#জলফড়িঙের খোঁজে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- 56 +57+58
.
চারপাশটা স্তব্ধ হয়ে আছে। সবকিছুই কেমন স্হির। আকাশের গোল চাঁদ জ্বলজ্বল করছে। তার সামনে দিয়ে মাঝেমাঝে ভেসে যাচ্ছে হালকা মেঘের দল। হঠাৎ হঠাৎ নিশাচরের ডাক শোনা যাচ্ছে। রিখিয়া ব্যালকনির রেলিং এর হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে রিখিয়া। পরনে লাল বেনারসি, গায়ে কিছু গহনা আছে আর কিছু খুলে রেখেছে, চুল খুলে দিয়েছে। সত্যিই একমুহূর্তই যথেষ্ট সবকিছু বদলে দেওয়ার জন্যে। ওরও জীবনের সবকিছু বদলে একদিনেই। এখন বিবাহিত। ওর বিয়ে হয়ে গেছে। এখন ওর জীবন জুড়ে গেছে অন্যকারো সাথে। ভাবতে ভাবতে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল রিখিয়া। হঠাৎ করেই পেছন থেকে একজোড়া হাত ওকে জড়িয়ে ধরে কাধ থুতনি রাখল। রিখিয়া কেঁপে উঠল হালকা। পরক্ষণেই বুঝতে পারল যে ওকে জড়িয়ে সে ওর স্বামী। কিছুক্ষণ চুপ থেকে রিখিয়া নিচু কন্ঠে বলল,
” এতো দেরী করলেন যে?”
” ওই বাঁদরগুলো আটকে রেখেছিল। অনেক করে কাঠখড় পুড়িয়ে তবেই এসছি। জানো আমি ভাবতেও পারিনি আজকের রাতটা আমার জীবনে আসবে। সত্যিই তুমি পুরোপুরি আমার হয়ে যাবে।”
রিখিয়া হাতদুটো থেকে নিজেকে মুক্ত করে পেছন ঘুরে বলল,
” আমরা স্বার্থপর হয়ে গেলাম, বিহান?”
বিহান রিখিয়ার চোখের দিকে কিচুক্ষণ তাকিয়ে থেকে মুচকি এক হাসি দিল। এরপর ওর দুই বাহুতে হাত রেখে বলল,
” আমারও প্রথমে সেটাই মনে হচ্ছিল। গিল্টি ফিলও করছিলাম প্রচুর। কিন্তু শাফিনের সাথে কথা বলার পর বুঝতে পারলাম যা হয়েছে ভালোই হয়েছে, সবার জন্যে।”
রিখিয়া অবাক হয়ে বলল,
” শাফিন ভাইর সাথে কথা হয়েছে তোমার?”
বিহান পকেট থেকে একটা কাগজ বেড় করতে করতে বলল,
” হ্যাঁ। তোমার জন্যে একটা চিঠি আছে। শাফিন দিয়েছে।”
বলে ভাজ করা একটা কাগজ রিখিয়ার দিকে এগিয়ে দিলো। রিখিয়া অবাক হয়েই কাগজটা নিয়ে আস্তে করে ভাজ খুলে পড়তে শুরু করল;
‘রিখিয়া
প্রথমে তোমার কাছে ক্ষমা চাইঙছি। ভালোবাসার মানুষটার চোখের জলের কারণ হওয়া মস্ত বড় অন্যায়। আমার জন্যে তোমাকে এতোটা কাঁদতে হবে সেটা কখনও ভাবতেই পারিনি। সত্যিই অন্যায় করে ফেলেছি। তবে এটা ঠিক যে তোমাকে সত্যিই ভালোবেসেছি। কিন্তু তোমার ভালোবাসার পাল্লা সবসময়ই ভারি ছিল। আমারই ভুল ছিল যে তোমার মন পড়তে দেরী করে ফেলেছি। বিহান তোমাকে মাত্র দুবছর যাবত ভালোবাসলেও ওর ভালোবাসা একদম খাটি। আমি তোমাকে মন থেকে অনেকটা সময় ধরে ভালোবাসলেও আমার ভালোবাসায় কিছুটা হলেও খুঁত ছিল। তোমার মনে প্রশ্ন উঠত না? তোমার ভাই কেন আমার সাথে তোমার বিয়ে দিতে এতো ইন্টারেস্টেড ছিল? তুমি হয়তো জানোনা আমি তোমার বড় ভাইকে বড় মাপের এমাউন্ট অফার করেছিলাম তোমাকে যেকোন মূল্যে রাজি করানোর জন্যে। আমার মনে কোন খারাপ উদ্দেশ্য না থাকলেও আমার বেছে নেওয়া পদ্ধতি ভুল ছিল। আমি তোমাকে পাওয়ার মূল্য নির্ধারণ করেছিলাম, কিন্তু বিহান তা কখনও পারত না। ও তোমাকে এতোটা ভালোবাসার পরেও বিন্দুমাত্র ইমোশনাল প্রেশার ক্রিয়েট করেনি তোমার ওপর। তুমি যাতে দোটানায় না ভোগো, কষ্ট না নাও তাই তোমার কাছে নিজের ভালোবাসার প্রকাশটুকু করতে চায়নি। কী ভাবছ? আমি কীকরে জানলাম? কাল রাতে বিহানকে বাড়িতে খুঁজে না পেয়ে খুঁজতে বেড়িয়েছিলাম ওকে। আর তোমাদের ওভাবে দেখে আমার বুঝতে একটুও অসুবিধা হয়নি যে বিহানই তোমাদের সেই ভালোবাসা। তোমাদের কথপোকথন আর কান্না দেখে আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে কতবড় ব্লান্ডার হতে যাচ্ছিল। আর বাড়ি ফিরে আসার পর সৌহার্দ্য আর বিহানের কিছু কথাও শুনেছি আমি। আমি জানি তুমি সবার কথা ভাবো কিন্তু নিজের কথা না। তুমি জানতে আমার বাবা এমপি। আর আজ আমার বিয়ে তোমার সাথে না হলে আমার বাবার সম্মান নষ্ট হবে। ফ্যামিলির রেপুটেশন খারাপ হয়ে যাবে। তাই কত অনায়াসে নিজের সব সুখ ত্যাগ করে দিচ্ছিলে। আর তোমার পাগল প্রেমিকও। কিন্তু আমি কীকরে এতো স্বার্থপর হই বলোতো? যাকে ভালোবেসেছি তার সারাজীবনের কষ্টের কারণ কীকরে হই? তাই যেটা করেছি একদম ঠিক করেছি। ভালো থাকবে তুমি। বিহান তোমাকে আমার চেয়েও ভালোরাখবে। তবে ভেবোনা তোমার বিরহে আমি সারাজীবনে কষ্টে মরব। এতোগুলোদিন আমি তোমার অপেক্ষায় ছিলাম এইজন্য নয় যে আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচব না। কারো জন্যে কেউ মরে যায়না। আমি এইজন্যই অপেক্ষায় ছিলাম যাতে পরে আমাকে আফসোস করেতে না হয় যে আমি অপেক্ষা করিনি। কিন্তু আজ আমার কোন অফসোস নেই। আমি নিজের মনকে এখন বোঝাতে পারব যে আমি অপেক্ষা করেছিলাম। কিন্তু তুমি আমার ভাগ্যে ছিলেনা। আর ভাগ্যের ওপর কারো হাত থাকেনা। তাই যা হওয়ার তাই হয়েছে। এতে কারো দোষ নেই। তাই যদি মন থেকে কখনও আমায় বন্ধু ভেবে থাকো একফোটাও অপরাধবোধে ভুগবে না। প্রমিস রইল কিন্তু। বিহানকে ভালো রেখো। অনেক অনেক শুভকামনা তোমার জন্যে।
ইতি
তোমার অন্যতম শুভাকাঙ্ক্ষী”
চিঠিটা পড়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল রিখিয়া। সত্যিই শাফিন ওর অন্যতম একজন শুভাকাঙ্ক্ষী। আজ শাফিন ওর জন্যে যা করেছে তার ঋণ ও কোনদিন শোধ করতে পারবেনা। করতে চায়ও না। কিছু মানুষের কাছে ঋণী থাকতে ভালোলাগে। আজ সকাল থেকেই রিখিয়ার বিয়ের তোরজোড় চলছিল। তুর্বী আর সৌহার্দ্য দুজনেই হতাশ হয়েছিল। ভেবেই নিয়েছিল আর কিছুই সম্ভব নয়। রিখিয়া আর বিহান গত রাতেই নিজেদের ভাগ্যকে মেনে নিয়ে একেওপরের থেকে অনেক দূরে সরে এসছিল, অনুভূতিহীন হয়ে পরেছিল। রিখিয়াকে গোসল করাতে নেবে তখনই হল সমস্যা। শাফিন রিখিয়াদের বাড়ি এসে সোজসাপ্টাভাবেই বলে দিল ও রিখিয়াকে বিয়ে করবে না। সবাই বেশ অবাক হয়েছিল শাফিনের এমন কথায়। উপস্থিত সকলেই হতভম্ব। পেছন পেছন শাফিনের পরিবারও এসছে। সবাই কানাঘুষা করছে। কেউ কেউ শাফিনকে নানারকম প্রশ্ন করেছে। শাফিন এরপর ওর রিখিয়া আর ওর পরিবারকে সবার আড়ালে করে বসিয়ে।সবাইকে শান্ত করে এরপর সত্যি সত্যি সবটাই খুলে বলে দিলো। রিখিয়া-বিহান, সৌহার্দ্য তুর্বী চারজনই ভীষণ অবাক হয়েছে। শাফিন সবটা কীকরে জানলো কীকরে? সবটা শোনার পর রিখিয়ার বাবা-মা প্রচন্ড আফসোস করলেন। রিখিয়াকে বকলেনও। নিজের এরকম ক্ষতি কেউ করে? রিখিয়ার বাবা তো বলেই দিলেন, ওনার মেয়ের খুশিই ওনার জন্যে সব। ওনার মেয়ের বিয়ে বিহানের সাথেই হবে। শাফিনের বাবা নিজের মানসম্মানের কথা ভেবে একটু ঝামেলা করেছিলেন কিন্তু শাফিনের জেদের সাথে পেরে উঠলেন না। অনেক তর্ক আর আলোচনার পর অবশেষে এটাই ঠিক হল যে আজ রিখিয়া আর বিহানের বিয়ে হবে। সৌহার্দ্য আর তুর্বীর বুক থেকে একপ্রকার পাথর নেমে গেল। সৌহার্দ্য তো শাফিনকে গিয়ে জড়িয়ে ধরল। তুর্বীও রিখায়াকে জড়িয়ে ধরে হেসে দিয়েছিল। কিন্তু রিখিয়া আর বিহান তখনও ঘোরের মধ্যে ছিলো। ওদের কাছে সবটাই স্বপ্ন মনে হচ্ছিল। আর যখন ওরা স্বাভাবিক হল, তখন মনে মনে ভীষণ খুশি হলেও একটা গিল্টি ফিলিংও হচ্ছিল শাফিনের জন্যে। এরপর বেশ আনন্দের সাথেই রিখিয়া আর বিহানের বিয়েটা হয়ে যায়। পুরোটা সময় শাফিন বেশ হাসিমুখেই ছিল। সেই হাসির পেছনে হয়ত একবুক কষ্টও ছিল। তবে বিহান রিখিয়ার কাছে পুরো ব্যাপারটাই ছিল একটা মিরাকল। ওরা কখনও ভাবেনি ওদের সাথে হঠাৎ এমন কিছু হতে পারে। বিদায়ের পর রিখিয়াকে নিয়ে ওরা বিহানের ফ্লাটেই এসে উঠেছে। সাথে সৌহার্দ্য তুর্বীসহ শাফিন আর আরও কিছু বন্ধু বান্ধবী এসছে।
বিহানের ডাকে ভাবনা থেকে বেড়িয়ে আসে রিখিয়া। বিহান রিখিয়ার কপালের চুলগুলো সরাতে সরাতে বলল,
” মন খারাপ করোনা। আজ যদি তোমার বিয়েটা শাফিনের সাথে হয়ে যেতো। না তুমি ভালো থাকতে না শাফিন। সেটা শাফিনের কথায় আজ বুঝেছি আমি। শুধু আমরা উইশ করতে পারি, যাতে ওর জীবনে এমন কেউ চলে আসে যে ওকে ভীষণ ভালোবাসবে আর ভালোরাখবে।”
রিখিয়া মাথা নাড়ল। বিহান বিহান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
” আমার কাছে এখনো সবটাই স্বপ্ন মনে হচ্ছে জানো? কেমন অদ্ভুত এক অনুভূতি। তুমি আমার স্ত্রী। যেখানে কাল অবধি আমি তোমাকে হারানোর যন্ত্রণায় ছটফট করছিলাম। গুমরে মরছিলাম। আমি ভাবতেও পারিনি যে__”
রিখিয়া মুচকি হেসে বলল,
” আল্লাহ যা করেন সবার ভালোর জন্যে করেন। হয়তো আমাদের দুজনের এই কষ্ট পাওয়াটা দরকার ছিল। এই কষ্টটাই হয়তো আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছে আমরা একে ওপরকে কতটা চাই। তাই দেখুন, ভুল করে হলেও আমার হাতে আপনার নামের মেহেদীই পরেছি।”
বিহান রিখিয়ার হাতের দিকে তাকিয়ে থেকে মুচকি হেসে রিখিয়ার কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে বলল,
” আমাকে ক্ষমা করে দিও। অনেক কাঁদিয়েছি তোমাকে। অনেকটা কষ্ট দিয়েছি।”
রিখিয়া মুখ হালকা ফুলিয়ে বিহানের দিকে তাকিয়ে বলল,
” আর কখনও কষ্ট দেবেন না তো?”
” কখনও না। কথা দিচ্ছি সারাজীবন বুকে আগলে রাখব।”
” জানেন আমি শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম। মনে হচ্ছিলো যে মরে__”
বিহান সাথেসাথেই রিখিয়ার ঠোঁটে আঙুল রেখে বলল,
” চুপ! আজকের রাতে এসব কথা একদম বলবেনা। আজকের রাতটা আমাদের জন্যে অনেক স্পেশাল। অনেকটা সাধনার পর পেয়েছি একে ওপরকে। তাই এই রাতটা বিশেষ হওয়া খুব জরুরি, খুব।”
শেষের কথাটা রিখিয়ার কানের কাছে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল বিহান। রিখিয়া লজ্জা পেয়ে গেল হঠাৎ করেই। সাথেসাথেই বিহানকে জড়িয়ে ধরে ওর বুকে মুখ লুকিয়ে ফেলল। বিহানও শক্ত করে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরল নিজের প্রিয়তমাকে। আজ মনের সব দুঃখকে মুছে ফেলে আজ এক হওয়ার পালা। নতুন যাত্রা শুরু করার পালা।
___________
অনেকটাই রাত হয়ে গেছে। সৌহার্দ্য ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে। বিহান আর রিখিয়ার বিয়েটা এভাবে হয়ে যাওয়াতে ও ভীষণ খুশি হয়েছে। অবশেষে ওর ভাইটার জীবনে কেউ তো এসছে, যে ওকে ভালো রাখবে। কিন্তু এইমুহূর্তে মন খারাপও কম হচ্ছেনা। আজ সারাদিন এত আনন্দের মধ্যেও তুর্বীর ফ্যাকাশে মুখটা ওর সহ্য হচ্ছিলো না। যতই অভিমান থাকুক, ওতো ভালোবাসে মেয়েটাকে। মেয়েটা যে কতটা কষ্ট আছে সেটা ও জানে। ও বুঝে গেছে এবার তুর্বীর অনুভূতিগুলো একদম খাঁটি। আচ্ছা? অভিমানটা আর না করলে হয়না? এতে কার লাভ হচ্ছে? ও নিজেও কষ্ট পাচ্ছে। জীবনকে তো আরো একটা সুযোগ দেওয়াই যায়। তাইনা? এসব ভাবতে ভাবতেই তুর্বী এসে দাঁড়াল ওর পাশে। কিন্তু সৌহার্দ্যর দিকে না তাকিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল। সৌহার্দ্য আড়চোখে একবার তাকিয়ে থেকে বলল,
” ঘুমাও নি?”
তুর্বী আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল,
” ঘুম আসছিল না।”
সৌহার্দ্য কিছুই বলল না। তুর্বী নিজেই বলল,
” আজ সত্যিই মিরাকল হল তাইনা? সত্যিই ভাবিনি রিখু আর বিহানের বিয়েটা এভাবে হয়ে যাবে। সবটাই স্বপ্নের মত মনে হচ্ছে।”
সৌহার্দ্য একটু হেসে বলল,
” সবটাই শাফিনের জন্যে হয়েছে। ওই ছেলেটার কাছে আমরা সবাই ঋণী। তবে সত্যি বলতে ওরা একে ওপরের ভাগ্যে লেখা ছিল। তাই শেষ মুহূর্তে এসে সবটা বদলে গেল।”
তুর্বীর সৌহার্দ্যর দিকে তাকিয়ে বলল,
” আর আমরা?”
সৌহার্দ্য হালকা চমকে উঠল। কী বলবে ও? ওর মনতো চাইছে তুর্বীকে। কিন্তু বলতে পারছেনা। তারওপর কালকে ওসব কথা বলার জন্যে মনে মনে গিল্টি ফিলিংস ও হচ্ছে ওর। সৌহার্দ্যকে চুপ থাকতে দেখে তুর্বীর মন আবার কেঁদে উঠল। ও কাঁদোকাঁদো কন্ঠে বলল,
” সৌহার্দ্য আমি জানি আমাদের সম্পর্ক চলাকালীন ঐ ছ-মাস আমি তোমাকে অনেক আঘাত করেছি। কিন্তু আমাকে কী আর একটা সুযোগ দেওয়া যায় না? আমি কথা দিচ্ছি আমি আর কখনও ওমন ছেলেমানুষী করব না। তোমাকে কষ্টও দেবোনা। আই লাভ ইউ সৌহার্দ্য।”
সৌহার্দ্য রেলিং শক্ত করে চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে ফেলল। ওর গলা কাঁপছে। কিন্তু কিছুই বলল না। বেশ অনেকক্ষণ সৌহার্দ্যর কাছে কোন উত্তর না পেয়ে ও একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
” আমি যখন ছোট ছিলাম। তখন দেখতাম মা-বাবার মধ্যে দারুন বন্ডিং ছিল। এমন মনে হতো যেন একে ওপরের প্রাণ। একদম মেড ফর ইচ আদার ইউ নো। কিন্তু মা মারা যাওয়ার ঠিক একসপ্তাহ পর বাবা আরেকজন মহিলাকে নিয়ে বাড়িতে এলেন। তার সাথে একটা বাচ্চা। মজার ব্যাপার ছিল যে ঐ ছেলে আমার বাবারই ছিল। মানে বুঝলেন? উনি আমার মা জীবিত থাকতেই দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলেন। ঠকিয়েছিলেন আমার মাকে। হয়তো মা সত্যিটা না জেনেই চলে গেছে। বা হয়তো সবটাই জেনে গেছিল। কিন্তু সেদিন আমি স্তব্ধ হয়ে গেছিলাম। সব বিশ্বাস, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা সেদিনই চলে গেল। সেদিন প্রথম মনে হয়েছিল যে ভালোবাসা বলে কিছুই হয়না। সবটাই সাময়িক আবেগ। কাউকেই বিশ্বাস করা যায়না। সবাই ঠকায়। তাই আবেগ জিনিসটা বিসর্জন দিয়েছিলাম। সেটাই করতাম যা ভালোলাগত। কোন কিছু শুরু করার আগে এক্সপিরিমেন্ট করে দেখতাম যে সেটা আমার জন্যে কেমন হবে। ধীরে ধীরে তা অভ্যাসে পরিণত হল। কিন্তু তুমি আমায় বুঝিয়েছ যে ভালোবাসা কী হয়, বিশ্বাস কী হয়, সম্পর্ক কী হয়। আমাকে ভালোবাসতে শিখিয়ে মাঝরাস্তায় এভাবে একা ফেলে যেওনা সৌহার্দ্য। আমি নিতে পারব না।”
সৌহার্দ্য স্তব্ধ হয়ে শুনছিল এতক্ষণ। মেয়েটার মনেও যে এরকম একটা ক্ষত আছে ও জানতোই না। সত্যিই একটা মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ থাকে।অনেকটা সময় হয়ে গেল কেউ কিছুই বলছে না। দুজনের মনই ছটফট করছে। সৌহার্দ্যর দিক থেকে কোন উত্তর না পেয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে তুর্বী চলে যেতে নিলেই সৌহার্দ্য হাত ধরে ফেলল। তুর্বী অবাক চোখে তাকাল সৌহার্দ্যর দিকে। সৌহার্দ্য গম্ভীর কন্ঠে বলল,
” আমি তোমাকে এক্সেপ্ট করতে পারব না।”
তুর্বীর দৃষ্টি অসহায় হয়ে উঠল। চোখ দিয়ে জল পরবে ভাব। সৌহার্দ্য বলল,
” আমি সেই তুর্বীকেই চাই। যেই তুর্বীর অদ্ভুত কথা শুনে আমার মন ভালো হয়ে যেত। যে কাউকে পরোয়া করতো না। যে সারাদিন হেসে খেলে বেড়াতো। আমি আমার সেই মিস ভয়ংকরীকে চাই।”
তুর্বী অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল সৌহার্দ্যর দিকে। সৌহার্দ্য মুচকি হেসে বলল,
” তো মিস তুর্বী? উইল ইউ বি মাই মিসেস ভয়ংকরী?”
তুর্বী চোখের জল ছেড়ে দিল। হেসে সৌহার্দ্যকে জড়িয়ে ধরতে গেলেই সৌহার্দ্য হাত দিয়ে বাধা দিয়ে বলল,
” আ..আ। আরেকটা কথা। এসব এক্সপিরিমেন্ট করা আর চলবে না। এটা জীবন, সাইন্স ল্যাবরেটরি না ওকে?”
তুর্বী হেসে দিয়ে সৌহার্দ্য বুকে কিল মারল। সৌহার্দ্য হেসে দিয়ে জড়িয়ে ধরল তুর্বীকে। তুর্বীর মনে হল ওর সকল না পাওয়া পাওয়ায় পরিণত হল। এখানেই ওর চির শান্তি।
বিচ্ছেদ, বিরহ, কষ্ট, যন্ত্রণার আগুনে পুড়ে পুড়ে ওদের চারজনের ভালোবাসা আজ খাঁটি হয়ে গেল। জীবনের লড়াইয়ের চারজনকই পেল জলফড়িঙের খোঁজ।
#চলবে…
[ রি-চেইক করিনি। আজ বর্ষণ দেওয়ার কথা থাকলেও। ইনবক্সে, গ্রুপে সবার এতো এতো রিকোয়েস্ট ফেলতে না পেরে জলফড়িঙ-ই দিলাম। আর তাছাড়াও এটা দুই পর্বেই শেষ হয়ে যাবে। বর্ষণ প্রেমিরা এরপর নিয়মিতই বর্ষণ পাবেন।]#জলফড়িঙের খোঁজে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#পর্ব- ৫৭
.
সকালের নিরবতার মাঝে পাখির কিচিরমিচির শব্দ দিনের শুরুটা আরও মিষ্টি করে দেয়। রোদের মৃদু আলো ইতিমধ্যেই চারপাশে ছড়িয়ে পরেছে। প্রকৃতিও যেন নতুন সকালকে স্বাগত জানাচ্ছে। বেশ লম্বা সময় ধরে শাওয়ার নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে এলো রিখিয়া। হালকা গোলাপি রঙের একটা শাড়ি গায়ে জড়িয়ে নিয়েছে। এমনিতে শাড়ি পরার অভ্যেস না থাকলেও আজ অদ্ভুতরকম ভালোলাগা কাজ করছে। চুল মুছতে মুছতে বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে থাকা বিহানের দিকে একপলক তাকাল। উন্মুক্ত শরীরের অর্ধেকটা চাদরের বাইরে বেড়িয়ে আছে। বেঘোরে ঘুমোচ্ছে সে। ঘুমানোরই কথা, প্রায় ভোর রাতের দিকেই ঘুমিয়েছে দুজন। রিখিয়ারও ঘুম হয়নি। কিন্তু অভ্যেস না থাকায় বিহানের মত পরে পরে ঘুমাতে পারছেনা। দেয়ালে টানানো ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল সাড়ে আটটা বেজে গেছে। এখন বিহানকে জাগাতে হবে। ও টাওয়েল টা রেখে বিছানায় বসে আলতো গলায় কয়েকবার ডাকল বিহানকে। কিন্তু বিহান নড়লোও না। রিখিয়া ভ্রু কুচকে ফেলল। এতো ঘুম কেন লোকটার? বড্ড অলস। ও এবার বিহানকে হালকা ঝাকিয়ে একটু জোরে ডাকল। বিহান এবার একটু নড়ে উঠল। আরও দু-বার ডাকার পর বিহান ঘুম ঘুম কন্ঠে বলল,
” রিখু আরেকটু ঘুমাতে দেওতো। সারারাত জাগিয়ে রেখেছো।”
রিখিয়া অবাক হয়ে গেল। ও জাগিয়ে রেখেছে? কী অনায়াসে নিজের দোষটা ওর ঘাড়ে চাপিয়ে দিচ্ছে। আস্ত বাটপার! ও এবার আরও জোরে ঝাকিয়ে বলল,
” উঠুন। একদম নিজের দোষ আমার ঘাড়ে চাপাবেন না। একটু পর সৌহার্দ্যরা ডাকতে চলে আসবে। উঠুন না?”
কিন্তু বিহানের কোন হেলদোলই নেই। রিখিয়া কোনভাবেই না পেরে এবার পাশের গ্লাস থেকে জল নিয়ে সোজা বিহানের মুখে মেরে দিল। বিহান এক ঝটকায় উঠে বসে একবার নিজের দিকে তাকিয়ে বোকার মত রিখিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,
” এটা কী হল?”
রিখিয়া হেসে দিয়ে বলল,
” আপনাকে ঘুম থেকে তোলার স্পেশাল টেকনিক ইউস করা হল। সৌহার্দ্য শিখিয়েছেন। একদম ঠিক কাজে দিয়েছে।”
বিহান উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
” তোমাকে তো…”
কিন্তু ও ধরার আগেই রিখিয়া দৌড়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেল। বিহান হতাশ হয়ে বিছানায় বসে পরল। হঠাৎ রিখিয়া দরজা দিয়ে উঁকি দিয়ে বলল,
” দ্রুত ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিন। ওখানে যেতে হবে আবার।”
বলে আবার চলে গেল। বিহান মুখ ফুলিয়ে বসে রইল। ওর ভাইও অবশেষে ওর সাথে ষড়যন্ত্র করল? রিখিয়াকে এসব শিখিয়ে দিয়েছে? ওকে ঘুম থেকে তোলার টেকনিক? বাহ! কোন ব্যাপারনা। ওরও দিন আসবে। এসব ভেবে ওয়াসরুমের দিকে পা বাড়ালো বিহান।
_________
ছোট করেই বিহান আর রিখিয়ার রিসিপশনের আয়োজন করা হয়েছে। বিহানের ফ্লাটে তেমন স্পেস নেই তাই কমিউনিটি সেন্টারেই সকল আয়োজন করা হয়েছে। খুব বেশি মানুষ ডাকেনি। কাছের কিছু লোকজনদেরই ডাকা হয়েছে। ফরিদকে ইনভাইট করেছিল বিহান। কিন্তু এতো অল্প সময়ে ও এসে পৌঁছতে পারবেনা তাই পরে একদিন আসবে বলেছে। সকলেই চলে এসছে ইতিমধ্যে। সবটা দেখে নিয়ে সৌহার্দ্য আর শাফিন নিজেরাও রেডি হয়ে এলো। শাফিনকে দেখে বোঝার উপায় নেই যে যে মেয়েটার রিসিপশনে ও এভাবে কাজ করছে, এতো আনন্দ করছে, গতকাল সকাল অবধি সে মেয়েটার ওর বউ হওয়ার কথা ছিল। সৌহার্দ্য, তুর্বী ব্যাপারটা খেয়াল করলেও কিছু বলছেনা। এখন কী-বা বলা যায়? বরং সবার মাঝে থেকে যদি ওর মনটা একটু ভালো থাকে সেটাই ভালো। এরমধ্যে বিহানও তৈরী হয়ে গেছে। তুর্বী আর নুসরাত মিলে রিখিয়াকে সাজিয়েছে আজ। নুসরাত গতকাল রাতেই চলে এসছে। রিখিয়াকে নিয়ে আসা হলো। বিহান তো রিখিয়াকে দেখে আহত-নিহত হচ্ছে। যেদিন থেকে এই মেয়ের প্রেমে পরেছে ওর প্রত্যেক রূপেই ঘায়েল হয়ে চলেছে বিহান। রিখিয়া বিহানের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট চেপে হাসল একটু। লোকটার সত্যিই লজ্জা নেই সবার সামনে কীভাবে হা করে তাকিয়ে আছে! রিখিয়ার চোখ শাফিনের ওপর পরতেই দেখল শাফিন তাকিয়ে আছে রিখিয়ার দিকে। রিখিয়ার সাথে চোখাচোখি হওয়াতে শাফিন মুচকি একটা হাসি দিল। উত্তরের রিখিয়াও একটু হাসল। তুর্বী রিখিয়াকে নিয়ে এসে বসিয়ে সৌহার্দ্যর কাছে যাওয়ার জন্যে পা বাড়াতেই সামনে তাকিয়ে ওর মেজাজ খারাপ হয়ে গেল কারণ দোলাও এসেছে। সৌহার্দ্য যেখানে আসে সে ওখানেই আছে। যদিও সাথে শাফিন, নুসরাত বাকিরাও আছে। কিন্তু দোলার উপস্থিতি মোটেও ভালোলাগছে না তুর্বীর। সৌহার্দ্য নিশ্চয়ই ওকে এখন আর বিয়ে করবে না। তাহলে ওকে নিমন্ত্রন করার কী দরকার ছিলো? এখন আবার কী সুন্দর হেসে হেসে আড্ডা দিচ্ছে ওর সাথে। তুর্বী আর গেলোই না সৌহার্দ্যর কাছে। চুপচাপ রিখিয়ার কাছে বসে রইল। সৌহার্দ্য চোখ তুর্বীর দিকে পরতেই ও হেসে ইশারা করে ওকে কাছে আসতে বলল। উত্তরে তুর্বীও মেকী হেসে ইশারায় জবাব দিল যে ও ওখানেই ঠিক আছে। তারপর একটা ভেংচি কাটলো। সৌহার্দ্য ভ্রু কুচকে ফেলল। এই মেয়ের আবার কী হল? কিছুক্ষণ তুর্বীর দিকে তাকিয়ে থেকে ও আবার অতিথিদের সাথে কথা বলায় মনোযোগ দিল। তুর্বী বারবার আড়চোখে সৌহার্দ্যকে দেখছে আর রাগে ফুঁসছে। এরমধ্যেই গ্রাম থেকে রিখিয়ার পরিবারের লোকেরাও চলে এসছে। নিজের মা-বাবাকে দেখে রিখিয়া উঠে গিয়ে জড়িয়ে ধরল দুজনকেই। বিহানও এসে ওনাদের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলল। অতিথিরাও সবাই খাওয়ার জায়গায় চলে গেছে।
অনেক্ষণ পর ওরা সবাই একজায়গায় দাঁড়িয়ে কথা বলছিল তখনই গেইটের দিকে তাকিয়ে ওদের চোখ আটকে গেল। কারণ বিহনের বাবা-মা, সৌহার্দ্যর বাবা-মা সবাই এসছে। হঠাৎ ওনাদের দেখে সবাই অবাক হয়েছে। বিহান ভ্রু কুচকে সৌহার্দ্যর দিকে তাকিয়ে বলল,
” এরা এখানে কী করছে?”
সৌহার্দ্য ওদের দিকে তাকিয়ে থেকেই বলল,
” আমি ডেকেছি ওদের। দেখ বিহান ওনারা যাই করে থাকুক। সবচেয়ে বড় সত্যি হচ্ছে ওনারা আমাদের বাবা-মা। বাবা-মা, বাবা-মাই হয়। আজকের মত একটা দিনে ওনারা থাকবেন না?”
বিহান কিছু না বলে হাত ভাজ ভ্রু কুচকে করে দাঁড়িয়ে রইল। অতিথিদের সামনে কোনরকম সিনক্রিয়েট করার চেয়ে আপাতত চুপ থাকাই ভালো। ওনারা ভেতরে আসার পরে সবার আগে বিহানের দিকেই তাকাল। কিন্তু বিহান তাকায়নি। প্রচন্ড অভিমানের মেঘ আজও ওর মনকে ডেকে রেখেছে । শফিক রায়হান এগিয়ে এসছিলেন বিহানের সাথে কথা বলার জন্যে। কিন্তু ওনাকে এগিয়ে আসতে দেখে বিহান নিজেই দূরে সরে গেছে। শফিক রায়হান বিহানের ব্যবহারে বেশ আহত হলেন। যে ছেলে মামা বলতে পাগল ছিল একসময়, সে আজ এভাবে মুখ ঘুরিয়ে সরে যাচ্ছে? কিন্তু এরকম ব্যবহারটাই হয়তো প্রাপ্য ছিল। বিহানের চোখমুখ দেখে ওর বাবা-মা আর কথা বলতে এগোনোর সাহসই পেল না। দূরে দাঁড়িয়ে অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে রইল। ছেলের প্রতি ওনাদের আর কোন রাগ নেই। একটা অন্যায়ের শাস্তিতো কম দেয়নি ছেলেটাকে। হয়তো আরও অনেক আগেই ক্ষমা করে দিতেন। কিন্তু বিহানের শোধরানোর পরিবর্তে আরও উশৃঙ্খল হয়ে যাওয়াটাই ওনারা মানতে পারেন নি। কিন্তু যখন জেনেছেন যে বান্দারবান যাওয়ার পর বিহান সম্পূর্ণ বদলে গেছে তখন আর কোনরকম রাগ বা ক্ষোভ ছিলোনা ওনাদের। আর আজ বিহানের বিয়ের খবর শুনে আর নিজেদেরকে ধরে রাখতে পারেন নি ছুটে চলে এসছেন। নিজের সন্তানকে দূরে রাখাটা কোন বাবা-মার পক্ষেই কম কষ্টের হয়না। বিহানকে দূরে সরিয়ে রেখে ওনারাও শান্তিতে ছিলেন না। ওনাদের মনেও এখন মাঝেমাঝে প্রশ্ন ওঠে বিহান কী সেদিন সত্যিই বলেছিল? ওনারাই কী ঠিকভাবে যাচাই করেনি?
নুসরাত গিয়ে রিখিয়াকে ওনাদের সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। ওনাদের সবারই বেশ পছন্দ হয়েছে রিখিয়াকে। রিখিয়া যেহেতু এসব পারিবারিক দন্দ্বের মধ্যে ছিলোনা তাই ও হাসিমুখেই ওনাদের সালাম দিয়ে নিজের শশুর বাড়ির লোকেদের সাথে পরিচিত হল। আসমা রিখিয়ার কপালে চুমু দিয়ে একটা হার পরিয়ে দিলেন ওর গলায়। উনি সবসময়ই বিহানের জন্যে এমন টাইপ মেয়েই চাইতেন। এরপর রিখিয়ার বাবা-মার সাথেও ওনাদের পরিচয় করিয়ে দিল। দুই পরিবারের মিলবন্ধনটা বেশ ভালোই হল।
রিসিপশনের পর এখান থেকে আবার রিখিয়াদের বাড়ি যাবে বিহান-রিখিয়া। এটাই নিয়ম। সঙ্গে সৌহার্দ্য আর তুর্বী যাচ্ছে। কিন্তু এই পুরোটা সময় বিহান একবারও ওর বাবা-মায়ের বা মামার কাছে আসেনি। ওনাদের কিছুই করার ছিলোনা, বিহানের দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া।
সবার কাছে বিদায় নিয়ে ওরা আবার গ্রামের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পরল। এক গাড়িতে রিখিয়ার বাবা-মা, ভাই-ভাবি আর বাকি আত্মীয়রা আছে। শাফিন ঘন্টাখানেক আগেই বেড়িয়ে গেছে কাজ আছে তাই। সৌহার্দ্য-তুর্বী, রিখিয়া-বিহান আরেক গাড়িতে। সৌহার্দ্য ড্রাইভ করছে, ফ্রন্ট সিটে তুর্বী বসে আছে। পেছনে বিহান আর রিখিয়া। রিখিয়া চাপা আওয়াজে বিহানকে বলল,
” বাবা-মার সাথে একটু কথাতো বলতে পারতেন?”
বিহান সোজাসাপ্টাভাবে বলল,
” ইচ্ছে করেনি।”
রিখিয়া আর কথা বাড়ায় নি। কারণ এখন এ ব্যাপারে কথা বাড়ালে বিহানের মুড নষ্ট হয়ে যাবে। যেটা এখন ও চাইছেনা। এদিকে সৌহার্দ্য ড্রাইভ করার ফাঁকে ফাঁকে আড়চোখে তুর্বীকে দেখছে। ম্যাডাম অনুষ্ঠানের শুরু থেকেই ওর সাথে কথা বলছেনা। ঠিক করে তাকাচ্ছেও না। ব্যাপারটা কী হল? ও আবার কী করল? ও একটু গলা ঝেড়ে তুর্বীর দৃষ্টি আর্কষণের চেষ্টা করল। তুর্বী সৌহার্দ্যর দিকে তাকিয়ে একটা ভেংচি কেটে মুখ ঘুরিয়ে নিলো। সৌহার্দ্য বোকা বনে গেল তুর্বীর এমন আচরণে।
_________
রাত সাড়ে এগারোটার মত বাজে। রিখিয়াদের বাড়ির সামনের রাস্তাটায় তুর্বী পায়চারী করছে। দাঁত দিয়ে নখ কাটছে রাগে। আসলে সৌহার্দ্যর ওপর রেগে আছে ঠিকই, কিন্তু সেই রাগ দেখাতে না পেরে আরও রেগে আছে। মাচাটাতে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে নিজেকে ঠান্ডা করার চেষ্টা করছে ও। সৌহার্দ্য তুর্বীকে খুঁজতে খুঁজতে এখানে এসে দেখে ম্যাডাম এখানে দাঁড়িয়ে রাগে ফুঁসছে। ও একটু হেসে এগিয়ে গিয়ে পেছন থেকে আলতো করে ওর পেট জড়িয়ে ধরে কাঁধে থুতনি রেখে বলল,
” এতো রাগ কীসের মিস ভয়ংকরী?”
তুর্বী সঙ্গে সঙ্গে একঝটকায় সৌহার্দ্যকে ছাড়িয়ে নিল। সৌহার্দ্য মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল,
” বাপড়ে! মাথা এতো গরম? তাওয়ায় করে ভাঙা ডিম রাখলে হয়তো অমলেট হয়ে যেত।”
তুর্বী কটমটে চোখ তাকাল সৌহার্দ্যর দিকে। সৌহার্দ্য হালকা ভয় পেল। তাই সাথেসাথেই মুখটা স্বাভাবিক করে পেলল। তারপর এগিয়ে তুর্বীকে ছুঁতে গেলেই তুর্বী ঝাঝালো গলায় বলল,
” ঢং করতে আসবেনা একদম। আমার কাছে এসেছো কেন এখন। যাও না তোমার ঐ দোলার কাছে। ওর সাথে আঠার মত চিপকে থাকো গিয়ে। আমার কাছে আসবে না।”
এতক্ষণে সৌহার্দ্যর ব্যাপারটা বোধগম্য হল। এইজন্যই তাহলে মিস ভয়ংকরী এমন ভয়ংকর রূপ ধারণ করে আছে? জেলাসি? ব্যাপারটা বেশ ভালোই লাগল সৌহার্দ্যর। ওর আরেকটু জালাতে ইচ্ছে করল তুর্বীকে। তাছাড়াও অনেকদিন তুর্বীর সেই চঞ্চল রূপ দেখা হয়না। এই সুযোগে সেটাও হয়ে যাবে। থুতনিতে হাত রেখে ঠোঁট চেপে একটু হেসে এসব চিন্তা করে সৌহার্দ্য আগুনে একটু ঘি ঢালার মত করে বলল,
” হ্যাঁ তো হয়েছেটা কী? আমার হবু বউ হয় দোলা। আমার সাথেতো চিপকে থাকবেই। বিয়ের আগে একটু চেনা-জানার ব্যাপার আছে না? বুঝতেই পারছ__”
আর কিছু বলার আগেই তুর্বী হুট করেই সৌহার্দ্যর কলার চেপে ধরল। তারপর দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
” বোঝাচ্ছি আমি। খুন করে ফেলব তোকে আমি। তোর হবু বউ হয় ও? চেনা-জানা লাগবে? তাহলে আমি কে হই তোর? বল, আমি কে?”
সৌহার্দ্য চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে তুর্বীর দিকে। তুর্বী রিঅ্যাক্ট করবে জানতো ও। কিন্তু সোজা ‘তুই’ তে চলে যাবে সেটা ভাবতে পারেনি। কিন্তু দ্রুতই নিজেকে সামলে নিয়ে সৌহার্দ্য মেকি হেসে বলল,
” তুমিতো আমার এক্সপিরিমেন্টাল গার্লফ্রেন্ড।”
এটা শুনে তুর্বী সৌহার্দ্যর কলার ছেড়ে দিল। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চোখ নামিয়ে নিচু কন্ঠে বলল,
” তুমি এখনো ওসব ভুলতে পারোনি তাইনা?”
সৌহার্দ্য বুঝতে পারল যে মজাটা একটু বেশিই হয়ে গেছে। এভাবে বলা উচিত হয়নি। কিছুক্ষণ তুর্বীর মলিন মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে হঠাৎ করেই দুহাতে কোমর ধরে একটানে কাছে নিয়ে এলো। তুর্বী এখনো তাকায়নি সৌহার্দ্যর দিকে। ছলছলে চোখে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। সৌহার্দ্য তুর্বীর থুতনি ধরে মুখটা উঁচু করে ধরে বলল,
” তোমার কী মনে হয়? দু-বছর অনেকবার চেষ্টা করেও যার জায়গায় অন্যকাউকে কল্পনাও করতে পারিনি। দুদিনেই দোলাকে সেই জায়গা দিয়ে দেব?”
সৌহার্দ্যর কথা শুনে তুর্বী অবাক দৃষ্টিতে তাকাল। যদি তাই হয় তাহলে যে ওদের বিয়ের কথা চলছিল? সেটা কী? সৌহার্দ্য তুর্বীকে আর না জ্বালিয়ে দোলার পুরো ঘটনাটা খুলে বলল। সবটা শুনেও তুর্বী মুখ ফুলিয়ে বলল,
” তাহলে ও তোমার সাথে এভাবে চিপকে থাকে কেন? আর তোমার সাথেসাথে ঘোরে কেন?”
সৌহার্দ্য হেসে ফেলল। এই মেয়েটাকে এতোটা হিংসুটে হতে পারে সেটা ভাবতেই পারেনি ও। সৌহার্দ্য তুর্বীর নাক টেনে দিয়ে বলল,
” আরে পাগলী বাবা-মাই বারবার আমার সাথে পাঠাতো ওকে। যাতে ওর সাথে এটাচড হতে পারি তাই। আর ও খুব মিশুক তাই ওতো ফ্রাংকলি কথা বলত আমার সাথে। ওতো কিছু ভেবে করত না।”
” খুব চিনে ফেলেছ দেখছি?”
” এখনো সন্দেহ করবে?”
” কথাই বলব না।”
” কেন?”
তুর্বী একটু ভাবুক হয়ে বলল,
” বলতে পারি এক শর্তে।”
সৌহার্দ্য বেশ ঘাবড়ানো কন্ঠে বলল,
” দেখো তুর। একদম উল্টোপাল্টা কিছু করাবেনা আমাকে দিয়ে।”
তুর্বী কোমরে হাত দিয়ে চোখ ছোট ছোট করে বলল,
” আমি সবসময় উল্টোপাল্টা কাজ করাই?”
” হ্যাঁ। আই মিন না। কিন্তু এবার করিও না প্লিজ।”
অসহায় গলায় বলল সৌহার্দ্য। তুর্বীর বেশ হাসি পেল। তবুও হাসিটা চেপে রেখে বলল,
” আরে ভয় পেওনা শোন, তোমাকে আবার ‘প্রভাতের আলো’ শো’টা হোস্ট করতে হবে। আগের মত।”
সৌহার্দ্য তুর্বীর বায়না শুনে বেশ অবাক হল ঠিকই। কিন্তু পরে একটু হেসে বলল,
” আমার অভ্যেস নেই অনেকদিন।”
কিন্তু তুর্বী শোনার পাত্রী নয়। ও সাফ বলে দিল রাজি না হলে কথা বলবে না। তুর্বীর জেদের কাছে হার মেনে অবশেষে সৌহার্দ্য বলল,
” আচ্ছা। তবে নেক্সট মান্হ থেকে। আগে আমাকে কথা বলে নিতে হবে। অনেক ঝামেলা আছে। তবে করব। এবার হ্যাপি?”
তুর্বী হেসে হ্যাঁ বোধক মাথা নেড়ে সৌহার্দ্যর বুকে মুখ গুজে দিল। সৌহার্দ্য ওকে বুকে জড়িয়ে ধরে মাথায় একটা চুমু দিলো। তুর্বীর মনে প্রশান্তির বাতাস বয়ে গেল। জীবনে কাউকে ভালোবাসবে সেটা কল্পণাও করেনি ও। কিন্তু যখন বাসল তখন এতোটাই ভালোবাসলো যে তাকে ছাড়ার কথা ভাবলেই ওর বুক কেঁপে ওঠে। যার জীবনটা সমস্ত খুশিতে ভরিয়ে দিতে ইচ্ছে করে।
__________
দেখতে দেখতে এক সপ্তাহ কেটে গেছে। এই এক সপ্তাহে বিহানের বাবা-মা অনেক চেষ্টা করেছেন ওকে ফিরিয়ে নেওয়ার কিন্তু বিহান যায়নি। ঠিকভাবে কথাও বলেনি ওনাদের সাথে। তবে রিখিয়ার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ হয় তাদের। সেটা বিহান জানে কিন্তু কোন আপত্তি করেনা। সৌহার্দ্যর কথাতেই তুর্বীর সিলেটের ঐ জবটা ছেড়ে দিয়েছে। দু-মাস পর সৌহার্দ্যদের কম্পানিতেই জয়েন করবে ও। কারণ দু-মাস পরেই পোস্ট খালি হতে চলেছে। এরমধ্যেই শফিক রায়হান একদিন সৌহার্দ্যকে ডেকে বললেন,
” বিহানের বিয়ে তো হয়ে গেছে। এবার তুমি তোমার সিদ্ধান্ত জানাও। দোলার বাবা-মার সাথে কথা বলব?”
সৌহার্দ্য বলল,
” না বাবা। আমি দোলাকে বিয়ে করব না। মেয়ে হিসেবে ও ভালো। তবে লাইফ পার্টনার হিসেবে আই ডোন্ট লাইক হার।”
” তাহলে কী সারাজীবন এভাবেই থাকার ইচ্ছে না-কি?”
” সেটা কখন বললাম। আমি বিয়ে করব। মেয়ে পছন্দ করে ফেলেছি। তুমি চেনো তাকে।”
শফিক রায়হান বেশ অবাক হলেন সৌহার্দ্যর মুখে এসব শুনে। যে ছেলেকে এই দুই বছরে এতো চেষ্টা করেও বিয়েতে রাজি করাতে পারেনি সে এসব বলছে? আর যখন জানল যে মেয়েটা তুর্বী তখন উনি বেশ খুশিই হল। কারণ তুর্বীকে সেই অফিসের সময় থেকেই ওনার বেশ ভালো লাগে। ওনার এমন গুরুগম্ভীর ছেলের জন্যে এমন মেয়েই ঠিক আছে। পারিবারিক ভাবে আলোচনার পর পরবর্তীমাসেই সৌহার্দ্য আর তুর্বীর এনগেইজমেন্টের ব্যবস্থা করা হল। বিয়ের কথা চলছিল। কিন্তু তুর্বী তখন অদ্ভুত বায়না করে বসল। ও চায় রিখিয়া আর ওর ম্যারেজ এনিভার্সিরি এক দিনেই হোক। তাই ও পরের বছর রিখিয়ার এনিভার্সিরির দিনই বিয়ে করতে চায়। প্রথমে সবাই একটু ঝামেলা করলেও সৌহার্দ্য নিজেই মেনে নেয়। তুর্বীর কোন ইচ্ছেই অপূর্ণ রাখতে চায়না ও।
যথাসময়ে শফিক রায়হানদের বাড়িতে বেশ জাকজমকভাবে সৌহার্দ্য আর তুর্বীর এনগেইজমেন্টের আয়োজন করা হল। সৌহার্দ্যর জন্যে বিহানও আজ এই বাড়িতে পা রেখেছে বহুবছর পর। কিন্তু মনের দিক দিয়ে এখানো ও ওর পরিবারের কাছ থেকে অনেকটাই দূরে। এই একমাসে রিখিয়া অনেকবার চেষ্টা করেছিল এদের সম্পর্কটা স্বাভাবিক করতে কিন্তু পারেনি। তুর্বী আর ওর ভাই এই একমাস বিহানের ফ্লাটেই ছিল। যদিও ও আলাদা ফ্লাট ভাড়া করেই থাকতে চেয়েছিল। কিন্তু রিখিয়া আর বিহানের জোরাজুরিতে বাধ্য হয়েই থেকেছে। বিয়ের আগেতো আর সৌহার্দ্যর বাড়ি গিয়ে উঠতে পারবেনা। ওদের এনগেইজমেন্টের অনুষ্ঠানে দোলাও চলে এল। কিন্তু দোলার সাথে মিরাজকে দেখে চমকে গেল তুর্বী। মিরাজ এখানে কী করছে? তুর্বী এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করল,
” তুই এখানে?”
মিরাজও তুর্বীকে দেখে একপ্রকার আকাশ থেকে পরল। ওও অবাক হয়ে বলল,
” আজ তোর এনগেইজমেন্ট?”
ওদের দুজনের রিঅ্যাকশন দেখে সৌহার্দ্য আর দোলাও বোকা বনে গেল। অবশেষে জানা গেল যে মিরাজই দোলার সেই বয়ফ্রেন্ড। যার জন্যে এতোকিছু। আসলে ওদের ওনলাইনেই রিলেশন ছিল তাই দুজন এতো দূরে থাকত। আর দোলা আর সৌহার্দ্যর জানতে পারল যে তুর্বী আর মিরাজ কলিগ ছিল। এ নিয়ে একদফা হাসাহাসিও করল ওরা। সত্যিই পৃথিবী গোল।দোলার শর্ত অনুযায়ী ওর ফ্যামিলিও মেনে নিয়েছে এখন মিরাজকে।
বেশ অানন্দের সাথেই সৌহার্দ্য আর তুর্বীর এনগেইজমেন্ট হয়ে গেল। কিন্তু এনগেইজমেন্টের পরপরই ঘটলো আরেক ঘটনা। অনুষ্ঠানের মধ্যে হঠাৎ করেই মায়ার বাবা-মা এসে হাজির হলেন। ওনাদের তো ইন্ডিয়া থাকার কথা ছিল? কিন্ত ওনাদের অনাকাঙ্খিত উপস্থিতিতে সবাই বেশ অবাক হল। কিন্তু আরও অবাক করা ব্যাপার হল, ওনাদের চোখ-মুখ মলিন আর বেশ বিষণ্ন।
#চলবে…
[ রি-চেইক করা হয়নি। দু-দিন যাবত লিখছি পর্বটা। মাঝে আটকে গেছিলাম। এগোতে পারছিলাম না কিছুতেই। অবশেষে এখন পর্বটা শেষ হল। অপেক্ষা করানোর জন্যে দুঃখিত।]#জলফড়িঙের খোঁজে ❤
#লেখিকা: অনিমা কোতয়াল
#শেষ পর্ব
.
বসার ঘরে জুড়ে পিনপতন নিরবতা। অতিথিরা সব চলে গেছে অনেক আগেই। এখন শুধু বাড়ির লোকেরাই বসে আছে ড্রয়িং রুমে। শফিক রায়হান সোফায় কোনরকম বসে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। বিহানের বাবা দুহাতে মুখ চেপে ধরে বসে আছে। আর বিহানের মা ইতিমধ্যে একবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলেন। বাকিরা একদম চুপ হয়ে বসে আছে কারো মুখে কোন কথা নেই। বিহানের কোন প্রতিক্রিয়াই নেই ও একদম স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সৌহার্দ্য ওর এক হাত চেপে ধরে রেখেছে নইলে অনেক আগেই বেড়িয়ে যেতো। সকলেই স্তব্ধ হয়ে গেছে। যখন কেউ জানতে পারে যে এতোগুলো দিন সে এক মস্ত বড় ভুল ধারণা নিয়ে বসে ছিল। একটা মিথ্যের ওপর নির্ভর করে এতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। তখন প্রতিক্রিয়া এরকম হওয়াটাই স্বাভাবিক। কেউ কিছু বলার ভাষাই খুঁজে পাচ্ছেনা। একটু আগে মায়ার বাবা-মা যেই সত্যির সম্মুখীন ওদের করিয়েছে তার সম্মুখীন হওয়ার জন্যে কেউই প্রস্তুত ছিলো না। যেই অপরাধের শাস্তি ওনারা বিহানকে এতগুলো বছর ধরে দিয়ে আসছিল সেই অপরাধ আসলে বিহান করেই নি? মায়াকে রেপ করাতো দূরে থাক সেরকম কোন চেষ্টাও করেনি বিহান। বরং ভার্সিটিতে মায়াই বিহানকে নানাভাবে জ্বালাতন করেছে, কখনও কখনও সিডিউস করারও চেষ্টা করেছে। আর এগুলো মায়ার বাবা-মায়ের কথা নয় স্বয়ং মায়ার বলা কথা। এসব শুনে আর ওনারা কেউই ঠিক থাকতে পারেন নি। আসমা তো ছলছল দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ বিহানের দিকে তাকিয়ে থেকে কাঁপতে কাঁপতে অজ্ঞান হয়ে গেছেন। নাহার ওনাকে ধরে সামলে নিলেন। আমিনুর এতোটাই মানসিক আঘাত পেয়েছে যে কোন প্রতিক্রিয়াই দেখাতে পারছেনা। শফিক রায়হান সোফা ধরে বসে পরেছেন। ওনার চোখের সামনে বারবার বিহানকে মারার দৃশ্যটাই ভেসে উঠছিল। সেদিন বিহানের কোন কথা না শুনেই কতটা নিষ্ঠুরভাবে মেরেছিলেন সেদিন! বিহান এসব কথা চলাকালীন-ই ওখান থেকে চলে যেতে চেয়েছিল কিন্তু সৌহার্দ্য ওর হাত ধরে আটকে নিয়েছে। তুর্বী আর রিখিয়া মনে মনে বেশ স্বস্তি পেল যে এতোদিন পরে হলেও বিহান সবার কাছে নির্দোষ তো প্রমাণিত হল। বেশ অনেকটা সময় গম্ভীর হয়ে বসে থাকার পর আমিনুর কম্পিত কন্ঠে বললেন,
” মায়া এসব করল কীকরে করল? মানে সেদিন আমরা গিয়েতো___”
মায়ার বাবা লজ্জিত হয়ে মাথা নিচু করে বললেন,
” মায়া সেদিন বিহানের পানিতে ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে রেখেছিল। সেইজন্যই বিহান টের পায়নি ওর সাথে ঠিক কী হয়েছে। মায়ার এক বান্ধবীও সাহায্য করেছিল এতে।”
সবটা শুনে মায়ার তীব্র ঘৃণা আর বিতৃষ্ণায় ভরে উঠল সবার মন। একটা মেয়ে বিহানের প্রতি নিজের রাগ মেটানোর জন্যে এতো নিচে নামলো? শফিক রায়হান ক্ষিপ্ত কন্ঠে বলল,
” তোমার ঐ গুনধর মেয়ে কোথায়? ওকে পুলিশে দেব আমি আজ। এখানে আসেনি কেন। নির্লজ্জ মেয়ে একটা।”
আমেনা উঠে দাঁড়িয়ে ভাঙা গলায় বললেন,
” ওকে নিজের মেয়ের মতই দেখতাম আমি। তার এই দাম দিল?”
মায়ার মা কেঁদে দিলেন। চোখের জল মুছতে মুছতে বললেন,
” ওকে মেয়ে বলতেও আমাদের লজ্জা হয় আপা। তবে প্রকৃতি ওকে ছাড় দেয়নি। ওর নিজের করা কুকর্মের জ্বালেই আজকে ও ফেঁসে গেছে। জীবনটা শেষ হয়ে গেছে ওর।”
তুর্বী ভ্রু কুচকে ফেলে বলল,
” মানে?”
মায়ার বাবা বললেন,
” এখান থেকে চলে গিয়ে মায়ার বিয়ে দেই আমরা। দু-বছর পর্যন্ত সব ঠিকই চলছিল। একবার আমরা দেশের বাড়ি এসছিলাম আমার মা মারা গেছিল তাই। মায়াও এসছিল ওর হাজবেন্ড আর ননদের সাথে। মায়ার ঐ ঘটনার কথা এলাকায় এমনিতেই ছড়িয়ে পরেছিল। তাই আমরা ওদের আনতে চাইনি। কিন্তু মায়ার হাজবেন্ডের জোড়াজুড়িতে আনতে বাধ্য হয়েছি। কিন্তু দেশে আসার পর কোনভাবে মায়ার ননদের কানে পৌঁছে যায় যে মায়া ধর্ষিতা। এর আগে ওর সাথে এরকম কিছু একটা হয়েছিল। আর সেদিনই বুঝতে পারি যে ওর হাজবেন্ডের মানসিকতা কতটা খারাপ। ও মায়াকে আর মানতে পারছিল না। এরপর থেকেই মায়ার সাথে খারাপ ব্যবহার করত। দিনরাত অত্যাচারও করত। একবছরের মাথায় তো আরেকটা বিয়েও করে নিয়ে এলো। ওসব তো বাহানা ছিল। আসলে ও আগে থেকেই মায়াকে ছাড়তে চাইছিল। কিন্তু কোন মাধ্যম পাচ্ছিল না। এরপর ওর ওপর অত্যাচার আরও বাড়িয়ে দেয় ওরা। মেয়েটার অবস্থা দেখে কষ্ট হতো আমাদের। বিয়ের আগে এমন ঘটনা ঘটল আর বিয়ের পরেও সুখ পেলোনা। ওকে নিয়ে আসতে চাইতাম আমরা, ও নিজেই আসতো না। কিন্তু মায়াও ছাড়ার পাত্রি ছিলোনা। ও চেয়েছিল থানায় কেস করে, ওর হাজবেন্ডকে জেল খাটাবে আর ডিবোর্স দিয়ে টাকা উসুল করে নেবে। কিন্তু এইরকম করতে গিয়েই বিপদ ঘটল। ও যাতে কম্প্লেন করতে বাড়ির বাইরে না যায় এরজন্যে ওকে অনেক হুমকি-ধমকিও দিয়েছে, মারধর করেছে। কিন্তু ও যখন তবুও শুনছিলো না তখন ওকে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারতে চেয়েছিল ওরা। কিন্তু ওর চিৎকারে প্রতিবেশিরা এসে আগুন নেভাতে পারলেও ওর শরীরের অনেকটা অংশই পুড়ে গেছিল। পুলিশ এসে ওর শশুর বাড়ির লোকেদের এরেস্ট করেছিল ঠিকই কিন্তু মায়া শেষ হয়ে গেছে একেবারে। এভাবে বাঁচার চেয়ে হয়তো সেদিন মরে যাওয়াও ভালো ছিল।”
সৌহার্দ্য কৌতূহল নিয়ে জানতে চাইল,
” এখন কোথায় আছে ও?”
” আমাদের ইন্ডিয়ার বাড়িতেই আছে। ঐ ঘটনার পর অনেকদিন চিকিৎসা চলছিল ওর। আস্তে আস্তে সুস্থ হলেও শরীরেও পোড়া দাগগুলো রয়েই গেছে। বিশেষ করে মুখটা জঘন্যভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। সুস্থ হওয়ার পরপরই ও আমাদের বলে দিয়েছে সব সত্যি। সেদিন প্রথম মনে হয়েছিল ওর সাথে যা হয়েছে একদম ঠিক হয়েছে। তোমাদের সাথে আমাদের কোন যোগাযোগ ছিলোনা। আর না দেশে আসার সুযোগ ছিল। তাই তখনই সত্যিটা জানাতে পারিনি আমরা। কিন্তু মায়া ওর করা পাপের ফল এখনো ভোগ করছে। ঘর থেকে স্বাভাবিকভাবে বেড় হতেও পারেনা এতোটাই খারাপ অবস্থা এখন ওর। সারাদিন কেঁদে ভাসায়। ও যা করেছে তার জন্যে ও যথেষ্ট অনুতপ্ত। আমরা দুজনেই ওর হয়ে ক্ষমা চাইছি আপনাদের কাছে। যদি পারেন তো ওকে ক্ষমা করে দেবেন।”
সবাই একদম নিরব হয়ে আছে। সত্যিই প্রকৃতি কাউকে ছাড় দেয়না। মায়ার সাথে যা হয়েছে সেটা হয়তো ওর কর্মফল। কিন্তু মানবিকতার দিক থেকে বিচার করলে মায়ার জন্যে একটু খারাপ সবার অবশ্যই লাগছে। এমনকি বিহানেরও খারাপ লাগছে। সবটা শুনে ওও মনে মনে ভাবছে যে এতোটা জঘন্য ঘটনা মায়ার সাথে না ঘটলেও পারত। নিরব পরিবেশ বজায় রেখেই ওনারা চলে গেলেন। কেউ আটকায় নি আর ওনাদের। আটকানোর মত পরিবেশই ছিলোনা আর। আরও দীর্ঘ কিছু সময় নিরবতায় কাটল। শফিক রায়হান অসহায় দৃষ্টিতে একবার বিহানের দিকে তাকালেন। বিহান ভাবলেসহীন ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। উনি কাঁপা গলায় ডেকে উঠলেন,
” পিচ্চু!”
বিহান হালকা নড়েচড়ে উঠল। মুহূর্তেই সবকিছু এলোমেলো লাগতে শুরু করল। ভেতর থেকে অস্হির লাগছে। না চাইতেও চোখ ছলছল করে উঠল ওর। কিন্তু চোখের জল নিচে গড়িয়ে পরতে দিলোনা। অপরাধবোধে শেষ হয়ে যাচ্ছেন শফিক। যেই ছেলেকে ছোট থেকে বুকে আগলে রেখে মানুষ করেছেন সেই ছেলেকে এতোটা আঘাত করেছে। সে উঠে দাঁড়িয়ে ধীরপায়ে বিহানের সামনে গিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলল। বিহান সাথেসাথে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলল। শফিক রায়হান কিছুই বলতে পারছেন না। কিছু বলার মত অবস্থা নেই ওনার শুধু বিহানকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে যাচ্ছেন। উপস্থিত সকলের চোখেই জল চলে যাচ্ছে। যেই মামা ছোটবেলা থেকে ওকে কোলেপিঠে করে যত্ন করে মানুষ করেছে তাঁর এরকম কান্না দেখে বিহান আর ঠিক থাকতে পারেনি। ও ভাঙা গলায় বলল,
” কেঁদোনা মামু। তোমার ওপর আমার কোন রাগ নেই। অভিমানের কথা জানিনা। কিন্তু আমার সময় লাগবে।”
বলে আস্তে করে তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে একবার ঘড়ির দেখে সৌহার্দ্যর দিকে তাকিয়ে বলল,
” আমাদের দেরী হয়ে যাচ্ছে। এখন বেড় হব। রিখিয়া চল!”
শফিক রায়হান শুধু তাকিয়ে রইলেন বিহানের দিকে। আমিনুর, আসমা অনেকবার বোঝানোর চেষ্টা করেছে ওকে বাড়ি ফেরার জন্যে। যদিও সত্যিটা জানার অনেক আগে থেকেই ওকে বাড়ি ফেরার জন্যে অনুরোধ করছিলেন তাঁরা বহুবার। কিন্তু আজ তাঁরা ভীষণভাবে অনুতপ্ত নিজেরই ছেলের জীবনটা এতোটা দুর্বিষহ করে তোলার জন্যে। কিন্তু বিহান শুধু বলেছে ওর সময় প্রয়োজন। পারবেনা আগের সবকিছু ভুলে গিয়ে একদিনেই সবাইকে আবার আগের মতো আপন করে নিতে। তাই তখনই রিখিয়ার হাত ধরে বেড়িয়ে বেড়িয়ে গেল ঐ বাড়ি থেকে। বাকিদের অসহায় দৃষ্টিতে সবকিছু দেখা ছাড়া কিছুই করার ছিলোনা।
______
সকাল দশটা বাজে। কিন্তু বাইরে এখানো ঝাপসা অন্ধকার। তীব্র গতিতে পরতে থাকা বৃষ্টির শব্দ শোনা যাচ্ছে। রুমের থাইগ্লাস অর্ধেক খোলা আছে। সেখানে থেকে আসা হালকা হাওয়ায় রুমের পর্দাগুলো নড়ছে। সৌহার্দ্য বিছানায় শুয়ে শুয়ে এতক্ষণ অর্ধেক খোলা জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে বৃষ্টি দেখছিল। কিন্তু মুখের ওপর হালকা কিছু চুল উড়ে পরতেই ও নিজের দৃষ্টি জানালা থেকে সরিয়ে ওর খালি বুকের ওপর শুয়ে থাকা তুর্বীর দিকে তাকাল। বাতাসের জন্যে চুলগুলো উড়ে ওর মুখের ওপরে পরছে। তুর্বীর পরনে শুধুমাত্র সৌহার্দ্যর টিশার্ট। যেটা প্রায় ওর হাটু অবধি পরে। সৌহার্দ্য আলতো হাতে চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে নরম গলায় ডাকল,
” তুর?”
তুর্বী হালকা নড়ে উঠল। সৌহার্দ্য আরেকবার ডাকতেই তুর্বী ‘হুম’ বলে সাড়া দিল। সৌহার্দ্য তুর্বীর চুলে আঙুল নাড়তে নাড়তে বলল,
” ক’টা বাজে খেয়াল আছে ম্যাডাম?”
তুর্বী ঘুম ঘুম কন্ঠে বলল,
” বাজুক! আজ ফ্রাইডে তো। আজ তো অফিস যাবোনা আমরা। আজ লাঞ্চেতো দুপুরে যাবো। আর তোমার শো তো বিকেলে তাইনা?”
সৌহার্দ্য মুচকি হাসল। প্রতিদিন অফিসে যাওয়ার জন্যে কম করে পঞ্চাশ বার ডাকতে হয় এই মেয়েকে। ওর সেই বাজে অভ্যাসটা আবার তৈরী হয়েছে। সৌহার্দ্য বলল,
” হ্যাঁ, কিন্তু এখন দশটা বাজে। এতক্ষণ কে ঘুমায়? দেখ বাইরে কী সুন্দর বৃষ্টি হচ্ছে।”
” এইদিনে বৃষ্টি প্রায় রোজই হয়। হোয়াট’স নিউ?”
সৌহার্দ্য একটু বিরক্ত হয়ে বলল,
” তুর! এমন কেন তুমি? সবসময় রোমান্টিক মুডটা এভাবে নষ্ট না করলে হয়না? কালকে রাতেই ভালো ছিলে। ফুল অন রোমান্টিক মুড। সকাল হতেই আগের ফর্মে ফিরে গেলে। বিয়ের একবছর হয়ে গল, কিন্তু তুমি বদলালে না। আজ আমাদের অ্যানিভার্সেরি!”
তুর্বী চোখ বন্ধ রেখেই সৌহার্দ্য উন্মুক্ত বুকে মুখ গুজে দিয়ে ঘুম ঘুম কন্ঠে বলল,
” কে যেন বলেছিলো, আই ওয়ান্ট ব্যাক মাই মিসেস ভয়ংকরী?”
সৌহার্দ্য হেসে ফেলল। সত্যিই তো। ও তো এইরকম তুর্বীকেই ভালোবাসে। তুমি যদি তোমার জীবনসঙ্গীকে বদলানোর চেষ্টা কর, তাহলে সে তোমার ভালোবাসা নয়, কেবল ভালোলাগা। যাকে তুমি নিজের মত করে তৈরী করে নিতে চাও। কিন্তু তুমি যদি সত্যিই তাকে ভালোবেসে থাকো তাহলে কখনও তাকে বদলাতে চাইবেনা, কারণ সে যেরকম তুমি তাকে সেরকমই ভালোবাসো। সৌহার্দ্য তুর্বীর মাথায় একটা চুমু দিয়ে বলল,
” এই, ভিজবে?”
তুর্বী এবার মাথা তুলে সৌহার্দ্যর দিকে তাকিয়ে বলল,
” সাহেব, এত্তো রোমান্টিক মুডে আছেন যে আজকাল? কাল রাতে এতো আয়োজন করে অ্যানিভার্সিরি পালন করে শখ মেটেনি?”
সৌহার্দ্য কিছু না বলে উঠে দাঁড়িয়ে হুট করেই তুর্বীকে কোলে তুলে নিলো। তুর্বী ভ্রু কুচকে তাকাল সৌহার্দ্যর দিকে। সৌহার্দ্য সেদিকে পাত্তা না দিয়ে ওকে ওভাবেই ব্যালকনিতে নিয়ে গেল।
দেখতে দেখতে পার হয়ে গেছে আরো দুইটি বছর। হ্যাঁ জীবনের খাতা থেকে প্রায় সাতশ দিন চলে গেছে। সময়ের সাথে সাথে আবারও নতুন কিছু পরিবর্তন এসেছে সবার জীবনে। গতবছর এই দিনেই খুব ধুমধাম করে সৌহার্দ্য আর তুর্বীর বিয়ে হয়ে গেছে। সৌহার্দ্য আবার আর.জে. SR হিসেবে ‘প্রভাতের আলো’ শো হোস্ট করা শুরু করেছে দু-বছর আগেই। তবে নিজের আসল নাম বা পরিচয় প্রকাশ করেনি এখনো। করার ইচ্ছেও নেই। তুর্বী সৌহার্দ্যদের কম্পানিতেই আর্কিটেক্ট হিসেবে কাজ করছে এখন। এই দুই বছরে আগের সেই স্বভাবগুলো তুর্বীর মধ্যে আবার ফিরে এসছে। সেই চঞ্চলতা, বেপরোয়া ভাব। তবে হ্যাঁ একটা বিষয়ে ও ভীষণই সিরিয়াস। সেটা হচ্ছে ওর স্বামী, মানে সৌহার্দ্য। তুর্বীর ভালোবাসা দেখে এখন সৌহার্দ্যর মনে হয় যে এতোটা ভালোবাসবে বলেই হয়তো ভালোবাসতে এতোটা সময় নিয়েছিল সে। সেজন্যই এখন সৌহার্দ্যর প্রতি তুর্বীর ভালোবাসা এতোটা গাঢ় আর প্রবল।
সৌহার্দ্য তুর্বীকে কোলে করেই ব্যালকনিতে নিয়ে দাঁড়াল। যদিও এটাকে ব্যালকনি না ছোটখাটো ছাদই না বলা যায়। বেশ বড় আর ওপরে ছাদ না থাকায় বৃষ্টিতে ভেজাও যায়। তাই ওখানে দাঁড়াতেই দুজনেই ভিজে গেল। বৃষ্টির গতি বেশি থাকায় অল্প সময়ের মধ্যেই দুজনে ভিজে চুবচুবে হয়ে গেল। সৌহার্দ্য তুর্বীকে কোল থেকে নামিয়ে কোমর জড়িয়ে ধরে নিজের কাছে টেনে নিয়ে বলল,
” কাল রাতের ফর্মে আবার ব্যাক করোনা। এমনিতে আমি আমার মিস ভয়ংকরীকেই বেশি পছন্দ করি। কিন্তু রোমান্টিক তুর্বীকেও আমার যথেষ্ট পছন্দ।”
তুর্বী মুচকি হেসে সৌহার্দ্য চোখে চোখ রেখে বলল,
” রংধনু রোজ রোজ ওঠেনা।”
” জানিতো। রোজ উঠতে কে বলেছে? শুধু আজকের জন্যে আকাশে একটু রংধনুর দেখা পেলে ক্ষতি কী? রংধনুর সাত রঙে নিজেকে রাঙিয়ে নেই?”
তুর্বী এখনো সৌহার্দ্যর চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। সৌহার্দ্য আরও গভীর স্পর্শে তুর্বীকে কাছে টেনে নিল। হঠাৎ করেই তুর্বী বেশ লজ্জা পেল। আপনাআপনি চিবুক নেমে গেল ওর। এটা তুর্বীর স্বাভাবিক স্বভাব না। কিন্তু প্রকৃতিও মাঝে মাঝে নিয়ম বিরুদ্ধ আচরণ করে, আর মানুষতো সেই প্রকৃতির সবচেয়ে বিচিত্র জীব।
_______
রান্নাঘরে রিখিয়া অাটা মাখছে। বেশ বেলা হয়ে গেছে। তাড়াতাড়ি বাড়ির সবাইকে খাবার দিতে হবে। কাল বেশ রাত অবধি জেগে থাকতে হয়েছিল। আজ ওর আর বিহানের সেকেন্ড ম্যারেজ অ্যানিভার্সেরি। কিন্তু রাতে বিহানের কান্ড দেখে মনে হচ্ছিলো এবারই প্রথম অ্যানিভার্সিরি। বিহানের সেসব কাজ মনে করতে করতে মুচকি মুচকি হাসছে রিখিয়া। একসময় ওর সর্বস্ব দিয়ে ও ভালোবেসেছিল বিহানকে। কিন্তু কখনও ভাবেও নি যে বিহানের কাছ থেকেও কখনও এতোটা ভালোবাসা পাবে। তখন কেউ একজন পেছন থেকে রিখিয়ার দুই কুনুই থেকে স্লাইড করে হাতের ওপর হাত রাখল। রিখিয়া পাত্তা না দিয়ে হাত সরিয়ে কাজে মনোযোগ দিয়ে বলল,
” দেখুন এখন একদম বিরক্ত করবেন না। আমি বেশ ব্যস্ত।”
বিহান দুহাতে রিখিয়ার পেট জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে রেখে বলল,
” আমি তোমাকে কাজ করতে বারণ করেছি না-কি?”
” বিহান এটা কিচেন। মা চলে আসবে।”
” আসবে না। মা দেখেছে আমায় কিচেনে ঢুকতে তাই ছেলে-বউমার স্পয়েল করতে একদমই আসবে না সে। আমার মায়ের বেশ বুদ্ধি। সো ডোন্ট ডিস্টার্ব মি।”
রিখিয়া বিরক্তি নিয়ে বলল,
” এতো কষ্ট করে আপনার সবদিক শুধরে দিয়েছি। কিন্তু এই নির্লজ্জতা নিয়ে কিছুই করা গেলোনা। দিন দিন মাত্রা বেড়েই চলেছে।”
বিহান হেসে দিয়ে বলল,
” নিজের বউয়ের কাছে নির্লজ্জ হবোনা তো কী পাশের বাড়ির জরিনার কাছে হব?”
রিখিয়াও উত্তরে একটা মেকি হাসি দিয়ে বলল,
” একসময় তো হতেন। জরিনা-করিমা, রিংকি-মিংকি সবার সামনেই নির্লজ্জ হতেন।-
” এখন তো হইনা। এটা হচ্ছে বউ কাছে থাকার সাইডএফেক্ট বুঝলে?”
রিখিয়া ভ্রু কুচকে আটা মাখায় মনোযোগ দিলো। এর সাথে এখন কথা বলে কোন লাভ নেই। কিন্তু বিহান ভদ্রভাবে দাঁড়িয়ে থাকার ছেলে নয়। সে নানাভাবে রিখিয়াকে উত্ত্যক্ত করতে শুরু করল। কখনো পেটে সুরসুরি দিয়ে, কখনও কানে ফু দিয়ে। রিখিয়া মাঝেমাঝে কটমটে চোখে তাকালে আবার ভদ্র হয়ে দাঁড়িয়ে থাকছে। কিন্তু কিছুক্ষণ পর একই কাজ করছে। রিখিয়া এবার সব রেখে কোমরে হাত দিয়ে পেছনে ঘুরে বিহানের দিকে তাকিয়ে বলল,
” আপনি কী আমায় কাজ করতে দেবেন? বিহান বেলা হয়েছে অনেক। দুপুরে লাঞ্চে যেতে হবে ভুলে গেছেন? সৌহার্দ্য আর তুরকে কিন্তু বলে রেখেছি।”
বিহান কিছু বলবে তার আগেই আমিনুর ডেকে উঠল বিহানকে। শফিক রায়হান এসছেন দেখা করতে। বিহান রিখিয়াকে ইশারা করে বাই বলে চলে গেল ড্রয়িং রুমে। এই দুই বছরে ওদের পারিবারিক সম্পর্কটাও ঠিক হয়ে গেছে। ছয়-মাস আগেই বিহান ফিরে এসছে এই বাড়িতে। কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি সবাইকে বিহানকে আবার আগের মতো স্বাভাবিক করতে। এর পেছনে বড় ভূমিকা রিখিয়ার ছিল। রিখিয়াই রোজ জোর করে কথা বলাতো ওনাদের সাথে। ওনারাও মাঝেমাঝে এসে দেখে যেতেন রিখিয়া আর বিহানকে। এভাবেই প্রায় দেড় বছর কেটে যায়। বিহানও ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে উঠল। কিন্তু তখনও সবার থেকে নিজেকে একেবারে গুটিয়ে রেখেছিল। কিন্তু হঠাৎ করে একদিন আসমা বেশ অসুস্থ হয়ে পরলেন। ওনাকে হসপিটালাইজড করা হল। সেদিন আর বিহানের পক্ষে সম্ভব হয়নি নিজেকে আটকে রাখা। ঠিকই ছুটে গিয়েছিল। আসমা সুস্থ হওয়ার পরে সে নিজে আর ওর পরিবারও ওকে বরাবরের মত একটাই অনুরোধ করেছে ফিরে আসতে। সেদিন আর মায়ের কথা, নিজের পরিবারের কথা ফেলতে পারেনি ও। কী দরকার জীবনকে আরও তিক্ত করার? ক্ষমা হয়তো অতীতকে ভুলিয়ে দিতে পারেনা, কিন্তু ভবিষ্যতকে সুখকর করতে পারে। তবে এরমধ্যে মায়া নিজে একবার ফোন করেছিল বিহানকে। নিজের করা কাজের জন্যে বারবার ক্ষমা চেয়েছে। বিহান কোন উত্তর দেয়নি শুধু শুনেছে। ক্ষমা ও করে দিয়েছে। কারণ মায়া যে শাস্তি পেয়েছে তা ওকে সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হবে। কিন্তু ঐ মেয়েটার সাথে কথা বলার কোন রুচি ওর নেই। তবে একটা কথা ঠিক মায়ার মত একজন ওর জীবনটাকে এলোমেলো করে দিয়ে বলেই তো রিখিয়ার মত কাউকে ও জীবনে পেয়েছে। যে ওর জীবনটাকে সাজিয়ে দিয়েছে।
________
দুপুরের দিকে সৌহার্দ্য-তুর্বী, রিখিয়া-বিহান একটা রেষ্টুরেন্টে এসছে লাঞ্চ করতে। আজ অ্যানিভার্সেরি উপলক্ষ্যেই এই আয়োজন। নানারকম হাসিমজায় আর খুনশুটির মধ্যে হঠাৎ করে বিহানের ফোন বেজে উঠল। স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে শাফিন। বিহান হেসে বলল,
” দেখ, ওকেই ফোন করার কথা বলছিলাম। নিজেই করে দিল।”
ফোনটা রিসিভ করে লাউডে দিয়ে টেবিলে রাখল বিহান। ওপাশ থেকে শাফিন বলল,
” হ্যাপি ম্যারেজ অ্যানিভার্সেরি গাইস।”
ওরা চারজনেই থ্যাংকস বলল। শাফিন বলল,
” তো? ইনজয় করছ?”
বিহান বলল,
” তুমি থাকলে আরও ভালো লাগত। দেশে কেন আসছো না?”
সৌহার্দ্যও বলল,
” হ্যাঁ, দেশে চলে এসোনা। কান্তাকেও তো দেখা হয়নি আমাদের।”
শাফিন হেসে বলল,
” আসব। কিন্তু শুধু বউনা সাথে বাচ্চা নিয়েও আসব। কান্তা প্রেগনেন্ট।”
ওরা চারজনেই বেশ বড়সর ঝটকা গেল। কী বলে এই ছেলে? রিখিয়া হেসে বলল,
” কনগ্রাচ! কান্তা কোথায়?”
” আসলে আমি বাইরে আছিতো। বাড়ি ফিরে কথা বলিয়ে দেব।”
এরপর কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন রেখে দিল শাফিন। শাফিনেরও বিয়ে হয়ে গেছে সাতমাস আগে। আসলে প্রায় দেড়বছর সময় নিয়েছিলো মনকে প্রিপার্ড করার জন্যে। বিয়ে করে ফেলাটাই সবচেয়ে ভালো সলুউশন ছিল রিখিয়াকে ভুলে মুভ অন করার। বিহান হতাশ হয়ে বলল,
” এই ব্যাটা সাতমাস আগে বিয়ে করে বাচ্চার বাপ হয়ে যাচ্ছে। আর আমি দুইবছরে কী করলাম?”
রিখিয়া রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করল বিহানের দিকে। এভাবে এখানে এরকম বেফাঁস কথা বলার মানে হয়? সৌহার্দ্য কোলড্রিংকের গ্লাসে চুমুক দিয়ে বলল,
” সমস্যা নেই। পরের বছর কাকা ডাক শুনিয়ে দিস। তাহলেই হবে।”
” আর তুই?”
সৌহার্দ্য তুর্বীর দিকে তাকিয়ে বলল,
” কী মিসেস ভয়ংকরী?”
তুর্বী একটা ভেংচি কেটে অন্যদিকে তাকিয়ে রইল। সৌহার্দ্য আর বিহান হেসে ফেলল এদের অবস্থা দেখে।
________
রিখিয়া আর বিহান বিছানায় হেলান দিয়ে পাশাপাশি বসে আছে। রিখিয়াকে বিহান একহাতে জড়িয়ে রেখেছে। একটা ইয়ারফোন দুজনে শেয়ার করে কানে লাগিয়েছে। দুজনেই ভীষণ আগ্রহ নিয়ে বসে আছে। বিহান কিছু ভাবতে ভাবতে বলল,
” তোমার কী মনে হয়? আজ কল করবে? আমার তো মনে হচ্ছে আজ করবেই করবে।”
রিখিয়া ভ্রু কুচকে বিহানের দিকে তাকিয়ে বলল,
” আপনি এখনো মনে হওয়াতেই আটকে আছেন? আমিতো শিওর যে ও করবেই।”
এরপর কেউ কিছু না বলে দুজনেই কথা শোনায় মনোযোগ দিল। কিছুক্ষণ পরেই ওপাশ থেকে ভেসে এল,
” গুড ইভিনিং ঢাকা। কেমন আছেন সবাই। বর্ষার অবিরাম ধারা, সাথে গরম গরম চা আর হালকা স্নাকস্ বিকেলের আড্ডাটা জমিয়ে দিতে যথেষ্ট। আজ নিয়ম মতো আমার কোন শো নেই। কিন্তু আপনাদের কথা দিয়েছিলাম আজ একটা স্পেশাল আড্ডা হবে। আর সেই কথা রাখতে আমি আর.জে SR. নিয়ে এসছি আপনাদের সবার প্রিয় শো __ উমহুম! প্রভাতের আলো নয়। ওটাতো সকালে আসে। যাই হোক! আজ স্পেশাল কী আছে? বিশেষ কিছুই না। আপনাদের আর.জের ফার্স্ট ম্যারেজ অ্যানেভার্সিরি। সো, আজকের টপিকটা হল আমিই। আপনাদের রোজকার মতই এখানে কল করতে পারেন আর জেনে নিতে পারেন আমার সম্পর্কে না জানা কথাগুলো। সো বেশি কথা না বাড়িয়ে লেটস্ স্টার্ট ইট।”
সকলে কল করে সৌহার্দ্যর সম্পর্কে সবকিছু জিজ্ঞেস করছে আর ও উত্তর দিচ্ছে। অনেকেই ওর আসল নাম জানতে চেয়েছে কিন্তু ও বলেনি। পরের কল রিসিভ করতে ওপাশ থেকে কেউ মিষ্টি স্বরে বলে উঠল,
” হাই SR. হ্যাপি অ্যানিভার্সেরি।”
কন্ঠ শুনে সৌহার্দ্য সাথে সাথেই বুঝে ফেলল এটা তুর্বী। বিহান আর রিখিয়াও হেসে ফেলল কারণ ওরাও চিনে ফেলেছে। ও মুচকি হেসে বলল,
” থ্যাংকস। আপনার নাম?”
” মিসেস ভয়ংকরী।”
” আরে বাহ! দারুণ নাম আপনার। তো মিসেস ভয়ংকরী, কী জানতে চান আপনি আমার ব্যাপারে?”
তুর্বী একটু ঠোঁট চেপে হাসল। এরপর বলল,
” আপনার কাছে জীবন, স্বপ্ন, ভালোবাসা এগুলো কী? কীভাবে দেখেন আপনি?”
সৌহার্দ্য মুচকি হাসল। এরপর গলা ঝেড়ে বলল,
” জলফড়িং। আমার কাছে এসবই জলফড়িং এর মত। ভালো একটা জীবন পেতে, নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে, পার্ফেক্ট ভালোবাসার মানুষ পেতে সবাই চায়। কিন্তু! অধিকাংশই এক্ষেত্রে বারংবার হোচট খায়। এর মূল কারণ হচ্ছে একটা শব্দ। ‘অতিরিক্ত’। এই জিনিসটাই আমাদেরকে এসবের থেকে দূরে সরিয়ে নেয়। যেমন জলফড়িং। জলফড়িং খুঁজতে যাও বা ধরতে যাও। যদি অতিরিক্ত চঞ্চলতা দেখাও ধরতে নিলেই সে উড়ে যাবে। যদি অতিরিক্ত শান্ত ভাবে এগিয়ে যাও তাহলে পৌঁছনোর আগেই সে জায়গা পরিবর্তন করে ফেলবে। যদি অতিরিক্ত মনোযোগ দাও তাহলে শেষ মুহূর্তে অবশ্যই লক্ষ্যভ্রষ্ট হবে। যদি অতিরিক্ত বেখেয়ালি থাকো তাহলে দেখতেই পাবেনা। তোমাকে সবকিছুর সামঞ্জস্য রেখে এগোতে হবে। তেমনই জীবন থেকে এই ‘অতিরিক্ত’ শব্দটা বাদ দিতে পারলে জীবন, স্বপ্ন, ভালোবাসা তিনতে জিনিসকেই সাজিয়ে তোলা আমাদের জন্যে সহজ হয়ে যাবে।”
তুর্বী আর বিহান-রিখিয়া এতক্ষণ মুগ্ধ হয়ে শুনছিলো সৌহার্দ্যর কথা। তুর্বী নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,
” ওয়াও। তো স্যার, এবার আপনার ফ্যাবরিট একটা গান আমাদেরকে শুনিয়ে দিন। বিকেলটাই জমে যাবে।”
সৌহার্দ্য বলল,
” ওকে, কিন্তু এটা শুধু আমার না। আমার ওয়াইফ এবং আমার আরও দুজন বন্ধুরও খুব পছন্দের গান।”
বলে সৌহার্দ্য গান চালিয়ে দিল। গানটার টিউন শুনেই রিখিয়া হেসে দিয়ে বিহানের বুকের ওপর মাথা রেখে দিল, বিহান ঠোঁট কামড়ে হাসল। আর ওদিকে তুর্বী বালিশ কোলে নিয়ে হেসে দিয়ে শুয়ে পরল বিছানায়। আর সৌহার্দ্য মুচকি হেসে দুহাত মাথার পেছনে রেখে চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলল। আর সামনে বাজতে লাগল-
তুই চিরদিন
তোর দরজা খুলে থাকিস,
অবাধ আনাগোনার
হিসেব কেন রাখিস?
সাক্ষাৎ আলাদিন
তোর প্রদীপ ভরা জ্বীনে,
কেন খুঁজতে যাস আমায়
সাজানো ম্যাগাজিনে?
কোন বালিশে ঘুম
কোন দেওয়ালে মশারী,
কোন ফেনায় কম সাবান
কোন ছুরিতে তরকারী।
যাচ্ছে চলে যাক
তবু ময়লা পেল কলার,
আলতো রাখছে হাত
হয়তো অন্য কথা বলার।
তোর এ সকাল ঘুম ভেঙে দিতে পারি
তোর এ বিকেল ঘুড়ি ছিঁড়ে দিতে পারি,
তোকে আলোর আলপিন দিতে পারি
তোকে বসন্তের দিন দিতে পারি,
আমাকে খুঁজে দে জল ফড়িং।
ভেজা রেলগাড়ি
হয়তো সবুজ ছুঁয়ে ফেলে,
আর সারাটা পথ
ভীষন খামখেয়ালে চলে,
তারপর বেরোয় মেঘ
আর তারায় ভরা স্টেশান,
একটু থামতে চায়
প্রেমিকের ইন্সপিরেশন।
তোর এ সকাল ঘুম ভেঙে দিতে পারি পারি
তোর এ বিকেল ঘুড়ি ছিঁড়ে দিতে পারি,
তোকে আলোর আলপিন দিতে পারি
তোকে বসন্তের দিন দিতে পারি,
আমাকে খুঁজে দে জল ফড়িং
আমাকে খুঁজে দে জল ফড়িং
আমাকে খুঁজে দে জল ফড়িং।
#সমাপ্ত
[ * রি-চেইক করিনি। তাই টাইপিং মিস্টেক থাকতে পারে। অবশেষে শেষ হল জলফড়িঙের খোঁজে। সৌহার্দ্য-তুর্বী, রিখিয়া-বিহানের যাত্রা এখানেই শেষ। আমার মনের খুব কাছের ছিল এরা। অনেকটাই ঝামেলার মধ্যে থেকে লিখতে হয়েছে গল্পটা। মাজখানে অনেক গ্যাপ দিতে হয়েছে অনেক সমস্যার কারণে। তবুও যারা এতোদিন ধৈর্য ধরে পাশে ছিলেন তাদের ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করব না। অনেক অনেক ভালোবাসা। অবশ্যই আজ সকলেই, মানে নিরব পাঠকরাও রিঅ্যাক্ট করবেন আর গল্পটার একটা করে রিভিউ দিয়ে যাবেন।
* বর্ষণের সেই রাতে- ২ কবে দেব? ইনশাআল্লাহ কালকেই। আর কাল থেকে নিয়মিতই ঐ গল্পটা পাবেন যেহেতু একটা চাপ কমল। ]
উপন্যাস টা কেমন লেগেছে। এটা সম্পর্কে আপনার সকল মতামত আর রিভিউ আমার এই গ্রুপটাতে গিয়ে দিয়ে আসতে পারেন। যারা এখনো জয়েন করেন নি তাঁরা জয়েন করতে পারেন।