#সুখ
#Part_26
#Written_By_Nilima_Zabin_Tanmona
সাকিবের কথা শুনে নীলিমা মুখ বাঁকা করে দাঁড়ায়। সাকিব ভাবছে কি হবে না হবে! একটু পর রিপোর্ট টা এনে হেসে দেয় সাকিবের বন্ধু।
-মিষ্টি আনছিস কবে? (সাকিবের বন্ধু)
-মানেহ? (সাকিব)
-তুই বাবা হচ্ছিস নাকি আমি আংকেল হচ্ছি। কোনটা বলব?
-কিহ? সিরিয়াসলি? (সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে সাকিব, নীলিমাও সাকিবের বন্ধুর দিকে তাঁকায়)
-এই নে নিজেই দেখ। (রিপোর্ট টা সাকিবের দিকে এগিয়ে দিয়ে ডক্টর)
সাকিব তাড়াহুড়ো করে রিপোর্ট টা খুলে দেখে আসলেই প্রেগন্যান্সি পজিটিভ। সাকিব পেপারটা হাতে নিয়েই ওর বন্ধুকে জড়িয়ে ধরে ধন্যবাদ জানায়।
-ওই ফাজিল আমি কি করছি তুই যে আমায় ধন্যবাদ দিচ্ছিস! যা করার তুই ই তো করছস। (ডক্টর)
-মানুষ হ! এত বড় ডাক্তার হইছিস তাও অমানুষি গেলো না তোর। (সাকিব)
-এখন ভাবিকে নিয়ে বাসায় যা আর এই নে চার্ট। এই নিয়ম অনুযায়ী খাওয়াবি। যত পারস সন্ধ্যায় বের হওয়াটা এভয়েড করবি। আর শুন এভ্রি মান্থে চেকাপের জন্য আসবি।
-আমার ঠ্যাকা নাকি আমার অসুস্থ বউকে নিয়ে আসব। তুই যাবি আমার বাসায়। আর এইটাই ফাইনাল। (সাকিব)
-আচ্ছা যা আমিই গেলাম।
সাকিব বের হওয়ার আগে রিপোর্ট টা নীলিমার হাতে দেয় আর নীলিমাকে কোলে নিয়ে চারতলা থেকে নামে। নামতে নামতে বলছিলো,
-থাপ্পরের হাত থেকে বেঁচে গেছো। এখন শুধু আদর আর আদর। এই পা ও আর মাটিতে পরতে দিবনা।
-মাটিতে ফালাতে যাবো কেন? টাইলস এর উপরে ফালাবো। (মুখ বাঁকিয়ে নীলিমা)
-এখন আর কিছু বলছিনা, যা বলার বাসায় গিয়ে বলব।
সাকিব নীলিমা গাড়িতে বসিয়ে আস্তে আস্তে ড্রাইভ করে বাসায় যায়। বাসায় গিয়ে গাড়ি পার্ক করে আবার নীলিমাকে কোলে নিয়ে বাড়িতে ঢুকে। সবাই ড্রইংরুমে ওয়েট করছিলো ওদের জন্য। সাকিব নীলিমাকে কোলে নিয়ে ঢুকলো তা দেখে সবাই দাঁড়িয়ে গেলো। কারণ সাকিব ছ্যাঁচড়ামো কোনোদিন করেনি। বউকে নিজের ঘরে ভালবেসেছে কিন্তু সবার সামনে এইভাবে! সাকিব নীলিমাকে সোফায় বসালো।
-কি ভাইয়া? কি হয়েছে ভাবির? (সুহানা)
-কি আর হবে! তুই আবার ফুপ্পি হবি। (সাকিব)
সাকিবের কথা শুনে আয়ান আর সুহার মুখে হাত। আয়মান সাকিবকে জড়িয়ে ধরে অভিনন্দন জানায়। নীলিমা তো লজ্জায় শেষ। সুহানা দৌঁড়ে ওর মায়ের ঘরে যায় আর মা কে নিয়ে আসে।
-মা তুমি চেয়েছিলে না ভাইয়ার কোনো সন্তান হোক।তোমার চাওয়া পুরণ হয়েছে। (সুহানা)
নীলিমার শ্বাশুড়ি খুব বেশি খুশি হয়। নীলিমাকে নিজের গলার চেইন খুলে দিয়ে দাও। সাকিব না করেছে কিন্তু শুনেনি। তিশা আর তুলি ব্যাপারটা ইজিলি ই নিয়েছে।তুলি তো ভাই হবে না বোন হবে তা ভেবে অস্থির। সেই রাত অনেক আনন্দেই কাটালো সবাই।
সাকিব আবার নীলিমাকে কোলে নিয়ে বেডরুমে আসে। নীলিমাকে সেইদিন সাকিব বলে,
-একটা রিকুয়েষ্ট নীলু?
-কি?
-এতদিন তুলি আর তিশাকে যেইভাবে আদর করেছো আমাদের বাবু আসার পরেও ঠিক একইভাবে আদর কর। কেউ যাতে না বলতে পারে নিজের সন্তান পেয়ে ওদের অবহেলা করছো।
-আই প্রমিস ইউ এমন কিছুই হবেনা। সব আগের মতই চলবে। (সাকিবের হাতের উপর হাত রেখে)
-এইত আমার লক্ষ্মী বউ। ফিলিংস টা কি? তুমি মা হচ্ছো!
-আপনার ফিলিংস কি? বাবা হচ্ছেন!
-ওই আমাকে কপি কর কেন? আমি আগে আস্ক করেছি সো জবাব দাও।
-বাধ্য নই। আমার ফিলিংস আমারই থাক। (মুখ বাঁকিয়ে নীলিমা)
-বাধ্য নই। আমার ফিলিংস আমারই থাক। (মুখ বাকিয়ে সাকিব)
-এখন কে কাকে কপি করলো? (চোখ রাঙিয়ে নীলিমা)
-এখন কে কাকে কপি করলো? (হাসতে হাসতে সাকিব)
-বদ লোক।
-ওই আস্তে! এখন দোড়ঝাপ বন্ধ। আমার বাবুর কিছু হলে তোমার খবর আছে।
-দেখবো নে! ওনার একার বাবু আসছে! (ভেংচি দিয়ে)
সাকিব তো অফিসে খুব কমই যায় তার উপরে নীলিমা প্র্যাগ্নেন্ট হওয়ার পর থেকে সপ্তাহে দুইদিন যায়। বাসায় বসেই সব ম্যানেজ করে। নীলিমার খাবার, ওষুধ সব কিছুর দিকে নজর রাখে সাকিব। তুলিও অনেক কেয়ার করে নীলিমার। নীলিমা সাত মাসের অন্তসত্তা থাকা অবস্থায় সাকিব গুরুতর অসুস্থ হয়। নীলিমা তখন নিজেই চলতে পারেনা, ভীষণ কষ্ট হয়। তখন নীলিমা কান্না করেছে আর সাকিবের সেবা করেছে। সাকিব হাজারবার বারণ করেছে কিন্তু নীলিমা শুনেনি। এতটা অসুস্থ সাকিব কোনোদিন হয়নি। তখন সাকিবের ডক্টর ফ্রেন্ড প্রতিদিন ই আসত সাকিবের চেকাপের জন্য। নীলিমা আর রিজভীর (ডক্টর) চেষ্টায় সাকিব সুস্থ হয়। নীলিমা তখন রিজভীকে বলে,
-রিজভী ভাইয়া আপনি না থাকলে এই অবস্থায় আমি পারতাম না ওকে সুস্থ করতে।
-ভাবি তুমি যা করেছো ওতটুকুও কেউ করার সাহস করবেনা এই অবস্থাতেই। সব তোমার জন্যই। আমি শুধু ওকে দেখেছি মাত্র। আর শুন রাতে জেগে থাকা বাদ দে! বয়স তো কম হয়নাই। রাত জাগিস কোন সাহসে? ভাবি তুমি দেখো ও যাতে আর কখনো রাত না জাগে।
-হ্যা দেখবো।
রিজভী এখন ওদের পরিবারেরই একজন হয়ে যায়। রিজভী বিয়ে করেনি কারণ কলেজ লাইফে ও একটা মেয়েকে ভালবাসতো আর আজ সে অন্যকারো বউ। সেই জেদ আর কষ্ট থেকেই বিয়ের দিকে আগায়নি রিজভী। নিজের পপুলারিটি আর প্রফেশন নিয়েই আছে।
সাকিব সুস্থ হওয়ার পর নীলিমাকে যথেষ্ট কেয়ার করে ও। কিন্তু সমস্যা হলো সেইদিন যেদিন নীলিমার আর্লি চাইল্ড হলো। সাড়ে সাতমাসে বেবি হওয়া মায়ের জন্য যতটা রিস্কি, বেবির জন্যেও ঠিক ততটা। নীলিমা আইসিউতে ছিল আর বাবু লাইফ সাপোর্ট এ ছিল। সাকিব তো শেষ হয়ে যাচ্ছে। আয়মান আর আয়ান মিলেও সাকিবকে নরমাল করতে পারছেনা। ডক্টর ও কিছু বলছেনা। কারি কারি টাকা সাকিব হাসপাতালে ঢালছে কিন্তু ডক্টরদের তো উচিৎ কিছু একটা জানানো। আয়ান তখন ডক্টরদের উপর রেগে যায়। আয়ান আর আয়মানের প্রেসারে পরে ডক্টর বলে,
-স্যরি।
এই স্যরি শব্দটা শুনে সাকিব সাথে সাথে ডক্টরের দিকে তাঁকায়।
চলবে