গল্প:- সি অফ মারমেইড লেখনীতে:- যাবেদ খাঁন আবু বকর উনবিংশ পর্ব

0
169

গল্প:- সি অফ মারমেইড
লেখনীতে:- যাবেদ খাঁন আবু বকর
উনবিংশ পর্ব

আটান্ন.
দেখতে দেখতে দিন কেটে যেতে থাকে। দিন পেরিয়ে হয় রাত। রাত কেটে পরদিন সকাল, এরপর দুপুর, আবার রাত। সময় তার চক্রবৃদ্ধি নিয়মানুসারে চলছে। এভাবে চলতে চলতে আজ রন ইওহার্ডের প্রশিক্ষণ কার্যের ১৩ দিন চলছে! এই কয়দিনের মাঝে আর কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়নি তাকে। এর মাঝে নিজের একটি সময় তালিকা লিপিবদ্ধ করে সেই অনুযায়ী চলাচল করছে।যুবরাজ রন ইওহার্ড নিজেকে রাজা হিসেবে প্রস্তুত করতে সক্ষম প্রায়! রাজ্যের ভার তার উপর খুব শীঘ্রই হস্তান্তর করার পরিকল্পনা করছেন রাজা অরগাড। সেদিনের আঘাতের পর থেকে বেশ নিশ্চুপ হয়ে গেছেন সেনাপতি রিবিয়ান। যুবরাজ রন ইওহার্ডের ছায়া মারতে চান না তিনি। ইতোমধ্যে বেশ সুস্থ করছেন। তবে কয়েকদিনের মাঝে দেহে কোনোপ্রকার চৈতন্য ছিল না। তাছাড়া রাজপ্রাসাদে এখন আর খুব একটা দেখা মিলে না তার। এভাবে করেই প্রশিক্ষণের পাশাপাশি রাজ্যের চারদিকে ঘুরে দেখতে দেখতে কেটে গেল দীর্ঘ ১৩টি দিন। আজ যুবরাজ রন ইওহার্ডের যুদ্ধ প্রশিক্ষণের ১৪ দিন হতে যাচ্ছে।

যুবরাজ রন ইওহার্ডের আজ প্রশিক্ষণের শেষ দিন। প্রভাতের কিরণ দেখা দেওয়ার আগে ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে যায়। বিছানা ত্যাগ করে দ্রুত পায়ে হেঁটে সাজঘরে অবস্থান নেয়। অতঃপর নিজেকে প্রস্তুত করে বেরিয়ে যায়। প্রবেশদ্বারের কাছে দাঁড়িয়ে দুটো টোকা দিতে ওপাশ থেকে প্রহরী পাল্লা খুলে দেয়। দ্রুত পায়ে হেঁটে কক্ষ ত্যাগ করে প্রাসাদের বারান্দা দিয়ে হাঁটতে লাগে। কিছু সময় বাদে রাজপ্রাসাদ ত্যাগ করে প্রাসাদের সম্মুখ মাঠে উপস্থিত হয়।না থেমে উলটো কদমের গতি বৃদ্ধি করে এগিয়ে যেতে থাকে। কারাগার পেরিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে দূর থেকেই প্রশিক্ষণ প্রান্তরের উঁচু পাঁচিলের দেখা মিলছে! ক্ষাণিক সময় হাঁটতে উপস্থিত হয় প্রশিক্ষণ প্রান্তরের প্রবেশদ্বারের কাছে। উপস্থিত প্রহরী তাকে দেখা মাত্রই মাথা নিচু করে কুর্নিশ জানায়। এবং যুবরাজ কিছু বলার আগেই দ্বারের পাল্লা দুটো খুলে দেয়। সেনাপতি রিবিয়ানে মেরে গুরুতর আহত করার পর থেকে রাজ্যের সবাই তাকে ভয় পেতে আরম্ভ করেছে। তাদের ভাবনার বাহিরে রন ইওহার্ড। প্রবেশদ্বার খুলতে ভেতরে জেলির মতো পানির ভাণ্ডারের দেখা মিলছে তার! যুবরাজ রন ইওহার্ড আর কোনো কথা না বলে ভেতরে প্রবেশ করে যায়।

রন ইওহার্ড ভেতরে প্রবেশ করতে নজরে আসে তার, উপদেষ্টা নিওরিয়ান মধ্যাহ্ন অবস্থায় শূন্যে বসে ধ্যানে মগ্ন। যুবরাজ রন ইওহার্ড পানি দিয়ে শূন্যে ভেসে তার দিকে এগিয়ে যেতে লাগল। তার উপস্থিতি টের পেয়ে চোখ দুটো খুলে ফেললেন উপদেষ্টা নিওরিয়ান। ধ্যান ভেঙে তার দিকে দৃষ্টিপাত করেন। মৃদুস্বরে তুলে স্বাভাবিক কণ্ঠস্বর তুলে বলতে লাগেন,
‘ তুমি চলে এসেছো! ভালোই হলো। চলো আজ শেষবারের মতো তোমার অনুশীলনগুলোর কার্য সম্পাদনা করা যাক?’ শেষ বাক্য উপস্থাপন করে সম্মতি চাইলেন তিনি। যুবরাজ রন ইওহার্ড অবিলম্বে প্রত্যুত্তরে সম্মতি জানিয়ে জবাব দিলেন,
‘ চলুন।’ স্বাভাবিক কণ্ঠে মাত্র একটি শব্দে তার সম্মতিসূচক বাক্য উপস্থাপন করে দেয়।

সবে মাত্র প্রভাতকাল। দ্বিপ্রহর আসতে এখনো বেশ সময় বাকি! উপদেষ্টা নিওরিয়ানের সাথে প্রান্তরে নেমে প্রথমে তার প্রধান শক্তি পানিকে নিজের ক্ষমতা হিসেবে ব্যবহার করার জন্য অনুশীলন প্রস্তুতি শুরু করে দেয়। তার সামনে রাখা আছে ছয়টি যোদ্ধা মূর্তি। যোদ্ধা মূর্তি বলার কারণ আছে। মূর্তিগুলো যোদ্ধাদের আকৃতি ধারণ করা! তাই এগুলোকে খুব সহজে যোদ্ধা মূর্তি স্বীকৃতি দেওয়া যায়।
যুবরাজ রন ইওহার্ডের অবস্থান থেকে যোদ্ধা মূর্তিগুলোর অবস্থানের মাঝে বেশ বড় একটি দূরত্ব সৃষ্টি করে দাঁড়ায়। হাত দুটো সামনে তুলে চোখ দুটি বুজিয়ে নেয়। দুই হাতের আঙুলগুলোর ইশারায় জলরাশির একত্র করে একটি বড় গোলাকৃতির কন্দুক সৃষ্টি করে। দপ করে দুটি চোখ খুলে লক্ষ্যবস্তুর দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকায় রন ইওহার্ড। আচমকাই হাত দুটো সামনের দিকে করে মুষ্ট্যাঘাত করে। উপর থেকে দাঁড়িয়ে নীরবে সকল কিছু অবলোকন করতে লাগেন উপদেষ্টা নিওরিয়ান। মাঝে মাঝে যুবরাজ রন ইওহার্ডের যুদ্ধের কলাকৌশল দেখে নিজেই হতভম্ব হয়ে যান তিনি। রাজ্যের সবার যুদ্ধের কলাকৌশল প্রদর্শন করেছেন তিনি। কমবেশ সকলের যুদ্ধের ধরণ এক রকমের। সকলের আঘাত সম্পর্কে অবগত হওয়া যায়। কিন্তু যুবরাজ রন ইওহার্ডের যুদ্ধের ধরণ কখনো তার মাথাতে আসে না। প্রতিবারে ভিন্নতা সৃষ্টি করে আক্রমণ করে। মাঝে-মাঝে উপদেষ্টা নিওরিয়ান মনে মনে ভাবেন, শত্রুপক্ষের জন্য কতটা ভয়ানক আঘাত অপেক্ষা করছে তা কে জানে! তবে শত্রুপক্ষ যে খুব সহজে তার কাছে ধরাশায়ী হয়ে যাবে তা ভালো করে বুঝতে পারছেন তিনি। যুবরাজ রন ইওহার্ডের হাতের সৃষ্ট গোলাকৃতির কন্দুক জলরাশিগুলো মুষ্ট্যাঘাতের মতো করতে ছুটতে থাকে লক্ষ্যবস্তুর দিকে। সামনে থাকা যোদ্ধা মূর্তিগুলোর মাথায় আঘাত হানে গোলাকৃতির কন্দুক জলরাশিগুলো। আঘাত লাগতেই মূর্তির গলার অংশ থেকে মাথাটা ভেঙে দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায়। না থেমে গিয়ে একে একে ছয়বার যুবরাজ রন ইওহার্ড তার হাত দ্বারা মুষ্ট্যাঘাত করে। যার হেতু প্রান্তরের ডান কর্নারে থাকা অখণ্ডিত বাকি যোদ্ধা মূর্তিগুলো আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে ভেঙে চৌচির হয়ে যায়। কোনো যোদ্ধা মূর্তির মাথা থেকে শুরু হয়ে পা পর্যন্ত ভেঙে টুকরো হয়ে আছে। ছয়টি যোদ্ধা মূর্তির কোনোটিই অখণ্ডিত নেই। এ দেখে খুব বেশি একটা বাকহারা হননি উপদেষ্টা নিওরিয়ান। এগুলো যুবরাজ রন ইওহার্ডের কাছে খুব সাধারণ ব্যাপার। তবে এটা দেখে খুশি হয়েছেন তিনি, যুবরাজ রন ইওহার্ড তার শক্তির উপর নিয়ন্ত্রণ আনতে বেশ সক্ষম হয়েছে! যা নিজের এবং শত্রুপক্ষ উভয়ের জন্য সুখবর!

প্রান্তরের মাঝামাঝি অবস্থানে রাখা আছে আরও পাঁচটি যোদ্ধা মূর্তি। একটি মূর্তি থেকে অপর মূর্তির মাঝে বেশ খানিকটা দূরত্ব তৈরি করে রাখা হয়েছে। তবু যেন যোদ্ধা মূর্তিগুলো জীবিত! তাছাড়া মূর্তিগুলো মাটির নয় পানি দিয়ে সৃষ্ট। যোদ্ধা মূর্তিগুলো হাতে রয়েছে ধারালো হাতিয়ার। যা কারও দেহে লাগামাত্র আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে ক্ষতের সৃষ্টি করবে। যুবরাজ রন ইওহার্ড যোদ্ধা মূর্তিগুলোর থেকে বেশ ক্ষানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে। এগিয়ে এসে তার হাতে একটি নীল বর্ণের ভয়ানক ধারালো তলোয়ার তুলে দেন উপদেষ্টা নিওরিয়ান। যুবরাজ রন ইওহার্ড হাতে তলোয়ারটি নিয়ে চোখের পলকের মাঝে মূর্তিগুলোর মাঝে থাকা ফাঁকা স্থানে এসে দাঁড়িয়ে যায়। উপদেষ্টা নিওরিয়ান দ্রুত পানির উপরে উঠে হাতের সাহায্যে পানি নাড়িয়ে যোদ্ধা মূর্তিগুলো পরিচালনা করতে থাকেন। এই মুহূর্তে মূর্তিগুলো দেখলে যে কারও মনে হবে প্রতিটি মূর্তির প্রাণ আছে। আর তারা সবাই যুবরাজ রন ইওহার্ডের উপর আক্রমণ করার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে নিয়েছে।

যুবরাজ রন ইওহার্ড তার হাতে থাকা তলোয়ারটি মুষ্টিবদ্ধ অবস্থায় আরও শক্ত করে চেপে ধরে। তলোয়ারের মাথাটা সামনের দিকে না দিয়ে পেছন দিক করে উলটোভাবে ডান হাত দিয়ে মুষ্টিবদ্ধ করে ধরে রাখে তলোয়ারের হাতল। তলোয়ারের ধারালো অংশ নিচ দিক করে তলোয়ারের মাথাটা খানিকটা বাঁকা করে ধরে। এতে করে তলোয়ারের মাথাটা তার দেহের সাথে সোজাসুজি না থেকে কিছুটা দূরে সরে যায়। তলোয়ারের হাতলটা তার সামনের দিকে একটু বাম দিকে বাঁকা করায় তলোয়ারটি ৯০ এবং ২৭০ ডিগ্রি এঙ্গেলে না থেকে বাম দিকে যাওয়ায় ৬০ এবং ২৪০ ডিগ্রি এঙ্গেলে আছে।
আচমকাই পানির মাঝে দ্রুত ঝড়েরবেগে ছুটতে থাকে যুবরাজ রন ইওহার্ড। এক মূর্তি থেকে অপর মূর্তির মাঝে যে সামান্য ফাঁকা স্থাগুলো আছে সেখান দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। পাঁচটি মূর্তির ফাঁকা স্থানে এসে হাতে থাকা তলোয়ারটি নিয়ে জীবিত মানুষের মতো নড়াচড়া করছে। যুবরাজ তার ডানদিকের যোদ্ধা মূর্তির সামনে দিয়ে ছোটা শুরু করে। এবং শেষ করে অবশিষ্ট থাকা মূর্তির পেছনে এসে। অবশিষ্ট মূর্তিটির পেছনে এসে নিজের দেহের গতি কমিয়ে থেমে যায় রন ইওহার্ড।

যুবরাজ রন ইওহার্ড মূর্তিগুলোর পেছনে এসে থেমে যেতে চলন্ত যোদ্ধা মূর্তি পাঁচটি একত্রে গুড়িয়ে পড়ল। যেন একত্রে সবগুলো হুড়মুড়িয়ে পড়ে যাবার অবস্থা। গুড়িয়ে পড়া মূর্তিগুলো হাত বাজে! মূর্তিগুলো পানির তৈরি হলেও জমাটবদ্ধ বরফের মতো। কোনো মূর্তির মাথা ধর থেকে দ্বিখণ্ডিত হয়ে আছে, কোনো মূর্তির দেহের মধ্যস্থান থেকে দ্বিখণ্ডিত কোনটার ডান কাঁধ থেকে বাম দিকের পেট কোনাকুনিভাবে দ্বিখণ্ডিত অবস্থা। এভাবেই পাঁচটি মূর্তি ভেঙেচুরে চুরমার হয়ে মাটিতে পড়ে আছে। এগুলো দেখে এক চুল পরিমাণ পর্যন্ত অবাক হননি উপদেষ্টা নিওরিয়ান। এতদিন যাবত যুবরাজ রন ইওহার্ডকে একজন সেরা তলোয়ারবাজ হিসেবে প্রস্তুত করানোর কাজে সময় ব্যয় করেছেন তিনি। আজ তিনি তার ব্যয়িত সময়ের কর্মে সফল।! যুবরাজ রন ইওহার্ড তার দৌড়ের গতির সঙ্গে তার ব্যবহারকৃত তলোয়ারও সমানতালে ভারসাম্য বজায় রেখে ব্যবহার করতে পারে। যার নিমিত্তে তার সামনে উপস্থিত শত্রুপক্ষের সৈন্যকে কয়েক সেকেন্ড সময়ের ব্যবধানে তলোয়ার দিয়ে দ্বিখণ্ডিত করে পরাস্ত করতে সক্ষম। একটু আগে ঘটিত মূর্তির সাথে তলোয়ার যুদ্ধ পেছন থেকে পুনরায় একটু ধীর করে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিপাত ঘটিয়ে লক্ষ্য করলে দেখা যায়,
যুবরাজ রন ইওহার্ড তলোয়ারকে তার অবস্থানে রেখে চোখের পলকের মাঝে সামনে এগিয়ে যায়। তার সামনে উপস্থিত হওয়া যোদ্ধা মূর্তিটি তাকে আঘাত করতে নেওয়ায় কৌশলে হাঁটুজোড়া নামিয়ে বসে পড়ে। এবং হাতের তালুতে আবদ্ধ তলোয়ারকে তার ডান দিক থেকে সামনে আনতে যোদ্ধা মূর্তিটির পেটে এসে আঘাত করে। মূহুর্তের মাঝে দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায়। কিন্তু সেদিকে ধ্যান না দিয়ে পুনরায় সামনে এগিয়ে যেতে থাকে। কয়েক ন্যানো সেকেন্ডের মাঝে তার সামনে উপস্থিত হয় দ্বিতীয় যোদ্ধা মূর্তিটি। তার পেট বরাবর আঘাত করতে নিলে রন ইওহার্ড একটি লাফ দিয়ে মূর্তিটির ঘার অবধি উঠে হাতের তালুতে আবদ্ধ করে রাখা তলোয়ারটি দিয়ে মূর্তির ঘাড়ে আঘাত করে। চোখের পলক ফেলার আগে তলোয়ার তার লক্ষ্যবস্তুকে দ্বিখণ্ডিত করে মুক্ত হয়ে যেতে সক্ষম। পুনরায় সামনে এগিয়ে আসা যোদ্ধা মূর্তিটির কাছে কয়েক ন্যানো সেকেন্ডের মাঝে উপস্থিত হয়ে যায়। এবারের যোদ্ধা মূর্তিটি তাকে আর আঘাত করার মতো উপযুক্ত সময় পায়নি। তার আগেই হাতের তালুর মাঝে আবদ্ধ তলোয়ারে দিয়ে কোনাকুনিভাবে ডান কাঁধে আঘাত করে। এবং তলোয়ারের মাথা ডান কাঁধ থেকে বাম পেট অবধি গিয়ে দ্বিখণ্ডিত করে দেয়। পুনরায় নিজের দৌড়ের গতি বজায় রেখে চতুর্থ নাম্বারের যোদ্ধা মূর্তিটির কাছে উপস্থিত হয়। পুনরায় হাঁটু জোড়া ভেঙে বসে এগিয়ে যেতে থাকে। চলন্ত যোদ্ধা মূর্তিটির হাঁটুতে চোখের পলকের মাঝে হাতের তালুতে বদ্ধ তলোয়ার দিয়ে আঘাত করে দ্বিখণ্ডিত করে দেয়। মুহূর্তের মাঝে মূর্তিটির পেছনে এসে যায় রন ইওহার্ড। এবং সাথে সাথে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থা থেকে বসে যায় মূর্তিটি। রন ইওহার্ড নিজের দেহটি ৩৬০ ডিগ্রি এঙ্গেলে ঘূর্ণন করে হাতে থাকা তলোয়ার দিয়ে মূর্তিটির পেছন দিক থেকে আঘাত করে ধর থেকে কল্লা আলাদা করে দেয়। নিজেকে সেখানে না থামিয়ে অবশিষ্ট চলন্ত যোদ্ধা মূর্তিটির সামনে উপস্থিত হয় পূর্ণ গতির সাথে। মূর্তিটি আঘাত করর পূর্বেই একটি লাফ দিয়ে মূর্তিটির মাথা অবধি উঠে যায় রন ইওহার্ড। এক হাতের তালুতে আবদ্ধ করে রাখা তলোয়ার তার সামনাসামনি এনে পরস্পর দুই হাত একত্র করে তলোয়ার বদ্ধ করে আকড়ে ধরে। দেহের সর্বশক্তি দিয়ে তলোয়ারকে চলন্ত যোদ্ধা মূর্তিটির মাথার মধ্যবর্তী অবস্থানে আঘাত করে। তলোয়ারের আঘাত এবং দেহের সর্বশক্তির বলে মূর্তিটির দেহের মাথা থেকে দুই উরুর মধ্যবর্তী স্থান আলাদা করে দেয়। এবং মূর্তিটির দুই উরুর ফাঁকা দিয়ে মূর্তিটির পেছনে এসে উপস্থিত হয় রন ইওহার্ড। মুহূর্তের মাঝে সকল মূর্তিগুলো একত্রে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে। রন ইওহার্ড পেছন দিকে দৃষ্টিপাত করতে তার নজরে আসে মূর্তিগুলো ভেঙেচুরে চুরমার অবস্থায় মাটিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে।

যুবরাজ রন ইওহার্ডের এরকম তলোয়ার বাজি দেখে হতবাক নয়, বরং মুগ্ধ হয়ে গেলেন উপদেষ্টা নিওরিয়ান। উৎসাহিত করার লক্ষ্যে রন ইওহার্ডের কাছে এসে উপস্থিত হন তিনি। কাঁধের উপর দুটো চাপড় দিয়ে বলতে লাগলেন,’ তোমার যুদ্ধের গতিবেগ এবং কলাকৌশল দেখে সত্যিই আমি মুগ্ধ! তোমার এই ১৩ দিনের প্রশিক্ষণ এবং অনুশীলনের মাঝে এত বড় যোদ্ধা হওয়া তা ভাবনাতে আনাও বিশাল এক ঝুঁকির কর্ম হয়ে দাঁড়াবে। তবে আর আমি অনেক খুশি। আমি আমার দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম হয়েছি!’ দম না ছেড়ে একটানাভাবে প্রশংসা করতে লাগলেন তিনি। লোক প্রত্যাশার চাইতেও কয়েকগুণ বেশি পেয়ে গেলে যতটা খুশি হয় তার চেয়েও কয়েকগুণ বেশি খুশি হয়ে আছেন তিনি। উপদেষ্টা নিওরিয়ানের মুখে এরকম প্রশংসা শুনে বাকহারা হয়ে পড়ে যুবরাজ। কিছু সময় পর আবার ব্যক্ত করতে লাগলেন উপদেষ্টা নিওরিয়ান, ‘ আমার তো এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না তোমার প্রশিক্ষণকাল সবেমাত্র ১৩ দিন! তোমার যুদ্ধের কলাকৌশল এবং শত্রু পক্ষকে পরাস্ত করার জন্য অভিনব পদ্ধতি সত্যিই চমকপ্রদ। আমার কাছ থেকে বহু সৈন্য প্রশিক্ষণ নিলেও আজ প্রথমবারের মতো তোমার থেকে আমার প্রশিক্ষণ নিতে ইচ্ছে করছে। ‘ এবার তার ব্যবহার করা কলাকৌশলের প্রশংসা জানালেন তিনি। এই বলে থামলেন উপদেষ্টা নিওরিয়ান। তবে কিঞ্চিৎ গম্ভীর ভাব কণ্ঠে ফুটিয়ে বলতে লাগে যুবরাজ রন ইওহার্ড, ‘ এভাবে বলবেন না উপদেষ্টা। আপনি আমার শিক্ষক! আর একজন ভালো শিক্ষকের মুখে এসকল কথা মানায় না।’ তার কথার আড়ালেও কঠিন যুক্তি রয়েছে। তবু উপদেষ্টা নিওরিয়ানের প্রশংসা শুনে তার চেহারা লজ্জায় লাল বর্ণ ধারণ করেছে। এবার আর গম্ভীর স্বরে নয়, লজ্জা মাখা কণ্ঠে দুই ঠোঁটের কোণে একটি মুচকি হাসি তুলে ব্যক্ত করতে লাগে, ‘ এর পেছনে অবশ্য আপনার হাত রয়েছে অধিকতর। আপনি যদি আমাকে এখানে প্রশিক্ষণ এবং অনুশীলন না করাতেন, তবে হয়তো আরও বেশ সময়ের প্রয়োজন হতো। ‘ যুবরাজের থেকে এমন বক্তব্য শুনে বেশ খুশি হলেন উপদেষ্টা নিওরিয়ান। গর্বে তার বুক ফুলে উঠল! কিন্তু এরকম একটা হাসিখুশি মুহূর্তে হঠাৎ করে ব্যগ্রতা সৃষ্টি করে বলে উঠলেন উপদেষ্টা নিওরিয়ান, ‘ যুবরাজ, মহারাজ কিন্তু আজ তাড়াতাড়ি ফিরতে বলেছেন। আশা করি মনে আছে তোমার? এমনিতে একটু পর প্রাসাদের সম্মুখ মাঠে বিশাল জনসমাগমের ভীড় বেড়ে যাবে। তখন প্রাসাদে প্রবেশ করাটা কঠিন হয়ে পড়বে। ‘ খানিকটা ভাবনা চিত্তে কথাটি উপস্থাপন করলেন তিনি। যুবরাজ রন ইওহার্ড খানিকটা ভাবুক হয়ে ব্যক্ত করল, ‘ আমি খানিক সময়ের জন্য একদমই ভুলে গেছিলাম মহারাজের কথা। মনে করিয়ে দিয়ে ভালোই করেছেন। তো চলুন। যাওয়া যাক?’ শেষ কথাটা প্রশ্নসূচকভাবে প্রস্তাবিত করে যুবরাজ। প্রত্যুত্তরে উপদেষ্টা নিওরিয়ান সম্মতি প্রদান করে বললেন, ‘ হ্যাঁ! চলো তবে।’

এই বলে দুজন একত্রে প্রবেশদ্বারের দিকে এগিয়ে গেলেন। প্রবেশদ্বারের কাছে উপস্থিত হয়ে নিয়ম অনুসারে প্রবেশদ্বারে কয়েকবার টোকা দিলেন উপদেষ্টা নিওরিয়ান। কিন্তু ওপাশ থেকে কারও প্রতিক্রিয়া জানা যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে বিরক্তির সহিত বেশ কয়েকবার করাঘাত করলেন। কিন্তু কোনো ফলপ্রসূ হলো না। শেষে বাধ্য হয়ে প্রবেশদ্বার জোরে জোরে ধাক্কাতে লাগলেন। কিন্তু তাতেও কোনো সূফল এলো না।
‘ যুবরাজ, মনে হয় প্রবেশদ্বার বন্ধ রেখেই প্রহরীরা প্রাসাদে উপস্থিত হয়েছে। এখন তো কোনো উপায়ন্তর দেখতে পাচ্ছি না। এমনিতেও উপস্থিত হবার সময় প্রায় হয়ে এসেছে। তাছাড়াও গত কয়েকদিন পূর্বেই প্রান্তরের সকল কিছু মেরামত করা হয়েছে। এখন আবার নতুন করে যদি দ্বার ভাঙা হয়! এতে করে মহারাজ মন ক্ষুণ্ণ হবেন। আবার অপর দিকে সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। ‘ উৎকণ্ঠা হয়ে কথাগুলো ব্যক্ত করলেন উপদেষ্টা নিওরিয়ান। তার কণ্ঠে উপস্থিত আছে ব্যগ্রতা! এমতাবস্থায় রাজপ্রাসাদের দিক থেকে বাঁশি ফুৎকারের আওয়াজ শোনা যায়। সঙ্গে সঙ্গে উদ্বীগ্ন হয়ে পুনরায় বলে উঠলেন উপদেষ্টা নিওরিয়ান, ‘ সময় পেরিয়ে যাচ্ছে যুবরাজ। মাহারাজ এই মুহূর্তে আমাদেরকে তার সামনে উপস্থিত না দেখলে নির্ঘাত রাগ করবেন! কী হলো যুবরাজ? কী এমন ভাবতেছ? কিছু করো। ‘ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে যুবরাজকে আদেশ করে বললেন তিনি। যুবরাজ ভাবনার রাজ্যে ব্যস্ত ছিল। উপদেষ্টার কথা শুনে নিজের মাঝে ফিরল সে। জবাবে কেবল বলল, ‘ এটা কারোর চাল। আমাদের এখানে আটকে রাখাটা কারও বড় কোনো মতলব আছে নিশ্চয়ই! প্রহরীদের এখান থেকে যাবার কোনো প্রশ্নই আসে না। তাছাড়া তারা সবাই জানে আমরা ভেতরে আছি। আর আজ হঠাৎ করে বাহির দিক থেকে প্রবেশদ্বার একেবারে আটকে দেওয়াটাও রহস্যময়! আপনি চিন্তা করবেন না। আমি দেখছি কী করা যায়! ‘ সান্ত্বনা দিতে কথাগুলো ব্যক্ত করে যুবরাজ। তবে প্রতিটি কথাই যুক্তির সহিত গম্ভীর ভাব নিয়ে উপস্থাপন করে সে।

প্রবেশদ্বারের সামনে এগিয়ে হাতের আঙুলগুলো নড়াচড়া করতে লাগল যুবরাজ রন ইওহার্ড। হাতের আঙুলগুলো নড়াচড়া করতেই জলরাশি ঢেউ খেলতে আরম্ভ করে। আচমকাই হাত দুটো দ্বারের দিকে তুলে একটা ঝাড়া দেয়। তৎক্ষণাৎ সময়ে হাতের সামনে জমাটবদ্ধ হওয়া জলরাশিগুলো প্রবেশদ্বারের উপর প্রবল বেগে আছড়ে পড়ে। পানির ঝাপটা দ্বার কুলোতে পেরে দ্বারের মধ্যস্থান থেকে ভেঙে দুভাগ হয়ে যায়। অবিলম্ব না করে ভাঙা প্রবেশদ্বার দিয়ে ঝটপট প্রান্তরের বাহিরে বেরিয়ে আসে দুজন। বাহিরে আসতেই নজর পড়ে দ্বারের কাছে মাটিতে পড়ে আছে প্রহরী দুজন। এ দেখে যুবরাজের মুখপানে তাকান উপদেষ্টা নিওরিয়ান। কিন্তু সেদিকে ধ্যান না দিয়ে যুবরাজ রন ইওহার্ড সোজা প্রাসাদের রাস্তা বরাবর হাঁটতে লাগে। তার পিছুপিছু এসে হাঁটতে লাগলেন উপদেষ্টা নিওরিয়ান। প্রাসাদের কাছাকাছি অবস্থানে উপস্থিত হতেই নজরে আসে লোক সমাগমের বিশাল ভীড়! এই ভীড় পেরিয়ে সামনে যাওয়া অসম্ভব! প্রাসাদের সামনের স্থানে কোথাও নতুন করে একজন লোকের উপস্থিতি জানান দেওয়ার মতো ফাঁকা স্থান নেই। পুরোস্থান জুড়ে মৎস্য মানব-মানবীদের ভীড়। সবাই রাজ প্রাসাদের দিকে অধিক আগ্রহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। কী ঘোষণা দেবেন রাজা অরগাড? সে বিষয় জানতেই সবার এত আকুলতা!

উনষাট.
প্রাসাদের ভেতরে কক্ষের মাঝে পায়চারি করছেন রাজা অরগাড। এখনো কেন যুবরাজ এলো না উক্ত বিষয় নিয়ে তিনি বেশ চিন্তিত তিনি। উৎফুল্ল হয়ে রাজা অরগাডের উদ্দেশ্য করে বলতে লাগল রাজকুমারী ডায়ানা। ‘ মহারাজ, ওই যে দেখুন, যুবরাজ রন ইওহার্ড এবং উপদেষ্টা নিওরিয়ান ভীড়ের একদম শেষ মাথায়। এখন কোনোভাবে ভেতরে আসতেও সক্ষম হবে না। তারচেয়ে বরং আপনি ঘোষণা দিয়ে দেন। আর ঘোষণার শেষ পর্যায়ে না হয় তাকে ডেকে নেবেন। তাছাড়া বাকি বিষয় নাহয় কাল দেখা যাবে। ‘ অলিন্দ দিয়ে উপস্থিত জনতার ভীড়ের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো ব্যক্ত করে সে। দ্রুত রাজকুমারী ডায়ানার সামনে অলিন্দে এসে উপস্থিত হন রাজা অরগাড। জানতে চেয়ে প্রশ্নসূচক বক্তব্য রাখেন রাজকুমারীর কাছে, ‘ কোথায় যুবরাজ? ‘ রাজা অরগাডের প্রশ্নসূচক বক্তব্যর প্রত্যুত্তরে ভীড়ের মাঝে হাতের ইশারা করে দেখায় রাজকুমারী। কক্ষে রানি নিয়ানো কেবল রাজা অরগাড এবং রাজকুমারী ডায়ানার কর্মকাণ্ডগুলো চুপচাপ দেখ যাচ্ছেন। তার কাছে এগুলো একদম বিরক্ত লাগছে! তবু নীরবে সয়ে যাচ্ছেন তিনি।

রাজা অরগাড ভীড়ের শেষ প্রান্তে যুবরাজ রন ইওহার্ড এবং উপদেষ্টা নিওরিয়ানকে দেখে মনে শান্তি ফিরে পান। দ্রুত কক্ষের প্রবেশদ্বারে এসে উপস্থিত হন। প্রবেশদ্বারে দুটো টোকা দিতে ওপাশ থেকে দ্বারের পাল্লা খুলে দেয় প্রহরী। দ্রুত পায়ে হেঁটে বাহিরে বেরিয়ে আসেন তিনি। বারান্দা দিয়ে হেঁটে চলতে লাগেন। চার তলার কক্ষের পাশে প্রাসাদ লাগোয়া তৈরি করা হয়েছে বিশাল এক মিনার। রাজ্যাভিষেক এবং রাজ্যের কোনো বিষয় নিয়ে ঘোষণা সেখান থেকেই দেওয়া হয়। মিনারের চূড়ায় রাজপ্রাসাদের নিচ থেকে ওঠা যায়। আবার রাজ প্রাসাদের চতুর্থ তলা থেকেও ওঠা যায়। রাজা অরগাড বারান্দা দিয়ে হেঁটে মিনারে চূড়ায় ওঠার প্রবেশদ্বারের কাছে এসে উপস্থিত হন। তার পেছন পেছন এসে উপস্থিত হয় চারজন সৈন্য। যারা সর্বদা তার নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত। প্রবেশদ্বার পেরিয়ে যেতেই উপরে ওঠার জন্য সিঁড়ি দেখা যায়। দ্রুত কদম ফেলে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগলেন। তাকে দেখেতে পেতেই প্রাসাদের নিচ থেকে মৎস্য মানবেরা চিৎকার করে সকলে অরগাড অরগাড রবরবা ধ্বনি তুলছে। কিছু মুহূর্ত সিঁড়ি চড়তে মিনারের চূড়ায় পৌঁছে যান রাজা অরগাড। রাজ্যের সবাই রাজা অরগাডকে দেখতে পেয়ে উল্লাসে ফেটে পড়তে লাগলেন।

মিনারের অবস্থান বিশাল বিস্তৃত স্থান নিয়ে তৈরি। মিনারের এক কর্ণারে এসে নিজের উপস্থিতি জানান দিয়ে সকল রাজ্যবাসীর উদ্দেশ্য করে হাত উঁচু করেন সংবর্ধনা জানান রাজা অরগাড। এতে করে পুনরায় সকলে অরগাড অরগাড করে গর্জন তুলে দেয়। হাতের আঙুলগুলোর ইশারা করে রাজা অরগাড তাদের থামতে বলামাত্র সবাই থেমে যান। পরিস্থিতি একেবারেই নীরব। এখানে যে হাজার-হাজার মৎস্য মানবের উপস্থিতি রয়েছে তা কেউ বুঝতে সক্ষম নন। সবাই অধীর আগ্রহে চেয়ে আছে রাজা অরগাডের মুখপানে। ভেবে পাচ্ছে না তারা, রাজা অরগাড কী এমন বলবেন যার জন্য তাকে এত ভাবতে হচ্ছে! সবার চিন্তার অবসান ঘটিয়ে একটি দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলতে আরম্ভ করলেন রাজা অরগাড,

‘ রাজ্যবাসীর সবাইকে আমার পক্ষ থেকে জানাই অভিবাদন। আজকে আপনাদেরকে একটা বিষয় অবগত করার জন্য সমবেত হতে বলা হয়েছে। রাজ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে পরবর্তী রাজা হবার কথা মহান রাজা প্রাসিয়োর সুপুত্রর। এতদিন রাজ্য চলানোর দায়িত্বভার আমার কাঁধে এসে ঠাই পেলেও এখন তার সঠিক পরিচালক এসে গেছেন। আপনাদের সকলের প্রিয় এবং মহান রাজা প্রাসিয়োর সুপুত্র রন ইওহার্ড! ‘ এতটুকু বলে থেমে যান তিনি। উপস্থিত জনতা সবাই অবাক চোখে রাজা অরগাডের দিকে তাকিয়ে তার বক্তব্যগুলো গভীরভাবে শ্রবণ করছিলেন। কী বলছেন রাজা অরগাড তা মাথার উপর দিয়ে সাঁইসাঁই করে উড়ে যাচ্ছে। বাকশক্তি হারিয়ে সবাই হতভম্ব ভঙ্গিমায় চেয়ে আছন। আচমকাই পুনরায় ভীড়ের মাঝে ডান হাতের তর্জনী আঙুল দিয়ে ইশারা করে রন ইওহার্ডের উদ্দেশ্য করে বললেন তিনি, ‘ রন ইওহার্ড। উপরে এসো। ‘ এই কথা শোনানাত্র উপস্থিত সকল মৎস্য মানব/মানবিরা হতভম্ব হয়ে যায়। এতক্ষণ যাবত তাদের মাঝেই দাঁড়িয়ে ছিল যুবরাজ রন ইওহার্ড! এ কথা যেন কোনোভাবে বিশ্বাস করে ওঠতে পারছিলেন না সকলে।

রাজা অরগাডের হাতের ইশারা করা ব্যক্তিটিকে পেছন দিকে ঘুরে তাকান উপস্থিত সবাই। কিন্তু সেদিকে পাত্তা না দিয়ে রন ইওহার্ডের হাত নিজের হাতে আকড়ে ধরে রাজপ্রাসাদের মিনারের দিকে আগাতে থাকেন উপদেষ্টা নিওরিয়ান। উপস্থিত জনতা দুই দিকে চেপে গিয়ে মিনারে ওঠার জন্য রাস্তা তৈরি করে দেয়। উপদেষ্টা নিওরিয়ান অর্ধেক পথ যুবরাজ রন ইওহার্ডের সাথে এসে থেমে যান। সেদিকে লক্ষ্য না রেখে নিশ্চুপ হয়ে নিজ মতো হাঁটতে হাঁটতে মিনারের প্রথম সিঁড়িতে পা রাখে রন ইওহার্ড। ধীর পায়ে হেঁটে সিঁড়ি বেয়ে মিনারের উপর দিকে ওঠতে থাকে। উপস্থিত জনতা সবাই চুপ হয়ে রাজা অরগাড এবং যুবরাজ রনকে দেখছেন। কিছুই মাথার আসছে না তাদের। সিঁড়ি বেয়ে কিছু সময় হাঁটতে রাজা অরগাডের কাছে এবং মিনারের চূড়ায় বিস্তৃত স্থানে এসে পৌঁছায়। মিনারের উপর দিকটা বেশ বড় করে তৈরি। প্রাসাদের একটি তলার স্থান নিয়ে তৈরি করা হয়েছে।

রাজা অরগাড মিনারের এক কিনারায় এসে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিচ্ছিলেন। রন ইওহার্ড সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে রাজা অরগাডের পাশে দাঁড়িয়ে ডান হাত উপর দিকে তুলে নাড়া দিতেই উপস্থিত জনতা উল্লাসে ফেটে পড়েন। চিৎকার করে সবাই একত্রে জপতে থাকেন ‘ রন ইওহার্ড, রন ইওহার্ড। ‘ সবাই যেন এতদিন পর তাদের মহান রাজা প্রাসিয়োকে পুনরায় খুঁজে পেয়েছে। রাজা অরগাড নিজের ডান হাত উঁচু করে আঙুলের ইশারায় সবাইকে শান্ত হতে বললেন। তার আদেশ মান্য করে উপস্থিত সবাই পুনরায় নীরবতা পালন করে রাজা অরগাডের দিকে তাকিয়ে রইলেন তার বলা বাকি বক্তব্যর জন্য। রাজা অরগাড আবার বলতে আরম্ভ করলেন,

‘ গত কয়েকদিন আগে যুবরাজ রন ইওহার্ডকে মৎস্য রাজ্যে আনা হয়। এবং রাজা হিসেবে প্রস্তুত করানোর সকল প্রশিক্ষণ শুরু করা হয়। তাছাড়া কিছুদিন পূর্বেই অনেকে অবগত আছেন রাজ্য থেকে যুবরাজ রন নামের একজন ছেলে পলাতক। বিষয়টি নিয়ে সকলের মনে প্রশ্ন জেগেছিল সেই আসলো কোথা থেকে! তাছাড়া যুবরাজই-বা কী করে! সেইদিনের সেই যুবরাজ রন নামের ছেলেটিই এই সেই যুবরাজ রন ইওহার্ড। এবং সে সেদিন রাজ্য ছেড়ে পালায়নি। বরং আমাদের বুঝার ভুল ছিল। যুবরাজ রন ইওহার্ড সেদিন ভোরে ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে প্রশিক্ষণে চলে যায়। কিন্তু তাকে রাজপ্রাসাদে না পাওয়াতে সন্দেহের সৃষ্টি হয়। তাই সেদিনের উক্ত ঘটনার সৃষ্টি! তাছাড়া আজ এগুলো জানানোর জন্য নয়। বরং আজকে আপনাদের বিশেষ একটি উপহার উপস্থাপনের জন্য ডাকা। আজকের প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে যুবরাজ রন ইওহার্ডের সকল কার্যকলাপ সম্পন্ন করা হয়েছে। আগামীকাল দ্বিপ্রহরের পূর্বেই আপনাদের প্রিয় মহান রাজা প্রাসিয়োর সুপুত্র সন্তানকে তার অধিকার ফিরিয়ে যথাযথভাবে দেওয়া হবে। এবং আগামীকাল রন ইওহার্ডের রাজ্যাভিষেক আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পন্ন করার মাধ্যমে রাজ্যের সকল দায়িত্বভার তার হাতে তুলে দেওয়া হবে। আরও একটি চমকপ্রদ অজানা এবং আনন্দের সংবাদ হলো, রাজা প্রাসিয়োর ইচ্ছে অনুযায়ী আগামীকালই আপনাদের বর্তমান রাজকুমারী ডায়ানের সাথে রাজা প্রাসিয়োর পুত্র যুবরাজ রন ইওহার্ডের বিবাহ সম্পন্ন করা হবে। রাজ্যবাসী, সবাই আনন্দ উপভোগ করুন। ‘ শেষ কথাটি আদেশের পাশাপাশি সাহায্যকারী হিসেবে বললেন।

কথাগুলো বলে রাজা অরগাড আর এক মুহূর্তে সেখানে অপেক্ষা না করে রন ইওহার্ডের বাম হাত তার ডান হাতে আকড়ে ধরে সিঁড়ির দিকে এগিয়ে যান। খানিকটা টানাটানি অবস্থাতেই সিঁড়ি বেয়ে প্রসাদের দিকে নামতে থাকেন। রাজ্যের সবাই আনন্দ উল্লাসে ফেটে পড়ছেন প্রায়। চাঞ্চল্যকর দুটি শুভ কাজ একত্রে সম্পন্ন করা হবে! কিন্তু সেদিকে ধ্যান না দিয়ে নিচে নামতে থাকেন রাজা অরগাড। তাদের পেছন পেছন নামতে থাকেন রাজা অরগাডের ব্যক্তিগতভাবে নিয়োগকৃত সৈন্য চারজন। একপর্যায়ে সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতে প্রাসাদের ভেতরে প্রবেশ করেন। বারান্দা দিয়ে হেঁটে রাজা অরগাডের কক্ষের কাছে এসে উপস্থিত হন তারা। কক্ষের সামনে উপস্থিত প্রহরীগুলো তাদের দেখে হন্তদন্ত হয়ে প্রবেশদ্বার খুলে দেয়। রাজা অরগাড এক মুহূর্ত দেরি না করে রন ইওহার্ডকে আকড়ে ধরে কক্ষের ভেতরে প্রবেশ করেন।

ষাট.
হন্তদন্ত হয়ে রাজা অক্টাইসের কক্ষে প্রবেশ করলেন অক্টোপাস ডারলেন। তাকে দেখে খানিকটা চমকিত হয়ে গেলেন রাজা অক্টাইস। তার এরকম অবস্থা দেখে মোটেও ভালো দৃষ্টিতে নিলেন না বিষয়টি। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে তার দিলে প্রশ্ন ছুড়ে দেন,
‘ কী হয়েছে ডারলেন? এভাবে ঘাবড়ে আছিস কেন? আর এত ঘামছিস কেন? ‘ চিন্তিত কণ্ঠে প্রশ্ন করলেন তিনি।
খানিক সময় জিড়িয়ে নিয়ে রাজা অক্টাইসের প্রশ্নের জবাব করলেন অক্টোপাস ডারলেন, ‘ মহারাজ, মারমেইড শহরে আগামীকাল নতুন রাজার রাজ্যাভিষেক করা হবে বলে জানিয়েছেন আমাদের এক চর। এছাড়া গতকালই রাজকুমারী ডায়ানার সাথে বিয়ে!’ এখনো হন্তদন্ত ভাব সম্পূর্ণ কাটেনি তার। তবু প্রশ্নের জবাব করতে বাধ্য হলেন।
‘ নতুন রাজা? রাজা অরগাডের কী হলো? আর নতুন রাজাটাই-বা কে?’ কিঞ্চিৎ হতভম্ব হয়ে প্রশ্ন রাখেন রাজা অক্টাইস। তিনি যেন কোনোভাবেই এই কথার উপর বিশ্বাস স্থাপন করতে পারছেন না।
‘ সমুদ্র শাসক মহান রাজা প্রাসিয়ো ইওহার্ডের ছেলে রন ইওহার্ড!’ এক দমে কথাটি ব্যক্ত করলেন অক্টোপাস ডারলেন। তার কণ্ঠস্বর এখনো কম্পন সৃষ্টি করে নির্গত হচ্ছে।
‘ কীহ? ‘ বিশ্বাস করতে পারলন না রাজা অক্টাইস। একটু ভাবুক হয়ে পুনরায় বলতে লাগেন তিনি,
‘ আমি যতদূর জানি, রাজা প্রাসিয়ো ইওহার্ড অনেক আগেই মারা গেছেন। প্রায় বিশ বছর পূর্বের ঘটনা। তবে নতুন করে তার ছেলে এলো কী করে? আর এতদিনই-বা কোথায় ছিল? ‘ হতচকিত হয়ে প্রশ্ন রাখলেন রাজা অক্টাইস।
‘ তা জানি না মহারাজ! ‘ হতাশায় ভারাক্রান্ত কণ্ঠে জবাব করলেন অক্টোপাস ডারলেন। প্রশ্নগুলোর তার আয়ত্ত না থাকাটাও খুব স্বাভাবিক একটি বিষয়।
‘ তবে তো খুব শীঘ্রই তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা সম্ভব। নতুন রাজা! রাজ্যভার সামলিয়ে ওঠতে বেশ সময়ের প্রয়োজন। আর এটাই হবে মোক্ষম সুযোগ।
তুমি এখন যাও। আর যাবার আগে সেনাপতিকে বলে যাবে, আমাদের সকল সৈন্যদের প্রস্তুত রাখতে। খুব শীঘ্রই আক্রমণ করব তাদের উপর। তবে তার আগে নতুন রাজাকে একটু ফুর্তি করতে দেয়া যাক। নয়তো মরেও শান্তি পাবে না। ‘

[– চলবে — ]

• প্রশিক্ষণ প্রান্তরের দ্বার বাহির থেকে আটকে দেওয়ার কারণ কী? এবং কার কর্ম এটা?
• রানি নিয়ানো বিরক্ত হয়ে দেখছিলেন কেন?
• রাজা অরগাড রন ইওহার্ডের হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলেন কোথায়?
• যুবরাজ রন ইওহার্ডের কি রাজকুমারী ডায়ানার সাথে বিয়ে দেওয়াটা ঠিক হবে?
•অক্টাইস কি আক্রমণ করতে সক্ষম হবে? নাকি অন্য কেউ করে ফেলবে?

বিঃদ্রঃ আজকের পর্বটি উঠাতে পাক্কা দুইদিন লাগছে। ৩৭০০+ শব্দ দিয়ে গঠিত আজকের পর্ব।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here