জীবনসঙ্গী
পর্ব ২০
writer Tanishq Tani
বিকালের দিকে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে শশীর ঘুমন্ত মুখ পানে চেয়ে থাকে অনিকেত,,
ঠোঁটের কোনে মিষ্টি হাসি দেখা যায় ঘুমন্ত শশীর,,অনিকেতও হাসে সেই হাসি দেখে,,
হঠাৎ শশীর কপাল কুঁচকে যায়,,মুখে কালো ছায়া পড়ে,,অনিকেতের বুঝতে বাকি থাকে না। শশীর ঘুমের রাজ্যে দুঃস্বপ্নরা এসে ভীর করেছে,,
অনি থাকতে তার বেগমসাহেবা চিন্তা বা ভয় মাথায় নেবে এটাতো হতে পারে না,,অনি শুধু শশীর মুখের হাসিটায় সারাজীবন দেখতে চায়,,
বেগমসাহেবা! এই বেগমসাহেবা!
ওঠ! ঘুমিয়ে ঘুমিয়েই কি হানিমুন কাটাবে তুমি? শশীর চুলে বিলি কেটে বলে,,
শশী টিপটিপ করে চোখ খোলে অনির স্পর্শে,,
উমমম,,ঘুমাতে দাও না আরেকটু,,অনির কোলে মাথা রেখে বলে,,
না!একদমই না,,ওঠ বলছি,,না হলে কিন্তু??
শশীর পেটে হাত বুলাতে বুলাতে উপরে উঠতে থাকে,,
এই সরো! দুষ্টু একটা,,শান্তি মতো একটু কি ঘুমাতেও দিবা না আমাকে? বিছানা থেকে এক লাফে উঠে অনির থেকে দূরে সরে,,
না দেবো না,,আমার ঘুম হারাম করে শান্তিতে ঘুমানো,,এটা হবে না বুঝছ? শশীর নাক টেনে বলে,,গালে আলতো আদর করে,,
হু,,তুমি আমার নাকটাকে টানতে টানতে বড় করে দেবে নাকি?
হুম দিবো তো! শশীর ঠোঁটের দিকে নিজের ঠোট কামড়ে এগোতে এগোতে,,
সরো! অনির বুকে ধাক্কা দিয়ে হিহিহি করে হেসে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে,,
অনিকেত হাসি দিয়ে শশীর যাওয়ার দিকে তাকায়,,,
মুখে পানি নিয়ে আয়নার দিকে তাকায়,,রিশাদকে নিয়ে আজও দুঃস্বপ্ন দেখেছে শশী,,রিশাদ অনিকে পাহাড় থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিচ্ছে,, শশী অনিকেত বলে চিৎকার করে কাঁদছে,,
না না এটা তো একটা দুঃস্বপ্ন মাত্র,, এসব সত্যি হবে না,,হয়তো এখনো মনের কোথাও রিশাদ কে নিয়ে ভাবার কারনে এসব স্বপ্ন দেখছে শশী,,
নিজেকে বুঝ দেয় শশী,,আর ভাববে না এসব নিয়ে,,অনিকেত ছাড়া আর কাওকে নিয়ে ভাববে না শশী,,,
অনির পছন্দের ব্লাক সালোয়ার সুট পড়ে শশী,,অনিও মিল রেখে ব্লাক ব্লেজার কফি কালার টিশার্ট পরে,,
দুজনে হোটেলে হালকা নাস্তা করে বাইরে বের হয়,,শশীর এখান কার খাবার গুলো রুচিতে লাগে না,,পছন্দও হয় না,,
অনিকেতকে খুব মজা নিয়ে খাবার খেতে দেখে, না চাইতেও শশী দুএক টুকরো মুখে দেয় অনিকেতের জন্য,, কারন শশী জানে শশী না খেলে অনি খাবে না,,
টিপিকাল বাঙালীদের কাছে এগুলো অখাদ্যই বটে কিছুটা,,ভিনদেশী মসলা ভিনদেশী রান্নার স্টাইল,,, শশী মতো বাঙালির পেটে হজম হবে না,, তারপর দুঃস্বপ্ন দেখায় মনটাও ভালো না,,
শশী এমনিতেও খাবারের বিষয়ে বড্ড খুতখুতে,,যা তা মুখে দিতে পারে না একদমি,,হতে পারে এগুলো ভালো খাবার? কিন্তু যার মুখে যা রোচে,,
খাবারের পার্ট সেরে অনিকেত শশীকে নিয়ে বের হয় জুরিখ শহর ঘুরতে,,
আসার সময় লংটাইম জার্নির কারনে অসুস্থ অনুভব করায় ওতো কিছু খেয়াল করে নাই শশী,,
এখন শরীর মেজাজ দুটোয় কিছুটা ভালো আছে,,
হোটেল থেকে বেরিয়ে মনের মধ্যে আলাদা রকম অনুভূতি খেলে গেলো শশীর,,এতো সুন্দর পরিবেশ! সুবহানাল্লাহ বের হয় শশীর মুখ থেকে,,
পরিচ্ছন্ন আকাশ সাথে সুন্দর নিরিবিলি রাস্তা। পাশে রুপকথা গল্পের মতো বাড়িগুলো উফ,,শশীর তো মন চাচ্ছে উড়তে,,
কেমন লাগছে বেগমসাহেবা!
অন্নেক সুন্দর!খুশিতে উচ্ছ্বাসিত হয়ে বলে,,
দুনিয়াতে এতোসুন্দর জায়গা থাকতে পারে শশীর ধারনার বাইরে ছিলো,,
চলো আমার পছন্দের জায়গায় তোমাকে নিয়ে যায়,,শশীর হাত ধরে উপরে উঠতে থাকে,,
জুরিখ শহরটা ছোট্ট ছোট্ট পাহাড় নিয়ে তৈরি,,
এর রাস্তা গুলো ঢালু,,পাহাড়ে উঠতে যেমন হাঁপিয়ে যাওয়া লাগে এখানের রাস্তায় চলাচল করলেও তেমন হাপানো লাগে কিছুটা,,
অনি ও শশী উপরে উঠে কিছুটা হাপিয়ে যায়,,
শশীকে একটা নদীর উপরে নিয়ে দাড়ায় অনিকেত,, নদীটা এখান থেকে নিচে,,,নদীর পাশেই রাস্তা দিয়ে বাস এবং মানুষের চলাচল,, পাশে দাড়িয়ে আছে অসম্ভব সুন্দর করে নির্মাণ করা বাড়িঘরগুলো,,
এ কোন দেশে আসলো শশী,,নাকি কল্পনার কোনো রাজ্যে অনি শশীকে নিয়ে আসলো
limmat riverএর পাশে দাড়িয়ে পুরো শহরটাকে একনজরে দেখা যায়,,অসম্ভব সুন্দর সেই দর্শন,, এই স্বচ্ছ জলের ধারা মনে প্রশান্তি এনে দিতে সক্ষম যে কারো,, শশীকে পেছন থেকে জরিয়ে ধরে ঘারে ঠোঁট ছুঁয়ে দাড়িয়ে দূরের পাহাড় ঘেরা ছোট্ট ছোট্ট বাড়িঘর গুলো দেখে নদীর এপারে দাড়িয়ে,,
কি করছ কি? লোকে দেখছে তো?
অনি হেসে শশীর মুখ সামনে ফেরাতেই শশী লজ্জায় লাল হয়ে গেলো,,
সামনে প্রেমিক যুগল একে অপরকে ভালোবাসায় ব্যস্ত,,এই নদী এই শহরকে সাক্ষী হিসেবে রেখে তারাও ভালোবাসায় পরিপূর্ণ হতে চাই,,এমন পরিবেশে মন আরো বেশি রোমান্টিক হয়ে ওঠে,,
শশী অনিকেত অনেক্ষণ এখানে সময় কাটায়,,সন্ধ্যার দিকে হোটেলে ফেরে,,শশীর মনটা খুব ফ্রেশ হয়ে গেছে জুরিখের নির্মল পরিবেশে,,যার দরুন মুখে শান্তি ও তৃপ্তির হাসি লেগেই ছিলো,,
সবার মতো শশীও অনির হাতে হাত রেখে ঘুরছে,,
শশী! হুম বলো,,
এই চাবিটা নিয়ে তুমি রুমে যাও।আমি একটু আমার দলের সাথে কথা বলে আসছি,,
ঠিক আছে,,যাও,,
ভয় পাবে না তো তুমি? যেতে পারবে?
হ্যাঁ, খুব পারবো। কেন আমাকে কি পিচ্চি মেয়ে মনে হয় তোমার,,আমি ইয়াং সুপারস্টার অনিকেতের বউ,,আমার ভয় কিসের শুনি।
তাই নাকি? শশীর কোমর চেপে কাছে টেনে নেয়,,
এই ছাড়ো! দেখবে তো লোকে,,
দেখলে দেখুক,,তুমি আমার বৈধ সম্পত্তি,, কার সাধ্য আমাকে কিছু বলে,,
বলেই শশীর ঠোঁটে আলতো করে ভালোবাসার পরশ বুলিয়ে দেয়,,
আচ্ছা যাও,,শশীর কপালে চুমু দিয়ে,,
আবার হাত টেনে ধরে,,
কি হলো যেতে দিবা না?
না ইচ্ছা করছে না বেগমসাহেবা,,
যাও তো? তাড়াতাড়ি চলে আসবে কিন্তু?
আমি অপেক্ষা করবো,,,
বলেই হেসে হাঁটা শুরু করে শশী,,শশীরও মন চাচ্ছে না অনিকে নিজের থেকে আলাদা করতে এক মুহুর্তের জন্যেও,,কিন্তু কাজ তো করাই লাগবে অনির,,
শশী দূরে লিফটে ওঠা পর্যন্ত অনি দাড়িয়ে থাকে,,লিফট বন্ধ হওয়ার পরই অনিকেত মাথায় হুড উঠিয়ে দিয়ে চলে যায়,,,
শশীর লিফট হঠাৎ থেমে যায়,,লিফট খুলতেই একটা লোক লিফটে ওঠে,, হুড দিয়ে এভাবে মুখটা ঢেকে রেখেছে যে ভালো করে মুখটা দেখাও যাচ্ছে না,,
শশী চুপচাপ দাড়িয়ে আছে,, শশীর মাথায় শুধু লিম্মাত নদীর জলের ধারা আর অনির ভালোবাসার বিশালতার নেশা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে,, দুনিয়া থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন লাগছে,, শশীর সময় যেন লবিতে অনির চুমোতেই থেমে আছে,,আনমনেই লাজুক হাসি হেসে ওঠে শশী,,
নিজের ফ্লোরে আসতেই লিফট খুলে যায়,,শশী বের হয়ে রুমের দরজার লক খুলবে ঠিক সেই সময় কেউ ওর হাত চেপে ধরে,,
শশী অনিকেত ভেবে পেছনে ফিরতেই বড় রকমের ধাক্কা খায়,,
লিফটের সেই লোকটা? কিন্তু এই লোক এভাবে হাত ধরলো কেন? ভয় করে শশীর,,
লোকটা মাথা থেকে হুড ফেলে তাকাতেই?
দুনিয়া উলোট পালোট হয়ে যায় শশীর,,দুপুরের স্বপ্ন কি তাহলে সত্যি হয়ে গেলো?অজানা ভয়ে অন্তর আত্মা কাঁপতে শুরু করলো,,
রিইইইশাআআদদ?গলা শুকিয়ে যায় শশীর,,
হ্যাঁ শশী! আমি! তোমার রিশাদ,,কেমন আছ শশী?
ছাড়ো আমাকে! আমাকে স্পর্শ করার অধিকার আর নেই তোমার,,কেন এসেছে আমার সামনে এতোটা দিন পরে,,দেখতে এসেছ তোমার দেওয়া ধোকা খেয়ে মরে গেছি নাকি?
না মরি নাই! বেঁচে আছি এবং আলহামদুলিল্লাহ খুব ভালো আছি,,
শুনেছ? এখন যাও। আর কোনোদিন আসবে না আমার সামনে,,তোমাকে দেখলে ঘৃণা হয় আমার,,এক নিঃশ্বাসে বলেই দরজার লকে জোরে চাপ দিতে থাকে,,না খুলছেই না লক,,
শশী আমাকে ক্ষমা করে দাও তুমি?আমি তোমার সুখের জীবনে বাঁধা হতে আসিনি,,শুধু ক্ষমা চাইতে এসেছি শশী?
তুমি ক্ষমা করলে আর কোনোদিন আসবো না তোমার সামনে,,আছেই বা কটা দিন আমার জীবনে?
শশী দরজার লকে হাত রেখে পিছন ফিরে দাড়িয়ে থেকে রিসাদের কথা চুপচাপ শোনে,,
ফ্লোর টা শুনশান কেউ নেই এখানে ভয় হয় শশীর খুব,,
চলবে,,,,