৎপিপাসুতে ভরপুর মুহূর্তে ভাটা লাগিয়ে আচমকাই হন্তদন্ত হয়ে দুজন সৈন্য কক্ষে প্রবেশ করে। যা দেখে উপস্থিত সবাই কিঞ্চিৎ হতভম্ব হয়ে যান। সৈন্য দুটো প্রবেশ করেই খানিকটা উৎকণ্ঠিত গলায় উপস্থাপন করতে শুরু করল।
‘ মহারাজ, সেনাপতি রিবিয়ানের অবস্থা ততটা ভালো নয়। গুরুতর আহত অবস্থায় চৈতন্যহীন দেহ রাজপ্রাসাদের অতিথি কক্ষে রাখা হয়েছে। আপনার এবং রাজ বৈদ্যর দেখানে উপস্থিত হওয়াটা জরুরি মনে করছি। এবং সেনাপতি রিবিয়ানের সাথে তার সঙ্গিদের অবস্থাও ততটা ভালো নয়। তারাও গুরুতর আহত অবস্থায় চৈতন্যহীন হয়ে আছেন। ‘ এক দমে উপস্থাপন করে থেমে যায় সৈন্যটি।
রাজা অরগাড যেন এক সাথে দুই দুইটা চমকপ্রদ খবর একসাথে নিতে সক্ষম হতে পারছেন না। একটু আগেই আহত এবং চৈতন্যহীন অবস্থায় যুবরাজ রন ইওহার্ডকে নিয়ে রাজপ্রাসাদের কাছে উপস্থিত হন উপদেষ্টা নিওরিয়ান। এখন আবার শোনা যাচ্ছে সেনাপতি রিবিয়ান এবং তার সঙ্গিদের অবস্থা ততটা ভালো নয়। তাদের উপরেও হামলা হয়েছে। তারা গুরুতর আহত হয়ে চৈতন্যহীনতা অবস্থায় আছেন। কিন্তু রাজা অরগাডের মনে বরাবর একটা প্রশ্ন রয়েই যায়। “কে আক্রমণ করেছে তাদের দুজনের উপর? যুবরাজ রন ইওহার্ড যুদ্ধের কলাকৌশল না হয় পারে না, কিন্তু সেনাপতি রিবিয়ান তো এতটা আহত হবার কথা নয়! তাছাড়া ভূমিকম্পটা কীসের ছিল? যা সমগ্র পৃথিবীকে নাড়িয়ে দিয়েছে!” কিন্তু তার প্রশ্নের জবাবগুলো অজানাই!
আর কোনো কিছু না ভেবে রাজ বৈদ্যকে সাথে নিয়ে যুবরাজ রন ইওহার্ডের কক্ষ ত্যাগ করেন। হাতের ইশারায় উপদেষ্টা নিওরিয়ানকেও তার সাথে যেতে বলেন। রানি নিয়ানো এবং রাজকুমারী ডায়ানা দুজন যুবরাজ রন ইওহার্শের পাশেই বসে থাকেন। তবে রাজ বৈদ্য কক্ষ ত্যাগ করার আগে রাজকুমারী ডায়ানার হাতে একটি সিসিতে করে তেল জাতীয় সামান্য ঔষধ দিয়ে যান। সাথে বলে যান, ‘ এই ঔষধগুলো যুবরাজ রন ইওহার্ডের বুকে এবং আঘাতপ্রাপ্ত স্থানগুলোতে লাগিয়ে দেবেন! আশা করছি জলদি সুস্থ হয়ে উঠবেন তিনি।’

ছেচল্লিশ.
উপদেষ্টা নিওরিয়ান যুবরাজ রন ইওহার্ডকে কোলে তুলে প্রশিক্ষণ প্রান্তরের ভাঙা প্রবেশদ্বার বাহিরে বেরিয়ে আসেন। যুবরাজকে তার কোলে দেখে সেখানে উপস্থিত হওয়া সৈন্যরা হতভম্ব হয়ে যায়। কী ঘটেছিল তা সঠিক জানে না কেউ। কিন্তু তাদের দিকে বিন্দু পরিমাণ না তাকিয়ে যুবরাজকে কোলে তুলে রাজপ্রাসাদের দিকে আগাতে থাকে। তার এরকম আচরণে আরও হতভম্ব হয়ে যায় উপস্থিত সবাই। তার পিছুপিছু আসতে লাগে কয়েকজন সৈন্য। সাথে প্রশ্ন করে,
‘ যুবরাজ রন ইওহার্ডের কী হয়েছে? এরকম করে আছে কেন? প্রশিক্ষণ প্রান্তরের হাল এমন কেন? আর ভূমিকম্প এদিক থেকেই-বা হলো কী করে?’ একসাথে পরপর কয়েকটি প্রশ্ন করে একজন সৈন্য। প্রশ্নগুলো শুনে সেখানে দাঁড়িয়ে যান উপদেষ্টা নিওরিয়ান। তার পিছুপিছু জানতে আসা সৈন্যদের উদ্দেশ্য করে বলতে লাগেন,
‘ এত প্রশ্নের জবাব দেওয়ার সঠিক সময় এখন না। তোমরা প্রান্তরের ভেতরে যাও। সেখানে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে পড়ে আছেন সেনাপতি রিবিয়ান এবং তার সৈন্যরা। আপাতত তাদেরকে উদ্ধার করে রাজপ্রাসাদে নিয়ে আসো। ‘ দম না ছেড়ে একটানাভাবে কথাগুলো উপস্থাপন করলেন তিনি। সেখানে আর এক মুহূর্ত দেরি না করে হাঁটতে থাকেন। তার পিছুপিছু আসা সৈন্যগুলো আর সেখানে না দাঁড়িয়ে থেকে প্রশিক্ষণ প্রান্তরের দিকে এগিয় যায়। আগত বিশজন সৈন্য একসাথে ভেতরে প্রবেশ করে।

প্রশিক্ষণ প্রান্তরের ভেতরে জমাট বেঁধে থাকা পানিগুলো আছড়ে পড়ে সব তার অবস্থান থেকে নড়ে গেছে। এক কথায় বলা যায় প্রশিক্ষণ প্রান্তরে এখন আর পানি অবশিষ্ট নেই। সৈন্যদলটি ভেতরে প্রবেশ করতে চোখ তাদের কপালে উঠে যাবার উপক্রম। যুদ্ধ প্রশিক্ষণ প্রান্তরের ভেতর দিকের সকল কিছু লণ্ডভণ্ড হয়ে আছে। যেন প্রান্তরেই বিশাল আকারের যুদ্ধ হয়েছে। একেকটা ভেঙেচুরে চুরমার হয়ে আছে। সাথে প্রান্তরে মাটির এক কর্ণারে ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় পড়ে আছে সেনাপতি রিজওনালের দেহ। দেহ সম্পূর্ণ চেতনাহীন। এবং তার ব্যক্তিগত সুরক্ষার কাজে নিয়োজিত চার সৈন্যের দেহগুলোও চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। কেউ মাটিতে গড়াগড়ি করছে তো কেউ সম্পূর্ণ নিস্তব্ধ। সকলের দেহই খুব বাজেভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। প্রান্তরে নতুন উপস্থিত হওয়া সৈন্যদলটি সেনাপতি রিবিয়ান এবং তার সুরক্ষার কাজে নিয়োজিত সৈন্যদেরকে কাঁধে তুলে রাজপ্রাসাদের দিকে রওনা দেয়। কিছু সময় বাদেই রাজপ্রাসাদে এসে উপস্থিত হয়। বুদ্ধি করে অতিথিশালায় নিয়ে যায় তাদের। এবং দুজন সৈন্য পাঠিয়ে খবর জানান রাজা অরগাডের কাছে। খবর পেয়ে অতিথিশালার উদ্দেশ্যে ছুটে আসেন রাজা অরগাড। এবং সাথে করে নিয়ে আসেন রাজ বৈদ্য এবং উপদেষ্টা নিওরিয়ান।

[– চলবে –]

• যুবরাজ রন ইওহার্ডকে মারাটা কি কোনো ইঙ্গিত ছিল?
• কেবল রাজা হবার জন্যই কি সেনাপতি রিবিয়ান যুবরাজ রন ইওহার্ডকে মারার চেষ্টা করেছিলেন? নাকি তার আড়ালেও কেউ আছেন যিনি এগুলো করাচ্ছেন?
• যুবরাজ রন ইওহার্ডের দেহে বিষাক্ত বিষগুলো কোনো প্রভাব বিস্তার করেনি কেন?
• রাজা অরগাড কী করবেন? যুবরাজকে বিতারিত করবেন? নাকি সেনাপতি রিবিয়ানকে হত্যা করবেন?

বিঃদ্রঃ গতদিন গল্প না দাওয়ার কারণে আজকে পুরো ৩ হাজার একশত চুয়াল্লিশ শব্দের একটা পর্ব দিলাম। কমেন্ট না করে পালালে বোমা মাইরা উড়াই দিমু।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here