অপেক্ষার_বৌ,৪ [অন্তিম]

0
674

#অপেক্ষার_বৌ,৪ [অন্তিম]
#Tahmina_Akther

—আপনার মোবাইলটা আমাকে দিবেন? একজনের কাছ থেকে খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু জানার আছে আমার ।

সিঁথির অনুরোধ শুনে পাঞ্জাবির পকেট থেকে মোবাইল বের করে এগিয়ে দেয় সাজিদ।সিঁথি মোবাইল হাতে নিয়ে টেবিল ছেড়ে উঠে গেল একটু দূরে। যেখান থেকে সাজিদ হয়তো সিঁথির ফোনের আলাপন শুনতে পাবে না।

সিঁথি কল করলো কাঙ্ক্ষিত নাম্বারে।প্রথমবার কল রিসিভ না হলেও দ্বিতীয়বার কল রিসিভ হয়। ওপাশ থেকে কেউ হ্যালো বলতেই সিঁথি প্রশ্ন করে,

—মা, একটি বিয়ের ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রীর করণীয় কি? মানে হচ্ছে বিয়ের সম্পর্কে একটা মেয়েকে সবসময় কেন সেক্রিফাইস করতে হয়?কেন ছেলেরা সেক্রিফাইস করে না? আর, মনের কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিকে পেয়ে গেলে বিয়ের অনেক বছর পর সেই আগের মতো ভালোলাগা থাকে না, কেন?

মেয়ের কাছ থেকে এমন প্রশ্ন পেয়ে অনেক অবাক হলেন আফরোজ। নাম্বার দেখে ভেবেছিলেন হয়তো সাজিদ কিছু বলতে চায়। তাই হয়তো কল করেছে।কিন্তু, এখন কল রিসিভ করার পর মেয়ের কন্ঠ পেয়ে যতটা অবাক হয়েছেন তারচেয়ে বেশি বিস্মিত হয়েছেন। সিঁথির আফরোজ নরম গলায় মেয়েকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

—স্বামী-স্ত্রী মানে হচ্ছে এক অন্যরকম সম্পর্ক। আল্লাহ তাআ’লার সৃষ্টির মধ্যে সবচেয়ে বেশি অবাক করা সম্পর্ক হলো স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক। একটি মেয়ে স্ত্রী হিসেবে যতটা সেক্রিফাইস করে ঠিক ততটাই সেক্রিফাইস করে একটি ছেলে স্বামী হিসেবে। যেমন: বাবা-মা তাদের সন্তান, সন্তান তাদের বাবা-মাকে, ভাই বোনকে যতটা ভালোবাসা এবং অর্থনৈতিক দিক দিয়ে সাহায্য করে। ঠিক ততটাই একজন স্বামী তার স্ত্রীর জন্য বরাদ্দ করে। অথচ,এই স্ত্রী বিয়ে হবার আগ পর্যন্ত তার কাছে ছিল সম্পুর্ণ অচেনা একজন মানুষ। স্ত্রীর জন্য অগণিত ভালোবাসা, তাকে আরও একটু ভালো রাখার প্রচেষ্টায় কত কিছুই করা হয় !স্ত্রীদের কথা বলতে গেলে, একজন পুরুষের জীবনে একজন নারীর ভূমিকা অনেক। ভিন্ন ভিন্ন ভালোবাসার জন্য আল্লাহ ভিন্ন ভিন্ন সম্পর্ক তৈরি করেছে।বাবা-মায়ের প্রতি সম্মান আর ভালোবাসা এক রকম। ভাইবোন,সন্তান-সন্ততিদের প্রতি ভালোবাসা এক রকম। স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসা অন্যরকম।স্ত্রীর জীবনে এমন একজন বিশ্বস্ত ভালোবাসার মানুষ প্রয়োজন, যার হাতে হাতে রেখে এই পৃথিবীর বুকে হাজারো বাঁধা উপক্রম করে, হাসিমুখে এগিয়ে যাওয়া যায়। একটি মেয়ের জীবনে তার বাবা প্রথম স্থান হলেও স্বামী নামক মানুষটা দ্বিতীয় স্থানের। পৃথিবীর আলো দেখার পর থেকে যাদের দেখে মেয়েরা এই পৃথিবীর সকল সম্পর্ককে বুঝতে শেখে ঠিক সেসময় সমাজ বা ধর্মীয় নিয়ম মেনে অন্য কারো ঘরের ঘরণী হয়ে পুরনো সব সম্পর্ককে পেছনে ফেলে আগামীদিনের সম্পর্ককে কান্নার দ্বারা বরণ করে নেয়। একটা মেয়ে তার সব তিক্ত অভিজ্ঞতা, বাবা-মায়ের কাছ থেকে বিচ্ছেদের ঘটনা সব ভুলে যাবে, যখন স্বামী নামক মানুষটা ভালো হয়, যত্নশীল হয়।

—-স্বামী নামক মানুষটা যদি তার স্ত্রীর একটা নিজস্ব স্বপ্ন আছে জানতে পারে তখন, কি সে তার স্ত্রীর সেই স্বপ্নকে নিজ হাতে পূরণ করতে সাহায্য করবে নাকি বলবে পুরনো সব ভুলে গিয়ে নতুন সম্পর্ককে এখন থেকে গোছানো শুরু করো?

—এটা ডিপেন্ড করবে জীবনসঙ্গী কেমন হবে?স্বামী যদি মনে করে তার স্ত্রীর স্বপ্ন মানে তার স্বপ্ন তাহলে সে অবশ্যই পূরণ করতে সাহা্য্য করবে।

মেয়ের প্রশ্ন শুনে আবারও মুচকি হেঁসে জবাব দেয় আফরোজ।

—মা, আমি আমার উত্তর পেয়ে গেছি। তোমাকে অনেক অনেক উম্মাহ। শুধু দোয়া করো যেন তোমার সিথিঁ জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষটাকে সঠিকভাবে নির্বাচন করতে পারে সঙ্গে নিজের স্বপ্নকেও।

—ইনশাআল্লাহ। দোয়া করি, তুই যেন নিজের ভালোটা বুঝতে পারিস।

সিঁথি কল কেটে দিয়ে আবারও টেবিলের কাছে ফিরে যায়।সাজিদের দিকে মোবাইল এগিয়ে দিয়ে সিঁথি বলে,

—আপনি আমার বয়স থেকে অনেক বড়ো। আপনার আমার পরিবারের লোকেরা নিজেদের মাঝে যে ওয়াদাবদ্ধে আবদ্ধ হয়েছিল তা কিন্তু আমি ঘুনাক্ষরেও জানতাম না। আমি আমার বাবা-মায়ের সিদ্ধান্তকে অনেক সম্মান জানাই। আমার বাবা-মা একবারও আমাকে জোর দিয়ে বলেনি সিঁথি তুমি আমাদের ওয়াদা রক্ষা করো। বরং,আমাকে বারবার এটা বুঝাতে চেস্টা করছে,সিঁথি তোমার লাইফের তুমি যা ডিসিশন নিবে আমরা তোমার সাথে আছি। আমিও চাই আমার বাবা-মায়ের ওয়াদা পূরণ করতে। কারণ, মানুষ হিসেবে আমি খুবই অনেস্ট। আমার দ্বারা প্রতারণা সম্ভব নয়। সেই আমি কি করে আমার কারণে আমার বাবা-মাকে মানুষের সামনে ওয়াদা ভঙ্গকারী হিসেবে দাড় করাবো?

—তারমানে, তুমি আমাকে বিয়ে রা..জি হয়েছো?

সাজিদ কম্পিত গলায় জিজ্ঞেস করে সিঁথিকে। সিঁথি মুচকি হেসে উল্টো সাজিদকে প্রশ্ন করে,

—কেন, রাজি না হলে খুশি হতেন?

—না, ঠিক তা নয়। কিন্তু, তোমার পড়াশোনা?

—বিয়ের পরেও পড়াশোনা করা যায়।আপনি একটু সহযোগিতা করলে আমি আমার বাকি পড়াশোনা কমপিল্ট করতে পারব।

—একটা অনুরোধ রাখবে, সিঁথি?

সাজিদের কথা শুনে সিঁথি স্থীর হয়ে গেলো তারপরও মাথা নাড়িয়ে বললো,

—বলুন।

সিঁথি চুপ করে অপেক্ষা করছে সাজিদ কি বলবে তা শোনার জন্য। সাজিদকে দেখে মন হচ্ছে সে খুব গুরত্বপূর্ণ কিছু বলবে। সাজিদ এবার জোড়ে শ্বাস ফেলে বলতে শুরু করলো,

—আজ থেকে অনেক বছর পর আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই। যখন তোমার এই কালো দুচোখের গভীরতায় আত্মতুষ্টি থাকবে তোমার স্বপ্ন পূরণের। আমি তোমার কথা জানার পর থেকে মনে থেকে চাইতাম তুমি যেন অন্ততপক্ষে আমাকে বিয়ে করার জন্য রাজি হও।এখন যেহেতু রাজি হয়েছো, তবে একযুগ তোমার জন্য অপেক্ষা করা আমার জন্য কোনো ব্যাপার না। কারণ, মনের কোনো এককোনায় সুক্ষ্ম আশার আলো আছে, সিঁথি আমাকে বিয়ে করবে যখন ওর স্বপ্ন পূরণ হবে। আমি চাই না এবং চাইব না এখন তোমাকে বিয়ে করতে। কারণ,তুমি যতই হাসিখুশি হয়ে আমার সঙ্গে সংসার করলে, পড়াশোনা করলে কিন্তু সেই আগের মতো আনন্দ খুঁজে পাবে না। কারণ, তোমার মন তখন কোনো কারণ ছাড়াই বলবে, সিঁথি তুমি কারো ওয়াদা রক্ষা করার জন্য সংসার করছো। সমাজ যাতে আমার বা তোমার দিকে আঙুল তুলতে না পারে। সিঁথি, সেই অপেক্ষাটুকু করতে দাও আমায়। আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করতে চাই। আমাদের বিয়ের পর আমি তোমার দুচোখে তাকিয়ে আমার জন্য ভালোবাসা দেখতে চাই, স্বপ্ন হারানোর বেদনা দেখতে চাই না। তুমি না হয় আমার অনেক অপেক্ষার বৌ হলে, সিঁথি।

সিঁথি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সামনে বসা যুবকের দিকে। শ্যামবর্নের এই মানুষের মুখটা হঠাৎ করে এত মায়াময় দেখাচ্ছে কেন?

৫.

পরিশিষ্ট….

সেদিন সাজিদের অনুরোধ ফেলতে পারেনি সিঁথি। সাজিদ নামক মানুষটা হুট করে ওর জীবনে আসার পর মনে হচ্ছিল এই বুঝি সংসার নামক বেড়ি সিঁথির পায়ে পরানো হবে। কিন্তু সেই ভাবনাকে মিথ্যে করে দিয়ে সাজিদ এসে হাল ধরেছে ওর স্বপ্ন পূরণের ইচ্ছাকে বাস্তবে রুপান্তরিত করতে।

সেদিনের পর সাজিদের সামনাসামনি বসে কথা বলার সুযোগ হয়নি সিঁথির।যোগাযোগ বলতে মাসে দু’বার চিঠি লেনদেন হয়। চিঠির দেয়া নেয়ার পিয়ন হচ্ছে সাজিদের দাদাজান শেখ আইয়ুব।

প্রথম যেদিন সাজিদের দেয়া প্রথম চিঠি পেলাম সেদিন ভীষণ অবাক হয়েছিলাম। কারণ, একবিংশ শতাব্দীতে এসে কারো কাছ থেকে যোগাযোগের মাধ্যমে হিসেবে চিঠি পেয়েছি এটা কম আশ্চর্যের বিষয় নয় কি?

চিঠিতে লেখা তিন লাইন

“সিঁথি,

আজ সাতদিন, দশঘন্টা, নয়মিনিট,উনপঞ্চাশ সেকেন্ড অপেক্ষা করার পর, অধৈর্য হয়ে পরেছি আমি। তবুও,অপেক্ষা করবো আমি তোমাকে পাবার আশায়।আমার বিশ্বাস তুমি আমার এই অপেক্ষার দাম দিবে চড়া ভালোবাসা দিয়ে।”

চিঠিতে লেখা এই তিনটি লাইন আমাকে অপেক্ষায় বেঁধে ফেললো।সাজিদের অপেক্ষায়। এ’কবছরে সাজিদের পাঠানো অসংখ্য চিঠি পড়ে কখনও, আমি সুখের অনুভূতিতে গা ভাসিয়েছি আবার কখনো চিঠির দু’লাইন পড়তে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পরেছি।লোকটা এত ভালোবাসে কেন আমায়? কে, বলেছে তাকে আমার জন্য অপেক্ষা করতে?কেন, সেধে এসে আমার কাছ থেকে অপেক্ষা করার জন্য অনুরোধ চাইলো?

অনেকগুলো বছর অতিক্রম হবার পর এক বর্ষারাত্রীতে লাল জামদানী গায়ে জড়িয়ে সিঁথির বিয়ে সম্পুর্ন হয় সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত সাজিদের সঙ্গে।

সিঁথি আড়চোখে তাকিয়ে আছে সাজিদের মুখের দিকে।ইশশ্, লোকটা কি আগের থেকে আরও বেশি সুন্দর হয়ে গিয়েছে!এই যে থুতনিতে একটা গাঢ় কালো তিল ছিল, এটা তো ঘন দাঁড়ির মাঝে হারিয়ে গেছে। তবুও,যেন দেখতে কোনো অংশে কম দেখাচ্ছে না।কে বলেছে, উনার বয়স হয়েছে। আমার থেকেও উনাকে এখনও বেশ স্মার্ট দেখাচ্ছে।

সাজিদের দাদা শেখ আইয়ুব আর ওর মা রমু বাড়ির পথে রওনা হয় বৃষ্টি মাথায় নিয়ে। কারণ নতুন বৌকে আগামীকাল ধুমধাম করে বরণ করে নিতে হবে যে।

প্রত্যেক নতুন বৌ নাকি তার স্বামীর জন্য বাসর ঘরে বসে অপেক্ষা করে। কিন্তু সিঁথিকে আজ সেই অপেক্ষাটুকু করতে হবে না। কারণ, সাজিদ ওদের বিয়ে হবার পর থেকে সিঁথির হাত নিজের হাতের মাঝে নিয়ে রেখেছে। সিঁথি কয়েকবার হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করেছিল কিন্তু সাজিদের জন্য পারেনি। বাকি যারা গেস্ট ছিল উনারা চলে যাবার সাজিদের হাত ধরে সিঁথি এগিয়ে চললো ছাঁদের চিলেকোঠায়।

বাসররাতের আয়োজন করা হলো সিঁথিদের ছাঁদের চিলকোঠায়। ঘর সাজানো বলতে খাটের চারকোনায় চারটি গোলাপ ফুল টেপ দিয়ে লাগানো।তবুও, বেশ অদ্ভুত চমৎকার লাগছে দেখতে।সাজিদ এখন সিঁথির হাত ধরে রেখেছে। সিঁথি চিলেকোঠার ঘরে ঢোকার পর আলতো করে সাজিদের বুকে মাথা রাখলো। সাজিদের এতদিনের শূন্য বুকের খাঁচায় সিঁথির পরশ পেয়ে মূহুর্তের মাঝে ভরে উঠলো।সাজিদ পরম আবেশে বুকে জড়িয়ে নেয় সিঁথিকে। কিছু সময় পর সাজিদ আবিষ্কার করে, ওর বুকে ভিজে যাচ্ছে। প্রথমে ভেবেছিল হয়তো চিলেকোঠার টিনের চালের কোনো ফুটা দিয়ে বৃষ্টির পানি পরছে কিন্তু পরমুহূর্তে খেয়াল করলো, সিথিঁ কেঁপে উঠছে। সাজিদ সিঁথির মুখ নিজের দু-হাত দিয়ে আগলে নিয়ে দেখল,সিঁথির দুচোখ ভেজা। সাজিদ সিথিঁর চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো,

—কান্না করছো কেন?আমার কোনো আচরণে কষ্ট পেয়েছো? বলো না সিঁথি কি হয়েছে?

—আ..পনি বড্ড পাষাণ একটা লোক। এতটা দিন আমার জন্য কে বলেছে আপনাকে অপেক্ষা করতে? কতবার বলেছি চলুন বিয়ে করে ফেলি?কিন্তু, না তিনি তো আমার থেকে আমার স্বপ্নকে নিয়ে পরে ছিলেন।

—সেদিন যদি বিয়ে করে ফেলতাম তবে আজ, আমার বুকে কে মাথা রেখে অভিমান নিয়ে কান্না করতো?আজ রেজাল্ট বের হলো আর আজই আমাকে ডেকে এনে বিয়ে করে ফেলললো। ভাবা যায় আমার সিঁথি আমাকে বিয়ে করার জন্য কত পাগল হয়েছিলো!

ঠাট্টার সুরে কথাগুলো বললো সাজিদ যাতে করে সিঁথির মনটা ভালো হয়।

—আজ বিয়ে করেছি বেশ করেছি। নয়তো, বিয়ের বিভিন্ন ফ্যাংশান করতে করতে একমাস লেইট হতো।

অভিমানী কন্ঠে কথাগুলো বলে সাজিদের হাত ধরে মাথানিচু দাঁড়িয়ে রইলো সিঁথি।

—আমাকে ভালোবাসো সিঁথি?

সাজিদ নেশাক্ত কন্ঠে সিঁথির কাছ থেকে জানতে চাইল ভালোবাসার কথাটা। সিঁথি সাজিদের মুখের দিকে একপলক তাকিয়ে আবারও মাথা নিচু করে বললো,

—আমি জানি না আমার আপনার প্রতি অনুভূতির নাম ভালোবাসা কি-না? তবে,আমি এই পৃথিবীতে যতদিন বাঁচব ঠিক ততদিন আপনার সাথে থাকতে চাই। সেদিন আপনি বলেছিলেন না, সিঁথি আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করতে চাই। অথচ,সেদিন সাজিদের সাথে সাথে সিঁথির অপেক্ষাও শুরু হয়েছিলো। কি এক অজানা বন্ধনে আপনি আমায় আঁটকে ফেললেন আমি জানি না ! প্রতিটা দিন, প্রতিটাক্ষণ আমার মন বলতো, সিঁথি তোমার জন্য কেউ অপেক্ষা করছে। আমার পরিবারের সবাই ঘটা করে বলতে লাগলো, সিথিঁর জন্য সাজিদ অপেক্ষা করছে। অথচ, কেউ জানতো না সিঁথিও সাজিদের অপেক্ষায় আছে। অপেক্ষা করতে করতে আজ কতগুলো বছর চলে গিয়েছে। আমার স্বপ্ন পূরণের ফলাফল আজ এলো। তাই আমার জীবনের স্বপ্নপুরুষকে অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে আমার জীবনের সাথে বেঁধে রাখলাম। তাকে রেখে আর একমুহূর্তের জন্য আমি কোথাও যাব না। ঢের শিক্ষা হয়েছে আমার। কারো অপেক্ষায় থাকা অনেক কষ্টের।

—হয়তো এর আগে কখনো তোমাকে সেভাবে বলা হয়নি। শুধু বলেছি, সিঁথি আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করি। কিন্তু, আজ বলব সিঁথি “ভালোবাসি” তোমায় অনেক।

কথাটি বলে সিঁথির ডানহাতের উল্টোপিঠে চুমু এঁকে দেয় সাজিদ। সিঁথি চোখ বন্ধ করে সাজিদের দেয়া প্রথমবারের এই স্পর্শকে খুব ভালো করে অনুভব করছে। অনুভবের সময়টাতে সিঁথি সাজিদকে বলে,

—আমি আপনাকে এর চাইতে আরও অনেক বেশি ভালোবাসতে চাই। দিবেন তো আমাকে সেই সুযোগ?

সিঁথির কথায় আজ সাজিদের অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করছে। এই যে এতবছরের করা অপেক্ষার দাম আজ সিঁথির কথায় চুকে গেলো।সাজিদ তো এটাই চেয়েছিল, সিঁথি যেন তাকে ওয়াদার বিয়ে আর দায়িত্বের সংসারে মতো করে না সামলায় । সে চেয়েছিল সিঁথি যেন তাকে ভালোবেসে আগলে রাখে ঠিক যেমনটা সাজিদের স্বপ্নে সিঁথি আসত। সেই স্বপ্নগুলো পূরণ করার জন্যই তো সাজিদ অপেক্ষা করেছে। সিঁথির জন্য সাজিদের অপেক্ষা আজ স্বার্থক। আজ পুরো পৃথিবীকে জানিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে সাজিদের,

” আজ আমার এতদিনের অপেক্ষা শেষ হয়েছে। শুনছো পৃথিবীবাসী? সিঁথি আমার অনেক অপেক্ষার বৌ।”

অপেক্ষা নামক শব্দকে বিদায় দিয়ে আজ তারা একে অপরের অনেক কাছাকাছি অবস্থান করছে।কারো ওয়াদার কারণে আজ দু’জন দুজনের কত কাছে!যদি ওয়াদা না হতো তবে এই দু’জন কি কখনো দুজনের এত পরিচিত হতো?

বর্ষার অঝোর বর্ষনের টুপটাপ ফোঁটায় শব্দের তরঙ্গ মিশে যে প্রতিধ্বনি হয়, সেই শব্দের তালের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে ভালোবাসাময় দু’জন নর-নারীর একে অপরের কাছে আসার কিছু মধুময় সময়।

….সমাপ্ত….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here