গাল ফুলিয়ে বসে আছে তুলতুল। একদম কথা বলবে না সায়ানের সাথে। বজ্জাত লোক একটা। পঞ্চাশ টাকার লিপস্টিক নষ্ট করে দিলো? এতো কষ্ট করে শাড়ি পড়লো সেটাও নষ্ট করে দিলো? এই লোকটার সাথে কোনো দিনও প্রেম হবে না। প্রেম তো দুরের কথা “প” ও হবে না।
এতো কতশত পোজে ছবি তোলা বাকি ছিলো। ভাগ্যি কয়েকটা পিক তুলেছিলো নাহলে সেগুলোও হতো না।
সায়ান প্রতিদিনকার তুলনায় আজকে একটু বেশিই মাঞ্জা দিয়েছে। সাদা শার্ট কালো জিন্স চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়েছে। চোখে কালো সানগ্লাস। হাতে কালো ফিতার ঘড়ি। কড়া করে পারফিউম দেয়। তুলতুল আড়চোখে দেখছে শুধু।
“বের হবো আমি?
সায়ান তুলতুলের কাছে গিয়ে বলে।
তুলতুল মুখ বাঁকায়।
” ফিরতে লেট হবে। খাবার অর্ডার করে খেয়েনিস।
বলে সায়ান যেতে নেয়। তুলতুল এক লাফে উঠে দাঁড়ায়। সায়ানের আগেই রুম থেকে বেরিয়ে যায়। একটু হাসে সায়ান।
পাখি আজকে কালো শাড়ি পড়েছে। হাতা কাটা ব্লাউজ। পাতলা ছিলছিলে শাড়ি। শরীরে ফিফটি পার্সেন্ট বের হয়ে আছে। মুখে ভারি মেকাপ।
পাখির বাবাও আছে পাখির সাথে। এখানকার একটা ব্যাংকে যাবে। সেখানে ট্রেনিং নেবে ওনাদের। পুরো টিমে পাখি আর তুলতুলই মেয়ে। বাকিরা বিয়ে করে নি আর তাদের ফ্যামেলিও আসে নি।
পাখির বাবা সায়ানকে বলে দেয় ওকে যেতে হবে না। উনি একাই যাবে। সবাইকে নিজেদের মতো করে ঘুরতে বলে। কেনোনা কালকে থেকেই কাজে লেগে পড়তে হবে তেমন সময় পাবে না
তুলতুল এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে। রাস্তার দুই পাশ দিয়ে ঝাউ গাছ। তুলতুল সেগুলোর ছবি তুলতে ব্যস্ত। পাখির দিকে এখনো ওর চোখ পড়ে নি।
“আমাকে কেমন লাগছে?
পাখি এক গাল হেসে সায়ানের দিকে এগিয়ে এসে বলে।
সায়ান ফোন দেখছিলো। পাখির প্রশ্ন শুনে তাকায় পাখির দিকে।
তুলতুলও ঘাড় বাঁকিয়ে তাকায়।
” কুত্তার মতো লাগছে।
জোরে বলে তুলতুল। সায়ান চোখ বড়বড় করে তুলতুলের দিকে তাকায়। পাখি কপালে তিনটে ভাজ ফেলে তাকায় তুলতুলের দিকে।
“হোয়াট
হোয়াই ডু ইউ মিন
পাখি অগ্নি দৃষ্টিতে তুলতুলের দিকে তেড়ে এসে বলে।
তুলতুল এমন ভাব ধরে যেনো ও কিছু বলেই নি।
পাখি সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই তুলতুল মাথা তুলে তাকায়।
” আমাকে কিছু বলছো?
ইনোসেন্ট লুক দিয়ে বলে তুলতুল।
সায়ান মুখ টিপে হাসছে। পাখি হা হয়ে যায়। স্পষ্ট শুনতে পেলো তুলতুল বললো কুত্তার মতো লাগছে।
এখনই অস্বীকার করছে।
“তুমি না মাএ আমাকে কমেন্ট করলা
” আমিহহহহহহহ
তোমাকে কমেন্ট করবো?
ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছো না কি?
মুখ বাঁকিয়ে বলে তুলতুল।
পাখি দাঁত কটমট করে।
“পাখি দারুণ লাগছে তোমায়। এসো পিক তুলে দেই।
সায়ান বলে।
পাখি তুলতুলের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে চলে যায়।
” আল্লাহ আর কতো কি যে দেখমু।
বিরবির করে বলে তুলতুল।
সায়ান পাখিকে পিক তুলে দিচ্ছে। ভীষণ রাগ হয় তুলতুলের। থাকবোই না এদের মধ্যে। রিলেশনশিপ এ আছে স্বীকার করলেই হয়।
এই জন্যই বুঝি তুলতুলের শাড়িটা খুলে দিলো? আবার পাখির সাথে ম্যাচিং করে জিন্স পড়া হয়েছে।
থাক তোরা। সুখে সংসার কর।
তুলতুল রাগে গিজগিজ করতে করতে সামনের দিকে হাঁটতে থাকে।
সায়ান সেটা খেয়াল করে।
“পাখি চলো ওদিক থেকে হেঁটে আসি।
পাখি মিষ্টি করে হেসে সায়ানের হাত ধরে। সায়ন ছাড়িয়ে নিতে চাইলে আরও শক্ত করে ধরে।
কিছুখন হাঁটার পরেই তুলতুল অনুভব করে ওর সাথে কেউ হাঁটছে। ঘাড় বাঁকিয়ে পাশে তাকায় তুলতুল। পাশে দুটো ছেলে। এই ছেলেদের পাখি চেনে। সায়ানের কলিগ। ওদের সাথেই এসেছে ওরা।
তুলতুল একটু হাসার চেষ্টা করে।
” কোথায় যাচ্ছো?
সুমন নামের ছেলেটা বলে।
তুলতুল রেগে চলে যাচ্ছে। এটা এদের বুঝতে দেওয়া যাবে না। নাহলে সায়ানকে বলে দেবে।
“একটু পরিবেশটা ফিল করছিলাম।
তুলতুল মিষ্টি হেসে বলে।
” নাম কি তোমার?
তুহিন নামের ছেলেটা বলে।
” তাহমিনা তুলতুল। আপনাদের?
“আমি তুহিন আর ও সুমন।
” আচ্ছা।
“সায়ান কে হয় তোমার?
” ফুপাতো ভাই।
“তুমি একাই এসেছো ওর সাথে?
” হ্যাঁ
আসলে আমি ঘুরতে ভীষণ ভালোবাসি। তাই ভাইয়াকে বললাম ঘুরতে নিয়ে আসতে। ভাইয়া আমাকে আপন বোনের মতো ভালোবাসে।
তুলতুল হেসে হেসে বলে
“তোরা এখানে?
সায়ান কর্কশ গলায় বলে। দাঁড়িয়ে যায় ওরা। আগুন ঝড়ছে সায়ানের চোখ দিয়ে। এই বুঝি ভর্স করে দেবে তুলতুলকে। ঢোক গিলে তুলতুল।
” তুই তো চলে এসেছিস?
তোর বোনের সাথে পরিচিত হচ্ছিলাম।
তুহিন সায়ানের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে।
“শেষ?
সায়ান তুলতুলের দিকেই দৃষ্টি রেখে বলে।
” হ্যাঁ মানে একটু পরিচিত হলাম আর কি? এখনো চেনা জানা ফিলিং শেয়ার করা বাকি।
এক গাল হেসে বলে তুহিন।
সায়ান হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নেয়। রাগে চোয়াল শক্ত করে ফেলে।
“শোন না
তোর বোনকে ভীষণ ভালো লেগে গেছে আমার। একটু সেটিং করিয়ে দে না প্লিজ।
তুহিন সায়ানের কানে কানে বলে।
সায়ান তুলতুলের দিকেই তাকিয়ে আছে।
তুলতুল কাচুমাচু হয়ে দাঁড়ায়।
” এই সায়ান চলো। তুমি না বললা ঘুরতে যাবো এদিকে।
পাখি সায়ানের হাত ধরে টান দিয়ে বলে।
সায়ান তবুও তুলতুলের থেকে দৃষ্টি ফেরায় না।
“ভাইয়া আমি রুমে গেলাম।
থেমে থেমে বলে তুলতুল।
” চলো আমি পৌঁছে দিয়ে আসি। আমিও রুমেই যাবো।
তুহিন বলে।
তুলতুল জীভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নেয়। এই ছেলের এখন আবার এটা কেনো বললো? ইচ্ছে করছে ছেলেটার মাথা ফাটাতে।
তুলতুল বিরক্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে।
তুহিন দিকে তাকিয়ে একটু মৃদু হাসে।
“পাখি তোমাদের দুজনকে কিন্তু বেশ মানিয়ে। একেই বলে পারফেক্ট কাপাল।
সুমনের কথা শুনে পা দুটো থেকে যায় তুলতুলের। দুই কদম এগিয়েছিলো। সায়ানের দিকে এক পলক তাকায়। সায়ান এখনো তুলতুলের দিকেই তাকিয়ে আছে।
পাখি খুশিতে গদগদ হয়ে যায়। থ্যাংক ইউ বলে।
নিজে অন্য মেয়ের সাথে ঢলাঢলি করবে তাতে কোনো দোষ নেই। আর আমার বেলায় ফাল্লুকের মতো তাকিয়ে থাকবে। ডিসগ্রাসটিং
তুলতুল ভেংচি কাটে সায়ানকে।
তারপর বড়বড় পা ফেলে চলে যায়।
” সুমন তুমি পাখিকে নিয়ে ঘুরে এসো। আমি আসছি।
বলেই সায়ান হনহনিয়ে চলে যায়।
পাখি মুখ কালো করে দাঁড়িয়ে থাকে।
তুহিন এটা ওটা জিজ্ঞেস করছে তুলতুলকে। তুলতুল হু হা করে উওর দিচ্ছে। এই মুহুর্তে এই লোক টার সাথে কথা বলতে বিরক্ত লাগছে। এতোখনে অনেক দুর চলে যেতে পারতো। এই ফালতু লোকটার জন্য আটকে গেলো। এখন আবার সেই পাখি আর সায়ানের নিকনিক দেখতে হবে।
হঠাৎ ঝড়ের গতিতে সায়ান এসে তুলতুলের হাত ধরে তুফানের গতিতে হাঁটতে থাকে।
চমকে ওঠে তুলতুল। তুহিনও চমকে ওঠে।
সায়ানের সাথে তাল মিলিয়ে হাঁটতে পারছে না। হোঁচট খেয়ে খেতে সামলে নেয় নিজেকে।
সায়ানের রাগে লাল হওয়া মুখ টার দিকে এক পলক তাকায় তুলতুল। ভয়ে কলিজা কেঁপে ওঠে।
তুহিন ওখানেই থেকে যায়। সায়ানের রাগ সম্পর্কে ধারণা আছে। কিন্তু রেগে গেলো কেনো বুঝলো না?
“কককোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?
তুলতুল জিজ্ঞেস করে।
” আমি তোর কি লাগে সেটা দেখাতে।
তুলতুল কাঁদো কাঁদো ফেস করে তাকায় সায়ানের দিকে।
“এটা কিন্তু ঠিক না।
” সেটাই বোঝাবো তোকে। কোনটা ঠিক আর কোনটা বেঠিক।
সায়ান তুলতুলকে রুমে এনে রীতিমতো ছুঁড়ে ফেলে। বেডে গিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ে যায় তুলতুল। সায়ান শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে এগোয় তুলতুলের দিকে। চোখ দিয়ে আগুন ঝড়ছে সায়ানের। এই টুকু সময়ের মধ্যেই ঘেমে গেছে। ঘামে শার্ট ভিজে গেছে। কপাল বেয়ে টপটপ করে ঘাম পড়ছে।
“তোর ভাই হই আমি? খুব ভালোবাসি তোকে তাই ঘুরতে নিয়ে এসেছি? আপন বোনের মতো ভালোবাসি?
আজকে ভালোবাসা দেখাবো তোকে।
বলেই তুলতুলের দিকে তেড়ে আসে।
” আল্লাহ এই যাএায় বাঁচিয়ে দাও।
আর জীবনেও ভাই বলবো না। এবার থেকে সবাইকে বলবো আপনি মামা কাকা আংকেল লাগেন আমার।
চোখ মুখ খিঁচে বলে তুলতুল।
“জাস্ট সাট আপ
এতো কথা কেনো বলিস তুই? তুই কি চাস আমি তোর মুখটা থাপ্পড়ে ভেঙে পড়ি?
মেঘের মতো গর্জন দিয়ে বলে ওঠে সায়ান। তুলতুল ভয়ে সিঁটিয়ে যায়। দুই হাতে কান চেপে ধরে।
সায়ান তুলতুলের পাশে বসে এক টান দিয়ে তুলতুলকে কোলে বসিয়ে দেয়। তুলতুল সায়ানের শার্ট খামচে ধরে। ভয়ে থরথর করে কাঁপছে।
“খুব সাহস বেড়েছে তোর? ডানা গজিয়ে গেছে? ডানা কেটে দিতে আমার জাস্ট দুই মিনিট লাগবে।
ফিসফিস করে বলে সায়ান।
সায়ানের ফিসফিস করে বলা কথায় তুলতুল কেঁপে ওঠে। বুকের ভেতর টিপটিপ করছে। সায়ানের ওষ্ঠদ্বয় তুলতুলের কানে লেগে যায়। তুলতুল আরও শক্ত করে সায়ানের শার্ট খামচে ধরে।
তুলতুল লম্বা শ্বাস নেয়। চোখ মেলে তাকায় সায়ানের চোখের দিকে। চোখ দুটোতে রাগ ছাড়া আর কিছুই নেই। কিন্তু এই রাগী রাগী গভীর চোখ দুটো তুলতুলের মনের কোনে গভীর দাগ কেটে যায়। বুকের ভেতর ঝড় তুলে নেয়।
” ভালোবাসেন আমায়?
তুলতুলের এর উওরটা জানে। তবুও প্রশ্নটা করতে ইচ্ছে হলো। একটা সম্পর্ক কতোদিন আর টানাপোড়ে চলবে? একটা বিহিত হওয়া দরজার। চোর পুলিশ খেলা আর কত দিন?
“মাই ফুট,
ভালোবাসা তো দুর সামান্য সম্মানটুকুও করি না তোকে।
সায়ান দাঁতে দাঁত চেপে বলে।
তুলতুল তাচ্ছিল্য হাসে।
” তাহলে নেক্সট টাইম আমাকে টাচ করার সাহসটা ভুলেও দেখাবেন না মিস্টার সায়ান মাহমুদ।
আমার যা ইচ্ছে আমি সেটাই করবো।
সায়ানকে ধাক্কা দিয়ে বলে তুলতুল। সায়ান এটার জন্য প্রস্তুত ছিলো না তাই একটু নরেবরে হয়ে যায়। তুলতুল দুরে সরে আসে সায়ানের থেকে।
তরতর করে রাগটা বেরে যায় সায়ানের।
“আমাকে রাগাস না।
দাঁতে দাঁত চেপে বলে সায়ান।
“এতোখন কি রেগে ছিলেন না?
ভ্রু কুচকে বলে তুলতুল।
” আপনি আমাকে রাগীয়ে দিয়েন না৷ তাহলে আপনাকে আমি ওয়াশরুমে সারাজীবনের মতো বন্ধ করে দেবো। বলে দিলাম।
আর হ্যাঁ এখন আমি যাচ্ছি তুহিন বেবির কাছে। ওনার ফিলিং শুনতে।
মিষ্টি করে হেসে বলে তুলতুল।
তুলতুল রুম থেকে বেরতে নেয়।
“আর এক পা এগোলে তোর পা আমি ভেঙে দেবো।
“আমি কারো হলে তোমার কেনো জ্বলে রে বন্ধু তোমার কেনো জ্বলে?
জ্বলে না কি চলে?
পাখি ম্যাডামের সাথে কি তলে তলে?
ভেংচি কেটে সুর টেনে গায় তুলতুল।
আরও এক পা এগিয়ে যায়। সায়ান ঝড়ের গতিতে তুলতুলের দিকে তেরে এসে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে।
চলবে