কলঙ্কের ফুল – পর্ব ১৮

0
352

#কলঙ্কের_ফুল
#পর্ব_১৮
#SajI_Afroz
.
.
.
দরজা খুলেই সানিয়া দেখতে পায়, একজন ভদ্রলোক ও একটি মেয়েকে। মেয়েটিকে দেখতে অনেকটা মেহেরীকার মতোই লাগছে। তাহলে এরাই কি মেহেরীকার বাড়ির লোক?
-আসলে আমরা মেহেরীকার খোঁজে এসেছিলাম। সে কি আছে?
.
ভদ্র লোকের গলার স্বরে চিন্তার জগৎ থেকে বের হয় সানিয়া।
এক গাল হাসি নিয়ে বললো সে-
একেবারে ঠিক জায়গায় এসেছেন। এখানে মেহেরীকা আছে।
.
সানিয়ার কথা শুনে কাসেম আহম্মেদ এর চোখ খুশিতে ছলছল করে উঠলো।
তার পাশে দাঁড়ানো মুনিয়া বলে উঠলো সানিয়ার উদ্দেশ্যে-
আমার আপুকে ডেকে দিননা প্লিজ।
-আগে তোমরা ভেতরে আসো। এসে বসো।
.
ভেতরে ঢুকতেই মিলিকে দেখতে পেয়ে সানিয়া বললো-
মেহেরীকার বাড়ির লোক এরা। আন্টিদের ডেকে আনো।
.
সানিয়ার মুখে মেহেরীকার বাড়ির লোক এসেছে শুনে হতবাক হয়ে যায় মিলি। অবাক চোখে তাকিয়ে তাদের দিকে প্রশ্ন ছুৃঁড়ে-
আপনারা কিভাবে জেনেছেন মেহেরীকা এখানে আছে?
.
কাসেম আহম্মেদ কিছু বলার আগেই সানিয়া বলে উঠে-
আহ মিলি ভাবী! আন্টিদের ডেকে দাও আগে।
.
আর কথা না বাড়িয়ে মিলি এগিয়ে যায় আমজাদ চৌধুরীর রুমের দিকে।
.
-দাঁড়িয়ে আছেন কেনো! বসুন?
.
সানিয়ার কথায় কাসেম আহম্মেদ আর মুনিয়া সোফার উপরে বসে পড়ে।
.
সানিয়াও বসতে বসতে বলে-
মেহেরীকা যে এখানে আছে আপনারা জানতেন না?
-না।
-অবশ্য সে বলেছিলো, জানেন না আপনারা।
-হুম।
.
সানিয়া মনে মনে অনেক খুশি। নিশ্চয় তারা তাদের মেয়েকে নিয়ে যাবে আজ।
ভালোই হয়েছে আজ এসেছে তারা। এই সময় আদিও নেই বাসায়।
কে বাঁচাবে আজ তার মেহের কে?
.
.
.
কার এ উঠতে উঠতে আদি ড্রাইভারের উদ্দেশ্যে বললো
-ড্রাইভার, তাড়াতাড়ি চালাবে কেমন?
-আইচ্ছা ভাইজান।
.
আদির মনটা ছটফট করছে তার মেহেরের জন্য। যদিও বাসার কাউকে ফোন করেই সে মেহেরীকার সাথে কথা বলতে পারতো। তবে কেনো যেনো তাকে চোখের সামনে দেখতে না পেলে শান্তি লাগছেনা তার।
উফ্ফ….
কখন যে পৌঁছবে বাসায়? কখন দেখবে তার মেহের কে? আপনমনে এসব ভেবে ছটপট করতে থাকে আদি।
.
.
.
তার মানে আপনি জানেন না আঙ্কেল আর মুনিয়া কোথায় গিয়েছে?
.
রাজীবের কথা শুনে ভ্রু জোড়া কুঁচকে বিরক্তি গলায় রেশমা আহম্মেদ বলেন-
হুম, আমি জানিনা। বাপ বেটি কথায় গেছে। আমাকে কিছু বলে নাকি তারা!
-জিজ্ঞেস করেননি?
-করছিলাম। বলেনাই।
-ওহ।
-তুমি এতো কিছু জানতে চাচ্ছো কেনো! তোমার কি আবার মুনিয়ার উপর চোখ পড়ছে নাকি?
.
রেশমা আহম্মেদ এর কথার পিঠে কোনো কথা না বলে রাজীব বেরিয়ে যায় কাসেম আহম্মেদ এর বাসা থেকে।
আজ কাসেম আহম্মেদকে জানাতে এসেছিলো তিনি না চাইলেও সে পুলিশের সাহায্য নিবে তার মেহের কে খুঁজে বের করার জন্য। কিন্তু এখানে এসে জানতে পারে তিনি বাসায় নেই। তাও মুনিয়াকে সাথে নিয়ে কোথাও গিয়েছেন। তবে কি মেহেরের কোনো খোঁজ পেয়েছে তারা?
কেনো যেনো মনে হচ্ছে রাজীবের, তার মেহের খুব তাড়াতাড়ি তার কাছে ফিরে আসবে।
.
.
.
আমজাদ চৌধুরী ও সালেহা চৌধুরী ড্রয়িংরুমে প্রবেশ করতেই দাঁড়িয়ে পড়ে কাসেম আহম্মেদ ও মুনিয়া।
সালেহা চৌধুরী মৃদু হেসে বললেন-
বসেন ভাই সাহেব, বসেন।
.
তিনি বসতে বসতেই বললেন-
আপনারাও বসেন।
.
সালেহা চৌধুরী মুনিয়ার দিকে তাকিয়ে বললেন-
তুমি বুঝি মেহেরীকার বোন?
-জ্বী।
-দেখেই বুঝা যাচ্ছে। মা আসেনি তোমাদের?
-নাহ।
-ওহ। নাম কি তোমার?
-মুনিয়া।
.
মিলির দিকে তাকিয়ে সালেহা চৌধুরী বললেন-
বউমা? সানিয়া আর মুনিয়াকে নিয়ে মেহেরীকার রুমে যাও তুমি।
-আচ্ছা।
.
সানিয়া আমজাদ চৌধুরীর উদ্দেশ্যে বললো-
আঙ্কেল? আমি থাকি প্লিজ?
.
মাথা নেড়ে সম্মতি দিলেন আমজাদ চৌধুরী।
.
মুনিরার উদ্দেশ্যে মিলি বললো-
তুমি এসো। তোমার বোনের কাছে নিয়ে যাই তোমায়।
.
.
.
মাথাটা ভার হয়ে আছে মেহেরীকার। শরীরটা কেমন যেনো করছে।
এই সময়ে আদিকে খুব মনে পড়ছে তার।
নিজের মনে কথাটি বলে নিজের উপরেই রাগ উঠে মেহেরীকার।
কেনো? আদিয়াতকে কেনো মনে পড়বে তার? আদিয়াত থাকলেই কি সে সুস্থ হয়ে যেতো? মোটেও না, আদিয়াত থাকাকালীনও তার এমন খারাপ লেগেছিলো। তাই তাকে মিস করার মতো কারণ আছে বলে মনে হয়না।
.
-আপু?
.
কে? মুনিয়া? কিন্তু সে এখানে কিভাবে এসেছে?
এসব ভেবে পেছনে ঘুরে দরজার দিকে তাকাতেই চমকে যায় মেহেরীকা। মিলির পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে তার ছোট বোন মুনিয়া।
আর এক মূহুর্ত দেরী না করে মেহেরীকা ছুটে গিয়ে মুনিয়াকে তার বাহুডোরে আবদ্ধ করে নেয়।
দুই বোন কাঁদতে থাকে অঝর ধারায়।
.
-ছাড় আপু আমাকে। তুই ভালোনা। কি করে পারলি এতোদিন আমার সাথে কথা না বলে থাকতে?
.
কোনো কথার জবাব না দিয়ে মেহেরীকা অনবরত কাঁদতে থাকে।
.
মুনিয়া অভিমান করে নিজেকে মেহেরীকার কাছ থেকে ছাড়িয়ে বললো-
এখন সব দরদ উতলে পড়ছে তোর!
-মা, বাবা, মিন্টু আসেনি?
-বাবা এসেছে। ড্রয়িংরুমে আছে।
.
-কি ব্যাপার বোনকে এভাবে দাঁড় করিয়ে রাখবে নাকি? ভেতরে যেতে বলো?
.
মিলির কথায় চোখের পানি মুছে মেহেরীকা বললো-
ও হুম! আয় মুনু। ভেতরে আয়।
ভাবী তুমিও আসো।
-তোমরা যাও, আমি একটু চা নাস্তার ব্যবস্থা করি। এই প্রথম তোমার পরিবার এসেছে আমাদের বাড়িতে।
-আমি তোমাকে সাহায্য করি চলো।
-কোনো দরকার নেই। এমনিতেই শরীর খারাপ তোমার। এখন বোন এসেছে, গল্প করো।
-আচ্ছা।
.
মেহেরীকার সাথে রুমের ভেতর প্রবেশ করে মুনিয়া চারদিকে চোখ বুলিয়ে বললো-
আপুই? তুইতো রাজরানী হয়ে গেলি!
.
মুনিয়ার দিকে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে মেহেরীকা বললো-
রাজরানী?
-হুম। এতো বড় বাড়ি, বাইরে দেখলাম সারি করে দাঁড়ানো গাড়ি। কিভাবে এই বাড়ির বউ হলি তুই?
.
অবাক চোখে তার দিকে তাকিয়ে মেহেরীকা প্রশ্ন করে-
তুই কি করে জেনেছিস?
-কাল রাতে একটা লোক এসে তোর ঠিকানা দিয়ে যায়। তিনি বলেছেন।
-কে?
-আরে চিনিনা আমরা।
.
মেহেরীকা ভাবতে থাকে কে হতে পারে লোকটি। সেতো শুধু সালেহা চৌধুরীকে বলেছিলো তার বাসার ঠিকানা। তাহলে তিনি কি…..?
নাহ, কিসব ভাবছে সে! উনি এমন করতেই পারেননা। কে করেছে তাহলে? এখন কি হবে? এতো মিথ্যের মাঝে সত্যিটা যদি বেরিয়ে আসে তাহলে আদি সমস্যায় পড়ে যাবে। তারই কিছু একটা করতে হবে।
.
আর কিছু না ভেবে মেহেরীকা এক পা বাড়াতেই মুনিয়ার ডাকে থেমে যায়।
-হুম মুনু, বল?
-রাজীব ভাইয়া ফিরে এসেছে। এবার শুধু ফিরেই আসেনি। তোর খোঁজে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
.
মুনিয়ার মুখে রাজীবের কথা শুনে বুকটা ধুক করে উঠে মেহেরীকার। রাজীব তার খোঁজ করছে! কিন্তু কেনো? তবে কি সে তার ভুল বুঝতে পেরেছে?
-এই আপু?
.
মুনিয়ার ডাকে চিন্তার জগৎ থেকে বের হয়ে মেহেরীকা বললো-
হু?
-তুই এই বাড়ির বউ কিভাবে হলি? বলনা।
-বলবো। আগে আমাকে রাজীব কে নিয়ে বল।
-কি বলবো?
-কবে ফিরেছে আর কিভাবে বুঝেছিস সে আমাকে খোঁজার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে?
-আচ্ছা শোন, বলছি।
.
.
.
-এতোদিন মেয়ের খোঁজ করেননি?
.
আমজাদ চৌধুরীর প্রশ্নে কাসেম আহম্মেদ জবাব দেন-
করেছিলাম।
-আপনার মেয়ে আমার ছেলের সাথে পালিয়ে বিয়ে করে এই বাড়িতে উঠেছে। এটা কতোটা লজ্জাজনক বলতে পারেন?
-আসলে আমার এই বিষয়ে জানা নেই।
-মেয়ের বাবা আপনি। মেয়েকে চোখে চোখে দেখে রাখতে পারেননি?
যদি রাখতেন তবে আজকে এভাবে সম্মান খোয়াতে হতোনা আমাদের। আমি দুই পরিবারের কথাই বলছি।
.
.
আমজাদ চৌধুরীর কথা শুনে তাচ্ছিলের হাসি দিয়ে সানিয়া বললো-
তোমাদের সাথে এদের তুলনা হয় নাকি আঙ্কেল! সম্মান বলতে কিছু আছে নাকি এদের?
.
এপর্যায়ে মুখ খুললেন সালেহা চৌধুরী।
-সানিয়া তুমি ভেতরে যাও।
-কিন্তু আঙ্কেল আমাকে…
-আমরা বড়রা কথা বলছি। তুমি এখুনি ভেতরে যাও।
.
সানিয়া সোফা ছেড়ে দাঁড়িয়ে এক পা এগুতেই দেখতে পায় মুনিয়াকে।
বিরক্তিভরা কণ্ঠে বললো-
তুমি এখানে কেনো? মেহেরীকার সাথে থাকতে বললো না তোমায়?
.
কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে মুনিয়া সবার উদ্দেশ্যে বললো-
আপু বেঁহুশ হয়ে গিয়েছে। মাটিতে পড়ে আছে সে।
.
ঠিক সেই সময় বাসায় প্রবেশ করে আদি।
মুনিয়ার মুখে এই কথাটি শুনে কারো দিকে না তাকিয়ে, আর না দাঁড়িয়ে ছুটতে থাকে মেহেরীকার রুমের দিকে।
.
হঠাৎ আদিকে দেখে অবাক হলেও তার পিছুপিছু ছুটতে থাকে উপস্থিত সকলে।
.
.
রুমে প্রবেশ করেই আদি দেখতে পায় মেহেরীকা মেঝেতে পড়ে রয়েছে।
সে মেহেরীকার দিকে এগিয়ে গিয়ে তাকে কোলে তুলে শুইয়ে দেয় বিছানায়।
ততক্ষণে ড্রয়িংরুমের সকলেও চলে আসে মেহেরীকার রুমে।
কাউকে তোয়াক্কা না করে মেহেরীকার দিকে ছলছল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আদি বললো-
এই মেহের? চোখ খুলোনা প্লিজ?
.
মেহেরীকার থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে আদির চোখ বেয়ে অঝর ধারায় পানি পড়তে থাকে।
.
বিছানার পাশে চোখ পড়তেই আদি দেখতে পায় অনেকজন কেই।
মায়ের দিকে অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে অসহায় কণ্ঠে আদি বলল-
ও মা? মেহের চোখ কেনো খুলছেনা?
.
বিছানার পাশে থাকা ছোট টেবিলটার উপর থেকে পানির জগটা হাতে নিয়ে সালেহা চৌধুরী বললেন-
এখুনি খুলবে।
.
পানির জগ থেকে পানি নিয়ে মেহেরীকার চোখে মুখে ছিটিয়ে দেন সালেহা চৌধুরী।
.
ধীরে ধীরে মিটিমিটি করে চোখ জোড়া খুললো মেহেরীকা।
চোখ খুলেই দেখতে পায় সে আদির অশ্রুসিক্ত নয়ন।
.
-মারে?
.
কাসেম আহম্মেদ এর ডাকে উঠে বসে মেহেরীকা বললো-
বাবা!
.
কাসেম আহম্মেদ তার দিকে এগিয়ে যেতেই আদি বিছানা ছেড়ে দাঁড়িয়ে বললো-
বসুন আপনি।
.
কাসেম আহম্মেদ বিছানার উপরে বসে মেহেরীকার হাত ধরে বললো-
এতো অভিমানী কেনো তুই? আমরা তোর চিন্তায় কতোটা কষ্টে ছিলাম ধারণা আছে তোর? কি করে পারলি, এতোদিন যোগাযোগ না করে থাকতে?
.
মেহেরীকা কোনো জবাব দেওয়ার আগেই সালেহা চৌধুরী বললেন-
ভাই সাহেব? আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন। ছেলেমেয়ে দুটো ভালো আছে এটাই বেশি। সব ভুলে যান। ক্ষমা করে দিন আপনার মেয়েকে।
.
সালেহার জন্য এই মেয়েকে বিদায় করতে পারছেন না ভেবে রাগে ফুঁসতে থাকেন আমজাদ চৌধুরী।
গম্ভীর গলায় সালেহা চৌধুরীর উদ্দেশ্যে তিনি বললেন-
সালেহা? একটু আমার রুমে চলো। কথা আছে।
.
মৃদু হেসে সালেহা চৌধুরী, কাসেম আহম্মেদ এর উদ্দেশ্যে বললেন-
আপনি বসুন। আমরা আসছি।
.
.
কাসেম আহম্মেদ খেয়াল করেন, আদি মেহেরীকার দিকে এক নজরে তাকিয়ে রয়েছে। বোধহয় কিছু বলতে চাইছে তাকে। এই ছেলেটা কখন কিভাবে তার মেয়েকে বিয়ে করেছে তার জানা নেই। তবে ছেলেটির চোখে মেহেরীকার জন্য অফুরন্ত ভালোবাসা তিনি দেখেছেন।
.
হালকা কেশে কাসেম আহম্মেদ বলেন-
আমি ড্রয়িংরুমে যাই।
-বসোনা বাবা।
-জামাই এসেছে, ফ্রেশ হয়ে নিক। আমি আছি।
-হুম।
.
কাসেম আহম্মেদ এগুতে থাকে ড্রয়িংরুমের দিকে। তার পিছুপিছু এগিয়ে যায় মুনিয়া আর সানিয়া।
.
মেহেরীকার পাশে এসে আচমকা তাকে জড়িয়ে ধরে আদি।
আদির এমন কাণ্ডে চমকে যায় সে।
আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আদি বললো-
তোমায় বলেছিনা কোনো কিছুর দরকার হলে আমায় বলার জন্য? শরীর খারাপ করেছে বলোনি কেনো?
-এভাবে জড়িয়ে রাখলে দমটাও আটকে যাবে আমার।
.
মেহেরীকার কথায় আদি তাকে ছেড়ে বললো-
তোমার বাসার লোক কিভাবে জেনেছে তুমি এখানে?
-কাল রাতে একজন তাদের জানিয়েছে। তারাও জানেনা তিনি কে। কিন্তু তুমি এই অবেলায় চলে এলে যে?
-মনটা কেমন যেনো করছিলো।
-ভালো হয়েছে এসেছো। এবার সামলাও সব।
-হুম।
-তবে আমার মনেহয় সবাইকে সত্যিটা জানালেই ভালো হবে।
-হুম জানাও তারপর বাবা ওই সানিয়ার সাথে আমার বিয়ে দিক। কুমার থাকবো দরকার হলে আজীবন তবুও ওই সাপ মানে সানিয়াকে আমি বিয়ে করবোনা।
.
আদির কথা শুনে উচ্চশব্দে হেসে উঠে মেহেরীকা।
.
.
.
ড্রয়িংরুমে যেতেই কাসেম আহম্মেদ দেখতে পান, সোফার সামনে টেবিলটার উপরে হরেক রকমের নাস্তা সাজানো।
তাদের দেখে মিলি হাসি মুখে বললো-
কোথায় গিয়েছিলেন আপনারা?
ডাকতেই যাচ্ছিলাম আমি আপনাদের। আসুন না? বসুন।
.
কাসেম আহম্মেদ কিছু বলার আগেই সানিয়া বলে উঠে-
সোফা গুলোর দাম কতো জানেন? লাখ দেড় লাখতো হবেই।
.
শান্ত গলায় কাসেম আহম্মেদ বললেন-
আমাকে কেনো বলছো এসব?
-বলছি এই জন্য যে, এতোকিছু দেখার পরে লোভে পড়ে মেয়েকে সাথে নিয়ে যাওয়ার কথা বলছেন না। আসলে আমার মনে হচ্ছে এসব শুরু থেকেই প্লান করে রেখেছিলেন আপনারা। এতো বড় বাড়িতে ধুমধাম করে বিয়ে দিতেও একটা খরচের ব্যাপার স্যাপার আছে। তাই প্লান করেই কোনো খরচ ছাড়াই মেয়েকে পালাতে সাহায্য করেছেন আর এখন এসে নাটক করছেন।
.
সানিয়ার কথা শুনে ধমকের সুরে মিলি বললো-
এসব কি বলছো তুমি! যাও, ভেতরে যাও।
-যাবোনা। বলতে দাও আমায়। ওদের এই নোংরা প্লানের শিকার হয়েছি আমি। তাই আমি বলবো। আজ এই বাড়িতে বউ হয়ে থাকার কথা আমার। অথচ দেখো, ওই দুই টাকার মেয়েটা আমার চোখের সামনেই ঢ্যাংঢ্যাং করে বেরাচ্ছে। আর এখন তার পরিবার এসেছে নাটক করতে। যেমন পরিবার তেমন মেয়ে। পুরাই ফালতু। লজ্জা সরম থাকলে নিয়ে যান সাথে এই মেয়েকে।
.
-সানিয়া!
.
আদির ডাকে পেছনে ফিরে থমকে যায় সানিয়া।
রাগান্বিত দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আদি বললো-
আর একটা কথা বললে তোমাকে এই বাড়ি থেকে বের করতে বাধ্য হবো আমি। এখুনি নিজের রুমে যাও।
.
আদির কথার পিঠে কোনো কথা না বলে সানিয়া এগুতে থাকে নিজের রুমের দিকে।
.
মিলির দিকে তাকিয়ে নরম গলায় আদি বললো-
ভাবী, মেহের সেন্স হারিয়েছিলো।
-কি বলো! আমি রান্নাঘরে ছিলাম তাই জানিনা।
-ওহ। ও একা রুমে। তুমি একটু যাবা প্লিজ?
-হুম, যাই ওকে দেখে আসি।
.
মিলিকে পাঠিয়ে দিয়ে কাসেম আহম্মেদ এর পাশে গিয়ে আদি বললো-
আপনার মনে অনেক প্রশ্ন আমি জানি। কি কি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে তাও জানি। সব গুলোর উত্তরই আমি দিবো এখন।
যেদিন রাতে মেহেরীকা বিয়ের আসর ছেড়ে পালিয়েছিলো সেদিন তার সাথে প্রথম দেখা হয় আমার। আমিও বাসা ছেড়ে পালিয়েছিলাম সেদিন। তবে বিয়ের আসর ছেড়ে নয়। বিয়ে করার ভয়ে। একটু আগে যে মেয়ে আপনাকে কড়া কথা শুনাচ্ছিলো তার সাথে বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছিলো। আর তাকে বিয়ে না করার জন্যই মেহেরকে বিয়ে করি। তবে বাসার সবাই জানে আগে থেকেই সম্পর্ক ছিলো আমাদের। ওর অন্য কোথাও বিয়ে হচ্ছিলো বলেই আমি বিয়েটা করে ফেলেছি।
.
কিছুক্ষণ নীরব থেকে আদি আবার বলতে শুরু করলো-
যেভাবেই যাই হোক। ধীরে ধীরে আমি মেহেরকে ভালোবেসে ফেলেছি। এখন আপনি যা ভালো মনে করেন আপনার মেয়ের জন্য তা করতে পারেন।
তবে হ্যাঁ মেহেরকে ছাড়া চলাটা কষ্ট হবে আমার, খুব কষ্ট হবে।
.
আদির কথা শুনে এক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে থাকেন কাসেম আহম্মেদ।
.
কাসেম আহম্মেদকে নীরবভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আদির মনে ভয় জমতে শুরু করে। আর ভাবতে থাকে, সানিয়ার কথায় অভিমান করে তিনি কি মেহেরকে নিয়ে চলে যাবেন?
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here