প্রিয় বেলা – পর্ব ১৮

0
511

প্রিয় বেলা

১৮.
আদ্রর বুকের একদম মধ্যিখানে মাথা এলিয়ে রেখেছিল বেলা। কখন যে ঘুমিয়ে গেল! গভীর তন্দ্রার মাঝেও তার এক হাত আদ্রকে জড়িয়ে রেখেছে। অবাধ্য চুলগুলো ঢেকে আছে সম্পূর্ণ মুখশ্রী। ঠান্ডা বাতাসে বারবার কেঁপে উঠছে সে। আদ্র একটু ঝুঁকে সামনের জানালা দু’টো বন্ধ করে দিলো। বেলা অল্প নড়েচড়ে উঠলো। বুকে গাল ঘঁষে আরেকটু ঘনিষ্ট হলো। আদ্র মুচকি হাসলো। গভীর, নির্নিমেষ দৃষ্টে চেয়ে রইলো অনেক্ষণ। হাত বাড়িয়ে গালে পরে থাকা চুলগুলো কানের পেছনে গুঁজে দিলো। অধর ছোঁয়ালো কপালে। সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত এখন। কিছুক্ষণ পরই ন’টা বাজবে। আদ্র মৃদু স্বরে বেলাকে ডাকলো,
—“বেলা, উঠো। রাত হয়ে যাচ্ছে। বাসায় যাবে না?”

বেলা নিশ্চুপ। কিঞ্চিত ঠোঁট নড়ে উঠলো মাত্র। আদ্র স্বস্নেহে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। কোমল স্বরে আবারও ডেকে উঠলো,
—“উঠবে না বেলা?”

বেলার অভিব্যক্তি শূণ্যের কোঠায়। আদ্রর সঙ্গে লেপ্টে জড়োসড়ো হয়ে আছে সে। একদম বিড়াল ছানার মতো। উষ্ণ নিশ্বাসগুলো শার্ট ভেদ করে শরীরে বিঁধছে। আদ্র ছোট্ট দীর্ঘশ্বাস ফেললো। আলতো করে বেলার ক্ষীণ বাদামী পাঁপড়িগুচ্ছে হাত ছোঁয়ালো। দায়সারা ভাবে নিষ্প্রভ স্বরে বললো, “আমি কিন্তু তোমাকে ডেকেছি বেলা। তুমিই ওঠোনি।”

বেলার চুল থেকে একটা মিষ্টি ঘ্রাণ এসে নাসিকারন্ধ্রে ঠেকছে। ভালো লাগছে। আদ্র বেশ কয়েকবার জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিলো। বেলাকে নিজের সঙ্গে জড়িয়ে নিলো আরও নিবিড় ভাবে। মেয়েটা সাথে থাকলে তার মস্তিষ্ক আর কোনো কিছু ভাবতে চায় না। প্রশান্তিতে চোখ বুজে আসে। বাতাসেও যেন প্রেমময় বার্তা ছড়িয়ে যায়। সময়ের খেয়ালই থাকে না।

বেলার যখন ঘুম ভাঙ্গে তখন রাত প্রায় দশটা বাজছে। ধীরে ধীরে চোখ মেলে নিজের অতি নিকটে আদ্রকে দেখতে পেয়ে আঁতকে উঠলো সে। দূরে সরতে নিলেই আদ্রর শক্ত পুরুষালি হাতের কঠিন বাঁধনে আটকা পরলো। আদ্র ক্ষীণ নড়েচড়ে উঠলো। বেলাকে নিজের কাছে টেনে এনে তন্দ্রাঘোরে বললো,
—“নড়ে না বেলা। ঘুমাচ্ছি।”

আদ্রর চোখ তখনো বন্ধ। লোকটা তার দিকে না তাকালেও প্রচন্ড লজ্জা আষ্টেপৃষ্টে ধরছে তাকে। অস্থির লাগছে। কথার অবাধ্য হয়ে বেলা তবুও সড়তে চাইলো। মিনমিন করে জিজ্ঞেস করলো,
—“ক’টা বাজে?”
—“জানিনা। ঘুমাতে দাও।”
বেলা জোড় গলায় বললো,
—“বাসায় গিয়ে ঘুমাবেন। এখন ছাড়ুন। রাত অনেক হয়ে গেছে। বাসায় ফিরতে হবে।”

আদ্রর হাত ঢিলে হয়ে গেল। বেলা সরে বসলো। ব্যস্ত ভঙ্গিতে ব্যাগ থেকে ফোন বের করে পাওয়ার বাটনে চাপ দিতেই স্ক্রীনে ভেসে উঠলো বড় বড় নম্বরগুলো। দশটা বেজে এক মিনিট। নোটিফিকেশনের আইকনে বাবার কল উঠে আছে। বেলার চিন্তা বেড়ে গেল। বাসায় গেলে নিশ্চিত বকা খেতে হবে। আড়চোখে আদ্রকে দেখলো সে। কাঁচা ঘুম থেকে উঠিয়ে দেওয়ায় চোখগুলো লাল হয়ে আছে। কপালে বলিরেখা ফেলে চোখ ছোট ছোট করে রাখা। ক্ষীণ কাঁপছে হাতগুলো। শার্ট কুঁচকে আছে। বেলা জিজ্ঞেস করলো,
—“আপনি আমাকে ডাকেন নি কেন?”
আদ্রর নির্লিপ্ত উত্তর, “ডেকেছি। তুমি ওঠোনি।”
বেলা চুপ হয়ে যায়। মনে মনে আওড়ায়, “কখন ডাকলো? আমি শুনিনি কেন?”

গাড়ির ইনার লাইটটা বন্ধ ছিলো। আদ্র জ্বালিয়ে দিলো তা। এসি ছাড়লো। গরমে কপাল, গলা, ঘাড় খুব বাজে ভাবে ভিঁজে গেছে তার। চোখে এখনো ঘুম লেগে আছে। গাড়ির স্টেয়ারিং এক হাতে নিয়ন্ত্রণ করে বেলার দিকে হঠাৎ ঝুঁকে পারলো সে। বেলা বড় বড় চোখে তাকালো। তার কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানেই সীটবেল্ট লাগিয়ে সরে এলো আদ্র। সামনের রাস্তাগুলো ভাঙ্গা। বেলা ধাক্কা খেতে পারে। ব্যথা পেলে আবার?
গম্ভীর স্বরে বললো,
—“তুমি এখনো ছেলেটার নাম বলোনি বেলা।”

বেলা ওড়নার কোণা মুচড়ামুচড়ি করছে। ধীর কণ্ঠে বললো,
—“বলবো না।”
—“কেন?”
—“আপনি মারপিট করবেন।”
আদ্র ভ্রু কুঁচকালো, “সেটা তো আমি এমনিতেই করবো।”
—“এমন কিছুই করবেন না আপনি। পরে আপনার ক্ষতি হলে?” বেলা উৎকণ্ঠা হয়ে বলে উঠলো।
রেগে গিয়ে মুখ থমথমে করে ফেললো আদ্র। লোকটা অল্পতেই রেগে যায়।

নাস্তা খেতে খেতে ফোনে কথা বলছিল আদ্র। কথা শেষ হতেই রেখা বেশ আগ্রহী কণ্ঠে বললেন,
—“আদ্র জানিস কি হয়েছে?”

কথাটা বলার সময় চোখ বড় বড় করে রেখেছিলেন রেখা। আয়াজ পরোটা মুখে পুরে ঠাট্টার স্বরে বললো, “না বললে কিভাবে জানবে মা?”

রেখা চোখ পাকিয়ে তাকালেন। ধমক দিয়ে বললেন, “তুই চুপ থাক।”
তারপর আবার আদ্রর দিকে চেয়ে বললেন,
—“আদ্র, ফোন রাখ। আমার কথা কি শুনছিস তুই?”
আদ্র ফোন রেখে দিলো। পূর্ণদৃষ্টিতে তাকালো মায়ের দিকে। জিজ্ঞেস করলো, “শুনছি, বলো।”
রেখা উৎসাহিত হলেন। চোখ জ্বলজ্বল করে উৎফুল্ল কণ্ঠে বললেন,
—“বেলাকে পরশু যারা দেখতে এসেছিল, তাকে কে যেন থাপ্পড় মেরে মেরে গাল থেকে রক্ত বের করে দিয়েছে। ছেলের তো বেলাকে অনেক পছন্দ হয়েছিল। সায়েদ ভাই মানা করা সত্ত্বেও বিয়ের জন্য জোড় দিচ্ছিলো নাকি! এখন গালের ব্যথায় নড়তে পারছে না। বিয়ের জন্য মানাও করে দিয়েছে। এটা কে করতে পারে বলতো! তবে ভালোই হলো। ছেলেটাকে আমার একটুও ভালো লাগেনি।”

আয়াজের গলার খাবার আটকে গেল যেন। বিষম খেতে খেতে দ্রুত গ্লাস থেকে পানি পান করলো। বিস্ফোরিত চোখে তাকালো সে। আদ্রর মুখাবয়ব পর্যবেক্ষণ করলো। আদ্র তখন শার্টের হাতা গোটাতে গোটাতে উত্তর দিলো, “ওহ্! জানতাম না তো।”

______________

চলবে~
ঈশানুর তাসমিয়া মীরা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here