“সায়ান
অস্ফুরণ কন্ঠে বলে ওঠে পাখি। চোখ দুটো ছলছল করছে। কান্না গুলো দলা পাকিয়ে যাচ্ছে। বড়বড় শ্বাস ফেলে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করে।
” ভালোবাসি তুলতুলকে। একদিন দুইদিন নয়। পুরো আঠারো বছর যাবত। অনেক অপেক্ষা অনেক সাধনার পরে পেয়েছি ওকে। হারাতে চায় না কোনোমতেই। আর এটাও চায় না তোমার জন্য আমাদের মধ্যে কোনো ঝামেলা হোক। অনেক ঝড় ঝাপ্টা বয়ে গেছে।
এখন খুব ভালো থাকতে চায় আমরা।
সায়ান পাখির সোজাসুজি দাঁড়িয়ে গম্ভীর গলায় বলে সায়ান।
তুলতুল দরজায় ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে পাখিকে। আজ পাখি যেভাবে কাঁদছে একদিন সায়ান এভাবেই কেঁদে ছিলো। বুক কেঁপে ওঠে তুলতুলের।
“সায়ান আমার দিকে দেখো।
আমার কান্না দেখে কিছু মনে পড়ছে তোমার? মনে পড়েছে মুখের অক্সিজেন মাক্স খুলে আমার হাত ধরে হাউমাউ করে কেঁদেছিলে?
ওই তুলতুলের জন্য। নিজের শরীরে রক্ত দিয়ে বাঁচিয়েছি তোমায়। কেনো করেছি?
প্রতিমাসে রক্ত দেয় তোমায়। কেনো দেই?
বিকজ আই লাভ ইউ। তোমাকে ভালো রাখতে চায় আমি।
ছেড়ে যাওয়ার জন্য ভালোবাসি নি আমি।
কি করে পারছো এমনটা বলতে? কিভাবে পারছো ওই মেয়েটার মায়ায় আবার জড়াতে?
পাখি কাঁদতে কাঁদতে বলে। সায়ান বিরক্ত হয়।
” পাখি কি শুরু করলে তুমি?
এমনটা করার কোনো মানে হয়? আমি বিবাহিত। আমার বউ যদি খুনও করে তবুও সে আমার বউ। তাকে ছেড়ে দেওয়ার কোনো অবশন নেই।
ভীষণ ভালোবাসি। এই যে এখন তুমি আমার সাথে কথা বলছো। এটা দেখতে পেলে গাল ফুলিয়ে থাকবে। একটা বার জিজ্ঞেস করবে না “কি কথা বলছিলেন?
শুধু শুধু অভিমান পুষে রাখবে।
পাগল একটা।
তুলতুলের কথা বলতে গিয়ে সায়ানের ঠোঁটের কোণে মিষ্টি হাসি ফুটে ওঠে। পাখি সয্য করতে পারে না।
” তুলতুল এটা করলো। তুলতুল ওটা বললো। তুলতুল এটা খেতে ভালোবাসে। তুলতুল তুলতুল আর তুলতুল
পাগল হয়ে যাচ্ছি ওই নামটা শুনতে শুনতে। জাস্ট বিরক্ত লাগে।
পাখি মাথার চুল খামচে ধরে চিৎকার করে বলে।
তুলতুল চমকে ওঠে। চোখের কোণে পানির ছড়াছড়ি। কান্নার মাঝেও ঠোঁটের কোনে এক চিলতে হাসি ফুটে ওঠে।
আচমকা পাখি জড়িয়ে ধরে সায়ানকে। সায়ানের বুকে মাঝে লেপ্টে গিয়ে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে।
“আমি শেষ হয়ে যাবো সায়ান। প্লিজ ডু সামথিং।
আমি নিতে পারছি না। ভীষণ কষ্ট হয়।
তুলতুলের বুকের ভেতর ধক করে ওঠে। চোখ বন্ধ করে ফেলে।
” সায়ান পাখির মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
“তুমি তো আমাকে ভালো রাখতে চাও তাই না?
তাহলে তুমি এটা কেনো বুঝো না আমি তুলতুলের সাথে ভালো থাকি। আমি থাকতে পারবো না ওকে ছাড়া। একটু বুঝো পাখি। ওই একটা নাম ছাড়া আমি অচল। পাগল পাগল হয়ে যাই।
তুমি আমার থেকেও ভালো কাউকে ডিজার্ভ করো।
পাখি ছিটকে দুরে সরে যায় সায়ানের থেকে।
” আমি তোমাকে চাই। ওই মেয়েটা তোমাকে ডিজার্ভ করে না। ওই মেয়েটা আবারও তোমায় কষ্ট দেবে। তোমাকে শেষ করে দেবে ওই মেয়ে।
চিৎকার করে বলে পাখি।
“পাখি শান্ত হও। আমরা ঠান্ডা মাথায় কথা বলবো। একটা সলিউশন খুঁজে বের করবো।
সায়ান পাখির হাত ধরে বলে। পাখি শান্ত হয়ে যায়।
” সত্যি সলিউশন খুঁজে দেবে? আমার হবে তুমি? ওই মেয়েটাকে ছেড়ে দেবে?
আদুরে গলায় নাক টেনে বলে পাখি।
“তুমি না গুড গার্ল। একটু সময় নাও। ঠান্ডা মাথায় ভাবো। নিজেই সলিউশন পেয়ে যাবে। আর যদি না পাও আমি তো আছিই। সবটা ঠিক করে দেবো আমি।
পাখির মাথায় হাত বুলিয়ে মুচকি হেসে বলে সায়ান।
পাখি আবারও হু হু কেঁদে ওঠে সায়ানকে জড়িয়ে ধরে।
“এবার রুমে যাও।
বুক থেকে পাখির মাথাটা তুলে যত্ন করে চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলে সায়ান।
পাখি নাক টেনে চলে যায়।
তুলতুল এবার ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে। সায়ান ছেড়ে দেবে তুলতুলকে? কি করে পারবে? ছেড়েই যদি দেবে কাছে কেনো আসলো? মনে মনে তো নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছিলো তুলতুল। তাহলে কাল রাতে হঠাৎ করে ভালো কেনো বাসলো? এখন নিজেকে সামলাবে কি করে তুলতুল?
কান্নার আওয়াজ পেয়ে সায়ান তুলতুলের দিকে তাকায়। কান্নার কারণটা বুঝে যায়। তবুও নিজের সম্পর্কে বলার প্রয়োজন মনে করছে না সায়ান।
একটা সম্পর্কের মূল ভিত্তি হচ্ছে বিশ্বাস। আর তুলতুলের সায়ানের প্রতি এইটুকু বিশ্বাস নেই। মস্তিষ্ক পুরোটাই ফাঁপা। এইটুকুও বোঝে না মেয়েটা। সায়ান আর যাই হোক ওকে ছাড়বে না।
” ওখানে দাঁড়িয়ে কাঁদছিস কেনো? কেউ মরেছে?
সায়ান চুল ব্রাশ করতে করতে বলে।
চট করে চোখের পানি মুছে নেয় তুলতুল। হাতে থাকা সায়ানের ভেজা শার্টটা নিয়ে বেলকনিতে চলে যায়। বেলকনিতে তোয়ালে আর শার্ট মেলে দিয়ে আসে।
সায়ান খাবার নিয়ে বিছানায় বসে আছে।
তুলতুল সেদিকে পাত্তা না দিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
নিজেকে খুঁটিয়ে জানা দেখতে থাকে।
“আচ্ছা তুলতুলের থেকে পাখি কি বেশি সুন্দর?
অবশ্যই পাখি বেশি সুন্দরী, স্মার্ট, মর্ডান, বাবার ভুরি ভুরি টাকা আছে।
নিজের ওপর নিজেই বিরক্ত হচ্ছে তুলতুল। চিটুনিটা ফেলে দেয়।
” তোর থেকে পাখি অনেক সুন্দর। এখন এসব চিন্তা না করে খেতে আয়।
সায়ান তুলতুলের দিকে এক পলক তাকিয়ে বলে।
দাঁতে দাঁত চেপে কটমট চোখে সায়ানের দিকে তাকায় তুলতুল।
“তো যান না পাখির কাছে। এখানে থাকতে কে বলেছে আপনাকে?
মনে মনে বলে তুলতুল। মুখে বলার সাহস নেই। যদি সত্যিই চলে যায়। তখন?
গাল ফুলিয়ে সায়ানের পাশে গিয়ে বসে।
সায়ান রুটি ছিঁড়ে তাতে ভাজি পুরে তুলতুলের মুখের সামনে ধরে।
” পাখি নিয়ে জেলাস?
মিষ্টি হেসে বলে সায়ান।
তুলতুল চমকে ওঠে। মাথা নিচু করে ফেলে।
“নননাহ তো
আমি কেনো জেলাস হবো? পাখিকে বিয়ে করে তিন বাচ্চার বাবা হয়ে গেলেও আমার কিচ্ছু যায় আসে না।
অভিমানে বুক ভরে আসছে তুলতুলে। গলা টাও ধরে আসছে। কথা গুলো বলার সময় বুকের ভেতর অসয্য ব্যাথা হচ্ছিলো।
সায়ান শব্দ করে হেসে ফেলে। তুলতুল গোলগোল চোখে সায়ানের দিকে তাকায়।
” খাবারটা মুখে না নিলে এখুনি চলে যাবো পাখির কাছে৷ ওকে খায়িয়ে দিয়ে আসবো।
সায়ানের কথা শেষ হওয়ার আগেই তুলতুল তারাহুরো করে খাবারটা মুখে পুরে নেয়।
আবারও হেসে ফেলে সায়ান।
“কাল না বলছিলি তোর ডিভোর্স চাই?
ওকে দিয়ে দেবো তোকে ডিভোর্স। তুই যা চাইছিস তাই হবে। ডিভোর্স অলরেডি তুই বানিয়ে ফেলছিস। বাংলাদেশে ফিরেই তোকে ডিভোর্স দিয়ে দেবো। আর আমি পাখিকে বিয়ে করে নেবো।
তোকে বিয়েতে অবশ্য নেমন্তন্ন করবো। দামি গিফট নিয়ে আসবি কিন্তু।
ফুরফুরে লাগছে সায়ানকে। কতো নিঃসংকোচে কথা গুলো বলে দিলো। তুলতুলের নিশ্বাস ভারি হয়ে আসছে। চোখের অবাধ্য পানি গুলো ঝড়ে পড়া শুরু করে দিয়েছে।
সয্য করতে পারেন না তুলতুল৷ হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে।
সায়ান ভরকে যায়। এটার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।
সায়ানের হাতে থাকা খাবারের প্লেটটা পাশে রেখে সায়ানকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে তুলতুল।
” আমাকে কেনো এতো কষ্ট দেন আপনি?
কাঁদতে কাঁদতে বলে তুলতুল।
সায়ান মুচকি হেসে তুলতুলকে জড়িয়ে নেয়।
“পাখি খুব অবুঝ মেয়ে। বাবার আদরে বড় হয়েছে তো। যখন যা চেয়েছে তাই পেয়ে। এখন ওর সাথে বাজে বিহেব করলে হিতে বিপরীত হবে। ওকে বোঝাতে হবে।
সায়ান মনেমনে বলে।
এবার তুলতুলকে একটু জ্বালানোর মতলব এঁটে বসে।
” কান্না কাটি করে আমার মন গলাতে পারবি না তুই।
গম্ভীর গলায় বলে সায়ান।
চলবে
বানান ভুল থাকতে পারে। একটু মানিয়ে নেবেন।