সুখ – পর্ব ২৭

0
363

#সুখ
#Part_27
#Written_By_Nilima_Zabin_Tanmona
কোনো ডাক্তারের মুখে স্যরি শুনার মানে অন্যকিছু তো বটেই। সাকিব ওর জায়গা থেকে উঠে গেলো। আয়মান জিজ্ঞেস করলো,
-কি মজা শুরু করেছেন আপনারা? দেখছেন না বাড়ির লোকেরা কতটা চিন্তায় রয়েছে! এখন স্যরি বলছেন আপনি! স্যরি বলার মানে কি?
-আমি স্যরি বলছি কারণ আমি আপনাদের এই মুহুর্তে কোনো খবর দিতে পারবনা। মায়ের অবস্থা খুবই ক্রিটিক্যাল। বাবু এখন একটু সুস্থ তবে ওজন একদম ই কম। (ডক্টর)
-নীলিমার জ্ঞান ফেরেনি? (সাকিব)
-না। প্রচন্ড ব্লাড বেরিয়েছে ওনার শরীর থেকে। আপাতত ব্লাড চলছে। ২/৩ ঘন্টা না গেলে কিছু বলতে পারছিনা।
-আপনি কি বলবেন আর না বলবেন আমি জানিনা ডক্টর। আমি আমার ওয়াইফকে সুস্থ দেখতে চাই এট এনি কস্ট। ICU, NICU যেখানে ইচ্ছা ওকে রাখেন আমার সমস্যা নেই শুধু ওকে সুস্থ করে তুলতে হবে বুঝেছেন আপনি?
-প্লিজ ওনাকে বোঝান এইটা বাস্তব আর ওনাকে মেনে নিতে হবে সেইটা। (ডক্টর)
-ইনাফ! বাস্তব আমাকে বোঝাতে আসবেন না। যদি নীলিমা সুস্থ হয় তো আপনি বেঁচে যাবেন আর নীলিমা সুস্থ না হলে আপনারো প্রয়োজন নেই এখানে থাকার। (চক্ষু রক্তবর্ণ করে সাকিব)
-ভাইয়া আপনি শান্ত হোন। প্লিজ ভাইয়া ধৈর্য রাখেন। ২/৩ ঘন্টা আমরা ওয়েট করি। (আয়মান)
-ভাইয়া তুমি শান্ত হও। এভাবে রাগারাগি করলে কিছুই হবেনা। (আয়ান)
৩ ঘন্টা পর…..
-B+ রক্ত লাগবে আপনার ওয়াইফের জন্য। রক্ত কে দিবেন? (ডক্টর)
-আমি। আমি দিব। (সাকিব)
ডাক্তার সাকিবকে নিয়ে তাড়াহুড়ো করে রক্ত চেক করার জন্য গেলেন। সবকিছু ওকে হলে ডক্টর নীলিমার দেহে সাকিবের রক্ত পুশ করে দেয়। রক্ত শেষ হয়ে গেলে নীলিমার জ্ঞান ফেরে। নীলিমা চোখ মেলেই সাকিবের নাম নিয়েছিলো। একজন নার্স দৌঁড়ে সাকিবকে ডেকে ভেতরে নিয়ে যায়। সাকিব নীলিমাকে তাঁকিয়ে থাকতে দেখে অবাক হয়েছে, অনেক বেশি অবাক হয়েছে। নীলিমার নিস্তেজ শরীরটা বেডের সাথে পুরোপুরি মিশে গেছে আর হাতে স্যালাইন চলছে। নীলিমা সাকিবকে জিজ্ঞেস করে,
-আমার বাবু কই?
-আছে। তোমার এখন কেমন লাগছে নীলু? আমি তো পাগল হয়ে যাব এখন। (নীলিমার হাত ধরে কেঁদে দিল সাকিব)
-আমি ভালো আছি। ডাক্তার কি বলেছে? আমি বাঁচবো না? (আস্তে করে নীলিমা)
-চুপ একদম চুপ! এসব বাজে কথা কেন বলো তুমি?
-ডাক্তার জানে সাকিব নীলিমাকে ছাড়া থাকতে পারবেনা আর নীলিমাও পারবেনা সাকিবকে ছাড়া থাকতে। তাই আমি সুস্থ হয়ে যাব দেখো। ডাক্তার আমায় সুস্থ করে দিবে।
সাকিব আর কিছুই বলতে পারেনি। মায়া হচ্ছে ভীষণ নীলিমাকে এইভাবে দেখে। এতটা অসহায় সাকিব কোনোদিন হয়নি, আজ কেন যেন খুব বেশি অসহায় লাগছে ওর। এমন হয়েছিলো যেদিন তানহাকে হারিয়েছে ও।
কয়েকঘন্টা পর নীলিমার বাবুকে কাঁচঘর থেকে বের করা হয়। বাবু একটু সুস্থ কিন্তু নীলিমা না। এতটা কম্পলিকেটেড সিচুয়েশন কেন হলো সেইটাই ভেবে পাচ্ছেনা সাকিব। ওর তো সবকিছুই ঠিকঠাক ছিল। ওর তো বয়স ও যথেষ্ট বেবি নেওয়ার জন্যে তবুও কেন?
সাকিবের একটা ফুটফুটে ছেলে হয়েছে। সাকিব ভেবে পাচ্ছেনা নীলিমার কি হবে? বাবুকে একবার কোলেও নেয়নি সাকিব এতটা চিন্তিত আছে ও। নীলিমার অবস্থা সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে খারাপই হচ্ছে। শরীর পুরো ভেঙে গেছে। এমন হবে জানলে সাকিব কোনোদিনই বেবি নিতো না। ডক্টর সাকিবকে বলল,
– সবচেয়ে ভালো হবে আপনি আপনার ওয়াইফকে অন্যকোনো হাসপাতালে নিয়ে যান ইমিডিয়েটলি। আমরা আমাদের বেস্ট ট্রাই করেছি। ব্লাড প্রবলেম ওনার প্রচন্ড। এতটা রিস্ক নিয়ে আমরা এখানে রাখতে পারছিনা।
-এর থেকে বেস্ট হাসপাতাল আমি কোথায় পাব? মজা নিচ্ছেন আপনি আমার সাথে? এখন কি আপনার মজা নেওয়ার সময়? এই অবস্থায় আমি কিভাবে নিয়ে যাব আমার ওয়াইফকে? (চেঁচিয়ে সাকিব) আর আপনাদের একটা কথাও আমি শুনবো না। আমি ডাক্তার রিজভীকে কল দিচ্ছি ও এসে দেখবে আমার ওয়াইফকে।
-কিন্তু স্যার আমাদের হসপিটালের নিয়মের বাইরে এইটা। অন্যকোনো ডক্টর এসে এখানে রোগী দেখতে পারেন না।
-জাস্ট শাট আপ! অনেক হয়েছে। রুলস ইজ মাই ফুট। আমার বউ মরে যাচ্ছে আর আমি রুলস নিয়ে পরে থাকবো? (আরো জোরে চিৎকার করছে সাকিব)
সাকিব রিজভীকে ফোন করে সব বলল। রিজভী দেরি না করে ধানমন্ডি চলে এলো। হাসপাতালে এসে রিজভী সবার আগে নীলিমাকে দেখে। রিজভী নীলিমার কন্ডিশন দেখে আলট্রা করার ডিসিশন নেয়। বাকি ডক্টরদের হেল্প নিয়ে রিজভী দ্রুত নীলিমার আলট্রা করালো। আলট্রার রিপোর্ট দেখে রিজভী সহ ডাক্তারদের বিষম খাওয়ার অবস্থা। নীলিমার পেটে তুলার স্তুপ। রিজভী প্রচন্ড রেগে যায় ডাক্তারদের উপর।
-What is this? সিজার করেছেন ভালো কথা বাট পেটে তুলো!! দোষ দিচ্ছেন ব্লাডের?? এত বড় হাসপাতালে এত বড় ব্লান্ডার কিভাবে করলেন আপনারা? ৫/৭ মিনিটের মধ্যে অপারেশন টেবিল রেডি করুন। ফাস্ট!
সাকিব নীলিমার প্রেসার চেক করে দেখলো একেবারেই লো। কাঁচা ঘায়ে তুলোর প্রেসার টা সহ্য হয়নি তাই অবস্থা এতটা জটিল হয়ে গেছে। নীলিমাকে অপারেশন টেবিলে নিয়ে আবার অপারেশন করলো রিজভী। পেট থেকে তুলার প্যাচগুলো বের করলো। তিনঘন্টা পর রিজভী অপারেশন থিয়েটার থেকে বেরিয়ে সাকিবকে বলল,
-আর চিন্তা করিস না। ব্লান্ডারটা ডক্টরদের ছিল যার কারনে এত জটিল হয়ে গেছে সব। ঘন্টাখানেকের মধ্যেই জ্ঞান ফিরবে ভাবির। (সাকিবকে জড়িয়ে ধরে রিজভী)
-তোকে ফোন না দিলে কি হত জানিনা!
-ঠিক সময়ে ফোন দিয়েছিস এইটাই অনেক। চেহারার কি অবস্থা করেছিস? খাস নি কিছু?
-এই অবস্থায় খাবার গলা দিয়ে নামতো?
-বাবু কোথায়?
-চাইল্ড রুমে আছে।
-আয় তো দেখে আসি।
রিজভী সাকিবকে নিয়ে চাইল্ড রুমে গেলো। বাবু ঘুমাচ্ছিলো। রিজিভী কোলে নিয়ে বলল,
-মাশাআল্লাহ। একদম তোর মতই হয়েছে। তবে আর্লি হওয়াতে ওয়েট টা কম। সমস্যা নয়, ঠিক হয়ে যাবে। আজ যদি ইঞ্জিনিয়ার না হয়ে ডাক্তার হতি তাহলে নিজের বউয়ের অপারেশন নিজেই করতে পারতি আর ব্যাপারটা একটু বুঝতি।
-তুই আছিস তো বোঝার জন্য।
সাকিব বাবুকে কোলে নেয়। সুহা, আয়ান আর আয়মান ও টেনশন মুক্ত হয়। ঘন্টাখানেক বাদে নীলিমার জ্ঞান ফিরলে রিজভী সহ সবাই যায়।
-ঠিক আছো ভাবি?
-হ্যা কিন্তু আপনার এই অবস্থা কেন? কয়েকঘন্টা আগেও তো একটু ভাল ছিলেন! (সাকিবকে জিজ্ঞেস করলো)
-তুমি দিছো আমায় ভালো থাকতে আবার যে চ্যাটাং চ্যাটাং কথা বলো? (সাকিব)
-ওই ব্যাটা ভাবি অসুস্থ! অভিযোগ পরে। ভাবির কোলে দে বাবুকে। (রিজভী)
-না ওর নেওয়ার দরকার নেই। অনেক কষ্ট দিছে আমাকে। এইবার ও একটু কষ্ট পাক। (সাকিব)
-তাহলে মরে যাচ্ছি দাঁড়ান। (নীলিমা)
-চলো আমি হেল্প করছি। (বাবুকে রিজভীর কাছে দিয়ে নীলিমাকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে সাকিব)
রিজভী হাসতে হাসতে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়। সুহানা আর আয়ান বাবুকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরে।
পাঁচ বছর পর………
তুলির বিয়ে আজ……
আয়ান বিয়ে করেছে আরো তিনবছর আগে। নীলিমা আর বাঁধন (আয়ানের বউ) মিলে পুরো সংসারটা সামলায়। আয়ান বিজনেস নিয়েই ব্যস্ত। সাকিব ওর অফিস। এইদিকে নিবির (সাকিব আর নীলিমার ছেলে) পাক্নামির শেষ পর্যায়ে।
-বাঁধন, বাঁধন কোথায় তুমি? (নীলিমা সিঁড়ি দিয়ে খোপা ঠিক করতে করতে নামছে আর জা কে ডাকছে)
-হ্যা ভাবি বলো। আরেহ বাহ! সুন্দর লাগছে ভীষণ ভাবি।
-তোমাকেও কম লাগছেনা। আয়ান কই? আর ওনার খবর ই নাই। এইদিকে ছেলেপক্ষ এলো বলে।
-ভাবি টেনশন নিওনা। ভাইয়া আর ও আছে ওইখানে। দেখছে সব।
-আয়ান ও পাঞ্জাবি পড়ে নাই আর উনিও না। রেডি হবে কখন? আর নিবির কই? ওকে তো দেখছিনা।
-তুমি চিন্তা করনা। নিবিরকে আমি ব্লেজার পরিয়ে দিয়েছি। চাচ্চুর (আয়ান) সাথেই আছে মনে হয়। রিজভী ভাইয়ার সাথেও কত মজা করছে দেখো গিয়ে।
-আম্মু এই দিনটার জন্য ভীষণ অপেক্ষায় ছিলেন। কিনতু আজ উনি নেই। (সাকিবের আম্মু মারা গিয়েছে দেড় বছর আগে)
-মন খারাপ করনা ভাবি। আংকেল আন্টি আছেন তো! ওত ভেবোনা। (নীলিমার মা বাবার কথা বলল বাঁধন)
-বাঁধন তুমি পার্লারে ফোন কর। তুলি এখনো কেন আসছেনা?
-কথা হয়েছে। আসছে। আমি আগেই সেজে চলে এসেছি। তোমাকে বললাম গেলা না। তবে এমনিতেও কম সুন্দর লাগছেনা। আবার বিয়ে দেওয়া যাবে।
-হইছে এখন চলেন। বর বরণ করবেন। আমার বরটাই দেখলো না এখনো!
-হাহাহাহা
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here