তুলতুল চোখ বন্ধ করে বসে আছে। মনের মধ্যে ঝড় বইছে। খুব করে ইচ্ছে করছে চিৎকার করে কাঁদতে কিন্তু পারছে না।
সায়ান আর পাখি গল্প করছে। তুলতুল ইচ্ছে করে ওদের সাথে বসে নি। ওদের পেছনের ছিটে বসেছে। এতে অবশ্য সায়ানও কিছু বলে নি৷
কিছুখন আগে তুলতুল সায়ানের পাশে বসে ছিলো। পাখি ওদের সাথে বসতে গেলে তুলতুল মুখ ফসকে বলে ফেলে।
“আপু প্লিজ অন্য ছিটে গিয়ে বসো। আসলে আমরা তো হানিমুনে যাচ্ছি। তো এখন প্লান করতে করতে যাবো সেখানে গিয়ে কি করবো না করবো। তুমি থাকলে পবলেম হবে।
তুলতুলের কথা শুনে পাখি একটু হাসার চেষ্টা করে পেছনে যেতে নেয়। সায়ান পাখির হাত ধরে আটকায়। পাখিকে পাশে বসায়।
” এসব কেনো করছিস?
সায়ান চোয়াল শক্ত করে তুলতুলকে জিজ্ঞেস করে।
“কারণ আপনি আমার বর তাই।
” মাই ফুট
তোমকে আগেও বলেছি এখন এবার মনে করিয়ে দেই। তোমাকে আমি জাস্ট ঘৃণা করি। তোর মুখটা দেখলে আমার রাগ হয়। ইচ্ছে করে খু*ন করে ফেলি তোকে। কি ভাবিস বল তো তুই?
এরকম বেহায়ার মতো আমার পেছনে পড়ে থাকবি আর আমি তোর প্রতি দুর্বল হয়ে পড়বো? তোকে ভালোবাসবো? আবার তোর ফাঁদে পা দেবো?
ভুল মানুষ একবারই করে। আর আমি সেই ভুলটা করে ফেলেছি। নেক্সট টাইম আর কোনো ভুল করবো না।
আমার তো নিজের ওপরই রাগ হয় যখন এটা মনে পড়ে যে একটা সময় আমি তোর প্রতি দুর্বল ছিলাম।
কানাডা থেকে ফিরে তোকে হোস্টেলে রেখে আসবো আমি। সব খরচ আমিই দেবো। ছোটলোক হতে পারি ফকির না।
দাঁতে দাঁত চেপে বলে সায়ান।
তুলতুলের চোখ দুটো ছলছল করে ওঠে। পাখি মাথা নিচু করে ফোন দেখছে।
এদিক সেদিক চোখ ঘুরিয়ে চোখের পানি আটকায় তুলতুল।
“আপনি আমাকে ঘৃণা করেন ঠিক আছে। এতে আমার কিছু এসে যায় না। আমিও আপনাকে ভালোবাসি না বাধ্য হয়েছি আপনার সাথে থাকতে। আর আপনিও বাধ্য। কারণ আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে। ভালো বাসুন না বাসুন আপনার সাথেই থাকবো আমি। এটা আমার চ্যালেন্জ
ভাঙা গলায় বলে উঠে চলে যায় তুলতুল।
সায়ান দুই হাতে নিজের চুল মুঠো করে ধরে। ভীষণ বিরক্ত লাগছে। পাখি সায়ানের কাঁধে হাত রাখে।
” এভাবে ভেঙে পড়বে না একদম। ওই মেয়েটা তোমার সাথে কি করেছে ভুলে গেলে চলবে না।
পাখি বলে।
“ও আমার সাথে যাই করুক আমি যে ওকে ছাড়া এক মুহুর্তও থাকতে পারবো না পাখি। তবে হ্মমাও করবো না। প্রতিটা সেকেন্ডে ওকে ঠিক ততটাই কষ্ট দেবো যতটা কষ্ট ও আমাকে দিয়েছে।
” তার মানে দিন শেষে তুমি ওকেই চাইবে?
“চাইবো কি? দিন শেষে আমার ওকেই লাগবে।
পাখি হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নেয়। দাঁতে দাঁত চেপে তাকায় সায়ানের দিকে। কি আছে ওই মেয়েটার মধ্যে? যা সায়ানকে পাগল করেছে? না আছে রূপ না আছে গুন।
মনে মনে বলে পাখি।
তুলতুল চোখের পানি মুছে নেয়। আড়চোখে সবাই তাকাচ্ছে তুলতুলের দিকে। নিজেকে জোকার মনে হচ্ছে তুলতুলের।
ওড়না দিয়ে চোখ মুখ ভালো করে মুছে নেয় তুলতুল। একদম কাঁদবে না।
কিছুখন পরই প্লেন ছেড়ে দেবে। তুলতুলের পাশে একটা ছেলে বসেছে। কানে হেডফোন গুঁজে চোখ বন্ধ করে গান শুনছে ছেলেটা। তুলতুলের বরিং লাগছে। মোবাইল টাও ব্যাগে আর ব্যাগটা সায়ানের কাছে। এখন তো আর ওখানে যাওয়া যাবে না।
তুলতুল ঠিক করে নেয় আর কথা বলবে না সায়ানের সাথে। কোনো দুষ্টুমি করবে না।
“পাগলামী তার সাথে করা যায় যে পাগলমাী দেখে পাগলী নাম দেয়। কিন্তু তার সাথে পাগলামি করা যায় না যে পাগলামির নামটা পাগল দেয়”
তবে হ্যাঁ সায়ানকে এটা ফিল করানো দরকার কাছের মানুষটি অন্য জনের সাথে ঢলাঢলি করলে ঠিক কতোটা খারাপ লাগে।
“হেলো
ছেলেটা কানের হেডফোন খুলে তুলতুল দিকে তাকিয়ে এক গাল হেসে বলে। এতখনে বোধহয় তুলতুলকে খেয়াল করে নি। ছেলেটার বয়স তুলতুলের সমবয়সী হবে।
তুলতুলও একটু হেসে হাই বলে।
” আমি মুগ্ধ। তুমি?
“কি বেপারে?
তুলতুল ভ্রু কুচকে বলে। ছেলেটা ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়।
” বুঝলাম না?
“না মানে আপনি বললেন আপনি মুগ্ধ। বাট আমি আশেপাশে মুগ্ধ হওয়ার মতো কিছু দেখছি না। অনফরচুলেটলি আপনি কি আমাকে দেখে মুগ্ধ হয়েছেন? হতেই পারেন। আমি খুব ভালো মেয়ে। দেখতেও সুন্দরী।
তুলতুল একটু ভাব দেখিয়ে বলে। ছেলে হো হো করে হেসে ওঠে। তুলতুল কপালে তিনটে ভাজ ফেলে ছেলেটার দিকে তাকায়।
” আমি কি কোনো জোক্স বলেছি?
“সরি সরি
ভেরি সরি একচুয়েলহ হাসিটা কন্ট্রোল করতে পারি নি।
আই মিন আমার নাম মুগ্ধ। তোমার নাম কি?
একটু হেসে বলে মুগ্ধ।
তুলতুল লজ্জা পেয়ে যায়। দাঁত দিয়ে জিভ কাটে।
” আমি তুলতুল।
“ওহহ আচ্ছা। কোন ক্লাস?
” পড়ালেখা ছেড়ে দিয়েছি। কন্টিনিউ করলে অনার্স সেকেন্ড ইয়ার থাকতাম।
আপনি?
“আমি অটো পাস এইচএসসি।
” আমার থেকে ছোট।
“পড়ালেখায় আপনার থেকে পিছিয়ে আছি কিন্তু বয়সটা মেবি সেম সেম হবে।
” হবে হয়ত।
“কোথায় যাচ্ছো?
” হানিম
(বাকিটা বলে না তুলতুল। খুকখুক করে কেশে গলা পরিষ্কার করে)
“ভাইয়ার সাথে কানাডা যাচ্ছি।
” ওহহ গুড
আমি একাই যাচ্ছি। কিন্তু ওখানে আমার বাবা থাকে।
“ওহহ আচ্ছা
দুজনে গল্প করতে থাকে।
সায়ান দাঁতে দাঁত চেপে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে বসে আছে। পাখি এটা সেটা বলছে কিন্তু সায়ান কোনো উওর দিচ্ছে না। সায়ানের দৃষ্টিটা এখন তুলতুলের দিকে। তাকাতে পারছে না তুলতুলের দিকে কিন্তু হাসির শব্দটা শুনতে পাচ্ছে।
পাখির বাবা আসে। এখুনি প্লেন ছেড়ে দেবে। সায়ান ওনাকে পাখির পাশে বসতে বলে উঠে যায়।
পেছনের ছিটে বসেছিলো তুলতুল।
সায়ান তুলতুলের সামনে হাত ভাজ করে দাঁড়ায়।
মুগ্ধ আগে খেয়াল করে সায়ানকে।
” আপনি কি বসবেন?
সায়ান মাথা নারায়।
মুগ্ধ জানালার কাছের ছিটে চলে যায়। তুলতুল আড়চোখে একবার সায়ানের দিকে তাকিয়ে সরে বসে। সায়ান তুলতুলের পাশে বসে।
কোনো কথা বলছে না শুধু চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে আছে তুলতুলের দিকে।
“তারপর কোথায় ছিলাম আমরা?
মুগ্ধ বলে।
” এই তো বাংলাদেশের এয়ারপোর্টে ছিলো মাএ আকাশের দিকে যাচ্ছি।
তুলতুলের কথা শুনে ফিক করে হেসে ফেলে মুগ্ধ। মুগ্ধ এটা জিজ্ঞেস করেছিলো গল্পে কোথায় ছিলো।
“বাই দ্যা ওয়ে ভাইয়া
এটাই কি তোমার ভাই?
মুগ্ধ জিজ্ঞেস করে।
সায়ান কপালে ভাজ ফেলে তাকায় তুলতুলের দিকে। তুলতুল কি উওর দেবে এটা শোনার জন্য উসখুস করছে সায়ান।
” হুমম এটাই আমার ভাই।
তুলতুল মুচকি হেসে বলে।
“হেলো ব্রো আমি মুগ্ধ। তুলতুলের ফ্রেন্ড।
মুগ্ধ হাত এগিয়ে দেয়। সায়ান গম্ভীর ভাবটা বজায় রেখে মুগ্ধের সাথে হেন্ডসেক করে।
” আমি সায়ান।
কর্কশ গলায় বলে। কেঁপে ওঠে তুলতুল। শুকনো ঢোক গিলে।
তুলতুল মেঘ দেখবে? আমার দিকে এগিয়ে এসো।
মুগ্ধ তুলতুলকে জায়গা করে দিয়ে বলে।
তুলতুল এগোতে নিলে সায়ান শক্ত করে হাত চেপে ধরে।
“হাহা হিহি একটু কম করে কর। নাহলে আর হাহা করার জন্য দাঁত খুঁজে পাবি না।
তুলতুলের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে সায়ান।
তুলতুল চোখ বন্ধ করে ফেলে।
আজকেও লোকটা সিগারেট খেয়েছে।
” কি হলো তুলতুল এসো?
মুগ্ধ বলে।
“তুমিই দেখো। তুলতুলের ঘুম পাচ্ছে এখন ঘুমবে ও।
চিবিয়ে চিবিয়ে বলে সায়ান।
” কই আমার তো ঘুম পাচ্ছে
তুলতুলের কথা শেষ হওয়ার আগেই সায়ান তুলতুলের হাতটা আরও শক্ত করে অরে। থেমে যায় তুলতুল। মুগ্ধ তাকিয়ে আছে তুলতুলের দিকে।
“ওহহ হ্যাঁ ভীষণ ঘুম পাচ্ছে আমার।
হাই তুলে বলে মুগ্ধ।
” ওকে
মুগ্ধ ক্যামেরায় বন্দি করছে থাকে সুন্দর ভেসে বেড়ানো মেঘের ভিউ।
“কাঁধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ কর।
সায়ান ধমক দিয়ে বলে।
” আজব তো ঘুম পাচ্ছে না আমার। তাহলে কিভাবে ঘুমবো আমি? আবার যদি না ঘুমাই তাহলে আমার হাতটা ভেঙেই ফেলবে।
কিন্তু আর কখনোই কথা বলবো আমি এই অসভ্য লোকটার সাথে। ভীষণ কষ্ট দিয়েছে আমায়।
তুলতুল ছিটে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। মিটমিট করছে চোখ। জোর করে ঘুমানো যায় না কি?
সায়ান ফোঁস করে শ্বাস ছেড়ে তুলতুলের মাথাটা কাঁধে এনে রাখে।
তুলতুল সরে যেতে নিলে শক্ত করে ধরে রাখে।
“বাড়াবাড়ি করলে জানালা দিয়ে ধাক্কা দিয়ে দেবো। একদম বুড়িগঙ্গার মাঝখানে গিয়ে পড়বি।
শান্ত হয়ে যায় তুলতুল। মনে মনে সায়ানকে বকতে থাকে।
🥀🥀🥀
শান ইশার খাতায় কম্পোজিশন লিখছে৷ ইশা গালে হাত দিয়ে এক দৃষ্টিতে শানের দিকে তাকিয়ে আছে।
“এবার মন দিয়ে শোনো।
শান মাথা তুলে দেখে ইশা তাকিয়ে আছে। শান মৃদু হাসে। খাতা কলম এক পাশে রেখে দেয় শান।
ইশার গালে হাত দেয়। হকচকিয়ে ওঠে ইশা। চোখ ফিরিয়ে নেয়। শান হাতটা সরিয়ে নেয়।
” কি????
শান বলে।
“আমাকে ভালোবাসলে কি হবে?
গাল ফুলিয়ে বলে ইশা। শানের খুব হাসি পায়। তবুও মুখে গম্ভীর ভাবটা বজায় রাখে। এই পিচ্চি কি জানে শান আরও অনেক আগেই এর প্রেমে দেওয়ানা হয়ে গেছে?
” আমি বাচ্চাদের ভালোবাসবো না। আমার বড় মেয়ে লাগবে। যারা “র” বললেই রোমাঞ্চ বুঝে যাবে।
দাঁড়িতে হাত বুলিয়ে বলে শান।
“আমিও রোমাঞ্চ বুঝি। বাসর ঘড়ের খাট সাজাতেও পারি। ওই যে সায়ান ভাইয়ার জন্য সাজিয়ে দিয়েছিলাম।
” বা*ল বুঝো তুমি
শান বিরবির করে বলে।
সাহেদা বেগম আসে শানকে খাওয়ার জন্য ডাকতে।
“ইশা এখনো যাস নি কেনো? দশটা বাজতে চললো।
ইশা ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে। শান ভরকে যায়। এ
এর আবার কি হলো? সাহেদা বেগম এগিয়ে যায়।
” কাঁদছিস কেনো? কি হয়েছে? শান মেরেছে?
“মা আমি ভালো ছেলে। ওকে কেনো মারবো?.
সাহেদা বেগম কড়া চোখে তাকায় শানর দিকে চুপসে যায় শান।
” কাকিমা
ফুঁপিয়ে বলে ইশা।
“হ্যাঁ সোনা বল
” আমি রোমাঞ্চ বুঝি না বলে তোমার ছেলে আমার সাথে ব্রেকআপ করে দিয়েছে।
বলেই আবার ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে ইশা।
শান বড়বড় চোখ করে তাকায় ইশার দিকে। ঢোক গিলে। সাহেদা বেগম গোল গোল চোখ করে শানের দিকে তাকায়। মায়ের দিকে করুন চোখে তাকায়।
“আমি তো হিন্দি মুভি দেখছি বল। একটু খানি রোমাঞ্চ শিখেছিও। আজকে নাহয় আরও অনেক গুলো দেখে পুরোপুরি শিখে নেবো।
তখন উনি আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হেসে “ক” বললেই আমি কিস বুঝে যাবো।
সাহেদা বেগম বিষম খায়। শান এক দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
এই মেয়েটার সাথে আদৌ প্রেম করা সম্ভব? এ তো মানসম্মান সব বিক্রি করে দেবে।
” এই ছেলেমেয়েদের জন্য কবে জানি আমি হার্ট অ্যাটাক করবো।
সাহেদা বেগম বিরবির করতে করতে চলে যায়।
ইশা চোখের পানি মুছে।
“কি হলো? দুজন দুদিকে চলে গেলো কেনো? আমি তো সত্যি কথাই বললাম।
চলবে