মন_বাড়িয়ে_ছুঁই ❤ #দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ . #পর্বসংখ্যা_২৭ . ( সমাপন ) #ফাবিয়াহ্_মমো .

0
1466

#মন_বাড়িয়ে_ছুঁই ❤
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ .
#পর্বসংখ্যা_২৭ . ( সমাপন )
#ফাবিয়াহ্_মমো .

মেহনূর স্থির হয়ে গেলো। বরফের মতো জমে গেলো। চোখের অবস্থা নিষ্পলক হলো। নোমান কেন সরি বললো? কোথায় যাচ্ছে সে? কিছু কি জানতে — । সাথে-সাথে দাঁত শক্ত করলো মেহনূর। ভেতরটা দুমড়ে-মুচড়ে তছনছ হয়ে যাচ্ছে। ধারণাটা সত্যি না-হোক। কোনোভাবেই সত্যি না-হোক। চোখ ঠেলে পানি চলে আসছে। বেlহায়া অশ্রুর কাছে ঝুঁকতে চায় না মেহনূর। দ্রুত নিজেকে সংবরণ করলো। নিচের ঠোঁটে শক্ত করে দাঁত বসালো। দূর্বল-ক্ষুণ্ন-ভঙ্গুর সত্তাকে অক্ষুন্ন-অটুট চেতনায় বদলে নিলো। নীতিকে নিয়ে জাফর উদ্দিনের কাছে বিদায় জানালো সে। বাইরের মানুষকে একচুল বুঝতে দেবে না, ভেতরটা কি হয়ে যাচ্ছে। যতই বুকের ভেতরটা খান-খান হয়ে যাক, আজ চূর্ণবিlচূর্ণ মেহনূরকে কোনোভাবেই প্রকাশ করবে না। গেটের কাছে দাঁড়াতেই সিএনজি ধরলো ওরা। কোয়ার্টারমুখো হতেই নীতির উদ্দেশ্যে বললো,

– কলটা কোত্থেকে দিয়েছিলো?

কন্ঠ শুনে বিষম খেলো নীতি। একটু যেন ঢোকও গিললো। মেহনূরকে নরম-শরম দেখতে-দেখতে এমন অভ্যাস হয়ে গেছে, আজ এই কাঠিন্য রূপটা নেওয়া যাচ্ছে না। নীতি কথাটা মিথ্যা বলবে কিনা একবার চিন্তা করলো। পরক্ষণে সেটা বাতিল করে নিচু গলায় বললো,

– কলটা সিয়াম ভাই দিয়েছে ভাবী।

উত্তরটা পছন্দ হলো না ওর। এটা জানতে চায়নি মেহনূর। সরাসরি নীতির দিকে তাকালো সে। এমন দৃষ্টিতে তাকালো, যেন ওই দৃষ্টির মাঝে টগবগে ক্ষোভ লুকিয়ে আছে। সিএনজির জালযুক্ত জানালা দিয়ে দমকা হাওয়া ঢুকছে। নীতি তখন মুখের উপর চুল সরাতে ব্যস্ত ছিলো, হঠাৎই ওমন চাহনি দেখে হাত থামিয়ে ফেললো। মেহনূরের দিকে আমতা-আমতা করে কিছু বলবে, মেহনূর ঠোঁটে আঙ্গুল বসিয়ে চুপ হতে বললো। নিজের দিকটা দুর্বোধ্য করে পরিষ্কার কন্ঠে বললো,

– কোনো মি:থ্যে না। আমি ভড়ং শুনবো না নীতি আপু। তোমার ভাই কোথায়? হাlসপাlতাlলে, না অন্যখানে? কলটা কোত্থেকে দিয়েছে? একটা কথাও মিlথ্যে বলবে না তুমি! কলটা কাটার পর যে অবস্থা হয়েছিলো, সেটা আমি দেখেছি। কাজেই —

নীতি স্তব্ধ চোখে তাকালো, দু’ঠোঁট ফাঁক করে চোয়াল ঝুলাতে লাগলো। কলের ব্যাপারটা কিভাবে আঁচ করলো কিছুই বুঝতে পারছে না। ওর এমন অদ্ভুত আচরণ সত্যিই ভয় ধরিয়ে দিচ্ছে। নীতি বিষ্ময় চোখে নিচু স্বরে বললো,

– তো-তো-তোমার বিহেiভিয়াiরটা অদ্ভুত লাগছে ভাবী। ইউ আর বিহেভিং লাইক এ্যা স্ট্র‍্যান্জার।

মেহনূর দৃষ্টি সরিয়ে সামনের পানে চাইলো। সি-এন-জিটা বেশ দাপটের সাথে ছুটছে। আজ স্পিড কমাতে বলার জন্য কেউ নেই। যেই শান্ত-নম্র পুরুষটা বেগতিক স্পিড দেখলে নোমানকে একচোট অ;পমাlন করে বসতো, সেই মানুষটা পাশে নেই। আম্মা যেদিন চলে গেলো, সেই দিনটা আবারও স্মৃতির দুয়ারে হাজির হচ্ছে। কলেজ থেকে প্র‍্যাকটিক্যাল খাতা সাইন করিয়ে কেবল বাড়ি ফিরলো। বাড়ির ভেতরে কতো কতো মানুষ! গিজগিজ ভীড়টা ঠেলে প্রবেশ করলো মেহনূর। এরপরই খাটের উপর নিlথর দেহটা দেখতে পেলো। গর্ভধারিণী ব্যক্তিটা আর নেlই। চারিদিকে মৃlত্যু-মৃlত্যু গন্ধটা যেন হাহাকার করছে। স্পর্শে-স্পর্শে যেন বুঝিয়ে দিচ্ছে, ‘ এবার তুই নিঃস্ব মেহনূর, এবার তুই একা। তোর পাশে বাবা নেই, তোর সাথে মা-ও নেই। যার মাধ্যমে দুনিয়ায় তুই এলি, তারাই তোকে এতিম বানিয়ে চলে গেলো। ‘ কলেজ থেকে ফিরেই প্রাণহীন শরীরটা ছুঁয়ে দেখলো। যেই মহিলার নাড়ি ছিঁlড়ে এই পৃথিবীর আলো দেখলো, সেই মহিলাই পৃথিবীর বুক থেকে দুঃখ বয়ে বিiদায় নিলো। আজও সেই ক্ষণটুকুর কথা মনে পরলে থরথর করে শরীর কাঁপে। যদি ওসময় মাহতিম না-থাকতো, যদি সে বুকের মধ্যখানে তার উষ্ণ আশ্রয়টুকু না-দিতো, যদি ভরসার হাত বাড়িয়ে আস্থা না-দিতো? তবে কি করতো মেহনূর? কি হাল হতো ওর? কেমন মানসিক দুরবস্থায় উপনীত হতো? নীতির মুখ থেকে কিছুই শুনতে চায় না। আজ নীতি চুপই থাকুক। মাথাটা ডানে হেলান দিলো মেহনূর। চোখদুটো বন্ধ করে পানি ছেড়ে দিলো। এই নীরবতার ভাষা সে কাউকে বোঝাতে পারে না। তার ভেতরকার কোনো অনুভূতি অপর মানুষকে বোঝাতে বড়ই অক্ষম। আজ নিজের উপর খুবই ধিiক্কার জন্মাচ্ছে। কেন এইরকম অন্তর্মুখী স্বভাবের বৈশিষ্ট্য পেলো? কেন এই অiভিশiপ্ত স্বভাবটা পেয়ে বসলো? আশেপাশের নিরঙ্কুশ মানুষ নির্দ্বিধায় মনের কথা ব্যক্ত করছে, নিজেকে হালকা করে নিচ্ছে, সবার সাথে মিলেমিশে যাচ্ছে, তবে সে কেন পারলো না? এইযে নীতি পাশে বসে আছে, সে তার কাছেও বলতে পারলো না। সে বলতেই পারলো না,

‘ তোমার ভাইকে আমার প্রতিটা মূহুর্তে দরকার নীতি আপু। আমার দাদা, আমার মা, আমার বাবার মৃjত্যু শুনেও যেই চোখ আমি ভিজাইনি, আমি হাউমাউ করে কাঁদিনি, আজ ওই মানুষটার মৃlত্যু সংবাদ শুনলে আমি মlরে:ই যাবো। আমি চিৎকার করে-করে কাঁদবো। আমাকে নিয়ে কে কি ভাববে, কে কোন নজরে দেখবে, আমি কোনো কিচ্ছু প:রো:য়া করবো না। আমাকে বুঝতে পারা সবচাইতে প্রাণের মানুষটা তিনিই ছিলেন, উনার কিছু হলে আমি কিছুতেই শান্ত হবো না। আমি নিজের কাছে নিজেকে থামাতে পারবো না আপু। আমি যথেষ্ট ভঙ্গুর, আমি নিঃস্ব, শুধু আমার বাইরের আবরণটুকু তাঁর পরশে শক্ত ছিলো ‘।

মেহনূর মনের কথাগুলো নিজের কাছেই রাখলো। মনের গোপন বাক্সে সযতনে ফেলে দিলো। চোখ বন্ধ করে ফিসফিস সুরে বললো,

– Being an introvert is a cur-se. Can’t tell anyone. Can’t explain anything. Our own people never understand us. People leave us alone. We lose them by mistake.

কথাটুকু শেষ হতেই গভীর দম ছাড়লো। বন্ধ চোখের পাপড়ি চুয়ে দু’ফোঁটা অশ্রু ঝরলো। আজ যে কি পরিমাণ ক;ষ্ট হচ্ছে, কি দুঃসহ য;ন্ত্র;ণার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে, একেকটি মূহুর্ত কিভাবে গুজরান করছে মেহনূর, কেউ জানে না। মনেহচ্ছে বুকের মধ্যে কোনো দা;নো ঢুকে তার ছোট্ট হৃদয়টা টুক:রো-টুক:রো করে দিচ্ছে। ধা:রালো ছু:ড়ি দিয়ে ক্রমাগত কুlপিlয়ে যাচ্ছে। মেহনূর চোখের উপর আঁচল চেপে কাঁপা-কাঁপা সুরে বললো,

– আমি ওখানটায় যেতে চাই নীতি আপু। তুমি ওখানটায় নিয়ে চলো।

পাশ থেকে নীতি ব্যথিত চোখে তাকালো। হাত বাড়িয়ে মেহনূরের মাথায় আলতোভাবে রাখলো। যতটুকু কোমল হলে একটা মানুষকে শান্ত করানো যায়, ততটুকুই নরম হলো নীতি। স্নেহার্দ্রের সুরে বললো,

– তুমিতো আমাদের আদরের মানুষ ভাবী। আমরা যাদেরকে ভালোবাসি, তাদের চোখে এতটুকু পানি দেখতে পারি না। তোমাকে যেমন চুপচাপ দেখে অভ্যস্ত, তেমনি তোমার হাসিতে আমরা খুশি হই। দুনিয়াতে কিছু মানুষ থাকে; যাদের মুখ, যাদের হাসি, যাদের একটুখানি আচরণ দেখলে মনটা শান্তিতে ভরে যায়। মনেহয় তাদের সঙ্গটা খুব মধুর। ওরকম মানুষের সান্নিধ্য পেলে জীবনটা সৌভাগ্যবান লাগে। তোমাকে পেয়ে শুধু মাহতিম ভাই না, আমরা সবাই সৌভাগ্যশালী। আজ যদি তুমিই এরকমটা করো, তাহলে কিভাবে হবে বলো? আমার ভাইটা তোমার আদর-যত্নে সামান্যতম খুঁত রাখেনি, তার সামনে তুমি এভাবে যাবে?

.
ঝড় আসার আগে প্রকৃতি ঠান্ডা হয়ে যায়। নিমিষের ভেতর নিজেকে শান্ত করে নেয়। যেন সবকিছু স্বাভাবিক এমনটাই বুঝিয়ে দেয়। অথচ প্রকৃতি আমাদের সাথে অদ্ভুত চাlতুlরী করে। আমাদের চোখে চরম ধূলো দিয়ে বসে। বিlপlদের বেলায় আরেক ঝাlমেলা ছুঁড়ে দেয়। আকাশটা গুড়ুম-গুড়ুম শব্দ করছে। চারপাশটা ঝুপ করে ঠান্ডা হয়ে গেছে। এমন ঘুটঘুটে অন্ধকার, কিচ্ছু দেখা যায় না। আকাশের বুক ফেটে ফর্সা আলো জ্বলছে। আবার দুম করে অকস্মাৎ নিভে যাচ্ছে। গাছের ডালপালাগুলো সাংঘাতিক শব্দ করছে। বাতাসের হৈ-হৈ হুঙ্কারটা কেমন যেন। স্থিরভাবে শুনলে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠে। হঠাৎ ‘ ঘেউ ঘেউ ‘ করে অসংখ্য কুকুর ডেকে উঠলো। শব্দগুলো একদম স্বাভাবিক ঠেকলো না। আজকের আবহাওয়াটা কেমন রহস্য করে আছে। কুহেলীর মতো ধোঁয়াটে, অন্ধকার। মালবাহী ট্রাকটা কয়েক গজ দূরে থেমে আছে। ঠিক সামনে উ:লটে দেওয়া গাড়িটা পরে আছে। নির্বিকার-স্থির গাড়িটার পানে চেয়ে আছে লোকটা। গাড়িটার সমস্ত কাঁচ ভেiঙ্গে চুরমার। সামান্যতম কাঁlচ অবশিষ্ট নেই। রাস্তায় টুকরো-টুকরো কাঁচের নিচে তরতাlজা রlক্তেlর ঢল। রlক্তেlর উপর একটি ক্ষlতবীক্ষlত হাত পরে আছে। ড্রাইভিং সীটে বসা মানুষটা তখনও যুlদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। রlক্তমাখা হাতের আঙ্গুলগুলো ক্ষীণভাবে নড়ছে। একটুখানি সাহায্য, একটুখানি আনুকুল্যের জন্য মানুষটা খুব ব্যাকুল। কতটা অমা:নুষি:ক য;ন্ত্র:ণায় মানুষটা কাlতরাচ্ছে। বাঁlচার জন্য কতটা আকুলিবিকুল করছে মাহতিম। মাথা ফে;টে সবটুকু রlক্ত যেন গলগল করে বেরিয়ে যাচ্ছে। শরীরের দা;নবীয় শক্তিটা একটু-একটু করে নিঃশেষ হচ্ছে। আরো কিছুক্ষণ প্রাণপণে যুঝতে থাকলো সে। দেহের রন্ধ্রে-রন্ধ্রে অসম্ভব ব্যiথা করছে। মাথার বাঁদিক থেকে ত;র;ল আঠালো বস্তুটা খুব নিঃসরণ হচ্ছিলো। চোখ খুলে রাখা দায় ছিলো। মৃlত্যুটা খুব কাছাকাছি, তবুও মাহতিম হার মানেনি। রlক্তে সারা শরীর ভিজে যাচ্ছে, তারপরও বদ্ধ গাlড়ির ভেতরে নড়চড় করেই গেছে। আর কটা মিনিট যlন্ত্রlণার সাগরে হাবুডুবু খেলো, এরপরই শরীরটা আচানক স্থিlর। আর কোনো নড়াচড়া নেই। রiক্তাiক্ত আঙ্গুলগুলোও আর নড়চড় করলো না। দৃশ্যটা দেখে পাlষাlণতুল্য শlয়lতানটা বি;শ্রীভাবে হাসলো। শlয়তাlনটা মনের আনন্দে কল বসিয়ে বললো,

– ম্যাডাম খেলমা শ্যাষ। ট্যাকা পয়সা রেডি করেন। আমি কইলাম ট্যাকা লইয়া দূরে যামু গা। আপনের লগে ক;ন্ট্যাlক্টের কাম কইলাম আজকাই শ্যাষ।

‘ ম্যাডাম ‘ ডাকা ব্যক্তিটা বেজায় খুশি হলো। ঠোঁটের কোণে আকাঙ্ক্ষিত হাসিটা মৃদ্যুভাবে ফুটালো। গম্ভীরতা বজায় রেখে সম্ভ্রন্ত সুরে বললো,

– চলে যাচ্ছো বলে আরেকটা কাজ করো। ট্রাlকটা ওর উপর দিlয়ে নিlয়ে যাও। চাlকা;র নিlচে ওর বlডিটা যেন থাকে। মটlমiট করে হাlড়-সহ খুlলিটা বেরিয়ে যাক, এটুকু পারবে তো? মাল-পানি আরো কিছু বাড়িয়ে দেবো।

আকাশটা চিৎ;কার দিয়ে উঠলো! ব:জ্রপাত শুরু হয়েছে। বাতাসের উত্তেজনা বহুগুণ বেড়েছে। যেকোনো মূহুর্তে দামামার সাথে বৃষ্টি হবে। শlয়তাlনটা বাতাসের জন্য চোখের সামনে হাত রাখলো। চোখকে ধূলো থেকে বাঁচিয়ে গাড়িটার পানে চাইলো। চোখদুটো বাড়তি টাকার জন্য চকচক করছে। নিচের ঠোঁটটায় জিভ বুলালো সে। শlয়lতাlনটা এখনো জানেই না কাকে পিlষlতে চাচ্ছে। যদি সে একটুখানি জানতো, লোকটার আসল পরিচয় কি, কি তার মূখ্য পেশা, তবে শlয়তাlনটা ভুলেও এই সাহস পেতো না। যদি একবার, শুধু একবার প্যান্টের লেফট পকেটে হাত দিতো, তবে রlক্তাlক্ত আইডিটা দেখতে পেয়ে জবাlন বlন্ধ হতো। কিয়ৎকাল ভাবলো শlয়lতাlনটা, বেপরোয়া কন্ঠে বললো,

– ঠিকাছে। করতাছি। হাlলায় তো মlইlরাlই গেছে, বাকি অদ্দুর কাম করতে সমুস্যা নাই।

মহিলাটা সম্মতি দিয়ে ফোন রাখলো। নিlষ্ঠুlরটা স্টিয়ারিং ধরে গাড়ি স্টার্ট দিচ্ছে। এবার রাlক্ষেlসের মতো বিশালদেহী ট্রাকটা এগুচ্ছে, গোগ্রাসে গিlলে ফেলার জন্য ভlগ্ন গাড়িটার দিকে ছুটছে। বজ্রপাতের ‘ গুড়ুম ‘ শব্দে ভূমিটা কেঁপে উঠলো। আকাশ থেকে একের-পর-এক বজ্রপাত হচ্ছে। শlয়তাlনটা যেই স্পিড বাড়াতে উদ্যত হলো, ওমনেই দূর থেকে জ্বলজ্বলে কিছু দেখতে পেলো। দ্রুত ব্রেক কষলো সে! ওটা কি জ্বলছে? দূর থেকে কিছু তো একটা আসছে। দু’সেকেন্ডের জন্য স্থির হলো সে। তুমুল বৃষ্টির জন্য আবছা দেখাচ্ছে। আরো কিছুক্ষণ দ;ম বন্ধ করে চেয়ে রইলো। এরপরই বিস্ফোরিত নেত্রে বিড়বিড় করে বললো, ‘ সর্বনা;শ! আয়হায়, গাড়ি আইতাছে দ্যাহি! ‘। কথাটা শেষ করতে দেরি, ওমনেই অস্থির হলো সে। উলটানো গাড়িটার পানে ভীতুভাবে চাইলো। এটাকে ভাগ্য বলা উচিত, নাকি দূlর্ভাগ্য? তাড়াতাড়ি ট্রা;কটা ব্যাকে নিতে লাগলো। সম্পূর্ণ ট্রা;ক ঘুরিয়ে অন্য রাস্তায় ছুটালো। বৃষ্টি তখনও থামেনি। আকাশ তখন গর্জন কমায়নি। বৃষ্টির পানির সাথে লাlলlচে স্রোত যাচ্ছে। দূর থেকে আগত গাড়িটা দুর্দম্য গতিতে ব্রেlক কষালো। মাঝপথে থামার কারণে প্রবল ঝাঁকুনি খেলো। সামনের দৃশ্য দেখে ড্রাইভারটা ভ্রুঁ কুঁচকে বললো,

– সামনে একটা গাড়ি উlলlটে আছে। সাগ্রত স্যার, সামনে একটা গাড়ি…গাড়ির জন্য রাস্তা ব্ল;ক!

বজ্রপাতের ফর্সা আলোয় চারপাশটা কয়েক সেকেন্ডের জন্য উজ্জ্বল হলো। সাগ্রত একপলকের জন্য গাড়িটা দেখতে পেলো। ওই মর্মান্তিক দৃশ্য দেখে জমে গেলো সাগ্রত। কান থেকে ফোন নামাতে-নামাতে অস্ফুট স্বরে বললো,

– মা-মা-হতিম স্যার —

চকিতে পিছু তাকালো ড্রাইভার। সাগ্রতের মুখে ওইটুকু নাম শুনে ভীষণ চমকে গেলো সে। তাড়াতাড়ি ধাক্কা মেlরে গাড়ির দরজা খুলে ফেলে। পেছন থেকে সাগ্রতও বেরিয়ে আসে। দুজনই হড়বড় করে ছুটে যায়। বৃষ্টির মধ্যে গাড়ির কাছে পৌঁছায়। পুরো রাস্তা লাlলবর্ণে ভেসে গেছে। পায়ের নিচে ‘ থপথপ ‘ শব্দের পানিটা পুরোই লাlল। বৃষ্টির পানির সাথে মিলেমিশে একাকার। সাগ্রত প্রচণ্ড ভয়ে শিউরে উঠলো। ড্রাইভারকে তাড়াহুড়ো করে গাড়ির দরজা খুলতে বললো। রাস্তায় হাঁটু গেড়ে ভেতরটায় চোখ দিলো সে, করুণ অবস্থা দেখতে পেয়ে চ্যাঁচিয়ে উঠে,

– ইকরাম, জলদি! অবস্থা ভালো না। তাড়াতাড়ি সীটবেল্ট কাlটো, দেরি কোরো না। সময় নেই। এখনই বের করতে হবে।

ড্রাইভারটা পকেট থেকে এ্যান্টি-কাlটার বের করে। ঘচঘচ করে মোটা সীটবেল্টটা কাlটে। সাগ্রত এই সুযোগে ধ;রাধরি করে বের করলো। মাহতিমের হাতটা কাধে তুলে গাড়িতে নিয়ে বসালো। ইকরামও দেরি না-করে গাড়ি স্টার্ট দেয়। এক ধা;ক্কায় স্পিডের সীমা সত্তর প্লাস তুলে। পেছন থেকে সাগ্রত অস্থির আচরণ করছে। মাহতিমকে জাগানোর জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বারবার চিৎকার করছে সে,

– স্যার, চোখ খুলুন! আপনি কি কিছু শুনতে পাচ্ছেন?

সাড়াশব্দ নেই। রlক্তে নরম গদিটা ভি;জে যাচ্ছে। এখনো ব্লিlডিং হচ্ছে। গায়ের নেভি শার্টটা আস্ত নেই। একবারের জন্যও সাড়া দেয়নি। সাগ্রত কানে ফোন লাগিয়ে জায়গামতো কল বসালো। ড্রাইভারটা সামনে থেকে বললো,

– স্যার, কোথায় নিবো?

সাগ্রত চুপ রইলো। ভাবনার জন্য সময় নিলো। এরই মধ্যে কলটা রিসিভ হলো। সে উৎকণ্ঠার সাথে বললো,

– হ্যালো, অশোক স্যার, জ্বী; মাহতিম স্যারকে পেয়েছি। অবস্থা ভাlলো না। এ্যাটেম টু মাlর্ডাlর। গাড়ি উlলটে ছিলো। আমি স্পlটে যেয়ে উlদ্ধাlর করলাম। মাlরাlত্মক ব্লিlডিং হচ্ছে! কোথায় নিবো?

ঠিকানাটা চুপচাপ শুনে নিলো। সে কলটা কেটে দিলো। বাইরে ঝড়ো-বৃষ্টি হচ্ছে। এদিকে মাহতিমের অবস্থা খুবই খারাপ হচ্ছে। একটান দিয়ে মাহতিমের সৌষ্ঠব্য বুক থেকে শার্ট খু:লে ফেললো। রlক্তে ভেজা শরীরে তুলোর ডলা পাকিয়ে মুছলো। হঠাৎ কি ভেবে বাঁ হাতের কবজিটা টেনে আনলো সে, নাড়ি পরীক্ষার জন্য স্থির হতেই চিৎকার দিয়ে বললো,

– ও মাই গড! ইকরাম তাড়াতাড়ি করো, নি;শ্বাস স্লো হচ্ছে।

চলমান .

#FABIYAH_MOMO .

#নোটবার্তা : লেখায় ভুল-ত্রুটির জন্য ক্ষমা চাই। ❤

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here