প্রথম স্পর্শ। প্রথম ভালোবাসার ছোঁয়া। কিন্তু ভালো লাগছে না তুলতুলের। সায়ানের কাছে আসাতেই আরও বেশি রাগ হচ্ছে। নিজেকে ছোট মনে হচ্ছে। মনটা ভেঙে গুড়িয়ে যাচ্ছে।
তুলতুল নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে থাকে। দুই হাত সায়ানের কাঁধে রেখে খামচি দেয়। বড়বড় নখ হওয়াতে অনায়াসে নখ গুলো ঢুকে যায় সায়ানের পিঠে। রক্ত চলে আসে।
সায়ান ব্যাথা পেলেও কোনো শব্দ করে না। তুলতুলের ওষ্ঠদ্বয়ে কামড় বসিয়ে দেয়৷ তুলতুল ঠিক যতটা শক্তি দিয়ে নখ বসিয়েছে সায়ানও ঠিক ততটাই শক্তি দিয়ে কামড়ে দিয়েছে।
তুলতুলও কোনো শব্দ করে না৷ সায়ান বেশ অবাক হয়। ছেড়ে দেয় তুলতুলকে।
ঠোঁট কেটে রক্ত বের হচ্ছে। চোখ দিয়ে পানি গড়াচ্ছে।তুলতুল চোখ বন্ধ করে হাত দিয়ে ঠোঁটের রক্ত মুছে নেয়। লম্বা লম্বা শ্বাস টানে।
সায়ান তুলতুলের দিকে তাকিয়ে আছে। কি হয়েছে ওর? কেনো এমন করছে? কই আগে তো এমন করতো না?
এতোটা ব্যাথা পেলো তবুও শব্দ করলো না।
এতোটা সয্যশক্তি ওর? কি করে?
সায়ান ভাবছে।
তুলতুল চোখের পানি মুছে ফেলে। চোখ বন্ধ করে জোরে শ্বাস টানে।
“আপনি এটা ঠিক করেন নি। একদম ঠিক করেন নি। ভালো বাসেন নি আমায়। আমি শুধুই আপনার জেদ ছিলাম। আর কিছুই না।
বিশ্বাস করুন একটুও ভালোবাসেন নি আমায়। ভালোবাসা কি আপনি জানেন ও না।
একদমে কথা গুলো বলে থামে তুলতুল।
সায়ান বুকে হাত গুঁজে সরু চোখে তুলতুলের দিকে তাকিছে আছে।
” তুই চাচ্ছিস আমি তোকে ভালোবাসি? কেয়ার করি? তুই ব্যাথা পেলে আমি ঔষধ খাই?
বাঁকা হেসে বলে সায়ান।
“একদমই না। আর আমার চাওয়া না চাওয়ার কোনো দাম দেওয়া হয় না। যদি হতো তাহলে আজ আমি আপনার সাথে এভাবে থাকতাম না।
সায়ান চোয়াল শক্ত করে ফেলে। এই মেয়ে এতে ফটর ফটর কথা বলতে শিখলো কি করে? হঠাৎ এতো সাহস বাড়লো কি করে?
সায়ান হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রাগ কমানোর চেষ্টা করে।
তুলতুলকে আজকে অন্য রকম সুন্দর লাগছে। অদ্ভুত সুন্দর। চোখের কাজল লেপ্টে গেছে। চোখ দুটো লাল টকটকে। সেই চোখে টলমল করছে পানি। ঠোঁটের লিপস্টিক মুছে হালকা হয়ে গেছে। খোলা চুলগুলো এলোমেলো হয়ে গেছে। বেবি হেয়ার গুলো মুখে এসে পড়েছে। চোখের পানিতে কিছু চুল ভিজে লেপ্টে গেছে। নীল শাড়ির আঁচলটা মাটিতে বিছিয়ে পড়েছে। হাত দুটো ফাঁকা।
সায়ানের রাগ নিমিষেই গলে জলে হয়ে যায়। তুলতুলের দিকে তাকালেই বুকের ভেতর তোলপাড় শুরু হয়ে যায়।
তুলতুল সায়ানের পাশ থেকে উঠে দাঁড়ায়। বেলকনির রেলিং ধরে আকাশের দিকে তাকায়।
” আমি আপনার জীবনটা এলোমেলো করে দিয়েছিলাম। এখানে আমার কোনো দোষ ছিলো না। আপনার সাথে যদি আমার রিলেশন থাকতো তাহলে আপনি আমাকে দোষ দিতে পারতেন। আমি মাথা পেতে নিতাম। বা ইফাদকে যদি আমি ইচ্ছে করে বিয়ে করতাম তাহলেও ধরে নিতাম আমারই দোষ।
কেউ পাশে ছিলো না আমার। খুব ইচ্ছে করতো কেউ একজন আমাকে জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা দিক। মাথায় হাত বুলিয়ে বলুন “তুলতুল আমি আছি তো সব ঠিক করে দেবো”
পড়তে খুব ভালোবাসি আমি। ছোট থেকে স্বপ্ন ছিলো ব্যাংকার হবো। সেই স্বপ্নের পড়ালেখাটাও শেষ হয়ে গেছে আমার।
কাঁদতে কাঁদতে ভোর হয়ে যেতো।
গলা ধরে আসে তুলতুলের। সায়ান মাথা নিচু করে ফেলে। বলার মতো কিছুই নেই।
“আমি বাঁচতে চাই ভাইয়া। একটু ভালো থাকতে চাই। স্বাধীনতা চাই।
একটু মানসিক শান্তি চাই। পড়াশোনা কাটতে চাই।
বলতে বলতে কান্না করে ফেলে তুলতুল।
সায়ান তুলতুলের কাঁধে হাত রাখে। তুলতুল সায়ানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে। সায়ান তুলতুলের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
” আমি পারছি না আর। একটা স্বাভাবিক জীবন চাই আমার। কেনো আর পাঁচটা মেয়ের মতো আমি সুখ পাই না? কেনো আমি সব সময় অবহেলার পাএী হয়ে যাই? কেনো কেউ আমাকে ভালোবাসে না? আমি কি ভালোবাসা পাওয়ার যৌগ্য নই?
তুলতুল কাঁদতে কাঁদতে বলে।
সায়ান চোখ বন্ধ করে তুলতুলকে জড়িয়ে থাকুক।
“পৃথিবীর সব সুখ আমি তোর পায়ের কাছে এনে দেবো তুলতুল৷ তোকে সুন্দর একটা জীবন উপহার দেবো। কলা তোর বার্থডে কালকেই তোকে প্রপোজ করবো।
সায়ান মনে মনে বলে।
বেশ কিছুখন কান্না করার পরে তুলতুল এক ঝটকায় সায়ানের থেকে সরে আসে। মাথা নিচু করে ফেলে।
” সরি
এই ভুল দ্বিতীয় বার হবে না।
বলেই তুলতুল চলে যায়। সায়ান মুচকি হাসে।
“এতোটা অভিমান? কিন্তু কেনো? এই অভিমানের কারণ কি?
এক তালা একটা বাড়ির সামনে এসে নামে তুলতুল সায়ান পাখি তুহিন আর ইমন।
আজকে থেকে এখানেই থাকবে সবাই। বাড়িটা খুব সুন্দর। মন জুড়িয়ে যাওয়ার মতো জায়গা।
তুলতুল হেঁটে হেঁটে দেখছে। সায়ান নিজেদের লাগেজ নিয়ে রুমে চলে যায়।
” তুলতুল শোনো
পাখির ডাকে তুলতুল থেমে যায়। পাখির দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসে।
“কিছু বলবে আপু?
” হুমমম।
পাখি আমতা আমতা করে বলে।
“বলো?
” ভালোবাসো সায়ানকে?
চমকে ওঠে তুলতুল। পাখি উওর জানার জন্য অধিক আগ্রহে তাকিয়ে আছে তুলতুলের দিকে।
তুলতুলের ইচ্ছে করছে গলা ছেড়ে চিৎকার করে বলতে “হ্যাঁ ভীষণ ভালোবাসি আমি ওনাকে”
কিন্তু বলা যাবে না।
“নাহহহ
ভালোবাসি না।
দাঁতে দাঁত চেপে বলে তুলতুল।
পাখি খুশিতে লাফিয়ে ওঠে।
” আমি জানতাম তুমি ওকে ভালোবাসো না। কিন্তু আমি বাসি। খুব ভালোবাসি। নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি।
“জানি
” ডিভোর্স দিয়ে দাও ওকে প্লিজ। তারপর আমরা বিয়ে করবো।
পাখি খুশিতে গদগদ হয়ে বলে।
তুলতুল চোখ বন্ধ করে নিজের রাগ কমানোর চেষ্টা করে।
“সায়ান আপনাকে ভালোবাসে?
তুলতুল পাল্টা প্রশ্ন করে।
” যদি বলি ভালোবাসে না তাহলে বেঁকে বসবে”
মনে মনে বলে পাখি।
“হ্যাঁ খুব ভালোবাসে।
” প্রমাণ দিতে পারবেন?
“কিরকম?
” আজকে দেখে আপনিও সায়ানের গায়ে পড়ে থাকবেন আর আমিও ওনার গায়ে পড়ে থাকবো। আই মিন ইমপ্রেস এট্রাকশন এসব করার চেষ্টা করবো। দশ দিন সময়। যার প্রতি উনি বেশি সিমপ্যাথি দেখাবে যাকে ছোঁয়ার চেষ্টা করবে আমরা বুঝে নেবো উনি তাকেই ভালোবাসে।
রাজি?
পাখি কিছু একটা ভাবে।
“হ্যাঁ রাজি। সায়ান এমনিতেই সব সময় আমার দিকে ড্যাপড্যাপ করে তাকিয়ে থাকে।
“এবার চোখ গেলে দেবো।
তুলতুল বিরবির করে বলে।
তুহিন এক গাল হেসে দরজার আড়াল থেকে তুলতুলকে বেস্ট অফ লাক জানায়।
আসলে তুহিন আগেই পাখির মতলব জেনে গেছিলো। তাই তুলতুলকে বলেছে এসব বলতে। তুলতুল প্রথমে রাজি হয় নি। পরে ভেবে দেখলো এটলিস্ট এটা তো জানা যাবে সায়ান কাকে ভালোবাসে।
” আসছি তাহলে?
প্লান করি গিয়ে কি কি করবো। আপনিও ভাবেন গিয়ে।
তুলতুল চলে যায়। রাগ হচ্ছে প্রচুর। পাখির ওপর না সায়ানের ওপর। ওই লোকটাকে জাস্ট সয্য হচ্ছে না তুলতুলের। শুধুমাত্র তুহিন কথায় রাজি হয়েছে তুলতুল আর কিছু না।
নেক্সট টাইম কখনো যাবি অপমান করে আর তুলতুল চুপ করে থাকবে না। পাল্টা অপমান করে দেবে + সাথে সাথে ডিভোর্স পেপার সামনে ফেলে দেবে সাইন করে।
অনেক হয়ে গেছে আর না।
শুরু দশটা দিন। তারপর অসবে নতুন ঘুর্ণিঝড় তুলতুল।
চলবে
গুছিয়ে লিখতে পারি নি। বানান ভুল থাকবে। একটু এডজাস্ট করে নেবেন। সামনে পরিহ্মা। পড়ালেখার প্রচুর চাপ। বোনাস পর্ব দেওয়া সম্ভব না।