জীবনসঙ্গী – পর্ব ৭

0
400

জীবনসঙ্গী
পর্ব ৭
writer- Tanishq Tani

kiya rang laaya dill ka lagaana,,
Kiya rang laaya dill ka lagaana,,

Goonje Hawa mein,,,
Bechhde dilaan diyan duhaiyaan
Vey badi lambiyan si judaiyaan

Tere nishaan yadoon mein hai,,,
Tu kyun nehi Taqdeer mein,,
Nadaan dil hain dhoondtah
Qurbat Teri tasveer mein,,

Mumkin nehi hai Tujhko bhulana,,
Mumkin nehi hai Tujhko bhulana

Dekhe khudaya do aashiqaan diyaan Tabahiyan,,
Vey badi lambiyaan si judaiyaan

এতো রাতে এমন গান শুনে কিছুটা বিস্মিত হলো শশী,,,
দুচোখ বেয়ে এতোদিন পর আবার অশ্রু ঝরে,, শশীরের অসহ্য যন্ত্রনা শুরু হয় গানের প্রতিটি কথায়,,পাথরের মূর্তি আজ আবার নড়ে উঠলো,,,পুরোনো ক্ষত যেন দগদগ করছে সমস্ত দেহে,,,বিছানা খামছে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে কাঁদতে থাকে,,ক্রমশ কান্না সকল বাঁধা উপেক্ষা করে আকাশ পাতাল ছেয়ে গেলো,, শশী আর্তনাদ করে উঠলো,,

গানের কথাগুলো যেন রিশাদের দেওয়া ঘাকে আবার মনে করিয়ে দিচ্ছে,,, নিজের শরীর খামচে চুল টেনে উন্মাদের মতো আচরন করতে থাকে,,,

কেন রিশাদ? কেন? কি ক্ষতি করেছিলাম তোমার,, কেন এভাবে আমার জীবনটা শেষ করে দিলে,,,মানুষ একটা পালিতো কুকুরের সাথেও তো এমন করে না যেমন একটা মানুষ,একজন একজন স্বামী হিসেবে তুমি আমার সাথে করলে,,আমি তো তোমাকেই ভালোবেসে সব দিয়ে দিয়েছি,,তোমাকে সব দিয়ে আজ আমি নিঃস্ব রিক্ত,,,
আমাকে মেরে কেনো ফেললে না তোমরা,,আমি জীবন্ত লাশ হয়ে বাঁচতে চাই না আর,,,
বাসর ঘরের বিছানার চাদর উল্টে ফেলে শশী,,পাগলের মতো শুরু করে,,,

আমি মরে যাবো,,আমার তো সব শেষ,,কেন বাঁচবো,, আমি বাঁচবো না,,শশী সামনে থাকা কাঁচের ভাছ টা ভেঙ্গে কোনোকিছু না ভেবেই হাতের শিরা বরাবর টান মারে,,,

চোখের সামনে সব অন্ধকার হয়ে আসে ধীরে ধীরে,,,
ফ্লোরে পড়ে যায় নিথর হয়ে,,,

সকালে চোখ মেলতেই নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করে,,বেঁচে যাওয়ার ক্ষোভে মনটা বিষিয়ে ওঠে আবার,,এই দুনিয়ার বাতাসে এখন শ্বাস নিতেও ঘৃনা লাগে,,সব ধোঁকাবাজ,,মিথ্যুক,,,

ভাবি মনি তুমি জেগে গেছো,,,একটা ৭/৮ বছরের ছেলে এসে শশীর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে

ছেলেটার হাতের স্পর্শে শশীর রাগ চলে যায়,,
বিছানা ছেড়ে উঠতে গিয়েও উঠতে পারে না শশী হাতের ব্যথায়,,হাতে স্যালাইন চলছে,,,

উঠো না ভাবি মনি,,,কি লাগবে তোমার বলো,,আমি এনে দেবো,,,

কিছু লাগবে না বাবু,,ছেলেটার মাথায় অন্য হাত বুলিয়ে দেয়,,

তোমার হাতে খুব ব্যথা তাই না ভাবি মনি?তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে বুঝি?দাদা ভাই তো ডাক্তার কে খুব বকেছে জানো,,

না বাবু আমি ঠিক আছি,,এ কষ্টে আমার কিছুই হয় না,,

কেনো কিছু হয় না? তুমি কি দাদা ভাইয়ের মতো সুপারহিরো,, জানো আমার দাদা ভাইয়েরও এমন ব্যথা লাগে,,আমি জিজ্ঞেস করলে বলে তারও নাকি কষ্ট হয় না,,

কি করছো নাসিফ,, ভাবি মনিরকে ডিস্টার্ব করো না,, যাও রুমে গিয়ে বসো,,,

বাহ রে,, আমি কি তোমাকে ডিস্টার্ব করেছি ভাবি মনি বলো? মুখ ফুলিয়ে বলে,,

না বাবু,,তুমি তো এতো মিষ্টি একটা ছেলে,,এতো মিষ্টি ছেলে কি কখনো কাওকে ডিস্টার্ব করতে পারে,,মুচকি হেসে নাসিফের গালে হাত দিয়ে বলে শশী,,,

দেখছ,,আম্মু তুমি সবসময় আমাকে বকো,,,

হয়েছে রে বাপ তুই ঠিক আমি বেঠিক,,এখন যা দাদাভাইকে গিয়ে বল ভাবি মনি জেগে গেছে,,,

দাদা ভাই তো জানে ভাবি মনি জেগে গেছে,, দাদাভাই তো এখনি গেলো এখান থেকে,,আম্মু তুমি না কিছুই জানো না,,,

আহ্ নাসিফ,,যেতে বলেছি যাও,,,

নাসিফ মুখ ফুলিয়ে চলে যায়,,,

শশী নাফিসের যাওয়ার পথে চেয়ে থাকে,,,

এখন কেমন আছো শশী,,,

জ্বী ভালো,,আস্তে করে জবাব দেয়,,

উঠে বসবে,আচ্ছা আমি সাহায্য করছি শশীকে খাটের সাথে বালিশ পিঠের নিচে দিয়ে বসিয়ে দেয়,,

আমি হচ্ছি অনির ছোট চাচী,,
তুমি আমাকে ছোট মা বলতে পারো,,অনিও বলে,,
এখন বলো কি খাবা,,,সুপ করে আনি,,,

না,,আমি কিছু খাবো না,,

তা বললে কি হবে বলো,,ডাক্তার বলে গেছে তোমাকে কিছু খাইয়ে তারপর ওষুধ খাওয়াতে,,,

আচ্ছা তুমি বসো আমি সুপ নিয়ে আসছি,,,

শশী চুপচাপ মহিলার কথা শুনলো,,এতো আদর কেন করছে বোঝে না শশী,,,শশী তো ভাবছিলো এখন ইচ্ছা মতো ১৪ গুষ্ঠি উদ্ধার করবে কাল রাতের ঘটনার জন্য,, কিন্তু এ তো দেখি পুরোপুরি ধারনার বাইরে ব্যবহার করলো,,,
কে জানে হয়তো রিশাদের চেয়ে বেশি কিছু মতলব এটেছে এরা,,
তা যাই হোক,,শশীর এখন নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনো ভয় নেই,,মামার সংসারে হাসি ফুটাতে পেরেছে এই যে অনেক শশীর জন্য,,,
এখন কেউ মেরে ফেললেও কিছু আসে যায় না,,শুধু দুঃখ একটাই জনম দুখীনি মা টা সারাজীবন কষ্ট করে গেলো,,,

সারাদিন বিছানায় শশী,,এবাড়ির মানুষগুলোর আচরন শশীর মোটেও সুবিধার মনে হয় না,,ওর মতো এমন গরিব তালাকপ্রাপ্তা মেয়েকে কেউ এতো আদর করতে পারে ঘরের বউ হিসেবে তা শশীর হজম হয় না,,

কথায় আছে না সৎ সঙ্গে স্বর্গ বাস,,আর অসৎ সঙ্গে নরক বাস,,শশীর ক্ষেত্রে কথাটা কিছুটা ভিন্নরূপে ধরা দিয়েছে,,,এতোদিন অসৎ সঙ্গে নরক বাস করে এখন স্বর্গও যে নরক লাগে শশীর চোখে,,সব মানুষের মাঝে রিশাদের প্রতিচ্ছবি দেখে,,,

শশীর এ বাড়িতে শুধু নাসিফ কে ভালো লাগে,,সারাটাদিন নাসিফ ভাবি মনির পাশে বসে ছিলে,,আর ওর মুখে সর্বক্ষণ দাদাভাই দাদাভাই,,, দাদা ভাই এটা করে ওটা করে,,,

আচ্ছা নাসিফ,,দাদাভাই কে,, তোমার বাবার বাবা বুঝি,,,সবসময় দাদাভাই দাদাভাই করছো,, তোমার দাদি ভাই কি ভালোবাসে না তোমাকে?

নাসিফ খিলখিল করে হেসে দেয়,,

ভাবি মনি তুমি কি বোকা,,দাদাভাই মানে দাদু ভাই না তো,,দাদাভাই আমার অনি ভাইয়া,,

শশী একটি লজ্জায় পায় নাসিফের কথা শুনে,,কিন্তু এই অনি টা কে,,,তখন ছোট মাও বললো এনার কথা,,আবার এই নাসিফও বলছে,,,

নাসিফ অনি কে?

শশীর মুখে এমন কথা শুনে নাসিফ হা করে চেয়ে থাকে,,,

ভাবি মনি তুমি ঠিক আছো তো,,,অনি ভাইয়া কে জানো না তুমি,,,,

না তো,,, কে অনি,,,

অনি হলো তোমার বর,,, বুঝলে ভাবি একটা অষ্টাদশী মেয়ে ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বললো

ফারিহাপু,,নাসিফ মেয়েটিকে আপু বলে জরিয়ে ধরতেই মেয়েটি নাসিফকে কোলে নিয়ে গালে চুমু দিয়ে শশীর পাশে বসে,,,

নিজের বরকে চেনো না এটা যদি কেউ শোনে মানসম্মান থাকবে তোমার বলো,,,

সরি,,,শশী মাথা নিচু করে অপরাধীর মতো,,,

আরে ভাবি তুমি সরি বলছ কেন?,,আমরা তো ননদ ভাবি মজা করতেই পারি,,
মেয়েটা অনেক কথা বললো কিন্তু শশীর এসব কিছুই ভালো লাগছে না,,,

ঠিক আছে ভাবি তুমি ঘুমাও,,আমরা পরে আবার গল্প করতে আসবো,, চল নাসিফ,,,

নাসিফও বাই বলে চলে যায়,,,

শশীর শরীর মোটেও ভালো লাগছে না,,শুয়ে চোখটা বন্ধ করতেই রাজ্যের ঘুম নেমে আসে চোখে,,,,

মাঝরাতে ঘুম ভাঙতেই আবার সেই কাল রাতের গানের গিটারে তোলা সুর শুনতে পায়,,কিছুক্ষন যেতেই যন্ত্রনাদগ্ধ কন্ঠে গানটা গাইতে শোনে,,,

শশীর খুব জানতে ইচ্ছে হচ্ছে এতো দরদ দিয়ে কে গান টা গাচ্ছে,,,যার কন্ঠ শুনে শশী তার বুকের যন্ত্রনা আন্দাজ করতে পারছে,,,

অনেক কষ্টে বিছানা থেকে স্যালাইন খুলে উঠে গানের উৎসের দিকে এগোতে থাকে,,,

দরজা খুলে পাশের রুমের দরজায় গিয়ে থামে শশী,,হ্যাঁ এখান থেকেই আসছে আওয়াজ,,,

অসুস্থ শরীরে ধীর পায়ে ভেতরে ঢুকতেই চোখ পড়ে দেয়ালে টানানো শশীর অসংখ্য ছবি,,শশী অবাক হয়ে যায়,,প্রত্যেকটা ছবি শশীর কলেজে থাকাকালীন,, মাঝে বড় একটা ছবি হ্যাঁ ছবিটা কালকের বিয়ের পোশাকে তোলা,,,কিন্তু এতো ছবি কোথা থেকে এলো,,কে তুললো,,,
তখনি শোনা যায় কেউ সামনের আধার থেকে গিটার নিয়ে গান গাচ্ছে
শশীকে যেন মোহের মতো গানটা টানে,,,
Nadaan dil hai dhoondtah
Qurbat teri tasveer mein,,,

Mumkin nehi hai tujhko bholanaa
Mumkin nehi hai tujhko bholanaa

শশী সামনে এগোতেই কিছুর সাথে ধাক্কা লাগে ওর ওমনি গানটা থেমে যায়,,,

শশী কিছুটা ভয় পেয়ে রুম থেকে বের হতে যাবে ঠিক তখনি কারো হাত শশীর হাতটা টেনে ধরে,,

ভয়ে নিশ্বাস জোরে জোরে উঠানামা করে শশীর,,,
হাতটায় টান লাগতেই শশী চোখ বন্ধ করে জড়সড় হয়ে যায়,,,

শশী কারো শরীরের পরিচিত পারফিউমের তীব্র গন্ধ পায়,,

হ্যাঁ এটা তো অনিকেতের শরীরের গন্ধ,,,

কলেজে যখন তখন অনিকেত শশীর সামনে এসে দাঁড়াতো সিঁড়ি দিয়ে একা যেতে দেখলেই দেয়ালের সাথে শশীর হাত চেপে ধরতো,,একটাই কথা বলতো শুধু,,,

আমাকে কি ভালোবাসা যায় না শশী,,,একটু ভালোবেসে দেখো,,জীবন টা দিয়ে দেবো তোমার হাতে,,,

বিরক্ত লাগতো শশীর,,রীতিমতো রাগ হতো অনিকতের উপর,,কিন্তু কিছুই বলতে পারতো না অনিকেত কে,, কেন যেন বুকটা দুরুদুরু করতো অনিকেত আশেপাশে থাকলে,,,গলা শুকিয়ে যেতো অনিকেতের তীক্ষ্ণ নেশা ভরা নজর দেখলে,,,

আজও বহুদিন পর একই অনুভূতি,,
শশী টিপটিপ করে চোখ খুলতেই চোখ কপালে উঠালো,,,
এ কাকে দেখছে,,সেই চেহারা,,সেই মানুষটা,,হ্যাঁ এতো অনিকেত,,,

বলেছিলাম না,, তুমি না চাইলেও তুমি আমার হবে,,পুরো পৃথিবীকে এক করে দেবো তোমাকে পাবার জন্য,,, আজ দেখো তুমি শুধুই আমার শশী,,এই অনিকেতের শশী,,,

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here