অভিশপ্ত_জীবন সিজন 2,পাড়ম্ভিক পর্ব

0
521

#অভিশপ্ত_জীবন
সিজন 2
পাড়ম্ভিক পর্ব
লেখিকা #Fabiha_Busra_Borno

জীবনের নানা কুল প্রতিকূল অতিক্রম করে, সুখের নীড়ে আনিস এবং দুই মেয়ে নিয়ে ভালোই কাটছে দিনকাল। আমার শান্ত নম্র ভদ্র মেয়ে রজনী তার শশুর শাশুড়ীর চোখের মুনি। আমি প্রতি নিয়ত চেষ্টা করছি পরের ঘরে কেমন বিনয়ী হলে তাদের মন পাওয়া যাবে এইসব। তবে সব শশুর শাশুড়ী বা স্বামী যে ভালো হয় তা বলছি না। আমার জীবন দিয়ে আমি বাস্তবতা দেখেছি। রজনী জামাইয়ের সাথে কুমিল্লায় থাকে।

আমার ছোট্ট আদরের মেয়ে নিশি খুবই চঞ্চল,, তবে আমাকে সম্মান করে এবং প্রচুর ভালোবাসে। কোন দিন সকালে আমাকে উঠতে দেয় না। সে বাড়ির সব কাজ শেষে রান্না করে তারপর আমাকে উঠে খেতে বলে। আমি বার বার বলি,, এই বয়সে তোর এতো কাজ করতে হবে না। বিয়ের পরে শশুর বাড়িতে গেলে তো সারাজীবন এইসব করতে হবে তোর। যে ক’দিন আছিস, আমার রাজকন্যা হয়ে থাক। কিন্তু কে শোনে কার কথা। সে পালটা আমাকে বলে,, অন্য মানুষকে বসিয়ে রেখে তাদের খেদমত করবো সারাজীবন আর নিজের মা বাবা কে সারাজীবন করে খেতে হবে, তা হবে না। যখন আমার ছেলে মেয়ে হবে তখন আমিও বসে বসে খাবো।

সদ্য এসএসসি পাস করা মেয়ের চঞ্চলতা অন্যান্য বয়সী মেয়েদের তুলনায় অনেক বেশি হয়।তারউপর আমার নিশিটা আগে থেকেই খুবই চঞ্চল তাই, নিশির চলাফেরা, কার সাথে মিশে, তার বন্ধুদের স্বভাব চরিত্র কেমন সব বিষয়ে খুব সতর্ক থাকি। মা মেয়ে একটু সময় পেলেই বিভিন্ন জনের জীবনী, যাদের সামান্য কিছু ভুল সিদ্ধান্তের জন্য অনেক কষ্ট/ক্ষতি হয়েছে, তাদের থেকে কিছু উপমা দিই,, যেন সে নিজে নিজেই বাস্তবতার সম্মুখীন হতে পারে।

সব কিছু ভালোই চলছিলো কিন্তু সমস্যা একটা ছিলো, তা হলো নিশির নিজের মা আগে থেকেই নিশিকে পোশাক বা বিভিন্ন কসমেটিক প্রসাধনী কিনে দিতেন। মেয়েটা বেশ কিছু দিন ধরে দেখছি, প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি সাজুগুজু করে বাইরে ঘুরে বেড়ায়। মাঝে মাঝে ওর নিজের মায়ের কাছে দুই এক দিন করে থেকে আসতো। ওর নিজের মায়ের ওখানে আবারও একটা ছেলে এবং একটা মেয়ে হয়েছে। যদিও উনি উনার সংসারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকে মেয়ের সাথে যোগাযোগ রাখে তাই আমিও তেমন বাঁধা দিই না।হাজার হলেও গর্ভধারিণী মা,, একটা ভুলের জন্য কি সারাজীবন মেয়েদের থেকে দূরে থাকবে?

নিশির এসএসসি পরীক্ষায় খুব ভালো রেজাল্ট করে। আমার ইচ্ছে ভালো কোন কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট শেষ করে ডাক্তার বানাবো। অনেক স্বপ্ন বুকে নিয়ে বাস করি আমি।

কলেজে ভর্তি করার পরে নিশি ওর বাবা (আনিসের) কাছে ফোন কেনার জন্য বায়না ধরে। ফোন ছাড়া নাকি পড়াশোনা সম্ভব হবে না। বুঝলাম না, বইয়ের পড়াশোনা ফোনের ভিতর কিভাবে থাকে। আমি বেশ কিছু ভালো জ্ঞানী মানুষের সাথে কথা বলি এ বিষয়ে। সবাই ফোন কিনে দিতে নিষেধ করেন। তাই আমি বুঝিয়ে বলি,, নিশি মা আমার, তোমার বাবা অসুস্থ মানুষ, তার ঔষধের জন্য অনেক টাকা খরচ হচ্ছে। তাই এই মুহূর্তে ফোন না নিয়ে এক বছর পরে নাও, ওই যে লাল বাছুড় টা বড় হলে বিক্রি করে কিনে দিবো।

নিশির হয়তো আমার কথা গুলো ভালো লাগে নি তাই কোন উত্তর না দিয়ে চলে গেছে। পাশের বাড়ির ভাসুরের ছেলের বড় মোবাইল ফোনে রজনী মাঝে মাঝে ভিডিও কল দিয়ে আমাদের সাথে কথা বলে। আজ সন্ধ্যা বেলা আমি রজনীর সাথে কথা বলতে ওই বাড়িতে যায়। রজনীকে নিশির ফোন কেনার কথা টা বলি। রজনী প্রথমে রাজি না হলেও জামাই বাবাজীর কথায় রাজি হয়ে যায়। সামনের মাসে রজনী আর জামাই বাসায় আসার সময় নিশির জন্য ফোন কিনে আনতে চেয়েছে। রজনী আমাকে বারবার নিষেধ করে দেয় যেন, নিশি না জানতে পারে তার জন্য রজনী ফোন নিয়ে আসবে। এটা নাকি নিশির জন্য সারপ্রাইজ হিসেবে আনবে।

এই সারপ্রাইজ টা যে সুখের সংসারে অশান্তির আগুন হবে বুঝতে পারি নি। বেশ কিছু দিন ধরে নিশি আমার সাথে কথা বলে না। কিছু জিজ্ঞেস করলে শুধু উত্তর দেয়। আনিস ও বিচলিত মেয়ের এমন আচরণ দেখে। আজ বিকেলে খুব সুন্দর করে সাজুগুজু করেছে নিশি। মনে মনে খুশি হলাম। মেয়েটা আবারও আগের চঞ্চলতায় ফিরে আসবে ভেবে। একটু পরেই নিশি আমার কাছে এসে বলে,, মা আমি আজ বাসায় আসবো না। মায়ের কাছে থাকবো আজ। মা আমাকে যেতে বলেছে। আমি কিছু বলতে যাবো ঠিক তখনই দেখি,, নিশির মায়ের ওই পক্ষের ছেলে, মানে নিশির সৎ ভাই এসে নিশিকে ডেকে বলছে, আপা তারাতাড়ি আসো মা তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।

যেহেতু আগে থেকেই ওর মা ভালো কিছু রান্না করলে নিশিকে নিয়ে যেতো তাই আমি আর কোন বাঁধা দিলাম না। অনেক দিন পরে আজ নিশির হাসি মুখ দেখে সব কিছু সহজ ভাবে মেনে নিলাম। পরেরদিন বিকাল হয়ে গেছে তাও নিশি বাড়ি ফেরেনি। আনিস কে বললাম, ওই পাড়াতে গিয়ে একটু খোঁজ নিয়ে আসো তো? কেন আসছে না দেখো।

আনিস বলে,, হয়তো এই প্রথম কোন সৎ মা তার সৎ মেয়েত জন্য এতো চিন্তা করে তা দেখলাম। পাশের পাড়াতেই আছে তোমার মেয়ে। অযথা এতো চিন্তা করো না। আমি তবুও জোর করে আনিস কে পাঠালাম ওই পাড়াতে। সন্ধ্যার পরপরই আনিসের সাথে নিশি বাড়িতে চলে আসে। হাতে নতুন ফোন, অনেক বড় আর সুন্দর ফোন। নিশি আমার কাছে ফোন নিয়ে এসে বলে,, দেখেছো মা কত সুন্দর ফোন,, তুমি তো শুধু মুখেই আমাকে ভালোবাসো, মন থেকে না। তোমাকে বললাম ফোন থাকলে পড়াশোনা ভালো হবে তাও দিতে চাওনি। এক বছরের বাহানা দিয়েছো। আর আমার মা অন্যের সংসারে থেকেও একবার বলার পরে কিনে দিলো।

চোখে পানি এসে ভিড় জমিয়েছে, কিন্তু কান্না করা যাবে না। আর এখন বলাও যাবে না তার জন্য আমরা ঠিকই ফোন কেনার ব্যাবস্থা করেছিলাম। কোন রকম হাসি ধরে রেখে নিশিকে বললাম, ভালোই হলো। এখন আর এর ওর বাড়িতে গিয়ে রজনীর সাথে কথা বলতে হবে না।

দেখি, রজনীকে কল দাও তো??আমি বলার সাথে সাথে রজনীকে কল করে নিশি। নিশি পরিচয় দেওয়ার পরে বলে এই নাম্বার ওর। এখন থেকে যখন তখন ওর সাথে কথা বলা যাবে। রজনী হয়তো অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেছে,, তুই ফোন কোথায় পেলি?

নিশিকি বলতে শুনলাম, কাল বিকালে মায়ের ওখানে গেছিলাম, মা আমাকে কিনে দিয়েছে।

আমি যে যন্ত্রণায় ভুগছি এখন সেই যন্ত্রণাতে হয়তো রজনীও ভুগছে। নিশি ফোন আমাকে দিয়ে বলে, নাও আপু তোমার সাথে কথা বলতে চাইছে। আমি ফোন নিতেই রজনী আমাকে বলে,, আচ্ছা মা! নিশিকি একটু বেশিই ওই বাড়িতে যায়? তুমি নিষেধ করোনা কেন? তুমিই তো বলতে খারাপের সঙ্গে থাকলে খারাপ হয়??তাহলে কেন ওই খারাপ মেয়ের কাছে যেতে দাও?

এই মুহূর্তে কোন উত্তর দিলে নিশি বুঝতে পারবে রজনীর কি প্রশ্ন ছিলো। তাই আপাতত কথা ঘুরিয়ে তারা ভালো আছে নাকি, কি করছে এখন এইসব কথা বলে কথা শেষ করলাম। রাতে নিশি না খেয়ে ঘরে চলে গেছে। সে নাকি আসার সময় খেয়ে আসছে তাই খাবে না। আমি আর রাতে কিছু খেলাম না। আনিস কে খাইয়ে দিয়ে সব কিছু গুছিয়ে বিছানায় গেলাম। মনটা খচখচ করছে শুধু। নিশির জীবন কি এই ফোনের জন্য পাল্টে যাবে।

বেশ কিছু দিন থেকে নিশি সব সময় ফোন হাতে একা একা ঘরে বসে থাকে। আগের মতো আর কাজে কর্মে বা পড়াশোনায় মন নাই তা ঠিকই বুঝতে পারি। সব সময় মোবাইল দেখে হাসে, ছবি তুলে, আরো কি কি সব করে।

আমি আজ বিকালে নিশির চুল আঁচড়ে দেওয়ার অজুহাতে মেয়েকে নিয়ে বসলাম। অনেকক্ষন এটা সেটা গল্প করার পরে নিশিকে বললাম,,

আচ্ছা নিশি, বলো তো বাবা মায়ের বৃদ্ধকালের শেষ সম্পদ কি??

চলবে,,,

সুমির অভিশপ্ত জীবনের নতুন লড়াই শুরু হবে আগামী পর্ব থেকে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here