হৈমন্তিকা পর্ব – ২৭

0
333

হৈমন্তীকা

২৭.
বৃষ্টির তেজ বাড়ছে। ঝড়ো হাওয়ার তান্ডব চলছে চারপাশে। হৈমন্তী হাত বাড়িয়ে দিলো বৃষ্টির সম্মুখে। শীতল পানিগুলো হাতে স্পর্শ হতেই কিঞ্চিত হাসলো। আনমনেই প্রশ্ন করলো, “আপনার বৃষ্টি কেমন লাগে তুষার?”

বলতে বলতে তুষারের মুখপানে তাকালো সে। তুষার নিরুত্তর। দু’হাতের তালুতে মুখ ভর করে নিজের বেসামাল চাহনি দিয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে হৈমন্তীকে। পলক ফেলছে না। আঁখিজোড়ায় কি ভীষণ গভীরতা, মাদকতা! আড়ষ্টতা জেঁকে বসল হৈমন্তীর মাঝে। কান, গাল ভয়াবহ উষ্ণতায় ভারি হতে শুরু করলো। এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে সে বললো, “অন্যদিকে তাকান তুষার।”

তুষার শুনলো না। আগের চেয়েও আরেকটু গভীর হলো যেন তার চাহনি। দমকা হাওয়ায় মাথার ঘোমটা-টি পরে যেতেই এগিয়ে আসলো সে। স্বস্নেহে ঘোমটা-টি আবারো তুলে দিলো। কপাল স্পর্শ করে ছোট ছোট চুলগুলো কানের পেছনে ঠেলে দিলো। নিজের সীমা আরেকটু লঙ্ঘন করলো তুষার। নেত্রের পাঁপড়ি গুচ্ছে একবার আঙুল ছোঁয়ালো। হৈমন্তীর চোখ বুজে গেল সঙ্গে সঙ্গে। পরক্ষণেই নিজের ললাটে রুক্ষ অধরের শীতল স্পর্শ পেল সে। কপালে কপাল ঠেকিয়ে তুষার গম্ভীর স্বরে প্রশ্ন ছুড়লো,
— “আপনি এত সুন্দর কেন হৈমন্তীকা?”

হৈমন্তী থমকালো। বক্ষস্থলে দারুণ কাঁপন অনুভব করলো সে। হঠাৎ স্তব্ধ পরিবেশটায় শব্দ দূষণ সৃষ্টি করে সশব্দে বেজে উঠলো তুষারের ফোন। তুষার সরে এলো। ভ্রু বাঁকিয়ে প্রচন্ড বিরক্তির সঙ্গে পকেট হাতড়ে ফোন বের করলো। কিছু সময় স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে থেকে রিসিভ করলো কল। স্বাভাবিক গলায় বললো,
— “বলো মা।”

ওপাশ থেকে হেনার দৃঢ় ধমক শোনা গেল,
— “কোথায় তুই তুষার? কি শুরু করেছিস আজকাল? বাসায় আসছিস না কেন?”
তুষারের ছোট্ট উত্তর, “আসবো।”
— “কখন আসবি? আমাকে টেনসনে টেনসনে অসুস্থ বানাতে চাচ্ছিস তুই? কালকেও বাসায় আসিস নি, আজকেও আসার নাম নেই। আসলে কি চাচ্ছিসটা কি তুই?”
— “আমার বিয়ে করিয়ে দাও হৈমন্তীকার সঙ্গে।”

সহজ স্বীকারোক্তি। হেনা যেন একটু ভড়কালেন। কয়েক সেকেন্ড কিছুই বলতে পারলেন না। একটু ধাতস্থ হতেই বললেন,
— “এটা হয় না তুষার। তোর বাবা কখনো মানবেন না।”
তুষার তপ্ত নিশ্বাস ফেললো। কান থেকে ফোন সরাতে সরাতে বললো, “রাখছি।”

পরপরই কেটে দিলো ফোন। আবছা আবছা তুষারের ফোনালাপ ক্ষীণ শুনতে পেয়েছে হৈমন্তী। অনেকটা জড়তার সঙ্গে সে বললো, “আপনি বাসায় যাচ্ছেন না কেন তুষার?”
তুষার জবাব দিলো না। হৈমন্তী আবারও বললো,
— “কথা বলছেন না কেন? রাতে কিছু খেয়েছেন? নাকি না খেয়েই আছেন?”

এবারও জবাবে কিছুই বললো না সে। নিজের হাতের ভাঁজে হৈমন্তীর হাতকে শক্ত বাঁধনে আবদ্ধ করে নিলো। দৃষ্টি সামনের অদূর আঁধারে ফেলে কেমন অদ্ভুদ গলায় বললো,
— “আমি আপনার আগে জন্ম নিলাম না কেন হৈমন্তীকা? এ আফসোস আমার কখনোই মিটবে না।”

_____

খাবার টেবিলে পিনপতন নীরবতা চলছে। হৈমন্তী নতজানু হয়ে পরোটার ছোট্ট টুকরো মুখে দিতেই আসরাফ সাহেব থমথমে গলায় রাবেয়াকে বললেন,
— “রাবেয়া, তোমার মেয়েকে জিজ্ঞেস করো। ওই ছেলের সঙ্গে সে সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে কি-না।”

উত্তরের আশায় রাবেয়া সঙ্গে সঙ্গে হৈমন্তীর দিকে তাকালেন। গলায় খাবার আটকে গেল যেন তার। জবাবে কি বলবে সেটা ভাবতে ভাবতেই বেশ সময় কেটে গেল। আসরাফ সাহেব বিরক্ত হলেন মেয়ের জবাবহীন আচরণে। রেগে গিয়ে বড় বড় পা ফেলে চলে গেলেন নিজ রুমে। হৈমন্তীকা চুপচাপ বসে রইলো চেয়ারে। জীবনের এই জটিলতা আর ভালো লাগছে না তার।

ভার্সিটির পাঠ চুকিয়ে অপরাহ্নে বাসার উদ্দেশ্যে বের হচ্ছিল হৈমন্তী। রাস্তার ধারে নাওয়াজকে দেখে কপাল কুঁচকে গেল তার। নাওয়াজ হাসি মুখে এগিয়ে এলো। প্রফুল্ল স্বরে বললো,
— “কেমন আছো হৈমন্তী?”
হৈমন্তী কানে নিলো না সে কথা। প্রশ্ন করলো,
— “আপনি এখানে, এ সময়ে?”
— “এমনি! এ রাস্তা দিয়েই যাচ্ছিলাম। তাই ভাবলাম তোমাকে তোমার বাসায় পৌঁছে দেই।”

হৈমন্তী এদিক-ওদিক তাকালো। বললো, “লাগবে না। আমি একা একাই যেতে পারবো।”
নাওয়াজ ম্লান হাসলো, “তুমি কি এখনো আমার ওপর রেগে আছো হৈমন্তী?”
— “না।”
— “তাহলে আমার সাথে যেতে সমস্যা কোথায়? চলো, তোমাকে পৌঁছে দেই।”

এ পর্যায়ে ভীষণ বিরক্ত হলো হৈমন্তী। সে তো বলেছে যাবে না। তাহলে এত জোড়াজোড়ি করছে কেন? নাকচ করবে তার আগেই হঠাৎ পেছন থেকে কারো ঠাট্টা সমেত কণ্ঠ ভেসে আসলো,
— “কোনো সমস্যা মিস্টার নাওয়াজ? আমার বউকে এভাবে টানাটানি করছেন কেন? বউ আমার বড্ড নাজুক। ছিঁড়ে যাবে তো!”

শুনে ভ্রু কুঁচকালো নাওয়াজ। পাশ ফিরে তুষারকে দেখে চোখ আরও ছোট ছোট করে তাকালো, “কি বললে? বউ? কে? হৈমন্তী?”
প্রশ্নের উত্তর দিলো না তুষার। কৃত্রিম হাসোজ্জল মুখশ্রীর চোয়াল শক্ত হয়ে এলো। কি ভেবে উঁচু গলায় হেসে উঠলো নাওয়াজ। বললো,
— “মজা করছো আমার সঙ্গে? আঙ্কেল তোমার মতো ছেলের সঙ্গে কখনোই হৈমন্তীর বিয়ে দেবে না। আর বয়স কত তোমার? হৈমন্তীর চেয়ে তিন বছরের ছোট না তুমি? বিশ বছর বয়সে বিয়ে করে ফেললে? পুলিশ ধরলো না?”

জবাবে ঠোঁট ক্ষীণ বাঁকালো তুষার। এক গালে হাসলো। তাচ্ছিল্য সমেত বললো, “হৈমন্তীকা থেকে তিন বছর না, দুই বছর পাঁচ মাসের ছোট আমি। বিয়ের অনেক আগেই আমার বয়স একুশ হয়ে গেছে। আর কিছু?”

____________

চলবে~
ঈশানুর তাসমিয়া মীরা

[ছোট ও এলোমেলো পর্বের জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। এক জায়গায় এসেছি। এখানে নেট, কারেন্ট অতি দূর্বল। আর অনুরোধ, সবাই একটু গঠনমূলক মন্তব্য করবেন। আমি চেষ্টা করবো সকলের প্রতিউত্তর দেওয়ার।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here