আমার তুমি – ৩য় পর্ব

0
608

রাতে বুদ্ধি খাটিয়ে তুলতুল সুমুর সাথে ঘুমায়। সুমু সাধারণত কারো সাথে বেড শেয়ার করে না। কিন্তু তুলতুল যখন কাঁদো কাঁদো ফেস করে বললো ওর মাথা ব্যাথা করছে। তখন থাকতে দেয়।
তুলতুল খুশি হয়ে সুমুকে জড়িয়ে ধরে।

“ওই সাদা বিলাইকে দিয়ে বিশ্বাস নেই। হতে পারে মাঝ রাতে আমার রুমে ঢুকে আমার মুখের মধ্যে বরফ দিয়ে চলে গেলো। নাহলে তেলাপোকা দিয়ে চলে গেলো। তখন কি হবে?
তার থেকে ভালোই হয়েছে সুমুর সাথে ঘুমিয়েছি। কতো বুদ্ধি আমার।
তুলতুল নিজেকে বাহবা দিয়ে বলে
ওই সাদা বিলাইকে দেখে নেবো। কাঁকের মতো চুলগুলো টেনে বাঁদরের মতো বানিয়ে দেবো। চেনে না তো আমাকে।
ঠোঁট মেলে হেসে ঘুমিয়ে পড়ে তুলতুল।

প্রতিদিনকার মতো আজকেও ফজরের আজানের শব্দে ঘুম ভেঙে যায় তুলতুলের। ফ্রেশ হয়ে নামাটা পড়ে নিজের রুমে চলে যায়।
লাইট জ্বালিয়ে বিছানায় বসতেই খেয়াল হয় বিছানাটা ভেজা।
তুলতুল ভ্রু কুচকে তাকায় বিছানার দিকে। বিছানার চাদর সরিয়ে দেখে সেখানে পলিথিনের ওপর বরফ রাখা।
বিশ্ব জয়ের হাসি দেয় তুলতুল।
” ঠিক জানতাম লোকটা এমন কিছু করবে। বিচ্ছু একটা। ইচ্ছে করছে গলা টিপে দেই।

তুলতুলও কম যায় কিসে? পলিথিনসহ বরফ গুলো তুলে নেয়। তারপর দৌড়ে বাগানে চলে যায়। বাগান থেকে সায়ানের রুমটা স্পষ্ট দেখা যায়। সেখানে গিয়ে বরফ গুলো ছুঁড়ে মারে সায়ানের রুমে।

সায়ান ঘুম থেকে উঠে একটু হাটাহাটি করছিলো। অফিসের কিছু কাজ করতে হবে তার জন্য এতো সকালে ওঠা। আর ঘুম সরানোর জন্য একটু পায়চারি করছে।

হঠাৎ করে গায়ের ওপর এক গাদা ঠান্ডা বরফ এসে পড়ে। সায়ান চমকে ওঠে। ব্যাথাও পায় ভালোই।
দাঁতে দাঁত চেপে বেলকনিতে যায়। তুলতুলকে দৌড়ে যেতে দেখে আর বুঝতে বাকি নেই এটা তুলতুলের কারসাজি।

“তুলার বাচ্চা আজকে তুই শেষ।
সায়ান দাঁতে দাঁত চেপে বলে।

ভয়ে তুলতুলের মুখটা চুপসে গেছে। সায়ানের দিন যে আসবে এটা তুলতুল জানতো কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি সেটা জানতো না। এবার পালাবে কোথায়? আস্ত গিলে খাবে তুলতুলকে সায়ান। কে বাঁচাবে?
সকাল বেলা ফুরফুরে মেজাজ নিয়ে ব্রেকফাস্ট করতে এসেছিলো তুলতুল। খেতে বসতেই ফুপা রেডি হতে বলে দেয়। সায়ান না কি ওদের ভার্সিটিতে নিয়ে যাবে। সাথে সাথে তুলতুলের খাওয়া বন্ধ।

“কি হলো তুলতুল বসে আছিস কেনো? তাড়াতাড়ি খাবারটা শেষ করে রেডি হয়ে নে। আমার আব্বাজানের আবার অফিস আছে

শাহেদা বেগম তারা দিয়ে বলে তুলতুলকে। তুলতুল ভেবেছিলো ফুপা নিয়ে যাবে ওদের ভার্সিটিতে। কিন্তু তুলতুলের ভাবনায় এক বালতি পানি ঢেলে দিয়ে সয়ং সায়ান নিজে যাচ্ছে ওদের নিয়ে ভার্সিটিতে।

সায়ান পরোটা ছিঁড়ে তাতে ডিম দিয়ে মুখে পুরে তুলতুলের দিকে শক্ত চোখে তাকায়। তুলতুল ঢোক গিলে।
সবাই এক সাথে ব্রেকফাস্ট করতে বসেছিলো।
” ইয়ে মানে ফুপি হয়েছে কি। আমার না মাথা ব্যাথা করছে। আজকে যাবো না
ইনিয়ে বিনিয়ে বলে তুলতুল।

“ওমা সে কি
তাহলে তো আরও পবলেম।
সুমু এক কাজ কর তুই ভার্সিটিতে চলে যা। আমি তুলা আই মিন ওকে ডাক্তার দেখিয়ে তারপর ভার্সিটিতে যাবো।
মাথা ব্যাথা নিয়ে বেচারি সারাদিন কি করে কষ্ট করবে বল?
তুলতুলের দিকে তাকিয়ে নেকামো করে বলে সায়ান।
সায়ানের কথায় সায় দেয় সবাই।
তুলতুল মাথায় হাত দিয়ে বসে। নিজেই ভয়ংকর বিপদ ডেকে আনলো।

” মামনি বেশি খারাপ লাগলে ভার্সিটিতে যাওয়ার দরকার নেই। ডাক্তার দেখিয়েই চলে আসবে ওকে?
সোহেল মিয়া বলেন।
তুলতুল ওনার দিকে তাকিয়ে একটু হাসে।
কিন্তু মনের মধ্যে বয়ে যাচ্ছে ঝড়। না জানি আজ সায়ান কি করবে?

“ভাইয়া আমিও তো ভার্সিটিতে যাবো। তো আমিই নিয়ে যেতাম ওদের।
শান বলে।

তুলতুল এতখনে আশার আলো দেখতে পায়। মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে ওঠে।

” হ
তুলতুল কিছু বলার জন্য মুখ খুলে তার আগেই সায়ান কটমট চোখে তাকায় শানের দিকে।

“ওহহহহ ভুলে গেছিলাম। আমার তো এক্সটা ক্লাস আছে
আমি পারবো না।
শান সাথে সাথে কথা ঘুরিয়ে নেয়। তুলতুল দাঁতে দাঁত চেপে তাকায় শানের দিকে।

তুলতুল রুমে এসে অনবরত পায়চারি করছে। কি করে সায়ানের সাথে যাওয়াটা আটকাবে। আজ যে সায়ান ওকে আস্ত চিবিয়ে খাবে এ বিষয়ে তুলতুল নিশ্চিত।

“তারাতাড়ি রেডি হ।
ভাইয়া ওয়েট করছে।
সুমু তারা দিয়ে বলে।
” হুমমমমম

তুলতুল সাদা একটা ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে যায়। আর সুমু যায় সায়ানকে খবরটা দিতে।
সায়ান কাবাডের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

“ভাইয়া তুলতুল সাদা থ্রি পিছ পড়েছে।

” ওহহহহ
সায়ান সাদা একটা শার্ট নিয়ে বলে। সুমু কোমড়ে হাত দিয়ে সায়ানের সামনে এসে দাঁড়ায়।

“কিহহহহ
সায়ান ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে।

” কিহহহহহহহ
সুমু পাল্টা প্রশ্ন করে।
এতো কিছু রেখে তুলতুল কি ড্রেস পড়ছে সেটাই কোনো জানতে চাইছিস? আর তুই ওর সাথে মেচিং করে কেনো পড়ছিস?
কপাল কুচকে বলে সুমু।

“আমাকে কান ধরিয়ে ছিলো না। এখন তার শোধ তুলবো।

” মেচিং করে ড্রেস পড়ে কি করে শোধ তুলবি? বলছি আমি মায়ের কাছে
মমমমমমা
“চুপ
সায়ানের ধমকে সুমু চুপ করে যায়।
সায়ান পকেট থেকে তিন হাজার টাকা বের করে সুমুর হাতে ধরিয়ে দেয়।

“মেচিং করে ড্রেস পড়তেই পারিস। এতে কোনো পবলেম নেই। আবার কোনো দরজার হলে বলিস।
সুমু টাকাতে একটা চুমু খেয়ে নাচতে নাচতে বেরিয়ে যায়।

” ড্রামা কুয়িন একটা।
সায়ান বিরবির করে বলে।

সায়ানের গাড়ি নেই। গাড়ি কেনার সামর্থ এখনো হয় নি। তবে একটা বাইক আছে।
সাদা শার্টের নিচে কালো টিশার্ট পড়েছে,চোখে কালো সানগ্লস। শার্টের বোতাম গুলো খোলা। বাইকের আয়নায় নিজের চেহারা দেখছে সায়ান।

তুলতুল তখন থেকে কাচুমাচু হয়ে সায়ানের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
“আর কতখন এখানে দাঁড়িয়ে থাকবো?
সায়ান ধমক দিয়ে বলে। তুলতুল কেঁপে ওঠে।

” কককোথায় বসবো?
তুলতুল তুতলিয়ে বলে।

“কোথাও জায়গা না পেলে আমার মাথায় বস।

সায়ানের এরকম কথায় তুলতুল মনে মনে বেশ রেগে যায় কিন্তু বাইরে প্রকাশ করে না।

” ইয়ে মানে আপনার কাঁধে একটু হাত রাখলাম।
তুলতুল থেমে থেমে বলে।
সায়ান কিছু বলে না।

তুলতুল সায়ানের কাঁধে হাত দিয়ে পেছনে বসে। তারপর হাত সরিয়ে কাচুুমাচু হয়ে বসে।

“ধরে বস।
সায়ান ধমক দিয়ে বলে।

” আমি ঠিক আছি।

“তুই ঠিক আছিস না বেঠিক আছিস এটা জিজ্ঞেস করি নি তোকে। সময় নষ্ট করবি না একদম।
কর্কশ গলার বলে সায়ান।

তুলতুল সায়ানকে ভেংচি কেটে সায়ানের কাঁধে হাত রাখে।
” গোমড়ামুখো সাদা বিলাই কোথাকার। মুখ টার ভাষার কি ছিরি যেনো করলার জুস। যে খাবে তারই বমি হবে।

বিরবির করে বলে তুলতুল।

ততখনে সায়ান বাইক চালানো শুরু করেছে।

ঢাকার শহরের কোনো কিছুই তুলতুলের চেনা জানা নেই। এই শহরে ও নতুন। প্রথমবার ঢাকায় এসেছে। এতোদিন হলো এসেছিল তবুও বাড়ি থেকে বের হতে পারে নি। একদিন শুধু শানের সাথে দোকানে গিয়েছিলো বাসার কাছেই। শানকে খুব করল বলেছিলো ঘুরতে নিয়ে যেতে কিন্তু শান যেতে নারাজ।

তুলতুল খুব করে জেদ ধরায় বলেছিলো কয়েকদিন পরল নিয়ে যাবো। সেই কয়েকদিন পর এখনল আসে নি।

সায়ান তুলতুলকে ঠিক কোন দিকে নিয়ে যাচ্ছে তার কোনো আইডিয়াই নেই তুলতুলের।
তুলতুল মনের সুখের হাওয়া উপভোগ করছে।

হঠাৎ করে বাইক থেমে যায়। তুলতুল ভেবেছিলো ভার্সিটি এসে গেছে। কিন্তু নাহহহ।
সায়ান ওকে একটা পুরনো ভাঙা বাড়িতে নিয়ে এসেছে।

“নাম
সায়ান হেলমেট খুলতে খুলতে বলে।
তুলতুল ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে চারপাশ দেখছে। সায়ান কি বলেছে সেটা ওর কানে ঢুকে নি।

” ওই নামবি? না কি ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেবো।
সায়ান ধমক দিয়ে বলে।
তুলতুল নেমে পড়ে।
“এখানে কেনো এনেছে আমাকে? নিশ্চয় মেরে বালি চাপা দিয়ে রেখে দেবে। এবার কি করবো আমি? এতো তারাতাড়ি মরতে চাই না আমি। কে বাঁচাবে এখান থেকে আমাকে?
তুলতুলের চোখে পানি টলমল করছে।

” আমাকে মারবেন না প্লিজ। আমি মরতে চাই না। আমি আর কখনোই আপনার পেছনে লাগবো না।
তুলতুল কান্না করতে করতে বলে।

সায়ান ভ্রু কুচকে বুকে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে।

“তোকে কি আমি মারতে পারি? তোকে তো আদর করতে নিয়ে এসেছি এখানে। দেখ আশেপাশে কেউ নেই। আকাশটাও মেঘলা। যেকোনো সময় গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পড়বে। কি রোমান্টিক ওয়েদার।
ফাটিয়ে রোমান্স করবো আমরা।
সায়ান বাঁকা হেসে বলে।

তুলতুল ঢোক গিলে চোখ বড়বড় করে তাকায়। বলে কি এই লোকটা?

” রোমাঞ্চ কি?
ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে বলে তুলতুল।
সায়ান কপালে তিনটে ভাজ ফেলে আড়াআড়ি ভাবে ভ্রু কুচকে ফেলে।
“ইডিয়েট রোমাঞ্চ বুঝিস না? লিপ কিস করতো তোকে। হাসছিলি না খুব? বরফ দিয়েছিলি না আমার গায়ে। এবার আদর করে দেবে তোকে। যাতে আর কখনোই এমন করার সাহস না পাস।
সাথে সাথে তুলতুল দুই হাতে ঠোঁট চেপে ধরে। আর যাই হয়ে যাক ঠোঁট থেকে হাত সরানো যাবে না।

সায়ান এগিয়ে আসে তুলতুলের দিকে।

চলবে❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here