#পালিয়ে_বিয়ে
#Concept_2
#Part_13
#Written_By_Nilima_Zabin_Tanmona
মিম খুব রেগে গেছে অর্নীলের ফোন চেক করে। অর্নীল এতটাই রেগে আছে যে যদি আজ মিম একা থাকতো তাহলে মিমকে আজ মেরেই ফেলতো। অর্নীল মাথা ঠান্ডা করতেই পারছেনা মিমের কথাগুলো শুনে। অর্নীল নিজের ঘড়িটা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে সোফায় গিয়ে বসলো। মিম খাট থেকে অর্নীলের ফোনটা নিয়ে গ্যালারি ওপেন করে অর্নীলের দিকে হাল্কা করে ছুঁড়ে মারলো। অর্নীল এতে অনেক বেশি রেগে গেলো। কিন্তু ফোনের দিকে চোখ পরতেই যেন অর্নীলের মাথা ঘুরতে শুরু করলো। অর্নীল সাথে সাথে ফোন হাতে নিয়ে পাগলের মত চেক দিতে লাগলো। অর্নীল দাঁড়িয়ে গেলো। স্পষ্ট স্বরে বলল
-মিম এসব কি? অরুনিমার সাথে এমন পিক? (অর্নীল পুরোপুরি অবাক হয়ে গেলো)
-সে প্রশ্নটা তো আমারো মিস্টার চৌধুরী। অরুনিমা খানের সাথে আপনার এত অন্তরঙ্গতা কবে থেকে ? এইভাবে কেন ঠকাচ্ছেন আমায়? সাথে আমার বাচ্চাটাকেও ঠকাচ্ছেন আপনি! (মিমের চোখ দিয়ে পানি পরছে কিন্তু কান্নার লেশমাত্র নেই)
-মিম তুমি এই কথা বলছো? এভাবে কেন অবিশ্বাস করছো আমায়?
-এখনো পুরোপুরি বিশ্বাস করি। কিন্তু এখানে কথা কি জানেন? আপনার এই ফোনটা আপনি ছাড়া আর কেউ টাচ করার সাহস পায়না। যেখানে আমিই ধরতে পারিনা। তাহলে বলেন এখানে বিশ্বাসের জায়গাটা কোথায়?
-মিম আমি মানছি আমার সেল ফোন আমি ছাড়া আর কেউ টাচ করেনা। বাট how is it possible?? অরুনিমার সাথে এইভাবে আমি!! ওহ গড। (অর্নীল নিজের কপালে আঙুল দিল)
-এতদিন তাহলে আমি এই জন্যই আপনার ফোন ধরতে পারিনি তাই না? যাতে আপনার এসব ছবি দেখে না ফেলি!
-মিম please trust me. এসব কিভাবে কি হলো সত্যিই আমার মাথায় কিছু আসছেনা। অরুনিমাকে আমি কোনোদিন ছুঁইনি তাহলে তো এভাবে ছবি তোলার বা লিভ টুগেদার করার প্রশ্নই আসেনা। আর তুমি জানো না অর্নীল চৌধুরী জাস্ট মিমকেই ভালবাসে। (অর্নীলের চোখ লাল হয়ে আছে। মিমের গালে ধরে অর্নীল)
-Don’t touch me just Don’t (অর্নীলের হাত সরিয়ে দিল মিম)
-মিম??? (অসহায়ের মত মিমের দিকে তাঁকালো অর্নীল)
মিম খাটে শুয়ে কাঁদছিলো। অর্নীলের মাথা পুরোপুরি খারাপ হয়ে আছে। মিমকে থামাবে নাকি নিজেকেই প্রশ্ন করবে সেইটাই ভাবছে অর্নীল! হঠাৎ করে অর্নীল অরুনিমাকে ফোন দিলো। কিন্তু অরুনিমার ফোন সুইচড অফ। অর্নীল ঠিক তখনি মিমকে বলল
-এখন তোমায় কিছু বলব না। যাকে নিয়ে এত কিছু তাকেই নিয়ে আসি তারপরেই না হয় তোমার চোখের পানি মুছাবো৷
অর্নীল বেরিয়ে গেলো গাড়ি নিয়ে। অরুনিমার অফিসে গিয়ে ডিরেক্ট অরুনিমার কেবিনে ঢুকলো। অরুনিমা ফোন টিপছিলো আর বেশ ফুরফুরে মেজাজে ছিল। অর্নীল সোজা গিয়ে অরুনিমার হাত ধরলো আর অরুনিমাকে টেনে নিয়ে গাড়িতে বসালো। অফিসের স্টাফরা সব তাঁকিয়ে দেখলো আর অর্নীল দ্রুত গাড়ি চালিয়ে বাসায় আসলো৷ অরুনিমা ননস্টপ চেঁচাচ্ছে কিন্তু অর্নীলের সাথে কোনোভাবেই পেরে উঠছেনা। অর্নীল অরুনিমাকে হাত ধরে উপরে নিয়ে এলো। অনু অর্নীলকে এভাবে দেখে সাথে সাথে উপরে গেলো সাথে অর্নীলের আম্মু ও।
-কিরে ভাই কি হয়েছে? এভাবে অরুনিমাকে টেনে আনলি কেন?
-No more talk দি। জাস্ট চুপ করে দাঁড়িয়ে থাক।
মিম ওদের কথা শুনে উঠে বসলো। মিম অর্নীলের দিকে তাঁকাচ্ছে আর একবার অরুনিমার দিকে তাঁকাচ্ছে। অরুনিমা বুঝতে পেরে ভয়ে চুপচাপ সোফায় বসে আছে। অর্নীল ফোন টা অরুনিমার দিকে ছুঁড়ে মেরে জিজ্ঞেস করলো
-What’s this??
-আমি কিভাবে বলব? (অরুনিমা প্রচুর ভয় পেয়ে আছে)
-তোর সাথে আমার ছবি আর তুই বলতে পারবিনা মানে? (চিল্লিয়ে অর্নীল)
-তোর ও তো আছে তাহলে তুইই বল।
-জাস্ট শাট আপ! এইগুলো কবে তুলেছি আমি? আর কবেই বা আমি তোর এত কাছে গিয়েছিলাম? (অরুনিমার সামনে থাকা টি টেবিলে জোরে আঘাত করে অর্নীল। চোখ পুরো রক্তবর্ন হয়ে আছে অর্নীলের)
-তুই না করেছিস বলতে তবুও বলছি ওইদিন তুই আমার সাথে বারে গিয়েছিলি আর সেখানেই এসব তুলেছিস তুই। বলেছিলি মিম যেন না জানে।
এইটা শুনে অর্নীল টাশ করে অরুনিমার গালে চড় মেরে দিলো। অরুনিমাসহ সবাই ভয়ে কেঁপে উঠলো চড়ের আওয়াজটা শুনে। মিম তো পা উঠিয়ে একদম নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে৷
-এই ইডিয়ট তুই কি আমায় পাগল পেয়েছিস হ্যাঁ পাগল??? তোর ভাবনা এত বিশ্রি কেন? তোর সাথে আমি বারে গিয়েছিলাম স্বপ্নে??
-অরুনিমা চড় খেয়ে এখনো হা করে অর্নীলের দিকে তাঁকিয়ে আছে।
-আমি দেখাচ্ছি তুই কি করেছিস! ১৩ ডিসেম্বর আমি আমার ফোনটা অফিসে রেখে এসেছিলাম। আর তখন তুই এসে এসব করেছিস। (ল্যাপটপে সিসিটিভি ফুটেজ অন করে দিল অর্নীল) তুই গ্রাফিক্সটা খুব ভাল পারিস অনেক আগে থেকেই সেইটা জানি। কিন্তু তোর এই গ্রাফিক্স টা যদি আমার সুখের জীবনে আগুন লাগায় তাহলে সেইটা কি আমি মানবো বল তুই? (খুব জোরে ধমক দিয়ে অর্নীল)
অরুনিমা প্রমাণ স্বচোক্ষে দেখে আর কিছু বলল না। মাথা নিচু করে কপালে হাত দিয়ে সোফাতেই বসে রইলো। অর্নীল জোরে শ্বাস ফেলে জানালার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। অর্নীলের আম্মু অরুনিমার কাছে এসে বললেন
-ছিঃ অরুনিমা তোমাকে চেয়েছিলাম আমি আমার অর্নীলের বউ করতে? তোমার মত লুজারকে?? এভাবে কেন গেইম খেললে তুমি? এত নোংরা তুমি?
-আম্মু যার মানসিকতা নোংরা সে কোনোদিন ভাল মানুষ হয়না। ছেড়ে দাও। আল্লাহ যা করে ভালোর জন্য। (অনু)
-ওর শাস্তি এভাবে হবেনা আম্মু। ওর জন্য যা করার আমিই করব। ও আমাকে আমার মিমের কাছ থেকে এখনো আলাদা করতে চাইছে। ওর এত বড় সাহস হয় কি করে?? আর মিম এই ওর কথা তুমি বিশ্বাস করলে? (মিমের দিকে তাঁকিয়ে অর্নীল)
-আমি আপনাকে অবিশ্বাস করিনি আর সেইটা আমি করতেও পারব না। আপনি জানেন না আমি আপনাকে কতটা ভালবাসি! সেই ভালবাসা থেকেই আমার প্রতক্রিয়াটা এমন ছিলো। আমি কোনোদিন ও আপনাকে অবিশ্বাস করতে পারব না।
-আর অরুনিমা বেরিয়ে যাও। এ বাসায় আর কোনোদিন তোমাকে দেখতে চাইনা। জাস্ট আউট। (অর্নীলের আম্মু) আমার ছেলের সুখ ই আমার কাছে সব। অর্নীল আমার বউমার সাথে অনেক বেশি সুখে আছে তাই আমার এখানে চাওয়ার আর কিছুই নাই। তুমি আর কক্ষনো এসো না এখানে। যাও।
-আন্টি?? (অসহায়ের মত তাঁকিয়ে অরুনিমা)
-আমাকে আন্টি ডেকো না তুমি। তুমি আন্টি ডাকার যোগ্য নও।
-আম্মু কি বলল শুনোনি তুমি? যাও বের হও আমার ভাইয়ের ঘর থেকে। ওহ স্যরি এইটা এখন শুধু ভাইয়ের ঘর না৷ মিমের ও ঘর😏
অরুনিমা আর কোনো কথা না বলে বেরিয়ে গেলো। অরুনিমা বেরিয়ে যাওয়ার পর অর্নীল নিজের ফোন আছাড় মেরে ভেঙ্গে ফেলল।
-যেই ফোনের জন্য এতকিছু সেই ফোন ই আমার দরকার নেই। (পা দিয়ে পিষিয়ে ফেলল অর্নীল ফোনটাকে)
চলবে
নেক্সট পার্ট যে কি হবে ভাবছি🙄#পালিয়ে_বিয়ে
#Concept_2
#Part_14
#Written_By_Nilima_Zabin_Tanmona
অরুনিমাকে বের করে দেওয়ার পর অনু আর অর্নীলের আম্মুও চলে গেলো অর্নীলের ঘর থেকে৷ অর্নীল ফোনটা ভেঙে ফেলল। মিম পাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলো। অর্নীল হাত দিয়ে মুখ ঢেকে সোফায় বসে আছে আর মিম খাটের কোনায় দাঁড়িয়ে আছে। এখন মিম অর্নীলের সামনে গেলেই অর্নীল চিল্লাচিল্লি করবে তাই যাবে নাকি ভাবছে মিম।
প্রায় ১০ মিনিট হয়ে গেল কিন্তু অর্নীল একইভাবে বসে আছে৷ মিম এদিক সেদিক নড়াচড়া করছে তবে সাবধানে। মিম মনে মনে নিজেকেই বকছে। কিন্তু মিম আর কি করবে বেশি ভালবাসে তাই রিয়েকশন টাও ওভার হয়ে গেছে। এখন অর্নীলকে কে সামলাবে? মিমের ভয়ে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। আস্তে আস্তে করে হেঁটে অর্নীলের পাশে বসলো। অর্নীল একটু নড়লো ও না। এবার মিম অর্নীলের শরীরের সাথে নিজের শরীর লাগিয়ে বসলো। তাও অর্নীল কিছুই বলল না। এইবার মিম অর্নীলের হাত সরিয়ে দিয়ে অর্নীলের কোলেই বসে পরলো। এইবার অর্নীল তাঁকালো মিমের দিকে।
-কি এভাবে তাঁকাচ্ছেন কেন? (অর্নীলের গলা জড়িয়ে ধরে)
-বিছানায় জায়গা নেই? এখানে কি করছো? (চিল্লিয়ে)
-এত চিল্লান কেন? আজব!! একটু কম চিল্লান। আর স্যরি আমি আসলে মাথা ঠিক রাখতে পারিনি।
-তাহলে এখন কি পাবনা থেকে মাথা ঠিক করে আসছো? 😡😡
-আরে রেগে যান কেন? আপনি আমাকে পাগল বললে আমি পাগল ই কিন্তু রাগ করবেন না প্লিজ। (আস্তে করে অর্নীলের গালে চুমু দিল) ক্ষুধা লাগছে আমার। (কথা কাটানোর চেষ্টা কারণ মিম জানে এখন অর্নীল মিমকে খাইয়ে দিবে)
-উঠো। (হাত ধরে উঠালো মিমকে)
মিমকে খাটে বসিয়ে দিয়ে অর্নীল অনুকে বলল কিছু খাবার দিয়ে যেতে। অনু খাবার নিয়ে এলো। এরপর অর্নীল মিমকে খাইয়ে দিচ্ছিলো আর মিমের সাথে অনু গল্প করছিলো।
-ভাই মিম তো অনেকদিন কোথাও যায়না। আজকে একটু বাইরে গিয়ে ঘুরে আয়।
-না দি। এই অবস্থায় ওর কোথাও যাওয়া নিষেধ। চেকআপ পর্যন্ত আমি বাড়িতে করাচ্ছি আর তুই ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলছিস?
-বাইরে কোথাও যেতে হবেনা। গার্ডেনেই যা একটু। এভাবে ঘরে বসে থাকতে থাকতে বেচারী বোর হয়ে যাচ্ছে।
-আচ্ছা বিকেলে নিচে নামবো।
মিম তো মনে মনে খুশি। অনেকদিন পর একটু বাইরে বের হবে। অর্নীল মনে মনে খুব কষ্ট পাচ্ছে। কেন পাচ্ছে সেইটা অর্নীল নিজেও জানেনা। মিম হাল্কা আঁচ করেছে যে অর্নীল ডিস্টার্ব। মিম কিছু বলল না তখন।
বিকেলবেলা…..
অর্নীল মিমকে নিয়ে বাড়ির গার্ডেনে আসে। কিন্তু কেমন যেন মনমরা ভাব। অনেকক্ষণ মিমের হাত ধরে হাঁটার পরেও একই ভাব রয়ে গেল অর্নীলের মনে। গাছগুলোতে পানি দিল অর্নীল। গাছের পাতা গুলো কাটলো। আগে প্রতি শুক্রবারেই অর্নীল এগুলো করত কিন্তু এখন করা হয়না। মিম পাশে দাঁড়িয়ে দেখলো। এর মধ্যে একজন গার্ড অর্নীলের কাছে আসলো।
-স্যার এইটা ম্যাডামের জন্য। (একটা খাম দিয়ে হাতে)
-কোন ম্যাডাম?
-মিম ম্যাডামের জন্য।
-মিমের লেটার!! (অর্নীল একটু অবাক হলো) আচ্ছা যাও তুমি।
গার্ড চলে যাওয়ার পর মিম অর্নীলকে বলল
-আমার আবার কিসের লেটার! পড়েন তো।
-পড়ব তো অবশ্যই! (মিমের দিকে তাঁকিয়ে লেটারের খামটা ছিঁড়লো অর্নীল)
লেটারটা পড়ার পর অর্নীল ওইটা ছিঁড়ে ফেলল। মিমের হাত থেকে ফোনটা নিয়ে অনুকে ফোন দিয়ে গার্ডেনে আসতে বলল। অনু আসার পর অনুকে বলল
-দি মিমকে নিয়ে ঘরে যা। আমি ১ ঘন্টা পর আসছি।
-কোথায় যাবি হঠাৎ?
-এসে উত্তর টা দিচ্ছি।
অর্নীল চলে গেলো। মিম কিছুই বুঝলো না। কিসের লেটার এইটা? এইটা পড়েই তো উনি চলে গেলেন। অনুকে বলল
-দি আবার কি হবে কে জানে? আমার নামে একটা লেটার এসেছিলো এইটা পড়েই তো উনি চলে গেলেন।
-কি বলো? কিসের লেটার?
-সেইটাই তো জানিনা দি। আমার ফোনটাও নিয়ে গেল নিজের সাথে করে৷ (জামার হাতা প্যাচাঁচ্ছিলো আর টেনশনে চোখ মুখ কালো করে ফেলেছে মিম)
-চিন্তা কর না। ও আসুক এরপর না হয় জানা যাবে।
এরপর অনু মিমকে নিয়ে চলে গেলো বাসায়।
মিডেল ক্লাস একটা রেস্টুরেন্টে বসা ছিল অর্নীল। আশেপাশের লোকজন সেইটা দেখছে কিন্তু অর্নীল একমনে ফোন চালাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর একটা ছেলে আসলো। ছেলেটা অর্নীলকে দেখে রীতিমতো শক খেলো৷ অর্নীল ওর কলার ধরে গাড়িতে বসালো আর একটা খালি জায়গায় গিয়ে নামলো। ছেলেটা ছিল আকাশ।
-অর্নীল চৌধুরী আপনি? এভাবে কেন আমাকে এখানে নিয়ে এলেন?
-তোর জন্য কি এইটা কম কিছু? তোকে না এর আগে ওয়ার্ন করেছিলাম? আজ আবার তুই সেই কাজটাই করলি? এই বাস্টার্ড তুই জানিস না মিম আমার ওয়াইফ? (আকাশের শার্টের কলার ধরে অর্নীল)
-আমি সেইটা জানতে চাইনা। আমি শুধু মিমকে চাই। আর আপনি সেইটা দিতে বাধ্য কেননা আমি মিমের চাওয়া পুরন করেছি আর মিম ও আমাকে চায়৷ (অর্নীলের হাত নিজের থেকে সরিয়ে আকাশ)
-আচ্ছা??? (অর্নীল গাড়ির উপরে বসলো) আমি তোর সাথে যেভাবে কথা বলছি তুই কি আমাকে তেমন ভাবছিস?
-অর্নীল আপনি মিমকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিন।
-বাসায় চলে যা মিমকে পেয়ে যাবি। (অর্নীল গাড়িতে বসলো আর সেখান থেকে চলে গেলো)
অর্ধেক রাস্তায় আসার পর অর্নীল আকাশকে কল করলো। অর্নীলের লোকেরা আকাশের কানে ফোনটা ধরলো
-তুই যদি বলতি অর্নীল চৌধুরী আপনার যা কিছু আছে আমায় দিয়ে দিন তাহলে আমি তোকে দিয়ে দিতাম। কিন্তু তুই হাত বাড়িয়েছিস আমার কলিজাতে। মরতে তোকে হবেই। আমি নিজে তোকে মেরে হাত নোংরা করতে চাইনা। অর্নীল যেমন মিমের জন্য পৃথিবীর সেরা স্বামী তেমনি সেই অর্নীল ই মিমের জন্য সবচেয়ে হিংস্র।
অর্নীল ফোন কেটে দিল আর ওরা ডিরেক্ট শ্যুট করে আকাশকে মেরে ফেলল।
অর্নীল বাসায় যাওয়ার পর সবাই প্রশ্ন করছিলো হঠাৎ কোথায় গিয়েছিলো অর্নীল। কিন্তু অর্নীল কিছু বলল না। ঘরে আসার পর মিম অর্নীলকে প্রশ্ন করছিলো
-কি ছিল ওই লেটারে? যার জন্য আপনি এভাবে চলে গেলেন।
-আকাশের Death certificate ছিল।
-মানে কি? আকাশ মানে? (মিম ভয় পেয়ে গেল)
– আকাশ মরে গেছে। আর কিছু? (অর্নীল রাগী চোখ নিয়ে মিমের দিকে তাঁকালো)
-Whatttt? (মিম খুব জোরে চিৎকার করলো)
-একদম চেঁচাবেনা। আমায় তুমি সন্দেহ কর তাইনা মিম? আমি যেদিন না করেছি এমনকি তোমার ফোন ও ভেঙ্গে ফেলেছিলাম ওই আকাশের জন্য সেদিন তো তুমি ওর সাথে যোগাযোগ বন্ধ করনি।
-আপনি কি পাগল? আকাশকে আপনি মেরে ফেললেন!! ওহ গড। (মিম খুব জোরে জোরে কান্না করছিলো)
-কষ্ট হচ্ছে অনেক তাইনা? শেষ পর্যন্ত তুই আমার সাথে এইভাবে বিশ্বাস ঘাতকতা করবি সেইটা আমার জানা ছিল না। তোরা মেয়েরাই আসলে এমন। কতটা ভালবেসেছিলাম আমি তোকে তুই নিজে কি সেইটা বলতে পারবি?? বল পারবি কি না? (মিমের দিকে তাঁকিয়ে অর্নীল)
-চৌধুরী আপনি কিন্তু আমায় ভুল বুঝছেন৷ আমি আপনার সাথে কোনো বিশ্বাসঘাতকতা করিনি। এমন বিহেভ কেন করছেন আপনি? আর একটা প্রাণ এভাবে আপনি কেন নিলেন? (মিম কাঁদছেই)
-ইচ্ছে হয়েছে তাই। একদিন বলেছিলাম না তুই শুধু আমার। এরপরেও তো একটা পিঁপড়ের সাহস হবেনা তোর আশেপাশে আসার। সেখানে ও তো একটা মানুষ। একবারেই সব শেষ আজকে। না ও তোকে কোনোদিন ডিস্টার্ব করবে আর না তুই ওরে শান্তনা দিবি৷ (কাঁচের গ্লাস ভেঙ্গে ফেলেছে অর্নীল)
-আপনার মত একটা সাইকো হাজবেন্ড দেখিনি আমি। পৃথিবীর সেরা সুখ যেমন ছিল আপনাকে বিয়ে করে আর আজ সেইটা বিষ মনে হচ্ছে।
-মনে হওয়াটাই তো স্বাভাবিক৷ যার প্রেমিক তার হাজবেন্ড এর হাতে মারা যায় তার এমনি মনে হয় বা হওয়া উচিৎ।
-অর্নীল??? (এই প্রথম মিম অর্নীলের নাম ধরে ডাকলো খুব চিৎকার করে। চিৎকার করার সাথে সাথে মিমের পেটে ব্যথা শুরু হয়ে গেলো। মিম পেটে হাত দিয়ে ফ্লোরে পরে গেলো)
অর্নীল মিমের কাছে দৌড়ে গেল কিন্তু মিম অর্নীলকে ধরতে দিল না। কিন্তু অর্নীল মিমের কথা না শুনেই মিমকে কোলে নিয়ে নিচে নামলো। মিম প্রচন্ড চিৎকার করছে৷ মিসেস চৌধুরী আর অনু এতক্ষন যায়নি ওদের ঘরে কিন্তু এখন আর তারা কিছুতেই ঘরে বসে থাকতে পারছেনা৷ বাইরে এসে দেখে অর্নীল গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে তখন সাথে সাথে অনু ওর গাড়ি নিয়ে অর্নীলকে ফলো করে হাসপাতালে গেলো। হাসপাতালে নেওয়ার পর মিমকে নিয়ে ইমারজেন্সি তে যায়। অর্নীল তো কাঁদছেই সাথে মিসেস চৌধুরী ও। অনু বারবার অর্নীলকে জিজ্ঞেস করছে কি এমন হয়েছে যে মিমের এই অবস্থা হল? অর্নীল কিছুই বলছেনা।
অনেকক্ষণ পর ডাক্তার এসে যা শোনালো তা শুনে অর্নীলের পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেলো। অর্নীল সাথে সাথে নিচে বসে পরে আর ডক্টরের দিকে অবাক হয়ে তাঁকিয়ে থাকে। অনু আর মিসেস চৌধুরীর ও একই অবস্থা।
চলবে#পালিয়ে_বিয়ে
#Concept_2
#Part_15
#Written_By_Nilima_Zabin_Tanmona
ডাক্তার অর্নীল কে এসে বলল
-স্যরি মিস্টার চৌধুরী আপনার বেবিকে আমরা বাঁচাতে পারিনি। ফিটাসটার নার্ভসগুলো ছিঁড়ে গেছে। আপনার স্ত্রী বেঁচে গেছেন তবে সুস্থ নন।
-কি বললেন আপনি? (অসহায়ের মত অর্নীল ডাক্তারের দিকে তাঁকালো)
-রিয়েলিটি মেনে নিন মিস্টার চৌধুরী আর আপনি সেইটা পারবেন। যান আপনার ওয়াইফের কাছে যান।
অর্নীল দৌঁড়ে কেবিনে গেলো। মিম চোখ বন্ধ করে শুয়েছিলো। অর্নীল মিমের উপর হাত রাখতেই মিম চোখ খুলল। এক ঝটকায় মিম অর্নীলের হাত সরিয়ে দিল। অনু আর মিসেস চৌধুরী পুরো অবাক হয়ে গেলো আর অর্নীল পুরোপুরি সারপ্রাইজ হয়ে গেলো।
-মিম তুমি আমার হাত সরিয়ে দিলে?
-আমার বাচ্চার খুনি আপনি,,আকাশের খুনি আপনি। ছুঁবেন না আপনি আমায়। বেরিয়ে যান এখান থেকে নইলে আমি এখন নিজেকেই শেষ করে দিব।
-মিম? (ধমক দিয়ে অর্নীল)
-আমার নাম বলবেন না আপনি৷ আম্মু ওনাকে চলে যেতে বলুন আমার সামনে থেকে। (মিসেস চৌধুরী কে উদ্দেশ্য করে)
-কি বলছো এসব তুমি বউমা? শান্ত হও তোমার শরীর ভাল না।
-আমি আর শান্ত থাকব না আম্মু। আমার বাচ্চাটা আজ মিস্ক্যারেজ হয়েছে শুধু মাত্র ওনার রাগের জন্য। ওনার সাথে আর এক সেকেন্ড আমি থাকব না।
অর্নীল শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মিমের কথা গুলো শুনছে। অর্নীল কিছু বলতে গেলেই মিম নিজেকে শেষ করে দেওয়ার হুমকি দেয়। মিসেস চৌধুরী আর অনু মিমকে অনেক বোঝায় কিন্তু মিম অর্নীলকে বলে
-আজ থেকে আপনার আর আমার সব সম্পর্ক শেষ চৌধুরী। সেইটা আপনিই শেষ করেছেন৷ আপনাকে বলেছিলাম না অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভাল নয়। আজ বুঝলেন তো! আজ থেকে আমার পথ আমি দেখে নিব আর আপনার পথ আপনি দেখুন। (বলেই মিম মুখ ঘুরিয়ে কাঁদতে শুরু করল)
-ওকেহ। আমিও দেখতে চাই কিভাবে আমায় ছাড়া তুমি থাকো। (এই কথা বলে অর্নীল দ্রুত হেঁটে বেরিয়ে গেল)
-আম্মু আমায় আপনারা মাফ করে দিন। একটা পশুর সাথে সংসার করার চেয়ে একা থাকা অনেক ভাল। জানি কষ্ট হবে তবুও৷
-কোথায় থাকবে তুমি? (অনু)
-যেখানে আগে ছিলাম। (মিম কাঁদছে)
-এইটাই কি তোমার শেষ সিদ্ধান্ত? (মিসেস চৌধুরী)
-হ্যা আম্মু।
-বেশ থাক। কোনো সাহায্য লাগলে আমায় বলো।
-সেইটার আর প্রয়োজন হবেনা।
মিমকে বিদায় দিয়ে অনু আর মিসেস চৌধুরী সেখান থেকে চলে গেল। মিম ই তাদের চলে যেতে বলেছে। মিম ইচ্ছেমত কাঁদছে। কিছুতেই কান্না থামাতে পারছেনা। বারবার অর্নীলের মুখটাই মনে পরছে মিমের। মিম নার্সের ফোন নিয়ে রিন্তিকে (মিমের চাচাত বোন) ফোন দিল।
-রিন্তি তুই কোথায়?
-কেমন আছিস তুই?
-ভাল।
-আমি বাসায় থাকিনা এখন। আব্বু আম্মুকে ছেড়ে চএ এসেছি তাদের ব্যবহারের জন্য।
-কেন চাচা চাচি তোকে কি করেছে?
-সে অনেক কথা। তোর কন্ঠ এমন লাগছে কেন? জিজু কোথায়?
-নেই আর আসবেও না।
-মানে? (রিন্তি ভয় পেয়ে গেল)
-আমাকে তোর কাছে রাখতে পারবি?
-এইটা কেমন কথা বললি তুই? কিন্তু তুই আমার কাছে থাকবি কেন?
-আমাকে এসে নিয়ে যা সিটি হসপিটাল থেকে।
-তুই হাসপাতালে কেন?
-সেইটা পরেই জানতে পারবি। তারাতারি আয়।
মিম ফোন কেটে দিয়ে রিন্তির অপেক্ষায় ছিল। আর অর্নীল হাসপাতালের করিডোরেই দাঁড়িয়ে ছিল। অনেকক্ষণ পর রিন্তিকে আসতে দেখলো অর্নীল। রিন্তিকে দেখে অর্নীল রিন্তিকে থামালো।
-তুমি এখানে?
-জিজু কেমন আছেন? মিম আমায় ডাকলো। ও নাকি এখন থেকে আমার সাথে থাকবে?
-ও পুরোপুরি পাগল হয়ে গেছে। কি বলছে ও এসব? (দেয়ালে আঘাত করে অর্নীল)
-কেন কি হয়েছে?
-চল আমার সাথে।
রিন্তি আর অর্নীল একসাথে কেবিনে ঢুকলো। অর্নীলকে দেখে মিম আবার রেগে গেল। অর্নীল মিমের হাত ধরে জিজ্ঞেস করলো
-সত্যিই কি তুমি আমায় ছেড়ে চলে যাচ্ছো?
-হ্যা যাচ্ছি।
-তোমায় আমি কোন দিক দিয়ে কষ্টে রেখেছি বল? আমি তোমায় পাগলের মত ভালবাসি মিম। কেন তুমি আজ এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছো? (চিৎকার করে অর্নীল)
-রিন্তি এইগুলো ওনাকে দিয়ে দে। (শরীর থেকে হিরার গয়নাগুলো খুলে)
-মিম? (অসহায়ের মত তাঁকিয়ে অর্নীল)
-আর কোনোদিন আপনি আমার সামনে আসবেন না। যদি আসেন তাহলে সেইদিন আমিই এই দুনিয়া থেকে চলে যাব।
-তুই কি পাগল হলি মিম? এসব কি বলছিস তুই? (রিন্তি)
-বেরিয়ে যান। আর আসবেন না আমার সামনে।
অর্নীল মুখের উপর হাত দিয়ে সেখানে বসে রইলো। রিন্তি মিমকে নিয়ে চলে গেল। যাওয়ার আগে মিম একবার পিছু ফিরে তাকালো এরপর সেখান থেকে চলে গেল। অর্নীলের হাত পা পুরো বেধে দিয়ে গেলো মিম। আজ অর্নীলের তেজ,,অর্নীলের রাগ,,অর্নীলের জেদ মিমের জেদের কাছে হেরে গেল।
টানা সাত ঘন্টা সেখানে একভাবে বসেছিল অর্নীল। নার্স রা অর্নীল কে কিছু বলার সাহস পাচ্ছেনা। রিন্তি একটা ফ্ল্যাটে থাকে। সেখানেই দুইবোন একসাথে থাকবে বলে ঠিক করল। ফ্ল্যাটে আসার পর মিম কান্না করতে করতে আরো অসুস্থ হয়ে গেল। রিন্তি মিমকে সুস্থ করলো। ওইদিকে অর্নীল সেইদিন সারারাত বাসায় যায়নি। গাড়ি নিয়ে লেকের পাড়ে বসেছিলো। নিজেকে আজ অনেক বেশি অসহায় মনে হচ্ছে অর্নীলের। নিজের কলিজাটাই বুঝি আজ শরীর থেকে বেরিয়ে গেল অর্নীলের। অনু অর্নীলকে বারবার ট্রাই করেও পাচ্ছেনা। পরেরদিন দুপুরবেলা অর্নীল বাসায় যায়। বেডরুমে গিয়ে মিমকে দেখতে না পেয়ে মিম বলে ডাকলো কিন্তু ডাকার পরেই অর্নীল চুপ হয়ে গেল। সিলিং এর উপর তাঁকিয়ে জোরে নিঃশ্বাস ফেলল অর্নীল। মিসেস চৌধুরী অর্নীলের জন্য খাবার নিয়ে এলো। কিন্তু অর্নীল সেইটা ফেলে দিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল৷
টানা তিনদিন অর্নীল এক গ্লাস পানিও খেলো না। আর দরজা বন্ধ করে ঘরেই পরেছিল। ওইদিকে মিমকে জোর করে খাওয়ায় রিন্তি। এইভাবেই দিন গুলো কেটে গেল। অর্নীল রিন্তির মাধ্যমে মিমের খোঁজ নেয় আর মিমের যা যা লাগে সব রিন্তিকে দিয়ে পাঠিয়ে দেয়। প্রতিদিন রাতে রিন্তি মিমকে নিয়ে ভ্যালকনিতে বসে আর তখন অর্নীল মিমকে দেখে যায়। রিন্তি শুধু দেখে অর্নীলকে কিন্তু মিম জানেনা। মিম সারাক্ষণ কাঁদে আর উদাস হয়ে থাকে।
এভাবেই ১ বছর ১৭ দিন পর……..
-জিজু আজকে মিম কি বলছে জানেন? (রিন্তি অর্নীলকে কল করে)
-কি?
-ও নাকি জব করবে। আজকে ইন্টারভিউ দিতে যাবে।
-কোন কোম্পানি?
-MA group of industries
-হাহাহা তারপর?
-জিজু আপনি হাসছেন? মিম জব করবে, ওকে অন্যলোকে দেখবে সেইটা কি আপনি মানতে পারবেন?
-কখন আসবে ও?
-দেড়টায়৷
-আচ্ছা। বাই।
-আরে জিজু শুনেন….. (দিল ফোনটা কেটে)
দুপুর দেড়টায় রিন্তিকে নিয়ে মিম ইন্টারভিউ দিতে বের হয়। GM মিমের ইন্টারভিউ নিয়ে জব ফাইনাল করে আর এগ্রিমেন্ট এ সাইন করায়।
-থ্যাংক ইউ স্যার। জবটা আমার দরকার ছিল। (মিম)
-its my pleasure. আপনি আমাদের এমডি স্যারের সাথে কথা বলে আসুন।
-কোথায় ওনার কেবিন?
-৫ তলায় বাম পাশের কেবিনটাই স্যারের।
-ওকে আমি যাচ্ছি।
রিন্তি যেতে যেতে অর্নীলকে এসএমএস করে মিমের জব হয়ে গেছে। অর্নীল হাসির ইমোজি সেন্ড করে দিল। রিন্তি রেগে গেল আর মনে মনে বলল আজ নিশ্চই জিজুও পাগল হয়ে গেছে। এমডি স্যারের কেবিনে মিম একা যাবেনা তাই রিন্তিকে নিয়ে গেল।
-May I come in Sir? (মিম)
-Of Course. Sit down. (Sir)
-কন্ঠটা শুনে মিম শিউরে উঠলো। মন খারাপ করে চেয়ারে বসলো। রিন্তিও বসলো।
অর্নীল ঘুরে দাঁড়িয়ে টেবিল থেকে নিয়ে ফ্রুট জুস খেলো আর মিমের দিকে তাঁকিয়ে মুচকি হেসে দিল। রিন্তি আর মিম দুইজন দুইজনের দিকে তাঁকাচ্ছে। মিম তো সোজা দাঁড়িয়ে গেল। দাঁত কটমট করে বলল
-আপনি এখানে?
-কোম্পানি আমার তো কে থাকবে এখানে? (খুশি মনে চেয়ারে বসে অর্নীল)
-আপনার কোম্পানি মানে? (রেগে গিয়ে মিম)
-সাতমাস আগে এইটা কিনেছি।
-এখানে আমি জব করব না। কালকেই রেজিগনেশন লেটার পাঠিয়ে দিব। চল রিন্তি। (চলে যাওয়ার জন্য ঘুরে দাঁড়ালো)
-সেইটা তো আপনার ব্যাপার মিসেস চৌধুরী বাট যাওয়ার আগে আমায় ৪ লাখ টাকা ক্যাশ দিয়ে যান। (মুচকি মুচকি হাসছে অর্নীল)
-কিসের ৪ লাখ টাকা? (ঘুরে তাঁকিয়ে মিম)
-এগ্রিমেন্ট লেটার পড়েন নি আপনি?
-মিম কিছু বলল না।
-হয় ৪ লাখ টাকা ক্যাশ দিতে হবে নয়ত আমি যতদিন চাইব ওতদিন জব করতে হবে৷ কোনটা করবেন বলেন?
-বারাবারি হচ্ছে কিন্তু (রেগে গিয়ে মিম)
-সেইটা ১ বছর ১৭ দিন ৭ ঘন্টা ৪১ সেকেন্ড আগেও হয়েছিল৷ (ঘড়ির দিকে তাঁকিয়ে অর্নীল)
মিম আবারো চুপ হয়ে গেল। রিন্তি অর্নীলের দিকে তাঁকিয়ে হেসে দিল। অর্নীল মিমকে বলল
-মিসেস চৌধুরী ডিসিশন তারাতারি নিন। আমাকে আবার অন্যলোক এপয়েন্ট করতে হবে।
-কে মিসেস চৌধুরী?
-ওহহহ আপনার বুঝি বিয়ে হয়নি? (অর্নীল হাসি কন্ট্রোল করছে)
-আপনাকে আমি😡😡😡😡
-কি?
-আমি কালকে থেকে অফিসে আসব। (এই মুহুর্তে ৪ লক্ষ টাকা দেওয়া মিমের পক্ষে সম্ভব নয় তাই মিম রাজি হয়ে গেল)
-অবশ্যই আর শাড়ি পরে আসা যাবেনা। লং ড্রেস পরে আসতে হবে। বডির প্রত্যেকটা ইঞ্চি যাতে ঢাকা থাকে আর হিজাব পরে আসবেন৷
-আমি যেভাবে খুশি সেভাবে আসব তাতে আপনার কি? নাকি বস বলে সব কথা শুনতে হবে? (চিৎকার করে মিম)
-বাকিটা কালকে থেকে দেখা যাবে কি হয়। আজকে বাসায় যাওয়ার পর ঘুমাবেন ঠিক আছে।
মিম আর কিছু না শুনে চলে গেলো। অর্নীল এইবার হাসছে মনখুলে। গত একটা বছর হাসেনি অর্নীল। আজ অনেকদিন পর হাসছে।
চলবে
আভি তো পার্টি শুরু হুইয়ে🤗🤗#পালিয়ে_বিয়ে
#Concept_2
#Part_16
#Written_By_Nilima_Zabin_Tanmona
মিম অর্নীলের অফিস থেকে চলে যাওয়ার পর অর্নীল হাসছে অনেক। আর বলছে
-১ টা বছর তুমি আমার থেকে দূরে ছিলে। কতটা কষ্ট দিয়েছো আমায় সেইটা যদি বুঝতে তাহলে আজ এতদিন পরে আমায় জড়িয়ে ধরতে।
মিম বাসায় আসার পর পেপারস গুলো হাত থেকে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। বিছানার উপর ধপাস করে বসে পরে মিম। বিছানার চাদর হাতের মুঠোয় ধরে রেখেছে। রিন্তি শুধু দেখছে মিমকে।
-কিরে এভাবে রেগে আছিস কেন?
-শেষ পর্যন্ত ওর অফিসে আমি চাকরি করব? সেই ওকেই আমার সহ্য করতে হবে? এতগুলো দিনে যে একটাবার খোঁজ নেয়নি আজ তার কাছেই গিয়ে আমাকে হারতে হবে?
-ভালবাসায় কোনো হার জিত হয়না মিম। তুই জিজুকে ভুল বুঝছিস। বরং তুই ই তো জিজুর খোঁজ নিসনি। একটা বছর নিজে তো কষ্ট পেলি সাথে জিজুকেও কষ্ট দিলি।
-তুই ওর হয়ে কথা কেন বলছিস?
-আমি জিজুর হয়ে কথা বলছিনা শুধু সত্যিটা বলছি।
এই কথা বলে রিন্তি পাশের ঘরে চলে গেলো। মিম খাটে বসে কেঁদে দিল। আর মনে মনে বলল
-কে বলেছে আমি ওর কোনো খোঁজ নেইনি? ও কতটা পালটে গেছে। আমার প্রতি ওর এখন বিন্দুমাত্র ভালবাসা নেই।
রিন্তি অর্নীলকে ফোন দিয়ে বলল
-মিম কাঁদছে।
-আজকের দিনটা কাঁদুক।
অর্নীল বাসায় গিয়ে মিসেস চৌধুরী আর অনু কে সব জানালো। তারা এইগুলো শুনে হেসে দিল। মিসেস চৌধুরী বললেন যত তারাতারি সম্ভব মিমকে বাসায় নিয়ে আসতে। অর্নীল বলল সেইটা তো করবই আম্মু। সকাল কখন হবে এইটা ভেবে অর্নীল আর সেই রাতে ঘুমাতে পারেনি। এই একটা বছরে দশদিন অর্নীল ঠিক করে ঘুমায়নি।
পরেরদিন সকালবেলা……..
অর্নীল অফিসে এসেছে ১০ মিনিট আগে আর মিম এসেছে ১২ মিনিট আগে। অর্নীল অফিসে ঢুকে দেখে মিম শাড়ি পরে এসেছে আর মাথায় কোনো হিজাব নেই। অর্নীল প্রচন্ড রেগে গেল কিন্তু তখন কিছু না বলেই নিজের কেবিনে আসলো। অর্নীল শৈলিকে ডেকে বলল মিমের টেবিলে মিমকে বসিয়ে দিতে। শৈলি সেইটাই করল। শুধুমাত্র শৈলি জানে মিম অর্নীলের ওয়াইফ। তাই শৈলি মিমকে ম্যাম বলল। মিমকে বসিয়ে দিয়ে শৈলি নিজের কেবিনে চলে আসে। অর্নীলের কেবিন একেবারে বদ্ধ হওয়ায় ভেতর থেকে বাইরে কিছু দেখা যায়না আর বাইরে থেকেও ভেতরে কিছু দেখা যায়না। এই কারনে অর্নীল মিমের ডেস্কের পাশে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগালো। মিম শাড়ি পরার কারণে কোমড় দেখা যাচ্ছে আর চুলগুলো সরে যাওয়ার জন্য ঘাড় দেখা যাচ্ছে। পাশে থাকা স্টাফেরা মিমের দিকে তাঁকিয়ে আছে। অর্নীল কেবিন থেকে বেরিয়ে এসে ফ্লোরে দাঁড়ালো। অনেক রেগে আছে অর্নীল। সবাই অর্নীলকে দেখে দাঁড়িয়ে গেল। শৈলিও দৌঁড়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে এলো।
-এইটা কি তামাশা করার জায়গা? (অনেক জোরে চেঁচিয়ে বলল অর্নীল) কাজ ফেলে কেন এইভাবে তাঁকিয়ে ছিলেন? এক ঘন্টার মধ্যে আমাকে সব ফাইল সাবমিট করুন otherwise I will rusticate you. (সবগুলো স্টাফকে বলল অর্নীল) এরপর মিমের দিকে রাগী চোখে তাঁকিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো কেবিনে।
-স্যার কি বলে গেল? আপনারা কেন ভুল করছেন? অর্নীল স্যারকে কি চিনেন না আপনারা? উনি যদি একবার কারো উপর বিরক্ত হন তার জায়গাটা কোথায় হয় সেইটা কি জানেন না? চুপচাপ নিজের কাজ করুন আর এক ঘন্টার মধ্যে স্যারকে ফাইল সাবমিট করুন। (শৈলী) ম্যাম আপনাকে একবার স্যারের কেবিনে যেতে হবে। আপনার পেপারে স্যারের সিগনেচার লাগবে। (মিমকে উদ্দেশ্য করে শৈলি)
-ওকে চলুন।
-না ম্যাম আপনি একাই যাবেন।
-আমি একা কেন যাব?
-ম্যাম প্লিজ নয়ত স্যার এইবার সব ভেঙ্গে তছনছ করে ফেলবে। (হাত জোর করে শৈলি)
-আচ্ছা যাচ্ছি৷
মিম পেপারস গুলো নিয়ে অর্নীলের কেবিনে গেল। অর্নীল তখন গ্লোব ঘুরাচ্ছিলো আর চোখগুলো রাগে লাল হয়ে গেছে।
-আসব?
-অর্নীল কিছুই বলল না৷
-আমি কি আসব?
-এইবারো অর্নীল কিছু বলল না।
-ওকে আমি চলে যাচ্ছি।
মিম চলে যেতে নেয় তখন অর্নীল উঠে এসে মিমের হাত ধরে টান দিয়ে ভিতরে আনে। মিমের হাত থেকে সব কাগজ পরে যায়। অর্নীল মিমকে কেবিনের ভেতর এনে কেবিনের দেয়ালের (কাঁচের দেয়াল) সাথে আটকে রেখে জিজ্ঞেস করে
-বলেছিলাম শাড়ি পরা নিষেধ কিন্তু তাও পরে এসেছো। তুমি কবে ঠিক হবা বল?আমায় একটু বল যে তুমি কবে ঠিক হবা?
-মিম চোখ বন্ধ করে ফেলে অর্নীলের ছোঁয়া পেয়ে।
-আমার দিকে তাঁকাতে বলছি।
-আপনি আমাকে এইভাবে ধরার কে? মনে রাখবেন আপনি শুধুমাত্র আমার বস। আর একজন চরিত্রবান বস কোনোদিন তার স্টাফের সাথে এমন বিহেভ করেনা। (অর্নীলকে ধাক্কা দিয়ে মিম)
-চল আমি তোমায় দেখাচ্ছি আমি চরিত্রবান নাকি চরিত্রহীন।
মিমকে কোলে নিয়ে অর্নীল সবার সামনে দিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে যায়। মিম তো চেঁচাচ্ছে। মিমকে গাড়িতে বসিয়ে অর্নীলের বাড়িতে নিয়ে যায় মিমকে। যেই বাড়িতে ওরা প্রথম থেকেছিলো।
অফিসের স্টাফেরা অর্নীলের এমন আচরণ দেখে সবাই অবাক। তখন শৈলি বলে স্যার ভুল কিছু করেনি। মিম ম্যাডাম স্যারের ওয়াইফ। তাদের কিছু পার্সোনাল প্রবলেমের কারনে ম্যাম এখানে। আপনারা যার যার কাজ করুন। তখন স্টাফেরা লজ্জিত হয় সকালের আচরণে (মিমের দিকে তাঁকিয়ে ছিল তাই)।
অর্নীল মিমকে ধাক্কা দিয়ে বেডরুমে খাটের উপর ফেলে দেয়। মিম তো কেঁদে দিয়েছে।
-আপনি কিন্তু বারাবারি করছেন চৌধুরী।
-কিসের বারাবারি? আমি তো ক্যারেক্টারলেস। চল ক্যারেক্টার লেসের মতই কাজ করছি।
-আমি কিন্তু এখন চেঁচাবো?
-তুমি খুব ভাল করেই জানো তুমি চেঁচিয়ে গলা ফাটিয়ে দিলেও এই বাসায় ঢুকার সাহস কেউ করবেনা।
-প্লিজ আমায় ছেড়ে দিন।
-একটা বছর আলাদা থেকেছো আমার থেকে একটা বছর! এর মানে বুঝো তুমি? অভিযোগ দিয়েছিলে যে আমি খুনী। আমাদের বেবিকে নাকি আমিই মেরেছি। তোমার মাথায় এইটা কি করে আসলো যে আমাদের বাবুকে আমি মেরেছি?
-এখনো বলব আপনিই মেরেছেন। আমি মা হতে পারিনি একমাত্র আপনার জন্য।
-আবার সেই এককথা?? (মিমের হাতের উপরের অংশে শক্ত করে ধরে)
-একবার না হাজার বার বলব। আপনি আমায় স্পর্শ করবেন না ছাড়ুন। (অর্নীলের হাত ছাড়িয়ে মিম উঠে যায়)
-কোথায় যাচ্ছো? চরিত্রবান বস হয়ে দেখাচ্ছি আসো। (মিমকে টান মেরে নিজের কাছে নিয়ে আসে)
-ছাড়তে বলছি আমায়। (মিম নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে)
অর্নীল মিমকে হাল্কা ধাক্কা মেরে খাটে ফেলে দেয়। মিমের শাড়ির আচল সরিয়ে দেয়।
-অর্নীল এইটা ঠিক হচ্ছেনা। তুই এইসব করতে পারিস না।
-তুই???? (অর্নীল পুরোপুরি অবাক)
-হ্যা তুই। তোকে তুইই বলা উচিৎ।
-আরেহ বাহ আমার বউ আমার উপর এতটা রেগে আছে যে তুই বলছে আমায়। জীবনের প্রথম দি ছাড়া কারো মুখে তুই শুনলাম। ভালই লাগছে। (অর্নীল মিমের বুকের উপর মাথা রাখলো) কিন্তু সমস্যা হচ্ছে অর্নীল যা বলে সেইটাই যে করে।
-আমাকে বাসায় দিয়ে আসুন। প্লিজ নিজেকে আর ছোট করবেন না। দয়া করে আমার বাসায় আমাকে দিয়ে আসুন।
-এইটা কি বাসা না? (মিমের হাত ধরে হাত থেকে চুরিগুলো খুলছে)
-ছাড়তে বলছিনা (হাত টান দিয়ে সরিয়ে মিম)
-আচ্ছা তুমি যে এইভাবে চেঁচাচ্ছো আমার সাথে তুমি পারবা? (হাল্কা হেসে অর্নীল)
-অমানুষের সাথে আমি লড়াই করতে চাইনা৷ একটা বছর তো ভালই ছিলাম।
-হুম তোমার ভাল থাকার নমুনা আছে আমার কাছে। পেপার থেকে অর্নীল চৌধুরীর ছবি কেটেছো,,ডায়েরিতে অর্নীল অর্নীল লিখতে লিখতে কলমের কালি তো শেষ হয়ে গেছিলো। তাই না গো বউ? (চোখ মেরে অর্নীল)
-আপনি আমার সাথে মজা নিচ্ছেন তাই না? নিন সমস্যা নেই তবুও আমায় ছেড়ে দিন।
-এক বছর ১৮ দিন ছিলাম তোমায় ছাড়া। আর ১ সেকেন্ড ও থাকতে চাইনা। সেইটা তুমি চাও বা না চাও I Don’t care. এখন তুমি আমার সাথে চৌধুরী প্যালেসে যাবে। আম্মু আর দি তোমার জন্য ওয়েট করছে।
-কেন যাব? আর কিসের অধিকারে যাব? (রেগে গিয়েছে মিম)
-মানে কি? আমার আম্মুর একমাত্র বউমা তুমি সেই অধিকারে যাবে। তবে যদি সেচ্ছায় অর্নীল চৌধুরীর বউ হতে চাও তবে অর্নীল চৌধুরী বাধা দিবেনা আর না চাইলেও ঠিক আছে। আবার বিয়ে করেই তোমায় টাচ করব। এক বছর তো বিরহ চলেছিলো তাই😜😜😜। তবে এইবার কিন্তু #পালিয়ে_বিয়ে করব না। একদম সবাইকে জানিয়ে।
-আপনি এত মজা কোথায় পান? ভালই তো ছিলেন এতদিন আমায় ছাড়া। আশা করি বাকী জীবন ও ভাল থাকবেন। আর ভাল না থাকলে অরুনিমার মত কাউকে খুঁজে নিয়েন।
-তাহলে অরুনিমাকেই নিয়ে আসি?😁😁😁
-আপনি হাসছেন কেন আজব?
-হাসি পাচ্ছে তো কি করব?
-ওকে হাসুন। আমায় আগে আমার বাসায় দিয়ে আসেন। নয়ত আমি একাই চলে যাব।
-দাঁড়াও আগে আমার আর অরুনিমার বিয়ে দেখে যাও।
-মানে?
-তুমিই তো বললে অরুনিমাকে বিয়ে করতে।
-হ্যা বলেছি।
-মিম জীবনটা আর কতটুকু? এতটুকু জীবনে এত অপূর্নতা থাকলে কি করে হবে? প্রেম ভালবাসা এসবের কোনো মানে আমার কাছে ছিল না। বিজনেস আর পরিবার এই দুইটা জিনিসেই অনেক ব্যস্ত ছিলাম। কিন্তু সেখানে তুমি এসেই সব পালটে দিলে। এত গার্লস দের সাথে চলেছি,,ঘুরেছি কিন্তু কোনোদিন এমন ফিলিংস হয়নি যেই ফিলিংস তোমায় দেখে হয়েছিলো। এই যে একটা বছর তুমি আমার থেকে দূরে ছিলে সেই একটা বছরেও নিজেকে ঠিক রাখতে পারিনি। বারবার ইচ্ছে করছিলো তোমার কাছে যেতে, তোমায় একবার ছুঁয়ে দেখতে কিন্তু সেইটা পারিনি। তোমায় কোনোদিন কষ্ট দেওয়ার কথা মাথায় ও আনতে পারিনা। কিন্তু তুমি কিভাবে এত বড় কষ্ট পেলে সেইটাও আমি জানিনা। আকাশ বেঁচে আছে কিন্তু মাঝ থেকে হারিয়ে গেল আমার বাবুটা। কষ্ট কি আমার হয়নাই? (অর্নীলের চোখ থেকে পানি পরছে)
-আকাশ বেঁচে আছে? (মিম অবাক হয়ে)
-হ্যা সেইদিন আমিই আকাশকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেছিলাম। এতটা অমানুষ তো আমি না তুমি যতটা ভাবো। আকাশের বিয়েও হয়ে গেছে। অর্নীল চৌধুরী বুঝেশুনে কোনো ভুল করেনা মিম। বেবি মিসক্যারেজ হওয়াটা একটা এক্সিডেন্ট ছিল তাছাড়া আর কিছুই না।
চলবে