কলঙ্কের ফুল – পর্ব ১৭

0
375

#কলঙ্কের_ফুল
#পর্ব_১৭
#Saji_Afroz
.
.
.
ভিড়ের মাঝে গিয়ে আদি জিজ্ঞাসা করলো-
কি হয়েছে এখানে?
.
একটা ভদ্র মহিলা গম্ভীর গলায় চেঁচিয়ে বললেন-
আমি বাচ্চাদের সাথে ছবি তুলছিলাম, আমার ব্যাগটা পাশে রেখে। এই চোর আমার ব্যাগ নিয়ে দৌড় দিয়েছে। ভাগ্যিস আমি দৌড়ে এক্সপার্ট। তাই তাকে ধরতে পেরেছি। নাহলে ব্যাগটা যেতো। তার সাথে আমার মোবাইল, টাকা সব যেতো।
এখন এই চোরকে আমি পুলিশে দিবো।
.
আদি চোরের আপাদমস্তক দেখে মহিলাটির উদ্দেশ্যে বললো-
এবারের মতো মাফ করে দিন। ব্যাগতো পেয়েছেন।
-কিন্তু….
-চোর কে আমার হাতে তুলে দিন। দেখি আমি তারে কোনো শিক্ষা দিতে পারি কিনা?
.
ভদ্রমহিলা হেসে সম্মতি জানালে আদি চোরের হাত ধরে টেনে তাকে ভীড়ের মাঝ থেকে বের করে এনে বললো-
চলো আমাদের সাথে।
.
কিছুদূর এগিয়ে গিয়ে থেমে যায় আদি। তার সাথে মেহেরীকাও দাঁড়িয়ে পড়ে।
চোরের চুলগুলি হাত দিয়ে ঠিক করতে করতে আদি বললো-
দেখেতো ভালো ঘরের ছেলে মনে হয়। এই অবস্থা কেনো?
.
ছেলেটি কর্কশ ভাষায় জবাব দেয়-
তাতে আপনার কি? বাঁচিয়েছেন বলে এখন আবার লেকচার শুনাতে এসেছেন!
.
কিছুক্ষণ অবাক দৃষ্টিতে ছেলেটির দিকে তাকিয়ে আদি বললো-
থাপ্পড় চিনো? থাপ্পড় মেরে গাল লাল করে দিবো একদম। একেতো দোষ করেছো তার উপর উঁচু গলায় কথাও বলছো! তোমার সাহস দেখে অবাক হচ্ছি আমি।
.
আদির রাগান্বিত মুখের দিকে তাকিয়ে ছেলেটি নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
.
-নাম কি তোমার?
-সৈকত।
-সেই জন্য সৈকতের পাড়ে এসে চুরি করবা! যাক,, কি করো?
-এইস.এস.সি পাশ করেছিলাম। পড়ালেখা ভালো লাগতো না বলে আর পড়িনি।
-এখন চাকরীও ভালো লাগছেনা তাই এসব করছো। তাইতো?
-হুম।
-খুব খারাপ। এসব করে দুই বেলা ভাত জুটলেও আরো তিনবেলা জুটবেনা। তুমি যে মানুষের জিনিস চুরি করো সেখানে তাদের কতো প্রিয়, দরকারি জিনিস থাকে। যেসব চুরি হওয়ায় চোর কে তারা অভিশাপ দেয় সেটা কি জানো? মানুষের অভিশাপ নিয়ে কি সফলতা লাভ করা যায়? যায়না। তাছাড়া এখন তুমি ধরা খেলে। ওই মহিলা তোমাকে পুলিশের হাতে দিতে
চেয়েছিলেন। দিয়ে দিলে কি হতো? খরচ হতোনা বলো?
-হুম।
-এছাড়া কতো মানুষের ভিড় হয়ে গিয়েছিলো। কতোজন তোমায় চিনেছে। এসব কি করে কোনদিকে লাভবান হচ্ছো বলোতো আমায়?
.
সৈকত অশ্রুসিক্ত দৃষ্টিতে আদির দিকে তাকিয়ে বললো-
আসলেই আমি ভুল পথে ছিলাম। এসব আমার উচিত হয়নি। আর এভাবে আমাকে কেউ বুঝায়নি।
-সত্যি যদি তুমি অনুতপ্ত হও তবে আমি ধন্য।
.
আদি পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে কিছু টাকা বের করে সৈকত এর হাতে দিয়ে বললো-
এটা আমার কথা বুঝতে পারার জন্য তোমার উপহার।
-না ভাইয়া…
-না নিলে আমি খুব রাগ করবো।
-ঠিক আছে।
-যাও তুমি।
.
.
এতোক্ষণ দাঁড়িয়ে আদির কথা শুনছিলো মেহেরীকা। এতো সুন্দরভাবে গুছিয়ে সে কথা বলতে পারে জানা ছিলোনা তার।
.
আদি তার কাছে এগিয়ে এসে হাত ধরে বললো-
ওহ সরি! তোমাকে দাঁড় করিয়ে রেখেছিলাম এতক্ষণ।
-তোমার এতো গুণ আছে! জানতাম না।
-এখনো কতটুক জানো আমায়! আমার আরো অনেক গুণ রয়েছে।
.
আদির কথায় ফিক করে হেসে উঠে মেহেরীকা।
-হাসার কি আছে মেহের! বিশ্বাস হয়না?
-হয়তো, হয়।
-আস্তে আস্তে সব দেখবে।
-হুম।
.
কিছুক্ষণ হাঁটার পর আদির দিকে তাকিয়ে মেহেরীকা দেখলো সে মুখ টিপে হেসে চলেছে।
ভ্রু জোড়া কুচকে মেহেরীকা প্রশ্ন করলো-
তুমি হাসছো কেনো?
-একটা কথা মনে পড়েছে।
-কি কথা?
-কলেজ এ থাকতে আমার কবিতার ডায়েরী চুরি হয়েছিলো। পরে কলেজের ম্যাগাজিন এ দেখলাম একটা কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। যেটা আমার লেখা ছিলো। কিন্তু আমিতো কোনো লেখা জমা দিইনি। তার মানে নিশ্চয় ওই চোর আমার লেখা কবিতা নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছে।
-জানতে পেরেছিলে কে সে?
-হুম, প্রকাশিত কবিতার নিচেই তার নাম লেখা ছিলো। নাম ছিলো সৈকত। আমাদের ক্লাসেরই ছেলে।
তাই ভাবছি সৈকত নামের সব ছেলেরাই চোর হয় বোধহয়।
-মোটেও না। আমাকে এই নামের একটা ছেলে পছন্দ করতো। সে অনেক ভালো ছিলো।
-কি করে বুঝলে? প্রেম করেছো তার সাথে?
-নাহ, দেখে মনে হতো। সিনিয়র ভাইয়া ছিলো আমার স্কুলের।
-শুধু দেখেই কাউকে বুঝা যায়না। তার সাথে মিশলে বুঝা যায়।
-হুম।
.
আবারো দুজনে চুপ হয়ে যায়। নীরবতা ভেঙ্গে হাঁটা বন্ধ করে মেহেরীকা বলে উঠলো-
দাঁড়াও দাঁড়াও!
-কি হয়েছে?
-কবিতার ডায়েরি চুরি হয়েছে মানে তুমি কবিতা লিখো আদিয়াত?
-ওই একটু আধটু লিখতাম আর কি। ডায়েরি চুরির পর আর লেখা হয়না। অনেকগুলো কবিতা হারিয়ে ফেলেছিলাম তো।
-আমাকে নিয়ে একটা লিখবে প্লিজ?
.
মেহেরীকার কথায় তার দিকে বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে আদি-
তোমায় নিয়ে?
-হু।
-তোমাকে নিয়ে লেখার সাহস হবেনা আমার।
-কেনো?
-কারণ তুমি অনন্যা।
.
আদির কথায় মৃদু হেসে মেহেরীকা বললো-
এতো কিছু শুনতে চাইনা। একটা কবিতা চাই। লিখবেনা?
-এভাবে বললে না লিখে পারি! নিশ্চয় লিখবো।
.
.
.
ঘড়িতে সময় রাত ১১টা।
.
সানিয়া ফোনে কথা বলছে-
এতোক্ষণ লেগেছে তোমার একটা মানুষ ঠিক করতে ওই বাড়িতে পাঠানোর জন্য! যাক গে, কাজটা যেনো হয়ে যায়। রাখছি এখন।
.
মেহেরীকার বাসায় তার খবর দেওয়ার জন্যে সানিয়া নিজেই যেতে চেয়েছিলো কিন্তু সে গেলে বিপরীত কিছু হতে পারে। তাই অন্য কাউকে দিয়েই কাজটা করাতে চেয়েছে সে। কিন্তু এই অন্য কাউকে খুঁজতে এতো দেরি হয়ে যাবে জানলে নিজেই চলে যেতো। যাক, অবশেষে পেয়েছে সে কাউকে। আজ তাহলে বাসায় বিরাট ধামাকা হবে। এসব ভেবে নিজের মনে হেসে চলেছে সানিয়া।
.
.
.
-কিরে? মেহেরীকার কি শরীর খারাপ লাগছে? খেতেও এলোনা।
.
মায়ের প্রশ্নে আদি ফিসফিস করে জবাব দেয়-
হুম। আসার সময় বুমি করেছে সে। একটু আগেও বলছিলো
মাথাটা অনেক ব্যথা করছে।
-ওহ। তা তুই এমন ফিসফিস করে কথা বলছিস কেনো?
-ব্যথায় কোঁকড়াতে কোঁকড়াতে ঘুমিয়ে পড়েছে সে। তুমিও ফিসফিস করে কথা বলো।
.
ছেলের কথায় মৃদু হেসে সালেহা চৌধুরীও ফিসফিস করেই বললেন-
এই হট পটে খাবার আছে। ঘুম ভাঙ্গলে খেয়ে নিতে বলিস মেহেরীকা কে।
-বাহ মা! বাবার নিয়ম অমান্য করে তুমি আজ মেহেরের জন্য খাবার নিয়ে এসেছো! কই? আমার জন্যতো আনোনি কখনো?
-তোর জন্য তোর বোন আছে। তাই আমি কষ্ট করতাম না। বুঝেছিস?
-হু।
-ঘুমা, আমি গেলাম।
.
.
.
-বাড়িতে কেউ আছেন?
.
ড্রয়িংরুমে বসে টিভি দেখছিলেন কাসেম আহম্মেদ। এতো রাতে কারো গলার আওয়াজ পেয়ে দরজার পাশে গিয়ে বললেন-
কে আপনি?
-আমি মেহেরীকার খোঁজ দিতে এসেছি।
.
মেহেরীকার খোঁজ! কথাটি শুনে দেরী না করে কাসেম আহম্মেদ দরজা খুলে বলেন-
আমার মেয়ে! আমার মেয়ে কোথায়?
.
লোকটি কাসেম আহম্মেদ এর দিকে একটি কাগজ এগিয়ে দিয়ে বললেন-
এখানে ঠিকানা লেখা আছে। আপনার মেয়ে ওই বাড়ির পুত্রবধূ।
.
কাসেম আহম্মেদ কাগজটি হাতে নিয়ে অবাক চোখে তাকিয়ে বললেন-
কিন্তু আপনি কে?
-এতো কিছু আপনার জানার দরকার নেই। আমি আসি আজ।
.
আর না দাঁড়িয়ে লোকটি হনহন করে হেটে চলে যায়।
.
দরজা বন্ধ করতেই কাসেম আহম্মেদ দেখতে পান তার ছোট মেয়ে মুনিয়া চোখ কচলাতে কচলাতে তার দিকে এগিয়ে আসছে।
-ঘুমাস নি?
-কেউ এসেছিলো?
-হুম।
-কে?
-একটা লোক মেহেরীকার খবর নিয়ে এসেছে।
.
বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে মুনিয়া প্রশ্ন করে-
কোথায় আপু? আর উনি কে?
-উনি কে বলেন নি। তবে এই কাগজটা দিয়েছেন। এতে ঠিকানা লেখা আছে। আরো বলেছেন মেহেরীকা এই বাড়ির বউ।
.
দ্রুতবেগে তার দিকে এগিয়ে মুনিয়া তার হাত থেকে কাগজটি নিয়ে দেখতে থাকে।
-কি লেখা আছে মুনিয়া?
-ফাতেহা ঘোনার চৌধুরী বাড়ি।
-কি বলিস! এই বাড়ির বউ কি করে মেহেরীকা হবে!
-লোকটা কি মিথ্যে বললো!
-সেটা গেলেই বুঝা যাবে। আমি এখুনি….
-না। আজ না। কাল সকালে যেও।
-আমার মেয়ে…
-দেখো বাবা আমরা জানিনা কিন্তু আপু ওখানে আসলেই আছে কিনা। এতো রাতে তাদের বিরক্ত করাটা ঠিক হবেনা।
-হুম।
-যাও ঘুমিয়ে পড়ো এখন।
-ঘুম আর হবে নারে। তুই যা।
-হুম।
.
মুনিয়া এক পা এগুতেই কাসেম আহম্মেদ এর ডাকে আবার দাঁড়িয়ে পড়ে।
-কি বাবা?
-এই খবরটা যেনো তোর মা আর রাজীব জানতে না পারে।
-ঠিক আছে।
.
.
.
মেহেরীকা খালি পেটে ঘুমোচ্ছে। মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে তার যদি ক্ষিদে পায়! এই ভাবনার জন্য আদি ঘুমোতে পারছেনা। এদিকে সারাদিন বাইরে থাকায় প্রচুর ঘুম পাচ্ছে তার। ঘুম চলে যাওয়ার জন্য নিজে বানিয়ে কয়েক কাপ চা খেয়েছে সে, সারা রুম পায়চারি করেছে, মোবাইল গুঁতোগুঁতি করেছে তবুও তার ঘুম যাওয়ার নাম নেই। কি করা যায়? যাতে অনেকক্ষণ জেগে থাকা যাবে?
ভাবতে ভাবতে আদির মনে পড়ে মেহেরীকার আবদার এর কথা। সে বলেছিলো তাকে নিয়ে যেনো একটি কবিতা আদি লেখে।
.
আর দেরী না করে ঝটপট কাগজ কলম নিয়ে আদি বসে পড়ে সোফার উপর।
কিন্তু নিমিষেই তার মন খারাপ হয়ে যায়। শেষ কবিতা কখন লিখেছে তা মনে করতে পারছেনা সে। এখন মেহের কে নিয়ে লেখা কবিতা কেমন হবে? তার ভালো লাগবেতো? যদি না লাগে?
কিন্তু সেতো চায়, আদি তার জন্য কবিতা লিখুক। তাই একটা লেখাই যায়।
.
.
আযানের ধ্বনিতে ঘুম ভাঙ্গে মেহেরীকার।
চোখ দুটো খুললেও শোয়া থেকে একদমই উঠতে ইচ্ছে করছেনা তার। কিন্তু নামাজ কাজা করা ঠিক হবেনা ভেবে ধীরে ধীরে বসে সে। মাথাটা ঝিমঝিম করছে, সাথে পেটের মাঝেও কেমন যেনো করছে। রাতে খাবার খায়নি বলেই কি এমন লাগছে তার? হতেই পারে।
আপনমনে এসব ভেবে বসা থেকে উঠে পড়ে মেহেরীকা। লাইট জ্বালিয়ে দিতেই চোখ যায় তার সোফায় ঘুমন্ত অবস্থায় আদির দিকে।
.
বুকের উপর একটা ডায়েরি জড়িয়ে বেঘোরে ঘুমোচ্ছে আদি।
তার দিকে এগিয়ে গিয়ে খুব সাবধানে আদির ঘুম না ভাঙ্গে মতো মেহেরীকা ডায়েরিটা হাতে নেয়। একেবারে নতুন ডায়েরি।
কৌতুহল বশত ডায়েরির প্রথম পাতা উল্টাতেই কবিতা আকারের লেখা দেখতে পায় মেহেরীকা। আর দেরী না করে পড়া শুরু করে দেয় সে।
—————-
—————-
#মেহের
.
মেহের তোমার ছবি সামনে নিয়ে,
ভাবলাম কাব্য রচি তোমায় নিয়ে।
খাতার পাতা খোলা,
কলম হাতে,
কলম আমার আটকে আছে খাতাতে,
দু’চোখ আমার তোমার চোখের পাতাতে।
দেখি আর ভাবি এতো চোখ নয় যেন কাজলদানী,
যেন সরোবরে না ফোটা পদ্মকলি।
ইচ্ছে হলো এবেলা কাটিয়ে দিতে শুধু নয়ন দেখে,
তোমার কাজল চোখের কাজল মেখে।
খুব কষ্টে চোখ নামাতেই চোখ আটকে গেল ঠোঁটের কোণে, প্রজাপতি উড়ছে যেন গুনগুনিয়ে মনে মনে।
আমি অবাক চোখে তাকিয়ে আছি গোলাপ ঠোঁটে,
এমন অধর ধরার বুকে সবার জোটে?
তোমার দীঘল কালো নজরকাড়া চুল,
মেঘ ভেবে হয় হরহামেশা ভুল।
তুমি যখন চুল দুলিয়ে চলো,
মনটা আমার চুলের দোলায় হয়যে এলোমেলো।
তাইতো মেহের তুমি আমার মনে ভালবাসার বীজ করেছো বপন,
ভালোবাসি,
ভালোবাসি তোমায়,
তোমার চোখেই দেখি আমার স্বপন।।
.
ভালোবাসি মানে? আদির লিখেছে এটা? যেহেতু তার ডায়েরি সেই লিখবে। কিন্তু ভালোবাসি মানেটা কি? আদি তাকে ভালোবেসে ফেলেছে কি?
না, এটা হতে পারেনা। এটা শুধুই কবিতা। এর চেয়ে বেশি কিছু নয়।
.
আর কিছু না ভেবে যেমনভাবে ডায়েরিটা ছিলো তেমনভাবেই রেখে মেহেরীকা এগিয়ে যায় ওয়াশরুমের দিকে।
ওযু সেরে এসে মেহেরীকা বড় গলায় বলে উঠে-
শোয়া থেকে উঠে নামাজ পড়ে নিন।
.
মেহেরীকার একটা ডাকেই আদি এক লাফে উঠে বসে যায়।
এইরে! না ঘুমাতে চেয়েও কখন যে চোখটা লেগে গিয়েছে টেরই পায়নি সে।
.
আদি ডায়েরিটা এক পাশে রেখে এগিয়ে যায় ওয়াশরুমের দিকে।
.
.
নামাজ সেরে আদি দেখতে পায় মেহেরীকা সারা রুমে পায়চারি করছে।
তার দিকে এগিয়ে গিয়ে আদি প্রশ্ন করলো-
কি হয়েছে মেহের?
.
শান্ত গলায় মেহেরীকা জবাব দিলো-
আমার না কেমন যেনো লাগছে। মাথাটা ঝিমঝিম করছে। আর পেটের ভেতরও কেমন যেনো করছে।
-ক্ষিদে পেয়েছে আর কি বোকা মেয়ে। সবতো বুমি করে দিয়েছিলে, রাতেও না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলে। এখন দেখো! দূর্বল হয়ে গিয়েছো।
-উহু! এটা ক্ষিদের ব্যথা নয়। ক্ষিদে পাইনি আমার।
-কিসের ব্যথা শুনি?
-জানিনা।
-মা তোমার জন্য খাবার দিয়ে গিয়েছিলেন। এসো, খাবে।
-ইন্না। আমার ক্ষিদে নেই। খাবোনা।
-মাইর খাবা? আসো বলছি।
.
.
.
সকাল ৮টা…..
আদির উদ্দেশ্যে আরিফ বললো-
তুই আয়, আমি গাড়িতে আছি।
-হুম।
.
আরিফ বেরিয়ে যেতেই আদি মেহেরীকার পাশে গিয়ে বললো-
শরীর ভালোনা তোমার। রুমে গিয়ে শুয়ে থাকো।
-হুম।
-কোনো সমস্যা হলে ভাবী বা দিবা থেকে ফোন দিও আমায়।
-হুম।
.
কি ব্যাপার? সুযোগ পেলেই ফিসফিস শুরু হয়ে যায় তাইনা দুটিতে?
.
মিলির কথায় আদি হেসে বললো-
কি যে বলোনা ভাবী!
.
আদির দিকে এগিয়ে এসে মিলি তার দিকে দুটো লাঞ্চ বক্স এগিয়ে দিয়ে বললো-
আজ তোমার ভাইয়াকে বলেছিলাম তোমাদের জন্য দুপুরের খাবার আমি বানিয়ে দেবো, বাইরে থেকে খেতে হবেনা। ড্রয়িংরুমে দাঁড়াতে বলেছি তাকে কিন্তু সে দেখো….
-গাড়িতে আছে ভাইয়া, আমি দিয়ে দিবো।
-আচ্ছা। আমি যাই।
.
মিলি নিজের রুমের দিকে এগিয়ে যেতেই মেহেরীকা, আদির উদ্দেশ্যে বললো-
আরিফ ভাইয়া ভাবীকে সময় দেননা আগের মতো। ভাবী এটা নিয়ে মন ছোট করেন। আগে নাহয় কাজের চাপ ছিলো। এখন তুমি আছো, কাজের চাপ কমবে। তাই তুমি ভাইয়াকে বুঝাও একটু। এইরকম চলতে থাকলে তাদের সম্পর্কের ফাটল ধরবে।
-হুম, বলবো নিশ্চয়। আসি তাহলে?
-আসো।
.
.
.
ঘড়িতে সময় সকাল ১০টা….
সানিয়া ড্রয়িংরুমে পায়চারি করছে।
মেহেরীকার বাসা থেকে এখনো আসেনি কেনো কেউ? তাদের কি তাদের মেয়ে নিয়ে কোনো মাথা ব্যথা নেই নাকি? কাল রাতেই যেখানে ধামাকা হওয়ার কথা ছিলো সেখানে আজ সকাল ১০টা বেজে গেলো!
এসব ভাবতে ভাবতেই কলিং বেল এর শব্দ পায় সানিয়া।
দ্রুত বেগে এগিয়ে যায় সে সদর দরজার দিকে।
.
(চলবে)
.
বি:দ্র: মেহেরকে নিয়ে লেখা কবিতাটি আমার বিশেষ অনুরোধে কবি Moqsudul Alam
(মকসুদুল আলম কুতুবী) লিখেছেন। যার জন্য আমি তার কাছে কৃতজ্ঞ।
গল্পের সাথে কবিতাটি কেমন হয়েছে জানাবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here